আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন ছিলেন একজন জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক, শিক্ষাবিদ ও প্রশাসক। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা প্রসারে আল-মুতী শরফুদ্দিনের অবদান অসামান্য। তিনি এদেশের বিজ্ঞানকে ছোটদের মধ্যে জনপ্রিয় করার পথিকৃৎ।
তিনি ১৯৩০ সালের পয়লা জানুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলার ফুলবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে বি.এস.সি. (অনার্স) ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর বৃত্তি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং সেখানে শিক্ষা বিষয়ে পড়াশুনা করেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৬০ সালে এম.এ. ডিগ্রি এবং ১৯৬২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবনে তিনি প্রথম প্রবেশ করেন সরকারী শিক্ষা বিভাগে। এরপর ১৯৫৪ সালে রাজশাহী সরকারী কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং ছয় মাস পরেই অধ্যাপক হন। সেখান থেকে ঢাকার টিচার্স ট্রেনিং কলেজে বদলি হন ১৯৫৬ সালে। ছয় বছর পর পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও প্রধান হয়ে চট্টগ্রাম সরকারী কলেজে চলে যান ।
বিদেশ থেকে ফিরে তিনি শিক্ষা-সম্প্রসারণ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এরপর সেখানে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন । দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে তাঁকে সোভিয়েত ইউনিয়নে বাংলাদেশের দূতাবাসে শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক কাউন্সেলর করে পাঠানো হলো । দুবছর পর ঢাকায় ফিরে প্রথমে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের যুগ্মসচিব নিযুক্ত হলেন। তারপর হলেন গণশিক্ষা বিভাগের পরিচালক। তারপর কিছুকাল কাটালেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে। সবশেষে সচিব হিসেবে ফিরে গেলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে। ১৯৮৬ সালের শেষ দিনটিতে তিনি সরকারি কর্ম থেকে অবসর নিলেন। কর্মজীবন থেকে অবসর নেয়ার পরও তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
এসব গুরুদায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রচুর লেখালেখি করেছেন আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন। বড়দের জন্যে লিখেছেন ‘বিজ্ঞান ও মানুষ’ (১৯৭৫), ‘শিক্ষা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’ (১৯৭৫), ‘এ যুগের বিজ্ঞান’ (১৯৮১), ‘বিচিত্র বিজ্ঞান’ (১৯৮৫), ‘বিপন্ন পরিবেশ’ (১৯৮৫), ‘প্রাণলোক : নতুন দিগন্ত’ (১৯৮৬), ‘বিজ্ঞানের বিস্ময়’ (১৯৮৬)। অনুবাদ ও সম্পাদনা করলেন কিছু। আর ছোটদের জন্যে লিখেছেন : ‘জানা-অজানার দেশে’ (১৯৭৬), ‘সাগরের রহস্যপুরী’ (১৯৭৬), ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে’ (১৯৮০), ‘মেঘ বৃষ্টি রোদ'(১৯৮১), ‘ফুলের জন্য ভালোবাসা’ (১৯৮২), ‘সোনার এই দেশ’ (১৯৮৩), ‘তারার দেশের হাতছানি’ (১৯৮৪), ‘ছবিতে আমাদের পরিবেশ’ (প্রথম ভাগ ১৯৮৭, দ্বিতীয় ভাগ ১৯৯০), ‘টেলিভিশনের কথা’ (১৯৮৭), ‘কীটপতঙ্গের বিচিত্র জগৎ’ (১৯৮৮), ‘বিজ্ঞান এগিয়ে চলে’ (১৯৯১), ‘চোখ মেলে দেব’ (১৯৯২), ‘ফারিয়া নাদিয়ার মজার সফর’ (১৯৯৬), ‘আকাশ অনেক বড়’ (১৯৯৮)। এছাড়াও তিনি আরও অনেক বই লিখেছেন।
১৯৯৮ সালের ৩০শে নভেম্বর আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসূত্র: ‘গল্পে গল্পে আবদুল্লাহ আল-মুতী’-লেখক আনিসুজ্জামান।
লেখক : মৌরী তানিয়া