গ্রামের এক বালিকা বিদ্যালয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর পড়াশুনা। যদিও নামে সেটি ছিল বালিকা বিদ্যালয় কিন্তু সেখানে ছেলে-মেয়ে সকলেই এক সাথে পড়াশোনা করত। এখান থেকে প্রাইমারি ধাপটি পাশ করে ভর্তি হন গ্রামেরই উচ্চ বিদ্যালয়ে। পরে চলে আসেন বগুড়ার ধুনট উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে বন্ধুদের সাথে মিলে বের করতেন দেয়াল পত্রিকা। এই বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ছিল প্রচুর বই। এসব বইয়ের মধ্য দিয়েই তিনি গড়ে তোলেন পাঠাভ্যাস। তখন থেকেই আলাদা করে পড়তেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল আর জীবনানন্দ দাশের কবিতা। বাড়ির সকলের ও বন্ধুদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অংকের খাতা ভরে তুলতেন কবিতা দিয়ে। বিদ্যালয় ছুটির পর বন্ধুরা যখন মাঠে খেলতে যেত, তিনি তখন ঘুরে বেড়াতেন নদীর তীরে প্রকৃতির সান্নিধ্যে।
সকলের চোখের আড়ালে কবিতা দিয়ে অংকের খাতা ভরে তোলা এই ছেলেটিই হচ্ছেন আমাদের প্রধান প্রিয় কবিদের একজন। নাম মহাদেব সাহা। গত চার দশকে তাঁর হাতে সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলা কবিতা। কিন্তু এখনো তিনি তাকিয়ে আছেন নতুনতর সৃষ্টি সুখের উল্লাসের দিকে। এই কবির কবিতায় মূর্ত হয়ে উঠেছে আমাদের চিরপরিচিত জীবনেরই ক্লেদ-যন্ত্রণা আর সুখের অনুসঙ্গগুলি। বাংলা কবিতার আবেগময় রূপটিকে মহাদেব সাহা সজীব ও জনপ্রিয় করে তুলেছেন তাঁর নিজস্ব বৈচিত্র্য দিয়ে। যে কারণেই পাঠক বারবার ফিরে আসে তাঁর কবিতার কাছে দ্রোহ বা প্রকৃতি কিংবা ভালবাসার ছোঁয়া পেতে।
বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই নিজের ভিতরে অনুভব করলেন কবিতা যেন তাঁর বয়স বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর সবার মতো তিনি নন। কিছুটা মগ্ন। কিছুটা অন্যরকম। এরই মধ্যে ১৯৬০ সালে ধুনট হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। স্কুলের পাঠ শেষ করে চলে আসেন ঢাকায়। ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। কিন্তু কঠিন টাইফয়েডে অক্রান্ত হয়ে শারীরিক অসুস্থতার কারণে পড়া শেষ না করেই চলে যান বগুড়ায়। বগুড়া তখন শিল্প-সাহিত্য-রাজনীতির সমঝদার শহর। এ ছোট জেলা শহরটি তখন সাহিত্যের প্রতি খুবই আগ্রহী। কিছু তরুণ কবিতাপ্রেমী ছিল এর নেপথ্যে। মহাদেব সাহাও ভিড়ে গেলেন সেই দলে। বগুড়াতে থাকাকালীন সময়েই সাহিত্য আর পত্র-পত্রিকার সঙ্গে গভীর যোগাযোগ তৈরি হয় মহাদেব সাহার। তখন অধ্যাপক মহসীন আলী দেওয়ান বের করেন ‘বগরা বুলেটিন’। শিল্প-সাহিত্যে আগ্রহী এই মানুষটি একটি সাহিত্য পত্রিকাও বের করতেন। কবি আতাউর রহমান তখন বগুড়ায়। ফলে জমে উঠতে বিশেষ সময় লাগল না তাঁর। বগুড়া ‘বেনীপুর বুক হাউস’ তখন শহরের সকল সাহিত্যমোদীদের ঠিকানা। বগুড়ার এসব সাহিত্যমোদীদের সাথে আড্ডা দেওয়ার পাশাপাশি চলত তাঁর পড়াশুনা। তিনি বগুড়া কলেজ থেকে ১৯৬৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন এবং সেখান থেকেই বাংলায় সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
বগুড়া কলেজে পড়ার সময় সব আধুনিক ও প্রগতিশীল তরুণরা মিলে বের করে ফেললেন লিটল ম্যাগাজিন ‘বিপ্রতীক’। সেসময় ‘বিপ্রতীক’ ঢাকায়ও যথেষ্ট আলোড়ন তোলে। বেনীপুর বুক হাউসে তখন নতুন নতুন সব পত্রিকা আর বই যেত। একদিন মহাদেব সাহার হাতে পড়ে ‘কন্ঠস্বর’ নামে একটি পত্রিকা। সম্পাদক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ। ‘কন্ঠস্বর’ তখন অন্যরকম এক পত্রিকা। এটি যেন চুম্বকের মতো টেনে নিয়ে যায় তরুণ কবিতাপ্রেমীদের। ‘কন্ঠস্বর’-এর ঘোষণাটি ছিল যেমন ধারালো তেমনি যুগোত্তীর্ণ। অভিভূত হয়ে যান মহাদেব সাহা। যেন নিজের জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পান পত্রিকার জীবন দর্শনে :-
“যারা সাহিত্যের স্বনিষ্ঠ প্রেমিক, যারা শিল্পে উন্মোচিত, সৎ, অকপট, রক্তাক্ত, শব্দতাড়িত, যন্ত্রণাকাতর, যারা উন্মাদ, অপচয়ী, বিকারগ্রস্ত, অসন্তুষ্ট, বিবরবাসী; যারা তরুণ, প্রতিভাবান, অপ্রতিষ্ঠিত, শ্রদ্ধাশীল, অনুপ্রাণিত; যারা পঙ্গু, অহংকারী, যৌনতাপিষ্ট- ‘কন্ঠস্বর’ তাদেরই পত্রিকা।”
একদিকে ‘কন্ঠস্বর’-এর রৌদ্র-তাপিত ঘোষণা, অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তানের উত্তাল-অস্থির রাজনীতি। লাঙ্গলের ফলা ফেলে কৃষক বুকে তুলে নিয়েছে স্বায়ত্তশাসনের শপথ। কল-কারখানার শ্রমিক চলে এসেছে রাজপথে। দেশ হাঁটছে স্বাধীনতার পথে ধীরে ধীরে। এরই মধ্যে মহাদেব সাহা এসে উঠেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৬৮ সালে বাংলায় এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৬৯ সালে ইংরেজি বিভাগে পুনরায় ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই পদ্মা নদী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর সবকিছু ভুলে ডুবে যান মতিহারের অপার প্রকৃতির রাজ্যে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তখন সত্যিকার অর্থেই সাহিত্যের তীর্থভূমি। কবি ও সাহিত্যিক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ও মুস্তাফা নুরউল ইসলামের সম্পাদনায় বের হয় ‘পূর্বমেঘ’-এর মতো বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা। লোক গবেষক কবি মযহারুল ইসলাম বের করেন ‘উত্তর অন্বেষা’। রাজশাহী থেকে বের হয় আরও তিনটি সাহিত্য পত্রিকা ‘সুনিকেত মল্লার’, ‘বনানী’ ও ‘একান্ত’। আর অধ্যাপক সালাউদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক বদরুদ্দীন উমর, অধ্যাপক মশাররফ হোসেন, হাসান আজিজুল হক, গোলাম মুরশিদ, সনত্ কুমার সাহা, আবদুল হাফিজ, আলী আনোয়ার সবাই মিলে যেন এক শিল্প-সাহিত্যের রাজত্ব তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। কবিতা লেখার কারণে সকলেরই স্নেহ পান মহাদেব সাহা। এমন পরিবেশে নিজেকে বুঁদ করে রাখেন কবিতা লেখায়। ঢাকার অনেক পত্রিকাতেই তখন নিয়মিত কবিতা ছাপা হচ্ছে তাঁর। বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ রেডিওর গীতিকার। তাঁদের উত্সাহে মহাদেব সাহা নিজেও গীতিকার হয়ে যান। সারাদিন ঘোরাঘুরি, রাতভর আড্ডা, তর্ক-বিতর্ক, শেষ রাতে হলে ফেরা। সব কিছুতেই নিজেকে লীন করে দেন মহাদেব সাহা। আবার গোপনে বুনে তোলেন নিজস্ব এক ঠিকানাও।
এতোকিছুর মধ্যেও যেন ‘কন্ঠস্বর’ মোহবিষ্ট করে রাখে তাঁকে। সাহস করে একদিন সেখানে পাঠিয়ে দিলেন একটি কবিতা। অসম্ভব দ্রুততায় মহাদেব সাহার হলের ঠিকানায় একটি খসখসে হলুদ ঘাম এসে হাজির। ‘কন্ঠস্বর’ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ লিখেছেন, আগামী সংখ্যাতেই কবিতাটি ছাপা হচ্ছে। চিঠি পেয়ে সে কী আনন্দ আর উত্তেজনা। মনে মনে অনুভব করেন ‘কন্ঠস্বর’-এর অস্থির উদ্দীপ্ত প্রবল জীবনের সঙ্গে মিলতে হবে। ভেতরে ভেতরে ঢাকা আসার উত্তেজনা ও স্বপ্ন দেখেন তিনি, যেটি ছিলো সত্যিকার অর্থেই কবিতা নিয়ে মেতে ওঠা এক অজ্ঞাত তরুণের ঢাকা আসার প্রস্তুতিপর্ব।
কিন্তু এরই মধ্যে ঘটে যায় এক কালজয়ী ঘটনা, আবার প্রিয় মুখ হারানোর কষ্টও। আইয়ুব খান তখন পাকিস্তানের শাসক। পশ্চিম পাকিস্তানে থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণ করেন মৌলিক গণতন্ত্রের নামে। এ দেশে তার চেলা মোনায়েম খাঁ আর নূরুল আমীন। পূর্ব বাংলায় তখন গোটা দেশ উত্তাল বিক্ষোভ-মিছিল-মিটিংয়ে। প্রায় প্রতিদিন টানটান উত্তেজনা৷ উত্তপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ও। সময়টা ‘৬৯-র ১৮ ফেব্রুয়ারি। আর্মি, পুলিশ, ইপিআর ঘিরে ফেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেইট বন্ধ। অগ্নিশিখার মতো জ্বলজ্বলে সবার চোখ। ১৪৪ ধারা ভেঙে বেরিয়ে গেল ছাত্র-ছাত্রীরা। ড. জোহা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। তিনি এসেছিলেন তাঁর প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের বাঁচাতে। কিন্তু নিজেই বুক পেতে নিলেন ঘাতকের গুলি। মহাদেব সাহা তখন মাত্র কয়েক গজ দূরে। তিনি ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী। শোকে পাথর হয়ে গেলেন তিনি। আইয়ূব শাহীর পতন হল বটে কিন্তু দেশ চলল আরও অনিশ্চয়তার পথে।
‘৬৯-র জুন মাসে ‘কন্ঠস্বর’ সম্পাদক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ উদ্যোগ নেন তরুণ কবি-লেখকদের নিয়ে প্রথম সাহিত্য উত্সব করার। সম্মেলন হবে ঢাকার তোপখানা রোডে পাকিস্তান কাউন্সিল মিলনায়তনে। সভাপতি মুনীর চৌধুরী। সম্মেলনে একটি প্রবন্ধ পড়ার জন্য মহাদেব সাহাকে অনুরোধ করেন ‘কন্ঠস্বর’ সম্পাদক। একটু অবাকই হন মহাদেব সাহা। কারণ তখন একমাত্র মহাদেব সাহা ছাড়া ষাটের লেখকেরা প্রায় সারবেঁধে দাঁড়িয়ে গেছেন ততদিনে। রাজশাহী থেকে সেদিন মহাদেব সাহা ছিলেন শেষ বাসের যাত্রী। অধ্যাপক আবদুল হাফিজও প্রবন্ধ পড়বেন সম্মেলনে। তাই আব্দুল হাফিজ আর মহাদেব সাহা দুজনই সম্মেলনে যোগ দিতে এলেন ঢাকায়। উঠলেন আবু সায়ীদেরই গ্রীন রোডের ছোট্ট দুই রুমের বাসায়। এই আসাটাই যেন মহাদেব সাহাকে সত্যিকার অর্থে ঢাকা চিনিয়ে দিল। সম্মেলনে নতুন লেখকদের সঙ্গে পরিচয় যেমন হল, প্রবন্ধ পড়ে কিছু প্রশংসা আর মফস্বলী বলে কিছু বিদ্রূপ ও তীক্ষ্ণ অট্টহাসিও জুটল। কিন্তু এরই মধ্যে যা বোঝার বুঝে গেলেন মহাদেব সাহা। ঢাকা যেন চোরাগুপ্তা টানে টানছে তাঁকে। এখানে পাড়ি না জমালে যেন কবিতার বিকাশ নেই। এক অন্ধ মোহ সারাক্ষণ লেগে থাকে তাঁর পিছু। সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। ঢাকায়ই আসবেন। এদিকে রাজশাহীতে বাকি রইল গবেষণা আর শিক্ষা-দীক্ষার যত উপাচার।
যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মহাদেব সাহাকে দিয়েছিল গভীর অনুভূতির দ্যোতনা সেই প্রিয় মতিহার ছেড়ে আসতে হলো কবিতারই কারণে। পড়ে রইল প্রমত্তা পদ্মা। কবি উঠে পড়লেন কবিতার ভেলায়। মহাদেব সাহার নিজের ভাষায়- ‘গার্ড বাঁশি বাজালেন। পেছনে পড়ে রইল রাজশাহী, মতিহার, কাজলা, উন্মুক্ত উথাল পদ্মা, আমি তাকিয়ে আছি অনন্তের দিকে। আর সঙ্গে নিয়ে চলেছি বহু আনন্দ-বেদনা, ভালবাসার স্মৃতি। সবার জীবনে যেমন আমার জীবনেও তেমনি সেই উদ্দীপ্ত মুখর দিবারাত্রির কলধ্বনি নীরবে বহে চলেছিল মনে। আমি রাজশাহী ছেড়ে ঢাকা যাচ্ছি, সে ছিলো অতল জলের আহ্বান, কবিতাময় দিনরাত্রির স্বপ্ন।’
ষাটের দশকে ঢাকা কলেজে পড়ার সময় কিছুকাল পরিচয় ছিল ঢাকার সঙ্গে। কিন্তু সে যাত্রা আর এবারের যাত্রার মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক। কবিতার জন্য যাত্রা। তবে অন্যদের চাইতে মহাদেব সাহাকে একটু ভাগ্যবানই বলতে হবে। অন্যদের মতো তাঁকে একেবারে খালি হাতে ঢাকায় আসতে হয়নি। পায়ের নিচে মাটি আছে একটু। মানে একটা চাকরি পাওয়া গেছে। সেটাও নাটকীয়। কোন ইন্টারভিউ নেই, ধরাধরি নেই, বলাবলি নেই। এক দরখাস্তেই চাকরি হয়ে গেল। ১৯৬৯-এর জুলাই মাসে দৈনিক ‘পূর্বদেশ’-এ সহকারী সম্পাদক পদে যোগদান করেন তিনি।
১৯৭৩ সালে ঢাকায় দেখা হয় কুমিল্লার মেয়ে নীলা সাহার সাথে। বার দুয়েকের দেখাশোনায় নিজেদের একটু জানাশোনাও হয়। ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে নিজেদের পছন্দে দুজন বিয়ে করে ফেলেন। তাঁদের দুই পুত্র সন্তান তীর্থ ও সৌধ।
১৯৭৫ সালের জুন মাসে ‘পূর্বদেশ’ বন্ধ হয়ে যায়। টানা পাঁচ বছর বেকার। এরপর ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত নিয়মিত কলাম লিখতেন ‘সংবাদ’-এ। সারথি নামে। প্রথম দিকে প্রতি সপ্তাহে দুটি করে পরে একটি করে সেই কলাম লেখার কাজ চালিয়ে যান। এসময় নানা অনিয়মে শরীরে জেঁকে বসে অসুস্থতা। যেন এক চরম দুঃসময়ের কাল। নানা ঘাটের পানি খেয়ে নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আবার ১৯৮০ সালে চাকরি হয় ‘ইত্তেফাক’-এ। সে চাকরি প্রায় ৩০ বছরের। বর্তমানে মহাদেব সাহা অনেকটাই গৃহী-সন্ন্যাসী। সকল কিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিঃসঙ্গ সময় কাটাতেই বেশী পছন্দ করেন। এখন যার একমাত্র আশ্রয় পরমপ্রিয়া কবিতার কাছে।
তাঁর বাবা গদাধর সাহা বৃটিশ আমলে এন্ট্রাস পরীক্ষার সময় কলকাতায় গিয়ে জড়িয়ে পড়েন রাজনীতির সাথে। তখন স্বদেশী আন্দোলনের যুগ। লেখাপড়া আর বিশেষ এগোয়নি। একসময় পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষার তাগিদে গদাধর সাহাকে ফিরে আসতে হয় গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু এব্যাপারে তিনি ছিলেন খুবই উদাসীন। তাঁর মন পড়ে থাকত নাটক আর যাত্রার দিকে। যাত্রার বিবেক হিসাবে তাঁর গানের গলা ছিল খুবই চমত্কার। মা বিরাজমোহিনী স্কুল পাশ করা গৃহিনী। কিন্তু সমস্ত রামায়ন আর মহাভারতটায় ছিলো তাঁর ঠোঁটের আগায়। প্রতিদিন বিকেলেই রামায়ন-মহাভারত পাঠের আসর বসত মাহাদেব সাহাদের বাড়ির আঙ্গিনায়। পাড়ার মহিলারাই হতো সে আসরের শ্রোতা। বিরাজমোহিনীর গানের গলাটিও ছিল ভারী সুন্দর। তিনি নিজে গান লিখে সুর করে শুনাতেন। কবিতাও লিখতেন। বৃহত্তর পাবনা জেলার ধানঘড়া গ্রামের এমন উদার আর সংস্কৃতিমনা পরিবারে ১৯৪৪ সালের ৫ আগস্ট মহাদেব সাহা জন্মগ্রহণ করেন। পিতামাতার একমাত্র সন্তান তিনি। সেই আমলেই তাঁর বাবা কোলকাতা থেকে ডাকযোগে আনাতেন ‘লোকসেবক’, ইংরেজী অর্ধ সাপ্তাহিক ‘অমৃতবাজার’, মাসিক ‘বসুমতি’ ইত্যাদি পত্রিকা। মহাদেব সাহার পরিবারটি পূর্ব পুরুষদের আমল থেকেই ছিল ছোটখাট ভূস্বামী।
সাহিত্যের পালাবদলে বাংলা কবিতার শ্বাশত রূপটিকে মহাদেব সাহা স্বব্যঞ্জনায় তুলে ধরেছেন তাঁর ৫৯টি কাব্যগ্রন্থে। এই প্রধান কবি গ্রন্থাগারে প্রথম সূচিবদ্ধ হন ১৯৭২-এ। ‘এই গৃহ এই সন্ন্যাস’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে। শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা কবিতার বই ছাড়াও লিখেছেন ভ্রমণ কাহিনী, আত্মজীবনী, সমালোচনাসহ নানা ধরনের রচনাও। সব মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৮১।
স্বাধীন বাংলার প্রসব বেদনায় তখন কাতর পূর্ব পাকিস্তান। রাজপথে তখন গনগনে আগুন। ছাত্র-যুবক-নারী-পেশাজীবী সবার মুখেই তখন ‘জয় বাংলা’। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি, ‘৬৯-এর ৬দফা, ছাত্রদের ১১দফা এসবেই তখন বাংলা মগ্ন। মগ্ন কবিতাও। সিকান্দার আবু জাফরের ‘সমকাল’, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ‘কন্ঠস্বর’, ‘সংবাদের সাময়িকী’ এসব আড্ডায় খুব অনায়াসেই ঢুকে গেলেন মহাদেব সাহা। নির্মলেন্দু গুণ, আবুল হাসান, হুমায়ুন কবির, হুমায়ুন আজাদ, রফিক আজাদ বন্ধু হয়ে গেলেন। ঢাকার সদরঘাট, রমনা পার্ক, রমনা রেস্তোরার মতন নির্জনতম স্থানগুলোতে বন্ধুরা মিলে আড্ডা জমান। হাসান হাফিজুর রহমান, আহসান হাবীব, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, আল মাহমুদ- এদেরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন মহাদেব সাহা। বন্ধুদের অনেকের সাথে জীবনাচরণে পার্থক্য থাকলেও আদর্শের কারণে একে অপরের যেন হরিহর আত্মা। বন্ধুতা, আড্ডা, ঘুরে বেড়ানো, চাকরি সব মিলিয়ে যেন নিজের ভেতরে কবিতার ফল্গুধারা বয়ে যায়। সেই টান আজো অনবরত মহাদেব সাহাকে নিমজ্জিত করে রেখেছে কবিতার গহিন অতলে।
এর মধ্যেই আসে একাত্তরের কালো রাত্রি, ২৫ মার্চ। তখন থাকতেন ১১৩ নং আজিমপুর রোডের একটি বাসায়৷ মেসবাড়ি। সারারাত নিজের ঘরে বসে প্রত্যক্ষ করেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর বর্বরতা। ২৬ মার্চ প্রথমে বেরিয়েই চলে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বন্ধু কবি আবুল হাসান তখন সেখানে ভর্তি। সেখানেই দেখেন জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাকে। তখনও জীবন প্রদীপ নেভেনি তাঁর। রক্তাক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রত্যক্ষ করেন ঢাকা শহরের সমস্ত বর্বরতা। সমস্ত শহর জুড়ে তখন কারফিউ। এর মধ্যেই চেষ্টা করেন ঢাকা থেকে বের হবার কিন্তু পারেননি। অবশেষে ২৭ মার্চে ঢাকা থেকে চলে যান নিজের গ্রামের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে স্থানীয়ভাবে তরুণদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই গ্রামে ২৫ এপ্রিল আক্রমণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। পরে জুন মাসের দিকে আসাম হয়ে পরিবারসহ চলে যান কোলকাতায়। সেখানে গিয়ে যুক্ত হন ‘জয়বাংলা’ পত্রিকা অফিসে, কাজ করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রেও। স্ক্রীপ্ট লেখা, কবিতা আবৃত্তি ইত্যাদি কাজ করেন কোলকাতায়। যুগান্তর, আনন্দবাজারসহ নানা পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করেন। বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অবহিত করার কাজ করতেন সেসময় মহাদেব সাহা।
১৩ ডিসেম্বর সাতক্ষীরায় প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়ে। ভারত থেকে কবি, সাংবাদিকদের একটি দল সেদিন সাতক্ষীরায় আসে সরেজমিন পরিদর্শনে। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়দের দলে সেদিন মহাদেব সাহাও ছিলেন। স্বাধীন বাংলার মাটিতে প্রথম স্পর্শ আজও শিহরণের মতো মনে হয় কবি মহাদেব সাহার কাছে। একে মনে করেন জীবনের দুর্লভ অক্ষয় স্মৃতি।
স্বাধীনতার পরপরই মুখোমুখি হন দুঃসহ বেদনার। কবি বন্ধু হুমায়ুন কবির ১৯৭২ সালে আর আবুল হাসান ১৯৭৫ সালে চলে যান লোকান্তরে। দেশজুড়ে তখন দুর্ভিক্ষাবস্থা। প্রবল হতে থাকে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির হুঙ্কার। যেন স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়ার আগেই স্বপ্নগুলো মিলিয়ে যাচ্ছে হাওয়ায়। আটকে যাচ্ছে নানা চোরাবালিতে। কোনোকিছু বুঝে উঠার আগেই ঘটে যায় নৃশংসতম ‘রক্তাক্ত আগস্ট’। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। শুরু হয় স্বাধীন বাংলার পিছন দিকে হাঁটা। রাজপথে জলপাই রঙের গাড়ি নামে। নিরাপদ নয় তখন জেলখানাও। বাকস্বাধীনতা মানে বন্দুকের নল। দেশ ও জাতির গভীর ক্রান্তিকালে মহাদেব সাহার কবিতায় তখন উচ্চারিত হয় দ্রোহ আর প্রতিবাদ। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তখন কবিতা প্রকাশ করেন ‘সংবাদ’, ‘সমকাল’সহ বিভিন্ন পত্রিকায়। বন্ধু, অভিভাবক আর আত্মীয়-স্বজনেরা এতো ক্ষুব্ধ হতে মানা করেন তাঁকে। কিন্তু কে ঠেকিয়ে রাখে ঘৃণার উদগার। ‘আরো একজন’, ‘আলস্য প্রহর’, ‘ভোরের প্রসঙ্গ’, ‘কফিন কাহিনী’, ‘দেশপ্রেম’ প্রভৃতি কবিতায় সেই স্বাক্ষরই রয়েছে।
চারজন দেবদূত এসে ঘিরে আছে একটি শরীর
একজন বললো দেখো ভিতরে কী স্থির।
মৃত নয়, দেহ নয়, দেশ শুয়ে আছে
সমসত্ম নদীর উত্স হৃদয়ের কাছে!
চারজন দেবদূত এসে ঘিরে আছে একটি কফিন
একজন বললো দেখো ভিতরে রঙীন
হাতের আঙ্গুলগুলি আরক্ত করবী
রক্তমাখা বুক জুড়ে স্বদেশের ছবি!
মহাদেব সাহার কবিতা যেন মানব-স্পর্শী সুখ-দুঃখ গাঁথার এক অবিরাম উপাখ্যান। তথাকথিত ‘শিল্পের জন্য শিল্প’র তরিকা থেকে তাঁর অবস্থান অনেক দূরে। যেন স্থিতধি, নিজের ভিতরে বুনে চলা সমাজেরই এক কথন নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন সারাটা বেলা। আদর্শ তাঁর পিছু ছাড়েনি৷ ‘৮০-র দশকে সরাসরি কমিউনিস্ট পার্টির সভ্য হন। ১৯৮৭ সালে জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠন ও আন্দোলনেও পালন করেন অগ্রণী ভূমিকা। যুক্ত হন উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাথেও। কবিতার জন্য ১৯৮৩ সালে পুরষ্কার পান বাংলা একাডেমীর। পুরষ্কারের সমস্ত অর্থ তখন তুলে দেন কমিউনিস্ট পার্টির হাতে।
সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, রাজনৈতিক মনস্কতা মহাদেব সাহাকে টেনে আনে মাটি আর মানুষের কাছাকাছি। তাঁর কবিতার শব্দনির্বাচন, ধ্বনি, চিত্রকল্প সবকিছুই যেন মৌমাছির মতো গুঞ্জরণ তোলে মানুষের উত্সবে। নিজেকে ও নিজের কবিতাকে দাঁড় করিয়ে দেন অপরিহার্য সংখ্যাগরিষ্ঠদেরই অংশ হিসেবে। বাংলা কবিতার মানবতারূপী এক বিশাল মহীরুহের একটি পাতা যেন মহাদেব সাহার কবিতা। চিলির প্রখ্যাত কবি পাবলো নেরুদার মতো যার স্থির বিশ্বাস ও আস্থা, ‘আমাদের কালে একজন কবির দায় থাকবে নির্জনতা এবং জনতা উভয়ের প্রতি।’
মানুষের ভিড়ে মানুষ লুকিয়ে থাকে
গাছের আড়ালে গাছ,
আকাশ লুকায় ছোট্ট নদীর বাঁকে
জলের গভীরে মাছ;
পাতার আড়ালে লুকায় বনের ফুল
ফুলের আড়ালে কাঁটা,
মেঘের আড়ালে চাঁদের হুলস্থূল
সাগরে জোয়ার ভাটা।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
জন্ম : কবি মহাদেব সাহার জন্ম বাংলা ১৩৫১ সালের ২০ শ্রাবণ, ইংরেজি, ১৯৪৪ সনের ৫ আগস্ট বৃহত্তর পাবনা জেলার ধানঘড়া গ্রামে৷ পিতা গদাধর সাহা, মাতা বিরাজমোহিনী৷ পিতামাতার একমাত্র সন্তান।
শিক্ষা : শিক্ষাজীবনের শুরু কালীতলা প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ে। ১৯৬১ সালে ধুনট হাইস্কুল থেকে মেট্রিক পাস করেন। ঢাকা কলেজে ১ বছর পড়ে শারীরিক অসুস্থতার কারণে বগুড়া কলেজে গিয়ে পুনরায় ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৬৪ সালে ইন্টারমিডিয়েট, সেখান থেকেই বাংলায় সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করে ১৯৬৯ সালে ইংরেজি বিভাগে পুনরায় ভর্তি হন। কিন্তু পড়া শেষ করেননি।
পরিবার : স্ত্রী নীলা সাহা, দুইপুত্র তীর্থ সাহা ও সৌধ সাহা।
পুরস্কার : বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৩), রেখাচিত্রম সম্মাননা-কলকাতা (১৯৯৪), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৫), জেবুন্নেসা-মাহাবুব উল্লাহ পুরস্কার (১৯৯৪), বগুড়া লেখকচক্র পুরস্কার (১৯৯৭), একুশে পদক (২০০১), খালেদদাদ চৌধূরী স্মৃতি পুরস্কার (২০০২), কবি সুকান্ত সাহিত্য পুরস্কার (২০০৩), বঙ্গবন্ধু পুরস্কার- কলকাতা (২০০৫), জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (২০০৮)।
ভ্রমণ : জার্মানি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ।
প্রকাশিত বইয়ের তালিকা :
মহাদেব সাহার কাব্যগ্রন্থসমূহ-
এই গৃহ এই সন্ন্যাস, মানব এসেছি কাছে, চাই বিষ অমরতা, কী সুন্দর অন্ধ, তোমার পায়ের শব্দ, ধুলোমাটির মানুষ, ফুল কই, শুধু অস্ত্রের উল্লাস, লাজুক লিরিক, আমি ছিন্নভিন্ন, মানুষ বড়ো ক্রন্দন জানে না, প্রথম পয়ার, কোথা সেই প্রেম, কোথা সে বিদ্রোহ, অস্তমিত কালের গৌরব, আমূল বদলে দাও আমার জীবন, একা হয়ে যাও, যদুবংশ ধ্বংসের আগে, কোথায় যাই, কার কাছে যাই, সুন্দরের হাতে আজ হাতকড়া, গোলাপের বিরুদ্ধে হুলিয়া, এসো তুমি পুরাণের পাখি, বেঁচে আছি স্বপ্নমানুষ, বিষাদ ছুঁয়েছে আজ মনভাল নেই, তোমার জন্য অন্তমিল, আকাশের আদ্যোপান্ত, ভুলি নাই তোমাকে রুমাল, তুমিই অনন্ত উত্স, কেউ ভালবাসে না, কাকে এই মনের কথা বলি, অন্তহীন নৃত্যের মহড়া, একবার নিজের কাছে যাই, পাতার ঘোমটা পরা বাড়ি, মন কেন কাঁদে, এ বড়ো আনন্দ এ বড়ো বেদনা, স্বপ্নে আঁকি সুন্দরের মুখ, ভালোবাসি হে বিরহী বাঁশি, বহুদিন ভালোবাসাহীন, কে তুমি বিষন্ন ফুল, অপরূপ অশ্রুজল, কোনখানে কোনো একদিন, কেন সুন্দর ব্যথিত এতো, ভালোবেসে ছুঁয়েছি আকাশ, অনেক দিনের বিষাদ আছে মনে, সব দুঃখ ভুলে যাই প্রেমের গৌরবে, ভালোবাসা, প্রিয় ঝড়াপাতা, কেন মোহে, কেনবা বিরহে, শূন্যতা আমার সঙ্গী, আমার ভিতরে যতো অন্ধকার, আমার ভিতরে যতো আলো, তবু স্বপ্ন দেখি, সোনালী ডানার মেঘ, পৃথিবী তোমাকে আমি ভালোবাসি, কে পেয়েছে সব সুখ, সবটুকু মধু, শুকনো পাতার স্বপ্নগাঁথা, দুঃসময়ের সঙ্গে হেঁটে যাই, দুঃখ কোন শেষ কথা নয়, ভালোবাসা কেন এতো আলো অন্ধকারময়, লাজুক লিরিক-২, দূর বংশীধ্বনি, অর্ধেক ডুবেছি প্রেমে, অর্ধেক আধারে, কালো মেঘের ওপারে পূর্ণিমা, সন্ধ্যার লিরিক ও অন্যান্য।
কবিতার সংকলন
মহাদেব সাহার রাজনৈতিক কবিতা, মহাদেব সাহার প্রেমের কবিতা, মহাদেব সাহার রাজনৈতিক কবিতা, মহাদেব সাহার কাব্যসমগ্র ১ম খণ্ড, ২য় খন্ড, ৩য় খন্ড, ৪র্থ খন্ড, মহাদেব সাহার শ্রেষ্ঠ কবিতা, প্রেম ও ভালবাসার কবিতা, নির্বাচিত ১০০ কবিতা, নির্বাচিত একশ-কলকাতা থেকে প্রকাশিত, প্রকৃতি ও প্রেমের কবিতা, মহাদেব সাহার কবিতার ইংরেজী সংকলন- অনুবাদ: ফাতেমা জহুরা হক।
প্রবন্ধের বই
আনন্দের মৃত্যু নেই, মহাদেব সাহার কলাম, কবিতার দেশ ও অন্যান্য ভাবনা, মহাদেব সাহার নির্বাচিত কলাম ইত্যাদি।
শিশু ও কিশোরদের বই
টাপুর টুপুর মেঘের দুপুর, ছবি আঁকা পাখির পাখা, আকাশে ওড়া মাটির ঘোড়া, সরষে ফুলের নদী, আকাশে সোনার থালা, মহাদেব সাহার কিশোর কবিতা ইত্যাদি।
এছাড়াও মহাদেব সাহার অনেক কবিতা ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, রুশ, হিন্দি, অসমীয়াসহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
সহায়ক গ্রন্থ
১. মহাদেব সাহার নির্বাচিত কবিতা
২. আমার কন্ঠস্বর- নির্মলেন্দু গুণ
৩. ভালবাসার সাম্পান- আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
৪. সংবাদ সাময়িকী- ৭ আগষ্ট, ২০০৮
৫. সাপ্তাহিক- ঈদ সংখ্যা, ২০০৮
৬. মহাদেব সাহার সাক্ষাত্কার
লেখক : চন্দন সাহা রায়