মহিলা ক্রীড়াঙ্গনের অগ্রদূত রাবেয়া খাতুন তালুকদার
রীতিমতো অষ্টম আশ্চর্য : ত্রিশ দশকের কাহিনী, পূর্ববঙ্গের মফস্বলের এক মেয়ে তাও আবার মুসলিম পরিবারের। সে কিনা বাইরে যাবে; বাইরে খেলবে। ও মেয়েকে বিয়ে করবে কে? বিয়ে পড়াবে কে? বিয়েতে আসবেনই বা কারা? মেয়েরা পড়াশুনা করছে সেটাই ছিল তখন একটি বিরাট ঘটনা। তার ওপরে খেলাধুলা! ওরে বাপরে! অবিশ্বাস্য ব্যাপার! সেই অবিশ্বাস্যকে বিশ্বাস্য করেছিলেন একজন। কেবল প্রতিভা দিয়ে লড়েছেন প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় ছিলেন আপোসহীন। রাবেয়া খাতুন তালুকদার সেই লড়িয়ে নারীর নাম। বগুড়ার একটি সম্ভ্রান্ত গোড়া মুসলিম পরিবারের বিশেষ করে একটি কন্যা সন্তান হিসেবে গ্রাম থেকে শহর, শহর থেকে নগর এবং নগর থেকে বিশ্বের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত খেলাধুলায়, সমাজ সেবায়, লীডারশীপ কোসে এবং সর্বোপরি একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে সবার মন জয় করে মানুষের পাশে থাকতে পেরেছেন এটি যে কত বড় পাওয়া তা এই ক্ষুদ্র পরিসরে শুধুমাত্র অনুভূতির আখরে লেখা যেতে পারে, মনের মনিকোঠায় স্থান দেয়া যেতে পারে কিন্তু সত্যিকারভাবে তাঁর প্রাপ্য যতটুকু ততটুকু দেওয়া যায় না কোনভাবেই। অনাগত ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি চোখে আঁকা যেতে পারে মাত্র, কিন্তু তার সুদীর্ঘ জীবনটিকে সূক্ষভাবে বিশ্লেষণ করতে গেলে অঙ্কের হিসেবে কিছুতেই মেলানো যাবে না। সে যুগের মন না মানার কিশোরীর স্বপ্নসাধ তিনি বাস্তবে রূপায়িত করেছেন।
পূর্ববঙ্গে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া। বেগম রোকেয়া খাতুনের নির্দেশিত পথে জেগে উঠেছিলেন বগুড়ার এক তরুণী। পারিবারিক সমর্থনে ভেঙ্গেছেন সমাজের খোলস। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় শিক্ষিত ও নীতিজ্ঞানসম্পন্ন হয়ে পৌছেছেন নিজের লক্ষ্যে। তৈরি করেছেন পরবর্তী প্রজন্মের উপযুক্ত ক্ষেত্র।
বেগম রোকেয়া এদেশের নারী জাতিকে দেখিয়ে গেছেন শিক্ষার পথ। পরবর্তী প্রজন্মের আরেকজন রোকেয়ার অর্জনকে এগিয়ে নিয়েছেন আরো। তৈরি করেছেন স্বাস্থ্যবান জাতি তৈরির ক্ষেত্র পর্দাপ্রথা ভেঙ্গে, সমাজের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে মাঠে নিয়ে গেছেন এদেশের মেয়েদের। ত্রিশের দশকে ভারতীয় উপমহাদেশের ট্র্যাক কাঁপানো এ্যাথলেট রাবেয়া খাতুন তালুকদার এই বঙ্গের মহিলা ক্রীড়াঙ্গনের অগ্রদূত। ট্র্যাক থেকে বিদায় নেয়ার পর দীর্ঘদিন সংগঠক হিসেবে এগিয়ে নিয়েছেন পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের মহিলা ক্রীড়াঙ্গনকে। তাঁর প্রদর্শিত পথে জেগে উঠেছে এদেশের মহিলারা।
এ দেশের মহিলা ক্রীড়াক্ষেত্রের অগ্রপথিক বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী রাবেয়া খাতুন তালুকদার দেশে-বিদেশের বহু স্থান সফর শেষে তাঁর সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে অনাগত ভবিষ্যতের ক্রীড়াঙ্গনের ভাই বোনদের প্রতি ছোট্ট উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন- ‘অলিম্পিকের মৌল আদর্শ অনুসরণ করলে প্রাপ্তি, পরিপূর্ণতা লাভ করবে। আর সেই মৌল আদর্শ হলো Altus, Cities, Forties অর্থাৎ উচ্চ থেকে উচ্চতর, দ্রুত থেকে দ্রুততর এবং শক্তি থেকে আরও শক্তিধর হও।’
বিভিন্ন খেলায় বর্তমানে আমাদের মেয়েদের অবদানকে স্মরণ করতে গেলেই সেই রাবেয়া খাতুন তালুকদারদের মত কৃতি এ্যাথলেট, ভলিবল খেলোয়াড়, ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় বা বাস্কেটবল খেলোয়াড়টিকে মনে করতে হয়।
জন্ম
১৯২৬ সালের ২৫ মে বগুড়ার কাটনারপাড়ায় রাবেয়া খাতুনের জন্ম। বাবা মরহুম মহির উদ্দিন আহমেদ এবং মা সবুরননেসা। বাবা তদানীন্তন কাটনারপাড়া ক্রীড়া ক্লাবের সেক্রেটারি ছিলেন। মুক্তমনের এই ব্যক্তিত্ব ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য এবং মহাত্মা গান্ধীর বিশেষ অনুরক্ত ছিলেন। রাবেয়া খাতুনের মা বগুড়ার বিশিষ্ট ধনাঢ্য পরিবারের মেয়ে ছিলেন। ৫ বোন ও এক ভাই-এর মধ্যে রাবেয়া খাতুন সবার বড়।
শৈশব
শৈশব নিয়ে বলতে গিয়ে কাঁচাপাকা চুলে হাত বুলাতে বুলাতে পাড়ি দিলেন স্মৃতির সমুদ্রে ১৯৩১ সালে জুন তাঁর কাবুলিওয়ালার মিনির মতো পাঁচ বছর বয়স তখন, যোগাযোগ শুরু হলো খেলাধুলার সাথে, বাবার হাতেই হাতেখড়ি ব্যাডমিন্টন দিয়ে শুরু। অভিষেকের বছর খানেকের মাথায় বাবা-দাদা-চাচাদের হারিয়ে তাঁক লাগিয়ে দেন এই ক্ষুদে বালিকাটি। নিয়মিত তাসও পেটাতেন বড়দের সাথে। সাইকেলে ঘুরে বেড়াতেন বাড়ির আনাচে-কানাচে। এছাড়া বাড়ির সামনে ছিল বিরাট মাঠ। সেখানেই খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ। প্র্যাকটিসের জন্য বাড়ির বাইরে যাবার দরকার পড়ত না তাই।
বাবা মহির উদ্দিন আহমেদ ছিলেন গান্ধীজীর অনুসারী। বিপ্লবী গান লিখতেন। নাটকও করতেন। তাঁর ছিল একটি-ছোট ক্রীড়াক্লাব। ‘ইংরেজ তাড়াও’ মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সেখানে গোপনে ছোরা খেলা, শেখানে হতো। সেটাও রাবেয়া খাতুন তালুকদার আয়ত্ত করেন পাঁচ/ছয় বছর বয়সে। মুসলিম পরিবারের মেয়ে হয়েও খানিকটা ছাড় পেয়েছিলেন। কারণ তখন গ্রামপ্রধান ছিলেন তাঁর বাবা। গ্রামপ্রধানের কাজের প্রতিবাদ করার সাহস তেমন কারও ছিল না। রাবেয়া খাতুন তালুকদার তাঁর শৈশবকাল থেকেই সবার মধ্যেই নিজেকে যুক্ত করে একটি সুন্দর সুখী সমাজ গঠনের ভাবনায় নিমগ্ন থেকেছেন।
লেখাপড়া
বাবার অধিকাংশ বন্ধু ছিলেন হিন্দু। সে সময়ে হিন্দুরা মুসলমানদের চেয়ে শিক্ষা সংস্কৃতিতে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন। উদারতার সেই ঢেউ বাবার মনেও দোলা জাগাল। সংস্কারমুক্ত বাবা রাবেয়া খাতুনের জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে দেন। ‘বাবা নিজেই আমাকে মুখে মুখে পড়াতেন, যার ফলে বিদ্যালয়ের লেখাপড়ায় আমি তাড়াতাড়ি এগিয়ে যাই’- বললেন রাবেয়া খাতুন নিজেই। বিদ্যলয়ের সূচনা বগুড়ার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে। এই স্কুলেই রাবেয়ার মেধা ও মননের পরিচয় ফুটে উঠে। তিনি সেখানে উচ্চ প্রাইমারি স্কলারশীপ-এ রাজশাহী বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলাতেও দৃষ্টি কাড়তে থাকেন রাবেয়া খাতুন। রক্ষণশীল সমাজের পাহাড় টপকে মাঠে আসাও মূলত বাবার অনুপ্রেরণায়। স্কুল জীবনেই এ্যাথলেটিক্স ও ব্যাডিমন্টনে সম্ভাবনার স্বাক্ষর রাখেন রাবেয়া।
শেরে বাংলা একে ফজলুল হক প্রতিষ্ঠিত নিয়মানুবর্তিতা ও খেলাধুলার অপূর্ব সমন্বয়ে গড়া কলকাতাস্থ লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে লেখাপড়া সেরে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনস্ত হোমারটন কলেজ হতে ফিজিক্যাল এডুকেশনের উপর ডিগ্রী লাভ করেন। অধ্যায়নকালে প্রতিটি জায়গায় তিনি খেলাধুলায় নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেন। ১৯৬৩ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত পাক অলিম্পিকে পূর্ব পাকিস্তান দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করে রিলে দৌড় বিষয়ে- রৌপ্য পদক অর্জন করেন। লেখাপড়া শেষ করে দেশের বিভিন্ন বালিকা বিদ্যালয়, ইডেন কলেজ, ময়মসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ হয়ে ঢাকায় শারীরিক শিক্ষা কলেজে যোগদান করেন।
১৯৩৬-৩৭ সালে পাঠকালীন সময়
ছাত্রাবস্থায় রাবেয়া খাতুন তালুকদারের ক্রীড়া প্রতিভার বিকাশ লাভ ঘটে। কলকাতার লেডী ব্রেবোর্ন কলেজে একটানা ৪ বছর (১৯৪০-৪৪) এ্যাথলেটিক্সে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দুর্লভ গৌরবটি আজও অম্লান। শুধুমাত্র একজন এ্যাথলেট হিসেবেই নয় বাস্কেটবল খেলাতেও তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী।
ক্রীড়াঙ্গনের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়েই তিনি শারিরীক শিক্ষাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে বিটি ডিগ্রি গ্রহণ এবং ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা বিদ্যালয় ও ঢাকার কামরুননেসা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত সিনিয়র শিক্ষকের চাকরি ত্যাগ করে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজের হোমারটন কলেজ থেকে ১৯৫৭ সালে শারিরীক শিক্ষার উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ এবং এরই ধারাবাহিকতায় তত্কালীন পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে অবস্থিত ওয়ালটন কলেজ অব ফিজিক্যাল এডুকেশন থেকে সিনিয়র ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করেন রাবেয়া খাতুন তালুকদার-সেখানে তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ রক্ষা করেন।
রাবেয়ার প্রিয় নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে এই মহান নেতা রাবেয়া খাতুনের জীবনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব রেখে গেছেন। রাবেয়া তখন সবে ম্যাট্রিক পাস করেছেন এবং উচ্চ শিক্ষা বিষয়ে কিছুটা চিন্তিত। কারণ পূর্ববঙ্গের মেয়েদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বল্পতা। ঠিক এই সময়ে কলকাতায় তৈরী হলো লেডী ব্রেবোর্ন কলেজ। প্রতিষ্ঠাতা এ কে ফজলুল হক। তৎকালীন গভর্নরের স্ত্রীর নামানুসারে কলেজের নাম হলো লেডী ব্রেবোর্ন। ভারতবর্ষের আনাচে-কানাচে থেকে বাছাই করা শিক্ষকদের নিয়ে আসলেন ফজলুল হক। প্রিন্সিপ্যালের দায়িত্ব দিলেন একজন ব্রিটিশ মহিলাকে। শেরে বাংলা প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি মুসলমান মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিলো। কলেজ জীবনের সূচনাতেই রাবেয়ার দূরদর্শী পিতা তাঁকে নিয়ে গেলেন লেডী ব্রেবোর্ন কলেজে। শিক্ষাদীক্ষা, নিয়মানুবর্তিতা এবং খেলাধুলার অপূর্ব সমন্বয়ে অনন্য এই কলেজ। এই কলেজে এসেই পূর্ণরূপে বিকশিত হলেন তরুণী রাবেয়া। বিশেষত খেলাধুলায় ছড়িয়ে গেলেন সকলকে। এই কলেজে ভর্তি হয়ে এখানে এইচ.এস.সি. ও বি.এ. পাশ করেন। ১৯৪৪ সালে ব্যাচেলার ডিগ্রি নেয়ার আগ পর্যন্ত রাবেয়া খাতুন চার চারবার কলেজের সেরা ক্রীড়াবিদ নিবার্চিত হন। কলকাতা থেকেই এম.এ. ক্লাসেও লেখাপড়া শেষ করেছিলেন তিনি। কিন্তু ১৯৪৬ সালের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় পরীক্ষা আর দেয়া হয়নি।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে পড়লেও উচ্চ শিক্ষার বাসনা তখনো অটুট। ১৯৫৭ সালে কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবে সুযোগও এসে গেলো। ইংল্যান্ডের বিশ্বখ্যাত কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ হোমারটন কলেজে ফিজিক্যাল এডুকেশনের উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণের সুযোগ পান রাবেয়া খাতুন। পূর্ব পাকিস্তানের একজন হিসেবে এই সুযোগটি ছিল আকাশে চাঁদ হাতে পাওয়া। এই প্রাপ্তির পেছনেও লেডী ব্রেবোর্ন কলেজ। কলেজের একজন সাবেক ইংরেজ অধ্যাপক তখন পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা বিভাগের উচ্চ পদে ছিলেন। তাঁর বিশেষ প্রচেষ্টায় নির্ধারিত সময়ের পরও সেই কোর্সে সুযোগ পেয়েছিলেন রাবেয়া। প্রশিক্ষণের এক পর্যায়ে কলেজে আয়োজিত ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজের সহজাত প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন রাবেয়া খাতুন। বিভিন্ন দেশের প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে তাঁর এই সাফল্য সমগ্র পূর্ববঙ্গের জন্য ছিল বিশেষ গৌরবের।
কেমব্রিজে এডভান্স ট্রেনিং ইন ফিজিক্যাল এডুকেশনের পাশাপাশি তিনি ওয়েলসের স্নোডোনিয়া থেকে ক্যাম্পিং ক্যানোয়িং এবং মাউমন্টিয়ারিং কোর্স ট্রেনিং নেন।
সিনিয়র ডিপ্লোমা ইন ফিজিক্যাল এডুকেশন কোর্স অংশ নেয়ার জন্য ১৯৬২ সালে যান পাকিস্তানের লাহোরে। সে বছরই পাকিস্তানের সেন্ট জোনস এম্বুলেন্স এসোসিয়েশন থেকে ফাস্ট এইড বিষয়ে ট্রেনিং নেন। ঢাকার গার্ল গাইডস এসোসিয়েশন থেকে নেন গার্ল গাইডস ট্রেনিং। রাবেয়া খাতুনের শেষ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল ১৯৬৭ সালে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কোর্সটি শেষ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যেখানে তিনি প্রথম হয়েছিলেন।
পরিবারিক জীবন
ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভের কয়দিন আগে, ১৯৪৭ সালের ১৭ জুন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রাবেয়া খাতুন। পারিবারিক পছন্দে বিয়ে হয় পূর্ববঙ্গের ক্রীড়াঙ্গনের এক অগ্রদূত বগুড়ারই কেরামত আলী তালুকদারের সাথে। লেখাপড়া তখনো থামেনি। আটকে যায়নি খেলাধুলাও। রাবেয়া খাতুনের স্বামীও ছিলেন বাবার মতোই মুক্তমনের মানুষ। ১৯৫০ সালে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিটি ডিগ্রি নিতে কোন সমস্যা হয়নি। এই প্রসঙ্গে রাবেয়া খাতুনের মন্তব্য, ‘আমার বাবার প্রচেষ্টা আমার ভবিষ্যতের সফলতার গোড়াপত্তন করে দেয়। পরবর্তী জীবনে স্বামীর উদারতা আমাকে করেছে গতিশীল।’
স্বামী সরকারের সমাজকল্যাণ অধিদফতরের উচ্চতর কর্মকর্তা হিসেবে অবসর নিয়েছেন। তালুকদার দম্পতির একমাত্র মেয়ে কুলসুম আকতার বানু- স্বপ্না, ফিজিক্সে মাস্টার্স ডিগ্রীধারী।
একজন স্নেহময়ী মা থেকে শুরু করে সংসার ধর্মে স্ত্রীর সুনিপুণ দায়িত্ব আর কর্মক্ষেত্র থেকে ক্রীড়াক্ষেত্র সব ক্ষেত্রেই তাঁর চমকপ্রদ বিচরণই তাঁকে সবার একান্ত আপনজন হিসেবে কাছে টেনে নিতে পেরেছে। ‘খেলাধুলা কেবলমাত্র শারিরীক সুস্থতাই নয় মানসিক প্রশান্তিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে’ এই বিশ্বাস রাবেয়া খাতুন তালুকদারকে জীবনপথে চিরসাথী করেছে আর সেজন্যই তিনি লাভ করেছেন সবার একান্ত ভালবাসা। আমাদের দেশের ক্রীড়াঙ্গনে কে না চিনেন রাবেয়া খাতুন তালুকদারকে। এগিয়ে যাওয়ার দৃপ্তশপথ নিয়ে যিনি শুরু করেছিলেন তাঁর জীবন যাত্রা সেই যাত্রাপথের সোনালী অতীত, সবার অনুপ্রেরণার উত্স হয়েই থাকবে- এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিই বা হতে পারে?
মেয়ে কুলসুম আক্তার বানু স্বপ্না। একসময় ব্যাডমিন্টন ও হকি খেলতেন। এক বোন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ফিজিক্যাল ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি ডিরেক্টর। আর এক বোন ফিজিক্যাল এডুকেশনের ওপর ডিগ্রী নিয়েছে। জ্যেষ্ঠ বোনকে অনুসরণ করে তাঁদের এই সম্পৃক্ততা।
খেলোয়াড়ী জীবন
স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়ায় নিয়মিত বিজয়ী মেয়েটি একদিন পাড়ি জমালেন কলকাতায়। ১৯৪০ সালে লেডি ব্রেবোর্ণে ভর্তি হলেন। সে বছরই কলেজে বাস্কেটবল টিম গঠন করা হলো। আনকোরা মেয়েদের দিয়ে। তবে সাহসের ঘাটতি নেই কারও। ‘আমরা আন্তঃকলেজ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরব।’ সেকি বাহাদুরি! ছেলেমানুষ তো সবাই। চ্যাম্পিয়ন হতে পারলো না ঠিকই তবে অঘটন একটা ঘটিয়েই ছাড়ল। শেষ কয় বছরের রানার্স আপ দল স্কটিশ চার্চকে হারিয়ে দিলো তারা। টুর্নামেন্টের সেরা আপসেট। বাস্কেটবলের এ্যাংলো ইন্ডিয়ান রেফারি মি. পল বললেন, “এরাতো ‘মারিতো গন্ডার, লুটিতো ভান্ডার’ টাইপের মেয়ে।” হ্যাঁ পরদিন পত্রিকার শিরোনাম ছিল- হাসিখুশি এই মেয়ের দল কিনা নাম্বার টুকে মেরেছে। সেদিন রাতে বিশাল ভোজ দেয়া হলো হোস্টেলে। এতসব আয়োজন-উৎসব-অনুষ্ঠান কিন্তু বৃথা গেল না। পরের বছর থেকে বেথুন, স্কটিশ চার্চ, ভিক্টোরিয়ার মতো কলেজকে হারিয়ে রীতিমতো শিরোপা জিতে নিত সেই হাসিখুশি মেয়েরা। কলেজে এ্যাথলেটিক্সে চ্যাম্পিয়ান। বাস্কেটবল দলের তুখোড় সদস্য। হোস্টেলে তখন রাবেয়া খাতুন তালুকদারের অন্যরকম ভাবসাব। স্বয়ং প্রিন্সিপাল এফ.ই. গ্রোজের বিশেষ স্নেহধন্য তিনি। একবার সামান্য ফোঁড়া হয়েছিল তাঁর। হোস্টেল সুপারিনটেন্ডেন্ট ছিলেন খোদেজা খাতুন। আর ডাক্তার হলেন ড. আসমা খাতুন। তাঁরা ভাবলেন, হোস্টেলেই এর চিকিৎসা সম্ভব। প্রিন্সিপালের কানে গেল কথাটা তিনিতো মহাক্ষ্যাপা। তখনই নির্দেশ দিলেন রাবেয়া তালুকদারকে ডাফারিন হসপিটালে চিকিৎসার ব্যবস্থার জন্য। ডাফরিন হসপিটালটি ছিল কেবল সাদা চামড়ার রোগিনীদের জন্য। শিহরিত হলেন রাবেয়া তালুকদার, মনে লেগে থাকল একটি আন্তরিকতার ও কৃতজ্ঞতার স্মৃতি। বিয়ে হলো এরপর, তখন ২০ বছর বয়স, বগুড়া ছেড়ে ঢাকা এলেন, ব্যাপ্ত হলো পরিধি। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি মারা যান আগেই। দুই ননদের বিয়ে হয়েছে। স্বামী উদার, অমায়িক তাঁর সবরকম সহযোগিতা নিয়েই তিনি আবার ব্রতী হলেন কর্মযজ্ঞে।
ঢাকার কায়তটুলিতে থাকতেন তাঁরা ‘ফ্রেন্ডস সোসাইটি’ নামে একটি বিদেশী সংস্থার মানুষদের সাথে। এভাবে সব সময়ই একটি খোলামেলা পরিবেশ পেয়েছেন নিজের পাশে। ১৯৫৭ সাল ফিজিক্যাল এডুকেশনের ওপর ট্রেনিং নিতে কেমব্রিজের তিনি ছাত্রী। তখনকার একটা মজার ঘটনা। প্রতিদিন প্র্যাকটিস শেষে একজনকে পালন করতে হতো একটি দায়িত্ব। খেলাধুলার পর সব সরঞ্জাম স্টোররুমে পৌঁছে দেয়া। এরপর তালাচাবি মেরে চলে আসা। একদিন রাবেয়া খাতুনের সিরিয়াল পড়ল তখন অক্টোবর কি নভেম্বর মাস। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। তারপর ঘন কুয়াশা। স্টোররুমে জিনিসপত্র রেখে আসার সময় খনিকটা অন্যমনস্ক ছিলেন বোধহয়, পথ হারিয়ে ফেললেন। ভীষণ কুয়াশার বিশাল মাঠ সাদা হয়ে গেছে। হোস্টেল রুম, প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড সব ঢেকে গেছে কুয়াশার সমুদ্রে। তিনি হাঁটছেন তো হাঁটছেনই। কোন আলো দেখা যচ্ছে না। আধঘন্টা ধরে এই গোলকধাঁধার মধ্যে ঘুরছিলেন তিনি। ক্লান্তিতে ভয় দূর হয়ে গেছে তাঁর। ওদিকে তাঁর বন্ধু মেয়েরা অপেক্ষায় আছেন নিচে। রুমে পর্যন্ত যাননি, খুবই উদ্বিগ্ন। সেই বন্ধুরাই শেষে এসে উদ্ধার করেন রাবেয়া খাতুনকে। রাবেয়া খাতুন বহু স্কুল-কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। সাধারণ শিক্ষক হিসাবে ইংরেজী-বাংলা-ইতিহাস পড়িয়েছেন। কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানেই তিনি ছিলেন, আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন ছাত্রীরা যেন খেলাধুলা করে। না খেললে মেয়েরা কখনই স্মার্ট হতে পারে না। তাঁর মতে, একটা মেয়েকে ঘরে-বাইরে-রাস্তায় বহু পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়। তার দাঁড়ানো, কথা বলা, চাহনী, চারপাশকে দেখার চোখ, পরিবেশকে বোঝার ক্ষমতা- সব থাকতে হবে। একজন এ্যাথলেটই হলেন সঠিক বুদ্ধিমান ও স্মার্ট। কারণ সে জানে বলটা কখন আসবে। কিভাবে আসবে। একজন মেয়ে নিয়ন্ত্রণ করে তার নিজের পরিবারকে, পুরো সংসারকে। এখানে মেয়েটিকে তার পরিবারের সাথে প্রতিনিয়ত খাপ খাইয়ে চলতে হয়। স্থির থাকতে হয় সব কাজে। খেলাধুলার অভ্যাস তাকে এই কাজে উপযোগী করে তোলে। অথচ মেয়েরা তেমন খেলাধুলায় উৎসাহী নয়। খেলতে বসে লুড়ুর কোর্ট নিয়ে। কিন্তু লুড়ুতো কোন খেলা নয়। এটা একটা বিনোদন এখান থেকে মানসিক বা শারীরিক উন্নতি হয় না।
সংস্কার মুক্ত এই মহিয়সী রমনী খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন বগুড়ার ভিক্টোরিয়াল স্কুলের মাধ্যমে। এই স্কুলে লেখাপড়া করার সময়ই তিনি এ্যাথলেটিক্স ও ব্যাডমিন্টনে সম্ভাবনার স্বাক্ষর রাখেন।
আবারো লেডী ব্রেবোর্ণ কলেজ। খোলোয়াড় হিসাবে প্রথম বড় ধরনের স্বীকৃতি এই কলেজেই। কলেজের ছাত্রী অবস্থায়, আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতায় তিনি চারবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতত্ব দেখান। হাডর্লস, লং জাম্প ও জ্যাভলিনের মতো কঠিন ইভেন্টগুলোতেই যেন বেশ দক্ষ ছিলেন রাবেয়া। বিয়ে রাবেয়া খাতুন তালুকদারের জীবনে কোন প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণা এগিয়ে দিয়েছে তাঁকে। বিয়ের পর প্রথম মাঠে নেমেছিলেন ১৯৪৯ সালে। ঢাকার সদরঘাট টাউন হল মাঠে আয়োজিত এই এ্যাথলেটিক্স আসরটি পূর্ব পাকিস্তানের মেয়েদের জন্য ছিল প্রথম আসর।
রাবেয়া তালুকদারের খেলোয়াড়ী জীবনের আরেকটি স্মরণীয় সাফল্য ১৯৬২ সালে। তাঁর একমাত্র মেয়ের জন্মের পর এই এ্যাথলেটিক্স আসরে মাঠে নেমেছিলেন উদ্যমী ক্রীড়াবিদ রাবেয়া। লাহোরে অনুষ্ঠিত পাক অলিম্পিক তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান দলের অন্যতম সদস্যা তিনি। রিলে ইভেন্টে রৌপ পদক জয়ী দলের অন্যতম স্প্রিন্টার রাবেয়া খাতুন তালুকদার। নিজের খেলোয়াড়ী জীবন সম্পর্কে রাবেয়ার মূল্যায়ন, ‘লেডী ব্রেবোর্ন কলেজের ইংরেজ প্রিন্সিপাল এবং মাদ্রাজী ফিজিক্যাল এডুকেশন চিচার মিস ফ্লোরা নেলসনের শিক্ষা আমাকে এতদূর নিয়ে এসেছে। প্রিন্সিপালের বিশেষ উদ্যোগে আমরা সারা বছর খেলাধুলা করার সুযোগ পেতাম। ২য় বর্ষে উঠেই আমরা কলকাতার বড় বড় কলেজগুলোর সাথে টেক্কা দেয়া শুরু করেছিলাম। বেথুন, ভিক্টোরিয়া, স্কটিশ চাচের্র মতো কলেজকে হারিয়ে আন্তঃকলেজ বাস্কেটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম আমরা। হার্ডলস ইভেন্টে ব্যক্তিগত সোনা জিতেছিলাম আমি।’
কর্মজীবন
দাম্পত্য জীবনের পর পর কর্মজীবনে প্রবেশ। ১৯৪৭-এর শেষ ভাগে। মেধা, শ্রম, একাগ্রতা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের লড়াইয়ে নামলেন রাবেয়া খাতুন তালুকদার। কর্মজীবনের সূচনা ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি গালর্স স্কুলে। ১৯৫০ সালে চলে আসেন ঢাকায়। যোগ দেন কামরুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এখানে থাকতে ফিজিক্যাল এডুকেশনের উপর উচ্চ শিক্ষা নিতে যান ইংল্যান্ডে।
শারিরীক শিক্ষার উপর প্রশিক্ষণ শেষে প্রথমে তিনি ঢাকার ইডেন গার্লস কলেজের ফিজিক্যাল এডুকেশন টিচার, কিছুদিন ময়মসিংহ মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ফিজিক্যাল এডুকেশন লেকচারার এবং ঢাকা শারীরিক শিক্ষা কলেজের লেকচারারের দায়িত্ব পালন করেন দক্ষতার সঙ্গে। তিনি তাঁর যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রেক্ষিতে সরকারী ক্রীড়া পরিদপ্তরের উপ-পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন।
পেশাগত জীবনে সৎ একনিষ্ঠ এবং কর্মদক্ষতায় পারদর্শী রাবেয়া খাতুন তালুকদার মহিলা ক্রীড়াক্ষেত্রের সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে অনন্য কৃতিত্বের সাক্ষর রাখেন। তিনিই এ দেশে প্রথম ইষ্ট পাকিস্তান উইমেন্স এ্যামেচার গেইমস এন্ড স্পোর্টস এসোসিয়েশন গঠন করেন। তিনি এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এদেশের উত্সাহী মহিলা ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠকদের একত্রিত করে মহিলাদের খেলাধুলায় উত্সাহিত করতে সচেষ্ট হন। এই সংগঠনই পরে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রীড়া সংস্থায় রূপ লাভ করে। তিনিই প্রথম বাংলাদেশ উইমেন্স স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট এন্ড কন্ট্রোল বোর্ডের প্রেসিডেন্টের পদ অলংকৃত করে দেশব্যাপী ক্রীড়া আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশ উইমেন্স হকি এসোসিয়েশন গঠন করে এ দেশের মহিলাদের হকি চর্চার ব্যবস্থা করেন। রাবেয়া খাতুন তালুকদার বাংলাদেশ উইমেন্স স্পোর্টস ফেডারেশন ও বাংলাদেশ উইমেন্স স্পোর্টস লীডারস এসোসিয়েশন গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের্, ব্যাডমিন্টন ও জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন, বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি, বাংলাদেশ শারিরীক শিক্ষাবিদ সমিতি, শারিরীক শিক্ষার সিলেবাস কমিটিসহ বহু সংগঠকের সঙ্গেঁ নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন।
কেমব্রিজ থেকে ফিরে ইডেন কলেজে ফিজিক্যাল এডুকেশন টিচার হিসেবে যোগ দেন। পরের বছর (১৯৫৮) ময়মনসিংহের টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রভাষক। এক বছর পরেই (১৯৫৯) আবার ইডেন কলেজে স্বপদে ফিরে আসেন। ১৯৬২ সালে ঢাকার ফিজিক্যাল এডুকেশন কলেজ। প্রভাষক হিসেবে এই কলেজে ছিলেন ১৯৭৮ পর্যন্ত। এই বছরে ক্রীড়া পরিদফতরে এ্যাসিস্টেন্ট ডাইরেক্টর হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮২ সালে আবারো ঢাকার ফিজিক্যাল কলেজে ফিরে আসেন। এই কলেজ থেকেই রাবেয়া তালুকদার বর্ণময় কর্মজীবনের অবসান হয়।
সাংগঠনিক কর্মকান্ড
জেনারেল সেক্রেটারি (১৯৬৭-১৯৭১) ইস্ট পাকিস্তান উইমেন্স এমেচার গেমস এন্ড স্পোর্টস এসোসিয়েশন। প্রেসিডেন্ট (১৯৭৬-১৯৮২) বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। জেনারেল সেক্রেটারি (১৯৮০-৮২) বাংলাদেশ উইমেন্স হকি এসোসিয়েশন।
রাবেয়া খাতুন তালুকদার বহুমুখী গুণের অধিকারী। ঘরে বাইরে, মাঠে-ময়দানে সেমিনারে, আলোচনায় এবং সর্বোপরি বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয়।
ছাত্রী-শিক্ষক, খেলোয়াড়-কর্মকর্তার ভূমিকায় সাফল্যের সাথে পদচারণা ঘটে রাবেয়া খাতুন তালুকদারের। সবচেয়ে বিস্ময়কর, আলাদাভাবে নয়, একই সময়ে একাধিক ভূমিকা সফলভাবে কাজ করে গেছেন এই বহুমুখী প্রতিভাবান নারী। শিক্ষকতা করতে করতেই ছুটে গেছেন ট্রেনিং নিতে, খেলতে খেলতেই অন্যদের খেলার বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন কোচ বা ম্যানেজার হিসেবে।
রাবেয়া খাতুনের স্মৃতিচারণ, ‘বিদ্যাময়ী স্কুলে যোগ দেয়ার পর থেকেই আমি সাংগঠনিক কমর্কাণ্ডে জড়িয়ে পড়ি। এই ধারা অব্যাহত থাকে কামরুন্নেসা স্কুলে এসেও। তখনো খোলা মাঠে মেয়েদের খেলাধুলা ছিল পাগলের কল্পনা।’ এই সময়েই স্কুলের স্বল্প পরিসরে তিনি নিয়মিত মেয়েদের খেলাধুলা করাতেন।
১৯৫২ সালে আকস্মিক ঢাকায় মেয়েদের প্রকাশ্য খেলাধুলা করার একটি সুযোগ এসে যায়। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ফিরোজ খান নুনকে কার্জন হল মাঠে সংবর্ধনা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। সংবর্ধনা মাঠে কামরুন্নেসা স্কুলের মেয়েরা ব্যান্ড বাজায়। স্কুলের এই আয়োজনের অন্যতম নেপথ্য নায়িকা ছিলেন রাবেয়া তালুকদার।
১৯৬৪ সালে নবম পাক অলিম্পিক গেমসে পূর্ব পাকিস্তান মহিলা এ্যাথলেটিক্স দলের ম্যানেজার ছিলেন রাবেয়া খাতুন। ১৯৬৬ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত পাক ন্যাশনাল গেমসে পূর্ব পাকিস্তান এ্যাথলেটিক্স দলের সহকারী ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মহিলাদের খেলাধুলার জন্য প্রথম এক কমিটি গঠিত হলো। স্বাভাবিকভাবেই সেই কমিটির অন্যতম কর্মব্যক্তিত্ব রাবেয়া খাতুন। ইস্ট পাকিস্তান উইমেন্স এমেচার গেমস এন্ড স্পোর্টসের প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল সেক্রেটারি হলেন মিসেস তালুকদার। স্বাধীন দেশে ১৯৭২ সালে গঠিত হলো বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থা। কিছুটা ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হলেও বাংলাদেশের মহিলাদের ক্রীড়া সংস্থার প্রথম কমিটিরও অন্যতম সহ-সভাপতি হলেন তিনি।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয়। ১৯৭৬ সালে সরকার মনোনীত সভাপতি হন রাবেয়া খাতুন তালুকদার। সংস্থার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। মূলতঃ উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে রাবেয়া খাতুনের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই শব্দ দুটি সংস্থার নামের সাথে যুক্ত হয়। পরবর্তী ছয় বছর রাবেয়া তালুকদারের কমিটি বলবত থাকে। ক্রীড়াঙ্গনে সংশ্লিষ্টদের মন্তব্য, মহিলা ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে সফলতম কমিটি ছিল এটি। যাদের শিরদাঁড়ার কাঁটার মতো দেশের অলিতে গলিতে ছড়িয়ে পড়েছিল এই কমিটির কার্যক্রম।
১৯৮০ সালে রাবেয়া তালুকদারের বিশেষ তত্পরতায় গঠিত হয় বাংলাদেশ মহিলা হকি এসোসিয়েশন। তিনি এসোসিয়শনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। করিত্কর্মা এই সংগঠকের চেষ্টায় এসোসিয়েশন এশিয়ান হকি এসোসিয়েশনের অনুমোদন পর্যন্ত যোগাড় করেছিলেন। ১৯৭৮ সালে “Policy making youth executives for Asia and the Pacific” নামে একটি কনফারেন্স পাতায়ার থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়টি ছিলThe Youth role in national development.রাবেয়া খাতুন তালুকদারHead of the Delegates হিসাবে সেখানে যোগদান করেন এবং তাঁর বক্তব্য সুন্দরভাবে পরিবেশন করেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর আস্তে আস্তে ক্রীড়াঙ্গন থেকেও দূরে সরে যান এই সুদক্ষ রমণী। কিছুদিন অবশ্য ফিজিক্যাল ফিটনেসের উপর একটি স্কুল চালিয়ে ছিলেন।
লেখক রাবেয়া
ক্রীড়ানুরাগী রাবেয়া সুযোগ পেলেই লেখালেখি করতেন। প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। চিরন্তন বাঙালী চরিত্রের অব্যাহত ধারায় শরত্চন্দ্র প্রিয় সাহিত্যিক। তবে গন্ডিবন্ধ থেকেছেন খেলাধুলাতেই।
রাবেয়া খাতুন তালুকদার সব সময় মনে করেন, যথার্থ শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ ব্যতিরেকে একজন আদর্শ ক্রীড়াবিদ হওয়া সম্ভবপর নয়। আর সে জন্যই তিনি ক্রীড়া বিষয়ক পুস্তক রচনাতেও সক্রিয় হন। ন্যাশনাল টেক্সট বুক বোর্ডের অধীনে হ্যান্ডবুক অন ফিজিক্যাল এডুকেশন ফর টিচার্স, বৌ-ছি খেলা, ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়মাবলী, সপ্তম শ্রেণীর শারিরীক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রভৃতি নানা বিষয়ের উপর পুস্তিকা প্রকাশ করেন।
লেখালেখির হাতেখড়ি অন্য জায়গায়। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানের ফিজিক্যাল এডুকেশনের বিচারকদের জন্য হ্যান্ডবুক লেখার মাধ্যমে এই অঙ্গনে অভিষেক। ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়মাবলী নিয়ে বই লিখেছেন ১৯৭৮ সালে।
এর আগে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ টেক্সট বুক বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ফিজিক্যাল এডুকেশনের শিক্ষকদের জন্যে তৈরি গাইড ফাইলের অন্যতম সহযোগী রচয়িতা মিসেস তালুকদার। টেক্সট বুক বোর্ডের অধীনে আরো দুটি বইয়ের সহযোগী লেখিকা ছিলেন ১৯৯১ ও ১৯৯৪ সালে।
১৯৯৭ সালে সপ্তম শ্রেণীর জন্য ফিজিক্যাল এডুকেশন বই লিখিছেন রাবেয়া খাতুন তালুকদার। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়েছে ফিজিক্যাল এডুকেশন-সংক্রান্ত বিভিন্ন লেখা। বৌ-ছি খেলার বইটিও লেখেন।
রাবেয়া খাতুন তালুকদার আত্মজীবন নিয়ে লেখা বইটির নাম দিয়েছেন “নিজেকে হারায়ে খুঁজি”। সেখানে তাঁর নিজের চেয়ে লিখেছেন অন্যের কথা। বেশী কৃতজ্ঞতার, প্রেরণার স্মৃতি। কতরকম মানুষের সাথে সম্পর্ক হয়েছে তাই তুলে ধরেছেন কলমে। রাবেয়া খাতুন তালুকদার তাঁর প্রাচুর্যভরা জীবনলিপিতে যুক্ত করেছেন কখনও ভারত, পাকিস্তান, কখনও, ইংল্যান্ডে থাকাকালীন যেখানে গেছেন, আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন নিজের দেশকে বড় করে উপস্থাপন করতে। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের সুবর্ণজয়ন্তীতে, বছর কয়েক আগে সেই কলেজের পত্রিকায় লিখেছিলেন, ‘আমার দেখা লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ’। শেষ জীবনে লিখেছেন ‘আমার দেখা মানুষেরা’।
অবসর জীবন
অবসর সময়ে আশি বছর পার করেও রাবেয়া খাতুন ছিলেন পুরোমাত্রায় সচল। দেখে বয়স বুঝার উপায় ছিল না।
শেষ সময়ে রাবেয়া খাতুন নামাজ-কালাম, নাতি-নাতিন, বইপত্র আর গান নিয়ে সময় কাটিয়েছেন। নাতি-নাতনিদের দেখাশুনার বাইরে সময় পেলে বই পড়তেন বা গান শুনতেন। প্রিয় শিল্পী ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। রবীন্দ্র সঙ্গীতও প্রিয় ছিল। কাটারীভোগ চালের পোলাওর সাথে মুরগীর রোষ্ট তাঁর প্রিয় খাবার ছিল। হাতের কাছে পেলে দেশ-বিদেশের মুদ্রা ও স্ট্যাম্প সংগ্রহ করতেন। বাগানের পরিচর্যায়ও চলে যেত অনেকটা সময়।
পুরস্কার ও সম্মানী
বাংলার মহিলা ক্রীড়াঙ্গনের পথিকৃৎ রাবেয়া খাতুন তালুকদার বাংলাদেশের প্রথম মহিলা হিসেবে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেয়েছন ১৯৭৬ সালে। ক্রীড়াঙ্গনের এই মহিয়সী রমণীকে পুরস্কৃত করে সম্মানিত হয়েছে দেশ। কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ হয়েছে জাতি। আর এ জন্যেই তিনি ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য এদেশে প্রধান মহিলাবিদ যিনি জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারে হয়েছেন ভূষিত আর সেই সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থা দিয়েছে রাবেয়া খাতুন তালুকদারকে করেছে সম্মাননা।
বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ঢাকা-এর সভানেত্রী হিসাবে এ দেশের মহিলা ক্রীড়া উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য তিনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, বাংলাদেশ থেকে সম্মাননা পেয়েছেন।
একই কারণে ২০০২ সালে বগুড়া সাংস্কৃতিক ফোরাম ঢাকা থেকে পেয়েছেন গুণীজন বগুড়া পদক এবং ২০০৪ সালে ফিজিক্যাল এডুকেশনিষ্ট এ্যসোসিয়েশন, ঢাকা থেকে পেয়েছেন প্রবীণ শারীরিক শিক্ষাবিদ সম্মাননা
তবে এইটুকুই। শেষ সময়ে দেশের মহিলা ক্রীড়াঙ্গনে একবারও ডাক পড়েনি এই স্মরণীয় ব্যক্তিত্বের। আজকের নতুন প্রজন্মের কাছে অজ্ঞাত একজন এই রাবেয়া তালুকদার। মহিলা ক্রীড়াঙ্গনের যে কোন অংশের সাথে এই অনন্য ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের নাম জুড়ে দেয়া যেতে পারে। এইভাবে অন্তত আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে এই কৃতি এ্যাথলেট ও সংগঠকের নাম।
ক্রীড়াঙ্গন ভুলে গেলেও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংগঠন স্মরণে রেখেছেন এই স্মরণীয় ক্রীড়া ব্যক্তিত্বকে। ১৯৮৪ সালে ইউনিভার্সিটি প্রেস লি. প্রকাশিত ‘হু ইজ হু ইন’ বাংলাদেশ গ্রন্থে স্থান পেয়েছেন রাবেয়া খাতুন।
নব্বইয়ের দশকে স্বীকৃতি আসে আর্টলান্টিক ওপার থেকে। আমেরিকান বাইওগ্রাফিক্স ইন্সটিটিউট প্রদত্ত ১৯৯৬ সালের ডিসটিংগুউইস লিডারশীপ এওয়ার্ড পান তিনি। পরের বছর একই সংস্থা প্রদত্ত ‘ওমেন অব দ্য ইয়ার’ খেতাব পান রাবেয়া খাতুন তালুকদার।
নিজের বর্ণময় কর্মজীবন সম্পর্কে রাবেয়া খাতুনের মূল্যায়ন, ‘নৈতিক সূচিতায়, শারীরিক সুস্থতায় ও মানসিক প্রশান্তিতে মহৎ, সহজ ও সুন্দর কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখে আমি লক্ষ্যস্থলে পৌছেছি।’ লক্ষ্য সঠিক হলে এবং মানসিক দৃঢ়তা ও মেধার যথার্থ সংমিশ্রণে মানুষ যে কোন লক্ষ্যে পৌছাতে পারে বলে রাবেয়া খাতুন তালুকদার বিশ্বাস করতেন।
তাঁর সম্পর্কে বলতে গিয়ে আব্দুল হামিদ বললেন-‘নারী জাগরণের আর এক অগ্রদূত রাবেয়া খাতুন তালুকদারের সাক্ষাত পাই। তিনি তখন সেই কলেজেরই শিক্ষিকা। তাঁর মত সুদক্ষ শিক্ষিকার নিকট শিক্ষা লাভ করার সুযোগে আমি ধন্য। তিনি কতশত ছাত্র ছাত্রীর জ্ঞান প্রদীপ নিজ হাতে জ্বালিয়েছেন, কত শত পথ হারাকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন তার ইয়াত্তা নেই। তাঁর জ্ঞান রাজ্যের বিশাল সীমানা থেকে আহরিত অমূল্য সম্পদ আমাদের অনেকেরই জীবনকে করেছে সমৃদ্ধ।’
জনসেবা ও দেশপ্রেম মহৎ মানুষের মহৎ গুণ। যাঁরা জাতীয় স্বার্থে সারা জীবন নিজেকে ব্যস্ত রাখেন তাঁরাই দেশপ্রেমিক। রাষ্ট্রের উন্নতি নির্ভর করে জাতির উপর। রাবেয়া খাতুন তালুকদার সারাজীবন বলিষ্ঠ জাতি গঠনে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। এই নিবেদিত প্রাণ দেশপ্রেমিককে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে স্মরণীয় করে রাখা প্রয়োজন।
ধর্মীয় অনুশাসন আর সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মাঝেও প্রতিভার বিকাশ অনিবার্য এ সত্যটির বাস্তবায়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন – কলকাতার লেডী ব্রেবোর্ন কলেজের এককালের চ্যাম্পিয়ন ও কৃতি অ্যাথলেট রাবেয়া খাতুন তালুকদার। সাবেক পূর্ব পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের নারী জাগরণের ও মহিলা ক্রীড়া আন্দোলনের পুরোধা এই মানুষটি ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটকল ইত্যাদিসহ অ্যাথলেটিক্সে ছিলেন এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব।
মৃত্যু
মহিলা ক্রীড়াক্ষেত্রের অগ্রপথিক রাবেয়া খাতুন তালুকদার বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০০৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী ইন্তেকাল করেন।
লেখক : আশরাফি ফেরদৌসী