অষ্টম শ্রেণীর ক্লাস চলছে। মাষ্টার মশাই অংক করাচ্ছেন। ইন্সপেক্টর এসেছেন স্কুল পরিদর্শনে, ইন্সপেক্টর প্রশ্ন করলেন ‘ Bisect a straight line into five equal Parts, শিক্ষার্থীরা হতভম্ভ। কেউ দাঁড়ানোর সাহস পাচ্ছে না। অংকের শিক্ষক মাথা নিচু করে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে একজন উঠে দাঁড়ালো। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সে উত্তর দিল, ম্যাডাম Bisect অর্থ তো সমান দুভাগ করা। একটা সরল রেখাকে Bisect করে কিভাবে সমান পাঁচ ভাগে ভাগ করা সম্ভব? রাগে গরগর করতে করতে বেরিয়ে গেলেন ইন্সপেক্টর। শিক্ষকের মুখে গর্ব মিশ্রিত হাসি দেখা দিল।
সেদিনের সেই শিক্ষার্থীর নাম নীলিমা রায় চৌধুরী, আমরা যাঁকে চিনি নীলিমা ইব্রাহিম নামে। সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলার সত্সাহস যিনি রাখতেন। কখনোই আপস করেননি অন্যায় কাজের সাথে। আর তাই অবলীলায় ফিরিয়ে দিতে পেরেছেন মন্ত্রীত্বের প্রস্তাব। তিনি জানতেন তিনি একজন শিক্ষক। সেটাই ছিল তাঁর অহংকার। তাই স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষা অধিদপ্তরের জন্য অনেক টাকা বরাদ্দ করার পর যখন কারও উপর নির্ভর করতে পারছিলেন না তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন নীলিমা ইব্রাহিমের হাতে। সেদিন তিনি উত্তর করেছিলেন। ‘আমি শিক্ষক হিসেবে মরতে চাই।’
অথচ শিক্ষক হওয়ারই কথা ছিল না তাঁর। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন পিএইচডি করতে। ভেবেছিলেন বছর খানেক বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করে থিসিস জমা দিয়ে ফিরে যাবেন ঘর গেরস্থালীতে, খুলনায় যেখানে রয়েছে তাঁর স্বামী ডা: মুহম্মদ ইব্রাহিম ও পাঁচ কন্যা। কিন্তু সব সময় মানুষের ভাবনার সাথে বিধাতার ভাবনা মেলেনা। তাই পিএইচডি করতে আসার দুসপ্তাহের মধ্যে বাংলা বিভাগের প্রফেসর আব্দুল হাইয়ের কথায় একরকম বাধ্য হয়েই যোগ দিলেন বাংলা বিভাগে। ১৯৫৬ সালে শুরু হওয়া সেই দায়িত্ব তিন দশককাল পরম নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন নীলিমা ইব্রাহিম। দায়িত্ব পালনের পথে ফুল বিছানো ছিল না, ছিল কন্টকপূর্ণ। কাঁটাগুলো সরাতে গিয়ে ক্ষত বিক্ষত হয়েছেন। তারপরও কাজ করে গেছেন অবিচলতার সাথে। বাংলাদেশের মুষ্টিমেয় যে কজন ব্যক্তি নিজ কর্মগুণে জগতবিখ্যাত হয়েছেন নীলিমা ইব্রাহিম ছিলেন তাঁদের অন্যতম।
নীলিমা ইব্রাহিম জন্মেছিলেন ১৯২১ সালের ১১ জানুয়ারী খুলনা জেলার বাগেরহাট মহকুমার মূলঘর গ্রামে। জন্ম হয়েছিলো জমিদার পরিবারে। পিতা প্রফুল্ল রায়চৌধুরী, মাতা- কুসুমকুমারী দেবী। শৈশব কাটিয়েছেন খুলনায়। শৈশবে তিনি খুব দুরন্ত প্রকৃতির ছিলেন। তাঁর নিজের ভাষায় ‘গেছো’ প্রকৃতির। বাড়ীর আশে পাশে পুকুরে ঝাপাঝাপি, কুল, জামরুল আর কাঁচা আমের বংশ লোপ ইত্যাদিতে ছিল তাঁর জন্মগত অধিকার। রীতিমতো ফুটবল খেলতেন ভাইদের সাথে। মেয়ের প্রকৃতির সাথে সাথে গায়ের রং নিয়েও চিন্তিত ছিলেন মা কুসুমকুমারী। সকল ভাইবোনের মধ্যে একমাত্র নীলিমাই ছিলেন কৃষ্ণবর্ণা। সম্ভবত এজন্যই মার কাছ থেকে কিছুটা অবহেলা তিনি পেয়েছিলেন। আর সেটা পুষিয়ে দিতেন তাঁর বাবা। বলতেন, “আমার এই মেয়ের আমি বিয়ে দিব না। শ্বশুরবাড়ীতে লোকেরা মুখের কাপড় তুলে বলবে ‘এমা এ বউ কালো’ সে আমি সইতে পারব না।” তাঁর জীবনে তাঁর বাবার প্রভাব ছিল খুব বেশি। বাবা প্রফুল্ল কুমার বিদ্বান, সাহিত্য রসিক ও সঙ্গীত প্রিয় ছিলেন। আর বাবার এই গুণগুলিই দেখা যায় মেয়ে নীলিমার মাঝে।
নীলিমা মেধাবী ছিলেন ছোট বেলা থেকেই। ভর্তি হয়েছিলেন খুলনা করনেশন গার্লস স্কুলে। এই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশের পর বাবা তাঁকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন কলকাতার বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনে। সেখান থেকেই উচ্চমাধ্যমিক ও অনার্স (অর্থনীতি) সম্পন্ন পাশ করেন। তারপর এম.এ. পড়া শুরু করলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে। তবে অর্থনীতিতে এম.এ.-টা আর করা হয়ে উঠেনি। শেষ পর্যন্ত স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বি.টি. সম্পন্ন করেন। কিন্তু এম.এ. পাশের অদম্য ইচ্ছা থেকেই গিয়েছিল তাঁর। এরপর ভর্তি হলেন বাংলায়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, এবার অবশ্য এম.এ.-টা সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন তিনি।
মাধ্যমিক পরীক্ষার পর বসে থেকে তাঁর কোনো পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। কারণ গুরুতর অসুখ নিয়ে বার্লি খেয়ে, আক্কেল দাঁতের অপারেশন নিয়ে দিয়েছেন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। কোরামিন ইনজেকশন নিয়ে বি.এ. পরীক্ষা, আর মুখে একটা গোটা ইরিসিপ্লাস নিয়ে দিয়েছেন বি.টি. পরীক্ষা। এম.এ. তেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সে সময় হয় ডেঙ্গুজ্বর। প্রতিবারই অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে কাটিয়ে উঠেছেন সব প্রতিকূলতা। পরীক্ষার আট মাস আগে স্ট্রোক হওয়াতে অর্থনীতিতে অনার্স পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণী লাভ করেন। এছাড়া সব গুলোতেই ছিল প্রথম বিভাগ। অসুস্থার কারণে সব পরীক্ষা তাঁকে ‘সিক বেড’-এ শুয়ে দিতে হয়েছে। নানা রকম বিপদ আর ঝড়-ঝঞ্ঝা এসেছে তাঁর সমগ্র পাঠ্য জীবনে।
শিক্ষা জীবনে নীলিমা যে সকল শিক্ষকের সান্নিধ্যে এসেছেন তাঁদের কাছ থেকে সব সময় শেখার চেষ্টা করেছেন। এম.এ. পাশের পর তিনি শিক্ষকতায় পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন। যদিও অর্নাস পাশের পর চাকুরী নিয়েছিলেন তাঁর নিজেরই শৈশবের স্কুলে, তবে তা করেছেন অল্প কিছুদিন। এম.এ. পাশ করার পর ঢুকলেন নিজের কলেজ ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনে। নিজ কলেজে যোগ দেওয়া নিয়ে তিনি নিজে কিছুটা বিব্রত ছিলেন। শিক্ষকদের কমনরুমে বসতে পারতেন না। কারণ সবাই ছিলেন তাঁর শিক্ষক। চেয়ারে বসে ক্লাস নিতে পারতেন না, কারণ সে সময় শ্রদ্ধা ও ভক্তির কারণে শিক্ষকের চেয়ারে ছাত্রছাত্রীরা বসতো না। এ সময় মেয়েদের মধ্যে প্রথম ‘বিহারীলাল মিত্র গবেষণা বৃত্তি’ লাভ করে রবীন্দ্র-নাটকের উপর গবেষণা শুরু করেন নীলিমা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
নিজ কলেজের সবাইকে শ্রদ্ধা করলেও কখনোই মুখ বুজে অন্যায়কে সহ্য করেননি। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার স্বভাব তাঁর রক্তে মিশে ছিল। তাই ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনের প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার কথা পত্রিকায় লেখার কারণে কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়েছিলেন তিনি।
১৯৪৫ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁর বিয়ে হয়। স্বামী ইন্ডিয়ান আর্মি মেডিকেল কোরের ক্যাপ্টেন ডাঃ মোহাম্মদ ইব্রাহিম। বিয়ের পর নীলিমা রায় চৌধুরী হয়ে যান নীলিমা ইব্রাহিম। ১৯৪৬-১৯৫৪ সাল পর্যন্ত নয়টি বছর তিনি পুরোপুরি সংসারী হয়ে পড়েন। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ী গেন্ডারিয়ায় থাকতে শুরু করেন। তাঁর প্রথম সন্তান খুকুর জন্ম হয়েছে এখানেই। স্বামীর বদলির চাকরির কারণে এরপর স্বামীর সাথে গিয়েছেন পিরোজপুর, যশোর, বরিশাল, খুলনায়। পরে তাঁর আরও চার মেয়ে ডলি, পলি, বাবলি ও ইতির জন্ম হয়।
আবারও নীলিমা পড়াশোনা শুরু করেন ১৯৫৬ সালে। এ সময় তিনি ঢাকায় আসেন পিএইচডি করতে। জুন মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এ সময়ে তাঁর টিনের অফিস ঘর আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তিনি সারাজীবন ভুলতে পারেননি। পরবর্তীতে অট্টালিকায় এসেও সে সময়কার ছাত্র শিক্ষকের সহজ সম্পর্ক তিনি খুঁজে ফিরেছেন। এমনকি স্বাধীনতা পরবর্তীকালেও সে সময়কার ছাত্র-শিক্ষকের স্নেহ, প্রেম, প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বন্ধন মনে করে আফসোস করে গেছেন। আর শুধু ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক নয়, তখনকার শিক্ষকদের নিজেদের মধ্যকার সম্পর্কও ছিল সহজ ও স্বাভাবিক। আজকের বিশালকার যে কলাভবন তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হওয়ার সময় উপাচার্য ছিলেন ড. ওসমান গণি। এ সময় রোকেয়া হলের প্রভোস্ট আখতার ইমাম অনুপস্থিত থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্টের দায়িত্ব পালন করছিলেন নীলিমা ইব্রাহিম। ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের সময় ড. গনি সিমেন্ট নিয়ে নীলিমা ইব্রাহিমের হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলেন, ‘ছেলেদের গৃহের ভিত্তি মায়েদের হাতে হলেই ভীত শক্ত হবে।’ সেদিন ড. ওসমানের প্রতি কৃতজ্ঞতায় ও সম্মানের গৌরবে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন নীলিমা ইব্রাহিম। আর এটাই ছিল সে সময়কার শিক্ষকদের মধ্যকার সহজ সম্পর্কের একটি চিত্র রূপ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি অধ্যাপক নুরুল মোমেন, আসকার ইবনে শাইখ, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার সঙ্গে নীলিমা ইব্রাহিম জড়িয়ে পড়েন নাট্যচর্চায়। শুরু হয়েছিল ছাত্রী হলের বাত্সরিক নাট্যোত্সব দিয়ে। পরবর্তীতে নবগঠিত বুলবুল একাডেমীতে ক্লাস নিয়েছেন নাটকের উপর, নাটক লিখেছেন। তাঁর লেখা প্রথম নাটক মঞ্চস্থ হয় বুলবুল একাডেমীর ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে। নাটকের নাম ‘মনোনীতা’। এই নাটক করার সময় একটি মজার ঘটনা ঘটে- নাটক মঞ্চায়িত হবে। নাটকের নায়ক রামেন্দু মজুমদার। কিন্তু নায়িকা পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক বলে কয়ে একজনকে রাজি করানো গেল, তিনি বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সদস্য মতিয়া চৌধুরী। কিন্তু তারপর থেকে নায়ক পলাতক। কী ব্যাপার? পরে নায়ককে পাকড়াও করা হলে রামেন্দু মজুমদার তাঁর স্বভাবজাত বিনয়ে বললেন, ‘ওকে দেখলে আমার ভয় করে, মনে হয় স্লোগান দিয়ে উঠবে।’ পরে অবশ্য রোজী মজিদ নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন।
১৯৬২-৬৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘রঙ্গম’ নামের একটি নাট্য সংস্থা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মুনীর চৌধুরী, রণেন কুশারী, কবি হাবিবুর রহমান প্রমুখ। তাঁর নিজের দলের জন্য তিনি শরত্চন্দ্রের ‘চরিত্রহীন’ নাটকের নাট্যরূপ দেন। এ দলটি অবশ্য পরে ভেঙ্গে যায়। এ সময় রেডিও টেলিভিশনের জন্য প্রচুর নাটক লিখেছেন তিনি। টি. এস. সি.-তে তাঁর পরিচালনায় মুনীর চৌধুরী রচিত ‘চিঠি’ নাটকটির মাধ্যমে নীলিমা ইব্রাহিম নাট্যমঞ্চ থেকে বিদায় নেন।
নীলমা ইব্রাহিম ছিলেন ফুটবল খেলার একনিষ্ঠ ভক্ত। ছোটবেলায় তিনি নিজেই খেলেছেন। একটু বড় হয়ে কলকাতায় খেলা দেখা শুরু করেন। ঢাকায় এসেও তিনি সেটা ধরে রেখেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে তিনি প্রায় নিয়মিতই টিকিট কেটে ফুটবল খেলা উপভোগ করতেন। তিনি সবসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে সমাজের প্রতি তাঁর অতিরিক্ত দায়িত্বকে স্বীকার করেছেন। তিনি রাজনীতি করতেন না। কিন্তু ষাটের দশকের ঢাকার রাজনীতির উত্তপ্ততা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেননি কখনো। তত্কালীন ছাত্র নেতা শেখ ফজলুল হক মনি, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, কাজী ফিরোজ রশিদ, পঙ্কজ ভট্টাচার্য, আমিনুল হক বাদশা, এরা সবাই তাঁর জীবনের সাথে জড়িয়ে ছিলেন।
‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় তাঁর ১৮-ডি ফুলার রোডের বাসা ছিল ছোট খাট একটি লঙ্গরখানা। আকস্মিক কার্ফ্যু জারি হলে তাঁর বাড়ির বাইরের ঘরের মেঝের কার্পেটে ৮-১০ জন এক সাথে শুয়ে থাকতো। একদিনের ঘটনা। কঠিন কার্ফ্যু চলছে। সংবাদপত্রের লোক কিংবা গাড়ি পর্যন্ত বেরোতে পারবে না। জনা দশেক ছেলে আশ্রয় নিয়েছে তাঁর বাসায়। হঠাত্ একজন বললো, ‘আমাদের এখানে এভাবে পেলে খালাম্মাকে লিঞ্চ করে পোড়াবে। আমরা ভাগাভাগি হয়ে যাই।’ এর উত্তরে তিনি বলেছিলেন ‘তোমাদের একজনের জন্য আমার যে শাস্তি হবে, দশজনের জন্যও তাই। তাছাড়া এ রাতে তোমাদের জায়গা দেবে কে?’
এমনই মমতাময়ী ছিলেন নীলিমা ইব্রাহিম। অন্য বিভাগের মহিলা শিক্ষকের মতো তিনি ম্যাডাম ছিলেন না। ক্লাসে ছাত্র -ছাত্রীরা আপা আর বাইরে খালাম্মা নামেই সবাই তাঁকে ডাকতো।
শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি চালিয়ে গেছেন তাঁর লেখালেখি। তাঁর উপন্যাসগুলি হলো- ‘বিশ শতকের মেয়ে’ (১৯৫৮), ‘এক পথ দুই বাঁক’ (১৯৫৮), ‘কেয়াবন সঞ্চারিনী’ (১৯৬২), বহ্নিবলয় (১৯৮৫)। তিনি অনেক গবেষণা গ্রন্থ লিখেছেন। তাঁর গবেষণাগ্রন্থগুলি হলো- শরত্ প্রতিভা (১৯৬০), বাংলার কবি মধুসূদন (১৯৬১), উনবিংশ শতাব্দীর বাঙ্গালী সমাজ ও বাংলা নাটক (১৯৬৪), নাটক: উত্স ও ধারা (১৯৭২), বেগম রোকেয়া (১৯৭৪), বাঙ্গালী মানস ও বাংলা সাহিত্য (১৯৮৭), সাহিত্য সংস্কৃতির নানা প্রসঙ্গ (১৯৯১)। এছাড়াও তিনি লিখেছেন ছোটগল্প ও ভ্রমণ কাহিনী। তিনি অনেক বিদেশী গ্রন্থও অনুবাদ করেছেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ক্যাম্পাসেই ছিলেন তিনি। তাই প্রত্যক্ষ করলেন নরঘাতক পাকিস্তানি সেনাদের তান্ডব। প্রথমে কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি। ২৭ তারিখ ক্যাম্পাস ছেড়ে নারিন্দায় গেলেন, ৩০ মার্চ ঢাকা ছাড়লেন। গ্রামে একেক দিন একেক বাড়িতে থেকেছেন। অনেক সময় খাবার, পানি কিছুই পাওয়া যায়নি। তাঁর বড় নাতনী ইলোরা তখন ছোট। তাকে নিয়ে চরম দুর্দশায় কেটেছে সেই দূর্বিষহ দিনগুলো। আবার আগস্টে ফিরেছেন ক্যাম্পাসে। নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছেন। এসময় টিক্কা খান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাঁকে তাঁর অন্তর্ঘাতী কর্মকান্ডের জন্য কঠোর ভাবে হুশিয়ার করে দেওয়া হয়। বিজয়ের দু’দিন পর ১৮ ডিসেম্বর সকালে মুনীর চৌধুরী, আনোয়ার পাশাদের উদ্ধারের কথা বলে মীরপুর বদ্ধভূমিতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো পাকিস্তানিদের দোসররা। শুধু বেঁচে যান আত্মীয় ড. মুজিবুল হকের কারণে।
১৮ই ডিসেম্বর সকালে তাঁর তিন সহকর্মী বিমর্ষ মুখে এসে তাঁকে বললেন ‘আপা, আপনি বোধহয় জানেন না, অনেক শিক্ষককে রাজাকাররা ধরে নিয়ে গেছে। তাঁদের মধ্যে মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, মুনীর চৌধুরীও আছেন। আপনি গিয়ে চেষ্টা করলে তাঁদেরকে ছেড়ে দিতে পারে।’ ওই তিন জনকে গাড়ির পেছনের সিটে বসিয়ে কন্যা বাবলিকে নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন মীরপুরের উদ্দেশ্যে। এমন সময় দেখা হয়েছিল আত্মীয় ড. মুজিবুল হকের সাথে। তিনি সব শুনে বাবলিকে গাড়ি গ্যারেজে তোলার নির্দেশ দিয়ে ওনার তিন সহকর্মীকে জানান, ‘আমি খালাম্মাকে নিয়ে যাচ্ছি।’ সেদিন গম্ভীর মুখে ওই তিনজন বিদায় নিয়েছিল। পরে জানা গিয়েছিল, এরাই ড. মুর্তজাকে শেষ বিদায় দিয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্য এবং তাদের দোসরদের দ্বারা অপহৃত ও নির্যাতিত অসংখ্য নারী এবং যুদ্ধশিশুদের পুনর্বাসনের জটিল বিষয়টি নিয়ে কাজ করার দায়িত্ব দেন নীলিমা ইব্রাহিমের উপর। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকারের জন্যে এটা ছিলো একটা জটিল সমস্যা। অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিম একাত্তরের হতভাগ্য নারীদের পুনর্বাসন এবং যুদ্ধশিশুদের বিদেশীগণ কর্তৃক দত্তক নেওয়ার সমস্যা নিয়ে দিনের পর দিন নীরবে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। এই সমস্যা মোকাবেলায় অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিম যাঁর সঙ্গে কাজ করেন তিনি হলেন বিচারপতি কে এম সোবহান। একাত্তরে নির্যাতিত নারীদের অবমাননার কিছু কিছু কাহিনী তিনি লিখে গেছেন, যার কয়েকটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে প্রচারিত হয়েছে। একটি রক্ষণশীল সমাজে চরম দুর্ভাগ্যের শিকার অগণিত এইসব নারীদের জীবনে একটু শান্তি ও স্বস্তি আনার জন্য নীলিমা ইব্রাহিম অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।
১৯৭২ সালে বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যানের আসনে বসলেন নীলিমা ইব্রাহিম। বিভাগের তিনজন শিক্ষক মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আনোয়ার পাশা মুক্তিযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। শুরু করলেন নতুন করে বিভাগ গড়ার কাজ। এ সময় উপাচার্য তাঁকে ডেকে অনুরোধ করলেন রোকেয়া হলের প্রভোস্টের দায়িত্ব নিতে হবে। রাজি হলেন না তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উপাচার্যের চাপাচাপিতে তিন মাসের জন্য রফা হলো। নিয়োগপত্রে লেখা ছিল- Untill Further Order , যেখানে প্রভোস্টদের নিয়োগপত্রে তিন বছরের উল্লেখ থাকতো। কিন্তু তিনি এই দায়িত্ব পাল করেছেন সাত বছর।
১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু একদিন ডেকে পাঠালেন তাঁকে। সরাসরি প্রস্তাব দিলেন বাংলা একাডেমীর দায়িত্ব নেওয়ার। টাকা পয়সার গন্ডগোলের কথা বলে তিনি যখন দয়িত্ব নিতে বলেন তখন নীলিমা হেসে বলেছিলেন, ‘অবশেষে জমাদারনীর চাকুরী।’ বঙ্গবন্ধু উত্তর দিয়েছিলেন, ‘ব্লিচিং পাউডার হাতে আমি সঙ্গে থাকবো।’ এর আগে একবার বঙ্গবন্ধুর দেওয়া মন্ত্রীত্বের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এবার আর পারলেন না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী ছাড়তেও রাজি হলেন না। তাঁর কাজের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। এ কাজের জন্য তিনি বেতন কিংবা সম্মানী হিসেবে একটি পয়সাও নেননি। তাঁর কাজে বঙ্গবন্ধু সব রকম সহায়তার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কাজ করতে গিয়ে বুঝলেন মগের মুল্লুক কাকে বলে। কেউ বাংলা একাডেমীতে পাণ্ডুলিপি জমা না দিয়ে টাকা নিয়ে গেছে। আর কারো পাণ্ডুলিপি পড়ে আছে। যে বাড়ির অস্তিত্ব নেই, সেই বাড়ি কিনবার জন্য দলিল ও আগাম বায়নার টাকা নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে সব জানালেন নীলিমা কিন্তু লাভ হলো না। উপরন্তু স্বাধীন দেশের নাগরিক বাংলা একাডেমীর কর্মীগণ কোনো নিয়মের অধীনে যেতে অনিচ্ছুক ছিলেন। আন্দোলন শুরু হল নীলিমার বিরুদ্ধে। ব্যক্তিগত কারণে রুষ্ট হয়ে আবুল ফজল ‘বিচিত্রা’য় নিবন্ধ লিখলেন কেন একজন মেয়েমানুষকে বাংলা একাডেমীর ডি.জি., বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান, রোকেয়া হলের প্রভেষ্ট ও মহিলা সমিতির সভানেত্রী করা হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত তিনি চাকরি ছেড়ে দেন ১৯৭৫ সালে। সে সময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, ‘আপনি আপনার কথার খেলাপ করেছেন। এই নিন আমার পদত্যাগপত্র।’
নীলিমা ইব্রাহিম বিভিন্ন শুভেচ্ছা সফরে দেশের বাইরে গেছেন অসংখ্যবার, প্রতিনিধিত্ব করেছেন দেশের। কখনো দলনেত্রী হিসেবে, কখনোবা সাধারণ সদস্য হিসেবে। গিয়েছেন জাপান, হাঙ্গেরী মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মরিশাস, ডেনমার্ক, কেনিয়া, লাইবেরিয়া মিশরে। প্রতিটি সফরেই প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন দেশকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরার।
অথচ এই মহীয়সীকে বারবার মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে যাবার পর তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। তদন্তে যদিও তার সত্যতা মেলেনি। পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে। তাও প্রমাণ করা যায়নি। এমনকি ক্যুর অভিযোগও আনা হয়েছে। এজন্য কখনোই বিন্দুমাত্র দুঃখ বা আফসোস করেননি তিনি। তাঁর গর্ব, তাঁর অহংকার ছিল তাঁর অগণিত ছাত্র ছাত্রী।
জীবনের শুরুতে তাঁর বাবা তাঁকে বলেছিলেন, ‘মানুষকে বিশ্বাস করো, বিশ্বাস করে ঠকাও ভালো কিন্তু অবিশ্বাসীর জ্বালার শেষ নেই।’ সারাজীবন নীলিমা ইব্রাহিম সেটিই বিশ্বাস করে গেছেন। অনেক ভালবাসা, ভক্তি, শ্রদ্ধা পেয়েছেন। আর ঠকেছেন যেখানে তা ভুলে গেছেন। সেজন্যই বোধহয় মানুষকে মানুষ হিসেবে ভালোবাসতে পেরেছেন। সমাজে নারী হিসেবে মেয়েদের অবহেলার দৃষ্টিতে দেখা হয়। কিন্তু তিনি তাদেরকে ভিন্নভাবে দেখেছেন। একাত্তরের নির্যাতিতা নারীদের নিয়ে লিখেছেন তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা সৃষ্টি ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’।
সমাজিক কাজ ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন বহু পদক, পুরস্কার। বাংলা একাডেমী পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার, লেখিকা সংঘ পুরস্কার। অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার, বেগম রোকেয়া পদক, একুশে পদকসহ আরও বহু স্বীকৃতিই পেয়েছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেওয়ার পরও তাঁর কাজ থেমে থাকেনি। তাঁর নিজের গড়া প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভাপতি ছিলেন জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত। অংশ নিয়েছেন তাদের বিভিন্ন কর্মকান্ডে। World Womens Federation এর South Asian Zone এর Vice President ছিলেন আমৃত্যু। এছাড়াও চালিয়ে গেছেন লেখালেখি। জীবনের একবারে শেষ প্রান্তে এসে জাতীয় দৈনিকে কলাম/উপসম্পাদকীয় লিখে অসামান্য খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৯৬ সালে আজকের কাগজে ‘মাগো আমি কোথা যাবো’ শীর্ষক উপসম্পাদকীয় লিখে তত্কালীন সরকারের মসনদ কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা হয়। অসুস্থ শরীরে কন্যার বাড়ীতে আশ্রয় নিয়ে পুলিশের গ্রেপ্তারের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। হাইকোর্টে সশরীরে উপস্থিত হয়ে তিনি জামিনের আবেদন করেন। মামলাটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ভাষা সৈনিক এডভোকেট গাজিউল হক। কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হন। তাত্ক্ষণিকভাবে তিনি নিম্ন আদালতে হাজির হলে নিম্ন আদালতের হাজার হাজার আইনজীবী আদালত কক্ষে জমায়েত হন এবং তাঁকে জামিন দেওয়া না হলে তাঁরা আদালত কক্ষ ত্যাগ করবেন না বলে জানান। শেষ পর্যন্ত নিম্ন আদালত তাঁকে জামিন দিতে বাধ্য হয়।
নীলিমা ইব্রাহিম আজীবন মানুষের শুভ ও কল্যাণ চেতনায় আস্থাশীল ছিলেন। মুক্তবুদ্ধি, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও উদার মানবিকতা ছিল তাঁর জীবনদর্শন। মহীয়সী এই ব্যক্তিত্ব আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছেন ২০০২ সালের ১৮ জুন। কিন্তু দিয়ে গেছেন জ্ঞানের এক অফুরন্ত ভান্ডার, যে জ্ঞান ভান্ডারে প্রবেশ করলে আমরা দেখতে পাই তিনি আমাদের মাঝে থেকে সাহস দিয়ে যাচ্ছেন অবিরত।
সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি
জন্ম ও শৈশব
নীলিমা ইব্রাহিম জন্মেছিলেন ১৯২১ সালের ১১ জানুয়ারী খুলনা জেলার বাগেরহাট মহকুমার মূলঘর গ্রামে। জন্ম হয়েছিলো জমিদার পরিবারে। পিতা প্রফুল্ল রায়চৌধুরী, মাতা- কুসুমকুমারী দেবী। শৈশব কাটিয়েছেন খুলনায়।
শিক্ষাজীবন
নীলিমা ইব্রাহিম ১৯৩৫ সালে খুলনা করনেশন বালিকা বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পাস করেন। ১৯৩৭ সালে কলকাতার ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশন থেকে আই.এ., অর্থনীতি সম্মান সহ পাশ করে এর পর বি.এ.বি.টি. করেন স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে এম.এ. করেন ১৯৪৩ সালে। ১৯৪৫ সালে মেয়েদের মধ্যে প্রথম ‘বিহারীলাল মিত্র গবেষণা বৃত্তি’ লাভ করেন। ১৯৫৯ সালে তিনি ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।
পেশাজীবন
কর্মজীবনে তিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেছেন। অর্থনীতিতে অনার্স সম্পন্ন করার পর তিনি খুলনা করনেশন বালিকা বিদ্যালয়ে চাকুরী নেন। এরপর লরেটো হাউজে দু’বছর আর ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনে দু’বছর চাকুরী করেন। ১৯৫৬ সালে নীলিমা ইব্রাহিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭২ সালে তিনি অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি হয়। এছাড়া বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক ও রোকেয়া হলের প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি World Womens Federation এর South Asian Zone এর Vice President এবং বাংলাদেশ মহিলা সামিতির আজীবন সভাপতি ছিলেন।
সাহিত্যকর্ম:
গবেষণা- শরত্ প্রতিভা (১৯৬০), বাংলার কবি মধুসূদন (১৯৬১), উনবিংশ শতাব্দীর বাঙ্গালী সমাজ ও বাংলা নাটক (১৯৬৪)
নাটক: উত্স ও ধারা (১৯৭২), বেগম রোকেয়া (১৯৭৪) বাঙ্গালী মানস ও বাংলা সাহিত্য (১৯৮৭), সাহিত্য সংস্কৃতির নানা প্রসঙ্গ (১৯৯১)
ছোটগল্প- রমনা পার্কে (১৯৬৪)
উপন্যাস- বিশ শতকের মেয়ে (১৯৫৮), এক পথ দুই বাঁক (১৯৫৮),কেয়াবন সঞ্চারিনী (১৯৬২), বহ্নিবলয় (১৯৮৫)
নাটক- দুয়ে দুয়ে চার (১৯৬৪), যে অরণ্যে আলো নেই (১৯৭৪), রোদ জ্বলা বিকাল (১৯৭৪)
কথা নাট্য- আমি বীরঙ্গনা বলছি (২ খন্ড, ১৯৯৬-৯৭)
অনুবাদ-এলিনর রুজভেল্ট (১৯৪৫), কথাশিল্পী জেম্স ফেনিমোর কুপার (১৯৬৮)
ভ্রমনকাহিনী- বস্টনের পথে (১৯৮৯), শাহী এলাকার পথে পথে (১৯৬৩)
আত্মজীবনী- বিন্দু বিসর্গ (১৯৯১)।
স্বীকৃতি:
কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ নীলিমা ইব্রাহিম ভূষিত হয়েছেন বহু পদক ও পুরস্কারে। এগুলো হচ্ছে- বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৯), জয়বাংলা পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার (১৯৮৭), লেখিকা সংঘ পুরস্কার (১৯৮৯), বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধূরী স্মৃতিপদক (১৯৯০), মুহম্মদ নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৯২), অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৬), বেগম রোকেয়া পদক (১৯৯৬), বঙ্গবন্ধু পুরস্কার (১৯৯৭), শেরে বাংলা পুরস্কার (১৯৯৭), থিয়েটার সম্মননা পদক (১৯৯৭) ও একুশে পদক (২০০০)।
মৃত্যু: এই মহীয়সী নারী ২০০২ সালের ১৮ জুন মৃত্যু বরণ করেন।
তথ্য সূত্র: বাংলা পিডিয়া, আত্মজীবনী-বিন্দুবিসর্গ, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত, অতঃপর কৃষ্ণান্ধকার, নীলিমা ইব্রাহিম স্মারক গ্রন্থ, প্রথম আলো (১৯ জুন ২০০২), The Daily Star (18 June,2006), Wikipedia .
ছবি সূত্র: বাংলা পিডিয়া
লেখক : নাজিব নিয়াজ