৭০-৮০ বছর আগে ঢাকার পরিধি কতটুকুই বা ছিল। এদিকে গেন্ডারিয়া, ওদিকে চকবাজার। আর প্রস্থ ধরলে ওয়ারী, রোকনপুর আর অন্যদিকে বাংলাবাজার, লালকুঠি পেরিয়ে বুড়িগঙ্গা এর মধ্যেই সবকিছু। লেখাপড়া, খেলাধুলা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, বন্ধুত্ব, সৌহার্দ্য, সবকিছুই এটুকুর মধ্যে। আসলে তখন ঢাকা শহর বলতে এটুকুই ছিল। মাঠ, ঘাট, রাস্তা, বাজার, লোকজন সবই এর মধ্যে। দর্শনীয় স্থান বলতে কার্জন হল, লালবাগ কেল্লা, নবাববাড়ী, পুরানো হাইকোর্ট ভবন আর স্টেডিয়ামের খোলামেলা মাঠ শরীর আর মনকে সতেজ, সজীব করতে যেন সদা প্রস্তুত। তখনকার মধ্য ঢাকার আর এখনকার পুরানো ঢাকার রোকনপুরের ঐহিত্যবাহী কাজী বাড়ীর বনেদি পরিবেশকে পাশ কাটিয়ে কাজী আবদুল আলীম যে এই পরিবারে ক্রীড়া পরিবেশের জন্ম দিয়ে দেশে-বিদেশে বরেণ্য ব্যক্তিদের তালিকায় নিজের নাম লেখাবেন, নিজের পরিবার এবং সর্বোপরি দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবেন, এ ছিল স্বপ্নেরও বাইরে। ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়াসংগঠক, ক্রীড়া বিশ্লেষক, লেখক, বিচারক এবং সর্বোপরি একজন দক্ষ শারীরিক শিক্ষক হিসেবে বিশ্বে নন্দিত ব্যক্তিদের তালিকায় নিজের নামটিকে স্বর্ণাক্ষরে লেখাতে পারবেন একথা তিনি নিজেও কখনো ভাবেননি। কাজী আবদুল আলীম আমাদের জন্যে এ প্রাপ্তির যে নিবিড় প্রশান্তি এনে দিয়েছেন তার মূল্যায়ন করতে গেলে ফিরে যেতে হবে ১৯৩২ সালের ৩১ ডিসেম্বর দিনটিতে। পুরনো ঢাকার রোকনপুরের সেই ঐতিহ্যবাহী কাজী পরিবারে মরহুমা মাকসুদা বেগমের কোল জুড়ে সেদিন যে পুত্র সন্তান পৃথিবীর আলোমাখা বুকে এসেছিল, তাঁর বহ্নিচ্ছটা যেভাবে বিকশিত হয়েছে তাকে শুধুমাত্র ‘শুভ’ বললেই হবে না, ‘শুভ’র চেয়ে অনেক বড় কোন বিশেষণে আখ্যায়িত করতে হবে। কাজী আবদুল আলীম আমাদের দেশের গর্ব।
জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়
ক্রীড়াঙ্গনে বরেণ্য ব্যক্তিত্ব কাজী আবদুল আলীম পুরনো ঢাকার ১২ নম্বর রোকনপুর (৩য় লেনে, হোল্ডিং নম্বর অনেক পরে দেওয়া হয়) কাজী বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। এমনিতেই পুরান ঢাকা অলিগলির জন্য বিখ্যাত। এই অলিগলির মধ্যে আগে কিছুটা সহজে যেতে পারলেও, এখন গলিটিতে ঢুকে কোন বাড়ি খুঁজে বের করা রীতিমতো কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এক সময়ের নারিন্দার সেই পুরনো গলিটি বর্তমানে পুরাতন লোহা-লক্করের দোকানে জমজমাট ও মোটর সাইকেলের পার্টস বিক্রির দোকানে ভরে গেছে। তার উপর কিছু কিছু ছোট ছোট ভাঙ্গা মোটরগাড়ী অবিন্যস্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় রোকনপুরের পুরাতন কাজী আবদুল আলীমের বাসায় প্রবেশ করতে দস্তুর মত পরিশ্রমী মনোভাব নিয়েই যেতে হবে। কাজী বাড়িটির জনাজীর্ণ অবস্থা আপনাকে শতবর্ষ পিছিয়ে নিয়ে যাবে। প্রবেশ দ্বারে আজও নকশা করা মসজিদটি বিদ্যমান, যেখানে পাড়া প্রতিবেশীরা নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। কাজী আবদুল আলীমও এই মসজিদেই নামাজ আদায় করেন। জানা যায় মসজিদটি কাজী আবদুল আলীমের পিতামহ নির্মাণ করেছিলেন। পিতামহ মরহুম কাজী আবদুর রউফ কাজী বাড়ীর এই মসজিদটিসহ এই মসজিদের আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্বাহের জন্য কিছু সম্পত্তি ওয়াক্ফ করে গেছেন। কাজী বাড়ীর প্রবেশ পথেই ওয়াক্ফ অফিসটি চোখে পড়বে। বর্তমানে বাড়িটিতে যারা বসবাস করছেন, তাদের স্বার্থে আগের মূল প্রবেশ পথের পাশে বর্তমানে একটি ছোট প্রবেশ পথ করা হয়েছে। তাঁর দাদার নামে রাস্তার নামকরণ করা হয় – যা কাজী আবদুর রউফ রোড নামে পরিচিত। তাছাড়া কাজীর বাগ মৌজা রয়েছে এবং কাজীর দরগায় ভিন্ন ভাবে তাঁদের পারিবারিক গোরস্থান রয়েছে।
পাঁচ ভাই ও ছয় বোন এবং পরবর্তীতে পিতা মরহুম কাজী আবদুল মতিনের দ্বিতীয় স্ত্রীর আরও এক পুত্র সন্তান এবং চার কন্যা সন্তান হওয়ায় কাজী আবদুল আলীমরা পনের ভাই বোন। কাজী আবদুল আলীমের স্ত্রী সেলিমা আলীম গৃহকর্ত্রী। আলীম সাহেবের তিন সন্তান। বড় পুত্র কাজী এহতেশামুল আলীম বি.এসসি. অধ্যায়নরত অবস্থায় মারা গেছেন, অপর দুই পুত্র কাজী এহসানুল আলীম এবং কাজী শাদ-উল্লাহ হিল আলীম এককভাবে ব্যবসা করছেন । কাজী বাড়ীর সংস্কার সাধন না হওয়ায় এখন বাড়ীটির সেই জৌলুস আর নেই। রোকনপুরের এই ঐহিত্যমন্ডিত কাজী বাড়িটির এবং কাজী পরিবারের বহু কাহিনী ঐ অঞ্চলের পুরানো অধিবাসীদের মুখে শোনা যায়। কাজীরা সাধারণত এলাকার/ মহল্লার কোন সমস্যা দেখা দিলে তার সমাধান করতেন, বিচার আচার করতেন। তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও বিচক্ষণতার জন্য তাঁরা সকলের প্রশংসাভাজন ছিলেন। বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে কাজীরা সবসময় সবার সঙ্গী হতেন।
শৈশবকাল
মনে করা হতো, কাজী বাড়ীর সন্তান-মানেই তাদের আচার-আচরণ, চলাফেরা, মেলামেশা, আদব-কায়দা সবকিছুই একটু ভিন্ন ধরনের হবে। আর তাই কাজী আবদুল আলীমের শৈশবকালটি ছিল আর দশজন শিশুর চেয়ে আলাদা। ছোট বেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি তার প্রচন্ড আগ্রহ ছিল। ভিক্টোরিয়া পার্ক সংলগ্ন কলেজিয়েট স্কুলেই কাজী আলীমের শিক্ষাজীবন শুরু। কৈশোরেই তার খেলাধুলার সাফল্য দেখে যেমন স্কুলের সকলেই অবাক হতেন তেমনি কাজী আলীমের ভবিষ্যত্ যে খেলার মধ্যে বাঁধা পড়বে – এধরনের ভবিষ্যদ্বাণীও অনেকেই করেছিলেন। যেকোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে স্কুলের জন্য পুরস্কার জয় করা ছিল শিশু আলীমের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ব্যাপার। বয়স বৃদ্ধি পাবার সঙ্গে সঙ্গে স্কুলে সকলেই তাঁকে একজন চৌকস খেলোয়াড় হিসাবে দেখা শুরু করে। প্রতিটি খেলাতেই কাজী আলীম সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটি লাভ করতেন।
খেলাধুলার ব্যাপারে কাজী আলীমকে বাবা-মা বা বাড়ীর অন্যান্য গুরুজনদের কাছ থেকে খুব একটা কঠিন বাধা অতিক্রম করতে হয়নি। তবে সকাল-বিকালে ঠিক সময়ে বাসায় ফেরার ব্যাপারে কড়া নির্দেশ মানতে হতো। শিশুকাল থেকেই কাজী আবদুল আলীমের অজানাকে জানার এবং বাধা অতিক্রম করার জেদি মনোভাব ছিল, যা আজ অবধি বিদ্যমান রয়েছে।
শৈশবে এক মহল্লার সঙ্গে অন্য মহল্লার, এক স্কুলের সঙ্গে অন্য স্কুলের যে কোন ধরনের খেলায় কাজী আলীম ছিলেন একজন নির্ধারিত খেলোয়াড়। কাজী আলীমের সব সময় মনে হতো খেলার মাঠের চ্যাম্পিয়নশীপ কাপটি তাঁদের পেতেই হবে। জয়ের আনন্দে বিভোর হয়ে যখন স্কুলে বা এলাকায় সগৌরবে ফিরে আসতেন, তখন মনে মনে যে বীরত্ব অনুভব করতেন, তা আজও কাজী আলীমকে শিহরিত করে। খেলাধুলায় প্রথম সারির হলেও পড়াশুনায় সব সময় কাজী আলীম মাঝারি ধরনের ছাত্র ছিলেন।
শিক্ষা জীবন
শৈশব থেকেই কাজী আবদুল আলীম খেলাধুলার প্রতি আসক্ত হলেও, শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা সব সময় স্বীকার করেন। কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৪৭ সালে ম্যাট্রিক পাশ করার পর ভর্তি হন জগন্নাথ কলেজে। জগন্নাথ কলেজের ছাত্রাবস্থায় কলেজের সব খেলায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। ঐ সময় কাজী আলীমের শারীরিক গঠন থেকে শুরু করে শারীরিক সুস্থতা এবং সেই সঙ্গে প্রতিটি খেলায় অফুরন্ত সাফল্য তাঁকে নতুন করে অনুপ্রাণিত করে। কাজী আলীম জগন্নাথ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে স্নাতক এবং ১৯৫৬ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।
খেলাধুলায় পারদর্শিতার কথা বিবেচনা করে কাজী আবদুল আলীমকে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রীড়া ইতিহাসের উপর একটি কোর্সে অংশগ্রহণের জন্য পাঠানো হয়। বাংলাদেশ থেকে এ ধরনের কোন কোর্সে অংশগ্রহণের নজির সেটাই প্রথম।
কাজী আবদুল আলীম ১৯৫৬-১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আরিগন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও অবসর যাপন শিক্ষার উপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘এ্যাথলেটিক্স ইনজুরি ও ফাস্ট এইড’ এর উপর কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৯২ সালে ‘স্পোর্টস মেডিসিনে’র উপর কোর্স কমিশন সনদপত্র লাভ করেন।
কর্মজীবন
কাজী আবদুল আলীম ১৯৫৬-১৯৫৯ পাকিস্তান অলিম্পিকসের পূর্ব পাকিস্তানের জন্য একক ক্রীড়া প্রশিক্ষক নিযুক্ত হন। ১৯৫৮-১৯৬২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান অলিম্পিক এসোসিয়েশনের তরফ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় কোচের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬২-৬৫ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একজন দক্ষ শারীরিক শিক্ষাবিদ হিসাবে ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ঢাকা ও রাজশাহীর শারীরিক শিক্ষা কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ১৯৫৬-৭৪ সাল পর্যন্ত জাতীয় কোচিং সেন্টারের পরিচালক ছিলেন তিনি। তিনি একাধারে N.S.C.B. এর জেনারেল সেক্রেটারী ও BKSP – এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন।
পারিবারিক জীবন
পারিবারিক জীবনে কাজী আবদুল আলীম একজন সুখী মানুষ। স্ত্রী সেলিমা আলীম তাঁর ঘর সংসার নিয়েই আছেন। খেলাধুলা ও সাহিত্য সাধনা খুব একটা পছন্দ না হলেও তিনি তাঁর স্বামী, পুত্রদের নিয়ে গর্বিত। কাজী বাড়ীর মেয়েরা খেলাধুলা করবেনা – এই গোঁড়ামি থেকে আলীম এই পরিবারকে মুক্ত করেন। তাঁর বোনদের মধ্যে কাজী জাহেদা ও কাজী নাসিমা ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার লাভ করেছেন। কাজী শামীমাও ক্রীড়া ক্ষেত্রে অনেক অবদান রেখেছেন। কাজী পরিবারই মেয়েদের ক্রীড়ায় অংশগ্রহনে অগ্রণী ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
ক্ষেত্রভিত্তিক অবদান
-
- জগন্নাথ কলেজের এ্যাথলেটিকস্ চ্যাম্পিয়ন (১৯৪৮ ও ১৯৪৯)
- সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের এ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়ন (১৯৫০-৫৬, পর পর সাত বছর)
- আন্তঃকলেজ এ্যাথলেটিকস্ চ্যাম্পিয়ন (১৯৪৮-১৯৫৬)
- প্রাদেশিক এ্যাথলেটিকস্ চ্যাম্পিয়ন (১৯৪৮-৫৬, পর পর নয় বছর)
- জিমন্যাস্টিক ও বক্সিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন (১৯৫৫)
নেতৃত্বদান
- জগন্নাথ কলেজের অ্যাথলেটিক্স সেক্রেটারী (১৯৪৮-১৯৪৯)
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাথলেটিক্স দলের ক্যাপ্টেন (১৯৫০-১৯৫৬)
- পূর্ব পাকিস্তান অ্যাথলেটিক্স দলের ক্যাপ্টেন হিসাবে ১৯৫৫ সালে ঢাকায় এবং ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান অলিম্পিকে যোগদান
- ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিমন্যাস্টিক্স ও অ্যাথলেটিক্স-এ নেতৃত্ব দান
- ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান/ বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সদস্য
- যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে ইন্টারন্যাশনাল হার্ডলসের প্রেসিডেন্ট ১৯৫৭-৫৮
- ১৯৬০ সালে সপ্তম পাকিস্তান গেমসে পূর্ব পাকিস্তান দলের সহকারী ম্যানেজার
- ১৯৬২, ১৯৬৬ ও ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান দলের ম্যানেজার হিসাবে পাকিস্তান গেমসে অংশগ্রহণ
- ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তান অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় কোচ ও ১৯৭০ সালে করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান গেমসে পূর্ব পাকিস্তান দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন
- ১৯৭০ সালে এডিনবরাতে অনুষ্ঠিত নবম কমনওয়েলথ গেমসে সহকারি ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন
- ১৯৬২-৬৩ সালে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস বোর্ডের জয়েন্ট সেক্রেটারি
- ১৯৭৪-১৯৮৯ পর্যন্ত শারীরিক শিক্ষাবিদ সমিতির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন
- জাতীয় সাইক্লিং ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ১৯৭৪-৯০
- ১৯৭৬-৭৮ পর্যন্ত জাতীয় ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের জেনারেল সেক্রেটারি
- বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের প্রাক্তন সদস্য
- ১৯৭৪ সালে ইরানে ১৮ জাতির ওমেন সলিডারিটি কনফারেন্সে অংশগ্রহণ।
অন্যান্য অভিজ্ঞতা
- ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়াদলের নেতা হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন গমন
- ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স দলের ম্যানেজার হয়ে ‘পঞ্চম ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমসে’ বুলগেরিয়ার সোফিয়া গমন
- ১৯৮৫ সালে ‘ফিজিক্যাল এডুকেশন হেলথ রিক্রিয়েশন ও ড্যান্স’ – এর সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবনে গমন
- ১৯৮৬ সালে ‘ফিজিক্যাল এডুকেশনের’ সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া গমন
- ১৯৯৯ সালে ‘অলিম্পিক কাউন্সিল অব এশিয়া’র বিশেষ সাধারণ এসেম্বলি মিটিং এ যোগদানের জন্য দিল্লী গমন
- ১৯৭৪ সালে ‘এশিয়ান গেমসে’ সহকারী চীফ দ্যা মিশন হয়ে জাপানের হিরোশিমা গম
ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদান
-
খেলাধুলা সংক্রান্ত বিভিন্ন লেখা পত্র পত্রিকায় প্রকাশ ও রেডিও/ টেলিভিশনে প্রচার
-
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের জাতীয় ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়াজগত’ পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা ও পত্রিকার প্রথম সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন।
প্রকাশনা
কাজী আলীমের সব প্রকাশনা তাঁর একক প্রচেষ্টার ফল। খেলাধুলার উপর ২০টিরও বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ‘জ্ঞান বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি’, ‘বাণী চিরন্তনী’, ‘চিরন্তন বাণীর বিশ্বকোষ’, ‘ছোটদের বাণী চিরন্তনী’, ‘ইসলামের বাণী’, ‘রূপকথার বিশ্বকোষ’, ‘হাসির বিশ্বকোষ’, ‘আরব্য উপন্যাসের ছোট গল্প’, ‘দেশ-বিদেশের সেরা গল্প’, ‘সুনিশ্চিত মজার কথা’, ‘হাসতে মানা’, ‘ওয়াইজ ওয়ার্ড’, ‘বাণীর বিশ্বকোষ’, ‘সুবাসিত নজরুল’, ‘জ্ঞানের মশাল’ ইত্যাদি বইয়ের লেখক কাজী আবদুল আলীম। অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে তাঁর সর্বমোট ৪৩টি বই, যার মধ্যে ৫টি বিশ্বকোষ – ‘রূপকথার বিশ্বকোষ’, ‘ধাঁধার বিশ্বকোষ’, ‘জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিশ্বকোষ’, ‘হাসির বিশ্বকোষ’।
পুরস্কার
- ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদানীন্তন ভাইস চ্যান্সেলর ডব্লু, এ, জেংকিংস কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে স্বর্ণপদক প্রদান
- ১৯৭৭ সালে ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ‘জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার’ লাভ
- ১৯৯২ সালে ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদানের জন্য ‘বেগম জেবুন্নেসা ও কাজী মাহবুব উল্লাহ’ স্বর্ণ পদক লাভ
- ১৯৯৩ সালে ‘স্বাধীনতা দিবস’ পুরস্কার লাভ
- ১৯৯৮ সালে জেনেসিস কর্তৃক ‘ঢাকার গৌরব’ সম্মানে ভূষিত
- ফিজিক্যাল এডুকেশন ও স্পোর্টস-এ বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৪ সালে ‘ইউনেস্কো’ পুরস্কার লাভ। এশিয়া প্যাসিফিক রিজিয়নের ৪৯ দেশের ৩৫০ কোটি মানুষের মধ্যে তিনি এককভাবে এই পুরস্কার অর্জন করেন এবং গ্রীসে গিয়ে এই পদক নিয়ে আসেন।
- ২০০৪ সালে ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ‘দেশবন্ধু সি.আর দাস স্বর্ণপদক’ লাভ
মৃত্যু
২০০৭ সালের ২৫ আগস্ট দুপুর দেড়টায় ঢাকায় ট্রমা সেন্টারে অপারেশন থিয়েটারে আকস্মিক হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান আবদুল আলীম ৷
লেখক : আব্দুল হামিদ