বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ নারী শিক্ষা এবং নারীদের ভোটাধিকারের আন্দোলনসহ মৌলিক কিছু কাজের জন্যে এদেশের নারী সমাজের কাছে খুবই আপন ও প্রিয়জন। এদেশের নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে, নারী জাগরণের প্রচার ও প্রসারে বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ অনন্য কীর্তি ও অবদান রেখে গিয়েছেন। বেগম শামসুন নাহার যখন জন্মেছিলেন তখন মেয়েদের লেখাপড়া শেখা বা স্কুলে যাওয়াই ছিল নিষিদ্ধ। রক্ষণশীল সমাজের শাসনে মেয়েদের পর্দার অন্তরালে এক রকম বন্দী জীবন যাপন করতে হতো। এমনি অবস্থায় বেগম শামসুন নাহার রক্ষণশীল সমাজের সকল ভ্রূকুটি ও শাসন উপেক্ষা করে উচ্চশিক্ষা লাভ করেছেন এবং নিজ সমাজের অসহায় ও দুর্গত নারীদের জাগরণের ব্রত নিয়ে অক্নান্ত পরিশ্রম করেছেন এবং নিজ সমাজের অসহায় ও দুর্গত নারীদের জাগরণের ব্রত নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।
১৯০৮ সালের ১৯ অক্টোবর বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ ফেনী মহকুমার গুতুমা গ্রামে, মুন্সীবাড়ীতে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মৌলভী মুহাম্মদ নুরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন মুন্সেফ এবং মা আছিয়া খাতুন চৌধুরী ছিলেন গৃহিনী। দুই ভাই বোনের মধ্যে বেগম শামসুর নাহার ছোট। বড় ভাই হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী ছিলেন সাহিত্যমনা ব্যক্তিত্ব। শিক্ষা ছিল তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্য। আর তাই, তিনি সেই সমাজের অবরোধের প্রাচীর ভেঙে নিজে শিক্ষিত হয়ে অসম্ভবকেও সম্ভব করেছিলেন। বেগম শামসুন নাহারের বয়স যখন ৬ মাস তখন তাঁর বাবা হঠাৎ ইন্তেকাল করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর মা শিশুকন্যা নাহার ও ৩ বৎসরের পুত্র বাহারকে নিয়ে পিত্রালয় চট্টগ্রামে চলে আসেন। বেগম শামসুন নাহারের মাতা আছিয়া খাতুন ছিলেন যথার্থ শিক্ষিতা। তিনি বেশ ভাল বাংলা লেখাপড়া জানতেন। এছাড়া উর্দু, আরবি ও ইংরেজিও জানতেন। ছেলেমেয়ের চরিত্র গঠনে, লেখাপড়া, আদব কায়দা, ধর্ম শিক্ষার প্রতি তাঁর বিশেষ খেয়াল ছিল।
বেগম শামসুন নাহার যখন নানার বাড়িতে আসেন তখন তাঁর নানা আবদুল আজিজ চট্টগ্রামে ডিভিশন্যাল ইন্সপেক্টর অব স্কুল পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি শুধু উচ্চশিক্ষিতই ছিলেন না- ছিলেন উদারমনা শিক্ষাবিদ। তাঁর নিজের লাইব্রেরিতে তখনকার দিনের প্রকাশিত বই পুস্তকের অভাব ছিল না। এমনি পরিবেশে নাহার ও বাহার নানা-নানী মা-খালাদের আদরযত্নে বড় হতে থাকেন। নানা নিজের ভাবাদর্শে তাঁদের গড়ে তোলেন।
নাহারকে ভর্তি করা হলো চট্টগ্রাম ডক্টর খাস্তগীর গার্লস হাই স্কুলে আর বাহারকে মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুলে। তাঁরা দু’জনেই মেধাবী ছিলেন তার মধ্যে বেগম শামসুন নাহার ছিলেন পড়াশুনায় অতি আগ্রহী ও নিষ্ঠাবান। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর বাধা এল স্কুলে পড়ার ক্ষেত্রে। কারণ তখনকার দিনে মেয়েরা একটু বড় হলেই পর্দা বা অবরোধের জন্য বাইরে বা কোন পুরুষের সামনে যাওয়া ছিল নিষিদ্ধ। তাই তখনকার দিনের উচ্চশিক্ষিত অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করে উচ্চশিক্ষার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বেগম শামসুন নাহার স্কুলের পড়া সম্পূর্ণ করতে পারলেন না। সমাজের তাড়নায় আর আত্মীয়-স্বজনের নিন্দার ভয়ে তাঁকে স্কুল ছাড়তে হয়।
স্কুলের প্রধান শিক্ষয়িত্রী জানতে চাইলেন, ‘তুমি স্কুল ছাড়ছ কেন? তুমি তো পড়াশুনায় খুব ভালো।’ বেগম শামসুন নাহার জবাব দিলেন, ‘বড় হয়ে গেছি যে।’ শিক্ষয়িত্রী ছিলেন অমুসলমান, তাঁর সমাজে এই বাধা ছিল না তাই তিনি ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলেন না অতটুকু মেয়ে বড় হয়ে গেছে শুনে।
মনমরা বেগম শামসুন নাহার ঘরে বন্দী। ঘরে বসেই তিনি খবর পান তাঁর স্কুলের বান্ধবীরা পড়াশুনায় এগিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের প্রতিবেশী এক বৌদ্ধ পরিবারের মেয়ে জ্যোতিময়ী চৌধুরী যিনি স্কুলে তার চেয়ে নীচ ক্লাসে পড়তেন তিনি ইউনিভারসিটি শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য বিলাত পাড়ি দিলেন। বেগম শামসুন নাহার উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। অভিভাবকরা তাঁর মনের ইচ্ছা বুঝতে পেরেছিলেন তাই তাঁর নানা একজন বৃদ্ধ হিন্দু শিক্ষককে নিযুক্ত করলেন নাতনিকে পড়াবার জন্য।
শিক্ষক হলেও তিনি তো পুরুষ, বাইরের পুরুষের সামনে যাওয়া নিষেধ। তখন এক অভিনব ব্যবস্থা হল। পড়ার টেবিলে লম্বালম্বি পর্দা ঝুলিয়ে দেয়া হল। পর্দার এ পাশে ছাত্রী অপর পাশে শিক্ষক। শিক্ষক পড়া বুঝিয়ে দেন ছাত্রী অপর পার থেকে মনোযোগ দিয়ে শোনে। শিক্ষক লেখার কাজ দেন, ছাত্রী সেটা শেষ করে পর্দার নীচ দিয়ে খাতাটা ঠেলে দেয়। এভাবে লেখাপড়া চলল এবং তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দিলেন। ফল বের হলে দেখা গেল চারটি লেটারসহ প্রথম বিভাগে শতকরা আশির কাছাকাছি নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন। ঘোর অবরোধের অন্তরালে বসে বেগম শামসুন নাহার যে কষ্ট ও শ্রম স্বীকার করেছেন তা সার্থক হল। কিন্তু পাশ করার পর কলেজে পড়ার আর সুযোগ হল না।
১৯২৭ সালে বিয়ের পর বেগম শামসুর নাহার এলেন কলকাতায়। পরীক্ষা পাশের পর প্রায় ৪/৫ মাস পর ভর্তি হলেন কলকাতার প্রথম শ্রেণীর ডায়োসেশান কলেজে। এখানে কলকাতার অভিজাত, ধনী ও শিক্ষিত হিন্দু এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মেয়েরা পড়াশুনা করতো। তারা সবাই আধুনিক বেশভূষা ও চালচলনে অভ্যস্ত। তাদের মধ্যে বেগম শামসুন নাহার একমাত্র মেয়ে যে বোরকা পরে। সহপাঠিনীরা তাঁকে উপহাস করে নানা কথা বলে। কিন্তু বেগম শামসুন নাহার এ সব ব্যবহারে বা কথায় বিরক্ত হননি, কর্ণপাত করেননি, বিচলিত হননি। নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকে পড়াশুনা চালিয়ে গেছেন। এমনি করেই দিন যায়, বছর যায়। তারপর একদিন পরীক্ষা শেষ হল। ফল বের হলে দেখা গেল তিনি বিংশতিতম স্থান অধিকার করেছেন। তাঁর সহপাঠিনীরা অবাক হলেন, প্রফেসররা অবাক হয়ে দেখলেন, আবিষ্কার করলেন এক নতুন শামসুন নাহারকে।
১৯২৮ সালে বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ আই.এ. পাশ করলেন। কিন্তু কিছুদিনের জন্য পড়াশুনায় ছেদ পড়লো। কারণ এ সময় তাঁর প্রথম সন্তান মামুনের জন্ম হয়। কলেজে ভর্তি হওয়া সম্ভব হলো না। তাই বলে তিনি হতাশ হলেন না। বাড়িতে অবসর সময়ে লেখাপড়ার চর্চা চালিয়ে যেতে লাগলেন। এই সময় তিনি কিছু কিছু লেখার চর্চাও শুরু করেন। এদিকে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ করতে তাঁর চেষ্টার বিরাম ছিল না। সংসারের দায়িত্ব অনেক। কিন্তু পরীক্ষা দিলেন। এবারও কৃতিত্বের সঙ্গে ডিগ্রি লাভ করলেন ডিস্টিংশন নিয়ে। জয়যুক্ত হল তাঁর কল্পনা ও সাধনা। এরপর বেশ কয়েক বছর তিনি সমাজসেবা, সাহিত্য সাধনা ও শিক্ষকতা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। দীর্ঘ ১০ বছর পর ১৯৪২ সালে তিনি এম.এ. পাশ করেন।
বেগম শামসুন নাহারের দিনরাতের চিন্তা, মনের স্বপ্ন, উচ্চশিক্ষা লাভ করা। মা ও নানি তাঁর মন জানতেন। তাই তাঁরা ঠিক করলেন মেয়েকে বিয়ে দিবেন। এমন পাত্র হতে হবে যে মেয়ের পড়াশুনার ব্যবস্থা করবেন। বেগম শামসুন নাহারের নানা তাঁর বিয়ের ব্যাপারে বলেছিলেন যে, ‘এমন পাত্র চাই যে আমার নাতনিকে আরো লেখাপড়া করাবে।’ এমনি একটি উচ্চশিক্ষিত, হৃদয়বান ও সচ্চরিত্র পাত্র স্থির হল। বিয়ের পর স্ত্রীর উচ্চশিক্ষার সর্ব প্রকার ব্যবস্থা করবেন এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেদিন বেগম শামসুন নাহারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন ডা. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি শুধু স্ত্রীর উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে সাহায্য ও সহযোগিতা করেননি, সারা জীবন স্ত্রীর সব কাজেই সর্বতোভাবে সমর্থন, সাহায্য ও সহযোগিতা করেছেন। এভাবে স্বামীর সার্বিক সহযোগিতায় তিনি উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পান। ডাক্তার ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ শুধু তাঁর লেখাপড়ার ব্যাপারেই সহযোগিতা করেননি, তাঁর সামাজিক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও তাকেঁ অনুপ্রেরণা দিয়ে এগিয়ে দিয়েছেন। সাংসারিক জীবনে সবসময় ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ সহযোগিতা করেছেন। এমনকি ছেলেদের দেখাশোনাও করতেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর নাতনি জেবা মাহমুদ বলেন, ‘আমরা দাদু বাড়ি গেলে দাদি না থাকলে দাদু আমাদের ভালোমন্দ দেখতেন।’
বেগম শামসুন নাহার ছিলেন দুই পুত্রের জননী। তাঁর আদর্শে গড়া বড় ছেলে মামুন মাহমুদ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি পুত্রবধুকে রান্না শেখাতেন, একসাথে বসে গল্প করতেন। তিনি চাইতেন যেন তাঁর প্রথম ছেলের প্রথম সন্তান কন্যা হয়। তাঁর সে ইচ্ছা পূরণ হয়েছিল। নাতনিকে নিয়ে সকালে হাঁটতে যেতেন, লেখা পড়ে শোনাতেন এবং নাতনিকে সমালোচনা করতে বলতেন। তাঁর দেশাত্ববোধের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েই বড় ছেলে মামুন মাহমুদ দেশের জন্য প্রাণ দেন।
বেগম রোকেয়ার সঙ্গে বেগম শামসুন নাহারের পরিচয় হয় লেখার মধ্য দিয়ে। অল্প বয়সে বেগম শামসুন নাহারের প্রথম লেখা একটি কবিতা প্রকাশিত হয় তৎকালীন কিশোরদের পত্রিকা ‘আঙ্গুর’ নামক মাসিক পত্রিকায়। এরপর ‘নওরাজ’ এবং ‘সওগাত’সহ অন্যান্য পত্রিকায় বেগম শামসুন নাহারের কিছু কিছু লেখা ছাপা হয়। এই সব লেখা পড়ে বেগম রোকেয়া তাঁকে একখানা পত্র লেখেন। ঐ পত্রে লেখা ছিল,
‘তোমাকে চিঠি লিখতে বসিয়া আজ অনেকদিন আগের একটা কথা মনে পড়িয়া গেল। একবার রাত্রি বেলায় আমরা বিহারের এক নদী পথে নৌকাযোগে যাইতেছিলাম। বাইরের অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না।- শুধু নদীতীরের অন্ধকার বনভূমি হইতে কেয়া ফুলের মৃদু সুরভি ভাসিয়া আসিতেছিল। ঠিক তেমনি তোমাকে কখনও দেখি নাই, কিন্তু তোমার সৌরভটুকু জানি।’ ১৯৩২ সালে কলকাতার সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল গার্লস হাই স্কুলে বেগম শামসুন নাহারের বি.এ. পাশ উপলক্ষ্যে এক বিরাট সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়। এই সংবর্ধনায় বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ বলেছিলেন, ‘আমি আশা করি সেদিন দূরে নয় যেদিন আমাদের সামাজের মেয়েরা শুধু বি.এ. পাশ করে সংবর্ধনা পারেন না, সংবর্ধনা পেতে হলে তাঁদের আরো বড় কাজ করতে হবে।’
১৯২৬ সালে ডায়োসিসন কলেজে পড়ার সময় থেকে ১৯৩২ সালে বেগম রোকেয়ার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রায় সাত বছর বেগম শামসুন নাহার শুধু তাঁর ঘনিষ্ট সান্নিধ্য লাভের সুযোগই নয় তাঁর সহকর্মী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন যথেষ্ট। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল গার্লস হাই স্কুলে শিক্ষিকার অভাব পড়লে অবৈতনিক শিক্ষয়িত্রীর কাজ করা, স্কুলের ফাইলপত্র গোছানোর কাজে সাহায্য করা অথবা আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলামের কাজে সহায়তা করা ইত্যাদি। পরবর্তীকালে তিনি বেগম রোকেয়ার নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনের অংশীদার হন। ১৯৩২ সালে বেগম রোকেয়ার মৃত্যুর পর কলকাতার এ্যালবার্ট হলে একটি শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ বেগম রোকেয়া সম্পর্কে সুন্দর বক্তৃতা করেন। তাঁর সেই বক্তৃতা খুব কর্মস্পর্শী ছিল। এটাই তাঁর পুরুষ জনসভায় প্রথম বক্তৃতা।
১৯৩৯ সালে বাংলার মুসলিম নারী সমাজের দাবিতে মেয়েদর উচ্চশিক্ষার জন্য তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জনাব এ.কে. ফজলুল হক প্রতিষ্ঠা করেন সরকারি কলেজ। বাংলাদেশের গভর্নরের পত্নীর নামানুসারে কলেজের নাম হল ‘লেডী ব্রাবোর্ন কলেজ’। ফজলুল হক সাহেব বেগম শামসুন নাহার মাহমুদকে উক্ত কলেজে অধ্যাপনার জন্য আহবান জানান। প্রথমে বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ এম.এ. পাশ না করায় রাজি হননি। কিন্তু পরে তাদের অনুরোধে রাজি হন এবং লেডী ব্রাবোর্ন কলেজে বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপিকা পদে যোগ দেন। তবে কথা রইল ৩ বছরের মধ্যে এম.এ. পাশ করতে হবে।
এতদিন বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ সমাজসেবা ও সাহিত্যচর্চা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, এবার নতুন দায়িত্বভার এসে পড়ল। সমস্ত মনপ্রাণ দিয়ে তিনি নতুন কলেজের ছাত্রীদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। প্রিন্সিপাল ছিলেন বৃটিশ মহিলা। তিনি এ দেশের হালচাল জানতেন না বিশেষ করে মুসলিম সমাজের। তাই তিনি অনেক ব্যাপারেই বেগম শামসুন নাহারের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। কলেজটি অল্পদিনের মধ্যেই একটি প্রথম শ্রেণীর কলেজরূপে পরিচিতি লাভ করে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করল। এই প্রতিষ্ঠা ও সুনামের ব্যাপারে বেগম শামসুন নাহারের যথেষ্ট অবদান ছিল।
সে সময় কবি নজরুলের লেখা পড়ে বেগম শামসুন নাহার বেশ মুগ্ধ ও সম্মোহিত হয়েছিলেন। কবি নজরুলের প্রেরণা তাঁর জীবনে যে উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল, তা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। বেগম শামসুন নাহার রচিত ‘নজরুলকে যেমন দেখেছি’ বইয়ে এ কথা আছে।
বেগম শামসুন নাহারের ভাইয়ের আগ্রহে ও উদ্যোগে কলকাতা থেকে তাঁর বাল্যের রচনা ‘পুণ্যময়ী’ বইটি প্রকাশিত হয়। এই বইকে উপলক্ষ্য করে কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁকে পাঠিয়েছিলেন তাঁর আশিসবাণী। কবির স্বহস্ত লিখিত কবিতাখানি ব্লক করে ‘পুণ্যময়ী’র প্রথম পাতায় ছাপানো হয়েছিল।
১৯২৬ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলাম এলেন চট্টগ্রামে তাঁদের তামাকুমুণ্ডির বাড়ি আজিজ মঞ্জিলে। কবি এক মাস তাঁদের বাড়িতে অবস্থান করেছিলেন। এই সময়েই বেগম শামসুন নাহার প্রথম কবির দর্শন লাভ করেন। কবি তাঁর বহু বিখ্যাত কবিতা তাঁদের চট্টগ্রামের বাড়িতে বসেই লিখেছেন। ১৯৪১ সালে কলকাতাস্থ ভবানীপুরে বেগম শামসুন নাহারের বাসগৃহে ঈদ রিইউনিয়নের ব্যবস্থা করা হয়। এই সভায় সেদিন কলকাতার শিল্পী সাহিত্যিক ও বহু গুণীজনের সমাবেশ ঘটেছিল। নজরুল ইসলামও সেদিন এসেছিলেন। কবি এদের দু’ভাইবোনকে খুবই স্নেহ করতেন। কবি তাঁর একটি বই উৎসর্গ করেছেন দু’ ভাইবোনকে। এই বইয়ের উৎসর্গ পত্রে আছে-
‘কে তোমাদের ভালো
বাহার আন গুলশানে গুল নাহার আন আলো
বাহার এলে মাটির রসে ভিজিয়ে সবুজ প্রাণ
নাহার এলে রাত্রি চিরে জ্যোতির অভিযান
তোমরা দু’টি ফুলের দুলাল আলোর দুলালী
একটি বোঁটায় ফুটলি এসে নয়ন ভুলালি
নামে নাগাল পাইনে তোদের নাগাল পেল বাণী
তোদের মাঝে আকাশ ধরা করছে কানাকানি।’
বেগম শামসুন নাহার একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে ছাত্রীদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘তোমরা জন্মেছ উজ্জ্বল আলোক প্লাবনের মধ্যে, আর আমাদের জন্ম গভীর অন্ধকারে, অন্ধকারেই হয়েছে আমাদের যাত্রাশুরু। অন্ধকারকে ভেদ করে এসে উত্তীর্ণ হয়েছি আমরা আলোকের তীরে। আলো তোমাদের কাছে এসেছে সহজ স্বাভাবিকভাবে। আর আমরা আলো জয় করে নিয়েছি। আলো হয়ত সেই জন্য আমাদের কাছে বেশি মূল্যবান। এইটুকু তফাৎ রয়েছে তোমাদের আর আমাদের যুগে। সে যুগের সেই আলোর অভিযানে যিনি আমাদের অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি আমাদের ‘কবিদা’।’
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাদ লাভ করে ধন্য হয়েছিলেন তিনি বহু পূর্বেই এবং কবির আশিসবাণী মুদ্রিত হয়েছিল তাঁর লিখিত পুস্তকে। শান্তিনিকেতনে প্রতি বৎসর একটি বাৎসরিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবে মহিলা শাখায় সভানেত্রীত্ব করার জন্য আমন্ত্রণ পেলেন বেগম শামসুন নাহার। এই উপলক্ষ্যে ১৯৪১ সালের প্রথম দিকে তিনি শান্তিনিকেতনে যান এবং সেখানে তিন দিনের জন্য উত্তরায়ণ গৃহে আতিথ্য গ্রহণ করেন।
বেগম শামসুন নাহার অল্প বয়স থেকেই সমাজ সেবার কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন। আর এ ব্যাপারে প্রেরণা লাভ করেছেন তাঁর মায়ের কাছে। যখন আহবান এল বেগম রোকেয়ার তখন তিনি রোকেয়ার ডাকে সাড়া দিলেন। রোকেয়া তাঁকে নিজের সহকর্মী করে নিলেন। বেগম রোকেয়া বহু আগেই ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম’ বা ‘নিখিল বঙ্গ’ মুসলিম মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শামসুন নাহার এই সমিতির সম্পাদিকার দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন। ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম’ নানা ধরণের কাজ করে সুনাম অর্জন করেছে। এই কৃতিত্ব প্রধানত শামসুন নাহারের অদম্য উৎসাহ ও কর্ম প্রচেষ্টার ফল।
শুধু ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম’ নয়। ভারত বিখ্যাত মহিলা প্রতিষ্ঠান ‘নিখিল ভারত মহিলা সম্মেলন’ এর কলকাতা শাখায় তিনি যোগদান করেন। এটি একটি বিরাট প্রতিষ্ঠান। এই সম্মেলন তৎকালীন ভারতীয় নারীদের সর্বতোমুখী উন্নতির জন্য তাদের শিক্ষা, সামাজিক অধিকার, সুযোগ সুবিধা আদায়, দুঃস্থ ও দুর্গত নারীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ ও সাহায্য করার ব্যাপারে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে। এই প্রতিষ্ঠানে যোগদানের ফলে তিনি বহু উচ্চশিক্ষিত ও অভিজাত হিন্দু মহিলার সংস্পর্শে এলেন। যেমন- শ্রীমতি ইন্দরা দেবী, সাধন রায়, লেডী রানু মুখার্জী, এনসি সেন, রেনুকা রায়, লেডী প্রমীলা মিত্র, লেডী অবলা বসু প্রমুখ। তখনকার দিনে যখন মুসলিম মেয়েরা লেখাপড়ায় ছিল একেবারেই পশ্চাৎপদ, তখন উচ্চশিক্ষিতা হিন্দু মহিলাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমাজ সেবা করা একজন মুসলিম মহিলার জন্য ছিল অচিন্তনীয়। শামসুন নাহার ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতে বক্তৃতা দিয়ে সুনাম অর্জন করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন একক ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
১৯৩৫ সালে বৃটিশ সরকার ভারত শাসন সংস্কার আইন পাশ করেন। তখন পর্যন্ত ভারতীয় নারীদের ভোটাধিকার ছিল না। এই সময় বেগম শামসুন নাহার নিখিল ভারত মহিলা সম্মেলনের কলকাতা শাখার তরফ থেকে এদেশের মেয়েদের ভোটাধিকার নিয়ে আন্দোলন চালাতে থাকেন। ভারতীয় নারীদের ভোটাধিকারের দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়ে আইন পাশ হয়। যার ফলে এদেশের মেয়েরা ভোট দেয়ার অধিকার পেলেন। এবং বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার কয়েকটি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত করা হল।
বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির মেম্বার ছিলেন। এছাড়াও তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষার পরীক্ষক ছিলেন। বেঙ্গল বোর্ড অব সেন্সর-এর সদস্যাও ছিলেন বেশ কয়েক বছর। ১৯৩৬ সালে কলকাতায় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনের অধিবেশন হয়। এই অধিবেশনে বাংলার মুসলমান নারী সমাজের প্রতিনিধিরূপে যোগদান করেন বেগম শামসুন নাহার। ১৯৪৩-‘৪৪ সালে বাংলাদেশে যে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় সে সময়ও তিনি ছিলেন দুঃস্থ দরিদ্র জনগণের পাশে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের ফলে তিনি স্বামী পুত্রসহ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন এবং রাজধানী ঢাকা শহরে বসবাস শুরু করেন।
এখানে এসেও তিনি বিভিন্ন গঠনমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। পূর্ব পাকিস্তানে এমন কোন সংঘ, কমিটি বা প্রতিষ্ঠান ছিল না সরকারি বা বেসরকারি যাই হোক যার সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন না। যখনই যে ধরণের কাজ এসেছে সে কাজ পালন করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।
১৯৫৫ সালে বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি বাংলা একাডেমীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৫৫ সালে তিনি কলম্বোতে অনুষ্ঠিত ‘ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব উইমেন’-এর সুবর্ণ জয়ন্তী সম্মেলনে ছয় সদস্য বিশিষ্ট পাকিস্তানী মহিলা প্রতিনিধি দলের নেত্রীত্ব করেন। পরে তিনি সমগ্র এশিয়ার জন্য এই আন্তর্জাতিক মৈত্রী সংঘের আঞ্চলিক ডিরেক্টর পদে নিয়োজিত হয়েছিলেন।
দেশভাগের কয়েক বছর পর ঢাকায় মহিলাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বেগম ক্লাব’। বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী। এই ক্লাব নারীদের উন্নয়নমূলক, শিক্ষামূলক কাজের জন্য সভা, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বহুবার তাঁরই নেত্রীত্বে। তিনি ১৯৬২ সালে লেডিস ক্লাবের সভানেত্রী ছিলেন।
শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ – শিশুদের সুস্থ সুন্দর করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে গঠিত হয় ‘শিশু কল্যাণ পরিষদ’। তিনি পূর্ব পাকিস্তান শিশু কল্যাণ পরিষদের সভানেত্রী ছিলেন। তাঁর উদ্যোগে এবং প্রস্তাব অনুযায়ী শিশু কল্যাণ পরিষদের তরফ থেকে প্রতিষ্ঠিত হল ‘শিশু কলাভবন’। ১৯৬২ সাল থেকে প্রতি বছর সমগ্র দেশের শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পীদের মধ্যে স্থান পেয়েছে শিশু কলাভবনের ছাত্র-ছাত্রীরা। দেশ বিদেশের চিত্র প্রতিযোগিতায় এখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা কখনো শীর্ষ স্থান, কখনো সম্মানজনক আসন লাভ করেছে। এই সম্মানের ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে।
বেগম শামসুন নাহারের চেষ্টায় ১৯৬১ সালে ‘পঙ্গু শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র’ স্থাপিত হয়। তিনি ১৯৬৩ সালে সমগ্র পাকিস্তান শিশু কল্যাণ পরিষদের সভানেত্রী নির্বাচিত হন।
১৯৪৮ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত খানের পত্নী বেগম লিয়াকত আলী খান প্রতিষ্ঠা করলেন এক নারী সমিতি, অল পাকিস্তান ওমেনস এসোসিয়েশন। সংক্ষেপে আপওয়া। ঢাকাতে এই প্রতিষ্ঠানের পূর্ব পাকিস্তান শাখা গঠিত হয়। সমিতির প্রেসিডেন্ট হলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী বেগম নুরুল আমীন, বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ হলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। পরবর্তীকালে তিনি আপওয়া পূর্ব পাকিস্তান শাখার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং পশ্চিম পাকিস্তানে বহুবার পূর্ব পাকিস্তানের তরফ থেকে পাকিস্তান শুভেচ্ছা মিশনের সদস্য হিসেবে তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ করেন।
১৯৫৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আমন্ত্রণে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। এই সফরকালে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের পত্নী প্রখ্যাত সমাজ সেবিকা মিসেস এলিনর বেগম রুজভেল্ট শামসুন নাহারকে তাঁর নিউইয়র্কের বাসভবনে আমন্ত্রণ জানালে তিনি সেখানে যান এবং তাঁর সঙ্গে কয়েক ঘন্টা অতিবাহিত করেন।
১৯৬২ সালে লন্ডনে জাতি সংঘের উদ্যোগে ‘পারিবারিক আইনে নারীর মর্যদা’ সম্পর্কে একটি সভা হয়। এতে পাকিস্তানের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ যোগদান করেন।
অল্প বয়স থেকেই বেগম শামসুন নাহার লেখাপড়ার প্রতি যেমন আকৃষ্ট হয়েছিলেন তেমনি সাহিত্যের প্রতিও অনুরাগ জন্মেছিল তাঁর বাল্যকাল থেকেই। এর কারণ তাঁদের বাড়িতে ছিল একটা সুন্দর সাহিত্যিক পরিবেশ। সেই সময় মুহম্মহ শহীদুল্লাহর সম্পাদনায় কলকাতা থেকে প্রকাশিত হত মাসিক পত্রিকা ‘আঙুর’। এই পত্রিকায় তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। বেগম শামসুন নাহার তাঁর প্রথম প্রকাশ সম্পর্কে নিজেই বলেছেন, ‘বাড়ির কাউকে না জানিয়ে কবিতাটি একদিন ভয়ে ভয়ে কলকাতায় ‘আঙুর’ পত্রিকার সম্পাদকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। এর পরের সংখ্যায় পাতা খুলে ছাপার অক্ষরে আমার কবিতা দেখে বাড়ির সবাই যেমন অবাক হয়েছিল, আমি নিজেও তার চেয়ে কম হইনি।’ কবিতাটি প্রকাশের পর আত্নীয়স্বজনদের মধ্যে যারা গোড়া তারা তো বটেই উচ্চ শিক্ষিত অনেকেই আপত্তির মৃদু গুঞ্জন তুলেছিলেন। কারণ পর্দানশীন অবিবাহিতা মেয়ে কলকাতার কাগজে কবিতা ছাপিয়েছে, অপরাধ সামান্য নয়।
আই.এ. পড়ার সময় তিনি ‘নওরোজ’ এবং ‘আত্মশক্তি’ পত্রিকার ‘মহিলা বিভাগ’ সম্পাদনা করতেন। এছাড়াও কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘বুলবুল’ ভাই হবীবুল্লাহ বাহার ও বেগম শামসুন নাহার মাহমুদেরই যুগ্ম সম্পাদনায় প্রকাশিত হতো। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ সমূহের মধ্যে রয়েছে-
১৯২৫ সালে প্রকাশিত হয় ‘পূণ্যময়ী’।
১৯৩৫ সালে প্রকাশিত হয় ‘ফুল বাগিচা’।
১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হয় ‘বেগম মহল’।
১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয় ‘রোকেয়া জীবনী’।
১৯৩৯ সালে প্রকাশিত হয় ‘শিশুর শিক্ষা’।
১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয় ‘আমার দেখা তুরস্ক’।
‘নজরুলকে যেমন দেখেছি’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৮ সালে।
তিনি স্কুলের পাঠ্য পুস্তকও রচনা করেছিলেন, এগুলো- ‘সবুজ পাঠ’, ‘কিশোর সাথী’, ‘তাজমহল পাঠ’, ‘নতুন তাজমহল পাঠ’, ‘বিচিত্র পাঠ্য’ ইত্যাদি।
১৯৪৪ সালে বৃটিশ সরকার তাঁকে শিক্ষাক্ষেত্র ও সমাজসেবার ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এমবিই উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার বেগম শামসুন নাহার মাহমুদকে মরণোত্তর ‘বেগম রোকেয়া পদক, ১৯৯৫’ প্রদান করে। ১৯৬৪ সালের ১০ এপ্রিল মাত্র ৫৬ বৎসর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসূত্র-
. বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ- একটি প্রামান্য জীবনী’ – মুশফেকা মাহমুদ; সম্পাদক- সেলিনা বাহার জামান; প্রকাশক-বুলবুল পাবলিশিং হাউজ, ঢাকা; প্রকাশ কাল-০১ আগষ্ট ২০০১ ইং।
. শত বছরের বাংলাদেশের নারী, প্রকাশক- নারী গ্রন্থ প্রর্বতনা, ঢাকা; প্রকাশ কাল- ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০০৩ ইং। . জেন্ডার বিশ্বকোষ, সম্পাদনা- সেলিনা হোসেন এবং মাসুদুজ্জামান; প্রকাশ কাল- ফেব্রুয়ারী ২০০৬ ইং।
লেখক : আশরাফি ফেরদৌসী