ছেলেবেলায় তাঁর সবচেয়ে বেশি সুখ ছিল বই পড়ায়। যা পেতেন তাই পড়তেন, বাবা-মা বলতেন চোখের মাথা খাচ্ছো, হয়তো মিথ্যা বলতেন না। কিন্তু আবার খুশিও হতেন, এই ভেবে যে, দুষ্টু ছেলেদের সঙ্গে মেশার চেয়ে বই পড়ার দুষ্টুমি অনেক ভালো। বই পড়া দুজন ডানপিটে ছিল তাঁর খুব নিকটজন, এদের একজন ‘রামের সুমতি’র রাম, অপরজন ‘ছুটি’ গল্পের ফটিক চক্রবর্তী। সেই সময় শুধু তাঁর একার নয় বরং তাঁদের প্রজন্মের বালক-বালিকাদের প্রায় সবারই প্রিয় ছিল এই দুজন।
ছেলেবেলায় সহপাঠীদের সঙ্গে মারামারি হয়েছে। পানিতে বই ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার ঘটনাও কম হয়নি। রাস্তার পাশে ধাক্কাধাক্কির কথা মনে পড়ে। ফুটবল খেলতে গিয়ে তো একবার পা-ই ভেঙ্গে ফেলেছিলেন। যার কারণে কয়েক সপ্তাহ শয্যাশায়ী থাকতে হয়েছিল, পায়ে প্লাস্টার পেঁচিয়ে। গভীর বন্ধুত্ব ছিল অনেকের সঙ্গে, কেউ কেউ এখনো উপস্থিত আছে তাঁর ভেতরে। যদিও তাঁদের সঙ্গে হয়তো দেখা নেই অনেককাল। আত্মীয়দের আত্মীয়তা ছিল নিবিড়। তাঁদের মধ্যে আসা- যাওয়া নিয়মিত। আসা-যাওয়াটা কখনও কখনও রূপ নিত উৎসবের। রাজশাহীতে পদ্মা নদী ছিল। ঢাকাতে বুড়িগঙ্গা, কলকাতায় গড়ের মাঠ। ওই সব নদী ও মাঠ তাঁর সুখ স্মৃতির অংশ। রুপেন, হাসিল উদ্দিন, রামকৃষ্ণ, সুবিমল, প্রশান্ত, মোতাহার এখন কোথায় আছে জানেন না। কিন্তু তাঁদের উপস্থিতি টের পান পেছনে সামনে।
এতক্ষণ যাঁর কথা বলা হলো তিনি হলেন ইংরেজী সাহিত্যের প্রখ্যাত শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, বুদ্ধিজীবী ও সুবক্তা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। প্রগতিশীল চিন্তা- চেতনার অধিকারী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কৃতি ছাত্র ও সমাজ সচেতন জনপ্রিয় শিক্ষক। সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে তিনি একজন প্রবন্ধ লেখক হিসাবেও সুপরিচিত। গল্প, উপন্যাস, নাটকও লিখেছেন। অনুবাদ করেছেন ধ্রুপদী সাহিত্যের।
১৯৩৬ সালের ২৩ জুন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তাঁর নানা বাড়ি বিক্রমপুরের সাইনপুকুর-এ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁদের বাড়ি ছিল ঢাকার বিক্রমপুরের বাইড়খাল গ্রামে। বাবা হাফিজ উদ্দিন চৌধুরী। মা আসিয়া খাতুন। শৈশব কেটেছে রাজশাহী এবং কলকাতায় বাবার চাকরি সূত্রে। তাঁরা আট ভাই এবং চার বোন।
১৯৫০ সালে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরী স্কুল থেকে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় বৃত্তি লাভসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৫২ সালে নটরডেম কলেজ থেকে প্রথম বিভাগ নিয়ে মেধা তালিকায় নবম স্থান অর্জন করে আই.এ. পাশ করেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করে ইংরেজি সাহিত্যে বি.এ. সম্মান এবং ১৯৫৬ সালে একই বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করে এম.এ. ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ইংরেজি সাহিত্যে উচ্চতর গবেষণা করেছেন যুক্তরাজ্যের লীডস এবং লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। লীডস বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি যান ১৯৫৯ সালে; ব্রিটিশ কাউন্সিল স্কলারশিপ নিয়ে। সেখানে তিনি ইংরেজী সাহিত্য পান্ট- গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা অর্জন করেন ১৯৬০ সালে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে জেন অস্টেনের নায়ক চরিত্রের উপর তিনি একটি অভিসন্দর্ভ রচনা করেন। ১৯৬৫ তে তিনি কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। সেখানে, ‘দি এনিমি টেরিটরি: ইভিল ইন দি নভেলস অব জনরাড, ফরাটার এ্যান্ড লরেন্স’ নাম দিয়ে একটি অভিসন্দর্ভ লেখেন। এর জন্য তিনি পি.এইচ.ডি. ডিগ্রি লাভ করেন, ১৯৬৮ সালে।
ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিতে গিয়ে ভয়ঙ্কর আতঙ্কের মধ্যে পড়েছিলেন। তখনকার সময়ে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দুটা হতো। ঢাকা বোর্ডের এবং পূর্ববঙ্গ ম্যাধমিক শিক্ষা বোর্ডের। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ছিলেন ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষার্থী। খবরের কাগজে কোন রোল নম্বর কোথায় পড়েছে তা ছাপা হয়েছিল। তিনি দেখেন তাঁর সিট পড়েছে পরিচিত আরমানিটোলা স্কুলে। সেটা যে ঢাকা বোর্ডের নয়, মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সিট বিন্যাস তা তিনি খেয়াল করেননি। স্কুলে গিয়ে দেখেন কাউকে চেনা যায় না। একজনকেও না। হেডমাস্টারের রুমে গিয়ে ভুল ভাঙলো। তিনি বললেন, এটা মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা। ঢাকা বোর্ডের সিট কোথায় পড়েছে, তা তিনি জানেন না। সহপাঠী ও বিশেষ বন্ধু শফিকদের (‘যায় যায় দিন’ সম্পাদক শফিক রেহমান) বাসা কাছেই বেচারামের দেউড়িতে। দৌড়ে তিনি বাসায় গিয়ে শোনেন তিনি চলে গেছেন পরীক্ষা দিতে। সিট পড়েছে সদরঘাটে। তবে কোন স্কুলে তা বাসার গেটের সামনে যাকে পেলেন তিনি বলতে পারলেন না। দ্রুত রিকশা নিয়ে প্রথমে কলেজিয়েট স্কুলে, না সেখানে অন্য স্কুলের ছেলেরা পরীক্ষা দিচ্ছে। পরে দৌড়ে যান তাঁর স্কুলে। সেখানে পরিচিত ছেলেদের সঙ্গে দেখা হতেই জানতে পারেন পার্কের পাশেই যে ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ, সেখানে পরীক্ষা হবে। সৌভাগ্যক্রমে তখনও ঘণ্টা পড়েনি। কয়েক মিনিট বাকি ছিল।
ভীষণ আতঙ্কে ভুগেছিলেন সেদিন। সময় চলে যাচ্ছিল। রাস্তা মনে হচ্ছিল লম্বা। মনে হচ্ছিল পরীক্ষা বুঝি আর দেয়া হলো না। অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন। মনে করলে আজও ভয় পান। ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময় সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কলেজের ছাত্র; আই.এ পরীক্ষা দেবেন। আন্দোলনের আগে যখনই মিছিল হয়েছে তিনি তাতে যোগ দিয়েছেন। একুশে ফেব্রুয়ারীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলার ছাত্র সমাবেশেও তিনি ছিলেন। ছাত্ররা যাতে বাইরে যাবার চেষ্টা না করে সে লক্ষ্যে টিয়ার গ্যাস ছোড়া হচ্ছিল। এর যন্ত্রণা কিশোর সিরাজ সহ্য করেছেন। ওই যন্ত্রণা নিয়ে তখনকার রেল লাইনের রাস্তা ধরে আজিমপুরের বাসায় ফিরে আসেন। এসে শোনেন গুলি চালানো হয়েছে এবং কয়েকজন ছাত্র নিহত হয়েছে। আজিমপুরের সরকারী কর্মচারী আবাসের বয়স্কদের সঙ্গে তিনিও মেডিকেল কলেজে ছুটে গেছেন, কিন্তু ততক্ষণে ভেতরে প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল।
দৈনিক আজাদের অফিস ছিল পাড়ার কাছেই। একুশ তারিখ সন্ধ্যাতে কয়েকজন মিলে তাঁরা আজাদ অফিসে গিয়েছিলেন, পত্রিকাতে ঘটনার সঠিক বিবরণ তাঁরা আশা করেন এটা জানিয়ে দিতে। পরের দিন সকালে তাঁরা আজাদ অফিসের সামনে আবার হাজির হন। সেখান থেকে তখন আজাদ এবং সংবাদ ও মর্নিং নিউজ পত্রিকা বিতরণ করা হতো, হকার্স সমিতির মাধ্যমে। তিনটি পত্রিকাই ছিল মুসলিম লীগ সমর্থকদের। ছাত্ররা পত্রিকা তিনটিতে খবর দেখে হতাশ হন এবং স্বতঃস্ফূর্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে পত্রিকার স্তূপে আগুন ধরিয়ে দেন। সেই বহ্নি উৎসব একই সঙ্গে গুলিবর্ষণের প্রতিবাদ এবং পত্রিকার মালিকদের জন্য হুশিয়ারি ছিল।
বায়ান্ন সালে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের উত্তেজনা ও অভিজ্ঞতায় তখন তিনি সমৃদ্ধ। সেসময় আবাসিক হলগুলোতে নিয়মিত বার্ষিক নির্বাচন হতো। ওই বছর সলিমুল্লাহ হলের নির্বাচনে লীগবিরোধী গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ওই মোর্চা থেকে সদস্য পদপ্রার্থী হন। তাঁদের পুরো প্যানেলই বিজয়ী হন। এই ফল ছিল দু’বছর পরে পূর্ববঙ্গে যে সাধারণ নির্বাচন হয় তার ফলেরই পূর্বাভাস।
পেশায় তিনি কি হবেন সেটা ঠিক ছিল না। আবার ছিলও, ঠিক ছিল চাকুরে হবেন। তার বাইরে কিই বা হওয়ার ছিল মধ্যবিত্র সন্তানের? পাকিস্তান না হলে কি হতো বলা মুশকিল, পাকিস্তান হওয়ায় তাঁর বাবা ঠিক করে রেখেছিলেন সিরাজুল ইসলাম সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দেবেন। সেটা দিতে হলে কি ধরনের পড়ালেখা করা চাই কোন কোন বিষয় নিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে এসব তিনি খোঁজ খবর রাখতেন সিরাজুল ইসলামের চেয়ে বেশি। কিন্তু ওই পরীক্ষা তাঁর আর দেয়া হয়নি। এম.এ. পরীক্ষা দিয়েই তিনি চাকরি পেয়ে গিয়েছিলেন মুন্সিগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজে। সেখানে মাস দেড়েক থাকার পরে ঢাকার জগন্নাথ কলেজে। নয় মাস পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর তত্ত্বাবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নয় জন গবেষক পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। এঁরা সকলেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে অবসর গ্রহণের পর তিনি প্রফেসর ইমেরিটাস হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তাঁর আনুষ্ঠানিক অবসর গ্রহণ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগ কর্তৃক একটি সম্মাননা গ্রন্থ প্রকাশিত হয় : ‘Politics and Culture, Essays in Honour of Serajul Islam Choudhury’.
এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধান, ডীন, সিনেট সদস্য ও সিন্ডিকেট সদস্য; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য এবং ডাকসুর ট্রেজারারসহ বাংলাদেশ লেখক শিবির, উচ্চতর মানববিদ্যা গবেষণা কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থ সংস্থা, সমাজ-রূপান্তর অধ্যায় কেন্দ্র, বাংলাদেশ দেওয়াল পত্রিকা পরিষদ, ওসমানী উদ্যানের গাছ রক্ষা কমিটি, লালন আখড়া রক্ষা কমিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব, বাংলাদেশ লেখক ইউনিয়ন, আড়িয়াল বিল রক্ষা সমিতি ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক বুদ্ধিজীবী সংঘের নানা দায়িত্ব পালন করেন।
শৈশব থেকেই লেখক হওয়ার বাসনা ছিল তাঁর মধ্যে প্রবল। সে কারণেই সাহিত্যের প্রতি তাঁর অনুরাগ, অধ্যয়ন। কিন্তু লেখালেখি করতে গিয়ে সাহিত্যের সৃজনশীলতার পথটির চেয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মানচিত্রটি তাঁর সামনে অধিক বিস্তৃতভাবে নজরে পড়ে। ফলে প্রবন্ধ হয়ে ওঠে তাঁর মূল বিষয়। গল্প উপন্যাসের চেয়ে প্রবন্ধের ক্যানভাসে তিনি সমাজকে বিশ্লেষণ করেন অনেক স্বাচ্ছন্দ ও পূর্ণভাবে, গভীর মমতা দিয়ে। সৃজনশীল লেখালেখিতেও তিনি আন্তরিক। সেই সংখ্যাও তাঁর কম নয়। ‘কণার অনিশ্চিত যাত্রা’, ‘শেষ নেই’- এর মতো উপন্যাস কিংবা ‘তাকিয়ে দেখি’, ‘ভালোমানুষের জগৎ- এর মতো গল্পগ্রন্থ যেমন লিখেছেন, তেমনি ‘বাবুলের বেড়ে ওঠা’ বা ‘দরজাটা খোলো’- এর মতো কিশোর রচনাও রয়েছে তাঁর। তাঁর প্রকাশনার মধ্যে ‘ছোটদের শেক্সপীয়র’; ‘অন্বেষণ’; ‘এ্যারিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব’; ‘প্রতিক্রিয়াশীলতা, আধুনিক ইংরেজী সাহিত্যে’; ‘শরৎচন্দ্র ও সামন্তবাদ’; ‘রাষ্ট্রতন্ত্রের সমাজদ্রোহিতা’; ‘রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথের মতোই’; ‘বিচ্ছিন্নতায় অসম্মতি’; ‘নজরুলকে কোন পরিচয়ে চিনবো’; ‘রাষ্ট্র ও সমাজের মাঝখানে’; ‘জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি’; ‘কালের স্বাক্ষী’; ‘রাষ্ট্র ও সংস্কৃতির সামাজিকতা’ সহ আরো অনেক সংকলন, কলাম, বক্তৃতা রয়েছে।
পত্রিকা সম্পাদনার সঙ্গেও দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত। সম্পাদনা করেছেন ‘পরিক্রম’, ‘সাহিত্যপত্র’, ‘সচিত্র সময়’, ‘সাপ্তাহিক সময়’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা’, ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্ট্যাডিস’ প্রভৃতি। তাঁর সম্পাদনায় নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে ত্রৈমাসিক সাহিত্য সংস্কৃতির পত্রিকা ‘নতুন দিগন্ত’। ‘নতুন দিগন্ত’ প্রগতিশীল, মুক্তচিন্তার মানুষের জন্য খোলাজানালা। ‘নতুন দিগন্ত’- এর প্রকাশনা শুরু হয় ২০০২ সালে। এখনো প্রকাশিত হচ্ছে। পত্রিকাটির তিনি প্রকাশকও।
সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পাকিস্তানি শাসকদের সন্তুষ্ট করতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ইন্টার উইং ট্রান্সফারের পরামর্শে তৎকালীন সরকারকে উসকে দেয়া হয়েছিল। কারণ আর কিছু নয়, বলা হয়েছিল এই শিক্ষকরাই আন্দোলনের হোতা, ছাত্রদের প্রতিবাদী করে তোলার দায় তাঁদেরই। ইন্টার উইং ট্রান্সফার বিরোধী আন্দোলনেও সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সক্রিয় ছিলেন।
১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স নামে যে কালাকানুন করেছিল তারও বিরোধিতা করেছিলেন, প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে নতুন অর্ডার পাস হয়। সেখানেও সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের রীডার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসন ও পূর্ববঙ্গের মানুষের স্বাধিকারের প্রশ্নে অত্যন্ত সরব। ১৯৬৯-৭০- এ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রথমে সমিতির কার্যকর পরিষদের সদস্য হন এবং পরে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সমিতির আহ্বানে ঢাকায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের একটি সমাবেশ হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা নিহত হবার পর শিক্ষকদের আন্দোলন ও জনতার আন্দোলন একসাথে মিশে যায়। এ আন্দোলনে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সামনের সারিতে ছিলেন।
১৯৭০ সালে বাংলাদেশ লেখক সংগ্রাম শিবির গঠনের ব্যাপারে প্রধান উদ্যোগীদের তিনি ছিলেন একজন। লেখক সংগ্রাম শিবির বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সভা ও সমাবেশ করতো। ১৯৭১ সালে তিনি স্বাধীনতার পক্ষে দৈনিক পত্রিকায় লিখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে শিক্ষকদের মিছিলে যোগ দিয়েছেন। কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে মিলে বিদেশে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে বাংলাদেশের অবস্থা জানিয়ে টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলেন। তাঁরা নিজেরা দেশের বিভিন্ন পেশার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে একটি বিবৃতি ও প্রচার করেছিলেন।
২৩ মার্চ-এ লেখক সংগ্রাম শিবিরের উদ্যোগে বাংলা একাডেমীর মিলনায়তনে ‘ভবিষ্যতের বাংলা’ বিষয়ে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তাতে প্রবন্ধ পাঠ করেন; প্রবন্ধে তিনি ভবিষ্যতের বাংলা যে ধর্মনিরপেক্ষ হবে এই সম্ভাবনার ওপর বিশেষ জোর দেন।
২৫ মার্চ সন্ধ্যায় তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল ক্লাবে উপস্থিত ছিলেন। এখানে তাঁরা রোজই একত্রিত হতেন। মাঝে মাঝে সভা হতো। হানাদার পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর লোকেরা এই সভাগুলোর ওপর চোখ রাখতো। পঁচিশে মার্চের রাতে তারা ক্লাব ভবনে হানা দিয়েছিল। শিক্ষকদের পায়নি, চারজন বেয়ারা, যারা ওখানেই ঘুমাতো, তাদেরকে পেয়ে হত্যা করেছে। কিছুদিন পরে হানাদাররা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের যাঁরা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তাদেরকে আটক করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আহসানুল হক, তাঁকেও তারা গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় হানাদাররা তাঁদেরকে শিক্ষকদের বিভিন্ন সভার ছবি দেখিয়েছে; তাতে বোঝা যায় যে হানাদারদের গুপ্তচর সভায় উপস্থিত থাকতো। হানাদাররা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মনে করতো ছাত্রদের উস্কানিদাতা, সেজন্য তারা ওই শিক্ষকদের ওপর বিশেষ ভাবে ক্ষিপ্ত ছিল। এর প্রমাণ ব্যক্তিগত ভাবেও অনেকে পেয়েছেন। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীও বাদ যাননি।
শাস্তি দেবার জন্য হানাদাররা শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করেছিল। সেই তালিকায় তিনিও ছিলেন। প্রথম দিকে হানাদাররা স্থানীয় প্রশাসনের ওপরই নির্ভর করতো। শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর এসব কিছুটা পরে এসেছে। ‘অপরাধী’ শিক্ষকদের ঠিকানা সংগ্রহের দায়িত্ব দিয়েছিল পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে, সেখানে ড. চৌধুরীর একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কাজ করতেন; তাঁর মাধ্যমেই তিনি জানতে পারেন যে পাকিস্তান টিকে থাকলে তিনি নিরাপদে থাকবেন না। তাঁর সহকর্মীদের কয়েকজন সীমান্ত পার হয়ে চলে গিয়েছিলেন; তিনি যাবেন ভেবেছিলেন, কিন্তু সেখানে গিয়ে কতটা কী করতে পারবেন ঠিক জানতেন না। তাঁর পরিচয় ছিল বামপন্থী বলে। পরে দেশেই থাকবেন ঠিক করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসা ছেড়ে দিয়েছিলেন ২৭ মার্চ সকালেই। তারপর নিজের দেশে শরণার্থী হয়ে নানা জায়গায় থেকেছেন, যে জন্য আলবদর বাহিনীর লোকেরা তাঁকে খুঁজে পায়নি। টিক্কা খানের নিজের প্রস্তুত তালিকাতেও তাঁর নাম ছিল। ঢাকা ছেড়ে চলে যাবার আগে টিক্কা খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছয়জন শিক্ষককে বিশেষ বার্তা মারফত সতর্ক করে দিয়ে যান ড. চৌধুরী ছিলেন তাঁদের একজন।
ইংরেজী বিভাগে তাঁর সিনিয়র যাঁরা ছিলেন, একাত্তরে তাঁদের মধ্যে ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা শহীদ হন, ড. খান সারওয়ার মুর্শিদ সীমান্ত অতিক্রম করে কলকাতায় চলে যান, ফলে ড. চৌধুরীই হয়ে পড়েন সিনিয়র শিক্ষক। হানাদাররা চেষ্টা করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়কে চালু করতে; এই প্রক্রিয়ায় তাঁকে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে তিনি অতিরিক্ত ঝুঁকির মুখে পড়ে যান। ওই মুহূর্তে উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ট্রেজারার এ, এফ, এম আবদুল হক। তাঁর সাথে দেখা করে অব্যাহতি চাইলে তিনি বিকল্প খুঁজে করে করতে বলেন। বিভাগীয় শিক্ষক জনাব কে, এম, এ মুনিমকে তাঁর বিপদের কথা জানালে মুনিম সাহেব রাজি হন তাঁকে উদ্ধার করতে। একাত্তরে তাঁর শিক্ষক ড. সৈয়দ আলী আশরাফ ছিলেন করাচীতে, সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বিপদে আছেন বুঝে প্রফেসর আলী আশরাফ স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে কোয়েটাতে তাঁর জন্য চাকরির ব্যবস্থা করেন। কোয়েটাতে সে- বছর বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে; প্রফেসর আলী আশরাফের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পরিচয় ছিল, তাঁকে বলে স্নেহভাজন ছাত্রটির জন্য তিনি বিভাগীয় প্রধানের চাকরির ব্যবস্থা করে ফেলেন। নিয়োগপত্র চলে এসেছিল। ড. চৌধুরী টেলিগ্রাম করে কোয়েটা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে জানিয়েছিলেন যে মাতার অসুস্থতার কারণে তাঁর পক্ষে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ভদ্রলোক ছিলেন গুজরাটি, টেলিগ্রামের প্রত্যুত্তরে তিনি জানিয়েছিলেন না-যাবার কারণটা যৌক্তিক, তবে তিনি দুঃখিত যে ড. চৌধুরীকে তিনি সহকর্মী হিসাবে পেলেন না।
একাত্তরে ড. চৌধুরী আশা হারাননি। ঢাকাস্থ পোস্টবক্সের ঠিকানায় তিনি বিদেশী বেতারের জন্য খবর পাঠাতেন। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ ও বস্ত্র সংগ্রহে অংশ নিয়েছেন। আরো একটি কাজ করেছিলেন, সেটা হলো- সহকর্মী জয়নুল আবেদীনের উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পাকিস্তানপন্থী শিক্ষকদেরকে সতর্ক করে টাইপকরা চিঠি পাঠানো। সে চিঠি বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। সেগুলো হলো-একুশে পদক (১৯৯৬), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭৮), লেখক শিবির পদক (১৯৭৫), কাজী মাহবুবউল্লাহ পদক (১৯৮৩), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা স্বর্ণপদক (১৯৮৮), লেখিকা সংঘ পদক (২০০১), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি সম্মাননা (২০০৬), দৈনিক ডেস্টিনি গবেষণা পদক (২০১০), মার্কেন্টাইল ব্যাংক সাহিত্য পদক (২০১১), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সম্মাননা (২০১৩), মানবাধিকার নাট্য পরিষদ সম্মাননা (২০১৩), গীতাঞ্জলি সম্মাননা (২০১৩), নারায়ণগঞ্জ সুধীজন পাঠাগারের নূরুল হক সাহিত্য পুরস্কার (২০১৪), কেন্দ্রীয় খেলাঘর সম্মাননা (২০১৫)। কিশোরবেলা থেকেই তিনি রাজনীতিসচেতন ছিলেন। বড় বড় রাজনৈতিক ঘটনা তিনি দেখেছেন এবং প্রভাবিত, পীড়িত ও অনুপ্রাণিত হয়েছেন। রাজশাহীতে তিনি ক্যাপ্টেন রশীদ আলী দিবসের মিছিলে যোগ দিয়েছেন। ১৯৪৬ এর সাধারণ নির্বাচনের ব্যাপারে তাঁর কৌশরিক কৌতূহল ছিল। ১৯৪৬-৪৭-এ কলকাতায় থাকার সময় তাঁদের বাসায় দৈনিক আজাদ পত্রিকা আসতো, যেটা ছিল স্বাভাবিক। তবে তাঁর আগ্রহ ছিল কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা স্বাধীনতা-এর ব্যাপারে। বাবার মুখে শুনতেন যে প্রকৃত স্বাধীনতার কথা দৈনিক আজাদ-এ নয়, দৈনিক স্বাধীনতা-তেই থাকে। ১৯৪৮-এ ঢাকায় আসার পর মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাগুলোতে তিনি বক্তৃতা শুনেছেন, গোপন কমিউনিস্ট পার্টির প্রচারপত্র পেলে তা পড়েছেন। তারপর এসেছে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। এসব অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে তাঁর মোহ তাই পূর্ণাঙ্গ হবার আগেই ভেঙে যায়। ১৯৫৯ সালে তিনি ইংল্যান্ডে যান পড়াশোনার জন্য; তখন পাকিস্তানী রাষ্ট্রকে বাইরে থেকে দেখার ও তাকে ভালোভাবে বুঝবার সুযোগ আসে। রাজনৈতিক সাহিত্যের সঙ্গে তাঁর পরিচয়ও জোরদার হয় এবং তিনি জাতীয়তাবাদী সীমানার সমাজতান্ত্রিক চিন্তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। একাত্তরের যুদ্ধের ভেতরে মুক্তির চেতনাটা যে সমাজতান্ত্রিক ছিল সেটা তাঁর কাছে মোটেই অস্পষ্ট ছিল না। পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে যে মানুষের মুক্তি নেই এবং পুঁজিবাদের দৌরাত্ম্যে থেকে মুক্তির উপায় যে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা, এই ধারণা তাঁর ভেতর ক্রমাগত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তাই তাঁকে সমাজতন্ত্রী বলতে হবে।
১৯৬২ সালে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নাজমা জেসমিনের সাথে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন। তাঁর প্রভাব সিরাজুল ইসলামের উপর গভীরভাবে পড়েছে। ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে ছিলেন। এসময় তাঁর স্ত্রী তাঁর সাথে ছিলেন। তাঁদের প্রথম সন্তানের জন্ম ইংল্যান্ডেই হয়েছিল। দ্বিতীয় মেয়ে ঢাকায়। নাজমা জেসমিনও একজন লেখক ছিলেন। তিনি লিখতেন এবং পড়াতেন। ‘বাংলা উপন্যাস ও রাজনীতি’ নামে তিনি একটি গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেন। এছাড়াও তিনি অসংখ্য উপন্যাস, ছোটগল্প এবং কবিতা লিখেছেন। তিনি কিশোরদের জন্য ‘ঢাকা লিটল থিয়েটার’ নামে একটি সংগঠন করেছিলেন। ১৯৮৯ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তাঁর জীবনাবসান ঘটে। সে শূণ্যতা ঘুচবার নয় এবং সিরাজুল ইসলামের জীবনে সে শূণ্যতা ঘুচেওনি।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর শক্তির জায়গাটি হলো পুঁজির বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান। পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। সমাজ ও রাজনীতির বিশ্লেষণে তিনি দেখেছেন, দেখিয়েছেন কিভাবে পুঁজি সমাজে বৈষম্য তৈরি করে, বৈষম্য টিকিয়ে রাখার জন্য শোষণ করে। আমলাতন্ত্র, সামরিকতন্ত্র এবং ব্যবসায়ী শ্রেণী গোষ্ঠী কিভাবে দুর্নীতি ও বাণিজ্যিক লাভালাভের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে। পুঁজির কুৎসিত রাজনীতিটি তাঁর লেখায় বরাবরই প্রকট ও প্রকাশ্য।
জীবনে অনেক দুর্যোগ তিনি পার করেছেন। ভেঙে পড়েননি, দাঁড়িয়েছেন। প্রতিবাদ করেছেন, প্রত্যাখ্যান করেছেন। সিনেট কর্তৃক দুবার উপাচার্য হওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। হননি, প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেছেন, দেখিয়েছেন। তবে সেই স্বপ্ন ব্যক্তিগত নয়, সমষ্টির স্বপ্ন। এখানেই একজন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী অন্য অনেকের চেয়ে আলাদা।
তাাঁর উল্লেখযোগ্য প্রকাশনাগুলো হলো- ছোটদের শেক্সপীয়র (১৯৬২) [আহমদ পাবলিশিং], অন্বেষণ (১৯৬৪) [রোদেলা], ইবসেনের ‘বুনো হাঁস’ (১৯৬৫) [জাগৃতি প্রকাশনী], হাউসম্যানের ‘কাব্যের স্বভাব’ (১৯৬৫) [মুক্তধারা], Introducing Nazrul Islam (১৯৬৫), NazrulIslam : Poet and More (১৯৯৪) [Nazrul Institute], দ্বিতীয় ভুবন (১৯৭৩) [বর্ষাদুপুর], নিরাশ্রয় গৃহী (১৯৭৩) [রাত্রি], আরণ্যক দৃশ্যাবলী (১৯৭৪) [বাংলা একাডেমী], অনতিক্রান্ত বৃত্ত (১৯৯৪) [সূচীপত্র], The moral Imagination of Joeph Conrad(১৯৭৪), [ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা], এ্যারিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব (১৯৭৫) [গ্লোব লাইব্রেরী], প্রতিক্রিয়াশীলতা, আধুনিক ইংরেজী সাহিত্যে (১৯৭৫) [মুক্তধারা], শরৎচন্দ্র ও সামন্তবাদ (১৯৭৫, ২০০৬) [সাহিত্য বিলাস], The Enemy Territory, Evil in D.H. Lawrence (১৯৭৬), [ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা], আমার পিতা মুখ (১৯৭৬, ১৯৯১) [অন্যপ্রকাশ], বঙ্কিমচন্দ্রের জমিদার ও কৃষক (১৯৭৬, ২০০৬) [সাহিত্য বিলাস], কুমুর বন্ধন (১৯৭৭, ২০০০) [মুক্তধারা], উপরকাঠামোর ভেতরেই (১৯৭) [মুক্তধারা], তাকিয়ে দেখি (১৯৭৮) [মুক্তধারা], বেকনের মৌমাছিরা (১৯৭৮) [ইউপিএল] প্রভৃতি।
তাঁর সংকলিত গ্রন্থগুলি হলো-নির্বাচিত প্রবন্ধ (১৯৯৯) [আগামী], নির্বাচিত রাজনৈতিক প্রবন্ধ (২০০০) [অন্যপ্রকাশ], প্রবন্ধ সমগ্র প্রথম খণ্ড (২০০৩), দ্বিতীয় খণ্ড (২০০৪), তৃতীয় খণ্ড (২০০৫), চতুর্থ খণ্ড (২০০৬), পঞ্চম খণ্ড (২০১০), ষষ্ঠ খণ্ড (২০১১) [বিদ্যাপ্রকাশ], কিশোর সমগ্র (২০০৪) [জোনাকি]।
তিনি সম্পাদনা করেছেন-আনোয়ার পাশা রচনাবলী (তিন খণ্ড) [বাংলা একাডেমী], ১৯৭৪, যৌথ সম্পাদনা, পরিক্রম (মাসিক) (১৯৬০-৬৫), সাহিত্যপত্র (ত্রৈমাসিক) (১৯৯৪-৯৮), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা (১৯৭৩-৮৭), সচিত্র সময় (সাপ্তাহিক) (১৯৯১-৯২), সাপ্তাহিক সময় (১৯৯৩-৯৪), The Dhaka University Studies, Part A (১৯৭২-৭৬) প্রভৃতি।
তথ্যসূত্র: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী পর্যালোচনা করার পর জীবনীটি ওয়েবসাইটে আপ করা হয়েছে।