জন্ম ও বংশ পরিচয়
মোজাফফর আহমদের জন্ম কলকাতায়, ২৭ মার্চ, ১৯৩৬। যদিও সার্টিফিকেট বা পাসপোর্টে এটা বিভিন্ন কারণে অন্যরকম হয়েছে। তাঁর বাবা নাজির আহমেদ বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন এবং ভাল ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে মেধা তালিকায় স্থান ছিল। ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সেখানেও মেধা তালিকায় স্থান ছিল। প্রথম স্থান অধিকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. পরীক্ষায় পাশ করেন। তারপর প্রিলিমিনারীতে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। এম.এ. প্রিলিমিনারীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্রদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ায় তাঁকে আইসিএস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বলা হয়। তিনি আইসিএস পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছিলেন, কিন্তু মেধাতালিকায় যে স্থানে থাকবেন বলে আশা করেছিলেন সেই অবস্থানে ছিলেননা। এজন্যই পরবর্তীতে বিসিএস পরীক্ষা দেন এবং সেখানে প্রথম স্থান অধিকার করেন। মহামন্দার কাল বলে ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট না হয়ে সাব ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট হয়েছিলেন। পূর্ব পাকিস্তান সরকারের সময় ১৯৬০ সালে বোর্ড অফ রেভিনিউর সেক্রেটারী হিসেবে তিনি অবসর গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তী সাত বছর তিনি বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। ১৯৭১ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী তিনি মারা যান।
তাঁর মা জাহানারা বেগমের জন্ম ১৯১৯ সালে। ২০০৬ সালে তিনি মারা যান। ১৯৩১ সালে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় তখনকার সামাজিক রীতি অনুযায়ী অল্প বয়সে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। তাঁর সহপাঠীরা অনেকেই পরবর্তীতে বেথুন কলেজ থেকে ডিগ্রী অর্জন করেছেন। তাঁর মায়েদের বংশধারার যে তালিকা আছে তাতে খালেদ বিন ওয়ালিদ, ইতিহাসখ্যাত মুসলিম সেনা নায়কের সাথে সম্পর্ক আছে বলে বলা হয়। নানা খান সাহেব সিরাজুদ্দিন আহমদ ছিলেন জেলা স্কুলের হেডমাষ্টার। তিনি আলীগড় থেকে ইংরেজীতে প্রথম শ্রেণী পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণী পেয়ে Bengal Senior Education Service-এ সরাসরি চাকরী পান। কিছুকাল সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে চট্টগ্রাম মুসলিম হাই স্কুলে চাকরী করেছেন। পরবর্তীতে তিনি ৩টি জেলা স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেগুলো হল নোয়াখালী জেলা স্কুল, খুলনা জেলা স্কুল, বরিশাল জেলা স্কুল। বরিশালে থাকাকালীন ১৯৪২ সালে তিনি মারা যান।
তাঁর বাবা গোলাম মোমেন ছিলেন ফরিদপুর সুবার নায়েবে আলা এবং মুসলিম আইনে শাস্ত্রজ্ঞ । বৃটিশ শাসকরা তাঁকে তাদের বিরুদ্ধে কাজ কারর অভিযোগে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের হাজিনগরে অন্তরীণ করে রাখে। তাঁর দাদা ছিলেন খান সাহেব আমিন আহমদ। তিনি মানিকগঞ্জ জজ কোর্টে চাকরী করতেন। তিনি মানিকগঞ্জের অনেক মসজিদ এবং স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১১ তে ভলান্টারী রিটায়ারমেন্ট নিয়ে নেন। বাড়িতে যেয়ে গ্রামের সেবা করেছেন। মোজাফফর আহমদের ভাষায়, “আমার দাদীর বিয়ে হয়েছিল অনেক কম বয়সে। দাদীর বাবা ছিলেন রাজবাড়ির প্রথম মুসলমান ডাক্তার। তিনি বাবা-মার একমাত্র সন্তান ছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না পেলেও তিনি বাংলা, ফারসী, আরবী ভালই জানতেন। হিসাবও ভালই করতে পারতেন। কোরআন শরীফ সুমধুর কন্ঠে পড়তেন। তিনিও মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ছিলেন। লোকে তাঁর কাছ থেকে তাবিজ, পানি পড়া নিত। বংশ হিসেবে যেটা বলা হয় যে মধ্য এশিয়ার কোথাও থেকে আমাদের পূর্বপুরুষ আহমদ মির্জা ও মোহাম্মদ মির্জা ভাগ্যান্বেষণে ভারতবর্ষে আসেন। তারা বিভিন্ন রাজাদের, নওয়াবের দরবারে কাজ করেছেন। কোম্পানী আমলে তারা শ্রীরামপুরে লবণের কারখানায় ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর হয়ে কেমিষ্টের কাজ করতেন। সেই কারণে আমাদের পোশাকী উপাধি মির্জা যদিও আমরা এটা ব্যবহার করিনা। মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল এবং বাংলাদেশের অন্যত্র যে মির্জা ফ্যামিলিগুলো রয়েছে, সম্ভবত এদের উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ আর আমার পূর্বপুরুষ একই।”
“আমাদের দাদার দিকের সবাই পেশাজীবী ছিল। তারা সবাই উকিল, ডাক্তার অথবা সরকারী চাকুরী এজাতীয় পেশাগত কাজ করেছেন। আমার নিজের দাদাদের ভেতরে সেই কালে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছিলেন দুই জন যদিও চাকরী করেছেন ভিন্নতর। সুতরাং এক হিসেবে বলা যায় যে আমরা চাকুরীজীবি পরিবার। আমার নানার দিকেও চাকরীর দিকেই ঝোঁক বেশী ছিল। নানার সবচেয়ে বড় ভাই গোপালগঞ্জে অনারারী ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলেন। তখনকার দিনে বৃটিশ সরকার যাদের আইনের জ্ঞান আছে তাদেরকে অনেক সময় এরকম কাজে নিযুক্ত করতেন। আমার আপন চাচাদের মধ্যে একজন ডাক্তার ছিলেন, অন্যজন ছিলেন লেদার টেকনোলজিস্ট। বড় মামা ছিলেন পাকিস্তান সরকারের সচিব। আর দুই মামা ব্যাংকার।
আমরা হলাম ৫ ভাই ২ বোন। আমার সবচেয়ে বড় ভাই প্রকৌশলী হিসেবে তেল কোম্পানীতে কাজ করতেন। মেঘনা পেট্রোলিয়াম, পদ্মা অয়েল কোম্পানী থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। তারপরে আমি, সারাজীবন প্রায় শিক্ষকতা করেছি। আমার ছোট ভাই ইনসুরেন্স কোম্পানীতে কাজ করতো। তার পরের ভাই চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। তার পরের ছোট ভাই ইঞ্জিনিয়ার। আমার দুই বোনের যাদের সাথে বিয়ে হয়েছে তারাও ইঞ্জিনিয়ার। আমার দুই বোন গ্রাজুয়েট।”
শৈশব ও শিক্ষাজীবন
সরকারী চাকুরে বাবার বদলীর সুবাদে মোজাফফর আহমদের শৈশব কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়। এর ফলে শ্যামল বাংলাকে অনেক কাছ থেকে দেখা এবং ভালবাসার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। সেই সব সোনালী দিনের কথা বলতে গিয়ে আজও তিনি স্মৃতি কাতর হয়ে পরেন। “তখন তো বাবার সাথে ঘুরে বেড়াতাম। এর শুরু কলকাতায়। কলকাতার পার্ক সার্কাসের তেমন কোনো স্মৃতি নাই, একমাত্র যে আমরা পার্কে বেড়াতে যেতাম এবং আত্মীয় স্বজনের বাড়ি যেতাম। এছাড়া কলকাতার শৈশবের তেমন কোনো স্মৃতি নাই। তবে কলকাতা তখন এক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শহর ছিল এবং আত্মীয় যারা কলকাতায় থাকতো তাদের ভেতরে আমাদের আসা যাওয়া এগুলো আনন্দের সৃষ্টি করতো। কলকাতা থেকে আমার বাবা সম্ভবত বদলী হয়ে যান বনগাঁ-তে। বনগাঁর পরে মাগুরায়। মাগুরাতে উনি একটা অ্যাকসিডেন্ট করেন। ওনার স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য কিছুকাল আমরা রাঁচিতে ছিলাম । তারপরে ফিরে চাকরীতে যোগ দেয়ার পর গোপালগঞ্জে পোষ্টিং দেওয়া হয়। যেহেতু এটা তাঁর শ্বশুরবাড়ি সেই কারণে তিনি স্বেচ্ছায় ওখান থেকে বদলী হয়ে মঠবাড়িয়াতে যান। মঠবাড়িয়াতে ১৯৪০ সালে যুদ্ধাবস্থাতেই তাঁকে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটে উন্নীত করা হয়। ১৯৪৬ সালে যুদ্ধের কারণে তাঁর বদলী পিছিয়ে মঠবাড়িয়া থেকে ফরিদপুরে হয়। ফরিদপুর থেকে নোয়াখালী, নোয়াখালী থেকে বরিশাল। আমি নোয়াখালী জেলা স্কুল থেকে পরীক্ষা দেই। এর পর ঢাকায় চলে আসি। এই সমস্ত স্থান জুড়েই আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে।
শৈশবে বাড়িতেই আমার পড়ালেখা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় ‘মঠবাড়িয়া কে এম লতিফ ইনস্টিটিউশন’ থেকে। এখন যে সমস্ত স্কুল দেখি সে তুলনায় সেটা বেশ ভাল স্কুল ছিল। হেডমাষ্টার সাহেব অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন, শিক্ষকেরাও অনেক দক্ষ ছিলেন। এখানে সুযোগ-সুবিধা যেমন লাইব্রেরী, খেলার মাঠ ইত্যাদি উন্নতমানের ছিল। গ্রামীণ পরিবেশে হওয়ায় স্কুলের কিছু কিছু জিনিস ছিল বেশ আকর্ষণীয় ছিল, যেমন শীতকালে আমরা উৎসাহের সাথে সব্জী ক্ষেত করতাম। এই সব্জীর এক তৃতীয়াংশ যে করে তাকে দেওয়া হতো, এক তৃতীয়াংশ যেত হোস্টেলে, এক তৃতীয়াংশ বাজারে বিক্রি করা হতো। আমার কাছে মনে হয় আমাদের গ্রামের স্কুলের জন্য এটা বেশ ভাল একটা আদর্শ হতে পারে। আর যেহেতু এটা খাসমহল থেকে করা হয়েছিল সেজন্য স্কুলটিকে বেশ জমিজমা, পুকুর ইত্যাদি দেওয়া হয়েছিল তার ফলে সেগুলো থেকেও তারা আয় পেত। ছাত্রদের বেতনও খুব বেশী ছিলনা। ওই স্কুলেই থাকতেই কবিতা লেখা, আবৃত্তি করা, নাটকের সাথে যুক্ত হওয়া। অল্প বয়সেই এগুলো আমাকে আকর্ষণ করেছিল। আর একটা যেটা আকর্ষণ করেছিল সেটা হাঁটা। রাস্তাঘাট বেশ ভালই ছিল, সুতরাং সকালে ঘন্টাখানিক, বিকেলে খেলার মাঠে না গেলে বিকেলেও ঘন্টাখানিক হেঁটে আসা যেত।
মঠবাড়িয়াতে বিভিন্ন শিক্ষিত হিন্দু পরিবারে বই এর সংগ্রহ ছিল, সেখানে থেকে বেশ ভাল ভাল বই পাওয়া যেত। আমি তখন থেকে রাজনৈতিক বই পড়তে শুরু করি। ভারতবর্ষের ইতিহাস, স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে যুক্ত নেতাদের আত্মজীবনী বা তাঁদের সম্পর্কে বর্ণনা, রুশ বিপ্লব নিয়ে লেখা, কমিউনিজম ইত্যাদি বই পড়া শুরু করি। বলা যেতে পারে এসব কারণেই তখন থেকে একটা রাজনৈতিক চেতনা বা সমাজ চেতনা গড়ে উঠেছিল। আমার মধ্যে যে অসাম্প্রদায়িক মনোভাব কাজ করে তার বিকাশ কিন্তু মফস্বলেই হয়েছিল। মঠবাড়িয়ায় হিন্দু মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা দেখা যেতনা। আমার বাবা মঠবাড়িয়া থেকে ফরিদপুরে বদলী হয়ে আসলে আমরা গ্রাম থেকে মফস্বল শহরের সংস্পর্শে আসলাম। আমি বলবনা ফরিদপুরে এটা দেখা যেত তবে বোঝা যেত যে হিন্দু ছাত্ররা একটু অন্যরকম ছিল। সে সময় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের কারণে হিন্দু মুসলিম ছাত্রদের মধ্যেও এর রেষ ছড়িয়ে পড়েছিল। মঠবাড়িয়া স্কুলের আমার সমসাময়িক ছাত্র যারা ছিলেন একজন দুজন ছাড়া পরবর্তীকালে সবাই উপরে উঠে আসেনি।
আমাদের সাথে যারা মুসলমান ছাত্র ছিল তারা অনেকেই কিন্তু পরবর্তীকালে আরো উচ্চতর শিক্ষা নিয়েছিল। ফরিদপুরে খেলাধুলার ব্যাপারে একটু পরিবর্তন আসলো। আমরা মঠবাড়ীয়াতে ফুটবল খেলতাম, ফরিদপুর জেলা স্কুলে প্রথম ক্রিকেট খেলা শুরু হল। মঠবাড়ীয়ায় বিভিন্ন পত্রিকা আসত, বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে বিভিন্ন বই পাওয়া যেত। স্কুলে সমৃদ্ধ লাইব্রেরী ছিল বিশেষ করে ইংরেজী বই ছিল অনেক। ফরিদপুরে আমার শিক্ষক জনাব আইনুল ফয়েজ জয়নুল কবির আমাকে ইংরেজী পড়তে উদ্বুদ্ধ করতেন। তখন থেকে আমি ষ্টেটসম্যান পড়তাম। ইংরেজী পত্রিকা এবং ইংরেজী সাহিত্যের সাথে তখন একটা পরিচয় ঘটে এবং তখন আমি স্টেটসম্যান এ জুনিয়র সেকশান (বেঞ্জি লীগ) এ লেখা শুরু করেছি।
দেশ বিভাগের শুরুতেই আমরা ফরিদপুর থেকে নোয়াখালীতে চলে আসি। নোয়াখালীতে কিন্তু স্কুলের পরিবেশ ভিন্নতর ছিল। এখানেও হিন্দু ছাত্র এবং শিক্ষকরা চলে যাচ্ছিলেন। স্কুলের লাইব্রেরী তেমন সমৃদ্ধ ছিল না। সুতরাং এটা বলা যেতে পারে, যে পরিবেশটা ফরিদপুরে ছিল সে পরিবেশটা এখানে ছিল না। খেলারও তেমন সুযোগ সুবিধা ছিল না। শীতকালে ভলিবল, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি খেলা চলত। তখন যে করেই হোক আমার ভেতরে একটা সাংগঠনিক প্রচেষ্টা জন্ম নিয়েছিল যার ফলে অফিসারদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে একটা ক্লাব এর মত করার চেষ্টা করেছিলাম। এটা যে খুব কার্যকর ছিল সেটা বলা যাবে না। তবে কাছাকাছি থাকে, সমসাময়িক ক্লসে পড়ে এদেরকে নিয়ে খেলাধুলার একটা চেষ্টা ছিল। এখানে থাকতেই ‘৪৮ এর ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। ভাষা আন্দোলনের ছোঁয়া মফস্বল নোয়াখালীতে ও লেগেছিল। আমরা সবাই এই আন্দোলনের খবর পাওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকতাম।”
লেখালেখির শুরুটা হয়েছিল সেই ছোটবেলা থেকেই। স্কুল থেকে তাঁর সম্পাদনায় একটা দেয়াল পত্রিকা বের হত। একটা সাংস্কৃতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে মুসলমান মধ্যবিত্ত সমাজে তিনি বেড়ে উঠেছিলাম। “নোয়াখালী জেলা স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেছি কিন্তু পরীক্ষা দিয়েছি বরিশালে। মেট্রিকে ভালোই রেজাল্ট হয়েছিল। দুইটি বিষয়ে ডিস্টিংশান নাম্বার পেয়েছি এবং প্রায় সবগুলো বিষয়ে ডিস্টিংশান এর কাছাকাছি নাম্বার ছিল যার ফলে অল্প কয়েক নাম্বার এর জন্য স্টার মার্কস পাইনি। যদিও আমার বড় ভাই জগন্নাথ কলেজে পড়তেন কিন্তু আমি ঢাকা কলেজে ভর্তি হলাম। ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়ে সাধারণত যে কম্বিনেশন নিয়ে ছাত্ররা পড়ে সে কম্বিনেশন নিয়ে আমি ভর্তি হয়নি। আমার অংক ছিল, ভূগোল ছিল, ইংরেজী সাহিত্য ছিল এবং ছিল অর্থনীতি ও পৌরনীতি । আমার অংকের শিক্ষকদের ভিতর শহীদ হাবিবুর রহমান স্যার যিনি পরবর্তিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন, মঞ্জুরুল হক সাহেব ছিলেন, যাঁর বই ছাত্রদের কাছে আদৃত। নুরউদ্দিন সাহেব ছিলেন ভূগোল শিক্ষক যিনি রাজনৈতিক কারণে চাকরী হারান এবং আরও একজন উর্দুভাষী শিক্ষক ছিলেন। ইন্টারমেডিয়েটে আমি এবং এনামুল হক যৌথভাবে ভূগোলে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়েছি। অর্থনীতি পড়াতেন ন্যাপ নেতা মোজাফফর আহমদ, শামসুল ইসলাম ও শফিকুর রহমান। ইংরেজী পড়াতেন আবু রুশদ মহিউদ্দিন, আজহারুল ইসলাম। বাংলা পড়াতেন ইদ্রিস আলী ও হোসামউদ্দিন।
যখন আমি আই.এ. পরীক্ষা দিই তখন ভাষা আন্দোলন তুঙ্গে। সেই ভাষা আন্দোলনে যেটা কমিটি ছিল এ কমিটি মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক এবং কলেজ থেকে যারা জি এস, ভিপি ছিলেন তারা ছিলেন সরাসরিভাবে যুক্ত। কিন্তু অন্যদের মাঝেও এটা নিয়ে উত্তেজনা ছিল। আমাদের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল এই ফেব্রুয়ারী মাসেই। সেটা ভাষা আন্দোলনের জন্য পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল। সে সময় ভাষা আন্দোলনের মিছিলে গুলি হওয়ার পরে এস এম হল থেকে তিন দিন দেশ পরিচালনা করা হয়েছিল । তখন এস এম হল থেকে যে সমস্ত নির্দেশনা দেয়া হতো সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করতাম। তবে নেতৃত্ব নিয়ে আজকাল যে সমস্ত সমস্যা হচ্ছে এজাতীয় সমস্যা হতোনা। তখন যে কোন রাজনীতি সচেতন বা সমাজ সচেতন ছাত্র বা ছাত্রী যেখানে থাকুক এ আন্দোলনের সাথে তার সম্পৃক্ততা ছিলই । এস এম হলে যেদিন রেইড হয় এবং অনেককে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় সে দৃশ্য আমি ভুলিনি । তখন শিক্ষকদের ছাত্রদের প্রতি যে দায়িত্ববোধের পরিচয় পেয়েছিলাম সেটা আমার অনেকদিন মনে থাকবে ।
আমি আই.এ. পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে অনার্স নিয়ে ভর্তি হই। আমার সাবসিডিয়ারী ছিল অংক ও স্ট্যাটিসটিক্স । অন্যরা পলিটিক্যাল সায়েন্স ও ইতিহাস নিয়ে পড়েছে। আমি পড়ছিনা কেন সেটা নিয়েও উৎসুক্য ছিল হেড অব দি ডিপার্টমেন্ট আয়ার সাহেবের। আমার অর্থনীতি সম্পর্কে আগ্রহ ছিল। ইন্টারমিডিয়েটে থাকতেই অর্থনীতির উঁচুস্তরের বই পড়ে আমার ধারণা জন্মেছিল যে অংক জানা থাকলে অর্থনীতি চর্চা অনেক সহজ হবে এবং সেজন্যই আমি অংক নিয়েছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন নতুন একটা সাবজেক্ট হিসেবে স্ট্যাটিসটিক্স খুলেছে এবং এটার ব্যবহারিক দিক আছে এ সমস্ত কারণে আমি এই বিষয়টি নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন পার্টিশনের যে ইমপ্যাক্ট হয়েছিল সেটার থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা চলছিল। শিক্ষকরা সব চলে গেছেন সুতরাং পাশ করলেই ধরে চাকরি দিয়ে দেয়া হবে অথবা কলেজ থেকে ধরে এনে পার্টটাইম করানো হবে। সেই কারণে পড়া ঠিকই হতো কিন্তু জ্ঞানের যে অনুসন্ধান আমি করতাম এটা কিন্তু এখানে পুরোপুরি ভাবে পাইনি যদিও শিক্ষকরা অনেক আন্তরিক ছিলেন। আমাকে এটা খুঁজে পেতে হয়েছে লাইব্রেরীকে ভালভাবে ব্যবহার করে। তবে এটার প্রথম পরিবর্তন আসে যখন প্রফেসার নুরুল ইসলাম, মুয়াজ্জেমুল হক হাভার্ড থেকে পিএইচডি করে ফিরে এসে পড়াতে শুরু করেন। সেই সময় থেকে আধুনিক অর্থনীতির সাথে পরিচয় ঘটে । দেশের অর্থনীতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেন রফিকুদ্দিন সাহেব”।
এস এম হলে কেটেছে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক জীবন। প্রথমে ছাত্র হিসেবে পড়ে শিক্ষক হিসেবে। তাঁর ভাষায়, “আমি এস এম হলের ছাত্র ছিলাম। শিক্ষক হয়েও এস এম হলের এসিসটেন্ট হাউজ টিউটর ছিলাম । তবে এস এম হলের জীবনে সবচে বড় লাভ হলো আমি, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আনিসুজ্জামান, আলাউদ্দিন আল আজাদ এই চার জনের সম্পাদনায় এস এম হলের যে বার্ষিকীটা বেরিয়েছিল সেটা সম্ভবত এস এম হলের সর্বশ্রেষ্ঠ বার্ষিকী । তখন রেডিওতে নাটক করেছি, খবর পড়েছি, কবিতা লিখেছি । এখনকার মতো তখন অত জায়গা ছিলনা তাই তখন যে সাহিত্য আসরগুলো বসতো সেগুলো কারো না কারো বাসায় হতো। কখনও আজাদ অফিসে হতো, কখনও কখনও এটা সুফিয়া কামালের বনগ্রামের বাড়িতে হয়েছে, জাহানারা আরজুর বাড়িতে হয়েছে । এরকম বিভিন্ন জায়গায় যে সাহিত্য, কবিতা পাঠ, আলোচনা ইত্যাদি হতো সেগুলোর সাথে কিছুটা যুক্ত ছিলাম । পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ বলে সওগাত অফিসে যেটা ছিল সেখানে খুব বেশি একটা যাওয়া হয়নি। সে সময় আজিমপুরে আমরা একটা ছাত্র সংসদ গঠন করে একটা ভাল লাইব্রেরী গড়ে তুলি। এটা বেশ জনপ্রিয় ছিল। ঈদের সময় সেখান থেকে একটা সংকলন বের করি। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘ঝামেলা’ নামে প্রথম যে বইটা বেরিয়েছিল সেটা বেশ আলোচিত হয়েছিল। পরবর্তীতে আমার সম্পাদনায় ‘আগামী’ নামে একটা সংকলন হয়েছিল। সিরাজুল ইসলাম যেরকম করেছিলেন সেরকম আলোড়ন আনেনি। তাছাড়া বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন ছিল। সেখানেও লেখালেখি হতো।”
কর্মজীবন
মোজাফফার আহমেদ তাঁর কর্মজীবনে যেখানেই কাজ করেছেন সেখানেই নিজস্বতার ছাপ রেখে এসেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষকতা থেকে শুরু করে ট্র্যান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) র চেয়ারম্যান পর্যন্ত তাঁর এই পথচলায় যেমন অনেক সংগঠন তৈরী করেছেন তেমনি অনেক প্রতিষ্ঠানকে পৌছে দিয়েছেন উন্নতির শেখরে। যে প্রতিষ্ঠানেই কাজ করুন না কেন তাঁর লক্ষ্য ছিল একটাই আর সেটা হল দেশের জন্য কিছু একটা করা। তাঁর ভাষায়, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পরীক্ষায়ে আমি প্রথম শ্রেণী পাইনি কিন্তু রেজাল্ট ভালই ছিল। এম.এ.-তেও প্রথম শ্রেণী পাইনি। শিক্ষকতার প্রতি আমার একটা ঝোঁক আছে তা অনেকেই জানতেন এ কারণে অনেক শিক্ষকরা বলতেন তুমি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিবেনা, অন্য কোথাও যাবেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমাকে নেওয়ার ব্যবস্থা করবো । ছাপান্ন সালে এম.এ. পরীক্ষা হলেও রেজাল্ট বেরোতে বেরোতে সাতান্ন সালের ফেব্রুয়ারী মাস হয়ে যায়। আমি, আনিসুর রহমান, শেখ মাকসুদ আলী এবং রেহমান সোবহান আমরা চারজন একই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছিলাম। সে হিসাবে বলা যেতে পারে আমার কর্মজীবন ওখান থেকে শুরু। তার আগেও অবশ্য আমি শিক্ষকতার সাথে যুক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আমার রেজাল্ট বের হবার আগেই হরগঙ্গা কলেজের প্রিন্সিপাল আহমদ উল্লাহ সাহেব এসে আমাকে বললেন যে হরগঙ্গা কলেজে একটু পড়াতে হবে। তখন আমার বন্ধুদের মধ্যে সিরাজল ইসলাম চৌধুরী, শাহ মুহাম্মদ সামসুজ্জামান সেখানে ইংরেজীর শিক্ষক হিসেবে ছিলেন। ওখানে দর্শনে আব্দুর রাজ্জাক এবং একাউন্টিং এর আনোয়ার হোসেন ছিলেন আমার সমসাময়িক। হরগঙ্গা কলেজে আমি জানুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত পড়িয়েছিলাম। চিরকালই আমার পড়ানোর একটা স্টাইল আছে। আমি তখনই বাংলায় পড়িয়েছি এবং আমি সব সময় আমার দেশের যে পরিস্থিতি তার সাথে অর্থনীতিকে সম্পৃক্ত করতে চেষ্টা করেছি। আমার প্রশ্নগুলোও সেই কথাই বলতো। যারা আমার কাছে পড়েছে তারা জানে। সেখানে কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ছিলেন এস ডি ও চাঁদ মিয়া। তাঁর মেয়ে ওখানে পড়তো। তিনি বললেন, “উনি তো পড়ান এম.এ. ক্লাসের অর্থনীতি, এটা ইন্টারমিডিয়েটে পড়ানো হচ্ছে কেন?” প্রিন্সিপাল যখন আমাকে ডেকে বিষযটি নিয়ে কথা বললেন আমি তার পরদিনই পদত্যাগ করে চলে আসি। এটা এক হিসাবে পরাজয়ের কাহিনী। পরবর্তী জীবনে নিজেকে পরিবর্তন করি। কিন্তু ছাত্রদের সঙ্গে আমার এই পড়ার নিয়ম নিয়ে আর কিছু হয়নি।
তখন পাকিস্তান এগ্রিকালচার ফাইন্যান্স কর্পোরেশন হচ্ছে। ঢাকাতে তার যে অফিস হবে তার ম্যনেজার হওয়ার জন্য মাহতাব উদ্দীন সরকার সাহেব আমাকে আহবান করেছিলেন। তখনকার দিনে ৫০০ টাকা বেতন, একটা বাড়ী এবং গাড়ী ইত্যাদি। যেহেতু আমি শিক্ষকতা করবো সেহেতু আমি অন্য যেসব আকর্ষণ ছিল সেগুলো ফেলে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো শুরু করি।”
মোজাফফর যখন স্কুলে পড়েন তখন আনোয়ারুল কাদির সাহেব মঠবাড়িয়া স্কুলে পরিদর্শনে এসেছিলেন। ইন্সপেক্টর সাহেবরা যা করেন ক্লাসে যেয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন। তাঁর ক্লাসে এসে যে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন সেটার উত্তর মোজাফফর দিলেন। তিনি মোজাফফরকে জিজ্ঞেস করলেন ‘তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও?’ তাঁর উত্তর ছিল, ‘আমি বড় হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক হব।’ শুনে তিনি খুব চমৎকৃত হয়েছিলেন। কারণ তিনি নিজেও এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। এ বিষয়টি নিয়ে তাঁদের মধ্যে আরো আলোচনা হয়েছিল, “তিনি আমাকে শিক্ষক হতে চাই কেন জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমার দাদা ঢাকা কলেজে পড়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় যেতে পারেননি। বাবা ও চাচাদের অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমাদের পরিবারের একটা আত্মিক সম্পর্ক ছিল। ছোটবেলা থেকেই অর্থনীতি সম্পর্কে আমার একটা আকর্ষণ ছিল। আমার আব্বার কাজিনদের ভেতরে অনেকেই অর্থনীতি নিয়ে পড়াশুনা করেছেন। ছুটিছাটায় তাদের সাথে এই অর্থনীতি নিয়ে আলাপ করতাম এবং আমার আকর্ষণটা সেখান থেকেই তৈরি হয়েছিল। যুদ্ধের সময় জিনিসপত্রের মূল্য ওঠানামা, বাজারদর এগুলোকে কাছ থেকে দেখে একটু উৎসুক্য তখন থেকেই ছিল। এজন্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর অর্থনীতি এ দুটোর প্রতি আমার সমান আকর্ষণ ছিল।
আর আমাদের পরিবারের শিক্ষকতার ইতিহাস যদি দেখি তাতে প্রতি প্রজন্মেই দেখি যে কেউ না কেউ শিক্ষকতা করেছে। আমার বাবার দাদা মুর্শিদাবাদের নওয়াবের যে মাদ্রাসা ছিল সেখানে আইনের শিক্ষক ছিলেন। বাবার এক চাচা আইন পাশ করে আইনজীবী হননি, আইনের শিক্ষক হয়েছিলেন। শিক্ষকতার প্রতি একটা টান পরিবারের ভিতরে সবারই ছিল। সে জন্যই হয়তো এ কথাটা সরাসরি বলতে পেরেছি। এ কারণেই আমি ঠিক করেছিলাম সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দেবোনা শিক্ষক হবো। আমার বাবা আশা করেছিলেন আমি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দেব। আমি যখন বিদেশ থেকে পিএইচডি করে ফিরে আসি তখন আমার বাবা আনন্দিত হয়েছিলেন। সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশনের মাধ্যমে একটা স্কলারশীপ পাওয়া, বিদেশে যাওয়া, চাকরি করা, ওখানে একটা ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েও পরিবারের প্রয়োজনে, দেশের টানে ফিরে আসা এগুলো বাবাকে নাড়া দেয়।”
বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে সরকারী চাকুরে হোক কিন্তু পেশা গ্রহণের ব্যাপারে মোজাফফর তাঁর নিজের সংকল্পেই অটল থেকেছিলেন। “আমি আমার বাবার কথা সবসময় মেনে চলেছি। তাঁর যে দু-একটা কথা মানিনি তার ভেতরে একটি হলো সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা না দেওয়া। যে কারণে লোকে সরকারী চাকরি করে সেটা সম্ভবত সরকারী চাকরি না করেও সম্ভব হয়। সরকারী চাকরি করলে আত্মীয় স্বজনকে সাহায্য করা যায় এটা হলো মূল আকর্ষণ। আমার মতে ইচ্ছা থাকলে সব জায়গা থেকেই সাহায্য করা সম্ভব।”
বর্ণাঢ্য কর্মজীবন সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোপুরি সময় থাকতে পারিনি। একসময় রাজনৈতিক কারণে আমাকে এখান থেকে চলে যেতে হয়েছে। আমি ব্যাংকে কাজ করেছি, ই পি আই ডি সি তে কাজ করেছি, প্ল্যানিং কমিশনে কাজ করেছি, পরবর্তীতে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। জিয়াউর রহমানের প্রথম কাউন্সিল সব এডভাইজার এর সদস্যও ছিলাম।
“১৯৬৭ সালের এপ্রিল মাসে আমি ইউনাইটেড ব্যাংকে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ দেই। বাবা ১৯৬০ সালে রিটায়ার করে ১৯৬৭ পর্যন্ত সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কাজ করেছেন। তখন তাঁর স্বাস্থ্য খুব খারাপ যাচ্ছিল এসব কারণে আমার ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় ফিরে আসার সুযোগ হয়। ইষ্ট পাকিস্তান ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ প্লানিং হিসেবে নিয়োগ পাই। সেটা একটা বড় পাওয়া, আমার আগে এত অল্প বয়সে এই পদে কেউ নিয়োগ পান নাই। এর ফলে আমার বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা অনেক বেড়ে যায়। এখানে আমাকে সারা বাংলাদেশের শিল্প/শিল্পায়ন ব্যবস্থাপনা দেখতে হতো এবং এ সময় অনেকগুলো প্রকল্প পাস করাতে পেরেছিলাম।
বাংলাদেশ স্বাধীন হলে প্ল্যানিং কমিশনে নিয়োগ দেয়া হয় আমাকে। আমরা অতি দ্রুত প্রথম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনা সম্পন্ন করি। আমরা যারা বাইরে পড়াশুনা করে এসেছি তাদের সাথে এখানকার সরকারী কর্মকর্তাদের মতের মিল হতো না। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মতিন চৌধুরী সাহেবের অনুরোধে IBA-এর দায়িত্ব নিই। এ সময় আমি বিভিন্ন সংস্থায় রিসার্চ কনসালটেন্সি করার সুযোগ পাই। WHO, UNESCO, ILO, ESCAP, IDRC, UNDP, ADPC, ADB, এরকম নানা প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করি। পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথেও যোগাযোগ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন আমি কাজ করেছি তখন উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে একটি হলো আই.বি.এ.-এর জন্য বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্পের ব্যবস্থা করেছিলাম যার ফলে প্রায় ৮৮ জন শিক্ষক বিদেশে উচ্চতর পড়াশোনা করতে পেরেছিল। লাইব্রেরীকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন নতুন কোর্স চালু করার ব্যবস্থা করেছি। ২০০৩ সালে অবসর নিই কিন্তু ছাত্রদের অনুরোধেও ২০০৬ সাল পর্যন্ত কাজ করি। ২০০৭ থেকে আমার অবসর জীবন শুরু।”
বিদেশে পড়াশোনা
সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা এবং মেধার জোরে তিনি বিদেশে পড়াশোনা করতে যান। ১৯৫৮ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক এসোসিয়েশন-এর একটি রিফ্রেসার্স কোর্সে অংশগ্রহণ করার জন্য তিনি, রেহমান সোবহান, নুরুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন মারিতে যান। সেখানে তিনি অধ্যপক হ্যারি জনসন, রেডওয়ে, ই.এ.জি রবিনসন সহ অন্যান্য অধ্যাপকদের সাথে পরিচিত হন। ১৯৫৯ সালে ইউনিভার্সিটি অব প্যারিসে একটি গবেষণার জন্য ফরাসি সরকারের বৃত্তি নিয়ে ফ্রান্সে যান। সেই সময়ে তাঁর শিক্ষক যারা ছিলেন তাঁদের মধ্য ছিলেন মরেশাল, মরিন বিয়ে এবং ফ্রাসোয়া পেরু। এ্যাপ্লোইড ইকোনোমিক রিসার্চের পাঠাগারে মোজাফফর কাজ করতেন। এখানে কাজ করার সময় তিনি আন্তঃবাণিজ্য বিষয়ে আগ্রহী হন। ফরাসি দেশে থাকার একটা সুবিধা ছিল যে, এখানে অনেক চিত্রকলা ও স্কাল্পচার দেখার সুযোগ ছিল। প্যারিসে অনেক ঐতিহাসিক প্রাসাদ ও দর্শনীয় স্থান দেখার সুযোগ হয়েছিল। এখানে থকতেই তিনি ইউরোপীয় দর্শন, সাহিত্য, চিত্রকলা এবং তাদের রাজনীতি সম্পর্কে জানেন এবং পরিচিত হন।
“আমি প্যারিসে থাকতে ইংল্যান্ডে যে সব বাঙালি সিএসপি ও শিক্ষকেরা পড়াশুনা করতে যেতেন তারা আসলে যোগাযোগ করতেন আমার সাথে। বদরুদ্দিন ওমর, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, কামাল উদ্দিন চৌধুরী, মনিরুজ্জামান, রমজান আলী সদরদার সাহেব, বাসন্তী গুহ ঠাকুরতা আমার সাথে দেখা করতে আসলে তাঁদের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখাতে নিয়ে যেতাম।”
“১৯৬০ এ রোমে অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয় এটা দেখার সুযোগ হয়েছিল। ফ্রান্সে আমি এক বছরও থাকিনি। ফরাসিতে যে ডিগ্রীটা দেয়া হয় এটা ছিল এমফিলের সমতুল্য। সুতরাং আমি ঠিক করি যে, আমি অন্যত্র যাব। সেই চিন্তা থেকেই অন্যান্য দেশে স্কলারশীপের চেষ্টা করি। আমেরিকার কতগুলো বিশ্বেবিদ্যালয় এবং হেগ এর ইন্সটিটিউট অফ সোসাল সাইন্সে-এ যোগাযোগ করি। আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় রকফেলার ফাউন্ডেশনে বৃত্তি দিয়ে আমাকে ডিপার্টমেন্ট অফ ইকোনোমিক্স-এ ভর্তি করে। এই বৃত্তিটা ছিল বেশ কমপিটিটিভ। অর্থাৎ সারা বিশ্বের ছাত্রদের মধ্য থেকে তারা নির্বাচন করেছিলেন। পাকিস্তান থেকে আমিই একমাত্র সিলেক্ট হই, ভারত থেকে ৩ জন এ বৃত্তি পায়। এছাড়াও হংকং থেকে একজন, সিংগাপুরের একজন, ফিলিপিন থেকে একজন এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে একজন এ বৃত্তি পেয়েছিল। ডেভিড হপার এবং হ্যারি জনসন এই বৃত্তির দেখাশোনা করতেন। হপার বিভাগে এসোসিয়েট প্রফেসর ছিলেন এবং হ্যারী জনসন ছিলেন অধ্যাপক। তাঁরা আমাদের যথেষ্ট যত্ন নিতেন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন টার্ম সিস্টেমে চলতো। ১৩ সপ্তায় ক্লাস শেষ হয়ে যেতো, ৩টা কোর্স নিতে হতো, ৩টাতে ৯টা পরীক্ষা দিতে হতো। আমি ১ বছরে আমার কোর্স শেষ করেছিলাম। তার ফলে পরবর্তিতে আরো কতগুলো বিশেষায়িত কোর্স নিয়ে দেড় বছরে কোর্স সম্পন্ন করি। এর ফলে দ্রুত আমি কিছু উচ্চতর সেমিনারে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাই। রেজাল্ট ভাল ছিল বলে আরও এক বছর পরে বৃত্তির মেয়াদ বাড়ে। আমি কিছুদিন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডার গ্রাজুয়েটের ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কাজ করি। এ ছাড়া ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোতে সাউথ এশিয়ান ডিপার্টমেন্ট বলে একটি ডিপার্টমেন্ট খোলা হয়েছিল যেখানে বাংলা পড়াবার জন্য আমাকে নিযুক্ত করা হয়। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা আমার শিক্ষক ছিলেন তাঁদের মধ্যে ৮ জন নোবেল প্রাইজ পান। তাঁর ভিতরে মিল্টন ফ্রিডম্যান এবং টিডব্লিউ সুল্টজ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া সহপাঠিদের মধ্যে রবার্ট লুকাস নোবেল প্রাইজ পান। এ থেকে অনুমান করা যায় যে সেখানে যে ক্লাসগুলো হতো তা খুব উচুমানের ছিল।
আমি থাকতাম ইন্টারন্যাশনাল হাউসে। সেখানে আরও ৫০টি দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা থাকতো। একটি কমন ক্যাফেটরিয়া ছিল। রবিবার দুপুরের খাবার ছাড়া আর সবসময়ই খাবার পাওয়া যেতো। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে আর একটা বিষয় ছিল তা হলো ‘সোস্যাল সাইন্স টি’ বলে একটা আসর হতো। রোজ দুপুর ৩ টার সময় ছাত্র-শিক্ষকরা চা খেতে আসতেন। এখানে লক্ষণীয় যেটা সেটা হলো ছাত্র শিক্ষক নৈকট্য লাভ করতো।
প্রতি বুধবার ৫০ সেন্ট দিয়ে ২/৩ টা চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ ছিল। সেখানে থাকা কালীন আমরা ২টা উদ্যোগ নিই। ১টা হলো পাকিস্তান স্টুডেন্টেস এসোসিয়েশন গঠন করা। এখানে আমাকে সাহায্য করেছিলেন আল-মুতী শরফুদ্দিন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ এর জন্ম শতবার্ষিক উপলক্ষে ত্রিপুরার বাঙালী অধিবাসী এবং দুই বাংলার বাঙালিরা মিলে একটা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। এতে আমি সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলাম। তাসের দেশ নাটকের ইংরেজী অনুবাদ মঞ্চস্থ করি আমরা । আমি দহলার চরিত্র করি। এছাড়া রবি ঠাকুরের পোষ্ট অফিসও মঞ্চস্থ করা হয়। বিভিন্ন দেশের ইংরেজিতে অনুদিত নাটক করতে ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার নামে একটি সংগঠন গড়ে ওঠে।
১৯৬০ এর দশকে কেনেডি প্রেসিডেন্ট হন এবং তখন সারা আমেরিকা থেকে বেষ্ট ফরেন স্টুডেন্ট হিসেবে ১৫ জন ছাত্র তাঁর সাথে দেখা করার সুযোগ পায়। এদের মধ্যে আমি ছিলাম। তাঁর সঙ্গে কথা বলা এবং তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা এটা একটা স্মরণীয় ঘটনা ছিল আমার জন্য। এই ছবি সকল ন্যাশনাল মার্কিন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন থেকে প্রতি মাসে ডিনার হতো। যে কেউ আসতে পারতো এখানে পয়সা দিয়ে তবে এর রান্নার দায়িত্ব পড়তো আমাদের কজনের ওপর। সে সময় রওশন জাহান রান্না কাজে সাহায্য করতো। তখনও আমাদের বিয়ে হয়নি। এ এসোসিয়েশন নর্থ আমেরিকার সফল স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এখানে ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিবল হতো। সেখানে তখন নানারকম খাবার তৈরি করে বিক্রি করা যেতো। ৫ বছর শিকাগোতে বেশ আনন্দে কেটেছে।
আমি থিসিস শেষ করি ১৯৬৫ সালে এবং আমার পিএইচডি করার অর্থায়ন করেছিল ব্রুকিংস ইন্সটিটিউশন। আমার থিসিসের বিষয় ছিল “দ্যা ডিমান্ড অফ লাইফ ইন্সুরেন্স”, এ্যাল হারবার্সার ও মার্টিন মিলারের অধীনে আমি গবেষণা করি। মিলার পরবর্তীতে নোবেল পুরস্কার পান।
রাজনৈতিক ভাবনা
ছোটবেলা থেকেই রাজনীতি সচেতন হওয়া সত্ত্বেও সক্রিয় রাজনীতির সাথে তিনি কখোনো যুক্ত ছিলেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, “সক্রিয় রাজনীতির জন্য একটা ভিন্ন রকমের চরিত্রের দরকার তা আমার ছিল না, ছিল দেশকে জানার প্রতি আকর্ষণ। পাকিস্তান আন্দোলন, ‘৪৬ এর ১৬ই আগষ্ট কবি গোলাম মোস্তফার সাথে ফরিদপুরে শোভাযাত্রা এবং তাঁর বড় ছেলের নেতৃত্বে যে প্যারেড হয়েছিল তাতেও অংশগ্রহণ করেছিলাম। পাকিস্তান আন্দোলন এবং এজন্য উপস্থাপিত যুক্তিগুলো আমাকে আকর্ষণ করেছিল। আমি এখনো মনে করতে পারি জিন্না সাহেবের ১৪ দফার মাইনরিটি রাইটস রক্ষার কথা বলা হয়েছিল, দাবী করা হয়েছিল প্রভিন্স কে বেশি ক্ষমতা দাও সেন্টার কে না। এটা যদি তখন কংগ্রেস মেনে নিত তাহলে ভারত বিভক্ত হতো না। জিন্না সাহেবকে দ্বিজাতি তত্ত্ব নিয়ে যতই নিন্দা করা হোক না কেন আমার ছেলাবেলায় আমার পরিবারের বাইরে যাদের নায়ক বলে জানতাম জিজ্ঞস করলে আমি বলব- মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং কবি নজরুল ইসলাম । পরবর্তীতে ভাষা আন্দোলন, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলন, স্বাধীকার আন্দোলনে সহমর্মিতার সাথে যুক্ত থেকেছি। আমি রাজনীতিকে দেখেছি, বুঝেছি। এ প্রচেষ্টাটা আমার ছিল কিন্তু সক্রিয় রাজনীতি করার ব্যাপারে কেন যেন কখোনো আগ্রহ পাইনি। যারা এই রাজনীতির নায়ক তাঁদের সম্পর্কে জানার আকর্ষণ ছিল। পরবর্তিতে আমি বিভিন্ন দেশের রাজনীতি পরিবর্তন নিয়ে পড়াশোনা করেছি।
সম্মাননা
দীর্ঘ কর্মজীবনের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মোজাফফর আহমদ বিভিন্ন সময় সংবর্ধিত হয়েছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল অর্থনীতি সমিতি সম্মাননা (১৯৮৮), অতীশ দীপংকর পদক (১৯৮৯), অর্থনীতি শিক্ষক সমিতি সম্মাননা (১৯৯৩), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশন সম্মাননা (২০০২), আয়ামা সম্মাননা (২০০২), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সম্মাননা (২০০৩), মানিকগঞ্জ সমিতি অমর্ত্যসেন পদক (২০০৭), চন্দ্রাবতী একাডেমী পদক (২০০৭), একুশে পদক (২০০৮)।
তিনি বাংলাদেশ ইন্সটিটাউট অফ স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ, বাংলাদেশ ইন্সটিটাউট অফ ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠায় যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ ইন্সটিটাউট অফ ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ এর পুনঃগঠনের কাজ করেছেন। তিনি TIB-এর সভাপতি ছিলেন। এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলা একাডেমী, বারডেম, নজরুল একাডেমি, অর্থনীতি সমিতি, অর্থনীতি শিক্ষক সমিতির জীবন সদস্য ছিলেন তিনি। তিনি পরিবেশ আন্দোলন এর জীবন সদস্য ও সভাপতি এবং সুজন-এর চেয়ারপার্সন, হিউম্যান রিসোর্স ফাউন্ডেশন এর ট্রাস্টি ছিলেন।
লেখালেখি
মোজাফফর আহমদের লেখালেখির শুরু কবিতা, গল্প দিয়ে। এরপর অর্থনীতির পাশাপাশি শিক্ষা, নির্বাচন, গণতন্ত্র এগুলো নিয়েও লিখেছেন। তাঁর লেখা ৪শ প্রবন্ধ ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন প্রকাশনায়। এছাড়াও রয়েছে ২০০ বুক রিভিউ, আছে শ’খানেক অন্যদের বইয়ের সমালোচনা। সাক্ষাৎকার, কলাম ইত্যাদির তো কোনো শেষ নেই। তাঁর ভাষায়, ‘১৯৮০ সালে আমার ও রেহমান সোবহানের প্রথম বই বের হয়। এর পরে ১৮টি বই প্রকাশিত হয়েছে। আমার বেশির ভাগ বই-ই বিদেশ থেকে প্রকাশিত হত। বিশেষ করে দিল্লী, শ্রীলংকা, ভারত, ম্যানিলা থেকে বের হয়েছে নানা গবেষণা পত্র। যেগুলো আমি গ্রন্থিত করতে পারিনি।’
মোজাফফর আহমদের লেখালেখির শুরু কবিতা, গল্প দিয়ে। এরপর অর্থনীতির পাশাপাশি শিক্ষা, নির্বাচন, গণতন্ত্র এগুলো নিয়েও লিখেছেন। তাঁর লেখা ৪শ প্রবন্ধ ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন প্রকাশনায়। এছাড়াও রয়েছে ২০০ বুক রিভিউ, আছে শ’খানেক অন্যদের বইয়ের সমালোচনা। সাক্ষাৎকার, কলাম ইত্যাদির তো কোনো শেষ নেই। তাঁর ভাষায়, ‘১৯৮০ সালে আমার ও রেহমান সোবহানের প্রথম বই বের হয়। এর পরে ১৮টি বই প্রকাশিত হয়েছে। আমার বেশির ভাগ বই-ই বিদেশ থেকে প্রকাশিত হত। বিশেষ করে দিল্লী, শ্রীলংকা, ভারত, ম্যানিলা থেকে বের হয়েছে নানা গবেষণা পত্র। যেগুলো আমি গ্রন্থিত করতে পারিনি।’
বিদেশে শিক্ষকতা
মোজাফফর আহমদ যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, নরওয়ে, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থায় ভিজিটিং প্রফেসর/ স্কলার হিসেবে কাজ করেছেন।
পারিবারিক জীবন
১৯৬৬ সালে মোজাফফর আহমদের এবং রওশন জাহানের বিয়ে হয়। তাঁর স্ত্রী রওশন জাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। সন্তানদের দেখাশোনা করতে তিনি চাকরী ছেড়ে দেন। উইমেন ফর উইমেন এর সক্রিয় সদস্য ও সাবেক সভাপতি। আইন ও সালিশ কেন্দ্র, মহিলা পরিষদ, গণসাক্ষরতা অভিযানের সক্রিয় সদস্য। তাঁদের বড় ছেলে সিরাজুল আমিন আহমদ, মমতাজুল করিম ও মেয়ে সোহেলা নাজনীন।
তথ্যসূত্র : মোজাফফর আহমদ-এর সাথে সাক্ষাৎকার, জানুয়ারী, ২০০৮
মৃত্যু
মোজাফফর আহমদ ২২ মে, ২০১২ ঢাকায় মারা যান।
লেখক : আশরাফি ফেরদৌসী