সাইদা খানমদের বাসায় কাজের জন্য এক সুন্দরী বালিকা ছিল। একদিন তার ছবি তোলার জন্য কিশোরী সাইদা খানম নানা প্রস্তুতি নিলেন। সদ্যস্নাত বালিকার স্নিগ্ধ রূপ ছবিতে ফুটাবার জন্য মেয়েটির মাথায় বালতির পানি ঢেলে দিলেন। কাঁধ পর্যন্ত চেহারার ছবিতে পানিতে ভেজা বালিকার অপরূপ রূপ লাবণ্য ফুটে উঠেছিল। ছবিটি ‘বেগম’ পত্রিকায় ছাপা হবার পর মহল্লার মধ্যে প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বাড়ির বড়দের চেষ্টায় অনেক আলোচনার পর তা কিছুটা নিষ্পন্ন হয়েছিল।
সাইদা খানম ছবি তোলা শুরু করেন ১৯৪৯ সাল থেকে। তখন তাঁর বয়স ১২ বছর। সাইদা খানম-এর শৈশব কেটেছে ইছামতির তীরে পাবনার মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে। পাবনার বাড়িতে জানালার পাশে শুয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে ভাবতেন যে, সব দৃশ্য কী চিরকালের জন্য ধরে রাখা যায় না? এ রকম ভাবনা তাঁকে ক্যামেরায় ছবি তোলার বিষয়ে আগ্রহী করে তোলে। ছবি তোলার প্রথম দিকে নিজের ক্যামেরা ছিলো না। সামাজিক পরিবেশও ছিল মেয়েদের ছবি তোলার অন্তরায়। পর্দার কড়াকড়ি বা অবরোধ প্রথার অনুশাসনের মধ্যে ক্যামেরায় ছবি তোলা ছিল বিপজ্জনক। কখনও লুকিয়ে চুপিসারে বাড়ি থেকে বের হতেন তিনি। সখের ছবি তোলা বন্ধ হয়নি।
সাইদা খানম বাংলাদেশের আলোকচিত্র শিল্পীদের মধ্যে একটি পরিচিত নাম। প্রচার বিমুখ হওয়ায় তাঁর নামের পরিচিতি কম, তবুও আলোকচিত্রী সাইদা খানমকে দৃষ্টিসীমার বাইরে রাখা যায়নি। তিনিই এদেশের প্রথম মহিলা আলোকচিত্র শিল্পী যিনি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। এ দেশে এমন একটা সময় ছিল যখন বাংলার মুসলিম নারীরা সামাজিক বাধার কারণে ছবি তুলতে পারতেন না। সেই সময়ে সাইদা সব বাধা অতিক্রম করে নিজের ক্যামেরায় ছবি তুলতে শুরু করেন। এই দুঃসাহসী কাজে ব্রতী হয়ে খ্যাতি লাভ করেন।
আলোকচিত্র শিল্পকে পেশা হিসেবে গ্রহণের জন্য তাঁকে উপেক্ষা করতে হয়েছে নানা বাধা-বিপত্তি, সামাজিক অনুশাসন ও ভ্রূকুটি। সেই সব অন্তরায় অতিক্রম করে এগিয়ে আসতে হয়েছে দৃঢ় পদক্ষেপে। এই উত্তরণ একদিনে হয়নি, অনেক সময় লেগেছে।
আলোকচিত্র শিল্পীর কাজ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আর আমাদের দেশের সমাজ ও পরিবারের পরিবেশ মেয়েদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের অনুকূল নয়। এই প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করার জন্য প্রয়োজন প্রচণ্ড মানসিক জোর। সাইদা খানম এই সব অন্তরায় অতিক্রম করেছেন নিজের মনোবল ও পারিবারিক সহযোগিতায়। মেয়েদের অবরোধে রাখাই ছিল সে যুগের সামাজিক রীতি এবং সেই পরিবেশেই আবদ্ধ থাকতে হতো। কিন্তু সাইদা খানমের পারিবারিক পরিবেশ ছিল মেয়েদের সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের সহায়ক। তাঁকে তাঁর কাজে উত্সাহিত করেছেন-মা এবং খালা মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, বড়বোন অধ্যক্ষা হামিদা খানম ও মহসিনা আলী প্রমুখ। এ ছাড়া তাঁকে প্রেরণা দিয়েছেন, নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃত্ জনাব মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন ও বেগম পত্রিকার সম্পাদিকা নূরজাহান বেগম।
সাইদা খানম যখন আলোকচিত্রীর পেশা গ্রহণ করেন তখন এদেশে ফটোগ্রাফির স্টুডিও ছিল মাত্র দুটি। একটির নাম ছিল ‘জায়েদী স্টুডিও’। এই স্টুডিওর মালিক জায়েদী সাহেব তাঁকে ফটো কম্পোজিশন সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা দিয়েছেন এবং ছবি তোলা বিষয়ে প্রচুর বই পড়তে দিয়েছেন। সাপ্তাহিক সিনেমা পত্রিকা চিত্রালীর সম্পাদক এস.এম. পারভেজ তাঁকে এ বিষয়ে উত্সাহিত করেছেন। পরবর্তী সময়ে যাঁর প্রেরণা পেয়ে ধন্য হয়েছেন – তিনি চলচ্চিত্রকার সত্যজিত্ রায়।
ফটোগ্রাফি একটি শিল্প। যে কোন শিল্পকে আবেদনশীল করে তুলতে হলে, সেই শিল্পের সঙ্গে একাত্ম হতে হবে। তার জন্য করতে হবে সুস্থ ও মহত্ চিন্তা। এই চিন্তার গুণে গুণবান ও মহীয়ান হয়ে শিল্প যেন দর্শকের মনে প্রেম সৃষ্টি করতে পারে। সাইদা খানম তাই করেছেন। যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই প্রদর্শনী দেখেছেন। দেশ-বিদেশ সব জায়গার আলোকচিত্র প্রদর্শনী দেখেছেন, দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। উপলব্ধি করেছেন। শুধু একটিমাত্র ফটো সহজে যে বক্তব্য প্রকাশ করতে পারে, তা ভাষায় প্রকাশ করতে লাগবে বেশ কয়েক লাইন। এছাড়া দর্শকের মন ছুঁয়ে যাবার শিল্পীর তুলির চেয়ে কোন অংশেই কম আবেদনশীল নয় আলোকচিত্রী ক্যামেরা। ক্যামেরাও পারে দর্শকদের মনে শিল্পী প্রেম জাগিয়ে তুলতে। এই আত্মোপলব্ধি সাইদা খানমকে আলোকচিত্র শিল্পের জগতে নিবিষ্ট রাখতে পেরেছে।
সাঈদা খানম ১৯৩৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক বাড়ি ফরিদপুরে। তাঁর বাবা মৌলবি আব্দুস সামাদ খান শিক্ষা বিভাগে কাজ করতেন। বাবা আব্দুস সামাদ খান ছবি তোলার ক্ষেত্রে মাত্র দু’টি বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। বিবাহ আসরে ও স্টেডিয়ামে গিয়ে ছবি তোলা সমর্থন করেননি। বাবার প্রথম নির্দেশটি পালন করতে পারলেও তিনি দ্বিতীয়টি মানতে পারেননি। স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলাধুলার ছবি তুলতেই হয়েছে। দুই ভাই, চারবোনের মধ্যে সাইদা খানম ছিলেন সকলের ছোট। বড় বোন মহসিনা আলী ছিলেন আর্ট কলেজের প্রথম মহিলা আর্টিস্ট।
১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. পাশ করেন। এরপর ১৯৭২ সালে তিনি লাইব্রেরি সায়েন্সে এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন।
সাইদা খানম আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসেবে ‘বেগম’ পত্রিকার আলোকচিত্রী ১৯৫৬ সাল থেকে। ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরিতে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে কাজ করেছেন। প্রেস ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। দুটো জাপানি পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর তোলা আলোকচিত্র মুদ্রিত হয়েছে।
সাইদা খানম বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান করে আলোকচিত্রে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরেন। ১৯৫৬ সালে তিনি প্রথম আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। এরপরে জাপান, ফ্রান্স, সুইডেন, পাকিস্তান, সাইপ্রাস প্রভৃতি দেশের আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয়। ঢাকায় তিনি কয়েকবার একক ও দলীয় প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে কলকাতায় ‘অল ইন্ডিয়া ফটো জার্নালিজম কনফারেন্সে’ বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন। এরপর বিভিন্ন বছরে দিল্লি, কলকাতা, নিউইয়র্কে বিভিন্ন সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮২ সালে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ এশিয়ান গেমস-এ তিনি বেগম পত্রিকার প্রতিনিধিত্ব করেন। এছাড়া সাফ গেমসের ছবি তোলেন। সত্যজিত্ রায়ের ওপর তোলা ছবি নিয়ে তিনবার একক প্রদর্শনী করেন। তিনি নিজের তোলা মাদার তেরেসার ছবির প্রদর্শনী করার আয়োজন করেছেন। ২০০০ সালে দৃক লাইব্রেরীতে ‘শান্তি নিকেতন ও কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়’ শীর্ষক একটি প্রদর্শনী করেন। ২০০১ সালে কলকাতার নন্দনে সত্যজিত্ রায়ের উপরে প্রদর্শনী করেন।
সাইদা খানম বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে পুরস্কৃত হন। শুধু বিদেশে নয় দেশেও নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে সমর্থ হন সাইদা খানম। ১৯৫৬ সালে জার্মানিতে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড কোলন লাভ করেন। ১৯৬০ সালে ‘অল পাকিস্তান ফটো প্রতিযোগিতা’য় প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৯৮০ সালে সাইপ্রাসে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ ফটো প্রতিযোগিতায় সার্টিফিকেট লাভ করেন।
সাইদা খানমের ছবির সংখ্যা প্রায় ৩ হাজারের মতো। দেশ-বিদেশের রাজনীতিবিদ, শিল্প ও সাহিত্য সংস্কৃতি অঙ্গনের বহু বরেণ্য স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বের ছবি তুলেছেন তিনি। এদের ছবি তুলেই শুধু ধন্য হননি; ধন্য হয়েছেন তাঁদের সান্নিধ্য লাভে। তাঁদের মধ্যে কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, ইন্দিরা গান্ধী, রাণী এলিজাবেথ, মাদার তোরেসা, মার্শাল টিটো, শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, মওলানা ভাসানী, বেগম সুফিয়া কামাল, মৈত্রেয়ী দেবী, মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, আশাপূর্ণা দেবী, উত্তমকুমার, অড্রে হেপবার্ন, সৌমেন্দ্র নাথ ঠাকুর, কণিকা বন্দোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া চাঁদের দেশে প্রথম যাঁরা নেমেছিলেন সেই নীল আর্মস্ট্রং, এ্যাড্রিন অলড্রিনস, মাইকেল কলিন্স এরও ছবি তুলেছেন।
আলোকচিত্রকে তিনি শিল্প হিসাবে মনে-প্রাণে গ্রহণ করেছেন। যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই প্রদর্শনী দেখেছেন। কলকাতায়, দিল্লিতে, ঢাকায় আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আলোকচিত্র প্রদর্শনী দেখে মুগ্ধ হয়েছেন এবং বুঝেছেন দর্শকের মন ছুয়ে যাবার জন্য শিল্পীর তুলির চেয়ে কোনো অংশেই কম আবেদনশীল নয় আলোকচিত্রী ক্যামেরা। আলোকচিত্রও যাদু জানে। দর্শকের মনে শিল্পপ্রেম জাগিয়ে তুলতে পারে। এই আত্মোপলব্ধি সাঈদা খানমকে আলোকচিত্র- শিল্পের জগতে নিবিষ্ট রাখতে পেরেছে। বাংলাদেশ আলোকচিত্রী নারীর সংখ্যা খুবই কম।
আলোকচিত্র ক্ষেত্রে মেয়েদের কম উপস্থিতির তিনটি কারণ উল্লেখ করে সাইদা খানম বলেন- প্রথমত, ছবি তোলার পারদর্শিতার জন্য দরকার প্রচুর অর্থ। ব্যয়বহুল বলে এই ক্ষেত্রে কম মেয়ে এগিয়ে আসেন। দ্বিতীয়ত, ছবি তোলার কাজে সময়-অসময় নেই, দরকার অসীম ধৈর্য। এর জন্য দরকার পারিবারিক সহযোগিতা। মেয়েদের সৃজনশীল কাজে এখনো পারিবারিক সহযোগিতা খুব বেশি দেখা যায় না। তাই মেয়েরা কম উত্সাহিত এই কাজে এবং তৃতীয়ত, এই কাজ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের সমাজ ও পরিবার মেয়েদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে খুব সহায়ক নয়। প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করার প্রচন্ড মানসিক জোর প্রয়োজন হয়। এসব কারণে কমসংখ্যক মেয়ে আলোকচিত্র পেশায় এগিয়ে আসেন। সাইদা এইসব অন্তরায় অতিক্রম করেছেন নিজের মনোবলে এবং পারিবারিক সহযোগিতায়।
সাইদা খানমের ভেতর বাইরে পুরোটাই এক শৈল্পিক সত্তা দিয়ে মোড়া। তিনি স্বাভাবিকতার মধ্যেই সৌন্দর্য খুঁজে পান আর সে খুঁজে পাওয়া তাঁর নিজের গুণ – দুর্লভ গুণ। তাঁর মধ্যে আরও অনেক গুণের সমন্বয় আছে। তিনি সাহিত্যিক, আলোকচিত্রী ও সমাজ সেবী। ভিন্নভাবে এক একটির ধারকবাহক নন – সব মিলিয়ে তিনি একটি পরিপূর্ণ সত্তা।
সাইদা খানম বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি ও বাংলাদেশ মহিলা সমিতির একজন সদস্যা। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি এবং ইউএনএবির আজীবন সদস্য। শুধু আলোকচিত্রী নয়, তিনি বাংলাদেশ লেখিকা সংঘের সাধারণ সম্পাদিকাও। তাঁর অনেক লেখা ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ফিচার, সাক্ষাত্কার ছাপা হয়েছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। সেইসব গল্পের সংকলন ‘ধুলোমুঠি’ ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয়। ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয় ছবির গ্রন্থ আমার ‘চোখে সত্যজিত্ রায়’। এছাড়াও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তিনি লেখেন। সবচেয়ে বড় তিনি একজন সংস্কৃতি কর্মী। তিনি দেশের অসংখ্য সাংস্কৃতিক সংগঠানের সঙ্গে যুক্ত থেকে কাজ করেন। তাঁর ভাবনায় সমাজ রূপান্তরের প্রশ্নটি গভীরভাবে সম্পৃক্ত।
সমাজসেবী সাইদা খানমকে সকলেই জানেন। রাজনীতিসচেতন সাইদা খানম দলীয় রাজনীতি করেন না কিন্তু, দেশপ্রেমিক সবসময়ই। বৃটিশ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনে তাঁর মা বিপ্লবীদের সঙ্গে পরোক্ষভাবে কাজ করেছেন। সাইদা খানম সেসব শুনেছেন শৈশবে।
আলোকচিত্রী ও লেখিকারূপে সাইদা খানম নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি। তিনি একজন সচেতন দেশপ্রেমিক ও সমাজসেবী। যদিও সক্রিয়ভাবে তিনি রাজনীতির সঙ্গে সংযুক্ত নন কিন্তু পরোক্ষভাবে ছাত্র গণআন্দোলনে ও অন্যান্য সরকার বিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। সমাজসেবামূলক কাজে তিনি বেশি তৃপ্তি পান। সেবামূলক কাজেও তাঁর যথেষ্ট অবদান আছে। মুক্তিযুদ্ধের পর হাসপাতালে নার্স সংকট দেখা দিলে তিনি হলিফ্যামিলি হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবী নার্সিং-এর কাজ করেছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় তিনি সেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন।
নিজেও তিনি পাকিস্তান শাসনামলে ছাত্র গণআন্দোলনে পরোক্ষভাবে কাজ করেছেন। বুভুক্ষু মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তত্কালীন নেত্রী সেলিনা বানুর আহ্বানে। সে সময় পাক-সামরিক সরকারবিরোধী আন্দোলনের গোপন কাগজপত্র লুকিয়ে রেখেছেন অনেকের অনুরোধে। সেবামূলক কাজে সাইদা খানম জড়িত থাকেন। ভালোবাসেন অসহায়, অসুস্থ মানুষের সেবা করতে। মুক্তিযুদ্ধের পর যখন হলি ফ্যামিলিতে স্বেচ্ছাসেবী নার্সিং-এর কাজ করতেন, তখন হাসপাতালে পানি সংকট হলে ভিকারুন্নেসা স্কুলের ছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষিকা আলেয়া ফেরদৌসী এবং তিনি হাসাপাতালে পানি পৌঁছাবার ব্যবস্থা করতেন। এসব নানারকম ছোটখাটো সমাজসেবামূলক কাজ তিনি অনেক করেছেন।
মৃত্যু: আগস্ট ১৮, ২০২০ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
লেখক : আশরাফি ফেরদৌসী