হাসান আজিজুল হকের বড় ভাই বর্ধমান শহরে চাচার কাছে থেকে স্কুলে পড়তেন। সেখান থেকে বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, শরত্চন্দ্র ও অন্যান্য লেখকের বই আসত গ্রামের বাড়িতে। ভাইয়ের পাঠানো এসব বই পড়তেন তিনি এবং মামার বাড়ি ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বিভিন্ন বইয়ের জন্য তল্লাশি চালাতেন। বই সংগ্রহ করে বইয়ের মধ্যেই ডুবে থাকতেন সবসময়। আর এভাবে বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকতে থাকতেই লেখালেখি শুরু করেন এবং এদেশের একজন জীবন-ঘনিষ্ঠ সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। অসংখ্য উৎকৃষ্ট গল্পের সমারোহে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন তিনি। অবিশ্রান্ত লিখে যাচ্ছেন নতুন নতুন গল্প। বিশ্ব ছোটগল্পের সাথে তুলনা করে বলা যায় বাংলা ছোটগল্পকে তিনি ইতিমধ্যেই একক চেষ্টায় তুলে দিয়েছেন অনন্য সাধারণ উচ্চতায়। শুধু সাহিত্য নয়, গণমানুষের অধিকার আদায়ের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামেও তিনি বরাবর সোচ্চার।
১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে হাসান আজিজুল হক জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নানা পুরনো কালের শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। ফরাসী ও বাংলায় তাঁর লেখা বেশ কয়টি পাণ্ডুলিপিও ছিল। আর তিনি ছিলেন দারুণ এক কথক। হাসান আজিজুল হকের বাবা-চাচাদের পরিবার ছিল বিশাল একান্নবর্তী একটি পরিবার। ছেলেবেলায় যবগ্রামের অবাধ প্রকৃতির লীলা-বৈচিত্র দেখে দেখে তিনি বড় হয়েছেন। তিনি তাঁর জন্মভূমি যবগ্রামের প্রকৃতির বর্ণনা ও তাঁর ছেলেবেলার কথা লিখেছেন এভাবেই :
‘বোশেখ মাসের কোনো কোনো দিন বেলা থাকতেই ঈশেন কোণে একটুখানি কালো মেঘ সর সর করে এগোতে এগোতে আর দ্যাখ্ দ্যাখ্ করে বড় হতে হতে নিমিষে সারা আকাশে ভরে ফেলে। একেবারে দিনে দিনেই রাত নেমে আসে আর থমকে থেমে যায় সবকিছু। প্রকৃতি আর নিঃশ্বাস নিচ্ছে না, আটকে রেখেছে নিজের ভেতরে। তার পরেই একেবারে প্রলয়-ঝড়। বড় বড় গাছগুলো উপড়ে, খড়ের চাল, টিনের চাল উড়িয়ে পুকুরে উথাল-পাথাল ঢেউ তুলে সব লন্ডভন্ড ছিঁড়ে খুঁড়ে একাকার! কতক্ষণই বা চলে কালবৈশাখী, দশ-পনেরো মিনিট? থামলেই মনে হয়, যাক, এবারের মতো প্রাণে প্রাণে বেঁচে গেল দুনিয়া। তারপরে ঝিরঝির করে ময়দা-চালা মোলায়েম বৃষ্টি, মেঘের তালায় সূয্যি, বেলা এখনো খানিকটা আছে। লাল আলো ছড়িয়ে হাসতে হাসতে ডুবছে সূয্যি।’
হাসান আজিজুল হকের বাবা এমনিতে তাঁদের দিকে চেয়েও দেখতেন না। তাঁরা বড় হচ্ছেন যেন বাড়ির কোণে ফেলে দেওয়া আঁটি থেকে জন্মানো আমের চারার মতো। আলো হাওয়া রোদ বৃষ্টি পাচ্ছেন এই যথেষ্ট। হতে পারে তাঁর বাবা বোধহয় ভাবতেন, মাটিই যথেষ্ট, বড় হতে যা যা লাগে সব সেখানে আছে। তিনি তাঁদের দেখেন না, দেখেন না, হঠাৎ একদিন চোখে পড়ল কড়া গালায় বললেন, চুল হয়েছে তো বাউরিদের মতো। যা, খেলা নাপিতকে ডেকে নিয়ে আয়, বলবি, বাবা ডাকছে, ক্ষুর কাঁচি নিয়ে চলে আসুক।
পাগলা নাপিত একদিন বেলা এগারোটার দিকে এসে খামারবাড়ির এক কোণে পাশের কোঠাবাড়ির ছায়ায় বসিয়ে তাঁর চুল কাটতে লেগে গেল। খড়ের চালের খুব ঘন ছায়া হয়। এদিকে বাইরের দিকে তাকানো যায় না, ঝাঁ ঝাঁ করছে দুপুর। জনপ্রাণী নেই আশপাশে। তাঁরা খড়ের চালের ঠাণ্ডা ছায়ায় বসে আছেন। মাঝে মাঝে হুশ করে ধুলোভরা বাতাস আসছে, দূরে পাকুড় গাছ থেকে সেই বাতাসের ঝম ঝম শব্দ শুনতে পাচ্ছেন। কিন্তু পাগলা নাপিত কঠিন রাগ রাগ মুখ করে দাঁত চেপে বারে বারে তাঁর মাথাটা তার ময়লা ধুতি পরা দুই উরুর মাঝখানে গুঁজে দিচ্ছে। তাঁর খুব উমুড়ি-গুমুড়ি লাগছে, হাঁপু-চুপু করছেন-ওই মাথায় সাবান মাখিয়ে দিলে যেমন হয়-তিনি মাথা সরিয়ে আনতে চান আর পাগলদা আঃ বলে ফের ঠেসে ধরে দুই উরুর মাঝখানে। একটা লোহার চেয়ারে বসে তাঁর বাবা দেখছেন। তাঁর বাবার আবার সায় পাগল নাপিতের দিকেই। তিনি বলেন চুলবুল করছিস কেন, বোস্ না একটু স্থির হয়ে।
চুল কাটা চলছে। প্রথমে খানিকক্ষণ খ্যাঁচ খ্যাঁচ কাঁচি চালিয়ে চুলের জঙ্গল সাফ করে দেওয়া হলো। তারপর শুরু হলো কিট কিট কিট কিটি, ক্লাপ ক্লাপ ক্লাপ, ঠক ঠক। তিনি ভাবছেন কতক্ষণ চলবে এসব, কত কাল! এদিক-ওদিক তাকানো যাচ্ছে না। আর তাঁর বাবা মাঝে মাঝে উহুহু-কানের কাছে এক থোপা চুল রয়ে গেল-এই যে এইখানে! কিট কিট থামিয়ে ক্ষুর বের করতে গেলে, না না, ছেঁচে দিস না। এদিকে এমন করে তাঁর ঘাড় বাঁকানো যে কোনো কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না তিনি, শুধু চোখের কোণে দহলিজে টাঙানো একটা বাংলা ক্যালেন্ডারে দেখতে পাচ্ছেন ১৩৫৩ ঘুরেফিরে খালি ১৩৫৩, ১৩৫৩ আর একটা বুড়ো গাছতলায় বসে দুটো ছাগল চরাচ্ছে। মাঠে খুব ঘাস! ক্যালেন্ডারের মাঠে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশুনা নিজের গ্রামেই করেছেন তিনি। ১৯৫৪ সালে যবগ্রাম মহারানী কাশীশ্বরী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। যে পরিবারে হাসানের জন্ম সেই পরিবারের কেউ কেউ চাকরিতে প্রবেশ করলেও তাঁদের পারিবারিক অর্থনীতির শেকড় তখনও কৃষিতেই আমূল প্রোথিত ছিল। ১৯৫৬ সালে খুলনার দৌলতপুরের ব্রজলাল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। প্রথম যৌবনেই ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন হাসান আজিজুল হক। রাজনীতি করার কারণেই পাকিস্তান সরকারের চরম নির্যাতন ভোগ করতে হয় তাঁকে । কলেজের অধ্যক্ষ তাঁর মেধা-বৃত্তি ফাইলচাপা করে রাখেন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁকে কলেজ ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। পরে তিনি এসে ভর্তি হন রাজশাহী সরকারি কলেজে। ১৯৫৮ সালে এই কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৬০ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
১৯৫৮ সালে শামসুননাহারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর তিন মেয়ে ও এক ছেলে। ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি রাজশাহী সিটি কলেজ, সিরাজগঞ্জ কলেজ, খুলনা গার্লস কলেজ এবং দৌলতপুর ব্রজলাল কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্কালীন উপাচার্য খান সারওয়ার মুরশিদ নিজে উদ্যোগী হয়ে তাঁকে রাজশাহী নিয়ে আসেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন হাসান আজিজুল হক। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন তিনি।
রাজশাহী কলেজে পড়ার সময় একই কলেজের উদ্যমী তরুণ মিসবাহুল আজীমের সম্পাদনায় প্রকাশিত ভাঁজপত্র ‘চারপাতা’য় হাসানের প্রথম লেখা ছাপা হয়। সেটি কিন্তু কোনো গল্প ছিল না। যাযাবর, সৈয়দ মুজতবা আলী ও রঞ্জনের সুবাদে রম্যরচনা তখন বেশ জনপ্রিয়। রাজশাহীর আমের মাহাত্ম্য নিয়েই প্রথম লেখাটি লিখেছিলেন তিনি। ‘চারপাতা’র ছোট্ট এক কলামে ছাপা হয়েছিল হাসান আজিজুল হকের সেই রম্যরচনাটি।
খুলনায় এসে তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির উৎসমুখ খুলে গেল প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সন্দীপন’-কে কেন্দ্র করে। ষাটের দশকের প্রথম দিকেই নাজিম মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান, জহরলাল রায়, সাধন সরকার, খালেদ রশীদ প্রমুখ সংগ্রামী কয়েকজন তরুণের চেষ্টায় গঠিত হয়েছিল ‘সন্দীপন গোষ্ঠী’। গণসঙ্গীত ও গণসংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে গোটা দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তাঁরা। পরে ১৯৭৩ সালের দিকে তাঁদেরই কেউ কেউ, বিশেষ করে নাজিম মাহমুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নাটক, আবৃত্তি, সাহিত্য, সঙ্গীত ও সংস্কৃতি চর্চা দিয়ে সরগরম করে তোলেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। ততদিনে অবশ্য হাসান আজিজুল হক রীতিমতো বিখ্যাত। আদমজী এবং বাংলা একাডেমী পুরস্কারের মুকুট তাঁর মাথায়। আঙ্গিক, ভাষা ও বিষয়ের অভিনবত্বে তিনি বাংলা গল্পে তাঁর অবস্থান সংহত করে নিয়েছেন। ‘সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য’, ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’, ‘জীবন ঘষে আগুন’ এইসব গ্রন্থের গল্পগুলো লিখে মনোযোগ কেড়ে নিয়েছেন বোদ্ধা পাঠকদের। ষাটের দশকে বাংলা কথাসাহিত্যের বাঁক বদলের রূপকারদের অন্যতম একজন হিসেবে স্বীকৃতিও মিলতে শুরু করেছে তাঁর।
কিন্তু কোনো স্বীকৃতিই জাত লেখককে তৃপ্ত করতে পারে না, তাঁর কলমকে বাঁধা বৃত্তের অচলায়তনে আটকে রাখতে পারে না। আর তাই হাসান আজিজুল হকও কথাসাহিত্যের প্রচলিত ধারাকে তো বটেই, নিজের লেখাকেও বার বার নতুন পরীক্ষার সামনে দাঁড় করিয়েছেন। সময়ের সাথে যেমন সমাজের সদর-অন্দর, সমাজের মানুষের ভিতর-বাহির পাল্টেছে, তেমনি পাল্টেছে তাঁর গল্পও।
প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য’-এর প্রথম গল্প ‘শকুন’-এ সুদখোর মহাজন তথা গ্রামের সমাজের তলদেশ উন্মোচিত করেছিলেন তিনি। সামাজিক পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় তাঁর গল্পের ভিতর-বাহির কীভাবে পাল্টেছে, প্রথম গ্রন্থের প্রথম গল্পের সাথে এ যাবত্ প্রকাশিত শেষগ্রন্থের শেষ গল্পটি পাশাপাশি রেখে পড়লেই পাঠক তা ধরতে পারবেন। সময়, সমাজ ও মানুষের অন্তর-বাহির ও বিস্তৃতি চষে বেড়িয়েছেন হাসান আজিজুল হক। প্রখর দৃষ্টি দিয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজেছেন মানুষের গহীন তল্লাট।
সময় ও সমাজ আলাদা হলেও যেসব সাধারণ বৈশিষ্ট্যের কারণে ভিন্ন ভিন্ন সমাজে ভিন্ন ভিন্ন সময়েও মানুষ মানুষই থাকে, সেসব বৈশিষ্ট্যের দিক তুলে ধরে তাঁর গল্প বিশ্বজনীন এবং চিরন্তন আবেদন নিয়ে এসেছে। যেমন ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ গল্পের সেই উদ্বাস্তু লোকটি- যে তার মেয়ের মাংস বিক্রির টাকায় জীবনাতিপাত করে। তার সেই উদ্বাস্তু জীবনের গ্লানি ও বেদনাবোধ স্থান ও কালের পরিসর ছাড়িয়ে ওঠে। প্রায় অর্ধশতাব্দীর গল্পচর্চায় বিষয়, চরিত্র ও নির্মাণকুশলতায় উল্লেখ করার মতো গল্প হাসান আজিজুল হকের অনেক।
তাঁর একটি গল্পগ্রন্থের নাম ‘রাঢ়বঙ্গের গল্প’। শুধু এ গ্রন্থের গল্পগুলোই নয়, তাঁর অনেক গল্পেরই শিকড় আছে রাঢ়বঙ্গে। তবু আজ তিনি এই বাংলাদেশেরই লেখক। নিজেকে আমূল প্রোথিত করে নিয়েছেন এই বাংলাদেশের বাস্তবতায়।
হাসান আজিজুল হকের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে: গল্পগ্রন্থ- সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য (১৯৬৪), আত্মজা ও একটি করবী গাছ (১৯৬৭), জীবন ঘষে আগুন (১৯৭৩), নামহীন গোত্রহীন (১৯৭৫), পাতালে হাসপাতালে (১৯৮১), আমরা অপেক্ষা করছি (১৯৮৮), রোদে যাবো (১৯৯৫), মা মেয়ের সংসার (১৯৯৭), বিধবাদের কথা ও অন্যান্য গল্প (২০০৭), রাঢ়বঙ্গের গল্প (১৯৯১), নির্বাচিত গল্প (১৯৮৭), হাসান আজিজুল হকের শ্রেষ্ঠগল্প (১৯৯৫)। উপন্যাস- বৃত্তায়ন (১৯৯১), আগুনপাখি (২০০৬), শিউলি। নাটক – চন্দর কোথায় (জর্জ শেহাদের নাটকের ভাষান্তর) প্রবন্ধ- চালচিত্রের খুঁটিনাটি, একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা, কথাসাহিত্যের কথকতা, অপ্রকাশের ভার, অতলের আধি, সক্রেটিস, কথা লেখা কথা, লোকযাত্রা অআধুনিকতা সংস্কৃতি। শিশুসাহিত্য- লালঘোড়া আমি (১৯৮৪ সালে প্রকাশিত কিশোর উপন্যাস), ফুটবল থেকে সাবধান (১৯৯৮ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গল্প)। জাতীয় সাহিত্য প্রকাশন থেকে পাঁচ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে হাসান আজিজুল হকের রচনাসংগ্রহ।
তিনি ১৯৬৭ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার এবং ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আরও অনেক পুরস্কার, পদক ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। এসবের মধ্যে রয়েছে লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), কাজী মাহবুব উল্লাহ ও বেগম জেবুন্নিসা পুরস্কার। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পদক ‘একুশে পদকে’ ভূষিত হয়েছেন হাসান আজিজুল হক। ‘আগুনপাখি’ উপন্যাসের জন্য আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন।
দীর্ঘ ৩১ বছর অধ্যাপনার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে নিজ বাড়ি ‘উজান’-এ প্রতিদিনের সবটুকু সময় লেখালেখি নিয়ে বিমগ্ন আছেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত জীবনী:
জন্ম: ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে হাসান আজিজুল হকের জন্ম।
বাবা-মা: বাবার নাম মোহাম্মদ দোয়াবখশ। মার নাম মোছাম্মত জোহরা খাতুন। তাঁর।
পড়াশুনা: প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশুনা নিজের গ্রামেই করেছেন তিনি। ১৯৫৪ সালে যবগ্রাম মহারানী কাশীশ্বরী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। যে পরিবারে হাসানের জন্ম সেই পরিবারের কেউ কেউ চাকরিতে প্রবেশ করলেও তাঁদের পারিবারিক অর্থনীতির শেকড় তখনও কৃষিতেই আমূল প্রোথিত ছিল। ১৯৫৬ সালে খুলনার দৌলতপুরের ব্রজলাল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। প্রথম যৌবনেই ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন হাসান আজিজুল হক। রাজনীতি করার কারণেই পাকিস্তান সরকারের চরম নির্যাতন ভোগ করতে হয় তাঁকে । কলেজের অধ্যক্ষ তাঁর মেধা-বৃত্তি ফাইল চাপা করে রাখেন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁকে কলেজ ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। পরে তিনি এসে ভর্তি হন রাজশাহী সরকারি কলেজে। ১৯৫৮ সালে এই কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৬০ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
কর্মজীবন: ১৯৬০ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি রাজশাহী সিটি কলেজ, সিরাজগঞ্জ কলেজ, খুলনা গার্লস কলেজ এবং দৌলতপুর ব্রজলাল কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্কালীন উপাচার্য খান সারওয়ার মুরশিদ নিজে উদ্যোগী হয়ে তাঁকে রাজশাহী নিয়ে আসেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন হাসান আজিজুল হক। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন তিনি।
সংসার জীবন: ১৯৫৮ সালে শামসুননাহারের সঙ্গে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর তিন মেয়ে ও এক ছেলে।
তথ্যসূত্র :
এ লেখাটির জন্য হাসান আজিজুল হক সংক্রান্ত সনত্কুমার সাহা, যতীন সরকার এবং জাহানারা নওশিনের রচনা, মনু ইসলাম সম্পাদিত ‘সেন্টার ফর বাংলাদেশ কালচার’ প্রকাশিত ‘কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক সংবর্ধনা’ শীর্ষক পুস্তিকা এবং ‘বাংলা একাডেমী লেখক অভিধান’ এবং প্রথম আলো ঈদ সংখ্যা, ২০০৮ থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে।
লেখক: ষড়ৈশ্বর্ষ মুহম্মদ
পুনর্লিখন: গুণীজন দল