ড. মুহাম্মদ ইঊনূস একটি ছোট্ট নাম। অথচ এই নামের ব্যাপ্তি কিন্তু মোটেও ছোট নয়। বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে এই নামের মহিমা। গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের পথ প্রদর্শক হিসেবে তিনি তাঁর নিজের নামের পাশাপাশি এ দেশ ও জাতিকে গোটা বিশ্বের কাছে পরিচিত করে তুলেছেন। অর্থনৈতিক- সামাজিক উন্নয়নে অবদানের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০০৬ পেয়ে সারা পৃথিবীর সামনে বাংলাদেশ এবং বাঙালী জাতির নাম উজ্জ্বল করেছেন। সত্যিই তাঁর জীবন কত বৈচিত্রময় এবং কত অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ, সফলতায় ভরপুর তাঁর প্রতি পদক্ষেপ।
ড. ইঊনূস সম্পর্কে ব্রিটেনের যুবরাজ প্রিন্স চার্লস বলেছিলেন, ‘আমি এক অসাধারণ মানুষকে দেখলাম, উনি নিজে শুধুমাত্র মহত্বের, শুভবুদ্ধির কথা বলেন তাই নয়, নানা প্রতিকূল অবস্থা ও তথাকথিত বিশেষজ্ঞদের ভয়ংকর তির্যক সমালোচনা উপেক্ষা করেও নিজের আদর্শকে অনুসরণ করে অভিষ্ঠ কাজ সফল করে তোলেন। আমি একজন প্রেরণাদায়ক, আমুদে ও আত্ববিশ্বাসী মানুষকে পেলাম, যিনি আমাকে অভিনব সজীব অনুভবে আবিষ্ট করলেন। শক্তি ও একাগ্রতার দ্বারা কত অসাধ্য সাধন করা যেতে পারে তিনি তাঁর সার্থক পথ প্রদর্শক।’ কথাগুলো পর্যালোচনা করলে হৃদয়ঙ্গম করা যায় ড. ইঊনূস কী অসাধারণ ব্যক্তি।
জন্ম ও বংশ পরিচয়
১৯৩৯ সালে শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সেই ভয়াবহ যুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যেই চট্রগ্রাম থেকে সাত কিলোমিটার দূরে বাথুয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে মুহম্মদ ইঊনূস জন্ম গ্রহণ করেন।
ড. ইঊনূসের বাবা দুলামিয়া ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। মা সুফিয়া খাতুন ছিলেন ব্যক্তিত্বময়ী ও মমতার প্রতিমূর্তি একজন নারী। তাদের স্বস্নেহ নজরদারীতে সম্ভবত ইঊনূসের অসম্ভব ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠেছিল। তিনি আজ বাংলাদেশের অঙ্গণে সবচেয়ে সুপরিচিত একজন মানুষ, বিশ্বজুড়ে তাঁর সাফল্য।
ড. ইঊনূসের দুই কন্যা মনিকা ইঊনূস ও দীনা ইঊনূস। জৈষ্ঠ্য কন্যা মনিকা ইঊনূস পারফর্মিং আর্টে নিউইয়র্কের জুলিয়ার্ড স্কুল থেকে ব্যাচেলর্স ও মাষ্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। কনিষ্ঠা কন্যা দীনা ইঊনূস নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়েছেন।
শৈশবকাল
ড. মুহম্মদ ইঊনূসের গ্রামের বাড়ী চট্রগ্রাম শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে হলেও তাঁর শৈশব কেটেছে চট্রগ্রাম শহরের পুরনো বাণিজ্যিক এলাকার বক্সিহাট রোডে। জনবহুল ও স্বল্প পরিসর এ রোডটি চাক্তাই নদীঘাট থেকে খুবই কাছাকাছি। এটিই ছিল পন্যাদি শহরের বাজারে নিয়ে যাবার প্রধান রাস্তা। এই রাস্তার একধারে সোনাপট্টি বা মনিকারদের অঞ্চল। ওখানকার ছোট্ট একটি দোতলা বাড়ীর উপর তলায় তাঁরা বসবাস করতেন। নীচতলার সামনের অংশে ছিল ড. ইঊনূসের বাবার গয়নার দোকান ও পেছনের অংশে কারিগরদের থাকার জায়গা। তাঁদের ওখানকার জগত্ ছিল যেন পেট্রোলের ধোঁয়া, ফেরিওয়ালা, জাদুকর, ভিক্ষুক, রাস্তার পাগলের হাঁকডাক নানা গোলমালে ভরা। সবসময় রাস্তা আটকে ট্রাক বা গাড়ী দাঁড়িয়ে থাকত। সারাদিন ধরে ট্রাক ড্রাইভারদের চীত্কার, তর্কাতর্কি ও জোরদার হর্ণ শুনতেন অবিরত। অথচ ওখানেই মাঝরাতের দিকে সবকিছু ঝিমিয়ে পড়ত চারদিক নীরব হয়ে যেত। তবে তার ভিতর থেকেও তাঁর বাবার কারখানায় স্বর্ণকারদের হালকা হাতুরি পেটানোর ও পালিশ করার ছন্দময় মৃদু আওয়াজ শোনা যেত। সর্বদা কিছু না কিছু শব্দ ছিল যেন তাঁদের জীবনের এক নেপথ্য ছন্দ। তারপর চট্রগ্রামের পাঁচলাইশের আবাসিক এলাকায় আরও একটি বাড়ী করেছিলেন তাঁর বাবা। বাড়ীটির নাম দিযেছিলেন ‘নিরিবিলি’। প্রতিবছর ওখানে ঈদুল ফিতরের সময় সবাই মিলিত হন।
ড. ইঊনূসের বাবা ছিলেন কোমল মনের মানুষ কিন্তু পড়াশুনার ব্যাপারে তিনি ছিলেন খুবই কড়া। কখনও নীচতলা থেকে উপরে উঠে আসতেন ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খবর নিতে। বাবার পায়ের শব্দ খুব চেনা ছিল তাঁদের। তাই অন্যকাজ ফেলে তত্ক্ষণাত্ তাঁরা হুমড়ি খেয়ে পড়তে বসে যেতেন। বাবা এসে দেখতেন সামনে বই খোলা, ঠোঁট নড়ছে, তিনি খুশী হয়ে লক্ষ্মী ছেলে, ভালছেলে বলে তাঁদের আদর করতেন। তবে সুখের বিষয় ছিল কী বইটি পড়ছেন তা দেখবার জন্য উঁকি দিতেন না বাবা। কারণ লেখাপড়ার বই ছাড়াও অন্য বই বা পত্রিকা পড়ার প্রতি অসম্ভব ঝোঁক ছিল ইঊনূসের। বিশেষ করে রহস্য, রোমাঞ্চ ও গোয়েন্দা কাহিনীর বেশী ভক্ত ছিলেন তিনি। এরপর একদিন তিনি নিজেই একটি রহস্য কাহিনী লিখে ফেলেছিলেন।
অবিরত পড়ার খোরাক জোগার করার জন্য নিজেই একসময় শুরু করেছিলেন বই কেনা, বই ধার করা। তাছাড়া কলকাতা থেকে শিশুপাঠ্য পত্রিকা ‘শুকতারায়’ প্রতিযোগিতা থাকত। প্রতিযোগিতায় জিতলে পত্রিকায় নাম ছাপা হতো এবং বিনামূল্যে পত্রিকার গ্রাহক হওয়া যেত। এইভাবে সাম্প্রতিক বিষয় সম্বন্ধেও ওয়াকিবহাল থাকতেন। পারিবারিক চিকিত্সকের চেম্বারে রাখা সংবাদ পত্র পড়ে নিতেও তিনি ভুলতেন না।
চট্রগ্রাম জেলায় বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তি পাওয়ার সুবাদে হাতে কিছু নগদ টাকা পেয়েছিলেন। আরও কিছু টাকা জমিয়ে বড়ভাই সালামকে নিয়ে একটি বক্স ক্যামেরা কিনে ওটা নিয়ে তিনি সর্বত্র ঘুরতেন। ছাদ থেকে বিশেষজ্ঞের মত বিষয় ও দৃশ্য নির্বাচন করতেন। সঙ্গী থাকতেন এক ষ্টুডিওর মালিক। তাঁর সহযোগিতায়ই ছবি প্রিন্ট করা আর ডেভেলপ করার কাজটি করতেন। এরপর কিনেছিলেন তিনি একটি ফোল্ডিং ক্যামেরা যার ভিউ ফাইন্ডারের মধ্য দিয়ে চেনা জগতকে আরও নতুন করে দেখতে শিখেছিলেন তিনি। পেশাদার শিল্পীর কাছে কিছুদিন শিক্ষাও নিয়েছিলেন। এতে ছবি আঁকা ও রং করার প্রতি জন্মেছিল প্রচন্ড অনুরাগ।
ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে বাবা কখনও চাইতেন না মানুষের প্রতিকৃতি আঁকা। তিনি বলতেন, ‘এটা ধর্ম বিরুদ্ধ কাজ।’ তাই পড়াশুনার বাইরে শখ আহলাদ মেটাতে হতো গোপনে গোপনে। অবশ্য পরিবারের চাচা চাচীরা কেউ কেউ ছিলেন শিল্পানুরাগী। তাঁদের কাছ থেকে প্রেরণা ও সাহায্য নেওয়া সহজ হয়েছিল মুহাম্মদ ইঊনূসের। তবে এইটুকু করেই ক্ষান্ত হননি তিনি। এতসব সখের আনুষঙ্গ হিসেবে গ্রাফিক্স ও ডিজাইনের উপর অত্যন্ত আগ্রহ জন্মে। তারপর করেছিলেন ডাকটিকেট সংগ্রহ।
এসময় স্নেহময়ী মাকে খুব মনে পড়ত ইঊনূসের। তাঁর মতে শৈশবে তিনি যে মাকে দেখেছেন সেই মা ছিলেন মমতার প্রতিমূর্তি, সুশৃংখল, দৃঢ়চেতা, ব্যক্তিত্বময়ী এবং গরীব আত্বীয়দের প্রতি অসম্ভব দরদী। তিনি সুশৃংখলতা, ব্যক্তিত্ব এবং সম্ভবত ভবিষ্যত্ গন্তব্যস্থল আবিষ্কার করার পথ পেয়েছিলেন মার নজরদারীতেই। মুহাম্মদ ইউনূস মাকে এত বেশী ভালবাসতেন যে, সবসময় তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আঁচল ধরে টানতেন। শৈশবে পৃথিবী সম্বন্ধে তাঁর বিস্ময়ের উত্স ছিল মায়ের গলার গান ও গল্প। আবেগে ধরা গলায় মা কারবালা যুদ্ধের দুঃখের কাহিনী বলতেন এবং এতই হৃদয়স্পর্শী করে বর্ননা করতেন যে, বড় হয়ে ‘বিষাদসিন্ধু’ পড়েও তিনি নিজের মধ্যে সেই মুগ্ধতাবোধ জাগাতে পারেননি। মুহাম্মদ ইঊনূস মূলত মায়ের শাসনেই বেড়ে উঠেছিলেন। পরিবারের মধ্যে তিনি ভাল চাখিয়ে হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তাইতো মা সুস্বাদু কোন পিঠে বা মচমচে ভাজা কোন নাস্তা বানালে প্রথমটিই তিনি চেখে দেখতেন। ঝড়, বন্যা, খরা যাই হোকনা কেন তাঁর চোখে মা কখনও অসুন্দর ছিলেননা। মার প্রতিটি কাজই তাঁকে মুগ্ধ করত।
ইঊনূসের মুগ্ধতা, আনন্দ এবং ভালবাসার প্রতিমূর্তি মা একসময় এমন অসুস্থ হয়ে পড়লেন যে, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া, স্কুল অর্থ্যাত্ সকল কাজকর্মের জগত থেকে দূরে সরে যেতে থাকলেন। তখন ইঊনূসের বয়স তখন মাত্র নয় বত্সর। এত অল্প বয়সে মার সাহায্য ছাড়াই তাঁরা জীবন কাটাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন। তাঁদের পরিবারে ভাই-বোনদের সংখ্যাও ছিল তখন ১৪ জন, যদিও এখন সাত ভাই দু বোন জীবিত আছেন। কাজেই ছোট বেলা থেকেই পরিবারের মধ্যে ছোটদের ভার নিতে শিখেছিলেন তিনি। শিশু পালন, পারিবারিক বিশ্বস্ততার গুরুত্ব, পারিবারিক নির্ভরতা ও সমঝোতার মূল্য বুঝতে শিখেছিলেন অত্যন্ত সুন্দরভাবে।
মুহাম্মদ ইঊনূসের শিক্ষার ব্যাপারে ব্যয় করতে তাঁর বাবা কখনও দ্বিধাবোধ করেননি। তবে একেবারে সরল ও আড়ম্বরহীন জীবন যাপনে অভ্যস্ত করে তুলেছিলেন। হাত খরচ যত্সামান্য হলেও সখের মধ্যে সিনেমা দেখা ও বাইরে খাওয়া ছিল ইঊনূসের অন্যতম সখ। এরজন্য বাবার ড্রয়ারের খুচরো পয়সা সরাতেন। তাঁর প্রিয় খাবার ছিল আলুর চপ ও ভিনেগারে ভাজা পেঁয়াজের পুরভরা আলুর দম। ধোঁয়া ওঠা চায়ের সঙ্গে এই জলখাবার ছিল খুব পছন্দ। খুব দামী খাবারের দিকে কিন্তু মোটেও ঝোঁক ছিলনা তাঁর।
শিক্ষাজীবন
ছোটবেলা থেকে শিক্ষার প্রতি অনুরাগী মুহাম্মদ ইঊনূসের হাতেখড়ি হয়েছিল চট্রগ্রামের লামার বাজার বক্সি হাট রোডের নিজ বাসার কাছাকাছি একটি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়ে বেশীরভাগ খেটে খাওয়া পরিবারের ছেলেরাই ছিল তাঁর সহপাঠি। তবে সেসময়কার শিক্ষালয়গুলি যেন সত্যিকার ও সঠিক মূল্যবোধ ছাত্রদের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে এবং সর্বোপরি বিকাশ ঘটাতে চেষ্টা করত। খেটে খাওয়া পরিবারের বাচ্চাদেরও স্কুলে আনার ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা ছিল প্রসংশনীয়। তিনি বলতেন, ‘মেধাবী ছাত্ররা বৃত্তি পাবে আর জাতীয় স্তরে পরীক্ষা দেবে স্কুলের পক্ষে এটা গৌরবের বিষয়।’ মুহাম্মদ ইঊনূসও ভাল ছাত্র হিসেবে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় প্রতি বছরই প্রথম হতেন।
এরপর তিনি কলেজিয়েট স্কুলে গিয়ে আরও বিরাট পরিবর্তন বুঝতে পারেন। কারণ শিক্ষাদানের ব্যাপারে সে স্কুলটিকে মনে হচ্ছিল অন্যতম। স্কুলের আবহাওয়াও সম্পূর্ণ উদার ও সংকীর্ণতামুক্ত লেগেছে। অধিকাংশ সহপাঠিরা ছিল আবার সরকারী আমলার ছেলে। আগে যাদের সঙ্গে পড়তেন তাদের সঙ্গে ওদের অনেক তফাত্। তবে তাঁকে বেশী আকৃষ্ট করার মত ছিল বয়স্কাউটের সুনাম। ব্যায়াম, খেলাধুলা, নানা শিল্পকর্ম, আলোচনা সভায় যোগদান, গ্রামে গ্রামে ঘুরে ক্যাম্প করা ও ক্যাম্প ফায়ারে বিচিত্রানুষ্ঠান ইত্যাদি তাঁকে বিশেষ উত্সাহ যোগাত। তাছাড়া মনে উদারতা পোষণ এবং সংবেদনশীল থেকেও তিনি অপরিসীম শিক্ষা পেয়েছেন। বাইরের আচার অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে অন্তরে ধর্মীয়ভাব বজায় রেখে তিনি মানুষের দুঃখের ভাগীদার হতেন। স্কাউটই যেন তাঁকে প্রেরণা যুগিয়েছে। ১৯৫৩ সালে করাচীতে বয়স্কাউটের বিরাট জাতীয় সমাবেশ জাম্বুরীতে(Jamboree) অংশ নিয়েছিলেন। তখন মুহাম্মদ ইঊনূসের বয়স তের। স্কাউট হিসেবে ১৯৫৫ সালে বিশ্ব জাম্বুরীতে গিয়েছিলেন কানাডা এবং ১৯৫৯ সালে জাপান ও ফিলিপাইন সফর গিয়েছিলেন তিনি।
স্কুলের পাঠ শেষ করে চট্রগ্রাম কলেজে ভর্তি হন মুহাম্মদ ইঊনূস। সেটি ছিল উপমহাদেশের এক বিশিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৩৬ সালে ব্রিটিশরা কলেজটি স্থাপন করেছিলেন। এই কলেজের দুটি বছর ছিল মুহাম্মদ ইঊনূসের জীবনের রোমাঞ্চকর বছর। যার কথা বলতে গেলে নাকি আলাদা একটি বই লেখা হয়ে যাবে অর্থ্যাত্ জীবনের বর্ণাঢ্য ও স্বর্ণালী বছর ছিল তাঁর কলেজ জীবন। ১৯৫৭-১৯৬০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখা-পড়া করেন তিনি। তাঁর মতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ৪টি বছর ছিল খুবই বৈচিত্রহীন এবং একঘেয়ে।
শিক্ষার প্রতি অনুরাগী মুহাম্মদ ইঊনূস পড়তে এবং পড়াতে অত্যন্ত ভালবাসতেন। শিক্ষকের মত দায়িত্ব নিয়ে তিনি ছোট ভাইদের পড়াতেন। কারও ফলাফল ভাল না হলে জবাবদিহি করতে হতো তাঁর কাছে।
১৯৬৫ সালের মাঝামাঝিতে তিনি ফুলব্রাইট স্কলারশিপ পেয়ে কোন দ্বিধা না করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেন। নিজ দেশের ছাত্র- শিক্ষক সম্পর্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ছাত্র শিক্ষক সম্পর্কের মধ্যে বিরাট ব্যবধান দেখে অবাক হন। এদেশের ছাত্ররা এতটাই শ্রদ্ধাশীল যে, অধ্যাপকের নাম ধরে ডাকার কথা সূদুর কল্পনাতেও আনতে পারে না, থাকে না কথা বলার কোন সাহস। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক বন্ধু ও সাহায্যকারী। একই সাথে বসে তারা ঠাট্টা- তামাশা- গল্প করেন, ভাগাভাগি করে খাবার খান, শিক্ষকের নাম ধরে ডাকেন। মধুর সম্পর্ক তাঁদের। এমন সম্পর্ক এবং ঘনিষ্ঠতা এদেশে অকল্পনীয় ব্যাপার সন্দেহ নেই।
লাজুক প্রকৃতির মুহাম্মদ ইঊনূস কালারাডো বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠিনীদের ব্যাপারে এতই লাজুক ও নিজেকে এতটাই অপ্রস্তুতবোধ করতেন যে, কোনদিকে তাকাবেন তাই যেন ঠিক করতে পারতেন না। একে তো তাঁর এই করুণ অবস্থা তাতে ছিল আবার গরমকাল। তখন ক্যাম্পাস ছিল রক সঙ্গীতে উত্তাল। ছাত্রীরা জুতো খুলে লনে বসে রোদ পোহাত, হাসত, গল্পগুজব করত। যুদ্ধবিরোধী মুহাম্মদ ইঊনূস প্রতিবাদ সভা ও মিছিলে যোগ দিতেন কিন্তু লাজুক ছিলেন বলে বক্তৃতায় অংশ নিতে পারেননি। তবে চট্রগ্রাম কলেজে সম্মিলিত ছাত্র প্রগতি সংঘের (United Students Progressive) নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৬ বছর। যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন সময় ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধেও তিনি সোচ্চার ছিলেন। এসবের পাশাপাশি পড়াশুনাও ভালই করতেন তিনি। তারপরও ‘স্কোয়ার ড্যান্সিং’ শিখে ফেলেছিলেন তবে শেখার অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর ওইটুকুই। স্টুইট, রক এন্ড রোল, স্লো ড্যান্সিং কোনটিই আর চেষ্টা করেননি। পার্টি, হইহুল্লোর সবই সযতনে এড়িয়ে চলতেন। যুক্তরাষ্ট্রের খোলামেলা মানসিকতার সঙ্গে লাজুক ও নরম স্বভাবের ছেলে হিসেবে নিজেকে মানিয়ে নিতে অস্বস্তিবোধ করতেন তিনি।
বৃত্তির শর্ত অনুযায়ী টেনেসিতে ভ্যান্ডারবিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান মুহাম্মদ ইউনূস। বোল্ডার সুন্দর ক্যাম্পাস ও বন্ধুদের ছেড়ে ওখানে অন্যরকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাঁর। ন্যাসভিলে পৌঁছে মন তেমন ভাল লাগেনি। শহরের কোন আকর্ষণ ছিলনা এবং প্রাণবন্তও মনে হয়নি পরিবেশ। এরপর বাঙ্গালী একটি ছাত্রের সঙ্গেও দেখা মেলেনি বলে খুব একা একা হয়েছিলেন মুহাম্মদ ইঊনূস। তবে ভ্যান্ডারবিল্টে তিনিই একমাত্র ফুলব্রাইট বৃত্তি পাওয়া ছাত্র ছিলেন। যদিও ১ম সেমিষ্টারের ক্লাসগুলি তাঁর কাছে একঘেঁয়ে ছিল তবে ভীষণ ভাগ্যবান তিনি। কর্তৃপক্ষ তাঁকে উচ্চ অর্থনীতির ক্লাসে পড়বার অনুমতি দিলেন। পিএইচডি করার সুযোগ ঘটল তাঁর। ভ্যান্ডারবিল্টের জীবনটাকে অর্থবহ করে তুলেছিল যে মানুষটির সাহচর্যে তিনি ছিলেন এক রক্ষণশীল রুমানীয়ান অধ্যাপক নিকোলাস জর্জেস্কু-রোগেন (Nicholas Gergesch Roegen)। তাঁর কাছে বরাবরই পরীক্ষায় ‘এ’ পেতেন মুহাম্মদ ইঊনূস। এক কোরিয়ান ছাত্র মাত্র একবারই জর্জেস্কু-রোগেন-এর কাছে ‘এ’ পেয়েছিলেন। জর্জেস্কু-রোগেন সম্পর্কে ক্যাম্পাসে গুঞ্জন ছিল তিনি নাকি অনেক ছাত্রের জীবন নষ্ট করেছেন। ছাত্ররা তাই তাঁর ছায়া মাড়াতে সাহস পেতনা। মুহাম্মদ ইঊনূসের মতে তিনি এমন ভাগ্যবান যে কঠোর, ক্ষমাহীন, কর্মযোগী একজন মানুষকে তিনি শিক্ষক হিসেবে কাছে পেয়েছিলেন। তিনি দ্বিধাহীনচিত্তে বলতে পেরেছেন যে, তাঁর মত ভাল পড়াতে আর কাউকে দেখেননি তিনি। জর্জেস্কু-রোগেনের কাছ থেকে কতগুলি সহজ শিক্ষা তিনি পেয়েছিলেন যা মুহাম্মদ ইঊনূসের সারা জীবনের সম্পদ। স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন কেন তত্ত্বের প্রয়োজন। বাস্তবতাকে কেন তত্ত্বের কাঠামোতে আনতে হয় আর তত্ত্বের আগে কেন বাস্তবতার অন্তর্নিহিত সারমর্ম বুঝতে হবে।
অধ্যাপক জর্জেস্কু-রোগেনের ছাত্রদের সঙ্গে সম্মানজনক দূরত্ব বজায় রাখাই ছিল তাঁর নীতি। তাঁর লেখা বইগুলি ছিল পান্ডিত্যপূর্ণ ও দুর্বোধ্য। কিন্তু তাঁর পড়ানোর ভাষা ছিল স্পষ্ট ও বাহুল্যবর্জিত যা সহজেই সুন্দরভাবে হৃদয়ে প্রবেশ করত। তাঁর টিচিং এসিসষ্ট্যান্ট হিসেবে মুহাম্মদ ইঊনূসই নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং তাতে তিনি নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করেছিলেন। মুহাম্মদ ইঊনূস গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন সহজবোধ্য তাত্ত্বিক কাঠামোর ভেতর কি করে কঠিন বাস্তবকে বিশ্লেষণ করা যায় আর বিষয় অতটা জটিল নয় যতটা কল্পনা করা যায়।
কর্মজীবন
ড. ইঊনূসের কর্মজীবন ছিল খুবই বর্ণিল। ছোটবেলা থেকেই তিনি নিজেকে শিক্ষকের ভূমিকায় কল্পনা করতেন। ছোটবেলার সেই কল্পনা একসময় বাস্তবে রূপ নেয়। ১৯৬১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ হওয়ার পর তিনি তাঁর প্রাক্তন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চট্রগ্রাম কলেজে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন। তখন ড. ইঊনূসের বয়স ছিল মাত্র ২১ বছর। মজার ব্যাপার হল ছাত্ররা ছিল ড. ইঊনূসের প্রায় সমবয়স্ক। ১৯৬১-১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।
ড. ইঊনূসের বাবা ছিলেন একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তাই শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি ব্যবসার প্রতিও উত্সাহী হয়ে উঠেন। তাঁর বড় ভাই সালামের সঙ্গে মাঝেমাঝে আলাপ হত কি কি ধরনের শিল্পে তাঁরা বিনিয়োগ করতে পারেন। বিভিন্ন দেশে চিঠি লিখে শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য যন্ত্রপাতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতেন। অবশেষে একটি প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব তৈরী করে পাকিস্তান শিল্পোন্নয়ন ব্যাংকে জমা দিলে তাঁর সেই আবেদন দ্রুত মঞ্জুর হয়। ১৯৬৪ সালে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রিন্টার এনে একশত জন শ্রমিক নিয়োগ করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একটি কারখানা। কারখানায় তৈরী হতো সিগারেটের প্যাকেট, ঔষধের কার্টন, প্রসাধন সামগ্রীর রং, ক্যালেন্ডার ইত্যাদি। তবে শুধু টাকা রোজগারের কথা আকর্ষণীয় বলে মনে হয়নি ড. ইঊনূসের কাছে। তিনি শিল্প কারখানার পেছনে সমস্ত শক্তি দিয়ে খেটেছেন। প্রমাণ করতে চেয়েছেন পূর্বাঞ্চলে শিল্প কারখানা লাভজনকভাবে চলতে পারে এবং তিনি শিল্প কারখানা গড়তে পারেন। শিল্প প্রতিষ্ঠানটি স্থাপনের অভিজ্ঞতা ড. ইঊনূসের মধ্যে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছিল। মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি বুঝে নিয়েছিলেন কাজে নামলে কাজ আর কখনো কঠিন থাকে না।
নিখুঁত চিন্তা চেতনার মানুষ ড. ইঊনূস যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন সময়ে যাতায়াতের খরচ বাঁচানোর জন্য গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে কখনো বাংলাদেশে আসেননি। ওই সময় বোল্ডারে কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অধ্যাপনা করেছেন। এছাড়া ১৯৭০ সালে মধ্য টেনেসি রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৯৬ সালে তিনি বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। বর্তমানে তিনি ইউ এন ফাউন্ডেশন সহ কমপক্ষে দশটি আন্তর্জাতিক সংস্থার পর্যালোচনা সদস্য বা উপদেষ্টা হিসেবে আছেন।
১৯৭২ সালে ড. ইঊনূস যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিগ্রী নিয়ে দেশে ফেরার পর সরকারের পরিকল্পনা কমিশনে নিযুক্ত হন। কিন্তু উক্ত কাজ থেকে শীঘ্রই তিনি ইস্তফা দেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আকর্ষণীয় প্রস্তাব গ্রহণ করে তিনি অর্থনীতি বিভাগের প্রধানের পদে যোগ দেন। এর ফলে তাঁর কর্মজীবনের আরেক দিগন্ত উন্মোচিত হল।
প্রতিদিন রাঙ্গামাটি সড়ক এবং ক্যাম্পাসের মাঝখানে জোবরা গ্রামের রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতেন ড. ইঊনূস। যাওয়ার পথে চারদিকের দৃশ্য দেখতেন এবং কত কী ভাবতেন। একসময় জোবরা গ্রাম নিয়েই তিনি ভাবতে শুরু করলেন। কী করে এই গ্রামবাসীদের জীবনে পরিবর্তন আনা যায়? একসময় ছাত্রদের সাহায্য নিয়েই চালু করেছিলেন একটি জরিপ প্রকল্প। তিনি জোবরা গ্রামবাসীদের জন্য অধিক খাদ্য উত্পাদনে সাহয্যের হাত বাড়ালেন। তিনি কৃষিবিদ নন কিন্তু সারা গ্রাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চোখের সামনে হাঁটুডোবা কাঁদাজলে উচ্চফলনশীল ধানের চারা রোপনের সংগ্রাম করেছিলেন। তিনি প্রথাগত শিক্ষা বর্জন করে সি.ইউ.আর.ডি.পি. নামক গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পকে আরও বিস্তৃত করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ তাঁকে কৃষিকার্যে আরও উদ্যোগী হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছিল।
জোবরা গ্রামে ড. ইঊনূসের ছোট্ট পরীক্ষা জাতীয় স্তরে সফল হবে বলে তিনি নিশ্চিত ছিলেন হলোও তাই। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হল। ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ড. ইঊনূসের দু’ বছরের ছুটি মঞ্জুর করলে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্পে যোগ দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সমর্থনে প্রকল্পটি টাংগাইল জেলায় সম্প্র্রসারিত হল এবং ২৫টি শাখায় কাজ করার সুযোগ এলে টাংগাইল চলে আসেন ড. ইঊনূস। টাংগাইলে তখনো যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি চলছিল। গেরিলা বাহিনী কর্তৃক নির্বিচারে গণহত্যা চলছিল। প্রতি গ্রামেই দেখা যেত কেউ না কেউ মাঠে পড়ে মরে আছে। মৃতদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যেত গাছে। কেউ বা গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হয়েছেন। স্থানীয় নেতারা নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে কোথাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এমনতরো পরিস্থিতি ছিল যে কোনো নিয়মশৃংঙ্খলার বালাই ছিলনা। খুন, জখম আর রক্তপাতের মাঝখানে নবনিযুক্ত ব্যাংক প্রকল্পের ম্যানেজার ও কর্মীদের নিয়ে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন ড. ইউনূস। অত্যন্ত সতর্কভাবে তিনি ভাগ্য নিপীড়িত, হতদরিদ্র কঙ্কালসার মানুষের দ্বারে গিয়েছেন, বুঝিয়েছেন, অবশেষে ঋণ বিতরণ করেছেন।
এরপরও নানা বাঁধা বিপত্তির অন্ত ছিলনা। গ্রামের মৌলভী সাহেব তাঁদের গ্রামে ঢুকতে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। হাবিয়া দোজখে যেতে হবে বলে মহিলাদের গ্রামীণ ব্যাংকে যেতে দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিল। ফলে ব্যাংক ম্যানেজার, ব্যাংকের সহকর্মীরা গ্রামে যেতে সাহস পাচ্ছিলনা। এমনতরো নানবিধ সমস্যারও মোকাবেলা করেছেন ড. ইঊনূস। বুঝিয়েছেন ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র দূরীকরণ ইসলাম বিরুদ্ধ নয়। ঋণ গ্রহীতারাই হচ্ছেন ব্যাংকের মালিক। এ ব্যাংক গ্রাহকদেরই মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত। কাজেই ব্যাংকের মুনাফা তাদের কাছেইতো ফিরে আসছে। ড. ইঊনূস ধৈর্য্যের সাথে ধীরে ধীরে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা সংক্রান্ত পরিকাঠামোয় পরিবর্তন আনলেন। গ্রাহকের মালিকানা হল পঁচাত্তর শতাংশ। বাকী পঁচিশ শতাংশ সরকার রাষ্ট্রয়াত্ত সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশের কৃষি ব্যাংকের মালিকানায় থাকল। আইন মোতাবেক ড. ইঊনূস হলেন সরকার কর্তৃক নিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
গ্রামীণ ব্যাংক ছাড়াও এদেশের দরিদ্র মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেছেন।
১৯৮৯ সালে পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় স্থপতিবৃন্দ দ্বারা গঠিত বিচারক মন্ডলী যখন গ্রামীণ ব্যাংকের গৃহনির্মাণ প্রকল্পকে ‘আগাখান আন্তর্জাতিক আর্কিটেকচার’ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করেন তখন কায়রোতে সেই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট স্থপতিরা তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন মাত্র তিনশত ডলারের বাড়ীর নকশা বানাল কে? এত চমত্কার পরিকল্পনা কার?
দরিদ্র বিমোচনে গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃক ভিক্ষাবৃত্তির কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি সুদমুক্ত ঋণ, শিক্ষাঋণ, জীবনবীমা, ঋণবীমা ও প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে ঋণ কর্মসূচী চালু করেছেন। তাছাড়া ব্যাংকের সদস্যের ছেলেমেয়েদেরকে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়াবার লক্ষে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডসহ মোট ৫টি খাতে বৃত্তি প্রদান করে আসছেন। ভূমিহীনদের মালিকানায় এবং ভূমিহীনদের কল্যানে নিয়োজিত গ্রামীণ ব্যাংকের আদলে বিশ্বের ৯০ টি দেশে এই কার্যক্রম চলছে। সংগঠক হিসেবে ড. মুহম্মদ ইঊনূস বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন।
গ্রামীণ ব্যাংক ও ব্যাংকের সকল কার্যক্রমের মাধ্যমে দরিদ্র দূরীকরণ কর্মসূচীতে ড. ইঊনূসের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর কর্মজীবনের ইতিহাসে বিরাট সাফল্যগাঁথা গ্রামীণ ব্যাংক।
পারিবারিক জীবন
১৯৭০ সালে রাশিয়ান সাহিত্যে স্নাতোকোত্তর ডিগ্রীধারী ভিরা ফোরোস্টেনকে বিয়ে করেন ড. ইঊনূস। ১৯৭৭ সালের পয়লা মার্চ মেয়ে মনিকার জন্মের পর ভিরা মনস্থির করে ফেললেন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাবেন। তাঁর মতে বাংলাদেশে সঠিকভাবে সন্তান পালন সম্ভব নয়। কিন্তু এর কোনো সমাধান বের করতে পারেননি। মেয়ে মনিকাকে নিয়ে সত্যি সত্যি একদিন পাড়ি জমালেন। যদিও পরস্পরের প্রতি ভালবাসার কমতি ছিলনা। ভিরা চলে যাবার পর ভীষণ একা হয়ে গেলেন ড. ইঊনূস। আর তাঁদের সাজানো সংসারের কিছু বদল না করে মেয়ে মনিকাকে নিয়ে ভিরা ফিরে আসবে এই অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন।
এরপর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান ড. ইউনূস। ওই সময় ভিরাকে বোঝাতে অনেক চেষ্টা করেছিলেন যাতে ও ফিরে আসে। কিন্তু ড. ইঊনূসকেই উল্টো নিউজার্সিতে পাকাপাকিভাবে থেকে যাবার জন্য চাপাচাপি করেছিল ভিরা। যুক্তরাষ্ট্রে পাকাপাকি থেকে যাবার কোন বাসনাই জন্মাতে পারেনি তাঁর মনে। বাংলাদেশকে জন্মের মত ছেড়ে যাবার কথা কল্পনাতেও আনতে পারেননি ইঊনূস।
অতঃপর ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বরে ইঊনূস ও ভিরার সম্পর্ক ছিন্ন হয়, ঘটে বিবাহ বিচ্ছেদ। মেয়ে মনিকা ভিরার সাথেই যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যায়।
এরপর ১৯৮০ সালের এপ্রিলে দ্বিতীয়বার আফরোজীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ড. ইঊনূস। ড. ইঊনূসের মতোই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দুই সমাজের সঙ্গে আফরোজীর সহজ ও সাবলীল সম্পর্ক ছিল। বরাবর আফরোজীকে নিয়ে তিনি অফিসের কাছাকাছি থাকতেন। আজ পর্যন্তও সেই ব্যবস্থাই চলে আসছে। বিয়ের পর পরই আফরোজী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। এখন তিনি অবসর জীবন যাপন করেছেন।
১৯৮৬ সালে দ্বিতীয় সন্তান দীনা ইঊনূসের জন্ম হয়।
ক্ষেত্রভিত্তিক অবদান
ড. ইঊনূসের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান অনস্বীকার্য। তিনি একাধারে একজন শিক্ষক, সমাজকর্মী, কৃতি সংগঠক, মানব হিতৈষী, স্থাপত্যবিদ, প্রযুক্তিবিদ, শিল্প উদ্দোক্তা, প্রকল্প উদ্দোক্তা, প্রতিষ্ঠাতা, সমাজ সংস্কারক নারী জাতির উন্নয়নে সংকল্পবদ্ধ এবং উন্নত জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও তিনি ছিলেন ধর্মীয় গোঁড়ামীর উর্দ্ধে একজন প্রগতিশীল ও আধুনিক মনস্ক মানুষ।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ড. ইঊনূসের রয়েছে বহুমুখী অবদান। নিম্নে ক্ষেত্র বিশেষে তাঁর বিশেষ কিছু অবদান উল্লেখ করা হল:
দরিদ্র মানুষের জন্য ড. ইঊনূস
ক্ষুদ্র ঋণ পদ্ধতির উদ্ভাবক ইঊনূস একান্তভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন দারিদ্রতা পৃথিবীর প্রাচীনতম সমস্যা। যারা দরিদ্র তাদের জীবন দারুণ যন্ত্রণাময়। দরিদ্র মানুষেরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকেন। এমনকি কম দরিদ্র সবসময় বেশী দরিদ্রকেও সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে। কাজেই শ্রমের বিনিময়ে উপযুক্ত পারিশ্রমিক তারা পায়না বলেই তো তারা হয় গরীব। এই সত্যটুকু তিনি তাঁর কৃষি প্রকল্প তেভাগা খামারের অভিজ্ঞতা থেকেই মনেপ্রাণে বুঝতে পেরেছিলেন। অতএব দরিদ্র জনগণের নাম করে শুধু সচ্ছল মানুষেরা যেন সুফল ভোগ করতে না পারে সবসময় একথাটা তাঁর হৃদয়ে জাগ্রত থাকত। আর তাই সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তিনি চাষী ও প্রকৃত গরিবের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতেন এবং দরিদ্র দূরীকরণকে জরুরী কর্মসূচী হিসেবে গ্রহণ করেন যার সফলতা আসতে সময় লেগেছে বিশ বছর।
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ড. ইঊনূস
ড. ইঊনূস সবসময়ই দারিদ্র বিরোধী সংগ্রাম করেছেন। কখনও কোন কাজে নেমে হেরে যাননি তিনি। তার একটি মডেল হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক। সংগ্রামের অনেক চড়াই উত্রাই পেরিয়ে দরিদ্র মানুষের জীবন কাহিনীর সমন্বয়ে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। জোবরা গ্রামের সেই গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্পই ১৯৮৩ সালের ২ অক্টোবর ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ হিসেবে স্বীকৃত পেল। ড. ইঊনূসের সৃষ্টিকর্মের মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংক তাঁর অসামান্য সৃষ্টি। এ সৃষ্টিকর্ম সত্যিই তুলনাহীন।
ভূমিহীনদের মালিকানায় এবং ভূমিহীনদের কল্যাণে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানই এখন গ্রামীণ ব্যাংক। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমর্থনে প্রকল্পটি টাংগাইলে সম্প্র্রসারিত হয়েছিল। এখন থেকে ঋণগ্রহীতারা যে কোন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য ঋণ গ্রহণ করতে পারেন। ভাবতেও অবাক লাগে গ্রাহককে ব্যাংকের দ্বারে ধর্ণা দিতে হয়না বরং ব্যাংকিং সুবিধা নিয়ে ব্যাংক ঋণগ্রহীতাদের দ্বারে যান। আর এর অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে ভূমিহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি বিধানের সাথে সাথে তারা যাতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে একটা সুস্পষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে তার জন্য সচেষ্ট থাকা।
এই ব্যাংক ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প, যৌতুক প্রথা, অপরিণত বয়সে বিবাহ, স্ত্রী নির্যাতন এসব সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে হতদরিদ্র, স্বামী পরিত্যক্তা, সর্বহারা মহিলাদের জীবিকা অর্জনের পথ নিশ্চিত করে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর পথ প্রশস্ত করে। এখান থেকে ঋণ গ্রহণের পর তা নিয়মিত সাপ্তাহিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয় এবং সম্পূর্ণভাবে তা জামানতমুক্ত। ড. ইঊনূসের মতে গ্রামীণ ব্যাংকের মত প্রতিষ্ঠান না থাকলে বাংলাদেশে একাজ কোনদিন সম্ভবপর হত কিনা সন্দেহ।
অসহায় দরিদ্র মহিলাদের জন্য ড. ইঊনূস
বাংলাদেশে গরীব হওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, আরও দুঃসহ হচ্ছে ঘরে নারী হয়ে জন্মানো। আমাদের সমাজে দরিদ্র গরীব নারীর কোন নিরাপত্তা নেই। স্বামী ইচ্ছে করলেই যে কোনো মূহুর্তে তাকে তিন তালাক বলে বিতাড়িত করতে পারেন। এরা নিরক্ষর তাই সদিচ্ছা থাকলেও উপার্জনের সন্ধানে বাড়ীর বাইরে যাওয়ার অধিকার থাকেনা। শ্বশুরবাড়ী এমন কি নিজের বাপের বাড়ীতেও তারা আদরনীয় নন। প্রায় একই কারণে, আপদ বিদেয় করতে গিয়ে একজনের খাওযা খরচ বাচাঁনোই হয়ে ওঠে তখন সবার উদ্দেশ্য। আবার মেয়ে তালাকপ্রাপ্তা হযে বাপের বাড়ীতে ফিরে এলে সেই নারীর কপালে অহরহ জোটে ভয়াবহ অপমান ও লাঞ্ছনা, সবার চোখে সে হয় অবাঞ্চিত।
দরিদ্র জনসাধারণের অধিকাংশই থাকেন নারী। অভাবের তাড়নায় তারা নাম মাত্র পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করতে বাধ্য হন। যেহেতু সন্তানদের সাথে তাদের সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ট, তাই তাদের হাতেই রয়েছে আগামী প্রজন্মের ভার। তাদের হাতেই ভবিষত্ জীবনের চাবিকাঠি।
ড. ইঊনূসের চোখে মা জাতি অনেক উর্দ্বে। তাদের প্রতি তাঁর দরদ ও মমত্ববোধ অপরিসীম। তাই তিনি ঋণদানের ক্ষেত্রের মহিলাদের অগ্রাধিকারের কথাই বেশী ভাবতেন। তাঁর মতে পুরুষদের প্রতি পক্ষপাতের প্রতিকারের জন্য নয়, উন্নয়নের স্বার্থে মহিলাদের ঋণের সুযোগ করে দেবার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। ড. ইঊনূস খতিয়ে দেখেছেন
-
পুরুষদের তুলনায় মহিলারা ঋণের প্রয়োগ করে অনেক দ্রুত এবং আশাতীত পরিবর্তন আনতে পারেন
-
পুরুষদের চেয়ে মহিলারা অনেক বেশী দারিদ্র ও ক্ষুধার যন্ত্রণায় জর্জরিত থাকেন
-
পর্যাপ্ত আহারের অভাবে পরিবারের সব সদস্যের মধ্যে অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী যাকে উপবাসী থাকতে হয়, তিনি হলেন “মা”। মায়ের জন্য সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা হল দুর্ভিক্ষ ও চরম অন্নাভাবের দিনগুলিতে সন্তানকে দুধপান করাবার ক্ষমতাটুকুও পর্যন্ত তার অবশিষ্ট থাকে না
-
নারী তালাক নিয়ে বাপের বাড়ী ফিরে এলে তাদের ভাগ্যে জোটে চরম অপমান ও লাঞ্ছনা। তারা কোথাও আদরনীয় নন। এজন্য কোন সুযোগ পেলে নিজেদের নিরাপত্তা অর্জন করতে আন্তরিকভাবে হন সচেষ্ট এবং দারিদ্রের আগ্রাসন থেকে মুক্তির জন্য কঠিনতম সংগ্রাম করতে সবসময় প্রস্তুত থাকেন
-
এরপর লাঞ্ছিত, দারিদ্র নিপীড়িত মহিলারা নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্ন জেনেও সন্তানকে ভালভাবে মানুষ করতে সংগ্রাম করেন। পুরুষের তুলনায় নিজেদের কাজে তারা থাকেন অনেক বেশী একনিষ্ঠ
-
ড. ইউনূসের চোখে পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন। দরিদ্র পিতা যেইমাত্র অতিরিক্ত আয় করতে শুরু করেন তখনই তিনি নিজের প্রতিই অতিমাত্রায় মনোযোগী হয়ে পড়েন। পক্ষান্তরে অত্যন্ত দুঃস্থ সর্বহারা নারী যখন প্রথম উপার্জন শুরু করেন তার সব সাধ ও স্বপ্ন অনিবার্য ভাবে গড়ে ওঠে সন্তানদের কেন্দ্র করে। তারপর মায়ের নজর পড়ে তার সংসার বা গৃহস্থালীর প্রতি। প্রয়োজনীয় টুকিটাকি জিনিস কেনা অথবা ঘর মেরামত অর্থ্যাত্ এমন সব আয়োজন যা পরিবারের মান উন্নয়নের উপযোগী। ড. ইউনূস ঋণ গ্রহীতাদের কাছে শুনতে পেয়ে অবাক হতেন যে দুর্ভিক্ষ, ঝড় বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়েও তাদের বড় সমস্যা তাদের স্বামীদের নিয়ে।
ড. ইঊনূস অভিজ্ঞতার আলোকে অত্যন্ত দরদ দিয়ে উপলব্ধি করতেন যে সমাজে অসহায় দরিদ্র নারীর কোন নিরাপত্তা নেই। তাঁর বিবেচনায় ঋণদান প্রকল্পে মহিলাদেরই অগ্রাধিকার দিতে হবে। গ্রামীণ ব্যাংক পুরুষদেরও ঋণদান করেন। তবে এখানে স্ত্রীরাই থাকেন মুখ্য গ্রহীতা।
ড. ইঊনূসের কাছে একবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা ভদ্র ভাষায় অথচ কড়া করে চিঠি লিখেছিলেন, “কেন আপনাদের অধিকাংশ ঋণ গ্রহীতা মহিলা”?
উত্তরে ড. ইঊনূস লিখেছিলেন, “আমাদের ঋণগ্রহীতারা অধিকাংশই মহিলা কেন তা আলোচনা করতে আমি আগ্রহী। কিন্তু তার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যাংকের কাছে কখনও কি জানতে চেয়েছে কেন তাদের অধিকাংশ ঋণগ্রহীতা পুরুষ?” এ চিঠির জবাব কোন দিনই আর পাননি তিনি।
পুরস্কার ও সম্মাননা
একাডেমিক ক্ষেত্রে প্রাপ্ত সম্মানসূচক ডিগ্রি সমুহ১. দক্ষিণ আফ্রিকার ভেন্ডা ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী দক্ষিণ আফ্রিকা ২০০৬ ২. ফাউন্ডেশন অব জ্যাস্টিস পুরস্কার স্পেন ২০০৫ ৩. স্পেনের Universidad complutense থেকে Doctor Honoris Causa ডিগ্রী স্পেন ২০০৪ ৪. থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজী (AIT) থেকে ডক্টর অব টেকনোলজী ডিগ্রী থাইল্যান্ড ২০০৪ ৫. ভারতের বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রী ভারত ২০০৪ ৬. ইতালীর University of Bologna থেকে ডক্টর ইন Pedagogyst ডিগ্রী ইতালী ২০০৪ ৭. ইতালীর ইতালীর University of Florence থেকে ডক্টর ইন বিজনেস ইকনমিক্স ডিগ্রী ইতালী ২০০৪ ৮. আর্জেন্টিনার Universitad Nacional De cuyo থেকে ডক্টর অব ইউনিভার্সিটি ডিগ্রী আর্জেন্টিনা ২০০৩ ৯. দক্ষিণ আফ্রিকার University of Natal থেকে ডক্টর অব ইকনমিক্স ডিগ্রী দক্ষিণ আফ্রিকা ২০০৩ ১০. বেলজিয়ামের ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব লুভেন থেকে ডক্টর অব ইউনিভার্সিটি ডিগ্রী বেলজিয়াম ২০০৩ ১১. যুক্তরাষ্ট্রের কোলগেট ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব হিউম্যান লেটারস ডিগ্রী যুক্তরাষ্ট্র ২০০২ ১২. অষ্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজী থেকে ডক্টর অব ইউনিভার্সিটি ডিগ্রী অষ্ট্রেলিয়া ২০০০ ১৩. ইতালীর তুরিন ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব ইকনমিক্স এন্ড বিজনেস ডিগ্রী ইতালী ২০০০ ১৪. বেলজিয়ামের ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব লুভেন থেকে ডক্টর অব ল’ ডিগ্রী বেলজিয়াম ১৯৯৮ ১৫. অষ্ট্রেলিয়া সিডনি ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরঅব সায়েন্স ইন ইকনমিঙ্ ডিগ্রী অষ্ট্রেলিয়া ১৯৯৮ ১৬. কানাডার টরেনটো ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব ল’ ডিগ্রী কানাডা ১৯৯৫ ১৭. যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউথ টেনেসী থেকে ডক্টর অব সিভিল ল’ ডিগ্রী যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৮ ১৮. যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব সোস্যাল সায়েন্সে ডিগ্রী যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৮৮ ১৯. যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ রাজ্যের ব্রিগহাম ইয়ং ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব হিউম্যান লেটারস ডিগ্রী যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৮ ২০. যুক্তরাষ্ট্রের জেভিয়ার্স ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব পাবলিক সার্ভিস যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ ২১. যুক্তরাষ্ট্রের হাভারফোর্ড কলেজ থেকে ডক্টর অব ল’ ডিগ্রী যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৬ ২২. যুক্তরাজ্যের ওযারউইক ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব ল’ ডিগ্রী যুক্তরাজ্য ১৯৯৬ ২৩. যুক্তরাষ্ট্রেরওভারলিন কলেজ হতে ডক্টর অব হিউম্যানিটিস ডিগ্রী যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৩ ২৪. যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ইষ্ট এংগলিয়া হতে ডক্টর অব লেটারস ডিগ্রি যুক্তরাজ্য ১৯৯২বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্ত পুরস্কার সমূহ১. বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটি স্বর্ণপদক পুরস্কার ২০০৫ ২. আইডিইবি স্বর্ণপদক পুরস্কার ২০০২ ৩. ঢাকা মেট্রোপলিটন রোটারী ক্লাব ফাউন্ডেশান পুরস্কার ১৯৯৫ ৪. ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহীম গোল্ড মেডেল পুরস্কার ১৯৯৪ ৫. রিয়ার এ্যাডমিরাল এম,এ,খান মেমোরিয়াল গোল্ড মেডেল পুরস্কার ১৯৯৩ ৬. স্বাধীনতা পুরস্কার ১৯৮৭ ৭. বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার ১৯৮৫ ৮. রাষ্ট্রপতি পুরস্কার ১৯৭৮আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পুরস্কার সমূহ১. আই.টি.ইউ ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন সোসাইটি এ্যাওয়ার্ড সুইজারল্যান্ড ২০০৬ ২. ফ্র্যাঙ্কলিন ‘ডি’ রোজভেল্ট ফোর ফ্র্রিডমস এ্যাওয়ার্ড নেদারল্যান্ড ২০০৬ ৩. গ্লোবাল সিটিজেন অব দি ইয়ার এ্যাওয়ার্ড যুক্তরাষ্ট্র ২০০৬ ৪. নিউষ্ট্যাট এ্যাওয়ার্ড যুক্তরাষ্ট্র ২০০৬ ৫. Freedom Award পুরস্কার যুক্তরাষ্ট্র ২০০৫ ৬. প্রাইজ-২ পন্টি ইতালী ২০০৫ ৭. Golden cross of the Civil order of the Social Solidarity পুরস্কার স্পেন ২০০৫ ৮. The Economist Award for Social and Economic innovation পুরস্কার যুক্তরাষ্ট্র ২০০৪ ৯. World Affairs Council Award for Extra ordinanary Contributions to Social Change পুরস্কার যুক্তরাষ্ট্র ২০০৪ ১০. City of orvieto Award ইটাঁলী ২০০৪ ১১. Premiogalileo 2000- Special Prize for peace ইটাঁলী ২০০৪ ১২. Nikkei Asia Prize for regional Growth পুরস্কার জাপান ২০০৪ ১৩. Telecinco Award for Better path towards Solidority পুরস্কার স্পেন ২০০৪ ১৪. Leadership in social Entrepreneurship Award যুক্তরাষ্ট্র ২০০৪ ১৫. Volvo এনভাইরনমেন্ট পুরস্কার সুইডেন ২০০৩ ১৬. ওয়ার্ল্ড টেকনোলজী এ্যাওয়ার্ড যুক্তরাজ্য ২০০৩ ১৭. Volvo এনভায়রমেন্ট পুরস্কার সুইডেন ২০০৩ ১৯. গণপ্রজাতন্ত্রী কলম্বিয়ার মহামান্য প্রেসিডেন্ট কর্তৃক National Merit Order সম্মাননা প্রদান কলম্বিয়া ২০০৩ ২০. ওযার্ল্ড টেকনোরজী এ্যাওয়ার্ড যুক্তরাজ্য ২০০৩ ২১. গণপ্রজাতন্ত্রী কলম্বিয়ার মহামান্য প্রেসিডেন্ট কর্তৃক National Merit Order সম্মাননা প্রদান কলম্বিয়া ২০০৩ ২২. UNESCO কর্তৃক The Medal of the painter Oswaldo Guayasamin পুরস্কার প্রদান ফ্রান্স ২০০৩ ২৩. ১২ তম ফুকুওকা এশিয়ান সাংস্কৃতিক পুরস্কারের Grand prize জাপান ২০০১ ২৪. Forlimpopoll- Artusi পুরস্কার ইটাঁলী ২০০১ ২৫. ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেটিভ পুরস্কার Caja De Granada স্পেন ২০০১ ২৬. NAVARRA ইন্টারন্যাশনাল এইড এ্যাওয়ার্ড স্পেন ২০০১ ২৭. ১২ তম ফুকুওকা এশিয়ান সাংস্কৃতিক পুরস্কারের Grand prize জাপান ২০০১ ২৮. হো চী মিন্ এ্যাওয়ার্ড ভিয়েতনাম ২০০১ ২৯. বাদশা হোসেইন হিউমেনিটেরিযান লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ড জর্ডান ২০০০ ৩০. দি মেডেল অব দি সিনেট অব দি ইঁটালীয়ান রিপাবরিক ইটাঁলী ২০০০ ৩১. OMEGA এ্যাওয়ার্ড অব এক্সিলেন্সি ফর লাইফ টাইম এ্যাচিভমেন্ট সুইজারল্যান্ড ২০০০ ৩২. গোল্ডেন পেগাসাস পুরস্কার ইটাঁলী ১৯৯৯ ৩৩. রোমা এ্যাওয়ার্ড ফর পিস এ্যান্ড হিউমেনিটেরিয়ান এ্যাকশন ইটাঁলী ১৯৯৯ ৩৪. Just of the year ১৯৯৯ ৩৫. রোটারী এ্যাওয়ার্ড ফর ওয়ার্ল্ড আন্ডারষ্ট্যান্ডিং যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৯ ৩৬. রবীন্দ্র পুরস্কার ভারত ১৯৯৯ ৩৭. ইন্ধিরা গান্ধী পুরস্কার ভারত ১৯৯৮ ৩৮. প্রিন্স অব এষ্টুরিয়াস ফর কনকর্ড পুরস্কার স্পেন ১৯৯৮ ৩৯. ওয়ান ওয়ার্ল্ড ব্রডকাষ্টিং ট্রাষ্ট মিডিয়া পুরস্কার যুক্তরাজ্য ১৯৯৮ ৪০. ওজাকি (গাকুদো) পুরস্কার জাপান ১৯৯৮ ৪১. সিডনি পিস পুরস্কার অষ্ট্রেলিয়া ১৯৯৭ ৪২. ষ্টেট অবদি দি ওয়ার্ল্ড ফোরাম পুরস্কার যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ ৪৩. BMANA মানবিক পুরস্কার যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ ৪৪. আন্তর্জাতিক গি্লটসম্যান ফাউন্ডেশন এ্যাকটি ভিস্ট পুরস্কার যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ ৪৫. প্ল্যানেটরী কনশাসনেস বিজনেস ইনোভেশন প্রাইজ হাঙ্গেরী ১৯৯৭ ৪৬. হেল্প ফর সেল্ফ হেল্প প্রাইজ নরওয়ে ১৯৯৭ ৪৭. ম্যান ফর পিস পুরস্কার ইটাঁলী ১৯৯৭ ৪৮. UNESCO আন্তর্জাতিক সাইমন বলিভার ও পুরস্কার ভেনেজুয়েলা ১৯৯৬ ৪৯. ভেন্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সমিতি কর্তৃক প্রবর্তিত সর্বপ্রথম কৃতি প্রাক্তন ছাত্র পুরস্কার যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৬ ৫০. ম্যাক্স ইশমিডহাইনি ফাউন্ডেশন ফ্রিডম পুরস্কার সুইজারল্যান্ড ১৯৯৫ ৫১. বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৪ ৫২. ফিফার পিস প্রাইজ যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৪ ৫৩. ফেয়ার মানবিক পুরস্কার যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৩ ৫৪. মোহাম্মদ শাহাবউদ্দীন আর্থসামাজিক পুরস্কার শ্রীলংকা ১৯৯৩ ৫৫. আগাখান স্থাপত্য পুরস্কার সুইজারল্যান্ড ১৯৮৯ ৫৬. রামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার ফিলিপাইন ১৯৮৪বিশেষ সম্মান সূচক পদবী১. ফ্রান্সের মহামান্য প্রেসিডেন্ট শিরাক কর্তৃক ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় সম্মান’Legion D’Houneur’ সদস্য পদ প্রদান ফ্রান্স ২০০৪ ২. এশিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশ কর্তৃক একজন সম্মানিত ফেলো নির্বাচিত বাংলাদেশ ২০০৩ ৩. জাতিসংঘ কর্তৃক “International Goodwill Ambassador for UNAIDS” নিয়োগ জাতিসংঘ ২০০২ ৪. যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সংবাদ মাধ্যম ইউ এস নিউজ এর দৃষ্টিতে বিশ্বের সেরা ব্যক্তিত্বদের একজন নির্বাচিত যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ ৫. হংকং থেকে এশিয়া উইক পত্রিকার দৃষ্টিতে Asian of the Century (1900-99) নির্বাচিত হংকং ২০০০ ৬. ভারতের শীর্ষ স্থানীয় দৈনিক আনন্দ বাজার পত্রিকার দৃষ্টিতে শতাব্দীর (১৯৯০-৯৯) সেরা দশজন বাঙ্গালীর একজন নির্বাচিত ভারত ২০০০ ৭. হংকং থেকে এশিয়া উইক আন্তর্জাতিক পত্রিকার টুয়েন্টি গ্রেট এশিয়ানস্ ১৯৭৫-৯৫ নির্বাচন হংকং ১৯৯৫ ৮. দি ডেন্টাল ষ্টার পত্রিকার “ম্যান অফ দি ইয়ার” নির্বাচন বাংলাদেশ ১৯৯৪ ৯. ফিলিপাইনের নিগ্রোস ওক্সিডেন্টাল প্রদেশের প্রাদেশিক আইন পরিষদ কর্তৃক এডপটেড অব নিগ্রোস ওক্সিডেন্টাল পদবী প্রদান ফিলিপাইন ১৯৯২ গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃক প্রাপ্ত পুরস্কার ১. Petersberg Prize 2004 পুরস্কার যুক্তরাষ্ট্র ২০০৪ এছাড়াও তিনি আরো অন্যান্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বাংলাদেশের জন্য নোবেল নিয়ে এলেন ড. ইউনূস | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|