জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়
১৯২৯ সালের ২৯ মে সিলেট বিভাগের বড়লেখা থানার শিমুলিয়া গ্রামে কবিরাজ চন্দ্রকাণ্ড শর্মা ও সমাজসেবী মগ্নময়ী দেবীর ঘরে জন্ম নেন দ্বিজেন শর্মা৷ বাবা ভিষক বা গ্রাম্যভাষায় কবিরাজ ছিলেন বলে বাড়িতেই দেখেছেন নানা লতা-পাতা আর বৃক্ষের সমাহার। প্রজাপতি ডানা মেলা দিনগুলোতে পাথারিয়া পাহাড়ের আরণ্যক নিসর্গে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। সেখান থেকেই হয়তো গাছ-পালার প্রতি তাঁর এই ভালোবাসার জন্ম।
শিক্ষাজীবন
শৈশবেই গ্রামের পাঠশালায় তাঁর হাতেখড়ি হয়। তারপর করিমগঞ্জ পাবলিক হাইস্কুলে পড়াশুনা। মায়ের ইচ্ছে ছিল ছেলে ডাক্তার হবে কিন্তু প্রকৃতিপ্রেম তাঁকে উদ্ভিদবিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট করল। আর তাই কলকাতা সিটি কলেজে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর (১৯৫৮) ডিগ্রি লাভ করেন।
পারিবারিক জীবন
ব্যক্তিজীবনে দ্বিজেন শর্মা নিসর্গ ও তাঁর পরিবারকে এক সঙ্গেই দেখেছেন। তাঁর ভালোবাসার খণ্ড খণ্ড রূপেই প্রকাশ পেয়েছে তাঁর নির্সগ ও পরিজনেরা। ১৯৬০ সালে বরিশালে দেবী চক্রবতীর সাথে বিবাহ হয়। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তাঁর স্বপ্নময়তার শুরু হয়েছিল। এখন তারা বড় হয়েছে, ছোট্ট চারা গাছ থেকে মহিরুহ হয়েছে তাঁর যত্নে, তাঁর ছায়াতেই। পরিবারের অনেকটা সময় কেটেছে মস্কোতেই। মস্কোর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে আকাদেমিকা আনোখিনা সড়কে এক বহুতল ভবনের নবম তলার যে ফ্ল্যাটে দ্বিজেন পরিবারের কেটেছে অনেকগুলো বছর, সেটা এখনো দ্বিজেন শর্মার অন্যতম মূল গৃহ। পুত্র ডা. সুমিত শর্মা ও কন্যা শ্রেয়সী শর্মা। ড. দেবী শর্মা ঢাকার সেন্ট্রাল উইমেনস কলেজের দর্শনের সাবেক অধ্যাপিকা। এখনও তাঁর অনেক কাজ বাকি আর তাই নিয়েই তাঁর ব্যস্ত দিন কাটছে আপন নিবাসে।
ক্ষেত্রভিত্তিক অবদান
নিভৃতিপ্রিয়, প্রচারবিমুখ উদ্ভিদবিদ, নিসর্গী, বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষাবিদ দ্বিজেন শর্মা সেই প্রজন্মের মানুষ যাঁরা এই উপমহাদেশের বৈপ্লবিক সব পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ সাক্ষী। কিন্তু এসব রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্যেই তিনি তাঁর প্রকৃতিপ্রেমকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছেন। উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ওপর পড়াশোনা থাকলেও তাঁর মধ্যে ছিল শিল্পবোধ আর দেখার চোখ, সুন্দরকে অন্বেষণের আকাক্ষা। মানবজাতির জন্য তাঁর মনে সব সময় এক অনিঃশেষ আশাবাদ ও শুভকামনা কাজ করে। লেখালেখির মধ্যেই তাঁর সৃষ্টিশীলতা ফুটে ওঠে বার বার। জীবনে প্রথম যে লেখা ছাপার অক্ষরে বেরিয়েছিল সেটি ছিল একটি গল্প, ১৯৪৯ সালে আই.এস.সি. ক্লাসের শেষবর্ষের কলেজ বার্ষিকীতে। সেটি ছিল একটি আত্নজীবনীমূলক গল্প। এক দরিদ্র ছাত্রের শিক্ষালাভের কঠোর সংগ্রামের কাহিনী, এরপর তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের একাধিক দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকীতে তাঁর লেখা গল্প প্রকাশিত হয়েছিল। সেগুলোর বিষয়বস্তুও ছিল অভিন্ন, দারিদ্র্যের জীবনযুদ্ধ। সমাজতন্ত্র সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতাজাত যে দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছে, তা পুঁজিবাদী বিশ্বের সোভিয়েত গবেষক পণ্ডিতদের চেয়ে আলাদা। এসব বিষয় নিয়ে তিনি বেশ কিছু নিবন্ধ ও স্কেচধর্মী লেখা লিখেছেন।
মৃত্যু- সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৭ সালে ( বয়স ৮৮) তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
রচিত গ্রন্থসমূহ
|
||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সম্মাননা, স্বীকৃতি ও সংবর্ধনা | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|