“তৃতীয় শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণীতে ওঠার সময় বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী সভায় অনেকগুলো বই উপহার পেয়েছিলাম। ‘যখের ধন’, ‘ঝিলে জঙ্গলে’, ‘লালকালো’। আরও দু-তিনটি বই। একটা বাদে সবগুলো বই ছিল দেখতে চমৎকার, সুন্দর ঝকঝকে ছাপা, ভেতরে ছবি। একটা বই শুধু চোখে ধরেনি। প্রথমেই রঙচঙা ছবিওয়ালা বইগুলো পড়ে ফেললাম। তারপর সেই সাদামাটা বইটা হাতে নিলাম। পাতলা হলদে মলাটের ওপরের দিকে বড় বড় লাল অক্ষরে লেখা ‘সোনার তরী’। নিচে লেখকের নাম শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। দেখি গল্প বা জীবজন্তুর কথা কিংবা অ্যাডভেঞ্চারের কাহিনী নয়, গদ্যও নয়, বইটা পদ্যের। পড়ে ফেললেন প্রথম কবিতার প্রথম লাইন-
‘গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা’
পড়তেই মনের মধ্যে এমন আলোড়ন শুরু হল, বুকের মধ্যে আবেগ এমন ঠেলে ঠেলে উঠছিল, আমি প্রায় এক নিঃশ্বাসে সমস্ত কবিতাটা পড়ে ফেললাম। পড়া শেষ হলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি।
কী ছিল ওই কবিতায়? যা ছিল ওই বয়সে তা বোঝার নয়। ছবিটা দেখেছিলাম ঠিকই। মেঘ ডাকছে, বৃষ্টি পড়ছে, নদীতে অনেক পানি, মাঝি নৌকা বাইছে। ছবিটা খুবই সুন্দর। কিন্তু না, ছবিটার জন্য নয়। আমি ভেসে গিয়েছিলাম শব্দের ঝঙ্কারে। ওই যে, গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা-র গ, ঘ, র-এর ডম্বরু, ওরা আমাকে কোথায় যেন নিয়ে গেল। কোথায় তা জানি না। শুধু বুঝতে পারি ভেতরে ভেতরে কী একটা হচ্ছে।
কে এই রবীন্দ্রনাথ? তিনি কি আমাদেরই মতো মানুষ? কী করে তিনি আমাকে এমন বিহ্বল করে ফেললেন? ইচ্ছে করলে সব মানুষই কি তা করতে পারে? আমি স্তব্ধ হয়ে বসে থাকি। আমি কি পারব? সেই থেকে আমি খাতার পর খাতা হিজিবিজি লিখে ফেলি, যদি কোন দিন আমারও হয়। কবিতা লেখার সেই শুরু।”
ছেলেবেলায় রবী ঠাকুরের ‘সোনার তরী’ পড়ে শব্দের ঝঙ্কারে ভেসে যাওয়া কবি আবুল হোসেন স্তব্ধ হয়ে ভেবেছিলেন, আমি কী পারব? হ্যাঁ তিনি পেরেছিলেন। আর পেরেছিলেন বলেই আমাদের তিনজন প্রধান আধুনিক মুসলমান বাঙ্গালী কবিদের মধ্যে আবুল হোসেনের প্রথম কবিতার বই ‘নব বসন্ত’ বের হয়েছিল সবার আগে, ১৯৪০ সালে। এরপর একে একে বের হয়েছে তাঁর অনেক বই। আর এই বইগুলিই তাঁকে আমাদের কাছে বিশিষ্ট ও অন্যতম কবিতে পরিণত করেছে।
বাগেরহাটের ফকিরহাট থানার আড়ুয়াভাঙা গ্রামে নানাবাড়িতে কবি আবুল হোসেনের জন্ম। জন্মের পর কৈশোরে একবার মাত্র তাঁর জন্মস্থান আড়ুয়াভাঙা গ্রামে যাওয়া হয়েছিল তাঁর। শ্রাবণের এক বৃষ্টিহীন সকালে তাঁদের জন্ম হয়। তাঁদের বলতে আবুল হোসেন আর তাঁর এক বোনের। তাঁরা দুই ভাইবোন একত্রে এই পৃথিবীতে আসেন। মায়ের মুখে শুনেছেন, সামান্য একটু আগে-পরে তাঁদের জন্ম হয়। প্রথমে বোন, তারপর তিনি। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি খুলনা জেলার বর্তমান রূপসা থানার দেয়াড়াগ্রামে। তাঁর শৈশব কেটেছে এই গ্রামে।
সেই প্রজন্মের আরও বহু বাঙালি মুসলমানের মতো আবুল হোসেনও তাঁর জন্মতারিখ নিশ্চিত করে কখনো জানতে পারেননি। মা মেহেরুন নেসা বলতে পারেননি স্পষ্ট করে। শুধু বলেছিলেন, তাঁর জন্ম হয়েছিল ঝড়ের বছর, শ্রাবণ মাসের ১৫ তারিখে। বাবা বলেছেন, দিনটি ১৯২২ সালের আগস্ট। আগস্ট মাস শ্রাবণেই পড়ে। মায়ের তারিখ আর বাবার বছর নিয়ে তাঁর জন্মতারিখ হয়ে দাঁড়ায় ১৫ আগস্ট ১৯২২। তবে শিক্ষাজীবনে বা সরকারি নথিপত্রে এ তারিখের কোনো অস্তিত্ব রইল না। স্কুলে প্রথম ভর্তি করতে গিয়ে ভর্তির ফরমে বাবা জন্মতারিখ লিখেছিলেন ১ ফেব্রুয়ারি ১৯২২। কোত্থেকে এল এ তারিখ, সেটা তাঁর কাছেও এক রহস্য। কিন্তু কাগজে-পত্রে, দলিলে-নথিতে তাঁর জন্মতারিখ ১ ফেব্রুয়ারি হয়েই থেকে গেল। তবু জন্মদিন হিসেবে তাঁর মনে এখনো জায়গা করে আছে ১৫ আগস্ট তারিখটিই।
ছেলেবেলায় সকালে খেয়েদেয়ে বই-শ্লেট বগলে নিয়ে একা একা পাঠশালায় পড়তে যেতেন। দেয়াড়ায় বাড়ি থেকে বের হয়ে বাঁ দিকের বড় রাস্তা ধরে তিনি হেঁটে পাঠশালায় যেতেন। বড় রাস্তা হলেও বিরাট সে রাস্তায় লোকজন বিশেষ চোখে পড়ত না। দুই দিক থেকে এসে গাছের ডাল ঝুলতো পথের ওপর। চারপাশে ঝোপঝাড়, ঝিঁঝি পোকার শব্দ শোনা যেত। কোথায় তারা বোঝা যেত না। ঝোপ থেকে একটা কাঠবিড়ালী বেরিয়ে অবাক হয়ে দেখত তাঁকে। কোন গাছে কাঠঠোকরা ঠকঠক করত কিন্তু দেখা যেত না। করুণ সুরে কোথায় একটা ঘুঘু ডাকত। তিনি ছবি দেখতে দেখতে, শব্দ শুনতে শুনতে, গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে আপন মনে হেঁটে যেতেন, কখন ঈশান দাসের পোড়ো বাড়ি আর পচা পুকুর পার হয়ে যেতেন তিনি বুঝতেই পারতেন না। পুকুরটা শাপলায় ভরা। তার নিচে যে পানি আছে বোঝার উপায় নেই। পোড়ো বাড়িটাতে কেউ থাকত না। সাপ গিজগিজ করত আনাচে-কানাচে। তিনি মোড়টা পার হতেন ভয়ে ভয়ে। হঠাৎ দেখতে পেতেন সম্মুখে উল্টো দিক থেকে দুটো লোক হেঁটে আসছে। কেমন যেন দেখতে? তাঁর বুক ঢিপঢিপ করত। তিনি ভাবতেন, ভূত নাকি? কিন্তু ভাল করে খেয়াল করে দেখতেন, তাদের মাথা মুখ চোখ কান সবই আছে। ভূত কি করে হবে? তিনি পায়ের দিকে তাকান। জিনও তো না। পায়ের আঙুল পেছনে আর গোড়ালি সামনে তো নয়। যেমনটি জিনদের থাকে বলে শোনা যায়। তাঁর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে। এরপর মিত্তির বাড়ি, তারপর সরকারি পুকুর, তারপরেই তাঁর বাবার বন্ধু সুরেন কাকাদের বাড়ি পার হয়ে চলে আসেন পাঠশালায়।
উঠোনে খেলার সময় চারদিকে ঢিল ছোড়া ছিল তাঁর এক বাতিক। ঢিল ছুড়ে আম পাড়েন, জামরুল আর কাঁঠাল জখম করেন। তাঁর বুজান দৌড়ে গিয়ে কাঁচা আম আর থেঁতলে যাওয়া জামরুল কুড়োন। পুকুরে ঢিল ছোড়েন, ইটের টুকরোটা যেখানে গিয়ে পড়ে সেখানে পানি গোল হতে হতে মিলিয়ে যায়। ব্যাঙের দিকে তাক করে ঢিল মারেন,লাফ দিয়ে ব্যাঙগুলো পুকুরে ডুব দেয়। একদিন বিকেলে এ রকম ঢিল ছোড়া মকশো করছিলেন রান্নাঘরের পাশে ফজলি আম গাছে। আম ছাড়াও ডালের সঙ্গে পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা একটা মৌচাকও ছিল, তিনি তা জানতেন না। মৌচাকে ঢিলটা লাগতেই ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি এসে তাঁর মাথায়-মুখে-হাতে-পায়ে ছেকে ধরল। তিনি তখন এই হঠাৎ আক্রমণে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। তাঁর চিৎকারে বাড়িতে যে যেখানে ছিলেন সবাই ছুটে এলেন। ফুফু তাঁকে কোলে তুলে এক দৌড়ে ঘরের ভেতর ঢুকে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। সারা রাত তাঁর যন্ত্রণা হয় খুব। মুখ-চোখ ফুলে ওঠে। প্রচন্ড জ্বর হয়। সেই জ্বর ছাড়ে, তিন সপ্তাহ পরে।
এভাবেই গ্রামের অবাধ প্রকৃতির মাঝে বেড়ে উঠেছেন কবি আবুল হোসেন। কিন্তু এই গ্রামের সাথেই তাঁর বিচ্ছেদ ঘটে মাত্র পাঁচ-ছ বছর বয়সে। কারণ এই বয়সেই তাঁর বাবা এস.এম.ইসমাইল হোসেন তাঁকে তাঁর চাকরির স্থানে প্রথম নিয়ে এলেন, যশোর জেলার গাইঘাটা নামে এক থানায়। সেই যে গ্রাম থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি, তারপর পঁচাত্তর বছরের মধ্যে আর মাত্র দু-তিন বার কয়েক দিনের জন্য সেই গ্রামে ফিরেছিলেন। কিন্তু ছেলেবেলা আর সেই গ্রাম কখনও তাঁর মন থেকে মুছে যায়নি। অবাধ প্রকৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠার সেই দুর্লভ স্মৃতি ফিরে ফিরে আসে বলেই চল্লিশ দশকে, মধ্য-পঞ্চাশে এবং নিরানব্বই-এ এই কবি লিখতে পেরেছেন ’আমার সোনার দেশ’, ‘দেয়াড়ায়’ এবং ‘আর একটা উপকথা’র মতো কবিতাগুলি।
তিনি ১৯২৯ সালে সাত বছর বয়সে কৃষ্ণনগর কলিজিয়েট স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। সাড়ে সাত বছর কৃষ্ণনগরে থাকার পর তাঁর বাবা বদলি হন কুষ্টিয়ায়। আবুল হোসেন ভর্তি হলেন কুষ্টিয়া হাই স্কুলে নবম শ্রেণীতে। ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিলেন কুষ্টিয়া হাইস্কুল থেকে। পাস করার পর ভর্তি হলেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে আই.এ.-তে । তখন ঢাকা শহরের পৌর এলাকার স্কুলগুলি ছাড়া প্রদেশের সব স্কুল-কলেজ ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায়। আই.এ. পাস করার পর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতিতে বি.এ. অনার্স ভর্তি হন। ১৯৪২ সালে অর্থনীতিতে বি.এ. (অনার্স) পাস করেন তিনি। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম.এ. ক্লাসে পড়েন প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র হিসেবেই । যদিও সাহিত্যই ছিল তাঁর চিরদিনের আরাধ্য বিষয় এবং তার চর্চা শুরু করেছিলেন সেই ছেলেবেলা থেকেই। কিন্তু তারপরও তিনি অর্থনীতি পড়েছিলেন নিজের ইচ্ছায় নয়, বাবা-মাকে খুশি করার জন্য। তাঁরা মনে মনে আশা পোষণ করতেন তাদের ছেলে সিভিল সার্ভিসে যাক।
বিশ্বযুদ্ধের সমস্ত সময়টা তাঁর কলকাতায় কাটে। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তিনি ছিলেন অনেক দূরে। তাঁরা যুদ্ধের খবর শুনতেন রেডিওতে, খবরের কাগজে। সবচেয়ে বেশি পেতেন লোকের মুখে মুখে। খবরের সঙ্গে সমানভাবে পাল্লা দিত গুজব। ৪১ সালের ডিসেম্বরে প্রথম বিমান হামলা হয় কলকাতায়। সেদিন একটা বোমা পড়েছিল শ্যামবাজারের কাছে হাতিবাগানে, একটা গরু-মহিষের খাটালে। বেশ কিছু গরু-মহিষ মারা যায়। একটা বড় গর্ত হয় সেখানে। গার্স্টিন প্লেসে রেডিও স্টেশনের কাছেও একটা বোমা পড়ে। কিন্তু সেদিন থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে সারা কলকাতা খালি হয়ে গেল। যে যেদিকে যেমন করে পারে পালালো। ছেলে-মেয়ে, বুড়োবুড়ি, যুবক-যুবতী বোঁচকা-বুচকি নিয়ে ছুটছে। ট্রেনে, বাসে, ট্রাকে, গাড়িতে, নৌকায়, হেঁটে। ভিড়ে রাস্তা ভেঙে পড়ছিল। কলকাতা থেকে বেরোবার সব পথঘাট, নদীপথ, রেললাইন লোকে লোকারণ্য। হইচই, হুড়োহুড়ি। তাঁর বাবা তাঁদের সবাইকে খুলনায় গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন। যুদ্ধটা অনেকটা তাঁদের ঘরের কাছে চলে এসেছিল জাপান যুদ্ধে নামার পর।
‘৪৬-এর একুশে ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহ করল বোম্বাইয়ে নৌসেনারা। সন, তারিখ আবুল হোসেনের মনে থাকে না। কিন্তু নৌবিদ্রোহের এই তারিখটা তিনি কখনও ভোলেননি। কেননা ওই দিনে তিনি প্রথম সরকারি চাকরিতে যোগ দেন, কলকাতা আয়কর কমিশনারের অফিসে, এক্সামিনার অব অ্যাকাউন্টস পদে। দুটি কারণে এই চাকরিটা পেয়ে খুশি হয়েছিলেন তিনি। এক. এই পদের মাইনে ছিল ৩৫০-৪৬০ টাকা। তখন সরকারি কলেজের লেকচারাররা পেতেন ১২৫-৩৫০ টাকা। দুই. তাঁকে কলকাতার বাইরে কখনও যেতে হবে না। দ্বিতীয় কারণটাই ছিল আসল। তিনি কলকাতা ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চাননি। কারণ তখনই ঠিক করে নিয়েছেন সাহিত্য চর্চাই হবে তাঁর আসল কাজ এবং তার জন্য কলকাতাই সবচেয়ে ভাল জায়গা।
দেশ ভাগের প্রাক্কালে আয়কর কমিশনারের অফিসে এক্সামিনার অব অ্যাকাউন্টস পদটি উঠে যায়। তিনি সহ সাত জন এই পদে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন (আবদুস সাত্তার, ফজলুল করিম, দয়াল হরি দত্ত) বিভাগীয় পরীক্ষা দিয়ে আয়কর অফিসার হয়ে যান। বাকিদের পরিদর্শকের পদ দেওয়া হয়। কবি আবুল হোসেন পরীক্ষা দেননি। কারণ তখন দেশ বিভাগ অনিবার্য হয়ে উঠেছে এবং কলকাতাতে থাকা যখন আর সম্ভব হচ্ছে না তখন এই আয়কর বিভাগে চাকরি করার ইচ্ছেও তাঁর চলে গেছে। কিন্তু তারপরও তাঁকে ময়মনসিংহে আসতে হলো সহকারী বিক্রয় কর অফিসার হিসেবে। তবে দুই-আড়াই বছর পর তিনি ঢাকার রেডিও পাকিস্তানে একটা সমপর্যায়ের চাকরিতে যোগ দেন ‘৫০ সালের মাঝামাঝিতে। ।এরপর তাঁকে ব্যাংককে সিটো পাবলিক ইনফরমেশন অফিসে ইন্টারন্যাশনাল স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেখান থেকে দেশে ফিরে তিনি জনসংযোগ বিভাগে যোগ দেন এবং সবশেষে ১৯৮২ সালে যুগ্মসচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
কবি আবুল হোসেন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্র পরিষদের সম্পাদক ছিলেন। বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির কার্যকরী পরিষদ,পাকিস্তান রাইটার্স গিল্ডের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ ও বাংলা একাডেমীর কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। রবীন্দ্র চর্চাকেন্দ্রের সভাপতি ছিলেন এবং তিনি বাংলা একাডেমীর ফেলো।
১৯৫৮ সালে তিনি প্রখ্যাত লেখক আকবর উদ্দিনের জেষ্ঠ কন্যা সাহানার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের বিয়ে ঠিক করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। আবুল হোসেন-সাহানা দম্পতির দুই ছেলে, দুই মেয়ে। ১৯৯৪ সালে তাঁর স্ত্রী সাহানা ইন্তেকাল করেন।
স্কুলে পড়ার সময় থেকেই সাহিত্য তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বিষয় হলেও সাহিত্য কী তখন তিনি তা ভালভাবে জানতেনই না। ছেলেবেলা থেকেই বই হাতে পেলেই পড়ে ফেলতেন। স্কুলে প্রথম দিকে ঝোঁক ছিল গল্পের বই পড়ার, নানা রকমের গল্প, পৌরাণিক গল্প, ইতিহাসের গল্প, অ্যাডভেঞ্চারের গল্প, রহস্যের গল্প, ভূতের গল্প, হাসির গল্প। সব বই মূল লেখকের নয়, বিদেশী লেখকের বইয়ের অনুবাদও পড়তেন। আর লেখালেখিরও তো শুরু সেই স্কুলে পড়ার সময় থেকেই। সেসময় বিয়ে উপলক্ষে আত্মীয়দের মধ্যে বিতরণের জন্য পুস্তিকা বেরোত। তাতে মজা করে লিখত বরকনের নিকটজনেরা। তাঁর বড় বোনের বিয়েতেও একটি পুস্তিকা বের হয় এবং তিনি সেই পুস্তিকার জন্য জীবনের প্রথম কবিতাটি লিখলেন। কীভাবে কীভাবে যেন কবিতাটি গিয়ে পড়ল তাঁর স্কুলের বাংলা শিক্ষক চারুবাবুর হাতে। চারুবাবু বাংলা পড়াতেন। তাঁর মেজাজ কড়া। গলা হেঁড়ে। তাঁর ক্লাসে ভয়ে কেউ টুঁ শব্দটিও করত না। কবিতাটি হাতে নিয়ে ক্লাসে গম্ভীর হয়ে চারুবাবু সেটি পড়লেন। পড়া শেষ করে আঙ্গুলের ইশারায় ডাকলেন আবুল হোসেনকে। আবুল হোসেনের বুকে তখন ঢাকের বাদ্য বাজছে। কিন্তু চারুবাবুর গলায় ঝরে পড়ল অনিঃশেষ স্নেহ। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘এটা তুই লিখেছিস? এসব তুই কোথায় পেলি?’ আবুল হোসেন জানালেন, এসব তাঁর মনে এসেছে, তাই লিখেছেন। চারুবাবু তাঁকে কাছে টেনে নিলেন। মাথায় হাত রেখে গাঢ় কণ্ঠে বললেন, ‘তুই লিখে যা। আমি আশীর্বাদ করছি, তুই খুব ভালো করবি।’
এর পরের ঘটনা আরও চমকপ্রদ। তত দিনে তাঁর সেরা বন্ধু হয়ে উঠেছেন গোলাম কুদ্দুস। তিনিও লেখেন। দুই বন্ধু মিলে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ান। আর কথা বলেন কবিতা নিয়ে। একদিন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একটি কবিতা লিখলেন আবুল হোসেন। শিরোনাম দিলেন ‘হে ধরণীর কবি’। কাউকে না জানিয়ে-এমনকি কাছের বন্ধু গোলাম কুদ্দুসের কাছেও গোপন রেখে-সেটি খামে ভরে পাঠিয়েও দিলেন রবিঠাকুরের উদ্দেশ্যে। যদি কবি খুলে পড়েন কবিতাটি। যদি কিছু লিখে জানান। কিন্তু চিঠি তো আর আসে না। একসময় আশা শেষ হয়ে যায়। তখনই অকস্মাৎ-চার মাস পরে-তাঁর হাতে আসে ছোট্ট একটি চৌকো চিরকুট। চিরচেনা বিশিষ্ট হস্তাক্ষরে তাতে লেখা একটিমাত্র শব্দ- ‘আশীর্বাদ’। তার নিচে সই: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই ছোট্ট চিরকুট তাঁর একটি নির্জন দুপুরকে চিরদিনের মতো সোনায় মুড়ে দিয়ে যায়। সেই থেকে আবুল হোসেনের নতুন জীবনের সূচনা। কুষ্টিয়ায় পড়ার সময়েই কলকাতার বিভন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকায় কবিতা লিখেন তিনি। সেগুলি হলো-ফজলুল হক সেলবর্ষীর সম্পাদনায় ‘দৈনিক তকবীর’, চৌধুরী শামসুর রহমানের সাপ্তাহিক ‘হানাফী’, এস ওয়াজেদ আলির মাসিক ‘গুলিস্তা’ প্রভৃতি।
কবি আবুল হোসেন নিজেকে কিছুটা সৌভাগ্যবান মনে করেন। কারণ লেখা শুরু করার এক-দুই বছরের মধ্যেই তিনি উভয় সম্প্রদায়ের সেরা কাগজগুলিতে লিখতে পেরেছিলেন। পরিচয় হয় দুই সম্প্রদায়ের প্রধান কবি-সাহিত্যিক-সম্পাদকদের সঙ্গে।
প্রথম যৌবনে যখন কবিতা লিখতেন আবুল হোসেন, তখন তার সবটাই হয়ে যেত রবীন্দ্রনাথের ধাঁচের। কলকাতায় আধুনিক কবিতার সংস্পর্শে এসে বুঝলেন, কবিতা হতে হবে অন্য রকম। আরও কিছুদিন পর উপলব্ধি করলেন, অন্যদের মতো করে লিখলে তো তাঁকে আলাদা করে চেনা যাবে না। এবার তিনি খুঁজতে শুরু করলেন নিজের এক স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর। নিজের কণ্ঠস্বর রপ্ত করার সাধনায় আবুল হোসেন কবিতা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলেন বাড়তি সব রং, অযথা সব আবেগ। কবিতার ভাষাকে গড়াপেটার জন্য তিনি ধরতে চেয়েছেন পথচলতি মানুষের আটপৌরে শব্দ আর কথা বলার ভঙ্গি। মানুষের দৈনন্দিনের মুখের বুলি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন কবিতায়।
ষাট সালের দিকে তাঁরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ঢাকা থেকে একটা ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা বের করেন ‘সংলাপ’ নাম দিয়ে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। লেখা বা টাকা পয়সা বা সমর্থনের অভাবে নয়। ছয়-সাতটা সংখ্যা যখন বেরিয়েছে তখন হঠাৎ বিদেশে চাকরি নিয়ে ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে হয় তাঁকে। সাজ্জাদ হোসায়েন তারপরও দু’-একটি সংখ্যা বের করেছিলেন। প্রধানত লেখকদের, বিশেষ করে তরুণ লেখকদের সঙ্গে যোগাযোগের অভাবে ‘সংলাপ’ বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৪০ সালে তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘নব বসন্ত’ প্রকাশ হওয়ার পর ১৯৬৯ সালে ‘বিরস সংলাপ’, ১৯৮২ সালে ‘হাওয়া তোমার কি দুঃসাহস’, ১৯৮৫ সালে ‘দুঃস্বপ্ন থেকে দুঃস্বপ্নে’, ১৯৯৭ সালে ‘এখনও সময় আছে’, ২০০০ সালে ‘আর কিসের অপেক্ষা’, ২০০৪ সালে ‘রাজকাহিনী’, ২০০৭ সালে ‘আবুল হোসেনর ব্যঙ্গ কবিতা’ ও গদ্যের বই ‘দুঃস্বপ্নের কাল’, ২০০৮ সালে ‘প্রেমের কবিতা’ ও ‘কালের খাতায়’, ২০০৯ সালে গদ্য ‘স্বপ্ন ভঙ্গের পালা’ বইগুলি প্রকাশিত হয়। তাঁর অনুবাদ কবিতাগুলি হলো- ‘ইকবালের কবিতা’, ‘আমার জন্মভূমি’, ‘অন্য ক্ষেতের ফসল’। ২০০০ সালে ‘আমার এই ছোট ভূবন’, ২০০৫ সালে ‘আর এক ভুবন’ নামে দুটি স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ লিখেছেন তিনি। ‘অরণ্যের ডাক’ তাঁর অনুবাদ উপন্যাস। ‘পার্বত্যের পথে’ নামক ভ্রমণ কাহিনীও লিখেছেন তিনি। এছাড়া তাঁর আরও অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে।
কবি আবুল হোসেন বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন-একুশে পদক, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পুরস্কার, নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক, পদাবলী পুরস্কার, কাজী মাহবুবুল্লাহ পুরস্কার ও স্বর্ণপদক, আবুল হাসানাৎ সাহিত্য পুরস্কার, জনবার্তা স্বর্ণপদক, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, জনকন্ঠ গুণীজন সম্মাননা ও জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক সংবর্ধনা।
তিনি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, হল্যান্ড, ডেনমার্ক, ইটালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ আরও অনেক দেশ ভ্রমণ করেন।
আবুল হোসেন তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু কবিতার সাধনাকে কখনো দূরে ঠেলে দেননি তিনি। কোনো কিছুর মুখাপেক্ষী না থেকে, ধীরে ধীরে, লিখে গেছেন নিজের কবিতা এবং এখনও এই একাকী কবি নিভৃতে চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর কবিতা রচনার যজ্ঞ।
কবি আবুল হোসেন ২০১৪ সালের ২৯ই জুন মৃত্যুবরণ করেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী:
জন্ম: সেই প্রজন্মের আরও বহু বাঙালি মুসলমানের মতো আবুল হোসেনও তাঁর জন্মতারিখ নিশ্চিত করে কখনো জানতে পারেননি। মা বলতে পারেননি স্পষ্ট করে। শুধু বলেছিলেন, তাঁর জন্ম হয়েছিল ঝড়ের বছর, শ্রাবণ মাসের ১৫ তারিখে। বাবা বলেছেন, দিনটি ১৯২২ সালের আগস্ট। আগস্ট মাস শ্রাবণেই পড়ে। মায়ের তারিখ আর বাবার বছর নিয়ে তাঁর জন্মতারিখ হয়ে দাঁড়ায় ১৫ আগস্ট ১৯২২।
শিক্ষাজীবনে বা সরকারি নথিপত্রে অবশ্য এ তারিখের কোনো অস্তিত্ব রইল না। স্কুলে প্রথম ভর্তি করতে গিয়ে ভর্তির ফরমে বাবা জন্মতারিখ লিখেছিলেন ১ ফেব্রুয়ারি ১৯২২। কোত্থেকে এল এ তারিখ, সেটা তাঁর কাছেও এক রহস্য। কিন্তু কাগজে-পত্রে, দলিলে-নথিতে তাঁর জন্মতারিখ ১ ফেব্রুয়ারি হয়েই থেকে গেল। তবু জন্মদিন হিসেবে তাঁর মনে এখনো জায়গা করে আছে ১৫ আগস্ট তারিখটিই।
বাবা ও মা: বাবা এস.এম.ইসমাইল হোসেন ও মা মেহের-ইন-নিসা খাতুন। তাঁরা তিন ভাই, তিন বোন। তিনি ভাইদের মধ্যে বড়। তাঁর মেজ ভাই আমজাদ হোসেন পাকিস্তান আমলে পূর্ববঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন।
পড়াশুনা: তিনি ১৯২৯ সালে সাত বছর বয়সে কৃষ্ণনগর কলিজিয়েট স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন । সাড়ে সাত বছর কৃষ্ণনগরে থাকার পর তাঁর বাবা বদলি হন কুষ্টিয়ায়। আবুল হোসেন ভর্তি হলেন কুষ্টিয়া হাই স্কুলে নবম শ্রেণীতে। ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিলেন কুষ্টিয়া হাইস্কুল থেকে। পাস করার পর ভর্তি হলেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে আই.এ-তে । তখন ঢাকা শহরের পৌর এলাকার স্কুলগুলি ছাড়া প্রদেশের সব স্কুল-কলেজ ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায়। আই.এ. পাস করার পর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতিতে বি.এ. অনার্স ভর্তি হন। ১৯৪২ সালে অর্থনীতিতে বি.এ. (অনার্স) পাস করেন তিনি। এরপর কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম.এ. পাস করেন।
কর্মজীবন: ১৯৪৬-এর একুশে ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহ করল বোম্বাইয়ে নৌসেনারা। সন, তারিখ আবুল হোসেনের মনে থাকে না। কিন্তু নৌবিদ্রোহের এই তারিখটা তিনি কখনও ভোলেননি। কেননা ওই দিনে তিনি প্রথম সরকারি চাকরিতে যোগ দেন, কলকাতা আয়কর কমিশনারের অফিসে, এক্সামিনার অব অ্যাকাউন্টস পদে। দুটি কারণে এই চাকরিটা পেয়ে খুশি হয়েছিলেন তিনি। এক. এই পদের মাইনে ছিল ৩৫০-৪৬০ টাকা। তখন সরকারি কলেজের লেকচারাররা পেতেন ১২৫-৩৫০ টাকা। দুই. তাঁকে কলকাতার বাইরে কখনও যেতে হবে না। দ্বিতীয় কারণটাই ছিল আসল। তিনি কলকাতা ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চাননি। কারণ তখনই ঠিক করে নিয়েছেন সাহিত্য চর্চাই হবে তাঁর আসল কাজ এবং তার জন্য কলকাতাই সবচেয়ে ভাল জায়গা।
দেশ ভাগের প্রাক্কালে আয়কর কমিশনারের অফিসে এক্সামিনার অব অ্যাকাউন্টস পদটি উঠে যায়। তিনি সহ সাত জন এই পদে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন (আবদুস সাত্তার, ফজলুল করিম, দয়াল হরি দত্ত) বিভাগীয় পরীক্ষা দিয়ে আয়কর অফিসার হয়ে যান। বাকিদের পরিদর্শকের পদ দেওয়া হয়। কবি আবুল হোসেন পরীক্ষা দেননি। কারণ তখন দেশ বিভাগ অনিবার্য হয়ে উঠেছে এবং কলকাতাতে থাকা যখন আর সম্ভব হচ্ছে না তখন এই আয়কর বিভাগে চাকরি করার ইচ্ছেও তাঁর চলে গেছে। কিন্তু তারপরও তাঁকে ময়মনসিংহে আসতে হলো সহকারী বিক্রয় কর অফিসার হিসেবে। তবে দুই-আড়াই বছর পর তিনি ঢাকার রেডিও পাকিস্তানে একটা সমপর্যায়ের চাকরিতে যোগ দেন ‘৫০ সালের মাঝামাঝিতে। এরপর তাঁকে ব্যাংককে তিন বছরের জন্য পাবলিক ইনফরমেশন অফিসে ইন্টারন্যাশনাল স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেখান থেকে দেশে ফিরে তিনি জনসংযোগ বিভাগে যোগ দেন এবং সবশেষে ১৯৮২ সালে যুগ্মসচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
কবি আবুল হোসেন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্র পরিষদের সম্পাদক ছিলেন। বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির কার্যকরী পরিষদ,পাকিস্তান রাইটার্স গিল্ডের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ ও বাংলা একাডেমীর কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। রবীন্দ্র চর্চাকেন্দ্রের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং বাঙ্গালা একাডেমীর ফেলো ছিলেন।
১৯৫৮ সালে তিনি প্রখ্যাত লেখক আকবর উদ্দিনের জেষ্ঠ কন্যা সাহানার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের বিয়ে ঠিক করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। আবুল হোসেন-সাহানা দম্পতির দুই ছেলে দুই মেয়ে। ১৯৯৪ সালে তাঁর স্ত্রী সাহানা ইন্তেকাল করেন।
সাহিত্য: ১৯৪০ সালে তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘নব বসন্ত’ প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৬৯ সালে ‘বিরস সংলাপ’, ১৯৮২ সালে ‘হাওয়া তোমার কি দুঃসাহস’, ১৯৮৫ সালে ‘দুঃস্বপ্ন থেকে দুঃস্বপ্নে’ বইগুলি প্রকাশিত হয়। তাঁর অনুবাদ কবিতাগুলি হলো- ‘ইকবালের কবিতা’, ‘আমার জন্মভূমি’, ‘অন্য ক্ষেতের ফসল’। ২০০০ সালে ‘আমার এই ছোট ভূবন’, ২০০৫ সালে ‘আর এক ভুবন’ নামে দুটি স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ লিখেছেন তিনি। ‘অরণ্যের ডাক’ তাঁর অনুবাদ উপন্যাস। এছাড়া ‘পার্বত্যের পথে’ নামক ভ্রমণ কাহিনীও লিখেছেন তিনি।
পুরস্কার: কবি আবুল হোসেন বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন-একুশে পদক, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পুরস্কার, নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক, পদাবলী পুরস্কার, কাজী মাহবুবুল্লাহ পুরস্কার ও স্বর্ণপদক, আবুল হাসানাৎ সাহিত্য পুরস্কার, জনবার্তা স্বর্ণপদক, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, জনকন্ঠ গুণীজন সম্মাননা ও জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক সংবর্ধনা।
তথ্যসূত্র: কবি আবুল হোসেনের লেখা আত্মজীবনী- ‘আমার এই ছোট ভুবন’ ও ‘আর এক ভুবন’, প্রথম প্রকাশ-ফেব্রুয়ারি, ২০০৩ ও ফেব্রুয়ারি, ২০০৫, অবসর প্রকাশনা সংস্থা। ১৬ আগষ্ট, ২০০৮ সালের ‘প্রথম আলোর’ সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘ছুটির দিনে’র ৪৫৮ তম সংখ্যায়, সাজ্জাদ শরিফের লেখা ‘অন্তরালবর্তী এক কবি’ লেখা থেকে নেওয়া ।
মৃত্যু : ২০১৪ সালের ২৯ই জুন।
লেখক : মৌরী তানিয়া