ছোটবেলা থেকেই শিল্পী হবার বাসনা ছিল রশিদ চৌধুরীর মনে। প্রাথমিক শিক্ষা জীবনের শুরু গ্রামের পাঠশালায়। বাড়িতে একজন মাস্টারও ছিলেন। তিনি ছেলেদের দেখাশোনা করতেন। তারপরে যাঁরা গৃহশিক্ষক হয়ে এসেছিলেন তাঁরা সবাই ছিলেন মৌলবী। তাঁরা একসঙ্গে লেখাপড়া, আদবকায়দা ও ধর্মশিক্ষা দিতেন। স্থানীয় রজনীকান্ত হাই স্কুল, আলীমুজ্জামান হাই স্কুল ও কলকাতার পার্ক সার্কাস হাই স্কুলের পাঠ চুকিয়ে ১৯৪৯ সালে প্রবেশিকা বা ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন তিনি। প্রবেশিকা পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, তিনি তৃতীয় বিভাগ পেয়েছেন। এসময় কলকাতা থেকে তাঁদের বাড়িতে এলেন এনামুল হক চৌধুরী। তাঁদের হেনা কাকা, যাঁর সঙ্গে শিল্পী জয়নুল আবেদিন ও কামরুল হাসানের পরিচয় ছিল। একদিন তাঁর চোখে পড়ল, বাড়ির বাইরে বসে কনক মানে রশিদ চৌধুরী একটা গরুর গাড়ির ছবি আঁকায় মগ্ন। দেখে তিনি খুশি হয়ে তাঁকে ছবি আঁকা শেখার পরামর্শ দিলেন এবং ঢাকা আর্ট স্কুলে গিয়ে ভর্তি হতে বললেন। পিতা রাজনীতি করলেও সাহিত্য ও সঙ্গীতানুরাগী ছিলেন। তিনি তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ঢাকায় এসে তিনি ভর্তি পরীক্ষা দেন ঢাকার তৎকালীন সরকারি আর্ট কলেজে। কিন্তু উত্তীর্ণ হতে পারেননি। পরে ছয় মাসের মধ্যে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার শর্তে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ১৯৪৯ সালে তাঁকে আর্ট কলেজে ভর্তি করান। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে দেওয়া কথা তিনি রেখেছিলেন। আর তাইতো ৫ বছরের সার্টিফিকেট কোর্স শেষ করে রশিদ চৌধুরী ১৯৫৪ সালে আর্ট কলেজ থেকে প্রথম বিভাগ লাভ করেন।
রশিদ চৌধুরীর দাদা ছিলেন জমিদার। কিন্তু সরকারি আইনে জমিদারী প্রথার বিলুপ্তি হয়ে গেলে তাঁদের পরিবারের উপরও এক প্রকার অর্থনৈতিক ধ্স নামতে শুরু করে। তখন তাঁর বাবা ইউসুফ হোসেন চৌধুরী পেশা হিসেবে ওকালতিকে বেছে নেন। বেশ প্রসারও ঘটে তাঁর ওকালতি ব্যবসায়। পাশাপাশি মুসলিম লীগের রাজনীতিতে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন তিনি। ঐতিহ্যগতভাবে তাঁদের পরিবার রক্ষণশীল হলেও প্রগতিশীলতারও অভাব ছিল না। জমিদার পরিবারের পুরনো জৌলুস না থাকলেও ৩৭ একর জমি জুড়ে বিশাল আটচালা বাড়ি, বড় বড় পুকুরসহ বাগান ঘেরা পরিবেশ, বাহিরে জীর্ণ প্রাচীর এবং পেছনে ছিল পদ্মা নদী। বনেদি ও ক্ষয়িষ্ণু এই জমিদার পরিবারে ১৯৩২ সালের ১ এপ্রিল জন্ম নেন শিল্পী রশিদ চৌধুরী। তাঁর ডাক নাম কনক। পুরোনাম- রশিদ হোসেন চৌধুরী।
ফরিদপুর জেলার হারোয়া গ্রামে রশিদ চৌধুরীর জন্ম হলেও তাঁর শৈশবেই বাবা ইউসুফ সাহেব আবাসভূমি স্থানান্তরিত করে নিয়ে যান নিকটবর্তী রতনদিয়া গ্রামে- বর্তমান রাজবাড়ী জেলায়। রশিদ চৌধুরীর মা শিরিন নেসা চৌধুরানী। তাঁর বড় চাচা আলীমুজ্জামান চৌধুরী ফরিদপুরের ধুলো-মাটির সঙ্গে আজও জড়িয়ে আছেন। এই চাচার নামেই নামকরণ হয়েছে আলীমুজ্জামান সেতু ও আলীমুজ্জামান হলের। রশিদরা ছিলেন নয় ভাই, চার বোন। এছাড়াও বাড়িতে আত্মীয়স্বজন ও কাজের লোকের বিরাট বহর তো ছিলই। বাড়ির কাছেই ছিল পদ্মা নদী, ফলে নদীপাড়ের কৃষক ও জেলে সম্প্রদায়ের জীবনপ্রবাহকে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল শৈশবেই। শৈশব-বাল্যের সেই স্মৃতি তাঁর অন্তরে যে গভীরভাবে জেগে ছিল তা তাঁর শিল্পকর্মের দিকে দৃষ্টি দিলেই বোঝা যায়। পঞ্চাশের দশকের প্রথম ভাগে পদ্মার ভাঙনে রতনদিয়ার বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেলে তাঁদের গোটা পরিবার ঢাকায় চলে আসে।
রশিদ চৌধুরী ছিলেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের ২য় ব্যাচের ছাত্র। তাঁর ব্যাচেরই ছাত্র ছিলেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী আবদুর রাজ্জাক, কাইয়ুম চৌধুরী, মুর্তজা বশীর প্রমুখ। ১৯৫৪ সালে আর্ট কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে পাস করার পর এ বছরই ভারতের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ মিউজিয়ামে শিল্প-সমঝদারি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ কোর্সে মুর্তজা বশীরের সঙ্গে ভর্তি হন। কিন্তু পাঠ সমাপ্ত না করেই ঢাকায় প্রস্থান করেন। ১৯৫৬-৫৭ সালে স্পেন সরকারের স্নাতকোত্তর বৃত্তি পেয়ে মাদ্রিদের সেন্ট্রাল এস্কুলা দেস বেলিয়াস আর্টেস দ্য সান ফার্নান্দো থেকে ভাস্কর্যে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৬০-৬৪ সালে ফরাসি সরকারের স্নাতকোত্তর বৃত্তি পেয়ে প্যারিসের একাডেমী অব জুলিয়ান অ্যান্ড বোজ আর্টস থেকে ফ্রেস্কো, ভাস্কর্য ও ট্যাপিস্ট্রি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে মার্কিন সরকার প্রদত্ত লিডারশিপ গ্র্যান্টের অধীনে আমেরিকায় শিক্ষাসফর করেন। খুব অল্প বয়স থেকেই কখনও ঢাকায়, কখনও চট্টগ্রামে, কখনও কলকাতায়, কখনও স্পেনে, কখনও প্যারিসে, কখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা কখনও অন্য কোথাও, এরকম করেই জীবন কেটেছে তাঁর। ফলে বহু জীবন ও পরিবেশ দেখার অভিজ্ঞতা জমেছিল তাঁর হিসেবের খাতায়।
রশিদ চৌধুরী কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৫৮ সালে, সরকারী আর্ট ইনস্টিটিউটে (বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে। কিন্তু বেশিদিন সেখানে থাকা হয়নি, ১৯৬০ সালেই এ চাকরি ছেড়ে দেন। ১৯৬৪ সালে তিনিই সর্বপ্রথম ঢাকায় স্থাপন করেন ট্যাপিস্ট্রি কারখানা। ওই সময় তিনি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করতেন। একবছর পরেই ১৯৬৫ সালে ঢাকার সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে প্রাচ্যকলা বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। উল্লেখ্য, ওই মহাবিদ্যালয়ে প্রাচ্যকলা বিষয়ের প্রথম শিক্ষক ছিলেন তিনি। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সরকারের নিয়ম অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশি স্ত্রী-গ্রহণ নিষিদ্ধ থাকায় সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের চাকরি থেকে বহিষ্কৃত হন। (ফরাসি মেয়ে সুচরিতা অ্যানিকে বিয়ে করেছিলেন তিনি)। এরপর ১৯৬৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে চারুকলা শিক্ষাদানের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম চারুকলা বিভাগ চালু হয়। সেখানে তিনি ছিলেন চারুকলা বিভাগের প্রথম অধ্যাপক ও সভাপতি। ওই বিভাগ গড়ে তোলার কাজে পালন করেন অগ্রণী ভূমিকা।
যখন তিনি পূর্ণ উদ্যমে, সমস্ত প্রতিভা ও পরিশ্রম ঢেলে মহত্তম ওই প্রতিষ্ঠান নির্মাণের কাজে ব্যস্ত ছিলেন তখনই দেখতে দেখতে ঘনিয়ে এল মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭১ সাল। পঁচিশে মার্চ রাতের অন্ধকারে বাংলার নিরস্ত্র জনগণের ওপর হানাদার পাকিস্তান বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণ ও ধ্বংসযজ্ঞ তিনি নিজের চোখে দেখলেন। বিশেষত চট্টগ্রামই প্রতিরোধের প্রথম দুর্গ ছিল এবং চট্টগ্রাম থেকেই স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের ঘোষণা উচ্চারিত হয়েছিল বলে অন্যান্য শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে রশিদ চৌধুরীও নতুন করে উদ্বুদ্ধ হলেন, উদ্দীপ্ত হলেন। চারিদিকে চলছে ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ড। লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ। এমন পরিবেশে পারিবারিক নিরাপত্তা প্রতিমুহূর্তে হুমকির সম্মুখীন। সেজন্য এপ্রিল মাসের ৪ তারিখ তিনি স্ত্রী অ্যানি, মেয়ে রোজা ও রীতাকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমেরিকান জাহাজে তুলে দিলেন ফ্রান্সের পারীর উদ্দেশ্যে। পারীতে ছিল অ্যানির পৈতৃক বাড়ি।
পরিবার পাঠিয়ে দিয়ে তিনি শূন্যঘরে একা। চতুর্দিকে আতঙ্ক, হাহাকার। রঙ, তুলির শিল্পী সহসাই যেন রূপান্তরিত হয়ে গেলেন কবিতে। ডায়েরি ভরে কবিতা লিখতে শুরু করলেন। প্রতিদিন মৃত্যুর মুখোমুখি কাটিয়ে অবশেষে ছয় মাস পরে তিনি পারীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন সেপ্টেম্বরের ২৭ তারিখ। ফ্রান্সে পৌঁছার পর তিনি ফরাসি সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। দেশে থাকার সময়ই টুকরো টুকরো কাগজে স্বগতোক্তি ও নিজের চিন্তাগুলো লিখে রাখতেন। ওই সময় তাঁকে রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত করা হলে, তখনকার অনুভূতি একটি টুকরো কাগজে লিখেন- “সরকারি রেডিও ও কাগজের মাধ্যমে রক্তপিপাসু জেনারেল ইয়াহিয়া খান বাঙালি প্রীতির তুচ্ছ নিদর্শনস্বরূপ কয়েকজন বাঙালি কবি, শিল্পী ও সাহিত্যিককে স্বর্ণপদকসহ পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেছেন। জেনে মর্মাহত হলাম আমার নামও সেখানে ছিল। অথচ, হয়তো ঐ সময় তাদেরই হাতে বাংলার কোন গ্রাম দাউদাউ করে জ্বলছে, নির্মম অত্যাচারের অসহ্য যন্ত্রণায় বাংলার মা-বোনেরা কান্নায় ভেঙে পড়ছে কিংবা জালিমদের মেশিনগানের মুখে হয়তো বাঙালির জীবন নিঃশেষ হচ্ছে। … বাংলার শিল্পীর সম্মান, বাঙালির হাত থেকেই গ্রহণযোগ্য। তোমার কোনো অধিকার নেই সম্মাননার। তোমার স্বর্ণপদক তোমার মুখে ছুড়ে আজ একমাত্র তোমার ধ্বংস কামনা করে বাঙালি। সফল হোক জয় বাংলার। বাংলার জয় হোক।”
দেশে ফিরে ১৯৭২ সালে বেসরকারি উদ্যোগে চট্টগ্রামে শিল্প-প্রদর্শনকেন্দ্র ‘কলাভবন’ (বর্তমানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর চট্টগ্রাম কেন্দ্র) গড়ে তোলেন। ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজ প্রতিষ্ঠায়ও তিনি ছিলেন মুখ্য উদ্যোক্তা। ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ত্যাগ করে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং মিরপুরে ট্যাপিস্ট্রি কারখানা গড়ে তোলেন। ১৯৮৪ সালে ট্যাপিস্ট্রি পল্লীর খসড়া প্রণয়ন করেন তিনি।
রশিদ চৌধুরী মূলত ট্যাপিস্ট্রি শিল্পী। শিল্পের এই শাখায় তিনি গোটা ভারতীয় উপমহাদেশেই অন্যতম দিশারী শিল্পী এবং নিঃসন্দেহে আজ পর্যন্ত অপ্রতিদ্বন্দ্বী। এখানেই তিনি সবচেয়ে মৌলিক এবং আমাদের আধুনিক শিল্পধারায় শিল্পী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে ট্যাপিস্ট্রি ছাড়াও চিত্র রচনা করেছেন তেলরঙে, টেম্পারায়, গোয়াশে এবং জলরঙে। এগুলোর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এছাড়া স্বল্পসংখ্যক হলেও করেছেন পোড়ামাটিতে ভাস্কর্য ও বিভিন্ন মাধ্যমে ছাপাই ছবি। তাঁর শিল্পকর্মের মোটামুটি তিনটি পর্যায় চিহ্নিত করা চলে। প্রথমত, ছাত্রকালীন এবং শিক্ষাশেষের অনতি-পরবর্তীকাল। এসময় তিনি এঁকেছেন প্রধানত জলরঙ ও তেলরঙে করা সাধারণ মেহনতি মানুষের জীবন, কিষাণ-কিষাণির দৈনন্দিন ক্রিয়াকর্মের ছবি, তাদের হাসিকান্না সুখদুঃখের বয়ান, যেমনটি সে সময়ের প্রায় প্রত্যেক তরুণ শিল্পীই করেছেন। দ্বিতীয় পর্যায়টি ১৯৬৫ সালে সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের সময়কালে। এটিকে তাঁর শিল্পী জীবনের শিক্ষানবিশি ও পূর্ণতাপ্রাপ্তির মধ্যবর্তী সোপান বা ক্রান্তিলগ্নরূপে নির্ধারণ করা চলে। এ-পর্বে একদিকে পশ্চিমা আধুনিকতার আঙ্গিক-বোধ ও অন্যদিকে নিজের শিকড় থেকে প্রেরণা গ্রহণের অভীপ্সার মধ্যে একটি টানাপোড়েন লক্ষ্য করা যায়। বিষয় হিসেবে বাল্যস্মৃতি বিজড়িত রূপকথা পাঁচালির জগত্ দেখা দিতে শুরু করে। এর মাঝে প্রবল প্রভাব হয়ে আবির্ভূত হন আরাধ্য শিল্পী মার্ক শাগাল। এটি তাঁর স্বকীয়তা অর্জনের পথে সহায়ক না বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, আজ তা সঠিকভাবে নিরূপণ সম্ভব নয়, কারণ শিল্পীর অন্তর্জগতের বিনির্মাণ বিবিধ যৌগের এক জটিল রসায়ন, সেখানে কোন উপাদানটি শেষ পর্যন্ত কার্যকর তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এই সময় থেকেই ট্যাপিস্ট্রি বা বয়নশিল্পকে তিনি তাঁর প্রধান প্রকাশ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন। বলা চলে এরই ধারাবাহিকতায় রশিদ চৌধুরী তাঁর সৃষ্টিশীলতার তৃতীয় ও চূড়ান্ত পর্যায়ে উন্নীত হয়েছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বের মধ্যে সীমারেখা টানা কঠিন, বিবিধ প্রভাব-প্রেরণা-অভিঘাত-অভিজ্ঞতাকে জারিত করে ক্রমশ একটি সুস্পষ্ট নিজস্বতায় উপনীত হতে সময় লেগেছে তাঁর, তবে তিনি তার কাজের প্রতি সব সময়ই ছিলেন একনিষ্ঠ। শিল্পচর্চায় নিমগ্ন থাকলেও সমকালীন রাজনৈতিক, সামাজিক আন্দোলনে তিনি সমানভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। ‘৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সমস্ত প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর ভিতরকার কবিসত্তা তাঁকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে অসংখ্য সুন্দর সুন্দর কবিতা। লিটল ম্যাগাজিন ‘কাক’-এর অলংকরণ করার পাশাপাশি ড্রয়িং ও কবিতা নিয়ে প্রবন্ধ লিখতেন এখানে। মীজানুর রহমানের ‘ত্রৈমাসিক পত্রিকা’তেও নিয়মিত প্রবন্ধ লিখতেন তিনি।
তিনি ফ্রেস্কো ও ট্যাপিস্ট্রি মাধ্যমে অজুরার কাজ করেছেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়। এর মধ্যে উল্লেখ করার মতো ঢাকায় কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, পাট বিপণন সংস্থা ও বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন, ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকার গণভবনের সার্বিক সজ্জার কাজ (অসমাপ্ত)। ফরাসি সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ম্যানিলা, ইসলামিক ব্যাংক জেদ্দাসহ বিদেশেও রয়েছে তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজ। এছাড়া আশির দশকে রশিদ চৌধুরীর অন্যতম উল্লেখযোগ্য কাজ সংসদ ভবন ও ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের জন্য করা বড় আকৃতির ট্যাপিস্ট্রি। টেরাকোটা মাধ্যমেও শিল্পী অর্পিত-কার্য করেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেড কোয়ার্টারে রয়েছে তাঁর টেরাকোটা মুরাল। তাঁর শিল্পকর্ম দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ভবন ও প্রতিষ্ঠানে সংগৃহীত রয়েছে। দেশের মধ্যে- বঙ্গভবন, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর প্রভৃতি অন্যতম। বিদেশের মধ্যে- ভারতের প্রেসিডেন্ট ভবন, মিশরের প্রেসিডেন্ট ভবন, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভবন, যুগোশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট ভবন, মিয়ানমারের প্রধানমন্ত্রী ভবন, ফ্রান্সের বিদেশ মন্ত্রণালয় প্রভৃতি অন্যতম।
তাঁর অর্পিত-সম্পাদিত শিল্পকর্মের মধ্যে- ১৯৬৩ সালে ট্যাপিস্ট্রি, ফরাসি সরকারের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়; ১৯৬৪ সালে মুরাল, ইস্সোয়াত সরকারি কলেজ, ফ্রান্স; ১৯৬৫ সালে ট্যাপিস্ট্রি, কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, ঢাকা; ১৯৬৭ সালে ট্যাপিস্ট্রি, পাট বিপণন সংস্থা, ঢাকা; ১৯৬৯ সালে ফ্রেস্কো, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ; ১৯৭৩ সালে গণভবনের সার্বিক সজ্জার কাজ (অসমাপ্ত); ১৯৭৫ সালে ট্যাপিস্ট্রি, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ম্যানিলা, ফিলিপিন্স; ১৯৭৬ সালে ট্রাপিস্ট্রি, প্রধান কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, ঢাকা; ১৯৭৮ সালে ট্যাপিস্ট্রি, ইসলামিক ব্যাংক, জেদ্দা, সৌদি আরব; ১৯৭৮-৮১ সালে ট্রাপিস্ট্রি ও তৈলচিত্র, ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকা; ১৯৭৯ সালে ট্রাপিস্ট্রি, ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল, চট্টগ্রাম; ১৯৮২ সালে ট্রাপিস্ট্রি, ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, ঢাকা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
অনতিদীর্ঘ জীবনে মোট তেরোটি একক প্রদর্শনী করেছেন শিল্পী রশিদ চৌধুরী। এগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, পাকিস্তানের রাওয়ালপিণ্ডি, ভারতের শান্তিনিকেতন, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে। এছাড়া তিনি দেশে ও বিদেশে প্রায় ১৮টি যৌথ প্রদর্শনী করেছেন।
শিল্পকর্মে অসাধারণ অবদানের জন্য রশিদ চৌধুরী বেশকিছু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। এগুলোর মধ্যে- ১৯৬১ সালে ছাত্রাবস্থায় ফ্রান্সে পারীস্থ বোজ আর্ট কর্তৃক ফ্রেস্কো চিত্রকর্মের জন্য প্রথম পুরস্কার, ১৯৬৭ সালে ইরানের তেহরানে আর.সি.ডি. দ্বি-বার্ষিক চিত্র প্রদর্শনীতে প্রথম পুরস্কার, ১৯৭৭ সালে চারুকলায় বিশেষ করে ট্যাপিস্ট্রিতে সৃজনক্ষমতার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদক, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী পুরস্কার ও ১৯৮৬ সালে জয়নুল পুরস্কার উল্লেখযোগ্য।
জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নানা ঝড়ঝাপটা, আর্থিক অনটন, জীবিকার অনিশ্চিতি তাঁকে অস্থিরমতি করে রেখেছিল, কিন্তু এসব কারণে তাঁর শিল্পচর্চায় কখনও ভাটা পড়েনি। কাজ করে গেছেন অবিরাম, ক্লান্তিহীন। একটি রেখাও টানেননি এমন দিন বোধ হয় তাঁর জীবনে অতি বিরল। প্রচণ্ড সংকটের দিনেও প্রতিরাতে নিয়ম করে তিনি ছবি আঁকতে বসতেন, অন্তত কয়েকটি ছোট খসড়া করেননি এমনটি ছিল দুর্লভ। একইরকমভাবে নানা বিপত্তির মধ্যেও ট্যাপিস্ট্রির মতো জটিল কারিগরি কাজও চালিয়ে গেছেন।
রশিদ চৌধুরী বিয়ে করেছিলেন দুটি। প্রথমে বিয়ে করেন ফরাসি মেয়ে অ্যানি, ১৯৬২ সালে। দাম্পত্য জীবনে তাঁদের দুই মেয়ে- রোজা ও রীতা। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে বাঙালি মেয়ে জান্নাতকে বিয়ে করেন। ছোটবেলা থেকেই রশিদ চৌধুরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকতো না। মাদ্রিদে প্রবাসকালে যক্ষায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ‘৮৪ সালের দিকে তাঁর ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। দেশে-বিদেশে অনেক চিকিৎসা করানোর পরও তা আর সেরে উঠল না। ফলে ১৯৮৬ সালের ১২ ডিসেম্বর মাত্র ৫৪ বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করে অন্যভুবনে চলে যান তিনি। আমৃত্যু এ শিল্পীর জীবনদর্শন ছিল পিকাসোর সেই অমর উক্তি ‘শিল্পকর্ম হচ্ছে প্রেম’। আর সে প্রেমের প্রতি বিশ্বস্ততাই হয়ত তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে বহুকাল।
সংক্ষিপ্ত-পরিচিতি
জন্ম :
ফরিদপুর জেলার হারোয়া গ্রামে ১৯৩২ সালের ১ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন শিল্পী রশিদ চৌধুরী। ডাকনাম ছিল কনক। পুরো নাম- রশিদ হোসেন চৌধুরী।
পরিবার-পরিজন:
পিতা ইউসুফ হোসেন চৌধুরী ও মা শিরিন নেসা চৌধুরানী। বড় চাচা আলীমুজ্জামান চৌধুরী। রশিদরা ছিলেন নয় ভাই, চার বোন। তিনি বিয়ে করেছিলেন দুটি। প্রথমে ফরাসি মেয়ে অ্যানিকে, ১৯৬২ সালে। ১৯৭৭ সালে বাঙালি মেয়ে জান্নাতকে। তাঁদের দুই মেয়ে- রোজা ও রীতা।
পড়াশোনা:
রজনীকান্ত হাই স্কুল, আলীমুজ্জামান হাই স্কুল ও কলকাতার পার্ক সার্কাস হাই স্কুলের পাঠ শেষে ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে ভর্তি হন সরকারি আর্ট কলেজে। প্রথম বিভাগে পাস করেন, ১৯৫৪ সালে। ওই বছরই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ মিউজিয়াম থেকে শিল্প-সমঝদারি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৫৬-৫৭ সালে বৃত্তি পেয়ে মাদ্রিদের সেন্ট্রাল এস্কুলা দেস বেলিয়াস আর্টেস দ্য সান ফার্নান্দো থেকে ভাস্কর্যে এবং ১৯৬০-৬৪ সালে বৃত্তি পেয়ে প্যারিসের একাডেমি অব জুলিয়ান অ্যান্ড বোজ আর্টস থেকে ফ্রেস্কো, ভাস্কর্য ও ট্যাপিস্ট্রি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে মার্কিন সরকার প্রদত্ত লিডারশিপ গ্র্যান্টের অধীনে আমেরিকায় শিক্ষাসফর করেন।
কর্মজীবন:
১৯৫৮ সালে সরকারী আর্ট ইনস্টিটিউটে (বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউট, ঢাবি) শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু। ১৯৬৪ সালে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৫ সালে ঢাকার সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে প্রাচ্যকলা বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৬ সালে ওই চাকরি হারান। ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম চারুকলা বিভাগে প্রথম শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭২ সালে বেসরকারি উদ্যোগে শিল্প-প্রদর্শনকেন্দ্র ‘কলাভবন’ (বর্তমানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর চট্টগ্রাম কেন্দ্র) গড়ে তোলেন। ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজ প্রতিষ্ঠায়ও ছিলেন মুখ্য উদ্যোক্তা। ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ত্যাগ করে ঢাকায় স্থায়ীভাবে চলে আসেন এবং মিরপুরে ট্যাপিস্ট্রি কারখানা গড়ে তোলেন। ১৯৮৪ সাল ট্যাপিস্ট্রি পল্লীর খসড়া প্রণয়ন করেন।
শিল্পকর্ম:
মূলত ছিলেন ট্যাপিস্ট্রি শিল্পী। এছাড়াও চিত্ররচনা করেছেন তেলরঙে, টেম্পারায়, গোয়াশে এবং জলরঙে। পোড়ামাটিতে ভাস্কর্য ও বিভিন্ন মাধ্যমে ছাপাই ছবিও করেছেন। ফ্রেস্কো ও ট্যাপিস্ট্রি মাধ্যমে অজুরার কাজ করেছেন। উল্লেখযোগ্য হলো- ঢাকায় কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, পাট বিপণন সংস্থা ও বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন, ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকার গণভবনের সার্বিক সজ্জার কাজ (অসমাপ্ত), ফরাসি সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ম্যানিলা, ইসলামিক ব্যাংক জেদ্দাসহ বিদেশেও রয়েছে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সংসদ ভবন ও ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের জন্য বড় আকৃতির ট্যাপিস্ট্রি; টেরাকোটা মাধ্যমে অর্পিত-কার্য করেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেড কোয়ার্টারে রয়েছে তাঁর টেরাকোটা মুরাল। তাঁর শিল্পকর্ম দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন ভবন ও প্রতিষ্ঠানে সংগৃহীত রয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গভবন, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর দেশাভ্যন্তরে অন্যতম। বিদেশে প্রেসিডেন্ট ভবন, ভারত; প্রেসিডেন্ট ভবন, মিশর; প্রধানমন্ত্রী ভবন, অস্ট্রেলিয়া; প্রেসিডেন্ট ভবন যুগোশ্লাভিয়া; প্রধানমন্ত্রী ভবন, মিয়ানমার; বিদেশ মন্ত্রণালয়, ফ্রান্স প্রভৃতি।
অর্পিত-সম্পাদিত শিল্পকর্মের মধ্যে- ১৯৬৩ সালে ট্যাপিস্ট্রি, ফরাসি সরকারের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়; ১৯৬৪ সালে মুরাল, ইস্সোয়াত সরকারি কলেজ, ফ্রান্স; ১৯৬৫ সালে ট্যাপিস্ট্রি, কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, ঢাকা; ১৯৬৭ সালে ট্যাপিস্ট্রি, পাট বিপণন সংস্থা, ঢাকা; ১৯৬৯ সালে ফ্রেস্কো, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ; ১৯৭৩ সালে গণভবনের সার্বিক সজ্জার কাজ (অসমাপ্ত); ১৯৭৫ সালে ট্যাপিস্ট্রি, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ম্যানিলা, ফিলিপিন্স; ১৯৭৬ সালে ট্রাপিস্ট্রি, প্রধান কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, ঢাকা; ১৯৭৮ সালে ট্যাপিস্ট্রি, ইসলামিক ব্যাংক, জেদ্দা, সৌদি আরব; ১৯৭৮-৮১ সালে ট্রাপিস্ট্রি ও তৈলচিত্র, ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকা; ১৯৭৯ সালে ট্রাপিস্ট্রি, ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল, চট্টগ্রাম; ১৯৮২ সালে ট্রাপিস্ট্রি, ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, ঢাকা প্রভৃতি।
প্রদর্শনী:
একক প্রদর্শনীর মধ্যে- ১৯৫৪ সালে প্রথম নিখিল পাকিস্তান চিত্রপ্রদর্শনী; ১৯৫৫ সালে চট্টগ্রামে, ১৯৫৯, ১৯৬২, ১৯৬৩, ১৯৬৪ সালে চিত্রকলা ও ড্রয়িং-এর প্রদর্শনী ফ্রান্সে, ১৯৬৫ সালে ট্যাপিস্ট্রি, চিত্রকলা ও ড্রয়িং-এর প্রদর্শনী ঢাকায় বাংলা একাডেমীতে, ১৯৬৬ সালে চিত্রকলা ও ড্রয়িং-এর প্রদর্শনী পাকিস্তানে; ১৯৬৬ সালে চিত্রকলা ও ড্রয়িং-এর প্রদর্শনী রাজশাহীতে; ১৯৭০ সালে ট্যাপিস্ট্রি ও চিত্রকলার প্রদর্শনী চট্টগ্রামে; ১৯৭২ সালে ট্যাপিস্ট্র ও চিত্রকলার প্রদর্শনী যুক্তরাজ্যে; ১৯৭৩ সালে ট্যাপিস্ট্রির প্রদর্শনী চট্টগ্রামে; ১৯৭৫ সালে চিত্রকলা ও ড্রয়িং-এর প্রদর্শনী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র; ১৯৮৫ সালে ট্যাপিস্ট্রি ও চিত্রকলার প্রদর্শনী ঢাকায়; ১৯৯৯ সালে ট্যাপিস্ট্রি ও চিত্রকলার প্রদর্শনী শান্তিনিকেতন, ভারত (মরণোত্তর); ২০০২ সালে ট্যাপিস্ট্রি ও চিত্রকলা প্রদর্শনী চট্টগ্রামে (মরণোত্তর)। যৌথপ্রদর্শনীর মধ্যে- ১৯৫১, ১৯৫২, ১৯৫৩, ১৯৫৪, ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭৪, ১৯৮০, ১৯৮১, ১৯৮৫ সালে ঢাকায়; ১৯৫৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র; ১৯৫৯, ১৯৬০, ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান; ১৯৬১, ১৯৬৩ সালে প্যারিস; ১৯৬৬ সালে ইরান; ১৯৭২ সালে ফ্রান্স; ১৯৭৪, ১৯৭৮ সালে ভারত এবং ১৯৮০ সালে জাপানে।
পুরস্কার:
১৯৬১ সালে ছাত্রাবস্থায় ফ্রান্সে পারীস্থ বোজ আর্ট কর্তৃক ফ্রেস্কো চিত্রকর্মের জন্য প্রথম পুরস্কার, ১৯৬৭ সালে ইরানের তেহরানে আর.সি.ডি. দ্বি-বার্ষিক চিত্র প্রদর্শনীতে প্রথম পুরস্কার, ১৯৭৭ সালে চারুকলায় বিশেষ করে ট্যাপেস্টিতে সৃজন ক্ষমতার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদক, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী পুরস্কার ও ১৯৮৬ সালে জয়নুল পুরস্কার উল্লেখযোগ্য।
মৃত্যু:
১৯৮৬ সালের ১২ ডিসেম্বর মাত্র ৫৪ বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেন৷
(তথ্যসহযোগিতা নেওয়া হয়েছে- জীবনীগ্রন্থমালা: রশিদ চৌধুরী, লেখক আলাউদ্দিন আল আজাদ, বাংলা একাডেমী, মে ১৯৯৪; চরিতাভিধান : সম্পাদনা- সেলিনা হোসেন, নূরুল ইসলাম, বাংলা একাডেমী, জুন ১৯৮৫; বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর, লেখক শিল্পী আমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, জুন ২০০৩ এবং রশিদ চৌধুরীর সহপাঠী-বন্ধু শিল্পী মুর্তজা বশীরের কাছ থেকে)
মূল লেখক : সফেদ ফরাজী
পুনর্লিখন : গুণীজন দল