ছোটবেলায় মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠেও নাচতেন রওশন জামিল। মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাঝরাতের এই নৃত্যচর্চায় তাঁর ওস্তাদ ছিলেন বড় বোন। ভুল হলে বড় বোনকে বলতেন নাচ তুলে দিতে। বড় বোন যে নাচে খুব পটু ছিলেন তা নয়। স্কুলে যাওয়া আর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ও দেখার সুবাদে যতটুকু জানতেন ততটুকুই শেখাতেন ছোটবোনকে।
ছোটবেলায় নাচ আর গান খুব ভালো লাগত নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী রওশন জামিলের (রওশন আরা করিম)। কিন্তু ভালো লাগলে কী! মা (হোসনে আরা বেগম) তো চাইতেন না যে মেয়ে নাচুক। তাঁর মা ছিলেন বাবার ছোট স্ত্রী। তাঁর মা অন্য সব বাঙালি মায়ের মতোই চাইতেন মেয়ে সাবধানে থাকুক, মেয়ের কোনো বদনাম না হোক। রওশন জামিল বলেন, আমি যেহেতু ছোট মায়ের মেয়ে তাই আমাকে অন্য মায়েদের সন্তানদের কাছ থেকে দূরে রাখা হত । আমার মা ধর্মভীরু ছিলেন, তিনি ভাবতেন ওরা করছে করুক, কিন্তু আমার মেয়ে পাক্কা মুসলিম পরিবারের মেয়ের মতো হবে। মাথায় ঘোমটা থাকবে সবসময়, নামাজ পড়বে, কোরআন শরিফ পড়বে, জোরে কথা বলবে না, জোরে হাসবে না। এভাবে আমার মেয়ে একজন খানদানি মুসলমান হবে । উর্দুতে কথা বলতে হবে, বাংলায় কথা বললে তো ঠিক মুসলমান হওয়া যায় না।’
রওশন জামিলের জন্ম ১৯৩১ সালের ৮ মে ঢাকার রোকনপুরে। রওশন জামিলের পরিবার ছিল খুব বড়। তাঁর বাবার (আব্দুল করিম) ছিল তিন বিয়ে। তিন মায়ের ঘরের আট ভাইবোনই ছিল এক বাড়িতে। বাড়িতে বাইরের লোকজনও আসত অনেক। সব মিলে বাড়িটি সব সময় গমগম করত মানুষে আর নানা আয়োজনে। বাড়িতে শৈশব থেকেই নিয়মিত পড়তেন ভারতবর্ষ, শওগাত ও বুলবুলের মতো পত্রিকা।
ভাইবোনদের একেক জনের শখ ছিল একেক রকম। এই শখের সূত্রেই পারিবারে সঙ্গীত, খেলাধূলা ও সংস্কৃতির চর্চা ছিল। তবে, মায়ের কারণে লেখাপড়ার বাইরে তেমন কিছুই করার সুযোগ ছিল না রওশন জামিলের। আশপাশের কিছু পরিবারের মেয়েরা তখন নাচগান করছে। রওশন জামিল ছোটবেলায় তা দেখতেন। নিজে তা পারতেন না বলে কান্নাকাটি করতেন। পুরান ঢাকায় বাড়ি থাকায় পরিচিত ছিলেন হিন্দুদের পূজা- পার্বণের সঙ্গে। সুযোগ পেলেই দুর্গাপূজা ও কালীপূজার মতো আয়োজনে ঢাকের তালে নাচতেন তিনি। এজন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন মন্দিরে। সেখানে গিয়ে নিজের শখের সময়টা কাটাতেন। কখন রাত হয়ে যেত খেয়ালই থাকত না। যখন খেয়াল হত, তখন ছুটতেন বাড়ির দিকে। শুধু মায়ের শাসনের ভয়ে নাচ বা গান না করতে পেরে মাঝে মাঝেই লুকিয়ে কাঁদতেন তা নয়, ছোটবেলায়ই তিনি চিন্তা করতেন আর একটা বিষয়। অন্য পরিবারের, অন্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা যা করতে পারে, যেমন- নাচ, গান, অভিনয়। কিন্তু মুসলিম পরিবারের সন্তান হওয়ায় তিনি তা করতে পারবেন না। এই যে সীমাবদ্ধতা, এটা ভেবেও তাঁর খারাপ লাগত। এটাও ছিল তাঁর কান্নার আর একটা কারণ। এসব কারণে কান্নার সময় ধরা পড়লেও মাকে বলতে পারতেন না আসল কথাটা। মা জানতে চাইলে বলতেন, পেট ব্যথার কারণে কাঁদছি।
রওশন জামিল নিজের পরিবার সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমার বাবা তিনটে বিয়ে করেছিলেন। আমরা তিন মায়ের ভাইবোন এক বাড়িতেই বড় হয়েছি । সেজন্য বাড়িটা আনন্দভুবনের মত হয়ে গেছিল । এক এক ভাই এক এক রকম, এক এক জন এক একটা পছন্দ করত। কেউ খেলাধুলা করছে, কেউ বাগান করছে, ব্যাডমিন্টন কোর্ট বানাচ্ছে, এমন কি আমাদের বোনদের জন্যও আলাদা কোর্ট তৈরি করেছিল । রাতে খেলা হচ্ছে, সেই মজার ব্যাপার । হৈ হুল্লুর হত, বাসায় অনেক রকম লোক আসত । আমার বড় যে ভাই বাগান করতেন তিনি একটু বেপরোয়া ছিলেন, তিনি বাগান করতেন, ভায়োলিনও শিখতেন। ছোটভাই গিটার আর বড় ভাই সেতার শিখতেন । অন্য বোনকে গানের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন ।’
নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী রওশন জামিল বেড়ে উঠেছেন এমন একটা সময়ে যখন ঢাকা শহরে ঘরের বাইরে কোনো অনুষ্ঠানে মুসলিম পরিবারের মেয়েরা নাচগান করবে তা ভাবাই যেত না। রওশন জামিলের মায়ের দৃষ্টিভঙ্গিও প্রচলিত ধ্যানধারণার বাইরে ছিল না। কিন্তু মেয়ের নাচ ও গানের তীব্র আগ্রহ দেখে এক সময় বাবা অবাক হতেন। ভাবতেন, এ মেয়েটা একটু অন্য রকম। আত্মীয়-স্বজন এলে মা ডেকে বলতেন, ‘উনারা একটু তোমার নাচ দেখতে চাইছেন।’ রওশন জামিল কখনোই এই সুযোগ হাতছাড়া করতেন না। এমনকি ঘুমিয়ে থাকলেও তিনি লাফিয়ে উঠে যেতেন নাচ দেখানোর জন্য।
রওশন জামিলের পরিবারের মধ্যে আমরা তখন ঢাকার সব মুসলিম পরিবারের একটা চিত্র পাই। একই সঙ্গে পরিবারগুলোতে রক্ষণশীলতা আছে। আবার সেই রক্ষণশীল পরিস্থিতির বাইরে বেরিয়ে আসার একটা চেষ্টাও আছে। কোনো কোনো পরিবারের অভিভাবকরা এক্ষেত্রে তাদের ছেলেমেয়েদের রক্ষণশীল মানসিকতার বাইরে এনে সুশিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান করে গড়ে তুলতে চাইছেন। আবার কোনো কোনো অভিভাবক তা না চাইলেও ছেলেমেয়েরা আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার সুযোগে নিজেরাই নিজেদের জীবনের পথ চিনে নিচ্ছে। রওশন জামিলের পরিবারের মেয়েদের সেই পথ চলাটা কেমন ছিল সে সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের ভাইবোনদের ভালো লাগত বাংলা, ভাল লাগত গান-বাজনা। চুপিচুপি করে মায়ের চোখ থেকে এড়িয়ে গিয়ে, বাবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে সবার সাথে খেলাধুলা করতাম । আমাদের বাড়ি ছিল বিশাল বড়, এক কিনারে কি হচ্ছে আরেক কিনারের মানুষ জানে না । তাই অন্যদিকে গিয়ে সবার সাথে মিশে আমরা ওগুলো শিখতাম, অন্তত আমি শিখতাম, আমার ভালো লাগত । আমার ইচ্ছে হলে আমি দৌড়ে চলে যেতাম নদীর তীরে- সদরঘাটে। নৌকায় উঠে বসতাম, মাঝি বলত কোথায় যাবেন? আমি বলতাম যেখানে খুশি সেখানে নিয়ে যাও। সেখানেই নিয়ে যেত, সেখানে নামতাম, গ্রাম দেখতাম, ঘুরতাম, ওরা আমাকে বলত আপনি এখানে নামবেন? দেখতাম, ঘুরে আবার ফিরে আসতাম, কোনো ভয় করত না । কিন্তু ওরা আমার কাছ থেকে টাকাপয়সা নিত না কোনো । বিরাট একটা মজা ছিল, কত আনন্দ! কেউ কিছু বলছে না, কেউ কিছু ধরছে না । পাখির মতো ঘুরতাম, পাখিও এত নিরাপদে ঘোরে না ।’
রওশন জামিলের প্রাথমিক শিক্ষা পুরান ঢাকার লক্ষীবাজারের সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলে। মাধ্যমিক পাশ করেন কামরুন্নেছা স্কুল থেকে। এরপর পড়াশোনা করেছেন ইডেন কলেজে। শৈশব থেকেই তাঁর নাচের প্রতি যে ঝোঁক ছিল তা প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার পথ পায় ১৯৪৭ সালে। ওই বছর আনুষ্ঠানিকভাবে নাচ শেখা শুরু করেন তিনি। শিল্পী গণেশ নাথ (পরে গওহর জামিল) এবং রবিশঙ্কর চ্যাটার্জির উদ্যোগে তখন ঢাকার ওয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত হয় শিল্পকলা ভবন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক নৃত্যচর্চা শুরু হয়। ১৯৪৮ সালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে মঞ্চস্থ হয় নৃত্যনাট্য ‘ইন্দ্রের সভা’। এই নৃত্যনাট্যের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। গণেশ নাথের কাছে নাচের তালিম নেওয়ার সময়ই দুজনের মধ্যে প্রেম। পরে তা বিয়েতে পরিণতি লাভ করে ১৯৫২ সালে। ১৯৫২ সালে ঢাকা শহরে মুসলিম কোনো মেয়ের হিন্দু ছেলের সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি কোনো স্বাভাবিক ঘটনা ছিল না। গণেশ নাথ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাম নেন গওহর জামিল। বিয়ের পর দাম্পত্যের মতো নৃত্যেও যৌথ যাত্রা শুরু হয় দুজনের। রওশন জামিল তখন স্বামীর কাছেই নিয়মিত নাচের তালিম নিতে থাকেন। মঞ্চে নৃত্য উপস্থাপনায় তখন থেকেই ব্যস্ত হয়ে ওঠেন রওশন জামিল। তখন দুজনই ধ্রুপদী নাচে আরো দক্ষতা অর্জনের কথা ভাবেন। চলে যান কলকাতায়। সেখানে নৃত্যগুরু পণ্ডিত মারুথাপ্পা পিল্লাই এবং পণ্ডিত রামনারায়ণ মিশ্রের কাছে তালিম নেন। শেখেন ভরতনাট্যম এবং কথাকলি নৃত্য। তাঁদের এই শিক্ষা ঢাকার সংস্কৃতি অঙ্গনের জন্যও খুব প্রয়োজন ছিল। অচিরেই তাঁরা ঢাকার সংস্কৃতি অঙ্গনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ওই সময় দেশের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান তো আছেই, বিদেশে রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি দল হিসেবে যোগ দেওয়াও ছিল তাঁদের জন্য অনিবার্য। মঞ্চে একক ও যৌথনৃত্যের পাশাপাশি তখন রওশন জামিলের ডাক আসে বেতার থেকে। বেতারের ‘হিস্ট্রি’ নাটকে (আমজাদ হোসেনের রচনা) তিনি প্রথমবারের মতো বাচিক অভিনয় করেন ১৯৬৪ সালে। এরপর তিনি অভিনয় করেন অনেক বেতার নাটকে। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশে টেলিভিশনের যাত্রা শুরু। সে সময় তিনি আমজাদ হোসেনের ‘রক্ত দিয়ে লেখা’ নাটকে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘আলী বাবা চল্লিশ চোর’-এ। সেই সময় তিনি নৃত্যে ও বাচিক অভিনয়ে যেমন দক্ষতার পরিচয় রাখেন তেমনি নাটক ও চলচ্চিত্রেও দক্ষতা ও সৃজনশীলতার পরিচয় রাখেন।
নৃত্যশিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও রওশন জামিলকে যেতে হয়েছিল অভিনয়ের দিকে। সেখানেও ছিল সমাজের এক ধরনের রক্ষণশীল ও লোভী মানসিকতা। রওশন জামিলের নিচের কথাগুলোতে মনোযোগ দিলে তা আমরা আরো স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি। অভিনয়ে ঝোঁকার বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ছবির সাথে যখন বেশি জড়িত হয়ে গেলাম, তখন ছবি করব না সংসার করব! না বাগান করব! না নাচব! তা তো আর হল না, কাজেই তখন আমার নাচে গ্যাপ পড়ে গেল। আর প্রায়ই দেখতাম যে এখানে ভীষণ বয়স কাউন্ট করে, কে কতোটা বয়সী, কিন্তু কে কতোটা ভালো নাচছে কেউ সেটাকে পাত্তা দিত না। সোজা কথা যে ভালো নাচানাচির ব্যাপার না, ব্যাপার হলো গিয়ে আপনার বয়স হয়ে গেছে, আপনি সংসার করছেন, বাচ্চাকাচ্চার মা হয়ে গেছেন, ফিগার যতোই ভাল রাখুন না কেন, আপনি এখন আর নাচবেন না । আপনি পথ ছাড়ুন, নতুন মেয়েরা যারা আসছে তারা নাচবে, তারা বাইরে যাবে কিন্তু আপনি কেন যাবেন? আপনি গেলে দেশের একটা লজ্জ্বা । কিন্তু আমার স্বামী গেলে লজ্জ্বা না, আমার স্বামীর বয়স বাড়ে না। বয়স বাড়ে খালি আমার, মানে মেয়েদের বয়স বেড়ে যায়, কিন্তু ছেলেদের বয়স বাড়ে না।’
নৃত্যশিল্পীর চেয়ে অভিনেত্রী হিসেবেই বেশি পরিচিতি পেয়েছেন রওশন জামিল। প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর ধরে ঢাকার চলচ্চিত্রের নানা ধরনের চরিত্রে ছিল তাঁর নিয়মিত উপস্থিতি। পুরো সময়টাতেই চলচ্চিত্রের কিছু চরিত্রের জন্য রওশন জামিলের কোনো বিকল্পের কথা ভাবতে পারতেন না নির্মাতারা। বাণিজ্যিক কিংবা নান্দনিক- দুই ধারার চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেই নির্মাতাদের তাঁর ওপর ছিল নির্ভরতা। অভিনয়ের সফলতায় উজ্জ্বল হয়ে থাকলেও নাচের প্রতিই ছিল রওশন জামিলের আজীবন দুর্বলতা। তিন বলতেন, ‘নাচের জন্য সাধনা করেছি আমি, গানের জন্য করেছি। অভিনয়ের জন্য তো তেমন কিছু করিনি। নাচ-গান অনেক সাধনার ব্যাপার। তাতেই ছিল আমার বেশি আনন্দ। নাচ বা গানের পর দর্শকদের যে উচ্ছ্বাস সেটাকেই বড় পাওয়া মনে হত।’
অভিনয়ের কারণে নাচে ভাটা পড়লেও তিনি কিন্তু সেটি ছাড়েননি। ধরে রেখেছিলেন। ১৯৫৯ সালে নৃত্যশিল্পী গওহর জামিল ও তিনি মিলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নৃত্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র জাগো আর্ট সেন্টার। বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশে নিবেদিতপ্রাণ এই দম্পতি নৃত্য, সঙ্গীত ও চারুকলার শিক্ষা ও চর্চার প্রসারের মাধ্যমে রুচিশীল, শিল্পমনষ্ক ও আদর্শ নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। ১৯৮০ সালে ২১ সেপ্টেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান নৃত্যাচার্য গওহর জামিল। স্বামীর মৃত্যুর পর এই সংগঠনের হাল ধরেছিলেন রওশন জামিল। অর্ধশতাব্দি ধরে এই প্রতিষ্ঠান থেকে তালিম নিয়েছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী।
বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকের ঢাকার সাধারণ মুসলিম সমাজ ছিল রক্ষণশীল। এই রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারগুলোর কাছে নাচ-গান কোনো সহজ কাজ ছিল না। মুসলিম মেয়েরা নাচবে- গাইবে তা তারা চিন্তাই করত না। বরং যারা সেসব করত তাদের দিত গঞ্জনা ও অপবাদ, তাদের দেখত বাঁকা চোখে, তাচ্ছিল্যের চোখে। এই রক্ষণশীলতার মধ্যে থেকে নাচের মতো একটি শিল্পে নিজেকে নিবেদিত করা রওশন জামিলের জন্য ছিল রীতিমতো বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত। সেই সিদ্ধান্তে অটল থাকতে গিয়ে, নিজেকে সেই শিল্পের অনিবার্য প্রতিনিধি করে তুলতে গিয়ে রওশন জামিলকেও সইতে হয়েছে অনেক কটুকথা, মানসিক নির্যাতন। আশপাশের লোকজন নানা কথা বলত। কেউ কেউ বলত তিনি বেলেল্লাপনা করছেন। বলত, ‘সে যে এতগুলো ব্যাটাছেলের সামনে হেলেদুলে নাচে এটা কি কোনো প্রশংসার ব্যাপার? আমরা এমন টাকা- পয়সার মুখে থুথু ফেলি। এ দিয়ে যদি জীবন চলতে হয় তারচেয়ে মরণও ভাল।’ কতটা মানসিক শক্তি ও একাগ্রতা থাকলে একজন নারী এসব কথা সহ্য করে সামনে এগিয়ে যেতে পারেন তার নজির হয়ে আছেন রওশন জামিল। বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা উপেক্ষা করে তিনি যে শুধু নিজের জন্য পথ করেছেন তা নয়, পরবর্তী প্রজন্মের নারীদের জন্যও শিল্পচর্চার পথ সুগম করে দিয়ে গেছেন তিনি। নৃত্যকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদকে ভূষিত হন। এছাড়া অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, টেনাশিনাস পদক, সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড, বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার, তারকালোক পুরস্কারসহ বহু পদক ও পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি ।
রওশন জামিল পঞ্চাশের দশকের গোড়া থেকে অর্ধশতাব্দি ধরে বাংলাদেশের মঞ্চ, বেতার, টিভি ও চলচ্চিত্রে তাঁর বহুমাত্রিক শিল্পনৈপুণ্যে দাপট দেখিয়ে গেছেন। অভিনয় করেছেন প্রায় দুই শ’ বেতার নাটক, তিন শতাধিক টেলিভিশন নাটক, প্রায় তিন শ’ চলচ্চিত্র, তিনটি বিজ্ঞাপন চিত্র এবং একাধিক নৃত্যনাট্যে। সব মাধ্যমে তাঁর বিচরণ ছিল সব সময়ই অবাধ, স্বতঃস্ফূর্ত ও সাবলীল। জাগো আর্ট সেন্টারের প্রযোজনা ‘নৃত্যাঞ্জলি’, ‘আনারকলি’, ‘এক মুঠো ভাতের জন্য’, ‘সূর্য ও সূর্যমুখী’, ‘শাস্তি’, ‘উজ্জ্বল প্রভাত’, ‘সামান্য ক্ষতি’, ‘কাঞ্চন মালা’ এবং ‘ইতিহাসের একটি পাতা’ নৃত্যনাট্যের কোরিওগ্রাফি, পোশাক পরিকল্পনা ও পরিবেশনায় তাঁর কাজ ছিল নান্দনিক ও সুনিপুণ।
নৃত্যের বাইরে মঞ্চে তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজ বিশ্ববিখ্যাত রুশ লেখক ম্যাক্মিম গোর্কির উপন্যাস ‘মা’ নাট্যরূপে মূল ভূমিকায় অভিনয়। ১৯৬৮ সালে ম্যাক্সিম গোর্কির জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মা’ নাট্যরূপ মঞ্চে নিয়ে আসেন মোজাম্মেল হোসেন মন্টু এবং সোলায়মান। তখনকার সময়ের শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনে এটি ছিল উল্লেখযোগ্য এক ঘটনা। ১৯৬৮ সালে দুইবার এবং ১৯৭৩ সালে রুশ কমিউনিস্ট নেতা ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের জন্মদিনে এটি মঞ্চস্থ হয়। প্রতিবারই মায়ের চরিত্রে অভিনয়ে আগের অভিনয়কে ছাড়িয়ে গেছেন রওশন জামিল। নাটকের মূল আবেদনটি দর্শকের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে ব্যাপক সহায়ক হয়েছিল তাঁর অভিনয়।
বেতার নাটকে বাচিক অভিনয়ের ক্ষেত্রেও প্রথম থেকেই দক্ষতার পরিচয় দেন রওশন জামিল। পরবর্তীতে টিভি ও চলচ্চিত্রের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও বাচিক অভিনয় অব্যাহত রাখেন তিনি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, নাটক ও চলচ্চিত্রের অভিনেতা- অভিনেত্রীরা বাচিক অভিনয়ে দায়সাড়া ভূমিকা রাখেন। রওশন জামিল ছিলেন জাত শিল্পী। তাঁর ধাতে দায়সাড়া কোনো ব্যাপার ছিল না। বাচিক অভিনয়েও শেষপর্যন্ত তিনি ছিলেন দায়িত্বশীল এবং আন্তরিক।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের শুরুতে ‘রক্ত দিয়ে লেখা’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমেই মূলত রওশন জামিলের অভিনয় জীবনের শুরু। বাংলাদেশ টেলিভিশনের ধারাবাহিক নাটক ‘ঢাকায় থাকি’ এবং ‘সকাল-সন্ধ্যা’ তাঁকে আরো জনপ্রিয় করে তোলে। তখন মূলত বাংলাদেশের লোকজনের কাছে টেলিভিশন একটা বিস্ময়ের নাম। একমাত্র টেলিভিশন বিটিভি। এই সময় যাঁরা অভিনয়ে ভালো করেছেন তাঁরা দর্শকের মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। রওশন জামিলের মতো অনন্য শিল্পপ্রতিভা সহজাতভাবেই দর্শকের মনে স্থায়ী আসন গড়ে নেন।
১৯৬৭ সালে নজরুল ইসলাম পরিচালিত আরব্য রূপকথা অবলম্বনে ‘আলিবাবা চল্লিশ চোর’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ঢাকার চলচ্চিত্রে তাঁর বিচরণ শুরু। ১৯৭০ সালে মুক্তি পাওয়া প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রের দুঃশাসক বড় বোনের চরিত্র তাঁকে সাফল্যের শীর্ষে নিয়ে আসে। ওই চলচ্চিত্রের মূল ভরকেন্দ্র ছিল ‘আপা’ চরিত্রটি। চলচ্চিত্রটিতে একটি পরিবারের কর্তৃত্বপরায়ণ এক নারী চরিত্রের মাধ্যমে পরাধীন বাংলাদেশের অবস্থা, পাকিস্তানি স্বৈরশাসনে পিষ্ট তৎকালীন বাংলাদেশের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। ‘আপা’র চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তৎকালীন রাজনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরা সহজ কাজ ছিল না। সেই কঠিন কাজটি এত নিপুণভাবে করেছেন তিনি যে সারা জীবন বাঙালি জাতি একটি চরিত্রের জন্যই তাঁকে মনে রাখবে। তাছাড়া আমজাদ হোসেনের রচনা ও পরিচালনায় ‘নয়নমনি’, শেখ নিয়ামত আলী ও মসিহউদ্দিন শাকের পরিচালিত ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ (১৯৭৯) চলচ্চিত্রে তার অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা পায়। এই দুই চলচ্চিত্র তাঁকে এনে দেয় শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার ও সম্মান। তাঁর অভিনীত আরো কিছু বিখ্যাত চলচ্চিত্র: গোরি (উর্দু, ১৯৬৮), গীত কাঁহি সঙ্গীত কাঁহি (উর্দু, ১৯৬৯), মনের মতো বউ, ‘ওরা ১১ জন’ (১৯৭২), ‘আবার তোরা মানুষ হ’ (১৯৭৩),‘তিতাস একটি নদীর নাম’ (১৯৭৩), ‘সুজনসখী’ (১৯৭৫), ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ (১৯৭৮), ‘দেবদাস’ (১৯৮২), ‘রামের সুমতি’ (১৯৮৫), ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ (১৯৮৯), ‘শঙ্খনীল কারাগার’ (১৯৯২), ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ (১৯৯৬), ‘চিত্রা নদীর পারে’ (১৯৯৯), ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ (১৯৯৯) এবং ‘লালসালু’ (২০০১) প্রভৃতি। জহির রায়হান ও ঋত্বিক ঘটকের মতো কুশলী চলচ্চিত্রকার থেকে শুরু করে তানভীর মোকাম্মেল ও হুমায়ুন আহমেদের মতো প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতার নির্ভরতা ছিল রওশন জামিলের অভিনয়ের ওপর। অভিনয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না রওশন জামিলের, কিন্তু তাঁর প্রত্যেকটি অভিনয়ই ছিল সুশিক্ষিত অভিনেত্রীর। ধ্রুপদী এই অভিনেত্রীর দৃষ্টান্তমূলক অভিনয়দক্ষতা তাঁকে একটি প্রতিষ্ঠান করে তুলেছিল। প্রত্যেকটি চরিত্রই তাঁর অভিনয়ের গুণে হয়ে উঠত বিশেষ। অভিনয় নিয়ে প্রতিনিয়ত নিরীক্ষা আর আত্মসমালোচনার মধ্য দিয়ে যেতেন তিনি। চরিত্রের মূলভাব বুঝে নিয়ে নিজে ওই চরিত্রের মধ্যে মিশে যেতেন। যে কারণে তাঁর অভিনয়কে কখনোই অভিনয় মনে হত না। অনেক চলচ্চিত্রেই বহুমাত্রিক খলচরিত্রে অভিনয় করতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু বাস্তব জীবনে ব্যক্তি ও শিল্পী হিসেবে তিনি ছিলেন মহৎ হৃদয় ও মননের অধিকারী।
রওশন জামিল সব সময় ছিলেন উদার ও মমতাময়ী। ভালবাসাই দিতে চেয়েছেন সারাজীবন। প্রাণভরে ভালবাসতে চেয়েছেন দেশ ও মানুষকে। পাওয়া না পাওয়ার হিসাব দিয়ে তিনি জীবনকে বিবেচনা করেননি। মুখ দেখে কখনোই বোঝা যেত না তাঁর ভেতরের দহন, দুঃখ ও হাহাকার। যেকোনো পরিস্থিতিকেই সহজভাবে নিতেন তিনি, হাসিখুশি থাকতেন। বিখ্যাত হয়েও তিনি সাধারণ কোনো মানুষের সঙ্গে কাটিয়ে দিতে পারতেন সারা বেলা। নিজ বাড়ির উঠানে গড়ে তুলেছিলেন ফুলবাগান। বাগানের জুঁই, কামিনী, বেলী ও গোলাপের মতোই ছিল তাঁর সন্তানেরা। প্রত্যেককে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন তিনি। পাঁচ সন্তানের জননী রওশন জামিল গার্হস্থ জীবনেও ছিলেন সমান সুদক্ষ। রান্নায় ছিল পাকা হাত। লেখালেখিতেও চমৎকার হাত ছিল তাঁর। চিঠিপত্র, নিবন্ধ, কথাবার্তা এবং সাক্ষাৎকারে তাঁর চিন্তার স্বচ্ছতার পরিচয় মেলে।
রওশন জামিল ২০০২ সালের ১৪ মে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার (এফডিসি) প্রবেশদ্বারে ‘নয়ন সম্মুখে তুমি নাই’ শিরোনামের ফলকে প্রয়াত চলচ্চিত্রকারদের সঙ্গে খোদাই করা আছে রওশন জামিলের নাম। বাংলাদেশের মানুষের স্মৃতির ফলকেও খোদাই হয়ে আছেন আজীবন শিল্পমগ্ন এই প্রতিভাময়ী।
তথ্যসূত্র:
১. রওশন জামিলের সাক্ষাৎকার, বিবিসি বাংলা।
২. রওশন জামিল: সরল জীবনের অকপট শিল্পী, মেহেদি হাসান, বাংলাদেশ প্রতিদিন।
৩. উইকিপিডিয়া, বাংলা ও ইংরেজি।
৪. বাংলাপিডিয়া।
৫. রওশন জামিলের পরিবারের সহযোগিতা।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
রওশন জামিলের জন্ম ঢাকার রোকনপুরে ১৯৩১ সালের ৮ মে। বাবা আব্দুল করিম এবং মা হোসনে আরা বেগম। বড় পরিবারে অনেক ভাইবোনের মধ্যে বেড়ে উঠেছেন তিনি। পরিবারে সঙ্গীত, সংস্কৃতি ও খেলাধূলার আবহ ছিল।
শিক্ষা:
ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে সেন্ট ফ্রান্সিস মিশনারি স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা এবং কামরুননেছা স্কুল থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন। এরপর পড়াশুনা করেন ঢাকার ইডেন কলেজে। মাধ্যমিক পাসের পর ভর্তি হন ঢাকার ওয়ারিতে শিল্পকলা ভবনে। সেখানে নাচের তালিম নেন গওহর জামিলের কাছে।
কর্মজীবন:
নৃত্যে রওশন জামিলের শুরু ১৯৪৮ সাল থেকেই। তখন থেকেই ঢাকার মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করেছেন। রওশন জামিল অভিনয় জীবন শুরু করেন ১৯৬৫ সালে। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নৃত্য ও অভিনয় নিয়ে কর্মব্যস্ত ছিলেন তিনি।
প্রতিষ্ঠান:
১৯৫৯ সালে স্বামী নৃত্যশিল্পী গওহর জামিলের সঙ্গে তিনি গড়ে তোলেন নৃত্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ‘জাগো আর্ট সেন্টার’। ১৯৮০ সালে ২১ সেপ্টেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যুর পর তিনিই এই সংগঠনের দেখাশুনা করতেন।
পারিবারিক জীবন:
ঢাকার ওয়ারী শিল্পকলা ভবনে নাচ শেখার সময় পরিচয় প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী গওহর জামিলের সঙ্গে। ১৯৫২ সালে তাঁরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের ২ ছেলে নাজরে জামিল (রাজ জামিল) ও রানা জামিল এবং ৩ মেয়ে কান্তা জামিল, কঙ্কা জামিল, কাকন জামিল। প্রত্যেকেই সুশিক্ষিত এবং দেশে- বিদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত।
চলচ্চিত্রের তালিকা:
আলিবাবা চল্লিশ চোর (১৯৬৭), গোরী(উর্দু, ১৯৬৮), গীত কাঁহি সঙ্গীত কাঁহি (উর্দু, ১৯৬৯), মনের মত বউ, বউ শাশুড়ি, টাকা আনা পাই (১৯৭০), জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০), দর্পচূর্ণ (১৯৭০), ওরা ১১ জন (১৯৭২), আবার তোরা মানুষ হ (১৯৭৩), তিতাস একটি নদীর নাম (১৯৭৩), সুজন সখী (১৯৭৫), সূর্য গ্রহণ (১৯৭৬), নয়নমনি (১৯৭৬), জননী (১৯৭৭), গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮), বধু বিদায় (১৯৭৮), সূর্য সংগ্রাম (১৯৭৯), সূর্য দীঘল বাড়ী (১৯৭৯), মাটির ঘর, জীবন মৃত্যু, নদের চাঁদ, মাটির কোলে, বাঁধনহারা (১৯৮১), মহানগর (১৯৮১), দেবদাস (১৯৮২), লাল কাজল (১৯৮২), আশার আলো (১৯৮২), পেনশন (১৯৮৪), রামের সুমতি (১৯৮৫), দহন (১৯৮৫), মিস ললিতা (১৯৮৫), বেদের মেয়ে জোসনা (১৯৮৯), স্ত্রীর পাওনা (১৯৯১), শঙ্খনীল কারাগার (১৯৯২), অবুঝ সন্তান (১৯৯৩), পোকা মাকড়ের ঘর বসতি (১৯৯৬), চিত্রা নদীর পারে (১৯৯৯), শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯), লালসালু (২০০১), একটি নদীর নাম (২০০২), আগামী (স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র), প্রভৃতি। নাটক: রক্ত দিয়ে লেখা, ঢাকায় থাকি, সকাল সন্ধ্যা।
পুরস্কার ও সম্মাননা: ১৯৯৫ একুশে পদক (নৃত্যে), ১৯৭৬ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ‘নয়নমনি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য, ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’তে (১৯৭৯) অভিনয়ের জন্যও পরে আবার এই পুরস্কার লাভ করেন তিনি।
মৃত্যু:
রওশন জামিল ২০০২ সালের ১৪ মে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
লেখক: ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদ