কৃষক নেতা জিতেন ঘোষ তাঁর রচনা সমগ্রে লিখেছেন, “দেশবন্ধু ময়মনসিংহ যাবেন। কর্মীরা তাঁকে প্রথম শ্রেণীর কামরায় নিয়ে যেতে চাচ্ছেন শুনে তিনি হেসে বললেন, “আমি তো ভাই আর পঞ্চাশ হাজারী ব্যারিস্টার সি আর দাশ নই। কোনো মামলাও পরিচালনা করতে যাচ্ছি না। যাচ্ছি দেশের জনগণের কাছে তাঁদের সেবা করার উদ্দেশ্য নিয়ে। তাঁরা তো তৃতীয় শ্রেণীতেই চড়েন। তোমাদের সাথে আমিও তৃতীয় শ্রেণীতেই যাবো। আমাকে আর আমার দেশের মানুষের কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিও না। ব্যারিস্টারি জীবনে বহু শিক্ষিত সভ্য ভদ্রের সাথে তো মিশলাম, কিন্তু প্রাণ তো দেখলাম না কোথাও। শান্তিও তো পেলাম না। সবাই তো শো-কেসের প্রাণহীন ছবি। প্রাণ তো জনগণের মধ্যে।”
জিতেন ঘোষ আরো লিখেছেন, “তিলক স্বরাজ ফান্ডে টাকা তোলা হচ্ছে। কলকাতার পথে পথে কর্মীরা গান গেয়ে গেয়ে টাকা তুলছেন। প্রশ্ন উঠলো, বেশ্যাপাড়ায় অর্থ সংগ্রহের জন্য যাওয়া যাবে কিনা। এ নিয়ে দারুণ বাকবিতণ্ডা। কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত। দেশবন্ধু বললেন, এ নিয়ে তর্ক কেন? বেশ্যা বলে কি তাঁরা বাংলার নারী নন? নন কি পরাধীনা? নিপীড়িতা? অর্থাভাব এবং অমানুষিক সামাজিক উৎপীড়নই তো তাঁদের দেহ-বিপণী সাজাতে এভাবে বাধ্য করেছে। স্বরাজ তো তাই এদেরই জন্য। যে স্বরাজ দেশের অর্থাভাব দূর করবে না, দূর করবে না শোষণ, নির্যাতন, মুক্তি দেবে না পতিত-পতিতাদের, তেমন স্বরাজ এ দেশের মানুষ চান না। আমিও চাইনে। কাল আমি তোমাদের সাথে বেশ্যাপাড়ায় যাবো। পরদিন দেশবন্ধুকে সামনে রেখে একদল কর্মী গান গাইতে গাইতে বেশ্যাপাড়ার কোনো এক দুয়ারের সামনে যেয়ে উপস্থিত হলেন। দুয়ার হতে দেশবন্ধু হাঁক দিলেন, মা-বোনেরা স্বরাজ ফান্ডে ভিক্ষা দাও। এ তো ডাক নয়, যেন যাদুর ধুলা ছুঁড়ে দেয়া হলো। সোনাদানা, টাকাপয়সা যার যা ছিলো সবই এনে বেশ্যা নারীরা দেশবন্ধুর পায়ে উজাড় করে ঢেলে দিলো। তাঁর পায়ে কপাল ঠুকে বলতে লাগলো, বাবা আমাদের কি মুক্তি হবে? দেশবন্ধুর দু’চোখ বেয়ে দরদর করে জলের ধারা নামলো। অপূর্ব দৃশ্য, দেশপ্রেমের জ্বলন্ত নিদর্শন। দেশপ্রেম কারও একচেটিয়া নয়, এ কথাটা বুঝিয়ে দিলেন তিনি”।
জিতেন ঘোষের লেখা থেকে এতক্ষণ আমরা যাঁর কথা শুনলাম তিনি হলেন চিত্তরঞ্জন দাশ, যিনি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য আজীবন অনেক ত্যাগ ও সংগ্রাম করেছেন। আর সেকারণে ভারতবর্ষের জনগণ তাঁকে ‘দেশবন্ধু’ খেতাবে ভূষিত করেন। তিনি ছিলেন একজন বিপ্লবী, আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ জন্মগ্রহণ করেন ১৮৭০ সালের ৫ নভেম্বর, কলকাতায়। তাঁর বাবা ভুবনমোহন দাশ। মা নিস্তারিণী দেবী। চিত্তরঞ্জন দাশের পূর্বপুরুষের আদিনিবাস ছিল ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের তেলিরবাগ গ্রামে। শিক্ষিত পরিবার হিসেবে তাঁদের পরিবারের যথেষ্ঠ সুনাম ছিল।
চিত্তরঞ্জন দাশের বাবা একজন আইনজীবী ছিলেন। তিনি কলকাতা হাইকোর্টের অ্যাটর্নী ছিলেন। তিনি উচ্চ সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনি শ্লোক ও স্তোত্র গীত রচনা করতেন, যা প্রতিদিন সকালে গাইতেন। ‘ব্রাক্ষ্ম জনমত’-এর সম্পাদক হওয়ায় কলকাতার সাংবাদিকতা জগতে বেশ পরিচিত ছিলেন তিনি। রাজনীতি সচেতন ও দাতা স্বভাবের এই মানুষটি সবসময় মানুষের কল্যাণে কাজ করতেন। চিত্তরঞ্জন দাশ ছোটবেলা থেকেই বাবার গুণগুলো নিজের জীবনে প্রতিস্থাপন করার চেষ্টা করেন। চিত্তরঞ্জন দাশের মা নিস্তারিণী দেবী উচ্চ শিক্ষিত না হলেও, তিনি ছিলেন উচ্চমনের অধিকারী। তিনি সহজ-সরল, অতিথিপরায়ন ও নীতিবান ছিলেন। চিত্তরঞ্জন দাশের বাবা দাতা স্বভাবের হওয়ার কারণে তাঁদের পরিবারে একসময় অভাব-অনটন দেখা দেয়। কিন্তু তাঁর মা পরিবারের এই অভাব সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করেন। কোনো প্রতিকূল পরিবেশ এলে তিনি ঘাবড়ে যেতেন না। চিত্তরঞ্জন দাশরা আট ভাই-বোন ছিলেন। আট ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।
চিত্তরঞ্জন দাশের পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। প্রাথমিক পড়াশুনা শেষ হওয়ার পূর্বে চিত্তরঞ্জন দাশ শৈশবে তাঁর বাবার সাথে কলকাতার ভবানীপুরে চলে আসেন। কারণ তখন তাঁর বাবা কলকাতার ভবানীপুরে বসবাস শুরু করেন। চিত্তরঞ্জন দাশ ১৯৭৯ সালে ভবানীপুর লন্ডন মিশানারি স্কুলে ভর্তি হন। স্কুলের পাঠ্যবই পড়ার চেয়ে পাঠ্যতালিকার বাইরের বই পড়তে বেশী পছন্দ করতেন তিনি। যে কারণে তাঁর পরীক্ষার ফলাফল খুব ভাল হতো না।
চিত্তরঞ্জন দাশ শৈশবে বিপিন চন্দ্র পালের সংস্পর্শ আসেন। বিপিন চন্দ্র পাল সেই সময়ের একজন নামকরা রাজনীতিবিদ ও বাগ্মী ছিলেন। তাঁর প্রভাবে চিত্তরঞ্জন দাশ দেশাত্মবোধক গান ও কবিতার একনিষ্ঠ ভক্ত হয়ে উঠেন।
চিত্তরঞ্জন দাশ ১৯৮৬ সালে লন্ডন মিশানারি স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন। এরপর ভর্তি হন প্রেসিডেন্সী কলেজে। এই কলেজে পড়ার সময় তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন। কলেজ জীবনে তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজের সুরেন্দ্রনাথ প্রবর্তিত স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য হন। একপর্যায়ে তিনি এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৮৯০ সালে তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করেন। এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য বিলেত যান। বিলেতে থাকার সময় রাজনৈতিক ব্যাপারে সক্রিয় ছিলেন এবং অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৮৯৩ সালে ব্যারিস্টারি পড়া শেষ করে দেশে ফিরে আসেন এবং আইন পেশা শুরু করেন। ১৮৯৪ সালে কলকাতা হাইকোর্টে ব্যারিস্টার হিসেবে তাঁর নাম তালিকাভুক্ত হয়। পেশা জীবনের শুরুতে তাঁর সামান্য আয় হত। যা দিয়ে তাঁর দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় ব্যয় বহন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ট্রামভাড়ার সামান্য পয়সা বাঁচানোর জন্য তিনি হাইকোর্ট থেকে ভবানীপুর হেঁটে যেতেন।
এসময় তাঁর বাবাও ঋণে ডুবে যান। এই কঠিন দুরাবস্থার সময় তাঁর বাবা কলকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। এই নির্বাচনে প্রচুর টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু তিনি নির্বাচনে জিততে পারেননি। পরোপকার ও উদারতার কারণে তাঁর এই ঋণ বাড়তেই থাকে। এসময় তাঁর অফিসের এক ক্লার্কের অনুরোধে এক ব্যক্তির জামিন হন তিনি। কিন্তু ওই ব্যক্তিটি আত্মগোপন করার কারণে ভুবনমোহনের কাঁধে ৩০,০০০ টাকা পরিশোধের দায়িত্ব পড়ে। অনেক ঋণদাতা তাদের টাকা ফিরে পাওয়ার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালত ১৮৯৬ সালের ১৬ জুন ভূবনমোহন ও চিত্তরঞ্জনকে দেউলিয়া হিসেবে ঘোষণা করে।
এসব ঘটনার পর চিত্তরঞ্জন দাশ হতাশ না হয়ে পুনরায় নুতন উদ্যমে আদালতে যাওয়া শুরু করেন। কিছুদিন পর তিনি মামলা পেতে শুরু করেন। এসময় তাঁর যা আয় হয়, তা দিয়ে মোটামুটি স্বচ্ছলভাবে চলতে পারেন এবং তাঁর জীবনের মোড় ঘুরতে থাকে। ১৮৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি বিজনী রাজকোর্টের বরদাপ্রসাদ হাওলাদারের কন্যা বাসন্তী দেবীকে বিয়ে করেন।
আইন পেশার পাশাপাশি তিনি গোপনে গোপনে বিপ্লবী রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ১৯০৩ সালে কলকাতায় প্রমথ মিত্র ও চিত্তরঞ্জন দাস প্রথমে ‘অনুশীলন সমিতি’ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি এই সমিতির সহ-সভাপতি ছিলেন। অরবিন্দ ঘোষের ‘বন্দে মাতরম’ পত্রিকার সঙ্গেও তাঁর সম্পৃক্ততা ছিল।
১৮৯৭-১৯০৪ সাল পর্যন্ত চিত্তরঞ্জন দাশকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। তবে পারিবারিক অবস্থান তাঁর পেশা জীবনের উন্নয়নে কিছুটা ভূমিকা রাখে। কারণ তাঁর পিতামহ ছিলেন সরকারী আইনজীবী। দুই চাচা ছিলেন নামকরা আইনজীবী। এছাড়া তাঁর পরিবারের তিনজন ছিলেন জজ। সুধীররঞ্জন দাশ ছিলেন তাঁদের পরিবারের একজন, যিনি পরবর্তীতে ভারতের প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন।
আইনজীবী হিসেবে চিত্তরঞ্জন দাশ সিভিল কোর্টের প্রাকটিসের পরিবর্তে ক্রিমিনাল কোর্টে প্রাকটিস শুরু করেন। এজন্য তাঁকে প্রায়ই মফস্বলে যেতে হত। তিনি কঠোর পরিশ্রম করতেন কিন্তু যে কোনে ব্যারিস্টারের চেয়ে ফি নিতেন কম। গরীব মক্কেলের কাছ থেকে কোনো টাকা নিতেন না। তিনি সব সময় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষ নিতেন। অনেক সময় দেখা যেত যার পক্ষ নিয়েছেন তিনি দোষী, তখন ওই দোষী ব্যক্তিকে দোষী প্রমাণ করে দিতে দ্বিধাবোধ করতেন না। যে ব্যক্তিই তাঁর কাছে মামলা নিয়ে এসেছেন তিনিই সবার কাছে তাঁর মহত্বের কথা, বুদ্ধিমত্তার কথা, সততা ও সেবার কথা প্রচার করে বেড়িয়েছেন। এভাবে তাঁর নাম ও পরিচিতি গণমানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আইনজীবী হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করার পর চিত্তরঞ্জন দাশ মফস্বল ছেড়ে কলকাতায় প্রাকটিস শুরু করেন এবং পুনরায় সিভিল কেসগুলো পরিচালনা করে বেশ সাফল্য পান। সাথে সাথে রাজনীতিতেও পূর্বের চেয়ে বেশী সময় দেন। যার ফলে ১৯০৬ সালে কংগ্রেসের কলকাতা প্রতিনিধি নির্বাচিত হন তিনি।
‘কুতুবদিয়া রাজবন্দী মামলা’ দেশবন্ধুকে প্রথম জীবনে একজন আইনজীবী হিসাবে তাঁর দক্ষতা প্রমাণ করতে সহায়তা করেছে। অন্তরীণ-স্থল ত্যাগ করে চট্টগ্রাম যাওয়া ছিল এই মামলায় ১৭ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ । চিত্তরঞ্জন দাস তাঁদের জন্য বিনা ফি’তে কাজ করেন। মামলাটি পরিচালনার জন্য এ সময় তিনি প্রায় পক্ষকালব্যাপী চট্টগ্রামে অবস্থান করেন । দেশবন্ধু যুক্তি দেখান যে, রাজবন্দীরা পালিয়ে যাননি বরং জেলা ম্যাজিট্রেটের কাছে কিছু যুক্তিসঙ্গত ও আইনগত দাবীর জন্যে গিয়েছিলেন। তাঁর চমৎকার কৌশলের কারণে বন্দীদের মাত্র দুই মাসের সাজা হয়েছিল।
আইনজীবী হিসেবে চিত্তরঞ্জন দাশের জন্য ১৯০৭ সাল ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ সময় তিনি সিভিল ও ক্রিমিনাল উভয় কোর্টেই একজন সফল আইনজীবী হিসেবে নিজেকে প্রতিস্থাপন করেন। এ সময় কলকাতা কোর্টে দেশপ্রেমিক ও বিপ্লবী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের যত মামলা এসেছে তিনি সেগুলোর বিরুদ্ধে অবিরাম লড়েছেন।
১৯০৮ সালে মুরারিপুকুর বোমা মামলায় বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষের উপর রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়। চিত্তরঞ্জন দাশ বিনা পারিশ্রমিকে এই মামলায় লড়েন। তখন তাঁর মাসিক আয় ছিল পাঁচ হাজার টাকা। আর এই মামলা পরিচালনা করতে তাঁকে চল্লিশ হাজার টাকা দেনা করতে হয়েছিল। অরবিন্দ ঘোষের বিরুদ্ধে এই মামলা চলে ১২৬ দিন। দু’শর বেশী সাক্ষীকে জেরা করা হয়। ৪০০০ কাগজপত্র এবং ৫০০ জিনিসপত্র প্রমাণ হিসেবে হাজির করা হয়। চিত্তরঞ্জন দাশ ৯ দিন ধরে তাঁর সওয়াল জওয়াবের সমাপ্তি বক্তব্য দেন । এই মামলায় তিনি যে সওয়াল জওয়াব দেন তা ছিল জ্ঞান ও দেশপ্রেমের অপূর্ব নিদর্শন। বিচারের রায়ে অরবিন্দ ঘোষ মুক্তি পান।
চিত্তরঞ্জন দাশ অর্থ উপার্জনের জন্য রাজনৈতিক মামলার পাশাপাশি মাঝে মাঝে জমিদার, মহাজনদের মামলাও পরিচালনা করতেন। উপার্জিত অর্থ তিনি গরীব-অসহায় জনগণকে দিতেন এবং তা দিয়ে দেশপ্রেমিক বিপ্লবীদের মামলা পরিচালনা করতেন। একবার ডুমরাওনের মহারানীর মৃত্যুর পর রাজা কেশোপ্রসাদ তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকার না হতে পেরে মামলা করেন। এই মামলায় চিত্তরঞ্জন দাশ প্রতি মাসে ১০,০০০ রুপী পেতেন। আর মামলায় জয়ী হওয়ার পর রাজা কেশোপ্রসাদ খুশি হয়ে চিত্তরঞ্জন দাশকে ৫০,০০০ রুপী দেন।
১৯১০ সালে চিত্তরঞ্জন দাশ ‘ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলা’ পরিচালনা করেন। এই মামলার মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার অনুশীলন সমিতির প্রধান পুলিন বিহারী দাশ এবং সঙ্গীদেরকে নির্বাসন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও বিভিন্ন মেয়াদে কারদণ্ড দিয়েছিল। কিন্তু চিত্তরঞ্জন দাশ এই রায়ের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে আপিল করেন। তাঁর আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পরিবর্তে ৬ মাসের শাস্তি এবং ৩৩ জনের মধ্যে ১১ জনের তুলনামূলক কম শাস্তি হয়েছিল।
১৯১৪ সালে চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দিল্লী ষড়যন্ত্র মামলা’ পরিচালনা করেন। এটাও ছিল একটি রাজনৈতিক মামলা। এই মামলার মাধ্যমে তিনি ভারতবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ‘দিল্লী ষড়যন্ত্র মামলার মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার ১৪ জন বিপ্লবীকে লর্ড হার্ডিঞ্জ হত্যা প্রচেষ্টার সাথে যুক্ত করে। কিন্তু চিত্তরঞ্জন দাশের তীক্ষ্ম যুক্তির কাছে ইংরেজ সরকার হেরে যায় এবং তিনি জয়ী হন।
আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও বিপ্লবীদেরকে ব্রিটিশদের অত্যাচার-নির্যাতন ও জেল-জুলুমের হাত থেকে বাঁচানো ছিল তাঁর প্রথম কাজ। আর দ্বিতীয় কাজ ছিল সরাসরি স্বদেশী রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকা এবং পরাধীন ভারতকে স্বাধীন করার জন্য কাজ করা। যে কারণে তিনি ১৯১৭ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।
১৯১৮ সালে ‘আলিপুর ট্রাঙ্ক মার্ডার কেস’ মামলা থেকে তিনি পাঁচ জন ব্যক্তিকে মুক্ত করেন। এই মামলাটি ‘আলিপুর ট্রাঙ্ক মার্ডার কেস, ১৯১৮’ নামে পরিচিতি । ওই বছর চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা হল ‘অমৃতবাজার পত্রিকা মামলা’। কলকাতা হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ অভিমত প্রকাশ করে যে, কলকাতা উন্নয়ন ট্রাস্ট কোনো ব্যক্তিগত জমি রাখতে পারবে না। একই সময় হাইকোর্টে অন্য একজন বিচারক রায় দেন যে, কলকাতা উন্নয়ন ট্রাস্ট সেই ক্ষমতা রাখে। এরকম বিপরীতধর্মী মতামতের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি স্পেশাল ব্রাঞ্চ গঠন করা হয়। প্রধান বিচারপতি Sir Lancelot Sanderson , বিচারপতি Jonh Woodroffe এবং Mr. Chitty নিয়ে এই বেঞ্চ গঠন করা হয়। কলকাতার অন্যতম বিখ্যাত দৈনিক পত্রিকা অমৃতবাজার এ ব্যাপারে মন্তব্য করে সম্পাদকীয় ছাপে। পত্রিকাটি স্পেশাল বেঞ্চের গঠন সম্পর্কেও প্রশ্ন তোলে। এই অবস্থায় প্রধান বিচারপতি অমৃতবাজারকে শোকজ করেন এবং আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন।
‘অমৃতবাজার পত্রিকা’ তখনকার কলকাতা বারের প্রখ্যাত আইনজীবীদের নিযুক্ত করে। মি. জ্যাকসন, মি. নরটন, বোমকেশ চক্রবর্ত্তী এবং চিত্তরঞ্জন দাশ এই মামলায় নিযুক্ত হন। স্বাভাবিকভাবেই মামলা শুরু করেন মি. জ্যাকসন। কিন্তু পরবর্তিতে একমাত্র চিত্তরঞ্জন দাশ ছাড়া আর কেউই মামলা পরিচালনা করার জন্য ছিলেন না। তিনি একাই অমৃতবাজার পত্রিকার পক্ষে লড়েন এবং বিচারকদের রায় চিত্তরঞ্জন দাশের পক্ষে অর্থাৎ অমৃতবাজার পত্রিকার পক্ষে যায়।
১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল পাঞ্জাব প্রদেশের অমৃতসর শহরে ব্রিটিশ সরকার জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড চালায়। এ হত্যাকাণ্ডে ৩৭৯ জন নিহত এবং প্রায় ১১০০ জন আহত হয়েছিল। ইতিহাসে এটাই ‘জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড’ নামে পরিচিত। ব্রিটিশের নানা টালবাহানার পর এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচারের জন্য সর্ব-ভারতীয় কংগ্রেস একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন মহাত্মা গান্ধী, সদস্য ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ, মতিলাল নেহেরু, আব্বাস তৈয়্যবজী এবং ড. জাকির হোসেন। তদন্ত কমিটির অধিকাংশ খরচ বহন করেন চিত্তরঞ্জন দাশ। তিনি তদন্ত কমিটিতে তাঁর প্রজ্ঞার পরিচয় দেন। যে কারণে হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠ তদন্ত বের করে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছিল। এছাড়াও তিনি মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার এবং পাঞ্জাবে সরকারি দমননীতির প্রতিবাদে সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলেন।
১৯২০ সালে মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের সময় আইনসভা বর্জন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন তিনি। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি নিজেই অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব কংগ্রেস অধিবেশনে উত্থাপন করেন এবং গান্ধীজীর ডাকে ব্যারিস্টারি পেশা ত্যাগ করে দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। স্বয়ং ভারত সরকার প্রখ্যাত মিউনিশনস বোর্ড ঘটিত মামলায় প্রচলিত নজীর উপেক্ষা করে সাহেব এডভোকেট জেনারেল অপেক্ষা অধিক পারিশ্রমিক দিয়ে তাঁকে সরকারি কৌসুলী নিযুক্ত করেন। অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য তিনি এ দায়িত্ব পরিত্যাগ করেন। এই অসামান্য ত্যাগের জন্য ভারতবর্ষের জনগণ কর্তৃক তিনি ‘দেশবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত হন।
১৯২১ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশ নেয়ার জন্য তিনি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। ১৯২১ সালে কারাগারে থাকার কারণে আমেদাবাদ কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েও উপস্থিত থাকতে পারেননি তিনি। পরের বছর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গয়া কংগ্রেসে সভাপতিত্ব করেন। কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে সাংগঠনিক বিষয়ে বিরোধ দেখা দেয়ায় তিনি ১৯২২ সালে কংগ্রেসের সভাপতিত্ব ত্যাগ করেন। এরপর তিনি স্বরাজ্য দল গঠন করেন। মতিলাল নেহেরু এবং দেশবন্ধুর নেতৃত্বে এই দল ভারতের অন্যতম রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। ১৯১৯-২২ সালের অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাংলার গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন তিনি।
১৯২৩ সালে চিত্তরঞ্জন দাশ বাংলার জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করেন। বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক ঐক্যের আহ্বান সমগ্র বাঙ্গালীকেই প্রচণ্ডভাবে নাড়া দেয়। তিনি অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির মুখ্য প্রতিনিধি রূপে আত্মপ্রকাশ করেন এবং হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যের লক্ষ্যে ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ নামে ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদন করেন যা বাংলার হিন্দু-মুসলমান নেতৃবৃন্দের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগায়। এ চুক্তিতে মুসলমান মধ্যবিত্তের অনগ্রসরতা দূর করার বিশদ পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত হয়। সম্ভবত এ চুক্তির কারণেই ১৯২৩ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত আইন সভা নির্বাচনে চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বাধীন নবগঠিত রাজনৈতিক দল স্বরাজ্য বাংলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে। আর বিজয়ী আইনসভা সদস্যদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলমান সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় সমান সমান। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে স্বরাজ্য দল তখন একটি প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯২৩ সালের নির্বাচনে স্বরাজ্য দল বিশেষ সাফল্য লাভ করে। চিত্তরঞ্জন দাশ ছিলেন কলকাতা করপোরেশনের প্রথম মেয়র।
১৯২৪ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দমানোর জন্য ব্রিটিশ সরকার ‘১ নং বেঙ্গল অর্ডিনান্স’ নামে এক জরুরি আইন পাশ করে। এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল-রাজনৈতিক কারজকলাপের জন্য সন্দেহভাজনদের বিনা বিচারে আটক রাখা। ওই সময় কলকাতা থেকে সুভাষ চন্দ্র বসু, সুরেন্দ্রমোহনসহ প্রথম সারির নেতাদের গ্রেফতার করে ব্রিটিশ সরকার। তখন চিত্তরঞ্জন দাশ নিজ বাড়িতে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির বৈঠকের আহ্বান করেন। গান্ধীজী উপলব্ধি করেন স্বরাজ্য দলকে দমনের জন্যেই এই অর্ডিন্যান্স পাশ করা হয়েছে। এরপর থেকে গান্ধীজী দেশবন্ধুকে অকুণ্ঠ সমর্থন জ্ঞাপন করেন। চিত্তরঞ্জন দাশ ১৯২৪ ও ১৯২৫ সালে পরপর দুবার মেয়র নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি চাকরির ক্ষেত্রে অবহেলিত মুসলমানদের অধিক হারে সুযোগদানের নীতি গ্রহণ করেন।
রাজনীতির মধ্যে থেকেও তিনি নিয়মিত সাহিত্যচর্চা করতেন। সে সময়ের বিখ্যাত মাসিক পত্রিকা ‘নারায়ণ’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন তিনি। ‘মালঞ্চ’, ‘সাগর সঙ্গীত’ ও ‘অন্তর্যামী’ গ্রন্থের জন্য তিনি কবি ও লেখক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
চিত্তরঞ্জন দাশ ১৯২৫ সালের ১৬ জুন মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর পৈতৃক বসতবাড়িটি জনসাধারণের জন্য দান করে যান। সেখানে ‘চিত্তরঞ্জন সেবাসদন’ প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর মৃত্যুতে বরীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ/মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান”।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যুর পর জীবনানন্দ দাশ তাঁর স্মরণে ‘দেশবন্ধুর প্রয়াণে’ নামক একটি কবিতা রচনা করেন, যা বঙ্গবাণী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কবিতাটি পরবর্তীতে ১৯২৭ সালে জীবনানন্দ দাশের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরা পালকে প্রকাশিত হয়।
দেশবন্ধু: জীবনান্দ দাশ
বাংলার অঙ্গনেতে বাজায়েছ নটেশের রঙ্গমল্লী গাঁথা
অশান্ত সন্তান ওগো, বিপ্লবিনী পদ্মা ছিল তব নদীমাতা।
কাল বৈশাখীর দোলা অনিবার দুলাইতে রক্তপুঞ্জ তব
উত্তাল ঊর্মির তালে-বক্ষে তবু লক্ষ কোটি পন্নগ- উৎসব
উদ্যত ফণার নৃত্যে আষ্ফালিত ধূর্জটির কন্ঠ-নাগ জিনি,
ত্র্যম্বক-পিনাকে তব শঙ্কাকুল ছিল সদা শত্রু অক্ষৌহিণী।
স্পর্শে তব পুরোহিত, ক্লেদে প্রাণ নিমেষেতে উঠিত সঞ্চারি,
এসেছিলে বিষ্ণুচক্র মর্মন্তুদ-ক্লৈব্যের সংহারী।
ভেঙেছিলে বাঙালির সর্বনাশী সুষুপ্তির ঘোর,
ভেঙেছিলে ধূলিশ্লিষ্ট শঙ্কিতের শৃঙ্খলের ডোর,
ভেঙেছিলে বিলাসের সুরাভান্ড তীব্র দর্পে, বৈরাগের রাগে,
দাঁড়ালে সন্ন্যাসী যবে প্রাচীমঞ্চে-পৃথী-পুরোভাগে।
নবীন শাক্যের বেশে, কটাক্ষেতে কাম্য পরিহরি
ভাসিয়া চলিলে তুমি ভারতের ভাবগঙ্গোত্তরী
আর্ত অস্পর্শ্যের তরে, পৃথিবীর পঞ্চমার লাগি;
বাদলের মন্দ্র সম মন্ত্র তব দিকে দিকে তুলিলে বৈরাগী।
এনেছিলে সঙ্গে করি অবিশ্রাম প্লাবনের দুন্দুভিনিনাদ,
শানি-প্রিয় মুমূর্ষর শ্মশানেতে এনেছিলে আহব- সংবাদ
গান্ডীবের টঙ্কারেতে মুহুর্মুহু বলেছিলে, আছি আমি আছি!
কল্পশেষে ভারতের কুরুক্ষেত্রে আসিয়াছি নব সব্যসাচী।
ছিলে তুমি দধীচির অস্থিময় বাসবের দম্ভেলির সম,
অলঙ্ঘ্য, অজেয়, ওগো লোকোত্তর, পুরুষোত্তম।
ছিলে তুমি রূদ্রের ডম্বরুরূপে, বৈষ্ণবের গুপীযন্ত্র মাঝে,
অহিংসার তপোবনে তুমি ছিলে চক্রবর্তী ক্ষত্রিয়ের সাজে-
অক্ষয় কবচধারী শালপ্রাংশু রক্ষকের বেশে।
ফেরুকুল-সঙ্কুলিত উঞ্ছবৃত্তি ভিক্ষুকের দেশে
ছিলে তুমি সিংহশিশু, যোজনান্ত বিহরি একাকী
স্তব্ধ শিলাসন্ধিতলে ঘন ঘন গর্জনের প্রতিধ্বনি মাখি।
ছিলে তুমি নীরবতা-নিষ্পেষিত নির্জীবের নিদ্রিত শিয়রে
উন্মত্ত ঝটিকাসম, বহ্নিমান বিপ্লবের ঘোরে;
শক্তিশেল অপঘাতে দেশবক্ষে রোমাঞ্চিত বেদনার ধ্বনি
ঘুচাতে আসিয়াছিলে মৃত্যুঞ্জয়ী বিশল্যকরণী।
ছিলে তুমি ভারতের অমাময় স্পন্দহীন বিহ্বল শ্মশানে
শবসাধকের বেশে-সঞ্জীবনী অমৃত সন্ধানে।
রণনে রঞ্জনে তব হে বাউল, মন্ত্রমুগ্ধ ভারত, ভারতী;
কলাবিৎ সম হায় তুমি শুধু দগ্ধ হলে দেশ-অধিপতি।
বিবিবশে দূরগত বন্ধু আজ, ভেঙে গেছে বসুধা-নির্মোক,
অন্ধকার দিবাভাগে বাজে তাই কাজরীর শ্লোকে।
মল্লারে কাঁদিছে আজ বিমানের বৃন্তহারা মেঘছত্রীদল,
গিরিতটে, ভূমিগর্ভ ছায়াচ্ছন্ন-উচ্ছ্বাসউচ্ছল।
যৌবনের জলরঙ্গ এসেছিল ঘনস্বনে দরিয়ার দেশে,
তৃষ্ণাপাংশু অধরেতে এসেছিল ভোগবতী ধারার আশ্লেষে।
অর্চনার হোমকুন্ডে হবি সম প্রাণবিন্দু বারংবার ঢালি,
বামদেবতার পদে অকাতরে দিয়ে গেল মেধ্য হিয়া ডালি।
গৌরকানি- শঙ্করের অম্বিকার বেদীতলে একা
চুপে চুপে রেখে এল পূঞ্জীভূত রক্তস্রোত-রেখা।
তথ্য ও ছবিসূত্র :
১। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ জীবন ও কর্ম: রচনা সম্পাদনা-অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, মনির হোসাইন মনি, নাসিমা খাতুন, জান্নাতুল ফেরদৌসি স্নিগ্ধা। প্রকাশক: দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ গবেষণা পরিষদ। প্রকাশকাল: নভেম্বর ২০০০।
২। গণমানুষের মুক্তির আন্দোলন: মাহফুজা খানম/তপন কুমার দে, প্রকাশকাল ২০০৯।
৩। বিদ্রোহী ভারত: নীহাররঞ্জন গুপ্ত। মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রা: লি:- কলকাতা, প্রকাশকাল: অগ্রহায়ণ-১৩৯১।
৪। হেমেন্দ্রনাথ দাসগুপ্ত, ভারতের বিপ্লব কাহিনী, ২য় ও ৩য় খন্ড, কলকাতা, ১৯৪৮।
লেখক: রফিকুল ইসলাম (শেখ রফিক)