১৯৬৫ সাল। ব্রজমোহন কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আবুল হাসান। পরীক্ষার হলে বসে আছেন তিনি। সেদিন তাঁর জীববিদ্যা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা। কিছুক্ষণ পর খাতা দেওয়া হল। এরপর তিনি সেই খাতায় জীববিদ্যা পরীক্ষার কোন প্রশ্নোত্তর না লিখে শুরু করলেন সুদীর্ঘ কবিতা লেখা। পরীক্ষার এক ঘন্টা অতিবাহিত হবার পর একজন হল তত্ত্বাবধায়ক লক্ষ করলেন আবুল হাসান একাগ্র চিত্তে কিছু একটা ভাবছেন। তিনি কাছে গিয়ে দেখতে পেলেন আবুল হাসান প্রশ্নোত্তরের পরিবর্তে লিখছেন কবিতা। তখন তিনি হাসানকে কবিতা না লিখে পরীক্ষার প্রশ্নোত্তর লিখতে উপদেশ দিলেন। তারপর বাকী দু’ঘন্টায় আবুল হাসান প্রশ্নোত্তর লিখে হল থেকে বের হলেন। ফলাফল বের হওয়ার পর দেখা গেল তিনি দ্বিতীয় বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন।
এই ঘটনাটি তখন তাঁর বন্ধু-বান্ধব এবং শিক্ষকদের মধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। কবি আবুল হাসান ষাটের দশকের মধ্যবর্তী সময়ে বাংলা কাব্যজগতে আবির্ভূত হয়ে অতি অল্প সময়ের মধ্যে তিনি নির্মাণ করেন একটি স্বকীয় কাব্য-ভুবন এবং এদেশের শীর্ষ কবিদের তালিকায় তাঁর নাম উঠে আসে।
১৯৪৭ সালের ৪ আগস্ট তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার অন্তর্গত টুঙ্গীপাড়া থানার বর্নি গ্রামে নানার বাড়িতে কবি আবুল হাসান জন্মগ্রহণ করেন। ‘দাড়িয়া’ বংশোদ্ভুত আবুল হাসানের প্রকৃত নাম আবুল হোসেন মিয়া, আর ডাকনাম ছিল ‘টুকু’। তাঁর বাবার নাম মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন, মা মোসাম্মাৎ সালেহা বেগম। তাঁর বাবা প্রথমে ভারতীয় পুলিশ বিভাগে চাকুরীতে যোগ দেন। ১৯৪৮ সালে তিনি কলকাতা থেকে পূর্ববাংলায় চলে আসেন এবং তৎকালীন বরিশাল জেলার অন্তর্গত পিরোজপুর মহকুমার নাজিরপুর থানাধীন ঝনঝনিয়া গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। কলকাতা থেকে এসে মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন ঢাকা সদর থানায় পুলিশ বিভাগের চাকুরীতে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে ২২ মে মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করা সত্ত্বেও সালেহা বেগম ছোটবেলা থেকে গল্প-উপন্যাস পড়তেন। তাঁরা সাত ভাই-বোন। আবুল হাসান ছিলেন বাবা-মার প্রথম সন্তান।
আবুল হাসানের বাবার বদলীর চাকরি হওয়ায় তাঁর মা অধিকাংশ সময় আবুল হাসানের নানার বাড়িতে থাকতেন। সেকারণে আবুল হাসানের শৈশব কেটেছে নানার বাড়ি বর্নি গ্রামে। শৈশবে আবুল হাসান বড় হয়ে উঠেছেন নানা মোহাম্মদ আবদুল গফুর মোল্লার আদর-যত্নে। নানার কাছ থেকে তিনি গল্প ও ছড়া শুনতেন, তাঁর হাত ধরেই বাড়ির চারপাশ পেরিয়ে তিনি পথে নেমেছেন, দেখেছেন বর্নি গ্রামের অনাবিল প্রকৃতির রূপ-বৈচিত্র্য।
নানার বাড়িতেই তিনি পড়েছেন কালিদাস ও রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন রচনা। শৈশবে বহুবার তিনি পড়েছেন মীর মোশাররফ হোসেনের ‘বিষাদ-সিন্ধু’ উপন্যাসটি। নানার বাড়ির পরিবেশটি ছিল সাহিত্য চর্চার অনুকূল। শৈশবে আবুল হাসান তাঁর উচ্চ শিক্ষিত তিন মামার কাছ থেকে সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। এ উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা থেকেই তিনি লেখালেখি শুরু করেন। শৈশবের বর্ণি গ্রাম তাঁর মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। পরবর্তীকালে তাঁর কবিতা এবং গল্পে যে সংগ্রামশীল গ্রামীণ মানুষের প্রতিরূপ আমরা প্রত্যক্ষ করি, তার প্রাথমিক প্রেরণার উৎস এই বর্নি গ্রাম আর তার সংগ্রামী জনগোষ্ঠী।
নানা মোহাম্মদ আবদুল গফুর মোল্লার তত্ত্বাবধানে শুরু হয় আবুল হাসানের শিক্ষাজীবন। ১৯৫৩ সালে তিনি প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হন মামাবাড়ির নিকটবর্তী বর্নি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই স্কুলে তিনি চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। শৈশব থেকেই আবুল হাসান ছিলেন মেধাবী ছাত্র। তাঁর স্মৃতিশক্তিও ছিল খুব প্রখর। প্রতি ক্লাসেই তিনি প্রথম স্থান অধিকার করতেন। বর্নি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আবুল হাসানের সাহিত্য-জীবনের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এই বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালীন তিনি প্রথম কবিতা লেখা শুরু করেন। স্কুলের বার্ষিক বিচিত্রানুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করে আবুল হাসান সকলকে বিস্মিত করে দেন। মার্জিত রুচি ও শান্ত-স্বভাবের হাসানকে স্কুলের শিক্ষকরা খুব স্নেহ করতেন।
পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন ‘ছিলনা-গুয়াদানা’ উচ্চ বিদ্যালয়ে। মামাবাড়ি থেকে প্রায় এক মাইল উত্তরে গোপালগঞ্জ থানায় (বর্তমানে জেলা) অবস্থিত এই বিদ্যালয়ে আবুল হাসান অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। পঞ্চম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি অর্জন করেছেন সর্বোচ্চ নম্বর। ফলে বর্ণি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো ‘ছিলনা-গুয়াদানা’ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও হাসানকে খুব স্নেহ করতেন। এ সময় স্কুলের নানা অনুষ্ঠানে তিনি কখনো স্বরচিত, কখনো বা অন্যের কবিতা আবৃত্তি করতেন।
অষ্টম শ্রেণী থেকে উত্তীর্ণ হবার পর আবুল হাসান পড়ালেখার উদ্দেশ্যে মামাবাড়ির অবারিত প্রশ্রয় ও মধুর পরিবেশ ছেড়ে চলে আসেন পিতার কর্মস্থল ঢাকায়। এখানে এসে তিনি আরমানিটোলা সরকারী উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন। আরমানিটোলা স্কুলে পড়ালেখার সময় থেকেই আবুল হাসান নিয়মিত কবিতা লিখতে শুরু করেন এবং ক্লাসের বইয়ের চেয়ে ক্লাসের বাইরের বই পড়ায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন বেশি। আরমানিটোলা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে আবুল হাসান দ্বিতীয় বিভাগে এস.এস.সি. পাস করেন।
এস.এস.সি. পাশ করার পর আবুল হাসান ১৯৬৩ সালে বরিশালের ব্রজমোহন সরকারী মহাবিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক ভর্তি হন। বরিশালে এসে কবি হিসেবে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি ব্রজমোহন মহাবিদ্যালয় থেকে যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দ্বিতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। কলেজ বার্ষিকীতেও তাঁর কবিতা মুদ্রিত হয়েছে।
এইচ.এস.সি. পাশ করার পর ১৯৬৫ সালে আবুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে প্রথম বর্ষ সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই হাসান সাহিত্যচর্চায় গভীরভাবে মনোনিবেশ করেন। এ সময় তিনি ঢাকার তরুণ কবিদের প্রত্যক্ষ সান্নিধ্যে আসেন এবং আস্তে আস্তে পদার্পণ করেন ‘উদ্বাস্তু-উন্মুল’ যৌবনে। ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে হাসানের সাবসিডিয়ারী পরীক্ষা দেয়ার কথা। পরীক্ষার ফর্ম পুরণ করার সময় পারিবারিক প্রয়োজনে হঠাৎ করে হাসানকে নিজ গ্রাম ঝনঝনিয়ায় যেতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন ছুটি চলছিলো। সহপাঠী এক বন্ধুর কাছে পরীক্ষার ফিসের টাকা রেখে এবং তাকে তা জমা দিতে বলে হাসান বাড়ি যান। কিন্তু যে কোন কারণেই হোক, তাঁর বন্ধুটি ফিসের টাকা আর জমা দেননি। বাড়ি থেকে ফিরে এসে বিষয়টা জেনে হাসান বিভাগীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু দেরী হওয়ায় তিনি পরীক্ষার ফিস জমা দিতে পারেননি, ফলে তাঁকে চেয়ারম্যানের বিরূপ মন্তব্য শুনতে হয় এবং অভিমান করে তিনি পরীক্ষা দেয়ার আর চেষ্টা করেননি। তারপর তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আর অগ্রসর হয়নি।
প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেলে আবুল হাসান অর্থের প্রয়োজনে পত্রিকায় চাকুরী নেয়ার কথা ভাবেন। পড়ালেখা করার জন্য বাবার অনুরোধ শেষ পর্যন্ত রক্ষা করেননি তিনি। ১৯৬৯ সালের প্রথম দিকে তিনি দৈনিক ‘ইত্তেফাক’ পত্রিকায় বার্তা বিভাগে চাকুরী নেন। কিন্তু মাত্র তিন মাস পরে তিনি চাকুরী ছেড়ে দেন। কোন পত্রিকাতেই তিনি একটানা বেশী দিন চাকুরী করেননি।
১৯৭২ সালের প্রথম দিকে আবুল হাসান ‘গণবাংলা’ পত্রিকায় চাকুরীতে যোগ দেন। ‘গণবাংলা’-য় তখন সাহিত্য বিভাগের সম্পাদক ছিলেন কবি শহীদ কাদরী। সাহিত্য বিভাগে শহীদ কাদরীর সহযোগী হিসেবে কাজ করেন তিনি। ‘গণবাংলা’ পত্রিকায় হাসান প্রায় এক বছর চাকুরী করেন। ১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ‘গণবাংলা’-য় তিনি কর্মরত ছিলেন। তারপর তিনি যোগ দেন আবদুল গাফফার চৌধুরী সম্পাদিত দৈনিক ‘জনপদ’ পত্রিকায়। ‘জনপদ’ পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালের ২৪ জানুয়ারি। এ পত্রিকায় প্রথম দিন থেকেই আবুল হাসান সহকারী সম্পাদক হিসেবে চাকুরী গ্রহণ করেন। ‘জনপদ’ পত্রিকায় তিনি ১৯৭৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত চাকুরী করেন। এই দেড় বছরে ‘জনপদ’ পত্রিকায় আবুল হাসানের অনেক রচনা প্রকাশিত হয়েছে-এর মধ্যে আছে কবিতা, প্রবন্ধ এবং উপ-সম্পাদকীয় নিবন্ধ। এই পত্রিকায় তিনি ‘আপন ছায়া’ এবং ‘খোলাশব্দে কেনাকাটা’ শীর্ষক দুটি উপ-সম্পাদকীয় কলাম লিখতেন। ‘খোলাশব্দে কেনাকাটা’ শীর্ষক কলামটির প্রথম চার সংখ্যা তিনি ‘ভ্রামণিক’ ছদ্মনামে লিখেছেন।
১৯৭৪ সালের জুন মাসের শেষের দিকে আবুল হাসান ‘জনপদ’ পত্রিকার চাকুরী ছেড়ে দিয়ে সহ-সম্পাদক হিসেবে দৈনিক ‘গণকণ্ঠ’ পত্রিকায় যোগ দেন। কবি আল মাহমুদ সম্পাদিত ‘গণকণ্ঠ’ পত্রিকায় আবুল হাসান ১৯৭৪ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ‘গণকণ্ঠ’ পত্রিকায় তিনি ‘আড়ালে অন্তরালে’ এবং ‘বৈরী বর্তমান’ শীর্ষক দুটি উপ-সম্পাদকীয় কলাম লিখতেন। এছাড়া ‘ফসলবিলাসী হাওয়ার জন্য কিছু ধান চাই’ শীর্ষক একটি উপ-সম্পাদকীয় নিবন্ধ রচনা করে সেইসময় তিনি অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছিলেন।
১৯৫৬ সালে আবুল হাসান যখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়তেন তখন থেকে ১৯৬৬ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি কবিতা লিখতেন আবুল হোসেন নামে। কিন্তু আবুল হোসেন নামে অগ্রজ একজন কবি থাকার কারণে নাম-বিভ্রাট এড়ানোর জন্যে কবি রফিক আজাদের উপদেশে তিনি নামটা কিঞ্চিত পরিবর্তন করে হয়ে ওঠেন আবুল হাসান।
১৯৭০ সালটি আবুল হাসানের জীবনে বিশেষ তাৎপর্যবহ। কারণ ‘শিকারী লোকটা’ শিরোনামে একটি কবিতার জন্য এ সময় তিনি সমগ্র এশিয়াভিত্তিক এক প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে বিশেষ পুরস্কার লাভ করেন। পরে ওই কবিতাটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত সমগ্র পৃথিবীর প্রতিনিধিত্বশীল কবিদের কবিতা-সঙ্কলনে অন্তর্ভুক্ত হয়। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত ‘পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতা’ (১৯৭০) শীর্ষক ওই গ্রন্থে তদানীন্তন পাকিস্তানের একমাত্র প্রতিনিধি আবুল হাসানের কবিতা স্থান পায়।
আবুল হাসানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রাজা যায় রাজা আসে’ প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে। ‘রাজা যায় রাজা আসে’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই আবুল হাসানের কবিখ্যাতি বিস্তার লাভ করে। এরপর অসুস্থতার বিরুদ্ধে নিয়ত সংগ্রামী আবুল হাসানের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাসে। ‘যে তুমি হরণ করো’ শীর্ষক দ্বিতীয় কবিতাগ্রন্থটি প্রকাশ করে ঢাকার প্রগতি প্রকাশনী। হাসপাতালের বেডে শুয়ে আবুল হাসান তাঁর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘পৃথক পালঙ্ক’-এর পাণ্ডুলিপি থেকে শুরু করে প্রুফ দেখা সবটাই করেছেন। সন্ধানী প্রকাশনী থেকে ‘পৃথক পালঙ্ক’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৫ সালের অক্টোবর মাসে। তাঁর মৃত্যুর দশ বছর পর ১৯৮৫ সালে নওরোজ সাহিত্য সংসদ প্রকাশ করে ‘আবুল হাসানের অগ্রন্থিত কবিতা’ ।
মূলত কবি হলেও আবুল হাসান বেশ কিছু সার্থক ছোটগল্প রচনা করেছেন। ১৯৬৯ সাল থেকে ঢাকায় বিভিন্ন দৈনিক ও সাময়িকপত্রে তাঁর গল্প প্রকাশিত হতে থাকে। তবে জীবিত অবস্থায় তাঁর কোন গল্প-সঙ্কলন প্রকাশিত হয়নি। মৃত্যুর পনের বছর পর ১৯৯০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর নয়টি গল্প সঙ্কলন ‘আবুল হাসান গল্পসংগ্রহ’। কবিতা-গল্প ছাড়া আবুল হাসান প্রবন্ধ এবং নাটকও রচনা করেছেন। ‘ওরা কয়েকজন’ শীর্ষক একটি কাব্যনাটক তাঁর মৃত্যুর পর সাপ্তাহিক ‘বিচিত্রা’-য় (১২.১২.১৯৭৫) প্রকাশিত হয়, যা স্বতন্ত্র গ্রন্থাকারে মুদ্রিত হয় ১৯৮৮ সালে।
জার্মানী থেকে ফিরে এসে আবুল হাসান ‘কুক্কুরধাম’ নামে একটি বৃহৎ কাব্য রচনার পরিকল্পনা করেন। এর বেশ কিছু অংশ তিনি রচনাও করেছিলেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তিনি তা আর শেষ করতে পারেননি। আবুল হাসান সেকালের স্বভাব-কবির মতো অবিশ্বাস্য দ্রুততায় একটি তরতাজা কবিতা লিখে দেয়ার মতো বিরল প্রতিভার অধিকারী ছিলেন।
শৈশব থেকেই আবুল হাসান রিউম্যাটিক জ্বরে ভুগেছেন। কখনো সুচিকিৎসা হয়নি বলে যৌবনে পদার্পণের পূর্বেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তাঁর হৃদপিণ্ড সম্প্রসারণজনিত ব্যাধি প্রথম ধরা পড়ে ১৯৭০ সালে। ওই সময় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু হাসপাতাল থেকে মুক্তিলাভের পর উড়নচণ্ডী জীবন, অনিয়মিত খাওয়া, অমানুষিক পরিশ্রম এবং রাত জাগার অভ্যাস আবুল হাসানকে দ্রুত হৃদরোগে জর্জরিত করে তোলে। দিন দিন তিনি দুর্বল হয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় তিনি পুনরায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের প্রথম দিকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সন্ত্রাসের মধ্যে বাস করে শারীরিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়েন তিনি। ১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসে তিনি পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে তাঁকে ভর্তি করা হয় ঢাকার হলিফ্যামিলি হাসপাতালে। কিন্তু আরোগ্যলাভের কোন লক্ষণ দেখা না দেয়ায় তাঁকে পি.জি. হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু এখানেও আরোগ্যলাভের কোন সম্ভাবনা দেখা না দেয়ায় চিকিৎসকরা তাঁকে বিদেশে যাবার পরামর্শ দেন। এ অবস্থায় কয়েকজন বন্ধুর আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে তাঁকে চিকিৎসার জন্য পূর্ব জার্মানী পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
বাংলাদেশ এবং জার্মানীর মধ্যে সম্পাদিত সাংস্কৃতিক চুক্তির শর্তানুযায়ী পূর্ব জার্মান সরকারের অর্থানুকূল্যে আবুল হাসানকে খুব দ্রুত পূর্ব জার্মানী পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। বর্লিনে বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য এ্যাভেয়ার্স এম. আনোয়ার হাশিমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আবুল হাসানকে বার্লিনস্থ চ্যারিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর আবুল হাসান খানিকটা সুস্থ হয়ে হয়ে ওঠেন এবং হাসপাতালের বেডে শুয়েই তিনি আবার কবিতা লিখতে শুরু করেন। কখনো কখনো তিনি হাসপাতালের অদূরে গ্রীষ্মনিবাসে বেড়াতেও যেতেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে শিল্পী গ্যাব্রিয়েলার সঙ্গে। গ্যাব্রিয়েলার সঙ্গে তিনি বার্লিনের বহু জায়গায় ঘুরেছেন এবং একাধিকবার শহরতলীতে অবস্থিত গ্যাব্রিয়েলার বাসায় বেড়াতেও গেছেন। এ সময় আরো একজন চিত্রশিল্পীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আবুল হাসান ওই চিত্রশিল্পীর স্টুডিওতেও মাঝে মাঝে যেতেন এবং এভাবে হয়তো চিত্র-শিল্পের প্রতি তিনি আকৃষ্ট হন। বার্লিন থেকে ফিরে আসার পর আবুল হাসান অনেকগুলো স্কেচ এঁকেছেন- হতে পারে, এটা জার্মান চিত্রশিল্পীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার ফসল।
১৯৭৫ সালের শুরুতেই আবুল হাসান পুনরায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। জার্মান ডাক্তাররা তাদের সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনা করে তাঁকে চেকোস্লোভাকিয়ায় চিকিৎসার জন্য পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু তাঁর হৃৎপিণ্ড ততদিনে প্রায়-অকেজো হয়ে গেছে, যা সারিয়ে তোলার জন্য প্রয়োজন জটিল অস্ত্রোপাচার। এ সময় বার্লিনস্থ এ.পি.এন.-এর সংবাদদাতা ভারতীয় নাগরিক প্রকৌশলী সুনীল দাশগুপ্ত এবং তাঁর জার্মান বংশোদ্ভুতা পত্নী বারবারা দাশগুপ্তের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আবুল হাসানকে চেকোস্লোভাকিয়া বা অন্য কোন সমাজতান্ত্রিক দেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু জটিল অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয় সুবিধা না থাকার জন্য কোন সমাজতান্ত্রিক দেশের চিকিৎসকই অপারেশনের ঝুঁকি নিতে চাননি। এই জটিল পরিস্থিতিতে বার্লিনস্থ চ্যারিটি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ আবুল হাসানকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে আবুল হাসান চ্যারিটি হাসপাতাল থেকে মুক্তিলাভ করে সপ্তাহখানেক তাঁর জার্মান-বান্ধবী গ্যাব্রিয়েলার বাসায় ছিলেন। তারপর ১৯৭৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি ইন্টারফ্ল্যাগ বিমান যোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে বার্লিন ত্যাগ করেন এবং পরের দিন সকাল ৮:৩০ মিনিটে তিনি ঢাকা পৌঁছেন।
১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা পৌঁছে আবুল হাসান তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হাসানের সাময়িক সুস্থতা দেখে তাঁর বন্ধুরা কিছুটা আশ্বস্ত হন। এ অবস্থায় আবুল হাসান চাকুরীর চেষ্টা করতে থাকেন। অনেকেই তাঁকে আশ্বাস দেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউই তা রক্ষা করেননি। হাসানের অসুস্থতার কথা বিবেচনা করেই কেউ তাঁকে চাকুরী দেননি, কেননা, তাহলে পরিশ্রমজনিত ক্লান্তিতে তাঁর অসুস্থতা আরো বৃদ্ধি পাবে- এই ছিল তাঁদের ধারণা। এ সময় চাকুরীর সন্ধানে তিনি একবার বরিশাল শহরেও যান, কিন্তু ওখানেও কোনো সুবিধা হয়নি। একদিকে অসুস্থতা, অন্যদিকে বেকার-জীবন মাথার ওপর ভাই-বোনদের পড়ালেখার খরচ যোগানোর দায়িত্ব- সব কিছু মিলিয়ে আবুল হাসান তখন এক অস্থির জীবন যাপন করেছেন। ক্রমে তিনি পুনরায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পি.জি. হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পি.জি. হাসপাতালে তিনি ভর্তি হন ১৯৭৫ সালের ৪ নভেম্বর। হাসপতালের বেডে শুয়ে বুকের অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেও তিনি লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা।
অবশেষে ১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর মাত্র আটাশ বছর বয়সে আবুল হাসান মৃত্যুবরণ করেন। ওই দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে তাঁর নামাজে-জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তারপর তাঁর মরদেহ ঢাকার বনানী গোরস্থানে সমাহিত করা হয়।
মৃত্যুর পর তিনি ১৯৭৫ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং ১৯৮২ সালে একুশে পদক লাভ করেন। স্বল্প-পরিসর জীবনে মাত্র দশ বছরের সাহিত্য-সাধনায় আবুল হাসান নির্মাণ করেছেন এক ঐশ্বর্যময় সৃষ্টিসম্ভর, যার ভিতর দিয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন যুগ যুগ ধরে।
সংক্ষিপ্ত জীবনী:
জন্ম: ১৯৪৭ সালের ৪ আগস্ট তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার অন্তর্গত টুঙ্গীপাড়া থানার বর্নি গ্রামে নানার বাড়িতে কবি আবুল হাসান জন্মগ্রহণ করেন। ‘দাড়িয়া’ বংশোদ্ভুত আবুল হাসানের প্রকৃত নাম আবুল হোসেন মিয়া, আর ডাকনাম ছিল ‘টুকু’।
বাবা-মা: তাঁর বাবার নাম মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন, মা মোসাম্মাৎ সালেহা বেগম। তাঁরা সাত ভাই-বোন। আবুল হাসান ছিলেন বাবা-মার প্রথম সন্তান।
লেখাপড়া: নানা মোহাম্মদ আবদুল গফুর মোল্লার তত্ত্বাবধানে শুরু হয় আবুল হাসানের শিক্ষাজীবন। ১৯৫৩ সালে তিনি প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হন মামাবাড়ির নিকটবর্তী বর্নি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই স্কুলে তিনি চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। শৈশব থেকেই আবুল হাসান ছিলেন মেধাবী ছাত্র। তাঁর স্মৃতিশক্তিও ছিল খুব প্রখর। প্রতি ক্লাসেই তিনি প্রথম স্থান অধিকার করতেন। বর্নি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আবুল হাসানের সাহিত্য-জীবনের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এই বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালীন তিনি প্রথম কবিতা লেখা শুরু করেন। স্কুলের বার্ষিক বিচিত্রানুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করে আবুল হাসান সকলকে বিস্মিত করে দেন। মার্জিত রুচি ও শান্ত-স্বভাবের হাসানকে স্কুলের শিক্ষকরা খুব স্নেহ করতেন।
পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন ‘ছিলনা-গুয়াদানা’ উচ্চ বিদ্যালয়ে। মামাবাড়ি থেকে প্রায় এক মাইল উত্তরে গোপালগঞ্জ থানায় (বর্তমানে জেলা) অবস্থিত এই বিদ্যালয়ে আবুল হাসান অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। পঞ্চম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি অর্জন করেছেন সর্বোচ্চ নম্বর। ফলে বর্ণি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো ‘ছিলনা-গুয়াদানা’ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও হাসানকে খুব স্নেহ করতেন। এ সময় স্কুলের নানা অনুষ্ঠানে তিনি কখনো স্বরচিত, কখনো বা অন্যের কবিতা আবৃত্তি করতেন।
অষ্টম শ্রেণী থেকে উত্তীর্ণ হবার পর আবুল হাসান পড়ালেখার উদ্দেশ্যে মামাবাড়ির অবারিত প্রশ্রয় ও মধুর পরিবেশ ছেড়ে চলে আসেন পিতার কর্মস্থল ঢাকায়। এখানে এসে তিনি আরমানিটোলা সরকারী উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন। আরমানিটোলা স্কুলে পড়ালেখার সময় থেকেই আবুল হাসান নিয়মিত কবিতা লিখতে শুরু করেন এবং ক্লাসের বইয়ের চেয়ে ক্লাসের বাইরের বই পড়ায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন বেশি। আরমানিটোলা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে আবুল হাসান দ্বিতীয় বিভাগে এস.এস.সি. পাস করেন।
এস.এস.সি. পাশ করার পর আবুল হাসান ১৯৬৩ সালে বরিশালের ব্রজমোহন সরকারী মহাবিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক ভর্তি হন। বরিশালে এসে কবি হিসেবে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি ব্রজমোহন মহাবিদ্যালয় থেকে যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দ্বিতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
এইচ.এস.সি. পাশ করার পর ১৯৬৫ সালে আবুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে প্রথম বর্ষ সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে হাসানের সাবসিডিয়ারী পরীক্ষা দেয়ার কথা। পরীক্ষার ফর্ম পুরণ করার সময় পারিবারিক প্রয়োজনে হঠাৎ করে হাসানকে নিজ গ্রাম ঝনঝনিয়ায় যেতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন ছুটি চলছিলো। সহপাঠী এক বন্ধুর কাছে পরীক্ষার ফিসের টাকা রেখে এবং তাকে তা জমা দিতে বলে হাসান বাড়ি যান। কিন্তু যে কোন কারণেই হোক, তাঁর বন্ধুটি ফিসের টাকা আর জমা দেননি। বাড়ি থেকে ফিরে এসে বিষয়টা জেনে হাসান বিভাগীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু দেরী হওয়ায় তিনি পরীক্ষার ফিস জমা দিতে পারেননি, ফলে তাঁকে চেয়ারম্যানের বিরূপ মন্তব্য শুনতে হয় এবং অভিমান করে তিনি পরীক্ষা দেয়ার আর চেষ্টা করেননি। তারপর তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আর অগ্রসর হয়নি।
কর্মজীবন: প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেলে আবুল হাসান অর্থের প্রয়োজনে পত্রিকায় চাকুরী নেয়ার কথা ভাবেন। পড়ালেখা করার জন্য বাবার অনুরোধ শেষ পর্যন্ত রক্ষা করেননি তিনি। ১৯৬৯ সালের প্রথম দিকে তিনি দৈনিক ‘ইত্তেফাক’ পত্রিকায় বার্তা বিভাগে চাকুরী নেন। কিন্তু মাত্র তিন মাস পরে তিনি চাকুরী ছেড়ে দেন।
১৯৭২ সালের প্রথম দিকে আবুল হাসান ‘গণবাংলা’ পত্রিকায় চাকুরীতে যোগ দেন। ‘গণবাংলা’-য় তখন সাহিত্য বিভাগের সম্পাদক ছিলেন কবি শহীদ কাদরী। সাহিত্য বিভাগে শহীদ কাদরীর সহযোগী হিসেবে কাজ করেন তিনি। ‘গণবাংলা’ পত্রিকায় হাসান প্রায় এক বছর চাকুরী করেন। ১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ‘গণবাংলা’-য় তিনি কর্মরত ছিলেন। তারপর তিনি যোগ দেন আবদুল গাফফার চৌধুরী সম্পাদিত দৈনিক ‘জনপদ’ পত্রিকায়। ‘জনপদ’ পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালের ২৪ জানুয়ারি। এ পত্রিকায় প্রথম দিন থেকেই আবুল হাসান সহকারী সম্পাদক হিসেবে চাকুরী গ্রহণ করেন। ‘জনপদ’ পত্রিকায় তিনি ১৯৭৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত চাকুরী করেন। এই দেড় বছরে ‘জনপদ’ পত্রিকায় আবুল হাসানের অনেক রচনা প্রকাশিত হয়েছে-এর মধ্যে আছে কবিতা, প্রবন্ধ এবং উপ-সম্পাদকীয় নিবন্ধ। এই পত্রিকায় তিনি ‘আপন ছায়া’ এবং ‘খোলাশব্দে কেনাকাটা’ শীর্ষক দুটি উপ-সম্পাদকীয় কলাম লিখতেন। ‘খোলাশব্দে কেনাকাটা’ শীর্ষক কলামটির প্রথম চার সংখ্যা তিনি ‘ভ্রামণিক’ ছদ্মনামে লিখেছেন।
১৯৭৪ সালের জুন মাসের শেষের দিকে আবুল হাসান ‘জনপদ’ পত্রিকার চাকুরী ছেড়ে দিয়ে সহ-সম্পাদক হিসেবে দৈনিক ‘গণকণ্ঠ’ পত্রিকায় যোগ দেন। কবি আল মাহমুদ সম্পাদিত ‘গণকণ্ঠ’ পত্রিকায় আবুল হাসান ১৯৭৪ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।
বিয়ে: তিনি বিয়ে করেননি।
মৃত্যু: ১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর মাত্র আটাশ বছর বয়সে আবুল হাসান মৃত্যুবরণ করেন। ওই দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে তাঁর নামাজে-জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তারপর তাঁর মরদেহ ঢাকার বনানী গোরস্থানে সমাহিত করা হয়।
তথ্যসূত্র: আবুল হাসান, লেখক- বিশ্বজিৎ ঘোষ, প্রকাশনী: বাংলা একাডেমী (জীবনী গ্রন্থমালা), প্রথম প্রকাশ- ফেব্রুয়ারী, ১৯৯২
লেখক : মৌরী তানিয়া