আঞ্জেলা গমেজ গ্রামের অসহায় নির্যাতিত মহিলাদের মাঝেই সব সময় তাঁর ঠিকানা খোঁজার চেষ্টা করেছেন। নারীর অধিকার আদায়ের জন্যে তিনি আজীবন কাজ করেছেন। ছাত্রী অবস্থায়ই তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে মহিলাদের দুঃখ কষ্ট জানবার চেষ্টা করতেন। ফলে অনেক কাছ থেকে মহিলাদের মানবেতর জীবনযাপন দেখেছেন। এ সময়ই আঞ্জেলা সিদ্ধান্ত নেন, নারী উন্নয়নে কাজ করবেন। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আজ তিনি তাঁর লক্ষ্যে পৌছাতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘বাঁচতে শেখা’ নামের একটি বিশাল প্রতিষ্ঠান যারা গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের সেবার যে ব্রত তিনি নিয়েছিলেন তা পালন করার জন্য সারাজীবন সংসার করেননি আঞ্জেলা। ‘বাঁচতে শেখা’ই তাঁর পরিবার, এর সদস্যরাই তাঁর আপনজন। নিরলস পরিশ্রমের স্বীকৃতি হিসেবে আঞ্জেলা গমেজ ‘এশিয়ার নোবেল’ হিসেবে পরিচিত ‘ম্যাগসেসে পুরষ্কার’ লাভ করেছেন। নিচের লেখায় এই মহীয়সী নারীর সংগ্রামী জীবনের কিছু অংশ তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।
জন্ম ও বংশপরিচয়
১৯৫২ সালের ১৬ জুলাই আঞ্জেলা গমেজ জন্মগ্রহণ করেন। সূর্য যখন তার কলস থেকে পৃথিবীতে আলো ঢেলে দেয়, ঘুমন্ত কুড়ি যখন পাপড়ি মেলে হেসে ওঠে ঠিক তখনই আঞ্জেলা পৃথিবীর আলো-হাওয়ায় পা রাখেন। আর একারণেই তাঁর নাম রাখা হয় ‘ফুল’। বৃহত্তর ঢাকা জেলার (বতর্মান গাজিপুর জেলা) কালীগঞ্জ থানার নাগরি ইউনিয়নের নিভৃত মাল্লা গ্রামে আঞ্জেলা জন্মগ্রহণ করেন। ৯ ভাই বোনের মধ্যে তিনি সপ্তম। বাবা আগস্টিন গমেজ এবং মার নাম ইসাবেলা। দাদা (ঠাকুরদা) ভিনসেন্ট গমেজের পূর্বের বংশের কারো নাম আঞ্জেলার জানা নেই। ভিনসেন্ট গমেজের আদি নিবাস ছিল চট্টগ্রামে। রোমান ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী আঞ্জেলার পূর্ব পুরুষ সাধু ভক্ত দাদা (ঠাকুর দাদা) ভিনসেন্ট গমেজ কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি কৃষি কাজের উদ্দেশ্যে গাজিপুরে আসেন। গাজিপুরের মাল্লা গ্রামে বেশ কিছু জমি কিনে কৃষি কাজ শুরু করেন। আঞ্জেলার বাবার ১২ বছর বয়সে দাদা ভিনসেন্ট মারা যান। এর ঠিক এক বছর আগে দাদী (ঠাকুর মা) মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর আগস্টিন গমেজ এতিম হয়ে পড়েন। শৈশবে বাবা মাকে হারিয়ে তিনি জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হন, শুরু করেন কৃষি কাজ। এক সময় বেশ কিছু কৃষি জমি বেহাত হয়ে যায়। তারপরও আগষ্টিন পেছনে ফিরে তাকাননি। একদিকে কৃষি কাজ করেছেন; অন্যদিকে লেখাপড়াও করেছেন। স্থানীয় মঠবাড়ি মিশন স্কুলে তিনি পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পরবতীর্তে ঐ স্কুলের নৈশ বিভাগে তিনি শিক্ষকতাও করেছেন। তরুন বয়সে আগষ্টিন বিয়ে করেন ইসাবেলাকে। ইসাবেলা পঞ্চম শ্রেণী পযর্ন্ত লেখাপড়া করেছেন, তিনিও মঠবাড়ি মিশন স্কুলে মেয়েদের পড়াতেন। আঞ্জেলা বাবা মায়ের সপ্তম সন্তান। সবচেয়ে বড় বোন তেরেজা। ১২ বছর বয়সে বিয়ে হয় এবং ১৩ বছর বয়সে কলেরায় তার মৃত্যু হয়। দ্বিতীয় বোন ভেরুনিকা মাত্র দেড় মাস বয়সে হাম রোগে মারা যায়। তৃতীয় ভাই সিলভেষ্টার গমেজ। পঞ্চম শ্রেণী উত্তীর্ণ সিলভেষ্টার কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি এলাকার একজন বিশিষ্ট সমাজ সেবক। বেশ কিছু শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত। চতুর্থ ভাই আলফ্রেড আড়াই বছর বয়সে জ্বরে মারা যায়। পঞ্চম ভাই ইগ্নাশির্ডস। তিনিও কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ষষ্ঠ বোন মেরী গৃহবধু, পঞ্চম শ্রেণী পযর্ন্ত পড়াশুনা করেছেন। অষ্টম ভাই নিকোলাস গমেজ ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক। তিনিও বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। নবম বোন জেসিন্তা, গৃহবধু। অভাবী কৃষক পরিবারের বিরাট সংসারে ফুলের জন্ম। ভূমিষ্ট হওয়ার পর আঞ্জেলার বাবা তার নাম দেন ‘ফুল’। শিশু বয়সে সবাই আদর করে তাকে ‘ফুল কুমারী’ বলে ডাকতো। পরবর্তীতে তার নাম রাখা হয় কেলিসিতা (আনন্দদানকারী)। আর ভাল নাম রাখা হয় আঞ্জেলা (স্বর্গীয় দূত)। ১৯৮০ সালে আঞ্জেলার বাবা আগষ্টিন গমেজ ও ১৯৯২ সালে মা ইসাবেলা মারা যান
শৈশবকাল
শৈশবে সবাই আঞ্জেলা গমেজকে ‘টারজান’ বলে ডাকতো। তিনি খুব ভালো গাছ বাইতে পারতেন, এক গাছ থেকে অন্য গাছে উঠতে পারতেন। উদোম শরীর আর পকেটওয়ালা প্যান্ট পড়ে সারাদিন জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরেছেন, টক মিষ্টি ফল খেয়েছেন। শৈশবের সেই সুখস্মৃতি আজও তাঁর হৃদয়ে উজ্জ্বল হয়ে আছে। আনই গোটা, কুলু গোটা, ফাটা গোটা, কাঠালি গোটা, মটকিলা গোটা, চালতে গোটা, পেতি জাম, গোদা জাম, দেশি জাম সহ আরো কত নাম না জানা বুনো ফল সাথীদের নিয়ে সারাবেলা ঝোপঝাড় থেকে সংগ্রহ করে পকেটে পুরেছেন তার ইয়ত্তা নেই। তারপর সেইসব ফল উত্সব করে খেয়েছেন। জঙ্গলের সাপ, বেজি, খরগোশ, শেয়াল, সজারু কোন কিছুকেই তিনি ভয় করেননি। বাড়ির পাশের নম্বরি বাড়ি জঙ্গল, কুমারটেক জঙ্গল, কুরানি জঙ্গল, ফকিরবাড়ি জঙ্গল এসব ঘন জঙ্গলে দিনেও কেউ ভিড়ত না। কিন্তু আঞ্জেলা তাঁর সাথীদের নিয়ে জঙ্গল জয় করে ফল সংগ্রহ করেছেন। বড়দের সাথে কলাগাছ দিয়ে সজারু শিকার করেছেন। খড়ি কুড়িয়ে আঁটি বেধে মাথায় করে বাড়ি নিয়ে এসেছেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাহসী। নেতৃত্ব দেয়ার গুণটা ছিল তাঁর একেবারে জন্মগত। আঞ্জেলার খেলার সাথী, জঙ্গলের সাথী ছিল মালতী আর শান্তি। এদের সাথে কানা মাছি ভো ভো, কিতকিত আরো কত খেলা খেলেছেন। প্রতিদিনই তিনি সাথীদের নিয়ে জঙ্গলে যেতেন, পাখির গান শুনতেন। ঘুঘু পাখি, বউ কথা কও পাখি, সুঁইচোরা সহ নাম না জানা রঙিন পাখি এবং তাদের মিষ্টি মধুর গান আঞ্জেলার অসম্ভব ভালো লাগতো শৈশবে বাবাই ছিলেন আঞ্জেলার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। বাবা গল্প শোনাতেন ‘হাসন রাজার নাচন কাঠি, চিকন দাঁতের চিকন পাটি, বারো হাত কাকড়ের তেরো হাত বিচি।’ এসব গল্পের শ্লোক আঞ্জেলার এখনো মুখস্থ। বাবা রাজা, বাদশা, রাস আর স্বর্গের গল্পও শোনাতেন। খারাপ কাজ করলে, পাপ করলে চামড়া কালো হয়ে যাবে। ভাল কাজ করলে স্বর্গে যেতে পারবে, স্বর্গের ফল খেতে পারবে। পুরো স্বর্গ ফল আর ফুল দিয়ে সাজানো। শৈশবের এ গল্প আজও আঞ্জেলার স্মৃতি হয়ে আছে। আঞ্জেলাদের কাঁচা ঘর, বাঁশের বেড়া, ছোট একটি নিকানো উঠানে ছিল স্বর্গের শান্তি। সন্ধ্যা রাতে মা উঠানে বসে পিঠা বানাতেন। ফিলিস পিঠা, বিবিখানা পিঠা, পাটি সাপটা পিঠা। তিনি ভাই বোনদের নিয়ে উঠানে বসে খেলা করতেন। পিঠা বানানো শেষ হলে চুলার কাছে বসেই ভাই বোনদের সাথে পিঠা খেতেন। মায়ের হাতে তৈরী সেই পিঠার স্বাদ স্বর্গের ফলের চেয়ে কোন অংশে কম ছিলনা। আঞ্জেলার মায়ের দু’টি গাভী ছিল, বুধি আর মঙ্গলা। তিনি প্রতিদিন গাভী দু’টির জন্যে ঘাস কেটে আনতেন। গাভী দু’টিকে খুব আদর করতেন। মাল্লা গ্রামের শৈশবকাল লতাপাতায় ধূলিকনায় মায়া মমতায় জড়িয়ে রয়েছে। শৈশবের সেই স্মৃতি আঞ্জেলাকে আজও আবেগ তাড়িত করে। এক নষ্টালজিক সুখ তার মুখ আলো করে, তখন তিনি যেন আবার শিশু হয়ে যান, ‘টারজান’ হয়ে যান।
শিক্ষা জীবন
আঞ্জেলা গমেজের লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয় তাঁর মায়ের কাছে। মা প্রথম ৬ বছর বয়সে তাঁকে স্বরে অ-স্বরে আ পড়াতে শিখিয়েছেন। আদর্শলিপি হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন। অক্ষর চিনতে শিখলে বাবা আগষ্টিন গমেজ আঞ্জেলাকে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে মঠবাড়ি মিশন স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করে দেন। এই স্কুলে আঞ্জেলা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলফ্রেড, এ্যারোন মাষ্টার, শিক্ষিকা আরজিনা আঞ্জেলাকে ভীষণ আদর করতেন, লেখাপড়ার প্রতি বিশেষ যত্ন নিতেন। মঠবাড়ি মিশন স্কুলটি প্রাইমারি পর্যন্ত ছিল। স্কুলের পাশে ছিল গীর্জা। গীর্জার ফাদার ছিলেন ফাদার বার্কম্যান নামের এক আমেরিকান। ১১/১২ বছরে আঞ্জেলা পঞ্চম শ্রেণী উত্তীর্ণ হলে তাঁর অভিভাবকরা তাকে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি ফাদার বার্কম্যানের সাহায্য চান। ফাদার আগে থেকেই আঞ্জেলার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। কেননা আঞ্জেলা গীর্জা ঝাড়ু দিয়ে, ফুল বাগান করে, ফাদারের টুকটাক কাজ করে তার মন জয় করেছিলেন। ফলে তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। মঠবাড়ি মিশন স্কুলে শিশুদের শিক্ষার দায়িত্ব দেন আঞ্জেলাকে। ১২ বছর বয়সে আঞ্জেলা তাঁর নিজের স্কুলেই শিক্ষকতা শুরু করেন। মাল্লা গ্রামে কোন উচ্চ বিদ্যালয় ছিল না বলে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্যে আবারো ফাদারের শরণাপন্ন হন। গ্রাম থেকে ৭/৮ কি. মি. দূর নাগরী মিশনের ‘পাঞ্জুরা বোর্ডিং স্কুলে’ ফাদারের সহযোগিতায় আঞ্জেলা ক্লাস সিক্সে ভর্তি হন। বোর্ডিং চার্জ প্রতি মাসে ১৫ টাকা। ফাদার মাসে ১০ টাকা দিতেন। বাকি টাকা বড় ভাই অনেক কষ্টে জোগাড় করে দিত। এই স্কুলে আঞ্জেলা এক বছর পড়েন। এ সময় তার অভিভাবকরা তাঁকে বিয়ে দেয়ার জন্যে মরিয়া হয়ে ওঠেন। বিয়েতে তাঁর মত ছিলনা কারণ তিনি চেয়েছিলেন পড়াশোনা করে বড় হতে, সমাজের সুবিধা বঞ্চিতদের সেবা করতে। এ কারণে ফের ফাদারের সাথে যোগাযোগ করেন। ফাদার আঞ্জেলাকে ঢাকা হলিক্রস কলেজের টিচার্স ট্রেনিং এর শর্ট কোর্সে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেন। ১৩ বছর বয়সে আঞ্জেলা ঢাকায় এসে কৃতিত্বের সাথে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ গ্রামে ফিরে গিয়ে মঠবাড়ি মিশন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। আঞ্জেলার মনে ছিল শিক্ষা লাভের প্রবল আগ্রহ। এ কারণে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন মিশনারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছে চিঠি লেখেন। কুষ্টিয়ার ভবেরপাড়া মিশন থেকে মাদার পিরিনা আঞ্জেলার চিঠির উত্তর দেন। তিনি জানান, তাঁর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বোর্ডিং এ লেখাপড়ার সুযোগ দেয়া হবে। ফি লাগবে প্রতি মাসে ১৫ টাকা। আঞ্জেলা তাঁর দাদা-বাবু এডোয়ার্ড রোজারিওর সাথে শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে ভবেরপাড়া যাত্রা করেন। ভবেরপাড়া মিশন স্কুলের আঞ্জেলা সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি তাঁর ব্যবহার, অধ্যবসায় আর কাজের জন্যে মাদার পিরিনার স্নেহভাজন হয়ে ক্লাস ক্যাপ্টেনের পদ দখল করেন। বোর্ডিং এর মেয়েদের দেখভাল, সিষ্টারদের কাজে সাহায্য করা সহ সবার সাথে মধুর ব্যবহারের কারণে আঞ্জেলাকে সবাই ‘পাখি’ বলে ডাকতেন। শিক্ষকরা তাঁকে ভালবেসে ‘বড়পাখি’ বলে ডাকতেন। এরই মধ্যে মাদার পিরিনা বদলি হয়ে যশোর চলে গেলে আঞ্জেলার পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে যায়। নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন তিনি। তারপরও হাল ছেড়ে না দিয়ে মাদারকে চিঠি লেখেন। মাদার চিঠি লিখে আঞ্জেলাকে যশোর চলে আসতে বলেন। আঞ্জেলা আগে পিছে না ভেবেই যশোর আসেন। মাদার পিরিনা তাঁকে সেক্রেট হার্ট স্কুলের বোর্ডিং এ থাকার ব্যবস্থা করে দেন। শুরু হয় আঞ্জেলার যশোরের জীবন। অষ্টম শ্রেণী উত্তীর্ণ আঞ্জেলাকে মাদার সেক্রেট হার্ট স্কুলের অস্থায়ী শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেন। কেজি, নার্সারী শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার দায়িত্ব পেয়ে আঞ্জেলা নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। দিনে ক্লাশ নিয়ে রাতে চুরি করে মোম জ্বালিয়ে লেখাপড়া অব্যাহত রাখেন। এস.এস.সি. পরীক্ষা দেয়ার জন্যে যশোর শহরের সেবাসংঘ স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৬৮ সালে ঐ স্কুল থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে এস.এস.সি. পাশ করেন। এরপর নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে ভর্তি হন যশোর মহিলা কলেজে। তিনি কিন্তু কোনদিনই ক্লাশ করার সুযোগ পাননি। শুধুমাত্র প্রবল ইচ্ছা শক্তিকে পুঁজি করে ১৯৭২ সালে দ্বিতীয় বিভাগে এইচ.এস.সি. উত্তীর্ণ হন। সেক্রেট হার্ট কতৃর্পক্ষ শিক্ষকতার জন্যে তাঁর ভাতা বাড়িয়ে ধার্য্য করে ৪০ টাকা। এ টাকায় নিজের খরচ চালিয়ে খাতা কলম বই পুস্তক কিনে আঞ্জেলা লেখাপড়া অব্যাহত রাখেন। মিশন পাড়ার লাল মোহাম্মদ স্যারের কাছে ইংরেজি শেখেন। রাত ১০ টার পর বোর্ডিং এর বাতি জ্বালানো নিষেধ। তা সত্ত্বেও আঞ্জেলা ভোর রাতে চুরি করে মোম জ্বালিয়ে পড়তেন। আর তাঁর এই কাজে সাহায্য করত আসন্তা নানী নামের বোর্ডিং এর একজন আয়া। আজও আঞ্জেলা কৃতজ্ঞচিত্তে তাঁর কথা স্মরণ করেন। এমন প্রতিকুল অসহায় অবস্থাতেই তিনি যশোর মহিলা কলেজ থেকে বি.এ. পরীক্ষা দেন এবং ১৯৭৪ সালে পাশ করেন।
কর্মজীবন
মাত্র ১২ বছর বয়সে মহান শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আঞ্জেলা তাঁর কমর্জীবন শুরু করেন। গাজীপুরের মঠবাড়ি মিশন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় ফাদার বার্কম্যান আঞ্জেলাকে একই স্কুলের খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ করেন। মাসে ১০ টাকা বেতনে তার দায়িত্ব ছিল শিশুদেরকে পড়ানো। অষ্টম শ্রেণী উত্তীর্ণ হবার পর আঞ্জেলা যশোর সেক্রেট হার্ট মিশন স্কুলে খন্ডকালীন শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৭৫ সাল পযর্ন্ত তিনি এ স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন।
নির্যাতিত নারীর সন্ধানে
স্নাতক পাশ করার পর আঞ্জেলা গমেজ গ্রামের অসহায় নির্যাতিত মহিলাদের মধ্যে তাঁর ঠিকানা খোঁজার চেষ্টা করেন। নারীর অধিকার আদায়ের জন্যে তিনি কাজ করতে থাকেন। স্কুলে শিক্ষকতা করার সময় আঞ্জেলা ছুটির দিনে তিনি অন্যান্য সিস্টারদের সঙ্গে শহরতলার আরবপুর, খোলাডাঙা, খড়কি ছাড়াও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ স্মরণপুর গ্রামে ঘুরে ঘুরে মহিলাদের দুঃখ কষ্ট জানবার চেষ্টা করেছেন। কাছ থেকে মহিলাদের মানবেতর জীবনযাপন দেখেছেন। এ সময়ই আঞ্জেলা সিদ্ধান্ত নেন, নারী উন্নয়নে কাজ করবেন। তিনি সেক্রেট হার্ট মিশন স্কুল কতৃর্পক্ষের কাছে কাজ করার জন্যে এক বছরের ছুটি এবং স্কুলের বোর্ডিং-এ থাকার অনুমতি চান। কিন্তু কুমারী মেয়ে বলে স্কুল কতৃর্পক্ষের আঞ্জেলার দাবি মানতে রাজি হয়নি। আঞ্জেলা সেক্রেট হার্ট চার্চের ফাদার চেচি’র কাছে থাকার জায়গা চান। তিনি আঞ্জেলাকে বলেন, ‘তুমি অবিবাহিত মেয়ে। ফাদারদের সঙ্গে থাকলে অনেকে অনেক কথা বলবে। তুমি বাড়ি ফিরে যাও।’ আঞ্জেলা গাজিপুর ফিরে যান। তাঁর বাবা-মা এবার তাঁকে বিয়ে দেয়ার জন্যে উঠে পড়ে লাগেন। আঞ্জেলা ফাদার চেচিকে টেলিগ্রাম করে জানান, ‘আমি মেয়েদের জন্যে কাজ করতে চাই। আমাকে একটি বারের মতো সুযোগ দেন।’ ফাদার আঞ্জেলাকে যশোর আসতে বললে তিনি যশোরে আসেন। ফাদার তাঁকে চার্চের মালি পরিবারের সঙ্গে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। আঞ্জেলা মুক্ত হয়ে ঘরের বাইরে বের হয়ে আসেন। নির্যাতিতা মহিলাদের সাহায্যার্থে ছুটে যান। তাদের সাথে কথা বলে জানলেন তারা কাজ চায়, পরিশ্রম করে সম্মানের সাথে বেঁচে থাকতে চায়। তখন তার একমাত্র চিন্তা ছিল কিভাবে এসব দরিদ্র, নির্যাতিত নারীদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করা যায়।
হস্তশিল্প দিয়ে শুরু
তারপর ১৯৭৬/১৯৭৭ সালের কথা। সাতক্ষীরার এক দম্পত্তি খুব ভাল হস্তশিল্পের কাজ জানতেন। তাঁদের তৈরি পণ্য ঢাকায় বিক্রি করতেন, বিদেশে পাঠাতেন। আঞ্জেলা খোঁজ খবর নিয়ে সাতক্ষীরায় গেলেন। সেখানে ইটালির নাগরিক এনসো ও নাউড়ার কাছে হস্তশিল্পের ওপর এক মাসের প্রশিক্ষণ নেন। এক মাসে তিনি পাটের দড়ি দিয়ে নানা রকম হস্তশিল্প তৈরির কৌশল রপ্ত করে ফেলেন। যশোর এসে আঞ্জেলা টালি খোলা, খৃষ্টান পাড়া, জেলেপাড়াসহ আরো কয়েকটি গ্রামের মহিলাদের নিজে হস্তশিল্পের কাজ শিখিয়ে দেন। এরপর একাজ করে অনেকে সাবলম্বী হন। অন্যদিকে আঞ্জেলা চার্চেও এই প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ পান। চার্চ থেকে প্রতি মাসে পারিশ্রমিক পেতেন তিনশো টাকা। এই টাকার পুরোটাই তিনি দরিদ্রদের জন্য ব্যয় করতেন। ১৯৭৮ সালে আঞ্জেলা হস্তশিল্পের আরো কাজ শেখার জন্যে রাজশাহী যান। সেরিকালচার বোর্ডের পরিচালক মি. সেন গুপ্তের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি আঞ্জেলাকে সেরিকালচারের ওপর এক মাসের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেন। আঞ্জেলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে রাজশাহী থেকে এন্ড্রি পোকা এনে লালন পালন শুরু করেন। যশোরের গ্রামের মহিলাদেরও তিনি রেশমের কাজ শেখান। এরপর তিনি নারকেল মালার গহনা ও হস্তশিল্পের কাজ শেখার জন্যে বরিশালের গৌরনদী যান। সেখান থেকেও হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে অন্য মহিলাদের শিখিয়ে আঞ্জেলা একটি প্রশিক্ষিত নারী দল গড়ে তোলেন। এরিমধ্যে ১৯৭৯ সালের দিকে বদনামের ভয়ে আঞ্জেলাকে চার্চ থেকে বের করে দেয়া হয়।
শুরু হয় উদ্বাস্তু জীবন
চার্চ থেকে বিতারিত হওয়ার পর শুরু হয় আঞ্জেলার পথের জীবন। এনায়েতপুরের কারী চাচা, খোলাডাঙার মোশারফ সাহেবের বাড়িতে কিছুদিনের জন্যে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়। ১৯৮০ সালে আঞ্জেলার সঙ্গে শহরের প্রগতিশীল আমেনা, সালেহা ও রোকেয়া আপার পরিচয় হয়। আঞ্জেলা তাদের কাছে তাঁর স্বপ্নের কথা বলেন। এরা আঞ্জেলাকে উত্সাহ দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। এ সময় কানাডার নাগরিক প্যাটসিএ্যান যশোর আসেন। আঞ্জেলা তাঁর সঙ্গে দেখা করে নারীদের নিয়ে কাজ করার কথা জানান। প্যাটসিএ্যান আঞ্জেলাকে ঢাকায় যোগাযোগ করতে বলেন। তাঁর আশ্বাস পেয়ে আঞ্জেলা ঢাকায় যান। প্যাটসিএ্যান কয়েক কিস্তিতে আঞ্জেলাকে ৮০ হাজার টাকা অনুদান দেন। সে টাকা নিয়ে নতুন উত্সাহে আঞ্জেলা বাঁশ বেতের হস্তশিল্প ও পাখির বাসা তৈরি করা শুরু করেন। ১৯৮১ সালে আঞ্জেলা হস্তশিল্পের কাজের পরিধি বৃদ্ধির জন্যে ১৮ জন মহিলাকে নিয়ে ঢাকা যান। হলিক্রস স্কুলের মাঠে মহিলারা কাঁথা সেলাই করে অনেককে অবাক করে। তিনি মহিলাদের আরো উন্নত সেলাই কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে যশোর ফিরে আসেন। এ সময় ঢাকা থেকে নকশী কাঁথাসহ অন্যান্য কাজের জন্য আঞ্জেলাকে বেশ কিছু অর্ডার দেয়া হয়। ১৯৮১ সালে বিসিক মেলায় স্টল দিয়ে আঞ্জেলা সেলাই কাজের জন্য স্বণর্পদক অর্জন করেন। কুমুদিনী, আড়ং থেকেও তিনি সেলাই কাজের অর্ডার পান।
বাঁচতে শেখার কথা
১৯৮১ সালে আঞ্জেলা গমেজ তাঁর স্বপ্নের সংগঠন ‘বাঁচতে শেখা’র বীজ বপন করেন। সমাজকল্যাণ অফিস থেকে নিবন্ধন নিয়ে যশোর শহরের পুরাতন কসবা এলাকার ফাতেমা হাসপাতালের সামনে ঘর ভাড়া নিয়ে অস্থায়ী কার্যালয় খুলে জোরে সোরে কাজে মন দেন। হস্তশিল্পের কাজের মান উন্নয়নের জন্যে কাশিমপুর, পাগলাদহ, নূরপুর, খোলাডাঙায় ঘর নির্মাণ করেন। গ্রামের শত শত মহিলাকে তাঁর কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে এগিয়ে যেতে থাকেন। নারী শিক্ষা, মানবাধিকার, হস্তশিল্প, নারী স্বার্থ ছাড়াও নারীর সাবলম্বীর জন্যে আঞ্জেলা ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেন। হাজা-মজা পুকুরে মাছ চাষ, কৃষি কাজ করে তিনি বেশ কিছু গ্রামের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটান। এক সময় শুরু করেন ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের কাজ।
১৯৮৫ সালের দিকে ভাড়া বাড়ি থেকে তাঁকে বিতারিত হতে হয়। ১৯৮৬ সালে আরবপুর এলাকায় স্বল্পমূল্যে (বতর্মানে বাঁচতে শেখার প্রধান কার্যালয়) ১৭ বিঘা জমিসহ একটি পরিত্যক্ত ভবন কিস্তিতে ক্রয় করেন। আঞ্জেলা তাঁর সঙ্গী সাথীদের নিয়ে এখানকার জঙ্গল কেটে কৃষি কাজ শুরু করেন। মজা পুকুর সংস্কার করে মাছ ছাড়েন। হস্ত শিল্পের কাজ, আচার তৈরি, হাঁস-মুরগী গরু ছাগলের খামার করে আঞ্জেলা আরবপুরের জমিটিকে একটি সমন্বিত কৃষি খামারে পরিণত করেন।
১৯৮৭/৮৮ সালে নরওয়ে দূতাবাসের কূটনীতিক এলিজাবেথ আই ‘বাঁচতে শেখা’র ভাঙা বাড়ি পরিদর্শনে আসেন। এরপর দূতাবাসের আর একজন কর্মকর্তা রগ রনভেট ‘বাঁচতে শেখা’য় এসে আঞ্জেলার কাজ দেখে মুগ্ধ হন। রগ রনভেট আঞ্জেলাকে ঢাকায় নরওয়ে দূতাবাসে তাঁর সঙ্গে দেখা করার আমন্ত্রণ জানালে তিনি ঢাকায় যান। রগ রনভেট আঞ্জেলাকে একটি অবকাঠামো তৈরির বাজেট দিতে বলেন এবং তাঁর স্বপ্নের কথা জানতে চান। আঞ্জেলা তাত্ক্ষণিকভাবে একটি বাজেট দিয়ে দেন। ১৯৯২ সালের দিকে নরওয়ে দূতাবাসের আর্থিক সহায়তায় ‘বাঁচতে শেখা’র প্রধান কার্যালয় নির্মাণ করা হয়। অফিস, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া, শ্রেণীকক্ষ, একশোজন প্রশিক্ষণার্থী থাকার ঘর, লাইব্রেরি গড়ে তোলা হয় অত্যন্ত স্বল্প ব্যয়ে। বর্তমানে আঞ্জেলা গমেজ এখান থেকেই ১০ লাখ উপকারী ভোগীর জন্যে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনিই ‘বাঁচতে শেখা’র প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক।
পারিবারিক জীবন
‘বাঁচতে শেখা’ সংগঠনই এখন আঞ্জেলা গমেজের পরিবার। ‘বাঁচতে শেখা’র কর্মী , উপকার ভোগীরাই তাঁর পরিবারের সদস্য। এদের নিয়েই আঞ্জেলার এতগুলো বছর পার হয়েছে। বাকি জীবন ‘বাঁচতে শেখা’র পরিবারের সঙ্গেই তিনি সুখে-দুঃখে, আনন্দ-বেদনায় কাটাতে চান। আঞ্জেলা গমেজ বিয়ে করেননি, সংসার করেননি। যশোরের আরবপুরে ‘বাঁচতে শেখা’র প্রধান কার্যালয় ক্যাম্পাসের একটি ঘরে তিনি বসবাস করেন। সংগঠনের আর দশজনের সঙ্গে ‘বাঁচতে শেখা’র ক্যাফেটরিয়ায় তিন বেলা খান। দিনের অবসর সময় কাটে ক্যাম্পাসের প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রের কয়েকজন লাকী, নাজমা, হাজেরা, আসমা এদেরকে নিয়ে।
বাবা ও মা মারা যাবার পর এখন ভাই বোনেরা তাঁর আপনজন। বড়দিনে ভাই বোনদের সাথে দেখা হয়। আঞ্জেলা বড় দিনে গাজিপুরের মাল্লা গ্রামে যান। সেখানে তিন/চার দিন আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, ভাই বোনের সাথে সময় কাটান। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পযর্ন্ত কর্মব্যস্ত থাকার কারণে তাঁর পারিবারিক জীবনের সুখ দুঃখ পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করা সম্ভব হয় না। তারপরও কখনো আবেগতাড়িত হলে ‘বাঁচতে শেখা’র দরিদ্র, অসহায়, নির্যাতিত মহিলাদের সাথে সুখ-দুঃখের গল্প করেন।
ক্ষেত্র ভিত্তিক অবদান
আঞ্জেলা গমেজ তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ‘বাঁচতে শেখা’র মাধ্যমে গ্রামীণ অসহায় নির্যাতিত গরীব মহিলাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। কয়েকটি ভাগে এ কাজ করা হয়। মূলত ১৯৭৬ সাল থেকে নারী উন্নয়নের কাজ ধারাবাহিকভাবে চলছে।শিক্ষা প্রকল্প জীবন-যাপনের মান উন্নয়ন ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্যে ‘বাঁচতে শেখা’ বয়স্ক মহিলাদের শিক্ষা দিয়ে থাকে। এছাড়া যে সব শিশু কিশোর শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে তাদেরকেও লেখাপড়ার আওতায় আনা হয়।ক. বয়স্ক শিক্ষা লিখতে পড়তে জানে না এমন গ্রুপ সদস্যদের ও গ্রামীণ বয়স্ক মহিলাদের নির্বাচিত করে বয়স্ক শিক্ষা দেয়া হয়। তিন বছর মেয়াদী এ শিক্ষা ব্যবস্থায় সংগঠন থেকে আঞ্জেলা গমেজের রচিত বই ও শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হয়। তিন বছর মেয়াদী এই কোর্স শেষ করে একজন মহিলা বাংলা পড়তে, লিখতে ও হিসাব করতে পারেন।খ. কিশোর শিক্ষা গরীব অসহায় ও নানা কারণে ঝড়ে পড়া শিশু কিশোরদের ‘কিশোর শিক্ষা ‘ পদ্ধতির আওতায় এনে শিক্ষা দেয়া হয়। ‘বাঁচতে শেখা’র এই শিক্ষা অর্জন করে শিশু কিশোররা লিখতে পড়তে পারে। পাশাপাশি পুষ্টিজ্ঞান, বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার ছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে। বাঁচতে শেখার শিক্ষা প্রকল্প থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ ৬০ হাজার কিশোর শিক্ষা সুবিধা লাভ করেছে।মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিচর্যা ‘বাঁচতে শেখা’র একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরিচর্যা। গ্রামীণ মহিলাদের এই স্বাস্থ্য সেবার অধীনে শিশুদের ছয়টি মারাত্মক রোগের টিকা প্রদান করা হয়। এছাড়াও মহিলাদের পুষ্টিজ্ঞান, গর্ভধারণ, সন্তান প্রসব, প্রসূতি সেবা ছাড়াও জরুরী চিকিত্সা সেবা প্রদান করা স্বাস্থ্য পরিচর্যা প্রকল্পের অন্যতম। মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিচর্যা প্রকল্প থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ মা ও শিশু উপকৃত হয়েছে।মানবাধিকার উন্নয়ন প্রকল্প মানবাধিকার উন্নয়নে ‘বাঁচতে শেখা’র বড় ধরনের অবদান রয়েছে। নারী-পুরুষের সমান অধিকার ও লৈঙ্গিক বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে বাঁচতে শেখা শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। আইন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা, বিকল্প পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান করা এ কাজের অন্যতম লক্ষ্য। সংগঠনের গ্রুপ মেম্বার ছাড়াও কর্ম এলাকার গ্রামবাসীদের নিয়ে মানবাধিকার উন্নয়নে কাজ করে ‘বাঁচতে শেখা’ অনেক বার প্রশংসিত হয়েছে। এই প্রকল্প থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ মানুষ উপকৃত হয়েছে।মহিলাদের ভোট শিক্ষা প্রকল্প গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগে ‘বাঁচতে শেখা’র বিশেষ অবদান রয়েছে। সংগঠনের সদস্য- সদস্যাদের স্বামী, গ্রামের সাধারণ ভোটার, উন্নয়নকর্মী, নির্বাচনের প্রার্থী এমনকি মৌলবাদীদেরও ভোট শিক্ষা দেয়া হয়। ভোট শিক্ষা লাভ করে গ্রামের মহিলারাও এখন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।প্রতিবন্ধীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্যেও ‘বাঁচতে শেখা’ কাজ করে। সাধারণত কিশোরী প্রতিবন্ধীদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলার লক্ষ্যে আউটডোর ও ইনডোর দু’ভাবে সেবা প্রদান করা হয়। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এক হাজার জন প্রতিবন্ধীকে সেবা দিয়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ করা হয়েছে। হস্তশিল্পে অবদান কৃষি ক্ষেত্রে অবদান হাঁস-মুরগী ও গবাদি পশু পালন মৌ চাষ রেশম চাষ মত্স্য চাষ প্রকল্প ঘূর্ণায়মান ঋণ প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও প্রদর্শনী |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সম্মাননা, স্বীকৃতি ও সংবর্ধনা | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|