মেয়েরা তখনও অবরোধবাসিনী। বেগম রোকেয়া (১৮৮০-১৯৩২) ইন্তেকাল করেছেন দুই দশক পূর্বে। ধর্মীয় দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে জন্ম নেয়া মুসলিম প্রধান দেশ পাকিস্তানে ওই সময়ে মানুষ নানা রকমের কুসংস্কারে যখন আচ্ছন্ন, তখন তিনি নিজেকে জড়িয়েছেন নাচের সঙ্গে। প্রতিকুল পরিবেশের বিরুদ্ধে রীতিমত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে তিনি নাচকে সঙ্গী করেছেন, ভালবেসেছেন। এবং অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় পার করে এসেও সেই ভালবাসায় বিন্দুমাত্র চিড় ধরেনি। বরং দিন যত এগোচ্ছে নাচের প্রতি ভালবাসা আরও প্রগাঢ় হচ্ছে। পঞ্চাশ পেরনো বয়সেও তিনি সময়পঞ্জির বেশিরভাগ সময় ব্যয় করছেন নাচকে নিয়ে আর স্বপ্ন দেখছেন এই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। এই শিল্পের উত্কর্ষ সাধনে আরও কি করা যায় এই ভাবনা প্রবীণ এই নৃত্যশিল্পীকে তাড়া করে ফেরে প্রতিনিয়ত। তিনি বাংলাদেশের পথিকৃত স্থানীয় নৃত্যশিল্পীদের অন্যতম রাহিজা খানম ঝুনু।
জন্ম ও শৈশব কথা
“১৯৪৩ সালের ২১ জুন সকাল ১০টায় এদেশের শিক্ষিত, সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে আমি জন্মগ্রহণ করি। পিতা মরহুম আবু মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ খান, মাতা মরহুমা সফুরুন নেছা।’ এভাবেই পৃথিবীর আলোয় জন্ম নেয়া সন তারিখের কথা বললেন রাহিজা খানম ঝুনু। তিনি আরও জানান, ‘আমার বাবা আবু মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ খান ছিলেন পুলিশ অফিসার, তাঁর পৈত্রিক ভিটা অর্থাত্ আমার দাদাবাড়ি ছিল মানিকগঞ্জের পারল নওদা গ্রামে। কোনদিন যাওয়া-আসা ছিল না গ্রামের বাড়িতে। তবে বাবার কাছে জেনেছি, আমাদের পরিবার গোড়া থেকেই গান-বাজনা, কবিতা-আবৃত্তির চর্চা করতো। কিন্তু সাংস্কৃতিক চর্চা বাবার পক্ষে সম্ভব হয়নি, কেননা উনি ছিলেন পুলিশ বিভাগে কর্মরত, কর্মজীবনে উনি ব্যস্ত সময় কাটাতেন। তাঁর ছেলেমেয়ে সংস্কৃতিমনস্ক হোক এটা তিনি সব সময় চাইতেন। জন্মের পরের বছর ১৯৪৪ সালে বড় বোন মিনি, লিনি ও অন্য বোনেরা গান চর্চা করতে বসলেই টের পেয়ে কান পেতে শুনতাম সেই এক বছর বয়স থেকেই। একথা অবশ্য আমার মা ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজন বলাবলি করতেন, গানের তাল শুনে বিছানায় তালে তালে হাত পা নাড়াচাড়া করতাম। ২/৩ বছর বয়স থেকে বোনদের সঙ্গে গানের আসরে নিয়মিত অংশ নেই। এই পারিবারিক পরিবেশে গানের সাথে গড়ে ওঠে আমার সম্পৃক্ততা।’
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হওয়ার কারণে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে অনেক শিল্পী ভারতে চলে যায়। ফলে এখানকার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দেখা দেয় শূন্যতা। যা কোনভাবেই পূরণীয় ছিল না। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এই শূন্যতা নৃত্যশিল্পেও দেখা দেয়। সে সময়ের শৈশব স্মৃতিচারণ করে রাহিজা খানম ঝুনু বলেন – ‘আমি সেসময় মাত্র ৫ বছর বয়সে বাড়িতে নিজে নিজেই নাচতাম। কলের গান বাজিয়ে বাড়ির উঠোনে কোমরে কাপড় বেঁধে চলতো সে নাচ। কোন কোন সময় বাবা খুশী হয়ে নূপুর বা ঘুংঘুরের পরিবর্তে চাবির গোছা পায়ে বেধে দিতেন। তবে নূপুরের মতো শব্দ নয়, নাচের তালে তালে চাবির গোছার শব্দ বেশ ভালই লাগতো।’ পারিবারিক পরিবেশে নিজ বাড়িতে ছোট্ট ঝুনু যখন খেলাচ্ছলে নাচ নিয়ে চালাচ্ছে এই অনুশীলন, তখন এই ভুখণ্ডের নৃত্যভুবনে ঘটে সবচেয়ে বড় ঘটনা।
বয়স যখন পাঁচের কোঠায় তখন পরিবারের সবাই বুঝলেন এবার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করতে হবে। স্কুলে যাবার বয়সে সবচেয়ে সঠিক কাজটি করলেন বাবা, তিনি চাইলেন, মেয়েকে এমন একটি স্কুলে ভর্তি করতে যেখানে লেখাপড়ার পাশাপাশি নাচ, গানের উত্সাহটা ঠিকমতো পাওয়া যায়। খোঁজ চলল ঢাকা শহরের অনেক স্কুলে, অবশেষে ভর্তি করানো হল গেন্ডারিয়া বালিকা বিদ্যালয়ে যা বর্তমানে মনিজা রহমান গার্লস স্কুল। এই স্কুলের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল প্রতি বছর পড়ালেখার পাশাপাশি স্কুলের ছাত্রীদের নিয়ে সংগীত, নৃত্য ও নাট্য উত্সবের আয়োজন করতেন প্রধান শিক্ষিকা বাসন্তী গুহ ঠাকুরতা।
শিক্ষাজীবন ও ঘুমন্ত রাজকন্যার রাখাল
গেন্ডারিয়া স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে রাহিজা খানম ঝুনু নারায়ণগঞ্জের একটি স্কুলে ওয়ানে ভর্তি হন এবং টু পর্যন্ত পড়েন (এখন আর সেই স্কুলের নাম তাঁর মনে নেই)। ১৯৫০ সালে বাবা তখন ছিলেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ ইন্সপেক্টর। ১৯৫২ সালে বদলী হয়ে আসেন ঢাকার মিলব্যারাক থানায় এবং থাকতেন ফরিদাবাদ। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় বদলি হয়ে আসার সুবাদে ঝুনুর নাচের ভাগ্য প্রসারিত হয়। বাবা খুঁজে বের করেন গেন্ডারিয়া গার্লস হাইস্কুল। এই স্কুলেই তিনি ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েছেন।
১৯৫৫ সাল। ঝুনু তখন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। প্রধান শিক্ষিকা বাসন্তী গুহ ঠাকুরতা মনস্থ করলেন ছাত্রীদের নিয়ে একটি নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করার। নৃত্যনাট্যের নাম ছিল রূপকথা ভিত্তিক ‘ঘুমন্ত রাজকন্যা’। ঝুনু বলেনঃ ঘুমন্ত রাজকন্যার বিভিন্ন চরিত্রের জন্য মেয়েদের বাছাই করা হলো। কিন্তু বিপত্তি দেখা দিলো একটি পুরুষ চরিত্র নিয়ে। মেয়ে হয়ে পুরুষ চরিত্রে নৃত্য করতে সবাই নারাজ। নৃত্যনাট্যের পুরুষ চরিত্রে অভিনয় করবো বলে আমি সাহস করে প্রধান শিক্ষিকাকে জানাই। উনি আমাকে সাদরে উক্ত পুরুষ চরিত্রের জন্য মনোনীত করলেন। পুরুষ চরিত্রটি ছিল রাখালের। তত্কালীন সদ্য প্রতিষ্ঠিত বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষক শ্রী অজিত স্যান্নালকে নৃত্যনাট্য পরিচালনার দায়িত্বভার অর্পন করা হয়। দীর্ঘদিন মহড়ার পর নৃত্যনাট্যটির সফল মঞ্চায়ন হলো। এই পুরুষ চরিত্রটি রাহিজা খানম ঝুনুর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল। রাখাল দিয়ে তিনি সবার মন জয় করলেন। ঘুমন্ত রাজকন্যা পছন্দ করল সবাই। তার চেয়েও বেশি পছন্দ করল রাখাল চরিত্রটি। এ ব্যাপারে রাহিজা খানম ঝুনু জানান, “নৃত্যনাট্যে আমার নৃত্যশৈলী দেখে পরিচালক অজিত স্যান্নাল আমাকে নাচ শেখাতে আগ্রহ দেখালেন। বাবাকে বললেন, বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে আমাকে ভর্তি করিয়ে দেয়ার জন্য। এও জানালেন, ‘ওর জন্য নাচের কোন টাকা পয়সা লাগবে না। সম্পূর্ণ বিনা বেতনে ওকে আমি নাচ শেখাবো।'” ওই বছর আর বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে ভর্তি হওয়া হয়নি। ভর্তি হলেন পরের বছর ১৯৫৬ সালে।
বুলবুল ললিতকলা একাডেমী পর্ব
উপমহাদেশের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরীর মৃত্যুর পর ঢাকার ৭ নম্বর ওয়াইজঘাটের ওয়াইজ হাউসে ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বুলবুল ললিতকলা একাডেমী (Bulbul academy of Fine Arts সংক্ষেপেBAFA )। বুলবুল চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু মাহমুদ নুরুল হুদা ছিলেন এর মূল উদ্যোক্তা। বুলবুল চৌধুরীর স্ত্রী নৃত্যশিল্পী আফরোজা বুলবুল নিযুক্ত হন এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। ১৯৫৫ সালের ১৭ মে বুলবুল চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী দিবসে কার্যক্রম শুরু করে এই একাডেমী। ১ জুলাই ১৯৫৫ সালে হয় প্রথম ক্লাস। ১৯৫৬ সালে ঝুনু নৃত্য শাখায় ভর্তি হন এই একাডেমীতে। সেই অর্থে একাডেমীর একেবারে গোড়ার দিকের ছাত্রী তিনি। বুলবুল একাডেমীতে নাম লিখিয়েছিলেন তাঁর অন্য ভাইবোনরাও। ঝুনু বলেন, ‘ভাই মোজাম্মেল হোসেনকে সেতারে, সবচেয়ে ছোট বোন নীনা হামিদকে ধ্রুপদী সংগীতে এবং আমার আরেক বোন রুনুকে রবীন্দ্র সংগীত বিষয়ে ভর্তি করা হয়। সেসময় নৃত্যকলা বিভাগে বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে নৃত্যশিল্পী অমিত স্যান্নাল, সেতারে ওস্তাদ খাদেম হোসেন খান, রবীন্দ্র সংগীতে নিখিল দেব, আধুনিক গানে আব্দুল লতিফ, নজরুল সংগীতে বেদারউদ্দীন আহমদ, ধ্রুপদী সংগীতে বিমল বাবু শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। সে সময় মেয়েদের গান কিংবা নৃত্যচর্চা করা বেশ কঠিন ছিল। বুলবুল একাডেমীতে বসার জন্য চটেরও টানাটানি ছিল। বাবা অবসর নিলে আমরা শান্তিনগরে নিজেদের বাড়ীতে চলে যাইর আমাদের পাশাপাশি থাকতেন পূর্ববঙ্গের এক সময়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী। উনার স্ত্রী আনোয়ারা বাহার চৌধুরী ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত এবং ভীষণ সংস্কৃতিমনা। আমরা সব ভাই বোন আর উনার ছেলেমেয়ে সেলিনা বাহার জামান, ইকবাল বাহার চৌধুরীসহ সবাই এক সঙ্গে শান্তিনগর থেকে টাউন সার্ভিসে ওয়াইজঘাটে বাফায় ক্লাস করতে যেতাম।’
প্রকাশনা
১. নৃত্যশিল্প
প্রকাশক : বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী
প্রকাশকাল : জুন ১৯৭৯
২. নৃত্যের রূপরেখা
প্রকাশক : আনন্দ প্রকাশন
প্রকাশকাল : ১৯৯৪
চৌএনলাই এর পূর্ব পাকিস্তান সফর
চীনের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী চৌএনলাই ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান সফরে এসেছিলেন। সেদিনের স্মৃতিচারণ করে ঝুনু বলেন, ‘তখন জিন্নাহ এভিনিউয়ে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ) সদ্য গুলিস্তান সিনেমা হল হয়েছে। এ সিনেমা হলের মঞ্চেই চৌএনলাইয়ের জন্য বিশাল সংবর্ধনার আয়োজন করে পাক-চীন মৈত্রী সমিতি। এই অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পড়ে বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর ওপর। ‘চিরকালের বন্ধুত্ব’ নামে একটি নৃত্যনাট্য সেই অনুষ্ঠানে বাফার শিল্পীরা মঞ্চস্থ করে।’ ‘ঘুমন্ত রাজকন্যার রাখাল’-এর পর ‘চিরকালের বন্ধুত্ব’ নৃত্যনাট্যে অংশগ্রহণ করে ঝুনু দারুণ সাড়া ফেলে দেন এবং জাতীয় পর্যায়ে নাম ডাক ছড়িয়ে পড়ে।
‘চিরকালের বন্ধুত্ব’ নৃত্যনাট্যের সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন ভক্তিময় দাশগুপ্ত। আবহসংগীতে ছিলেন খাদেম হোসেন খান এবং নৃত্যনাট্য পরিচালনায় ছিলেন অজিত স্যান্নাল।
খুলে যায় সফলতার দ্বার
‘চিরকালের বন্ধুত্বের’ পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ঝুনুকে। বরং প্রতিবছর নতুন প্রযোজনায় নতুন মাত্রা যোগ হতে থাকে তাঁর খ্যাতির পালকে। ১৯৫৭ সালে মঞ্চস্থ হয় আর একটি উল্লেখযোগ্য সাড়া জাগানো নৃত্যনাট্য রবীন্দ্রনাথের ‘চণ্ডালিকা’। বাফার আয়োজনে জানুয়ারি মাসে মঞ্চস্থ হয় চণ্ডালিকা। ভক্তিময় দাশগুপ্ত পরিচালিত এই নৃত্যনাট্যে ঝুনুর চরিত্র ছিল চুড়িওয়ালার।
এ ব্যাপারে রাহিজা খানম ঝুনু জানান, ওই নৃত্যনাট্যে চণ্ডাল কন্যা প্রকৃতি সেজেছিলেন অঞ্জলি আর মা সেজেছিলেন মেহের আহমেদ, বৌদ্ধভিক্ষু আনন্দ হয়েছিলেন মন্দিরা নন্দী। আর দুধওয়ালার ভূমিকায় রূপ দেন শাহিদা আলতামাস। পরের বছর ১৯৫৮ সাল ঝুনুর জন্য কিছুটা দুঃখের, যদিও সেটাই তাঁর নৃত্যশৈলীতে কোনরূপ প্রভাব ফেলতে পারেনি। যার জন্য ঝুনু নৃত্যে আগ্রহী হয়েছিলেন সেই অজিত স্যান্নালও ১৯৫৮ সালে চলে যান ভারতে। ভারত থেকে ঢাকায় আসেন বোম্বে লিটল ব্যালে ট্রুপের জিএ মান্নান। তিনি নৃত্যশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে। যোগ দিয়েই তিনি পরিকল্পনা করেন কবি জসীম উদ্দীনের বিখ্যাত কাব্য উপন্যাস ‘নকশী কাঁথার মাঠ’-কে নৃত্যনাট্য হিসেবে মঞ্চস্থ করার। ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ নৃত্যনাট্যের গ্রন্থণা ও মূল পরিকল্পনায় ছিলেন কেএম মুজতবা (ময়না ভাই), সংগীত পরিচালনা করেন খাদেম হোসেন খান, এ নৃত্যনাট্যের কেন্দ্রীয় দুই চরিত্র রূপাই এ রূপ দেন জিএম মান্নান আর সাজু চরিত্রে নৃত্যাভিনয় করেন রাহিজা খানম ঝুনু। কন্ঠ সঙ্গীতে ছিলেন বেদার উদ্দিন আহমেদ ও নীনা হামিদ। তাঁর ভাষায় অবিস্মরণীয় এক মঞ্চায়ন ছিল সেটি। তিনি জানান, উদ্বোধনী দিনে স্বয়ং কবি জসীম উদ্দীন ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিশনের মেঝেতে বসে প্রত্যক্ষ করেন তার সৃষ্ট রুপাই ও সাজুকে। ঝুনুর মতে, “‘চিরকালের বন্ধুত্ব’ যেমন আমাকে জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত করে তোলে, তেমনি সাজু চরিত্রে নৃত্যাভিনয়ের মধ্যদিয়ে আমার নৃত্যখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে দেশের বাইরেও।” এ ব্যাপরে তিনি বলেন: “‘নকশী কাঁথার মাঠ’ নৃত্যনাট্যে জিএম মান্নানের সঙ্গে আমি ৩২৫টি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করি। নকশী কাঁথার মাঠ এখানকার মেয়েদের নাচের প্রতি আগ্রহীও করে তোলে। এ সময় ঢাকায় নৃত্যচর্চায় অনেক পরিবার থেকে ছেলেমেয়েরা এসে যোগ দিতে শুরু করে। নৃত্যচর্চা সামাজিক আন্দোলনে রূপ নেয় নকশী কাঁথার মাঠ নৃত্যনাট্যের মধ্য দিয়ে।” এ নৃত্যনাট্যের শিল্প উপদেষ্টা ছিলেন পটুয়া কামরুল হাসান, প্রতিটি পর্বকে উপভোগ্য করার ক্ষেত্রে কামরুল হাসানের অনেক অবদান ছিল। ৬০ দশকের শুরুতে তত্কালীন সরকার ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ নৃত্যনাট্যটি পরিবেশনের জন্য সরকারী খরচে ইরাক ও ইরানে প্রেরণ করেন। ইরানের রাষ্ট্রপ্রধান শাহ পাহলবী ও তাঁর পত্নী ফারাহ দীবা নকশী কাঁথার মাঠ নৃত্যনাট্য উপভোগ করেন এবং ঝুনুকে ‘ব্যালেরিনা’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ইতোমধ্যে তিনি অংশগ্রহণ করেন ‘মহুয়া’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘কাশ্মীর’, ‘হাজার তারের বীণা’, ‘নবান্ন’, ‘চন্ডালিকা’, ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘অরুণাচলের পথে’, ‘মায়ার খেলা’ প্রভৃতি নৃত্যনাট্যে। নাচের টানে পৃথিবীর অনেক দেশেই গেছেন রাহিজা খানম ঝুনু। প্রশংসাও কুড়িয়েছেন।
শিক্ষাজীবন
পঞ্চম শ্রেণীতে যে মেয়ে সাহস করে ঘুমন্ত রাজকন্যার রাখাল হতে পারে, সে যে অনেক দূর যাবে তা ছোট্ট ঝুনুকে দেখেই সবাই টের পেয়েছিল। নাচ নিয়ে মগ্ন থাকার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাঁর খুব বেশি দূর এগোয়নি। ১৯৬০ সালে রাহিজা খানম ঝুনু সিদ্ধেশ্বরী বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন। বুলবুল ললিতকলা একাডেমী থেকে ১৯৬১ সালে পাঁচ বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট কোর্সে উত্তীর্ণ হন। এবং শ্রেষ্ঠ নৃত্যশিল্পী হিসেবে স্বর্ণপদক লাভ করেন। ওই বছরই তিনি বাফায় নৃত্যকলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর অধ্যক্ষ ও নৃত্যকলা বিভাগের প্রধান হিসেবে শিক্ষকতায় নিয়োজিত আছেন। বিভিন্ন সময়ে জাতীয় নৃত্য প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি।
টেলিভিশনের অভিজ্ঞতা
ঝুনুর ভাষায় – ‘১৯৬৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর এ দেশে অভূতপূর্ব একটি ঘটনা ঘটে। এই দিনে দেশে প্রথম বারের মতো টেলিভিশন সম্প্রচার চালু হয়। টেলিভিশন প্রতিষ্ঠার প্রথম থেকেই আমি নিয়মিত নৃত্যশিল্পী ও পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি। তখন টেলিভিশনে সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচার হতো। ১৯৬৭ সালে টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে নৃত্য করতে গিয়ে মজার একটি ঘটনা ঘটে। নাচের ফাকে খুলে পড়ে আমার মাথার বেণী। সেটা পা দিয়ে সরিয়ে দেই। তখন টেলিভিশনের সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচারে ত্রুটি ঘটলে তা সম্পাদনের সুযোগ ছিল না। টিভি পর্দায় সেদিন অনাকাঙ্খিত এ মজার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন অসংখ্য দর্শক। এরপর থেকে বাইরে কোথাও আমাকে দেখলেই লোকজন মনে করিয়ে দিতে ভুলত না সে ঘটনা। ১৯৬৮ সালে টেলিভিশনের প্রযোজনায় শিল্পী নিজামুল হক ও আমার পরিচালনায় প্রচারিত হয় নৃত্যনাট্য ‘অরুণাচলের পথে’। এ নৃত্যনাট্যটি ব্যাপক সাড়া ফেলে। সে সময় টেলিভিশন ছিল অত্যন্ত নবীন এবং আশ্চর্য একটি প্রচার মাধ্যম। যদিও খুব কম মানুষের টিভি ছিল। তারপরও শিল্পী হিসেবে পরিচিত হওয়ার ক্ষেত্রে টেলিভিশনের কোন জুড়ি ছিল না।।
শেখার কোন শেষ নেই
নৃত্যচর্চা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নৃত্যচর্চা ও অনুশীলনের পেছনে অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় ব্যয় করার পরও আমার অনুভূতি শিল্পসাধনার ক্ষেত্রে এক জীবন যথেষ্ট নয়। আমি তো প্রায় ৫৬ বছর নৃত্যচর্চা করছি এবং আজও করে যাচ্ছি। তবুও বারবার আমার মনে হয় বহু কিছু আজও শেখা হয়নি। আমাদের সময়ে হুট করে কেউ শিল্পী হতে পারত না। শিল্পী হতে হলে তাকে বহু কাঠখড় পোড়াতে হতো। নিয়মিত ১০-১২ ঘন্টা অনুশীলন ধরা বাধা নিয়ম ছিল। আর আজকের ছেলেমেয়েদের দেখি রাতারাতি শিল্পী হয়ে ওঠে। তারা শিখতে বেশি সময় ব্যয় করে না। তাদের মা-বাবাও চান তাদের সন্তান যেন তাড়াতাড়ি সবার কাছে পরিচিত হতে পারে। সন্তান পরিচিত হলে অভিভাবকদের পরিচিতি বেড়ে যায় সমাজে। কিন্তু এসব শিল্পী বেশি দিন টেকে না। আমি মনে করি বড় শিল্পী হতে হলে আগে বড় কর্মী হতে হয়।’
কৃতি শিক্ষক
নিজের কর্মজীবন সম্পর্কে ঝুনু বলেন, “১৯৭৫ সালে সফরকারী চীনের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা ছাড়াও এদেশে সকল রাষ্ট্রীয় অনুষ্টানে নৃত্য পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি।’ সকল প্রকার সামাজিক প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে মহিলা নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং নৃত্যচর্চায়, নৃত্য শিক্ষায় অন্যান্য মহিলাদের উত্সাহ প্রদান এবং দীর্ঘদিনের শিক্ষকতা জীবনে সযত্নে অসংখ্য শিল্পী তৈরিতে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। নৃত্যশিক্ষয়ত্রী হিসেবে তাঁর সরাসরি তত্ত্বাবধানে আজ বাংলাদেশের যে সমস্ত নৃত্যশিল্পী প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য – কাজল ইব্রাহিম, সাইদা রহমান, লুবনা মরিয়ম, রেশমা শারমিন, হুমায়ুন কবীর, নিলী রহমান, জিনাত বরকতউল্লাহ, শামীম আরা নীপা, রীতা শবনম, মিনু বিল্লাহ, আমির হোসেন বাবু, ডলি ইকবাল, সোহেল রহমান, কবিরুল ইসলাম রতন, সাজু আহমেদ, নিলুফার ওয়াহিদ পাপড়ি, মনি, স্বপন, তারানা হালিম, ইমদাদুল হক, ফারহানা চৌধুরী বেবী, ফারজানা রিয়া চৌধুরী, আবুল হাসান ভুইয়া স্বপন, শহিদুল ইসলাম বাবু, আ. মতিন, ইলিয়াস হায়দার, সেলিনা হক, সাদিয়া ইসলাম মৌ, মেহবুবা শাহনূর চাদনী, তারিন, মোঃ শাহজাহান প্রমুখ নৃত্যশিল্পী।
ড. এনামুল হক রচিত সূর্যমুখী নদী, উত্তরণের দেশে, হাজার তারের বীণা, নৃত্যনাট্য পরিচালনা ও অংশগ্রহণ করেছি। বাংলাদেশে সংস্কৃতি রক্ষার জন্য আত্মদানকরী শহীদ তাত্পর্যবাহী ‘একুশে ফেব্রুয়ারী’র ওপর ভিত্তি করে রচিত নৃত্যনাট্য উত্তরণের দেশে, মহাজন মুক্তিযুদ্ধের ওপর রচিত গীতি নৃত্যনাট্য ‘সূর্যমুখী নদী’ এবং শিল্পকলা একাডেমীর প্রযোজনায় ‘ দি ম্যালডি’ নৃত্যনাট্যের সার্থক পরিচালনা করি।
অতিথি পরিচালক হিসেবে জাপান ও কোরিয়া সফর করি। নৃত্যনাট্যটি জাপানে প্রদর্শনের পর খুব সুনাম অর্জন করি। শিশুদের জীবনভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ নৃত্যনাট্য ‘দেখব এবার জগত্টাকে’ পরিচালনা করি। চা বাগান নৃত্য, ঝংকার, সোনালী আঁশ, সুর ও ছন্দ, জলকে চল, সৃজন ছন্দে, নাও ছাড়িয়া দে, পাখা নৃত্য ও ঝুমুর নৃত্য ছাড়াও টেলিভিশন ও মঞ্চ অনুষ্ঠানে অসংখ্য নৃত্য সৃষ্টি ও পরিচালনার দায়িত্ব পালন করি। নৃত্যশিল্পের ইতিহাস ও আংশিক বিষয়ে এদেশের প্রথম ও একমাত্র বই ‘নৃত্যশিল্প’ রচনা করি। বইটি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী প্রকাশ করে। তারপর দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘নৃত্যের রূপরেখা’ বুলবুল ললিতকলা একাডেমীসহ বাংলাদেশের সকল সাংস্কৃতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমাদৃত হয়েছে। এছাড়া নৃত্যের ওপর বিভিন্ন পত্রিকায় বহু সাক্ষাত্কার ও পরামর্শমূলক বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে।”
পারিবারিক জীবন
‘শিল্পী হিসেবে আমি যতখানি সফল, তেমনি পারিবারিক জীবনেও সমানভাবে সফলতা অর্জন করেছি। বলতে দ্বিধা নেই স্বামী আমান উল্লাহ চৌধুরীর সার্বিক সহায়তায় নৃত্যাঙ্গনে আমার বিচরণকে আরো বেগবান করেছে।’ – পরিবারের কথা বলতে গিয়ে ঝুনু একথা বলেন। ১৯৬৬ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারী ময়মনসিংহের ভালুকা নিবাসী আমান উল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে বিয়ে হয়। তিনি তিন বার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ঝুনু আরো বলেন, ‘একদিন মুসলিম সমাজে নাচ শিখতে এসেছিলাম আমি। বাবা-মা ছিলেন প্রধান প্রেরণা। মা সফুরুন্নেসা খানম কত রাত জেগে পথ চেয়ে আমাদের জন্য বসে থেকেছেন। তারপর আমরা বাড়িতে ফিরেছি, তিনি যত্ন করে খাওয়া দাওয়া করিয়েছেন, পড়াশুনার প্রতি যত্ন নিয়েছেন। আর আমি যখন মা তখন বুঝি, একটি সন্তান মানুষ করা কত কঠিন কাজ। আমার দুই মেয়ে লোপা ও বেবী। দুজনই নৃত্যশিল্পী। কিন্তু ১৯৯০ সালে হঠাত্ লোপা মারা যায়। এই দুঃখ আজও বয়ে বেড়াচ্ছি। দুই ছেলে আহসান ও আকরাম। আমি সবসময় বিশ্বাস করি একজন শিল্পী বানানোর জন্য পরিবারের সবচেয়ে বেশি মায়ের ভূমিকা থাকে।’
সাংগঠনিক অবদান
বাংলাদেশের নৃত্যকলার উন্নয়ন, প্রচার ও প্রসারের লক্ষে গওহর জামিল, জিএ মান্নান, আলতামাস আহমেদসহ বেশ কজন নৃত্যশিল্পীর উদ্যোগে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। রাহিজা খানম ঝুনু বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতির পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
স্বপ্নগুলো নৃত্যের
নিজের স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে রাহিজা খানম বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি স্বতন্ত্র নৃত্য ইনস্টিটিউট গড়ে উঠবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নৃত্যকলা নিয়ে উচ্চতর গবেষণা হবে। এরকম চমত্কার একটি স্বপ্ন সব সময়ই দেখি। আমাদের দেশে বহু ছেলেমেয়ে আজ পার্শবর্তী দেশ থেকে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে আসছে। তার নৃত্যে ভাল কাজ করছে। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় আমাদের জাতীয় কোন নৃত্য নেই। আজও বাংলাদেশের নৃত্যচর্চাকে কিছু মানুষ ভাল চোখে দেখে না। তাদের কারণে আমাদের দেশে সবার মনে নাচ সম্পর্কে ধারণা ইতিবাচক নয়। এই চিন্তা আমাকে বড় পীড়িত করে। তারপরও থেমে নেই এদেশের নৃত্যচর্চা। এর জন্য কিছু গুণী নৃত্যশিল্পীর কৃতিত্ব সবচেয়ে বেশি। যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাদের নৃত্যচর্চা সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে চলছে, আমি তাদেরই একজন।’ ২০০৩ সালে বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে নৃত্যশিল্পী সংস্থা জাতীয় নৃত্য উত্সব পালন করে। ওই সময় সংস্থার পক্ষ থেকে সভাপতি রাহিজা খানম ঝুনু এবং সাধারণ সম্পাদক সাজু আহমেদ সরকারের কাছে দাবি জানান, নৃত্যকলাকে যেন পাঠ্যসূচিতে অন্তভুক্ত করা হয়। শিক্ষাক্রম থেকে নৃত্যকলা যেন বিচ্ছিন্ন না হয়ে পড়ে এ জন্য রাহিজা খানম কাজ করে যাচ্ছেন। দেশে অন্যান্য শিল্প মাধ্যমের মতো নৃত্যকলাকে যথার্থ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার আরো ছয়টি শাখা গঠন করেছেন তিনি। দেশের ছয়টি বিভাগে এর কার্যক্রম পরিচালনা হয়। এর কার্যক্রমের মধ্যে আছে শিল্পীদের সংবর্ধিত করে সম্মাননা জানানো, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, নবীনদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও বৃত্তি প্রদান। তিনি আরো বলেন, ‘আজীবন দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য, একটি শিল্পমাধ্যমের প্রসারের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছি। একদিন আমরা সফল হবো।’
পুরস্কার ও সম্মননা
রাহিজা খানম ঝুনু তাঁর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। এগুলোর মধ্যে থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু পুরস্কারের তালিকা নিচে দেওয়া –
১. কথাকলি সংগীত বিদ্যালয় কর্তৃক পুরস্কার – ১৯৮৮
২. বুলবুল ললিতকলা একাডেমী সংবর্ধনা – ১৯৯১
৩. ঢাকা আর্ট ফোরাম পুরস্কার – ১৯৯১
৪. ঝংকার ললিতকলা একাডেমী পুরস্কার – ১৯৯২
৫. বেনুকা ললিতকলা একাডেমী পুরস্কার (গুণীজন সংবর্ধনা) – ১৯৯২
৬. নৃত্যাঙ্গন ললিতকলা কেন্দ্র কর্তৃক পুরস্কার – ১৯৯৮
৭. শিল্পকলা একাডেমী কর্তৃক গুণীজন সংবর্ধনা – ১৯৯৯
৮. রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সংস্থা কর্তৃক শ্রদ্ধাঞ্জলি – ২০০০
৯. মানিকগঞ্জ সাহিত্য ও সাংবাদিক পরিষদ কর্তৃক বেগম লুত্ফন নেছা শিশু সনদ- ২০০০
১০. বুলবুল চৌধুরী স্মৃতি পদক- ২০০৩
১১. রুমঝুম নৃত্যকলা একাডেমী ফরিদপুর কর্তৃক শুভেচ্ছা স্মারক – ২০০৩
১২. জেনেসিস নজরুল সম্মাননা পদক – ২০০৩
১৩. মানিকগঞ্জ শিশু ফোরাম সম্মাননা – ২০০৫
১৪. বুলবুল ললিতকলা একাডেমী- রবীন্দ্র সঙ্গীতে প্রথম পুরস্কার
১৫. তারকালোক কর্তৃক সম্মননা।
১৬. বি.সি.এস. লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড- ২০০৬
১৭. নৃত্যধারা ললিতকলা একাডেমী পুরস্কার
১৮. বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, খুলনা কর্তৃক স্মারক উপহার
১৯. সাপ্তাহিক বিচিত্র সংবাদ সংবর্ধনা – গুণীজন সংবর্ধনা
২০. ক্রিয়েটিভ কালচারাল একাডেমী, বগুড়া কর্তৃক সম্মননা
২১. ঢাকা কালচারাল রিপোর্টাস ইউনিটি কর্তৃক নৃত্য বিভাগে আজীবন সম্মাননা, ডিসিআরইউ শোবিজ অ্যাওয়ার্ড – ২০০৬।
মৃত্যু-২৬ নভেম্বর, ২০১৭ (বয়স ৭৪) সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
লেখক : কাজল রশীদ শাহীন