ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে পাশ করার পর কলকাতা মেডিকেল কলেজে পড়ার জন্য নমিনেশন পেলেন ড. শাহ মোঃ হাসানুজ্জামান। কিন্তু কলকাতায় পড়ানোর মত আর্থিক সামর্থ্য তাঁর বাবার ছিল না। ফলে মেডিকেল কলেজে পড়া হলো না তাঁর। অর্থের অভাবে ডাক্তারি পড়া হয়নি বলে তিনি কিন্তু দমে গেলেন না। বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে Faculty of Agriculture এ ভর্তি হলেন। কিন্তু এখানে ভর্তি হওয়ার পর দেখা দিল আর এক বিপত্তি। শুরু হলো কালাজ্বর। সেইসময়কার অনেক এম.বি.বি.এস. ডাক্তার তাঁর রোগ শনাক্ত করতে পারছিলেন না। অনেকেই মন্তব্য করেছিলেন, তিনি আর বাঁচবেন না। কিন্তু তিনি বেঁচে উঠলেন। তবে তাঁকে দীর্ঘ দুই বৎসর এই কালাজ্বরের সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছিল। আর এই দীর্ঘ দুই বছর তাঁকে পড়াশুনা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়েছে। তবে সব বাধা অতিক্রম করে তিনি সামনের দিকে এগিয়ে গেছেন এবং দেশের বিশিষ্ট কৃষিবিজ্ঞানী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর আবিষ্কৃত উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধান যেমন দেশের কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে, তেমনি তাঁর তৈরি করা একদল দক্ষ কৃষিবিজ্ঞানী অক্লান্ত পরিশ্রম করে এদেশের কৃষিকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব নিয়েছে। যাঁদের কল্যাণে ও সৃষ্টি কর্মে কৃষির উৎপাদন দিনদিন বেড়ে চলেছে।
কৃষিবিজ্ঞানী ড. শাহ মোঃ হাসানুজ্জামান ১৯২৫ সালের ১ জানুয়ারী ঢাকা শহরের ৪৭নং শাহ সাহেব লেনের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। হাসানুজ্জামানের পূর্ব পুরুষগণ ইরাক থেকে ভারতবর্ষে আসেন। ১৭৫৭ সালের পূর্বে বর্তমান কলকাতার পশ্চিম দিকে গঙ্গার ধার ঘেঁষে হাওড়ার যে অংশটা ছিল সেখানে ইরাক থেকে আসা মানুষদের একটি কলোনী গড়ে উঠেছিল। কলোনীর সেইসব ইরাকি গোষ্ঠীবদ্ধভাবে এক সাথে বসবাস করতেন এবং মশলা ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। ইন্দোনেশিয়া থেকে মশলা নিয়ে এসে কিছুটা এখানে বিক্রী করতেন। তৎকালীন বাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে সংগ্রহ করা হত তেতুল, আদা, হলুদ, ধনিয়া, মরিচ ইত্যাদি। এইসব মশলাও প্রসেসিং হত সেই কলোনীতে। তারপর সেখান থেকে প্রসেসিং করা মশলাগুলো নিজস্ব পালতোলা জাহাজে মধ্যেপ্রাচ্যের বিভিন্ন অংশে রপ্তানী করা হত। মূলতঃ দলবদ্ধভাবে বা গোষ্ঠীবদ্ধভাবে মশলার ব্যবসা করেই চলছিল কলোনীর সেইসব ইরাকিদের জীবন।
এরপর শুরু হল ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতনের মধ্যে দিয়ে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ক্ষমতা দখল করল। কলোনীর ইরাকিদের মশলা ব্যবসায়ীদের সাথে আগে থেকেই ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর একটি বড় প্রতিযোগিতা ছিল। ক্ষমতা দখলের পর সমস্ত মশলা ব্যবসার উপর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের লোভে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী স্থানীয় লোকজন (অমুসলিম) নিয়ে একদিন সেই কলোনী আক্রমণ করে। আক্রান্ত কলোনীবাসী জীবনরক্ষার তাগিদে যে যেদিকে পারে পালিয়ে গেলেন।
হাসানুজ্জামানের পূর্ব পুরুষগণ অন্য কয়েকটি দল নিয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে এক সময় ঢুকলো ফরিদপুরে। এরমধ্যেই ঘটে যায় অনেক ঘটনা, কেটে যায় অনেক সময়। গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষগুলো ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে পরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। হাসানুজ্জামানের দাদা আহসান উল্লাহর পিতৃপুরুষের দলটি আনুমানিক ১৮৪০ এর দশকে বিক্রমপুরের (মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত) শ্রীপুরে (বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ জেলার একটি থানা) স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন। মোঃ হাসানুজ্জামান-এর দাদা মোঃ আহসান উল্লাহ সাহেবের বাবা-চাচারা সাভার থানার ভাকুর্তা ইউনিয়নের মুশুরীখোলায় জন্মগ্রহণ করেন।
এরপর শুরু হয় ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লব। তখন আহসান উল্লাহর বয়স ১৭-১৮ বছর। তিনি সরাসরি সিপাহী বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেন। সিপাহী বিপ্লবের পরাজয়ের পর পালিয়ে গেলেন চরভাসানিয়ার দিকে (মেঘনা নদীর পূর্ব পারের গোপালদী বাজারের কাছে)। সেই গ্রামে ছিলেন এক বিখ্যাত পীর। তিনি সেই পীরের আস্তানায় গিয়ে আশ্রয় নিলেন এবং আধ্যাত্মিকতার চর্চা শুরু করলেন। সেখান থেকে তিনি ইরাকসহ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরেন। তিনি ১০-১২ বছর বিভিন্ন দেশ ঘুরে আধ্যাত্বিক বিদ্যা ও হেকিমিশাস্ত্র আয়ত্ত্ব করেন। এরপর দেশে ফিরে মশুরিখোলা গ্রামে বসবাস শুরু করেন এবং হেকিমি পেশার পাশাপাশি মশলার ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকেন। কথিত আছে তিনি ষাট বছর বয়সে প্রথম বিয়ে করেন এবং বাসররাতেই প্রথম স্ত্রী কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পরবর্তীতে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং তিন পুত্র ও সাত কন্যা সন্তানের জনক হন।
১৮৭০ সালের দিকে তিনি ঢাকার নারিন্দা এলাকায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এখানেই তিনি ১৯২৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার কবরকে কেন্দ্র করে একটি মাজার গড়ে উঠে যা এখনো রয়েছে। উল্লেখ্য, পীর মোঃ আহসান উল্লাহ সাহেব আরবী ভাষায় হেকিমি শান্ত্রের উপর একখানা গ্রন্থ রচনা করেছিলেন, যা পরবর্তী কালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদান করা হয়।
হাসানুজ্জামানের বাবা মৌলনা শাহ আব্দুল লতিফ পেশায় ছিলেন কৃষক। তিনি পড়াশুনা করেছিলেন মাদ্রাসা লাইনে, এন্ট্রান্স বা এফ এ (তৎকালীন, বর্তমানে ইন্টারমিডিয়েট) পাশ করার পর আলীগড়ে পড়াশুনা করতে গিয়েছিলেন। তখন সমগ্র ভারতবর্ষে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন বেশ তুঙ্গে। তিনিও জড়িয়ে গেলেন এই আন্দোলনে। একসময় আলীগড় থেকে পড়াশুনা শেষ না করেই ঢাকায় পালিয়ে এলেন। দেশে ফিরে এসে তিনি কাজী পেশার সঙ্গে জড়িত হন এবং সেই সঙ্গে কৃষিকাজও দেখাশুনা করেন। ১৯২০ সালের দিকে তিনি গাজীপুর জেলার শ্রীপুরে বসবাস শুরু করেন। তাঁর বাবা শাহ আব্দুল লতিফ মৃত্যুবরণ করেন ১৯৭২ সালে।
মাত্র চার বছর বয়সে হাসানুজ্জামান তাঁর মা ফাতেমা বেগমকে হারান। তাঁর নানার বাড়ি ছিল পূবাইল (ঢাকা জেলার অন্তর্গত) এলাকার সম্ভ্রান্ত এক জমিদার পরিবারে। ড. হাসানুজ্জামানরা ছিলেন তিন ভাই আর এক বোন। তিনি ছিলেন ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়।
গাজীপুরের শ্রীপুর গ্রামে হাসানুজ্জামান মিডল ইংলিশ স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। এখানে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। শ্রীপুর গ্রামের শৈশবের স্মৃতি এখনো তাঁকে আচ্ছন্ন করে রাখে। গহীন বনে পাখি শিকার, মাছ ধরা, দলবেঁধে ফুটবল খেলা, হা-ডুডু, কানামাছি, দারিয়াবান্ধা খেলা সব ক্ষেত্রেই হাসানুজ্জামান ছিলেন সমান পারদর্শী। গারো (একটি উপজাতি সম্প্রদায়) বন্ধুর সাথে গহীন বনে গিয়ে পাখি শিকার করতেন। এরপর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে সেই পাখিগুলি আগুনে পুড়িয়ে খেতেন। আবার কখনও গাছের মগডাল থেকে ফল পাড়তে গিয়ে পড়ে ব্যথা পেতেন এবং গ্রাম্য ওঝার কাছে যেতেন চিকিৎসা নিতে। গারো বন্ধুটি ছিল তার কাছে এক বিস্ময়। ছোট ছোট মৌমাছির পিছু নিয়ে গর্তের মধ্যে থেকে চাক খুঁজে বের করার পর মধু আহরণ করে খাওয়া, ছোট বন খেজুর গাছের মাথা ভেঙ্গে শাঁস খাওয়া, গাছের লতা কেটে পানি বের করে তা পান করার মত ঘটনাগুলো তিনি প্রথম এই বন্ধুটির কাছ থেকেই শেখেন।
১৯৩৫ সালে পড়াশুনার উদ্দেশ্যে তিনি শ্রীপুর থেকে ঢাকায় আসেন। ভর্তির জন্য সেন্ট গ্রেগরি, কলেজিয়েট এবং মুসলিম হাইস্কুলে পরীক্ষা দিলেন। সবগুলো স্কুলেই ভর্তির জন্য নির্বাচিত হলেন। কিন্তু তিনি ভর্তি হলেন মুসলিম স্কুলে কারণ এই স্কুলটি ছিল তাঁদের বাড়ীর সবচাইতে কাছে এবং এখানকার প্রধান শিক্ষক ছিলেন তাঁর বাবার বন্ধু। মুসলিম হাইস্কুলে ১৯৩৫ সালে তিনি সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হলেন এবং ১৯৩৯ সালে এই স্কুল থেকেই তিনি Additional Mathematics নিয়ে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাশ করেন। প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাশ করে তিনি দুটি বৃত্তি লাভ করেন। একটি ছিল সরকারি (১০ টাকা) এবং অপরটি ছিল হাজী মোঃ মোহসীন ফান্ডের (৫ টাকা)।
ম্যাট্রিক পাশ করে ভর্তি হন ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে (পুরাতন লাট ভবনে – কার্জন হলের উত্তরে)। মাধ্যমিকে যারা দুটো বৃত্তি একসঙ্গে পেতেন তাঁদের জন্য কলেজের বেতন ছিল ফ্রি। ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে তিনি প্রথম বিভাগে আই.এসসি. পাশ করেন ।
আই.এসসি. পাশ করার পর ১৯৪১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে Faculty of Agriculture এ ভর্তি হলেন হাসানুজ্জামান। দুই বৎসর কালাজ্বরে ভোগার পর এই বিভাগ থেকেই ১৯৪৫ সালে বি.এসসি (এগ্রিকালচার) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেঙ্গল এগ্রিকালচার ইনস্টিটিউট থেকে বি.এজি. ডিগ্রি লাভ করেন। দেশ বিভাগের কারণে পরীক্ষার ফল দেরীতে ঘোষণা করা হয়। ফলে তিনি পাকিস্তান সরকারের অধীনে ১৯৪৮ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারীতে First Economic Botanist বিভাগে Research Assistantহিসাবে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালের জুলাই মাসে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস এডুকেশন ফাউন্ডেশন থেকে বৃত্তি লাভ করেন। ফিয়েটভিলের আরকানসাস ষ্টেট ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেন এবং ১৯৫৬ সালে এগ্রোনমিতে এম.এস. ডিগ্রি লাভ করেন। সেই বছরেই তিনি Texas Agriculture and Mechanical College এ যোগ দিয়ে ১৯৫৮ সালের নভেম্বর মাসে তিনি Plant Breeding & Genetics-এর উপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। বিদেশে পিএইচডি ডিগ্রী নেওয়ার পর তাঁর প্রফেসর ড. আই. এম. এটকিন তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে অধ্যাপনায় যোগদানের আমন্ত্রণ জানান, কিন্তু স্বদেশের জন্য কিছু করবেন এ আশায় তিনি দেশে ফিরে আসেন। তাঁর থিসিস ছিল Effect of X-rays and Thermal Neutron on Blue Bonnet & Century Patna Rice. ১৯৫৫ সালে F.A.O.এর Rice Breeding Training Course এ Indian Rice Research Institute, Cultack, Orissa ট্রেনিং নিয়েছিলেন।
১৯৬২ সালে তিনি Botanist pulse and Oilseed গবেষণা বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান। আবার ১৯৬৪ সালে তাঁকে Economic Botanist (Fiber crops) হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৬৯ সালে তিনি Rice Specialist & Economic Botanist হিসেবে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। সেই বছরেই সাভারের অস্থায়ী ধান গবেষণা কেন্দ্র সাভার থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুরে স্থানান্তরিত হয়। এটি পূর্ব পাকিস্তান ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করার পর ড. শাহ মোঃ হাসানুজ্জামান এই প্রতিষ্ঠানে সহযোগী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সেখানে তিনি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত সহযোগী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান এর প্রথম মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে সরকারী চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি Pension প্রাপ্ত হন বটে তবে তাঁকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কাজ করতে হয়।
সরকারী চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করলেও কর্মজীবন থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করলেন না। ১৯৮৫ এবং ১৯৮৬ সালে তিনি আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান এর Liason Scientist হিসেবে সাব সাহারা আফ্রিকায় ধান গবেষণার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। দেশে ফিরে তিনি ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা পরিষদের সদস্য (কৃষি) ছিলেন এবং ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি জাইকা (Japan International Cooperation Agency)-এর কৃষি উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন যেমন FAO, World Bank, Asian Development Bank, International Rice Research Institute (IRRI) এবং WARDA সহ দেশী বিদেশী আরও বহু প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
বিজ্ঞানী হাসানুজ্জামানের কর্মজীবন দু’টি অংশে বিভক্ত করা যায়। প্রথমটি হলো সরকারি চাকুরি করার সুবাদে পেশাগত দায়িত্ব পালন আর দ্বিতীয়টি হলো তাঁর নিজস্ব কর্মজীবন। তবে আজকের হাসানুজ্জামানকে জাতি চিনেছে তাঁর নিজস্ব কর্মজীবন দিয়ে। এই কর্মজীবনে তিনি নিজ হাতে তৈরী করেছেন দেশ বরেণ্য অনেক কৃষিবিজ্ঞানী, যাঁরা এদেশের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত। দেশে দক্ষ কৃষিবিজ্ঞানী তৈরি করতে তিনি প্রতিদিন ১৭-১৮ ঘন্টা পরিশ্রম করেছেন। ড. হাসানুজ্জামান সুদীর্ঘ ১০ বছর (১৯৬০-১৯৭০) বাংলাদেশ কৃষি কলেজের (বর্তমানে শের-এ-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক হিসেবে অধ্যাপনা করেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে অনেকে কৃষি গ্র্যাজুয়েট M.AG. এবং Phd ডিগ্রি লাভ করেন। BRRI, BARI, SRI, BINAপ্রভৃতি গবেষণাগারগুলোতে এসব কুশলী গবেষকরা সফলতার সাথে কাজ করে চলেছেন। ড. হাসানুজ্জামানের নিরলস পরিশ্রম ও কঠিন ত্যাগের বিনিময়ে এদেশে গড়ে উঠেছে একদল দক্ষ কৃষি বিজ্ঞানী। ড. জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈতনিক অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩ জন এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২ জন শিক্ষার্থী তাঁর অধীনে PhD ডিগ্রি লাভ করেন। ড. এস.এম. হাসানুজ্জামানের লেখা প্রবন্ধ, রিপোর্ট ও গবেষণাপত্র বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক জার্নালসমূহে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি কৃষকদের জন্য কৃষিকথায় বহু প্রবন্ধ লিখেছেন।
১৯৬৯ সালে তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার বিজ্ঞান গবেষণায় অবদানের জন্য ড. হাসানুজ্জামানকে ‘তামঘা-ই-ইমতিয়াজ’ স্বর্ণ পদক প্রদান করে। কিন্তু তিনি এই পদক গ্রহণ করেননি। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যায় গৌরবময় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রদান করেন। ভারতের বিশ্ব উন্নয়ন সংসদ ড. হাসানুজ্জামানকে ১৯৮৩ সালে “Honorary Doctor of Science (D. Sc.)” “Bangladesh Krishi Unnayan Ratna Ges National Professor” খেতাবে ভূষিত করে। ১৯৮৫ সালে লায়ন্স ক্লাব, জেলা-৩১৫, বাংলাদেশ থেকে তিনি Six Best Intellectuals” পদক লাভ করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক “Scientist Emeritus নির্বাচিত হন। এই বছরেই তিনি বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট থেকে শের-ই-বাংলা পদক লাভ করেন।
১৯৮৭ সালে ড. হাসানুজ্জামানের সম্মানে বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাদের একটি গবেষণাগারের (Genetic and Seed Resource Building) নামকরণ করেন “HASANUZZAMAN Hall”. ইনস্টিটিউট অব গ্র্যাজুয়েট ষ্টাডিজ ইন এগ্রিকালচার (IPSA) ১৯৮৭ সালে তাদের দ্বিতীয় সমাবর্তনে ড. হাসানুজ্জামানকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। বাংলাদেশ একাডেমী অব সায়েন্স ১৯৮৮ সালে ড. হাসানুজ্জামানকে স্বর্ণপদক প্রদান করেন। ১৯৯২ সালে কৃষিবিদ ফাউন্ডেশন (৬৫) তাঁকে কৃষিবিদ ফাউন্ডেশন-৬৫ পদক প্রদান করেন। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ ড. হাসানুজ্জামানকে “Senior Scholar” হিসেবে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন। ২০০৫ সালে তিনি বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা এবং উন্নত ধানের জাত উদ্ভাবনে বিশেষ অবদানের জন্য শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মাননা লাভ করেন।
জীবনের সবচাইতে বড় সম্মান তিনি পেয়েছেন এদেশের গৃহস্থ/কৃষকের কাছ থেকে। একবার ঝিনাইদহ থেকে দুই কৃষক এসেছিলেন তাঁর কাছে কৃষি বিষয়ক পরামর্শ ও সহযোগিতার জন্য, হাসানুজ্জামান তাঁদের সহযোগিতা করেছিলেন উদারভাবে। মূলতঃ এই সহায়তা টুকু ছিল তাঁর একটি গবেষণা। তিনি কৃষকদের প্রথম পরামর্শ দিয়েছিলেন একত্রিত হবার। কৃষকগণ একত্রিত হয়েছিলেন। এই সম্মিলিত কৃষকদের দিয়ে তিনি শুরু করেছিলেন আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনা। একই খামারের অধীনে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষবাস, কর্তন, ঝাড়াই বাছাই, সংরক্ষণ এবং শস্য বাজারজাত করা হতো। নিজেরা করি নামক সংগঠনের মাধ্যমে পরিচালিত হত সেই যৌথ খামার। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই কৃষকগণ ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছিলেন। ঝিনাইদহ জেলার এই কৃষকগণ হাসানুজ্জামানকে তাঁর প্রাপ্য স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। নব্বই দশকে তাঁদেরকে সহায়তার স্বীকৃতি স্বরূপ হাসানুজ্জামানকে স্বর্ণপদক প্রদান করেছিলেন তাঁরা। দেশের কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এই পদকটিকেই ড. হাসানুজ্জামান তাঁর জীবনের সেরা স্বীকৃতি বা সম্মান বলে মনে করেন।
ড. এস. এম. হাসানুজ্জামান ১৯৪৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থাতেই দশম শ্রেণীর ছাত্রী আজিমী বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর শ্বশুর ডা. আবেদ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন ঢাকার প্রথম মুসলিম এম.বি.বি.এস. ডাক্তার। হাসানুজ্জামান দুই কন্যা এবং এক পুত্র সন্তানের জনক। বড় মেয়ে লতিফা জামান, ছোট মেয়ে হাসনা হেনা জামান ও এক মাত্র ছেলের নাম এস.এম. সেলিম।
ড. এস,এম, হাসানুজ্জামান একজন কৃষি বিজ্ঞানী হিসেবে দেশের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে তাঁর সারাটি জীবন ব্যয় করেছেন।
তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন খাদ্যশস্য যেমন- ধান, গম, ডাল, তৈলবীজ, ভূট্টা, বার্লি জোয়ার, তুলা, পাট, যার্মি, শনপাট, তিসি, কঙ্গোপাট, চীনা কাওন, ফ্লেকস ও তামাকের উপর ব্যাপক গবেষণা করেন। কিভাবে শস্যের জাত উন্নত করে উৎপাদন বাড়ানো যায়, পোকা-মাকড়ের আক্রমন থেকে ফসলের সুরক্ষা, বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, কৃষিতে আধুনিক ও লাগসই প্রযুক্তি প্রয়োগ, পুরাতন চিন্তা-চেতনা পরিবর্তন করে আধুনিক ও শিক্ষিত গৃহস্থ বা কৃষক গড়ে তোলা, উৎপাদিত শস্যের বাজারজাত ব্যবস্থাপনা, ভূমি ব্যবস্থাপনা-সবই ছিল হাসানুজ্জামানের গবেষণার বিষয়বস্তু। জাত উন্নয়ন ও উত্পাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তিনি। বাংলাদেশে বোরো ধানের চাষ মূলতঃ তাঁর প্রচেষ্টাতেই শুরু হয়, এছাড়া তিনি নোনা অঞ্চলের জন্য ভাল জাতের ধান DA-29 এবং আগাম জাতের আমন ধান DA-31 উদ্ভাবন করেন। তাঁর নেতৃত্বে International Rice Research Institute (IRRI)-এর উদ্ভাবিত উফশী (উচ্চ ফলনশীল) ধানের জাতগুলো দেশে-বিদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং সত্তর দশকে ওজজও কর্তৃক উদ্ভাবিত ধানের জাতগুলো আন্তর্জাতিক পরীক্ষায় পরপর চারবার প্রথম স্থান অধিকার করে।
কবি জসিম উদ্দিন একবার এক অনুষ্ঠানে হাসানুজ্জামানকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমরা তো কথা বেচে খাও, আর ইনিই একমাত্র মানুষ যিনি কাজ বেচে খায়।’ কাজ পাগল এই মানুষটি মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত গবেষণা কাজ চালিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখেন।
০৯ অক্টেবর, ২০১১ তারিখে ৮৬ বছর বয়সে বার্ধক্য জনিত কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী:
জন্ম: কৃষিবিজ্ঞানী ড. শাহ মোঃ হাসানুজ্জামান ১৯২৫ সালের ১ জানুয়ারী ঢাকা শহরের ৪৭নং শাহ সাহেব লেনের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
বাবা-মা: তাঁর বাবা শাহ আব্দুল লতিফ ও মা ফাতেমা বেগম।
পড়াশুনা ও চাকরিজীবন: গাজীপুরের শ্রীপুর গ্রামে হাসানুজ্জামান মিডল ইংলিশ স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। এখানে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেন।১৯৩৫ সালে পড়াশুনার উদ্দেশ্যে তিনি শ্রীপুর থেকে ঢাকায় আসেন। ভর্তির জন্য সেন্ট গ্রেগরি, কলেজিয়েট এবং মুসলিম হাইস্কুলে পরীক্ষা দিলেন। সবগুলো স্কুলেই ভর্তির জন্য নির্বাচিত হলেন। কিন্তু তিনি ভর্তি হলেন মুসলিম স্কুলে কারণ এই স্কুলটি ছিল তাঁদের বাড়ীর সবচাইতে কাছে এবং এখানকার প্রধান শিক্ষক ছিলেন তাঁর বাবার বন্ধু। মুসলিম হাইস্কুলে ১৯৩৫ সালে তিনি সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হলেন এবং ১৯৩৯ সালে এই স্কুল থেকেই তিনি Additional Mathsmetics নিয়ে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাশ করেন। প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাশ করে তিনি দুটি বৃত্তি লাভ করেন। একটি ছিল সরকারি (১০ টাকা) এবং অপরটি ছিল হাজী মোঃ মোহসীন ফান্ডের (৫ টাকা)।
ম্যাট্রিক পাশ করে ভর্তি হন ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে (পুরাতন লাট ভবনে – কার্জন হলের উত্তরে)। মাধ্যমিকে যারা দুটো বৃত্তি একসঙ্গে পেতেন তাঁদের জন্য কলেজের বেতন ছিল ফ্রি। ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে তিনি প্রথম বিভাগে আই.এস.সি. পাশ করেন ।
আই.এসসি. পাশ করার পর ১৯৪১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে Faculty of Agriculture এ ভর্তি হলেন হাসানুজ্জামান। দুই বৎসর কালাজ্বরে ভোগার পর এই বিভাগ থেকেই ১৯৪৫ সালে বি.এসসি. (এগ্রিকালচার) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেঙ্গল এগ্রিকালচার ইনস্টিটিউট থেকে বি.এজি. ডিগ্রি লাভ করেন। দেশ বিভাগের কারণে পরীক্ষার ফল দেরীতে ঘোষণা করা হয়। ফলে তিনি পাকিস্তান সরকারের অধীনে ১৯৪৮ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারীতে First Economic Botanist বিভাগে Research Assistant হিসাবে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালের জুলাই মাসে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস এডুকেশন ফাউন্ডেশন থেকে বৃত্তি লাভ করেন। ফিয়েটভিলের আরকানসাস ষ্টেট ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেন এবং ১৯৫৬ সালে এগ্রোনমিতে এম.এস. ডিগ্রি লাভ করেন। সেই বছরেই তিনি Texas Agriculture and Mechanical College এ যোগ দিয়ে ১৯৫৮ সালের নভেম্বর মাসে তিনি Plant Breeding & Genetics-এর উপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। বিদেশে পিএইচডি ডিগ্রী নেওয়ার পর তাঁর প্রফেসর ড. আই. এম. এটকিন তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে অধ্যাপনায় যোগদানের আমন্ত্রণ জানান, কিন্তু স্বদেশের জন্য কিছু করবেন এ আশায় তিনি দেশে ফিরে আসেন। তাঁর থিসিস ছিল Effect of X-rays and Thermal Neutron on Blue Bonnet & Century Patna Rice. ১৯৫৫ সালে F.A.O.এর Rice Breeding Training Course এ Indian Rice Research Institute, Cultack, Orissa ট্রেনিং নিয়েছিলেন।
১৯৬২ সালে তিনি Botanist pulse and Oilseed গবেষণা বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান। আবার ১৯৬৪ সালে তাঁকে Economic Botanist (Fiber crops) হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৬৯ সালে তিনি Rice Specialist & Economic Botanist হিসেবে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। সেই বছরেই সাভারের অস্থায়ী ধান গবেষণা কেন্দ্র সাভার থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুরে স্থানান্তরিত হয়। এটি পূর্ব পাকিস্তান ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করার পর ড. শাহ মোঃ হাসানুজ্জামান এই প্রতিষ্ঠানে সহযোগী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সেখানে তিনি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত সহযোগী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান এর প্রথম মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে সরকারী চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি Pension প্রাপ্ত হন বটে তবে তাঁকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কাজ করতে হয়। সরকারী চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করলেও কর্মজীবন থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করলেন না। ১৯৮৫ এবং ১৯৮৬ সালে তিনি আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান এর Liason Scientist হিসেবে সাব সাহারা আফ্রিকায় ধান গবেষণার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। দেশে ফিরে তিনি ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা পরিষদের সদস্য (কৃষি) ছিলেন এবং ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি জাইকা (Japan International Cooperation Agency)-এর কৃষি উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন যেমন FAO, World Bank, Asian Development Bank, International Rice Research Institute (IRRI) এবং WARDA সহ দেশী বিদেশী আরও বহু প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
পরিবার: ড. এস. এম. হাসানুজ্জামান ১৯৪৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থাতেই দশম শ্রেণীর ছাত্রী আজিমী বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর শ্বশুর ডা. আবেদ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন ঢাকার প্রথম মুসলিম এম.বি.বি.এস. ডাক্তার। হাসানুজ্জামান দুই কন্যা এবং এক পুত্র সন্তানের জনক। বড় মেয়ে লতিফা জামান, ছোট মেয়ে হাসনা হেনা জামান ও এক মাত্র ছেলের নাম এস.এম. সেলিম।
মৃত্যু: ০৯ অক্টেবর, ২০১১ তারিখে ৮৬ বছর বয়সে বার্ধক্য জনিত কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মূল লেখক : মীর মোফাখ্খারুল আলম
পুনর্লিখন : গুণীজন দল