‘একজন শিক্ষকই সমস্ত ক্লাস নিতেন এবং নির্দিষ্ট দিনের শেষ পিরিয়ডে খুব ক্লান্ত থাকতেন প্রায়ই। আমাদের আঁকতে হতো ড্রইং-বুক থেকে কলা, আম, কাঁঠাল, ফুল ইত্যাদি। একদিন ঐ ক্লাসে স্যার ব্ল্যাকবোর্ডে বড় করে একটা অশত্থ পাতা এঁকে আমাদের দেখে দেখে আঁকতে বলে চেয়ারে বসে প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ঐ সুযোগে ছাত্ররা গল্প-গুজবে মেতে উঠেছিল। শব্দের মাত্রা একটু বেশি হয়ে যাওয়ায় হঠাৎ স্যার ঘুম থেকে জেগে উঠে সবাইকে দাঁড় করিয়ে এক একজনকে তার ড্রইং খাতা নিয়ে আসতে আদেশ করলেন। দু’চারজনের পর আমার ডাক পড়ল। আমার ড্রইংটা দেখেই বললেন ‘কিরে নকল করেছিস কেন?’ আমি ভয়ে ভয়ে জানালাম, স্যার আপনি বোর্ডে অনেক বড় করে এঁকে দিয়েছেন। আমি ও থেকে নকল করব কীভাবে? স্যার বুঝতে পেরে আমার পিঠে একটা মৃদু চাপড় দিয়ে বললেন, ‘ভালো হয়েছে, যা বাড়ি চলে যা।’ ঐ ঘটনা আমি কোনোদিনই ভুলব না, যা আমাকে সবচেয়ে প্রথমে উদ্বুদ্ধ করেছিল, যে আমি ভালো ছবি আঁকতে পারি।’ (বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর)
এই কথাগুলো শিল্পী আমিনুল ইসলামের। তখন ১৯৩৬ সাল। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে আরমানিটোলা হাইস্কুলের ঠিক উত্তর দিকে, অধুনা বিখ্যাত তারা মসজিদের উল্টোদিকের একটি বাসায় উঠেছে তাঁর পরিবার। পাশেই ছিল মাহুতটুলী ফ্রি প্রাইমারি স্কুল। ওখানেই শিশুশ্রেণীতে ভর্তি করা হয় তাঁকে। ঐ শিশুশ্রেণীতে পড়ার সময়ই প্রথম প্রথামাফিক ড্রইং শেখার শুরু। আদর্শলিপি থেকে শুরু করে ইংরেজি অক্ষরজ্ঞান, যোগবিয়োগ ও নামতা মুখস্থ করাই ছিল প্রধান। তবে সপ্তাহে এক পিরিয়ড করে ছিল ড্রিল ও ড্রইং-এর ক্লাস। ঐ দুটো ক্লাস হতো স্কুলছুটির আগের পিরিয়ডে। নিজের আঁকা ছবি সম্পর্কে সেই শৈশবের ড্রইং ক্লাসের কর্মক্লান্ত শিক্ষকের অনুপ্রেরণামূলক ‘ভালো হয়েছে’ বাক্যটিই যেন শিল্পচর্চায় ক্রমাগত সামনের দিকে ধাবিত করে শিশু আমিনুলকে পরিণত করেছে আজকের সুপ্রতিষ্ঠিত শিল্পী আমিনুল ইসলামে।
আমিনুল ইসলাম জন্মেছেন ১৯৩১ সালের ৭ নভেম্বর খুব সকালে, ঢাকা থেকে প্রায় ২০ কি.মি. দূরে টেটিয়া নামক এক অজপাড়াগাঁয়ে, নানাবাড়িতে। বাবা চাকরি করতেন স্কুল পরিদর্শকের। মা গৃহিনী। দাদাবাড়ি ছিল জ্বালাকান্দিতে। আমিনুলের জন্মের সময় বাবা ছিলেন ময়মনসিংহে চাকরিরত। সাবডিভিশনাল স্কুল-ইন্সপেক্টর। এজন্য তাঁর শৈশবের শুরুর কয়েক বছর কাটে নানাবাড়িতে। এরপর বাবার চাকরির বদলিসূত্রে তাঁকেও কখনও ময়মনসিংহ, কখনও নারায়ণগঞ্জ, কখনও ঢাকায়, কখনও অন্য কোন শহরে যেতে হয়েছে। ফলে প্রকৃতির খুব কাছাকাছি থেকে গ্রামের জীবন কাটানোর অভিজ্ঞতা বড় একটা হয়নি তাঁর। মাঝে মাঝে বিশেষ করে স্কুলের গ্রীষ্মের ছুটি কিংবা দীর্ঘ কোনো ছুটির সময়টুকু গ্রামে কাটিয়েছেন, নানাবাড়ি ও দাদাবাড়ি মিলিয়ে। সেদিনগুলো ছিল আনন্দে ভরা।
ময়মনসিংহ থেকে নারায়ণগঞ্জ এসে তাঁরা প্রথমে ওঠেন দেওভোগে, পরে চাষাড়ায় এক হিন্দুপ্রধান অঞ্চলে। চাষাড়ার রামকানাই পণ্ডিতের পাঠশালায়ই প্রথম হাতেখড়ি হয় তাঁর। পাঠশালা ছিল খুব কাছে, তাঁদের বাড়ির দু’তিনটি বাড়ির পরেই। কিন্তু পাঠশালায় যাওয়া-আসা ছিল অনিয়মিত। স্কুলের প্রতি খুব ঝোঁক না থাকলেও ছোটবেলা থেকেই প্রবল ঝোঁক ছিল গল্প শোনার। বড় বোন, ছোট খালা কিংবা নানিকে কম উত্যক্ত করেননি এজন্য। এসব গল্পের অধিকাংশই ছিল রাজপুত্র-রাজকন্যার, ব্যঙ্গমা-ব্যঙ্গমী, পঙ্খীরাজ ঘোড়া এবং রাক্ষস-খোক্কসের কাহিনী। গল্প শেষ হয়ে গেলেও অসংখ্য প্রশ্ন থাকত, তারপর কী?
দাদাবাড়ি কিংবা নানাবাড়ির শৈশবস্মৃতিও বেশ উজ্জ্বল তাঁর মনে। দাদাবাড়িতে ছিল ফুলপিঠা বানানোর প্রতিযোগিতা। চালের গুঁড়ি ময়দার মতো মাখিয়ে কলাপাতার উপর রেখে বেশ পুরুভাবে বেলে নিয়ে খেঁজুরকাঁটা দিয়ে নানা রকম নকশা বানানো হতো, প্রধানত গোল, চার কোণা, তিনকোণা অথবা পাঁচ-ছয় কোণা করে কেটে নিয়ে নকশা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় স্থানগুলি রেখে বাকি অংশগুলি কেটে ফেলা হতো। তারপর তার মধ্যে ঐ খেঁজুরকাঁটা দিয়েই আরো বিচিত্র সব কারুকার্য করা হতো। মা, চাচি, বড়বোনদের সঙ্গে নিষেধ অমান্য করে শিশু আমিনুলও যোগ দিত ওইসব কারুকার্যময় পিঠা তৈরিতে। ওই পিঠা তৈরির নকশাই তাঁর জীবনে প্রথম শিল্পকীর্তি হতে দেখা, এক ধরনের সিমেট্রি ও কারুকার্য। এছাড়াও ছিল বালিশের কাভারে পুরনো শাড়ির নানা রঙের পাড় থেকে সুতা উঠিয়ে ফুল, লতা-পাতার নকশা সেলাই, কিংবা রুমালের এক কোণে ঐভাবেই নকশা সেলাই। চাচি, চাচাতো বোনদের হাতে এসব কারুকার্যময় কাজ দেখে শিশু আমিনুলের মনে শিল্পের প্রতি প্রথম টান তৈরি হয়েছিল।
নানাবাড়িতেও বেশ মজাতেই কাটতো দিনগুলো। কারণ স্কুল ছুটির সময় আরো খালাত ভাই-বোনেরা যেমন আসত, তেমনি থাকত মামাত ভাই-বোনরাও। আর সমবয়সীরা ছিল একদল, ডানপিটে। গাছের ফল পেড়ে খাওয়া, বাড়ির পাশের খালে মাছ ধরা, গোসল করা, সাঁতার কাটা, ছোট কোসা নৌকা বাওয়ার মতো ঘটনা তো ছিলই। তখন মুসলিমপ্রধান গ্রামে যাত্রা বা থিয়েটার হতো না। তবে তাঁর মেজমামার উদ্যোগে বাড়িতে হতো ‘গায়েনের গীত’ নামে এক ধরনের গল্প বলার আয়োজন। রাতের বেলায় দু’তিনটা হ্যাজাক বাতির আলোয় চলত এই উৎসব। ঐসব গল্প বা কিচ্ছাগুলোর অধিকাংশই আরব্য উপন্যাসের বা শাহনামা থেকে নেওয়া। কিংবা বাংলার চাঁদ সওদাগর, বেহুলা-সুন্দরী অথবা গাজীর কিচ্ছা জাতীয়। আমিনুল ইসলাম সেই শৈশবে মামাবাড়িতে ‘গায়েনের গীত’ দেখে বিমোহিত হতেন।
মাহুতটুলী স্কুলে বছর দুই পড়ে ১৯৩৯ সালে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন আরমানিটোলা স্কুলে। এই স্কুলে তৎকালীন পূর্ববাংলার যেকোনো স্কুলের চেয়ে ছবি আঁকার চর্চা হতো বেশি। বার্ষিক পরীক্ষায় ড্রইং-এ প্রথম হওয়ার জন্য বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা ছিল ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত। ড্রইং শিক্ষক ছিলেন শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী, প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়স। আমিনুল ইসলামের শিল্পী হয়ে উঠার পেছনে এই শিক্ষকের প্রত্যক্ষ অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। স্কুলজীবনে আমিনুল অংক, ভূগোল, ইতিহাস ভালোই পারতেন। ইংরেজিতে ছিলেন কিছুটা কাঁচা এবং সবচেয়ে বিরক্ত বোধ করতেন ব্যাকরণে। স্কাউট করতেন। খেলাধুলার প্রতি ছিল বেশ আগ্রহ। স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও পেয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই ছিল বিচিত্র নেশা- ছবি আঁকা, বই পড়া, খেলাধুলা, সাঁতার কাটা, ঘুড়ি উড়ানো এবং পরবর্তীতে সিনেমা দেখা। তাঁদের বাসার পাশেই ‘জোবেদা মহল’-এ থাকতেন মুনীর চৌধুরীরা। ওই পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদেই বই পড়ার অবাধ সুযোগ পান তিনি।
চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময় বাবুবাজার মোড় থেকে ইসলামপুর যাবার মুখে হাতের বাঁদিকে একটা দোকান ছিল ছবি বাঁধাইয়ের। ওখানে এক ওস্তাদের আঁকা গ্লাস-পেইন্টিং বিক্রি হতো। অধিকাংশই ছিল সহজ ল্যান্ডস্কেপ। ওইসব ছবি দেখার লোভে প্রায়ই আমিনুল ওই দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন। এভাবেই একদিন ওই ওস্তাদের সঙ্গে পরিচয় হয় এবং মাস ছয়েকের মধ্যেই ওস্তাদের সাগরেদ হয়ে যান। ছবি আঁকার নেশা বাড়তে থাকে। পূর্বের ড্রইং শিক্ষক শরৎ বাবুর বিপরীতে ওই ওস্তাদের হাতেকলমে শিক্ষা তাঁর শিল্পী জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে ওঠে। এভাবেই অলংকরণের প্রতি, শিল্প নির্মাণের প্রতি শিশু আমিনুলের ঝোঁক বাড়তে থাকে।
ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় স্কুলে ছবি আঁকার প্রতিযোগিতায় পুরস্কার এবং শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পান। এছাড়াও বই পড়ার প্রতি নিজের যেমন আগ্রহ ছিল, তেমনি অন্যরাও যাতে বই পড়ার সুযোগ পায় সেজন্য ওই সময় তাঁর দু’ক্লাস নিচের ছাত্র ওয়াহিদুল হককে নিয়ে নিজেদের পাড়ার এক বাসায় একটা লাইব্রেরি গড়ে তুলেছিলেন। একটা দেয়াল পত্রিকাও বের হতো। লেখা সংগ্রহের ভার ছিল ওয়াহিদুল হকের ওপর, হেডলাইন লেখা ও ছবিগুলো আঁকতেন তিনি আর ভেতরের লেখার ভার ছিল তাঁর ক্লাসফ্রেন্ড শাহজাহানের ওপর। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় পাটুয়াটুলির রামমোহন লাইব্রেরির সদস্য হয়ে নিয়মিত সেখানে পড়াশুনা করতে যেতেন। ওখানেই বই পড়ার পাশাপাশি বহু পুরনো ম্যাগাজিন ‘প্রবাসী’, ‘বিচিত্রা’, ‘ভারতবর্ষ’, ‘বসুমতী’, ‘মোহাম্মদী’ পড়ার সুযোগ পান। ওইসব ম্যাগাজিনেই তিনি অবনীন্দ্রনাথ প্রবর্তিত বেঙ্গল স্কুলের ঘরানার শিল্পীদের শিল্পকর্মের আলোচনা, পশ্চিমের আধুনিক ছবির উপর সচিত্র আলোচনা, যামিনীকান্ত সেনদের মতো বিভিন্ন পণ্ডিত শিল্প বিশ্লেষকের লেখা পড়েছেন।
ছোটবেলা থেকেই কলকাতা আর্ট স্কুলে পড়ার স্বপ্ন ছিল আমিনুল ইসলামের। তাই ১৯৪৭ সালে ম্যাট্রিক পাস করেই মে মাসের দিকে আর্ট স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য কলকাতায় যান। অনেক স্বপ্ন নিয়ে জুনের ৭ তারিখ আর্ট স্কুলের ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণও হন। কিন্তু পরীক্ষার পর আর্ট স্কুলের শিক্ষক শিল্পী শফিউদ্দিন ও জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানতে পারলেন শিগগিরই দেশভাগ হয়ে যাচ্ছে এবং তাঁরা ঢাকায় ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সবাই ঢাকায় চলে গেলে কলকাতায় একা একা থেকে কী হবে- এসব সাতপাঁচ ভেবে জুলাই মাসের মাঝামাঝি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে কলকাতা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকায় চলে আসেন। ফলে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তির যে স্বপ্ন ছিল তা আর বাস্তবে পরিণত হল না।
ঢাকায় ফিরে বাধ্য হয়ে আই.এ. ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। এই কলেজের সূত্রেই বন্ধুত্ব হয় কবি শামসুর রাহমান, আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিন, হাসান হাফিজুর রহমান, মাহবুব জামাল জাহেদী, আলাউদ্দিন আল আজাদ প্রমুখের সঙ্গে। ঢাকা তখন মফস্বল শহর। জায়গার অভাব ও সরকারি অনুদানের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় তখনো আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি। কিন্তু চেষ্টা তদবিরও থেমে ছিল না। ওই সময়ে পাকিস্তানে ছবি আঁকা ও মূর্তি গড়াকে অনেকেই ভালো চোখে দেখতেন না। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের ডাইনিং রুমে জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষের ছবি নিয়ে ঢাকায় প্রথম চিত্রপ্রদর্শনী হয় এক বিকেলের জন্য। এই প্রদর্শনীর ছবিগুলো সাজানোর দায়িত্ব পালন করেছিলেন আমিনুল ইসলাম। সরকারি মহল থেকে আর্ট স্কুল গড়ার উদ্যোগকে সহজে গ্রহণ করা হয়নি। ১৯৪৮ সালের মে/জুন মাসের দিকে পূর্ববাংলার মন্ত্রিসভার সদস্য হাবীবুল্লাহ বাহার শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে প্রস্তাব দেন ১৪ আগস্ট অর্থাৎ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রথম বার্ষিকীতে একটা পোস্টার প্রদর্শনীর আয়োজন করার। পোস্টারের বিষয়বস্তু ছিল ভারত উপমহাদেশে মুসলিম বিজয় থেকে পাকিস্তান সৃষ্টির চিত্রায়িত সংক্ষিপ্ত ধারাবিবরণী। প্রায় একশ’ পোস্টারের পরিকল্পনা। সময় মাত্র দু’মাস। আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ও দেশে শিল্পচর্চার ভবিষ্যৎ চিন্তা করে জয়নুল আবেদিন এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে সহায়তাকারী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন কামরুল হাসান ও আমিনুল ইসলামকে। জয়নুল আবেদিনের বাসায় প্রায় দু’মাস সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ চলে। নির্দিষ্ট তারিখেই গভর্নর হাউসের বাগানে প্রদর্শনী হয় এবং এরপর আর্ট স্কুল স্থাপনের সর্বপ্রকার বাধা দূর হয়ে যায়। পুরনো ঢাকার রায় সাহেব বাজার (কলতা বাজার) সংলগ্ন প্রায় বন্ধ ন্যাশনাল মেডিক্যাল স্কুলের হাসপাতাল-অংশের পশ্চিম দিকের নিচতলার দুটি ঘর খালি করে আর্ট স্কুলের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর বহু স্বপ্নের আর্ট স্কুলের কার্যক্রম শুরু হতে থাকে।
১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বরে আর্ট ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হয় ভর্তি পরীক্ষা। এক বছরের বেশিসময় ঢাকা কলেজে পড়ার পর সেই কলেজ ছেড়ে আর্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন আমিনুল ইসলাম। তাঁর বহুদিনের লালিত স্বপ্ন যেন বাস্তবরূপ লাভ করে। তখন ক্লাস শুরু হয় মাত্র ১৬/১৭ জন ছাত্র নিয়ে। ক্রমে ক্রমে আর্ট স্কুলের ছাত্র সংখ্যা বাড়তে থাকলে স্থানাভাব প্রকট হয়ে ওঠে। সরকার ও দেশের মানুষের সামনে আর্ট স্কুলের কার্যক্রমকে আরো ব্যাপকভাবে জানান দেওয়ার লক্ষ্যে ঢাকা আর্ট গ্রুপ নাম দিয়ে ঢাকায় প্রথম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। দর্শকদের বেশ সাড়াও পাওয়া যায়। প্রদর্শনীর পরই আর্ট স্কুলের ওই বিল্ডিংয়ের উপরতলায় আরো দুটি রুমের বরাদ্দ হয়। ঢাকা আর্ট গ্রুপ-এর কার্যক্রমে আমিনুল ইসলাম অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫২ সালের মাঝামাঝি সময়ে আর্ট ইনস্টিটিউট ন্যাশনাল মেডিক্যাল স্কুল থেকে সেগুনবাগিচায় স্থানান্তরিত হয়। আর্ট ইনস্টিটিউটে নিয়মিত নিজের কৃতিত্বের পরিচয় রেখে ১৯৫৩ সালে ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ পেয়ে ঢাকার পাঠ সমাপ্ত করেন। এরপর ওই বছরই ইতালি সরকারের বৃত্তি নিয়ে ফোরেন্সে ‘আঁকা দেখিয়া দ্য বেলি অর্তিতে’ পড়তে যান। সেখানে ছিলেন ১৯৫৬ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
দেশে ফিরে ১৯৫৬ সালের ১০ নভেম্বর আমিনুল ইসলাম আর্ট ইনস্টিটিউটে লেকচার ইন ফাইন আর্ট পদে যোগদান করেন। তখন আর্ট ইনস্টিটিউটের নতুন ভবন শাহবাগে স্থানান্তরিত হয়েছে মাত্র। আর্ট ইনস্টিটিউটে যোগদানের পর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিল্পকলার বিশেষত বিদেশে বিভিন্ন প্রদর্শনী দেখার সুবাদে শিল্পকলার যে যে বিশেষ দিকগুলোর সঙ্গে তিনি পরিচিত হতে পেরেছিলেন সেগুলো ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। ১৯৭৯ সালে তিনি আর্ট কলেজের অধ্যক্ষের পদে উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৮৩ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন।
আমিনুল ইসলাম ১৯৬৭ সালে প্রথম বিয়ে করেন। কিন্তু সে বিয়ে ভেঙে যায়। এরপর ১৯৬৯ সালে বিয়ে করেন রুবি ইসলামকে। তাঁদের তিন মেয়ে ও এক ছেলে।
আমিনুল ইসলাম মূলত বিমূর্ত ধারার শিল্পকর্ম করে থাকেন। তাঁর অধিকাংশ শিল্পকর্মে রঙ, রেখা ইত্যাদি অঙ্কনের উপাদান কিংবা বিষয় বিন্যাসে বিমূর্তায়নের সরব উপস্থিতি লক্ষণীয়। ইতালির ফ্লোরেন্সে পড়তে গিয়ে তিনি এমন এক ধরনের জীবন, পরিবেশ ও শিক্ষা পেয়েছিলেন যা তাঁকে পুরোদস্তুর আধুনিক মানের শিল্পের অভিধা রপ্ত করতে সাহায্য করেছিল। ফ্লোরেন্সে বসেই তিনি এঁকেছেন একাডেমিক স্টাইল বহির্ভূত ছবি। প্রফেসর চেক্কির তত্ত্বাবধানে শেখার সুযোগ পান ইমপ্রেশনিস্ট স্টাইলের কাজ যা পরবর্তীতে তাঁকে বিমূর্তায়নের পথে নিয়ে যায়। ১৯৫৮ সালে যখন তিনি আর্ট ইনস্টিটিউটের শিক্ষক তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন বেশ উত্তপ্ত। আন্দোলন-সংগ্রামের বিষবাষ্প এসে লেগেছিল আর্টের মধ্যেও। ওই সময় তিনি জেনারেল আইয়ুব খানের অবৈধ ক্ষমতা দখলকে ইঙ্গিত করে আধা বিমূর্ত ফর্মের একটি ছবি আঁকেন, যার নাম দিয়েছিলেন Victim। তাঁর বিমূর্ত কাজগুলোর মধ্যে- Victim, Frozen Shapes, Eternal Space, Memories of Forgotten Music উল্লেখযোগ্য। ১৯৬৭ সালের Transformation সিরিজের অ্যাবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেশনিস্ট ছবিগুলো দিয়ে তিনি তাঁর মনোজাগতিক পরিবর্তনের বিমূর্তায়িত চিত্র তুলে ধরেছিলেন। ১৯৭১ সালের গণহত্যার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াস্বরূপ Genocide নামের আলোচিত ছবিটি আঁকেন। স্বাধীনতার পর একটি নতুন দেশের আশাবাদ হীন-স্বার্থপরতার চাপে ভেঙে পড়তে শুরু করলে ১৯৭৩ সালে ভাঙা আয়নার টুকরো দিয়ে এক সিরিজ মোজাইক তৈরি করে দর্শকের সামনে ভগ্ন বাস্তবতাকে তুলে ধরেন। তৎকালীন আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতাকে উপজীব্য করে তিনি Sphere সিরিজ এঁকেছিলেন, যার শুরু Desireছবির আশাবাদ দিয়ে এবং শেষ হয়েছে জাতির পিতাকে হত্যার পরিণতিতে Disintegration of the Sunছবির শোকগীতি দিয়ে।
এছাড়াও তৈরি করেছেন উল্লেখযোগ্য বেশকিছু মুরাল। ১৯৮৩ সালে মতিঝিলের জনতা ব্যাংকের প্রবেশ মুখের দেয়াল জুড়ে একটি অসাধারণ মুরাল, ১৯৮৪-৮৫ সালে ওসমানী হলের সামনের দেয়ালের মুরাল, ১৯৬৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুরাতন ভবনের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের প্রথম মুরাল ‘সম্পদ বৃক্ষ’, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক থিম নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য তিনি আবারও একটি বিশাল মুরাল তৈরি করেন। প্রতিকূল পরিবেশও শিল্পচর্চায় তাঁকে পিছপা করতে পারেনি। ১৯৭৩ সালে যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে যখন রঙের অভাব দেখা দিয়েছিল, তখন তিনি পেট্রোল দিয়ে রঙ তৈরি করে ছবি আঁকা চালিয়ে গেছেন এবং ছাত্রদেরও উৎসাহিত করেছেন।
দেশ-বিদেশে বেশকিছু একক ও যৌথ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন শিল্পী আমিনুল ইসলাম। ১৯৫১ সালে আর্ট স্কুল সম্প্রসারণের জন্য জনসচেতনতা ও অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে ‘ঢাকা আর্ট গ্রুপ’ ঢাকায় প্রথমবারের মতো দুই সপ্তাহব্যাপী চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এতে আমিনুলও অংশ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ইতালিতে পড়ার সময় ১৯৫৪ সালের জুন মাসে রোমের বিখ্যাত গ্যালারি Palazzo Delle Exposione-এর প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৫ সালের এপ্রিলে Institute of Middle and Extreem Orient Ges Asian Association, Italy-এর যৌথ প্রদর্শনীতে যোগ দেন। একই বছরের জুলাইতে Galleria d’Arte St. Trinita-The Art of the World শীর্ষক প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে প্রশংসিত হন এবং ছবিও বিক্রি হয়। ১৯৫৬ সালের নভেম্বরে ঢাকায় তাঁর একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫৭ সালে করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় প্রদর্শনী অংশগ্রহণ করেন ও পুরস্কার পান। ১৯৬১ ও ১৯৬৩ সালে ঢাকায় এবং ১৯৬৪ ও ১৯৬৭ সালে রাওয়ালপিণ্ডি ও করাচিতে একক চিত্র প্রদর্শনী করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি তাঁর Transformation সিরিজের ছবিগুলো নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। শিল্পীজীবনের ২৫ বছর উদযাপন উপলক্ষে ১৯৭৪ সালে তাঁর সমস্ত কাজ নিয়ে একটি প্রদর্শনী হয়। এর দু’দশক পর ১৯৯৪ সালে ঢাকায় আরেকটি প্রদর্শনী হয়। ২০০০ সালে বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্ট তাঁর একক ড্রইং-এর প্রদর্শনীর আয়োজন করে, যা প্রশংসার দাবিদার। তাঁর সর্বশেষ একক প্রদর্শনীর আয়োজন করে ঢাকার শিল্পাঙ্গন গ্যালারি। এছাড়াও ১৯৫৩ সাল থেকে বিদেশে সানপাওলো, ওয়াশিংটন ডিসি, মিলান, মস্কো ও টোকিও এবং ভারতের কলকাতা, দিল্লি ও মুম্বাই-এর যৌথ প্রদর্শনীতে অংশ নেন। ১৯৯৫ সালে জাপানের ফুকোওকায় প্রথম এশীয় প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের পক্ষে এক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নেন।
শিল্পকর্মে অসাধারণ অবদান রাখার জন্য বেশকিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন শিল্পী আমিনুল ইসলাম । এগুলোর মধ্যে ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক এবং ১৯৮৭ সালে স্বাধীনতা পদক অন্যতম।
শিল্পচর্চার পাশাপাশি শিল্পবিষয়ক লেখালেখিও চালিয়ে গেছেন তিনি। তাঁর লেখা ‘বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর’ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও তিনি শিল্পকলা নিয়ে বহু প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন।
২০১১ সালের ৮ই জুলাই ক্যান্সার আক্রান্ত আমিনুল ইসলাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
জন্ম:
১৯৩১ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকার অদূরে টেটিয়া নামক এক অজপাড়াগাঁয়ের নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন শিল্পী আমিনুল ইসলাম।
পরিবার-পরিজন:
১৯৬৭ সালে প্রথম বিয়ে করেন। কিন্তু সে বিয়ে ভেঙে যায়। এরপর ১৯৬৯ সালে বিয়ে করেন রুবি ইসলামকে। তাঁদের তিন মেয়ে ও এক ছেলে।
পড়াশুনা:
চাষাড়ার রামকানাই পণ্ডিতের পাঠশালায়ই প্রথম হাতেখড়ি। এরপর ১৯৩৬ সালে ঢাকার মাহুতটুলী ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে শিশুশ্রেণীতে এবং ১৯৩৯ সালে আরমানিটোলা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে ম্যাট্রিক পাস করে আই.এ. ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বরে কলেজ ছেড়ে আর্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ পেয়ে ঢাকার পাঠ সমাপ্ত করেন। এরপর ওই বছরই ইতালি সরকারের বৃত্তি নিয়ে ফোরেন্সে ‘আঁকা দেখিয়া দ্য বেলি অর্তিতে’ পড়তে যান। সেখানে ছিলেন ১৯৫৬ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
কর্মজীবন:
১৯৫৬ সালে দেশে ফিরে ১০ নভেম্বর আমিনুল ইসলাম আর্ট ইনস্টিটিউটে লেকচার ইন ফাইন আর্ট পদে যোগদান করেন। তখন আর্ট ইনস্টিটিউটের নতুন ভবন শাহবাগে স্থানান্তরিত হয়েছে মাত্র। ১৯৭৯ সালে তিনি আর্ট কলেজের অধ্যক্ষের পদে উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৮৩ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন।
উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম:
আমিনুল ইসলাম মূলত বিমূর্ত ধারার শিল্পকর্ম করে থাকেন। তাঁর বিমূর্ত কাজগুলোর মধ্যে- Victim, Frozen Shapes, Eternal Space, Memories of Forgotten Music উল্লেখযোগ্য। ১৯৬৭ সালেরTransformation সিরিজের অ্যাবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেশনিস্ট ছবিগুলো দিয়ে তিনি তাঁর মনোজাগতিক পরিবর্তনের বিমূর্তায়িত চিত্র তুলে ধরেছিলেন। ১৯৭১ সালের গণহত্যার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াস্বরূপ Genocide নামের আলোচিত ছবিটি আঁকেন। এছাড়াও মতিঝিলে জনতা ব্যাংকের প্রবেশ মুখের মুরাল, ওসমানী হলের সামনের দেয়ালের মুরাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের পুরাতন ভবনের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের প্রথম মুরাল ‘সম্পদ বৃক্ষ’, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক থিম নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য বিশাল মুরাল তৈরি করেন।
উল্লেখযোগ্য প্রদর্শনী:
দেশ-বিদেশে বেশকিছু একক ও যৌথ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন শিল্পী আমিনুল ইসলাম। ১৯৫১ সালে আর্ট স্কুল সম্প্রসারণের জন্য জনসচেতনতা ও অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে ঢাকা আর্ট গ্রুপ ঢাকায় প্রথমবারের মতো দুই সপ্তাহব্যাপী চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এতে আমিনুলও অংশ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ইতালিতে পড়ার সময় ১৯৫৪ সালের জুন মাসে রোমের বিখ্যাত গ্যালারি Palazzo Delle Exposione-তে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৫ সালের এপ্রিলে Institute of Middle and Extreem Orient Ges Asian Association, Italy-র যৌথ প্রদর্শনীতে যোগ দেন। একই বছরের জুলাইতে Galleria d’Arte St. Trinita- The Art of the World শীর্ষক প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে প্রশংসিত হন এবং ছবিও বিক্রি হয়। ১৯৫৬ সালের নভেম্বরে ঢাকায় তাঁর একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫৭ সালে করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় প্রদর্শনী অংশগ্রহণ করেন ও পুরস্কার পান। ১৯৬১ ও ১৯৬৩ সালে ঢাকায় এবং ১৯৬৪ ও ১৯৬৭ সালে রাওয়ালপিণ্ডি ও করাচিতে একক চিত্র প্রদর্শনী করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি তাঁর Transformation সিরিজের ছবিগুলো নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। শিল্পী জীবনের ২৫ বছর উদযাপন উপলক্ষে ১৯৭৪ সালে তাঁর সমস্ত কাজ নিয়ে একটি প্রদর্শনী হয়। এর দু’দশক পর ১৯৯৪ সালে ঢাকায় আরেকটি প্রদর্শনী হয়। ২০০০ সালে বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্ট তাঁর একক ড্রইং-এর প্রদর্শনীর আয়োজন করে, যা প্রশংসার দাবিদার। তাঁর সর্বশেষ একক প্রদর্শনীর আয়োজন করে ঢাকার শিল্পাঙ্গন গ্যালারি। এছাড়াও ১৯৫৩ সাল থেকে বিদেশে সানপাওলো, ওয়াশিংটন ডিসি, মিলান, মস্কো ও টোকিও এবং ভারতের কলকাতা, দিল্লি ও মুম্বাই-এর যৌথ প্রদর্শনীতে অংশ নেন। ১৯৯৫ সালে জাপানের ফুকোওকায় প্রথম এশীয় প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের পক্ষে এক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নেন।
পুরস্কার-সম্মাননা:
আমিনুল ইসলাম শিল্পকর্মে অসাধারণ অবদান রাখার জন্য বেশ কিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। এগুলোর মধ্যে ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক এবং ১৯৮৭ সালে স্বাধীনতা পদক উল্লেখযোগ্য।
লেখালেখি:
তাঁর লেখা ‘বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর’ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও তিনি শিল্পকলা নিয়ে বহু প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন।
মৃত্যু : ২০১১ সালের ৮ই জুলাই ক্যান্সার আক্রান্ত আমিনুল ইসলাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তথ্যসহযোগিতা নেওয়া হয়েছে- বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর, লেখক- আমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, জুন ২০০৩; আমিনুল ইসলাম, লেখক- ওসমান জামাল, শিল্পকলা একাডেমী।
মূল লেখক : সফেদ ফরাজী
পুনর্লিখন : গুণীজন দল