ছেলেবেলা থেকেই আঁকা-আঁকির নেশা ছিল। তাঁদের গ্রামে আমগাছের নীচে একটি পানবিড়ির দোকান ছিল। অল্পবয়সে তিনি সেই দৃশ্য এঁকে গ্রামের সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। আর এই আঁকা-আঁকির নেশার কারণেই মাধ্যমিক পরীক্ষার পর তিনি ঢাকায় এসে আর্ট কলেজে ভর্তি হতে চাইলেন। কিন্তু তাঁকে ঢাকায় রেখে পড়াশুনা করানোর সামর্থ ছিল না মা-বাবার। তাই তাঁরা তাঁকে স্থানীয় কলেজেই পড়তে বললেন। কিন্তু যাঁর রক্তে শিল্পের নেশা মিশে আছে তাঁকে দারিদ্রতা রুখতে পারে না। তাঁকেও পারেনি। তিনি মাত্র দশ টাকা সম্বল করে অজানা অচেনা শহর ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। দিনের পর দিন খোলা আকাশের নীচে রাত কাটিয়েছেন, অভুক্ত থেকেছেন কিন্তু তবুও তিনি পিছপা হননি। কঠোর পরিশ্রম আর শিল্পের সাধনা করে তিনি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের তালিকায় নিজের নাম উঠিয়েছেন। তিনি হলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট ও সুপরিচিত শিল্পী নিতুন কুন্ডু।
সেই ত্রিশ দশকের মাঝামাঝি এক উত্তাল সময়ে দিনাজপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র ‘বড়বন্দর’ এলাকায় ১৯৩৫ সালের ৩ ডিসেম্বর জন্ম নেন চিত্র শিল্পী নিতুন কুন্ডু। বাবা-মা প্রথম নাম রেখেছিলেন শ্রী নিত্য গোপাল কুন্ডু। তাঁর মা বীণাপানি কুন্ডু সবসময় ছেলেকে ‘নিতুন’ নামে ডাকতেন। তাই ডাক নামটি এক সময়ে সকলের কাছে প্রতিষ্ঠা পায়। তাঁর বাবা জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুন্ডু ছিলেন একজন ধান-চাউলের আড়তদারী ব্যবসায়ী। মা বীণা পানি কুন্ডু ছিলেন একজন সাধারণ গৃহিনী। তাঁদের পূর্ব পুরুষ ছিলেন পাবনার জমিদার। তত্কালীন জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির পরে নিতুন কুন্ডুর ঠাকুর দাদা শ্রী চন্দ্রমোহন কুন্ডু দিনাজপুরে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সেখানে প্রথমে তিনি আড়তদারী ব্যবসা আরম্ভ করেন। শিল্পী নিতুন কুন্ডু তিন ভাই আর চার বোনের মধ্যে ছিলেন তৃতীয় এবং ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। নিতুন কুন্ডুর দু’সন্তান। মেয়ে অমিতি কুন্ডু এবং ছেলে অনিমেষ কুন্ডু (আনন্দ)। স্ত্রী ফালগুনি কুন্ডু।
নিতুন কু্ন্ডুর প্রথম লেখাপড়ায় হাতে খড়ি হয় ১৯৪২ সালে স্থানীয় বড় বন্দর পাঠশালায়। যেটি এখন বড়বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত। পাঠশালার পাঠ শেষে ১৯৪৭ সালে তিনি ভর্তি হন দিনাজপুর শহরের মহারাজা গিরিজা নাথ হাইস্কুলে। লেখাপড়া এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে তখন স্কুলটির যথেষ্ট সুনাম ও খ্যাতি ছিল। শিল্পী নিতুন কুন্ডু এই স্কুল থেকেই ১৯৫২ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন।
লেখাপড়ার পাশাপাশি ছবি আঁকা ছিল তাঁর প্রধান সখ ও নেশা। তিনি পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে এই ছবি আঁকার প্রেরণা পেয়েছিলেন। তাঁর বাবা জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুন্ডু শখ করে ছবি আঁকতেন। তিনি মূলত তাঁর সৃজনশীল মনন থেকে ছবি আঁকতেন। ফুটবল খেলা ছিল শিল্পী নিতুন কুন্ডুর খুব প্রিয়। দিনাজপুর শহরে অবস্থিত যোগেন বাবুর মাঠে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিন খেলাধূলা করতেন।
আজকের বিখ্যাত অভিনেতা-পরিচালক সুভাষ দত্ত (পটলা) ১৯৫৩ সালের গোড়ার দিকে চলচ্চিত্রে কাজ করার জন্য বম্বে থেকে ফিরে দিনাজপুরে মামা বাড়ি আসেন এবং সেখানে তিনি ব্যানার, সাইনবোর্ড ইত্যাদি সাজ সজ্জার কাজ শুরু করেন। তখন নিতুন কুন্ডু শিল্পানুরাগী সুভাষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এক পর্যায়ে সুভাষ দত্ত নিতুন কুন্ডুর সুন্দর হাতের লেখার জন্য সিনেমা হলের ডেকোরেশন, ব্যানার ও সাইন বোর্ড লেখার সহকারী হিসেবে সঙ্গে নেন। নিতুন কুন্ডু অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গেই সে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সুভাষ দত্তের কাজ দেখে ঢাকার এক ফিল্ম রিপ্রেজেনটেটিভ তাঁকে মাসে ১০০ টাকা বেতনে ঢাকায় আসার সুযোগ করে দেন। এরপর তিনি ঢাকায় চলে আসেন।
১৯৫৩ সালের শেষের দিকে নিতুন কুন্ডুও ঢাকায় আসেন এবং ১৯৫৪ সালে তিনি আর্ট কলেজে ভর্তি হন। তখন উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক একই সাথে আর্ট কলেজে পড়ানো হতো। আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার পর তিনি নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান। খেয়ে না খেয়ে সিনেমার পোষ্টার আঁকতেন, প্রতি বর্গফুট মাত্র ১ আনা। সারা রাত ধরে ব্যানার এঁকে সকালে আর্ট কলেজে ক্লাস করতে যেতেন। ক্লাস করা, ক্লাসের অতিরিক্ত কাজ করা, সে এক অন্য রকম কষ্টের জীবন। একদিকে আর্থিক দৈন্যতা অন্যদিকে সৌন্দর্য্য চর্চা। এভাবে কঠোর সাধনার মধ্যে দিয়ে এগুতে থাকেন তিনি।
চতুর্থ বর্ষে ড্রইং করতে হতো মডেল সামনে বসিয়ে। আর্ট কলেজের দারোয়ান মজিদ ছিল খুব সুঠাম দেহী। ময়মনসিংহে বাড়ি। শোনা যায়, সে নাকি ডাকাত ছিল। জয়নুল আবেদিন তাঁকে আর্ট কলেজে চাকরি দেন। এরপর সে ডাকাতি করা ছেড়ে দিয়েছিলো। এই মজিদের পুরো ফিগার বেশ বড় আকারে সাদা-কালোতে এঁকেছিলেন তিনি। নিতুন কুন্ডুর এই কাজটি খুব প্রশংসিত হয়েছিল। বার্ষিক প্রদর্শনীতে এ কাজটির জন্য নিতুন কুন্ডু পুরস্কৃত হয়েছিলেন।
শিল্পী নিতুন কুন্ডু ছিলেন আর্ট কলেজের শ্রেষ্ঠ ছাত্র। শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রী সকলের কাছে অসম্ভব প্রিয় ছিলেন তিনি। ড্রইংয়ে তুখোড়, জলরঙে সাবলীল, আর তেলরঙে ছিল মুন্সিআনা। কম্পোজিশন নামাতে পারতেন- যে কোনো মাধ্যমে। জীবন ঘনিষ্ঠ যেকোন চিন্তাভাবনাকে তিনি তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন অনায়াসে। এছাড়া গ্রাম-বাংলার মাঠ-ঘাট, নদী-নালা প্রকৃতি ও নিঃসর্গ প্রতিটি ক্ষেত্রে ছিল তাঁর অসামান্য দক্ষতার ছাপ। তিনি প্রচুর ছবি এঁকেছেন ক্লাসে এবং ক্লাসের বাইরে।
১৯৫৯ সালে ঢাকার চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে পেইন্টিংয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন শিল্পী নিতুন কুন্ডু। তাঁর প্রচণ্ড ইচ্ছে ছিল আর্ট কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেবেন, কিন্তু সেই ইচ্ছে তাঁর পূরণ হয়নি। কেননা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান সরকার এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ তা চাননি, একজন সংখ্যালঘুর উচ্চাশা বাস্তবে রূপ নিক।
ষাট, সত্তরের দশকে ঢাকার মার্কিন তথ্যকেন্দ্র ‘ইউসিস’ নামে পরিচিত ছিল। যা এখন আমেরিকান কালচারাল সেন্টার নামে পরিচিত। এই ইউসিসে তিনি ১১ বছর অর্থাত্ ১৯৫৯-১৯৭১ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। তিনি যখন ১৯৭১ সালে ইউসিসের চাকরি ইস্তফা দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে প্রবাসী সরকারের তথ্য ও প্রচার বিভাগে যোগদান করেন, তখন ইউসিসে তাঁর সর্বশেষ পদমর্যাদা ছিল চীফ ডিজাইনার।
ইউসিসের এই চাকরিতে নিতুন কুন্ডু তাঁর সৃজনশীলতার অপূর্ব স্বাক্ষর রেখেছিলেন। বিশেষ করে আমেরিকার নীল আর্মস্ট্রং ও তাঁর সহযোগীরা যখন চাঁদের পাথর নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসেন তখন তোপখানা রোডে ইউসিস ভবনে চাঁদ ও মহাশূন্য নিয়ে শিল্পী নিতুন কুন্ডুর স্থাপনা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। পরবর্তী সময়ে তিনি ইউসিসের প্রধান শিল্পী হয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা উত্তর সময়ে প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও নানাবিধ প্রকাশনায় তিনি তাঁর সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ষাট দশকে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে বড় বড় নানা শিল্প শোভন প্ল্যাকার্ড, ব্যানার প্রায় সব মিছিলেই শোভা পেত। এর বেশিরভাগই থাকতো নিতুন কুন্ডুর আঁকা। পাকিস্তান আমলের শেষের দিকে ফেব্রুয়ারী মাসে শহীদ মিনারকে ঘিরে যে সাজসজ্জা হতো সেখানেও নিতুন কুন্ডুকে দেখা যেত অগ্রণী ভূমিকায়। অবশ্য আরো অনেকে তখন শহীদ মিনার সজ্জার কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন।
নিতুন কুন্ডু ছিলেন যথার্থই একজন ‘ভার্সেটাইল’ (Versatile) শিল্পী। বাণিজ্যিক পোষ্টার থেকে নান্দনিক পেইন্টিং- সব শাখাতেই তিনি ছিলেন পারদর্শী। ইস্কাটনের দিলু রোডের বাসায় থাকতেই তিনি মধুমিতা সিনেমা হলের মুরালের কাজ করেন। ১৯৬৬-৬৭ সালে মধুমিতা সিনেমা হল তৈরি হয়। হলের লবিতে নিতুন কুন্ডু মুরাল করেছেন সেগুন কাঠ দিয়ে।
নিতুন কুন্ডুর একটি নিয়মিত কাজ ছিল বিভিন্ন শিল্পমেলায় প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করা। বিশেষ করে প্রতিবছর টেক্সটাইল মিল কর্পোরেশনের প্যাভিলিয়ন নির্মাণ ছিল তাঁর বাঁধা। সারারাত জেগে কাজ করে তিনি একটি শৈল্পিক প্যাভিলিয়ন উপহার দিতেন। তাঁর প্যাভিলিয়নই প্রতি বছর সেরা প্যাভিলিয়নের পুরষ্কার অর্জন করতো। সেই ষাটের দশক থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত নিতুন কুন্ডু কখনো অন্যের, কখনো নিজের প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন তৈরি করেছেন। এবং শ্রেষ্ঠ পুরস্কার অর্জন করেছেন। পরে মেলা কর্তৃপক্ষ তাঁকে মেলার মূল পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন।
শিল্পী নিতুন কুন্ডু ১৯৬৪, ১৯৬৬, ১৯৬৭, ১৯৬৮ সালে পরপর প্রদর্শনী করেছেন। জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৬৫ সালে। এসব প্রদর্শনীতে তেলচিত্র ছাড়াও প্রদর্শিত হয়েছে সিল্ক, স্ক্রিনপ্রিন্ট, এনটিক প্রিন্ট, ভাস্কর্য, ড্রইং ইত্যাদি। পেইন্টিং বিভাগের ছাত্র হয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইনেও অসামান্য দক্ষতা ছিল তাঁর। জীবন যাপনে সব সময় একেবারে সাধাসিধে ছিলেন আজীবন। ব্যক্তি জীবনে ধর্মীয় গোড়ামী তাঁকে কখনো স্পর্শ করেনি।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষ নিলে নিতুন কুন্ডু ইউসিসের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ভারতে চলে যান। যাত্রাকালে বুড়িগঙ্গা পেরিয়ে রোহিতপুরে শিল্পী ইমদাদ হোসেন এর বাড়িতে থাকেন কিছুদিন। এরপর নদীপথে তাদের ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়। এ সময় তাঁকে অনেক দুর্ভোগ ও বিপদের মধ্য দিয়ে দেশ ত্যাগ করতে হয়েছিল। ভারতে যাওয়ার আগে তিনি তাঁর ভক্সওয়াগন গাড়িটি একজন ঘনিষ্ঠজনের নিকট দিয়ে যান, বলেছিলেন যদি মুক্তিযুদ্ধের কোনো কাজে লাগে। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে এসে তিনি আর অক্ষত অবস্থায় গাড়িটি ফেরত পাননি। কলকাতা গিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের তথ্য ও প্রচার বিভাগে কাজ করেন পটুয়া কামরুল হাসানের সঙ্গে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিতুন কুন্ডু শিল্পী হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর আঁকা দুটি পোস্টার মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যাপক প্রচারিত হয়েছে। এখনো সেই পোষ্টার দুটি মুক্তিযুদ্ধের স্মারক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। তাঁর আঁকা পোষ্টার দুটি হলো- একটি এক টগবগে যুবক, দৃঢ় প্রত্যয়ে রাইফেল কাঁধে, চোখে মুখে মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার দৃঢ় সংকল্প; অপরটি একজন নারীর, স্নেহশীলা, মমতাময়ী কিন্তু মুক্তির স্বপ্নে বিভোর। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলার মানুষকে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়ে যাওয়ার জন্যে প্রেরণা দিয়ে এবং শক্তি সাহস দিয়ে অনেক পোস্টার ও ফেস্টুন আঁকেন তিনি। যেগুলো ছিল সে সময় মুক্তিযুদ্ধের এক ধরনের বিশেষ অস্ত্র। তাঁর আঁকা একটি পোষ্টারের বক্তব্য হলো- ‘বাংলার হিন্দু, বাংলার মুসলমান, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রীষ্টান- আমরা সবাই বাঙালি’। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল।
১৬ ডিসেম্বর ‘৭১ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই শিল্পী নিতুন কুন্ডু অন্য সবার মতো আবার ঢাকা ফিরে আসেন। তবে মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন বিরোধিতার কারণে নিতুন কুন্ডু পুনরায় আর মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে যোগ দেননি। তিনি তখন স্বাধীনভাবে কাজ করার চিন্তা ভাবনা শুরু করেন।
মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় নিতুন কুন্ডুর পরিবার দেশ থেকে বিতাড়িত এক কোটি শরণার্থীর মতো ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। ঐ সময় নিতুন কুন্ডুর মা বীণাপানি কুন্ডু হাওড়াতে ফাল্গুনিকে দেখে ফাল্গুনির বাবা-মা’র কাছে তাঁর ছেলের স্ত্রী করার প্রস্তাব দেন। ভারতে থাকাকালীন বিয়ের পাকা কথা হয়। এরপর দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালের ৪ আগস্ট কলকাতার হাওড়াতে ফাল্গুনির বাবার বাসায় তাঁদের বিয়ে হয়।
নিতুন কুন্ডু নারীর ক্ষমতায়নের জন্যে নারীর শিক্ষা, সচেতনতা এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ওপর সর্বদা জোর দিতেন। এজন্যে তিনি বেশ কিছু নারী সংগঠনকে বড় বড় অংকের অনুদানও দিয়েছেন। নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। তার মধ্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ একটি। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উন্নয়নে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি আর্থিক, মানবিক ও পরামর্শগত সহযোগিতা করেছেন। বিভিন্ন নারী সংগঠনকে তিনি অটবি প্রতিষ্ঠার পর নিয়মিতভাবে আর্থিক সাহায্য করেছেন।
সমাজ সেবার নানা ক্ষেত্রে নিতুন কুন্ডু সকলের অগোচরে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে গেছেন। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাঁর কাছে একবার পৌঁছাতে পারলে সে খালি হাতে কখনো ফেরেনি। ঢাকা, দিনাজপুর, মানিকগঞ্জসহ দেশের অধিকাংশ রামকৃষ্ণ আশ্রমে তিনি আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। ঢাকার বারডেম হাসপাতল, কিডনি ফাউন্ডেশন, শিশু হাসপাতাল-এর মতো অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানেও শিল্পী নিতুন কুন্ডু অনেক বড় ধরনের সহযোগিতা করেছেন। ঢাকা, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, সংগঠন সংস্কার ও নির্মাণে, উত্সব পার্বণে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। অনেক এতিম ও দুস্থ ছেলেমেয়েকে তিনি সহযোগিতা করেছেন।
শিল্পী নিতুন কুন্ডু শুধু ছবি এঁকেই সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না। তাঁর চিন্তার মধ্যে সর্বদা খেলা করতে থাকা সৃষ্টিশীলতার আরেক মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন ভাস্কর্যকে। তাঁর তিনটি বিখ্যাত ভাস্কর্য এখন দেশ ছাড়িয়ে দেশের বাইরেও আলোচিত। ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলের মোড়ে ‘সার্ক ফোয়ারা’, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সাবাস বাংলাদেশ’ আর চট্টগ্রামে বিমানবন্দরের প্রবেশ মুখে ‘সাম্পান’। তিনি যদিও ফাইন আর্টস-এর ছাত্র ছিলেন, তথাপি তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যবসা ও অন্যান্য বিষয়গুলিও ভাল বুঝতেন।
১৯৫৫-১৯৫৯ সাল পর্যন্ত চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে শিল্পী নিতুন কুন্ডু দেশের সবগুলো যৌথ চিত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া ১৯৬২ সালে ঢাকার জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে যৌথ প্রদর্শনী ও ১৯৬৩ সালে চট্টগ্রামে পূর্ব পাকিস্তানের শিল্পীদের যৌথ প্রদর্শনীতে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে চট্টগ্রামে সমকালীন শিল্পীদের যৌথ প্রদর্শনী এবং ১৯৬৪ সালে ঢাকার জাতীয় চারুকলায় যৌথ প্রদর্শনীতে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকায় ১৯৬৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান আর্ট কাউন্সিলে ও ১৯৬৬ সালে ইউএস তথ্যকেন্দ্রে, ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রামের ইউএস তথ্যকেন্দ্রে ও ১৯৫৮ সালে রাজশাহীর ইউএস তথ্যকেন্দ্রে তাঁর একক প্রদর্শনী হয়। এছাড়াও দেশে ও দেশের বাইরে তাঁর অনেক যৌথ ও একক প্রদর্শনী হয়।
ছাত্র জীবনে বিভিন্ন মাধ্যমে মৌলিক ও জীবন্ত শিল্পকর্মের জন্যে ১৯৫৪-১৯৫৯ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় চিত্রকলা পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৬৫ সালে তিনি জাতীয় চিত্রকলা পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ভ্রাম্যমান প্রদর্শনী/চিত্রকলায় স্বর্ণপদক পান। ১৯৭৪, ১৯৭৯ ও ১৯৮১ সালে ঢাকায় বাণিজ্য মেলার প্যাভিলিয়ন ডিজাইনের জন্য তাঁকে প্রথম পুরস্কার প্রদান করা হয়।
১৯৭৫ সালে তাঁর প্রথম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান- দি ডিজাইনার্স-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। তখন তিনি সেই ছোট্ট পরিসর থেকে সূচনা করেন তাঁর জীবনের নতুন অধ্যায়। ১৯৭৭ সালে এই প্রতিষ্ঠানের নাম বদল করে নতুন নাম দেয়া হলো আর্ট ইন ক্র্যাফট।
আর্ট ইন ক্র্যাফট সে সময় জাতীয় চলচ্চিত্র পদক তৈরির মতো একটা বড় কাজের অর্ডার পেয়েছিল। অনেক টাকার কাজ ছিল সেটি। তখন আর্ট ইন ক্র্যাফট-এ নানারকম মেডেল, ক্রেস্ট, কোটপিন, ট্রফি এবং প্লাক তৈরি হতো। নিতুন কুন্ডুর শখ ছিল মেটালের উপর কাজ করার।
বাংলাদেশের মানুষ ঐতিহ্যগতভাবে ব্যবহার করতো কাঠের আসবাবপত্র। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে দেশে দিনে দিনে কাঠের উত্সের পরিমাণ সীমিত হয়ে পড়ে। এ কারণে শিল্পী নিতুন কুন্ডু কাঠের বিকল্প হিসেবে মেটাল ফার্ণিচারের কথা প্রথম চিন্তা করেন। এরপর ১৯৭৮ সালে ঢাকার নিউ এ্যালিফ্যান্ট রোডে একটি মেটাল ফার্ণিচারের শো-রুম প্রতিষ্ঠা করেন। সেখান থেকে ওইসব মেটাল ফার্ণিচারের যথাযথ বিপণন কার্যক্রম আরম্ভ হয়।
প্রতিষ্ঠানটি ভালোভাবে চালু হয়ে যাওয়ার পরই নিতুন কুন্ডু ‘অটবি’ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। অটবি অর্থ অরণ্য। অটবির লগো তিনি নিজেই করলেন। আর এভাবেই ১৯৮৩ সালে যাত্রা শুরু হয় অটবি নামের নতুন এক আসবাব শিল্প প্রতিষ্ঠানের। তারপর তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অনেকগুলো দেশ ভ্রমণ করে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করেন এবং বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক ফার্ণিচার উত্পাদন শুরু করেন। সেক্ষেত্রে তিনি বেশি জোর দিয়েছিলেন ক্রেতার চাহিদা ও রুচিবোধের ওপর। যার ফলে তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে সাফল্য লাভে সক্ষম হন।
অটবি স্টীলের টেবিল ল্যাম্প তৈরির মাধ্যমে তার কাজের সূচনা করেছিল। মাটি আর কাঠের নানা পণ্যের সঙ্গে তখন অটবিতে তৈরি করা হতো কোটপিন, ক্রেস্ট, ট্রফি, ঘর সাজানোর নানা সরঞ্জাম ও ধাতব আসবাবপত্র। সেই সময় নিতুন কুন্ডু প্রচুর কাজ করেছেন, কাউকেই কোনো কাজে না করেননি। আশি আর নব্বইয়ের দশকে প্রায় প্রতিটি জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের ট্রফি বা কাপ তৈরি করেছেন নিজ হাতে। শিল্পী নিতুন কুন্ডু মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার ব্যাপারে সব সময় সচেতন ছিলেন। তাঁর হাত দিয়েই আমাদের দেশে আধুনিক রীতির ধাতব ঢালাই করা ক্রেস্ট, পদক এসবের প্রচলন শুরু হয়েছিল। তাঁর এ জাতীয় কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জাতীয় চলচ্চিত্র পদক, প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ, একুশে পদক, নতুন কুঁড়ি পদক, শিল্প মেলা ট্রফি প্রভৃতি।
অটবি শিল্পী নিতুন কুন্ডুর বহু চিন্তা ভাবনার ফসল। অটবি শুধু একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ নয়, এটা বাংলাদেশের ফার্ণিচার শিল্পে এক অনন্য বিপ্লব। যা ফার্ণিচার সম্পর্কে মানুষের রুচিবোধের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। অটবির তৈরি পণ্যসামগ্রী অন্যদের তুলনায় উন্নতমানের বিধায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ১৯৮১-২০০১ সাল পর্যন্ত এককভাবে এই প্রতিষ্ঠান প্রথম পুরস্কার লাভ করে।
শিল্পী নিতুন কুন্ডুকে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি এবং নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে স্পীস দেয়ার জন্যে ডেকে নেওয়া হতো। তাছাড়া এখন অটবিতে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির অনেক ছাত্ররা ইন্টার্নশিপ করছে এবং ইতিপূর্বে অনেকে করেছে। এই হিসেবে বলা যায় অটবি একটি ইনস্টিটিউশন। সর্বপ্রথম অটবিতে ইন্টার্নশিপ করতে আসেন বর্তমান অটবির কর্মকর্তা সুরজিত্ রায় চৌধুরী। শিল্পী নিতুন কুন্ডু দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে তিলে তিলে নিজের শ্রম ও মেধা দিয়ে অটবিকে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। সেই সাথে প্রতিষ্ঠা করেছেন অটবির সুনাম ও সম্মান।
শিল্পী নিতুন কুন্ডু তাঁর জীবনে প্রথম গুরুতর অসুস্থ হন ১৯৯২ সালের ৩ ডিসেম্বর। তখন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি অনেকদিন কর্মস্থল ছেড়ে বিছানায় ছিলেন। যদিও ঐ অবস্থায়ও তিনি সকল ফ্যাক্টরী এবং কর্মকান্ডের খবর নিয়েছেন। ১৯৯৬ সালে তাঁর জন্ডিস দেখা দেয়। ২০০৪ সাল থেকে কিডনি ও হাঁটুর ব্যথা দেখা দেয়।
২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাঁকে দ্রুত শ্যামপুর ফ্যাক্টরী থেকে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিত্সকদের অবিরাম চেষ্টার ফলে অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটে। ১৩ তারিখে আবারও স্বাস্থ্যের অবনতি হয় এবং ১৫ তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী:
নাম: নিতুন কুন্ডু জন্ম: দিনাজপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র ‘বড়বন্দর’ এলাকায় ১৯৩৫ সালের ৩ ডিসেম্বর জন্ম নেন চিত্র শিল্পী নিতুন কুন্ডু।
বাবা-মা ও পরিবার: তাঁর বাবা জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুন্ডু ছিলেন একজন ধান-চাউলের আড়তদারী ব্যবসায়ী। মা বীণা পানি কুন্ডু ছিলেন একজন সাধারণ গৃহিনী। তাঁদের পূর্ব পুরুষ ছিলেন পাবনার জমিদার। তত্কালীন জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির পরে নিতুন কুন্ডুর ঠাকুর দাদা শ্রী চন্দ্রমোহন কুন্ডু দিনাজপুরে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সেখানে প্রথমে তিনি আড়তদারী ব্যবসা আরম্ভ করেন। শিল্পী নিতুন কুন্ডু তিন ভাই আর চার বোনের মধ্যে ছিলেন তৃতীয় এবং ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। নিতুন কুন্ডুর দু’সন্তান। মেয়ে অমিতি কুন্ডু এবং ছেলে অনিমেষ কুন্ডু (আনন্দ)। স্ত্রী ফালগুনি কুন্ডু।
পড়াশুনা: নিতুন কু্ন্ডুর প্রথম লেখাপড়ায় হাতে খড়ি হয় ১৯৪২ সালে স্থানীয় বড় বন্দর পাঠশালায়। যেটি এখন বড়বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত। পাঠশালার পাঠ শেষে ১৯৪৭ সালে তিনি ভর্তি হন দিনাজপুর শহরের মহারাজা গিরিজা নাথ হাইস্কুলে। লেখাপড়া এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে তখন স্কুলটির যথেষ্ট সুনাম ও খ্যাতি ছিল। শিল্পী নিতুন কুন্ডু এই স্কুল থেকেই ১৯৫২ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৫৩ সালের শেষের দিকে নিতুন কুন্ডুও ঢাকায় আসেন এবং ১৯৫৪ সালে তিনি আর্ট কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৯ সালে ঢাকার চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে পেইন্টিংয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন শিল্পী নিতুন কুন্ডু।
কর্মজীবন: ষাট, সত্তরের দশকে ঢাকার মার্কিন তথ্যকেন্দ্র ‘ইউসিস’ নামে পরিচিত ছিল। যা এখন আমেরিকান কালচারাল সেন্টার নামে পরিচিত। এই ইউসিসে তিনি ১১ বছর অর্থাত্ ১৯৫৯-১৯৭১ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। তিনি যখন ১৯৭১ সালে ইউসিসের চাকরি ইস্তফা দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে প্রবাসী সরকারের তথ্য ও প্রচার বিভাগে যোগদান করেন, তখন ইউসিসে তাঁর সর্বশেষ পদমর্যাদা ছিল চীফ ডিজাইনার। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই শিল্পী নিতুন কুন্ডু অন্য সবার মতো আবার ঢাকা ফিরে আসেন। তবে মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন বিরোধিতার কারণে নিতুন কুন্ডু পুনরায় আর মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে যোগ দেননি। তিনি তখন স্বাধীনভাবে কাজ করার চিন্তা ভাবনা শুরু করেন।
১৯৭৫ সালে তাঁর প্রথম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান- দি ডিজাইনার্স-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। তখন তিনি সেই ছোট্ট পরিসর থেকে সূচনা করেন তাঁর জীবনের নতুন অধ্যায়। ১৯৭৭ সালে এই প্রতিষ্ঠানের নাম বদল করে নতুন নাম দেয়া হলো আর্ট ইন ক্র্যাফট। এরপর তিনি ১৯৮৩ সালে অটবি প্রতিষ্ঠা করেন।
মৃত্যু: ২০০৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসূত্র: আসাদুজ্জামান আসাদের লেখা ‘শিল্পী নিতুন কুন্ডু এবং অটবি’।
প্রকাশক: ব্রিজ মিডিয়া কমিউনিকেশন, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারী ২০০৯।
প্রকাশনী: কাকলী।
লেখক : মৌরী তানিয়া