বাংলাদেশের বিখ্যাত যাত্রানট ও নির্দেশক। তিনি ১৯২৫ সালে রেঙ্গুনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছোট কুমিরা, মসজিদ্দা, চট্টগ্রাম।
অমলেন্দু বাল্যকালেই নাটকের প্রতি আগ্রহী হন। এ কারণে তাঁর ভাগ্যে যথেষ্ট পারিবারিক নিগ্রহ জোটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মিত্রবাহিনীতে এবং যুদ্ধশেষে চট্টগ্রামে রেলের চাকুরিতে যোগ দেন। চাকুরি জীবনের পাশাপাশি নাটকে অভিনয় এবং গণসঙ্গীত চর্চা অব্যাহত রাখেন। ১৯৫০-এর দশকের সূচনায় তিনি তাঁর কয়েক জন সতীর্থের উদ্যোগে ‘বাবুল থিয়েটার’ নামে একটি নাট্যদল গড়ে তোলেন। ১৯৫৪ সাল নাগাদ এই দলটিই ‘বাবুল অপেরা’য় পরিণত হয়।
এরপর অমলেন্দু বিশ্বাস রেলের চাকুরি ছেড়ে দিয়ে মুক্ত মঞ্চকেই তাঁর শিল্পীজীবনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেন। গ্রামবাংলার চিরায়ত লোকনাট্যমাধ্যম যাত্রাশিল্পের বিকাশ সাধনই তাঁর একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান হয়ে ওঠে। তাঁর একান্ত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টাতেই এক দিন ‘বাবুল অপেরা’ জননন্দিত যাত্রাদলে পরিণত হয়।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অমলেন্দু বিশ্বাস ‘চারণিক যাত্রাসমাজ’ নামে একটি যাত্রাদলের গোড়াপত্তন করেন। পরে এর নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘চারণিক নাট্যগোষ্ঠী’। দীর্ঘ সাতাশ বছর ধরে তিনি পেশাদার যাত্রামঞ্চকে নিজের প্রতিভাগুণে সমৃদ্ধ করতে থাকেন। সামগ্রিকভাবে যাত্রাশিল্প ও শিল্পীদের মর্যাদা রক্ষার ক্ষেত্রেও তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে।
অমলেন্দু বিশ্বাস অসংখ্য পৌরাণিক, ঐতিহাসিক ও সামাজিক পালার বিভিন্ন ধরনের চরিত্র রূপারোপে ও সেসবের নির্দেশনায় নিজেকে যেমন অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিশালী যাত্রাভিনেতা ও নির্দেশক হিসেবে প্রতিপন্ন করেন, তেমনি যাত্রাশিল্পে জীবনঘনিষ্ঠ পালা মঞ্চায়নেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭৮-৭৯ সালে তাঁর অভিনীত ও নির্দেশিত যাত্রাপালা ‘মাইকেল মধুসূদন’ বিপুলভাবে দর্শকনন্দিত ও প্রশংসিত হয়। ১৯৭৯-৮০ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত প্রথম ও দ্বিতীয় জাতীয় যাত্রা উৎসবে তিনি পরপর দু’বার ‘শ্রেষ্ঠ অভিনেতা’র সম্মান ও পুরস্কার লাভ করেন।
তাঁর অভিনীতি ও নির্দেশিত যাত্রাপালাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘মাইকেল মধুসূদন’, ‘একটি পয়সা’, ‘জানোয়ার’, ‘সম্রাট জাহান বাদশা’, ‘লেনিন’ ও ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ইত্যাদি। এসব যাত্রাপালার প্রত্যেকটির নামভূমিকায় তিনি অভিনয় করেছিলেন। তিনি মরণোত্তর ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। অমলেন্দু বিশ্বাস ১৯৮৭ সালের ১৩ই অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।
লেখক : আখতার হুসেন
তথ্যসূত্র : শিশু বিশ্বকোষ : প্রথম খন্ড; প্রকাশক : গোলাম কিবরিয়া, প্রথম প্রকাশ : ১৯৯৫।
অমলেন্দু বিশ্বাসের বিস্তারিত জীবনী আমরা সম্পন্ন করতে পারিনি। যদি কেউ তার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, ছবি ইত্যাদি দিয়ে সহযোগিতা করতে চান, তবে info@gunijan.org.bd-এই ঠিকানায় যোগাযোগ করুন