বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম ও আন্দোলন করার কারণে ২৭ বছর জেলখানায় বসবাস করে দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা পৃথিবীর সব মানুষের হৃদয় কেড়ে নিয়েছেন। অথচ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন করে ৩৪ বছর জেলখানায় জীবন অতিবাহিত করা ময়মনসিংহের ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীকে (মহারাজ চক্রবর্তী) এখন আর এদেশের কেউ চেনেই না! ১৯৬৭ সালে তাঁর লিখিত গ্রন্থ ‘জেলে তিরিশ বছর ও পাক-ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম’ প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি এ বইয়ের ভূমিকায় লিখেছিলেন, ‘পৃথিবীতে সম্ভবত আমিই রাজনৈতিক আন্দোলন করার কারণে সর্বাধিক সময় জেলখানায় অতিবাহিত করেছি। মাঝখানে দু-এক মাস বিরতি ছাড়া আমি টানা ৩০ বছর জেলখানায় কাটিয়েছি।’
‘আমি ১৯০৮ সন হইতে ১৯৪৬ সন পর্যন্ত ৩০ বৎসর কারাগারে কাটাইয়াছি, ৪/৫ বৎসর অজ্ঞাতবাসে কাটাইয়াছি। …জেলখানার পেনাল কোডে যেসব শাস্তির কথা লেখা আছে এবং যেসব শাস্তির কথা লেখা নাই তাহার প্রায় সব সাজাই ভোগ করিয়াছি।’ কথাগুলো বিপ্লবী নেতা মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী তাঁর স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘জেলে ত্রিশ বছর ও পাক ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম’ পুস্তকটির ভূমিকায় লিখেছেন। তাঁর এই লেখা থেকে পরিস্কারভাবে বোঝা যায় যে তিনি দেশের স্বাধীনতার জন্য কতটা বিপ্লবী এবং বিপ্লবী মনোভাবের ছিলেন।
ব্রিটিশ শাসনের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য তিনি সারা জীবন বিপ্লবী কর্মযজ্ঞে নিয়েজিত ছিলেন। অনুশীলন দলের সঙ্গে তিনি শৈশবে যুক্ত হয়ে পড়েন। ক্ষমতালাভ বা কোনো প্রকার ব্যক্তি স্বার্থের ধ্যান-ধারণা তাঁর মধ্যে ছিল না। আদর্শের রাজনীতি বাস্তবায়নের জন্য কীভাবে লড়াই করতে হয় তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।
মানুষের জন্য, দেশের জন্য জীবনব্যাপী দুঃসহনীয় অত্যাচার সহ্য করে তিনি নিজেকে কখনো সফল বিপ্লবী বা মানুষ হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেননি। বরং তিনি প্রায়ই বলতেন, “আমার স্বপ্ন সফল হয় নাই, আমি সফলকাম বিপ্লবী নই। আমার ব্যর্থতার কারণ, আমার দুর্বলতা নয়। আমি কখনও ভীরু ছিলাম না- আমার জীবনে কখনও দুর্বলতা দেখাই নাই। আমি আমার চরিত্র নির্মল ও পবিত্র রাখতে সক্ষম হইয়াছি। অর্থলোভ আমার ছিল না। এক সময় হাজার টাকা আমার কাছে আসিয়াছে, কিন্তু সে টাকা নিজের ভোগ-বিলাসের জন্য ব্যয় করি নাই।—– মৃত্যুভয় আমার ছিল না, যে কোনো বিপথজনক কাজে হাত দিতে আমি পশ্চাৎপদ হই নাই। আমার স্বাস্থ্য ভাল ছিল, আমি কখনও অলস ছিলাম না, কঠিন পরিশ্রমের কাজে কখনও ভীত হই নাই, যখন যে কাজ করিয়াছি, আন্তরিকতার সাথে করিয়াছি। আমার ব্যর্থতার কারণ পারিপার্শ্বিক অবস্থা, আমার ব্যর্থতার কারণ একজন দক্ষ ও সফলকাম বিপ্লবীর যতটা ধীশক্তি ও জন- গণ-মন অধিনায়কতার যে ব্যক্তিত্ব থাকা আবশ্যক তাহার অভাব”।
ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী জন্মেছিলেন ১৮৮৯ সালের মে মাসে। ময়মনসিংহ জেলার কাপাসাটিয়ার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। তাঁর বাবার নাম দূর্গাচরণ চক্রবর্তী। তিনি ছিলেন জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ। উদারমনা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চা ছিল তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। তিনি ছেলে ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীকে স্বদেশী রাজনীতির সাথে যুক্ত করে দেন। ১৯০৫ সালে ত্রৈলোক্যনাথের বাবা ত্রৈলোক্যনাথকে দেশী সাদা মোটা কাপড় কিনে পাঠান। ছেলে যেন বিদেশী পোশাক বর্জন করে ওই কাপড় পরিধান করে সে জন্য তিনি একটি আশির্বাদ পত্র পাঠান। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর ছেলে মনে-প্রাণে দেশ প্রেমিক হোক, স্বদেশী হোক। দেশের সেবা করার জন্য বাবার পরম স্নেহের সেই আশির্বাদ মাথা পেতে নিলেন ত্রৈলোক্যনাথ।
ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীর পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। এরপর প্রাথমিক পড়াশুনা শেষে ১৯০৩ সালে তাঁকে মালদাহ জেলার সানসাটের পুখুরিয়া মাইনর স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী খুব ভাল ছাত্র ছিলেন। শিক্ষকরা তাঁকে নিয়ে গর্ব করতেন। এই মাইনর স্কুল থেকে ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীর বৃত্তি দেওয়ার কথা ছিল। তিনি বৃত্তি পাবেন শিক্ষকরাও এ আশা করেছিলেন। কিন্তু পারিবারিক কারণে তাঁকে ওই স্কুল ছেড়ে চলে আসতে হয়। ওই স্কুলে পড়াশুনার সময় তিনি ‘অনুশীলন’ সমিতির সংস্পর্শে আসেন। এরপর তিনি ময়মনসিংহ জিলা হাইস্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুলে তিনি একবছর পড়েন। সেখানেও তিনি ভাল ছাত্র হিসেবে শিক্ষকদের নজরে পড়েন। ১৯০৬ সালে তিনি ‘অনুশীলন’ সমিতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। বিপ্লবী দলে যুক্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে দলের কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যান।
এরপর তিনি সাটিরপাড়া হাইস্কুলে ভর্তি হন। এখানে তিনি পড়াশুনায় মনোযোগ দেয়ার জন্য স্কুলের ছাত্রাবাসে উঠেন। এই স্কুলের শিক্ষকরাও আশা করেন তিনি বৃত্তি পাবেন এবং সে জন্য শিক্ষকরা তাঁকে প্রতিদিন ৩ ঘন্টা পড়াশুনা করতে বলেন। কিন্তু তিনি সারাক্ষণ যুক্ত থাকতেন সশস্ত্র বিপ্লববাদী দলের কাজে। পাঠ্যবই না পড়লেও তিনি রাজনীতি বিষয়ে পড়াশুনা করতেন সবসময়। বিপ্লববাদী দলের ব্যায়ামাগার প্রতিষ্ঠা করে সহপাঠীদের নিয়ে নিয়মিত শরীর চর্চা ও দেশের স্বাধীনতার জন্য পাঠচক্র করতেন। নিজ জেলায় ক্ষুদে বিপ্লবী ঘাঁটি তৈরি করেন। ম্যাট্রিক পরীক্ষার ২ মাস আগে ১৯০৮ সালে তিনি বিপ্লবী দলের কাজে নারায়নগঞ্জে আসেন। এসময় ব্রিটিশ পুলিশ বিপ্লবাত্মক কাজের জন্য তাঁকে গ্রেফতার করে ৬ মাসের জেল দেয়। ওখানেই তাঁর প্রথাগত শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। শুরু হয় এক নতুন জীবন। সে সময় তিনি ছয় মাস কারাভোগ করেন। মুক্তি পেয়ে ১৯০৯ সালে তিনি ঢাকায় আসেন।
ঢাকায় আসার পর তাঁকে টাকা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। শুরু হয় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী অভিযান। এ মামলায় তিনি ছিলেন অন্যতম আসামী। পুলিশ হন্যে হয়ে তাঁর সন্ধান শুরু করে। তিনি ঢাকার বিপ্লবীদের সাথে পরামর্শ করে আত্মগোপনে চলে যান। আত্মগোপন অবস্থায় তিনি আগরতলার উদয়পুর পাহাড় অঞ্চলে চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি বিপ্লববাদী দলের একটি শাখা স্থাপন করেন। দুই বছরের মধ্যে তিনি উদয়পুর পাহাড় অঞ্চলে বিপ্লবীদের একটি বিশাল ঘাঁটি তৈরি করেন। এই অঞ্চলের বিপ্লবী দলের তিনি সম্পাদক ছিলেন। তাঁর কাজ ছিল শরীর চর্চা, ব্যায়াম, লাঠি খেলা, ছোড়া খেলা, কুস্তি ইত্যাদির আড়ালে রাজনৈতিক শিক্ষা, বিপ্লবাত্মক প্রচার ও বিপ্লবী কর্মী তৈরী করা। উদ্দেশ্য ভারতমাতাকে ব্রিটিশসাম্রাজ্যের হাত থেকে মুক্ত করা।
১৯১২ সালে ওখান থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাঁর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। প্রমাণের অভাবে বৃটিশ পুলিশ এই হত্যা মামলা থেকে তাঁকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য হয়। এরপর তিনি স্থান পরিবর্তন করে মালদহ যান। সেখানে তিনি বিপ্লবী দল গড়ে তোলার জন্য কাজ করেন। এখানে এই দলের একটি শক্তিশালী শাখা গঠন করার পর ১৯১৩-১৯১৪ সালে তিনি রাজশাহী ও কুমিল্লায় গুপ্ত বিপ্লবী দলের ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই গুপ্ত সমিতি বা বিপ্লবী দল প্রতিষ্ঠা করতে তাঁকে দলের সিনিয়ররা সহযোগিতা করতেন। বিপ্লবী সতীশ পাকড়াশী ছিলেন তাঁর স্কুল জীবনের সহপাঠী। তাঁদের স্কুলের প্রায় অর্ধেক ছাত্র অনুশীলন সমিতির সভ্য ছিলেন। সহপাঠী ত্রৈলক্য চক্রবর্তীর সংস্পর্শে এসে সতীশ পাকড়াশী এই সমিতির সভ্য হন।
১৯১৪ সালে ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীকে আবারও ব্রিটিশ পুলিশ গ্র্রেফতার করে। গ্র্রেফতারের পর এসময় তাঁকে বরিশাল ষড়যন্ত্র মামলার আসামি করা হয়। এই মামলার মাধ্যমে তাঁকে দশ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে আন্দামানে প্রেরণ করা হয়। শুরু হয় মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ।
ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ভারত উপমহাদেশের মানুষকে শাসন করার জন্য শুরু থেকেই নানারকমের দমননীতির আশ্রয় নেয়। এর মধ্যে জেলখানাগুলো ছিল তাঁদের এই দমননীতির প্রধান হাতিয়ার। আর আন্দামান সেলুলার জেল ছিল সবচেয়ে ভয়ংকার জেল। এক কথায় বলা যায়, মৃত্যু ফাঁদ।
১৯২৪ সালে আন্দামান সেলুলার জেল থেকে মুক্তি পান ত্রৈলোক্যনাথ। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের পরামর্শে তিনি দক্ষিণ কলকাতার জাতীয় স্কুলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই জাতীয় স্কুলের শিক্ষার্থীদেরকে রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতেন তিনি। একই সাথে বিপ্লবী দলের নেতা ও সংগঠক হিসেবে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় বিপ্লবী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। মাত্র তিন বছর যেতে না যেতে ১৯২৭ সালে তাঁকে আবারও ব্রিটিশ পুলিশ গ্রেফতার করে। এ সময় তাঁকে ব্রহ্মদেশের মন্দালয় জেলে পাঠানো হয়। এখানে তিনি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, পৃথি শিং, পুলিন বাবু, এম.পি নারায়ণ মেনন, গুরুমূখ শিং, পন্ডিত পরমানন্দ, মোস্তফা আমেদসহ আরো অনেক সহযোদ্ধার সাথে কারাবাস করেন। ১৯২৮ সালে তাঁকে ভারতে এনে নোয়াখালি জেলার হাতিয়া দ্বীপে নজরবন্দী করে রাখা হয়। ওই বছর মুক্তি পেয়ে তিনি উত্তর ভারতে যান এবং হিন্দুস্তান রিপাবলিকান আর্মিতে যোগ দেন। এরপর ভারতীয় বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বিপ্লবী দল তাঁকে ব্রহ্মদেশে পাঠায়। তিনি বিপ্লবী ভাবধারায় বিশ্বাসী হলেও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসেও কাজ করতেন।
১৯২৯ সালে তিনি লাহোর কংগ্রেসে যোগদান করেন। এসময় তিনি ভারতের সর্বত্র অবাধে ঘুড়ে বেড়িয়ে বিপ্লববাদী সশস্ত্র দলকে সংগঠিত করার জন্য কংগ্রেসের রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত হয়ে কাজ শুরু করেন। রাজশাহীতে অবস্থানকালে ১৯৩০ সালে তাঁকে আবারও ব্রিটিশ পুলিশ গ্রেফতার করে। এসময় তাঁকে একটানা ৮ বছর কারাবাস করতে হয়। এবার তাঁকে বিভিন্ন জেল ঘুরিয়ে কুখ্যাত বকসার বন্দিশালায় রাখা হয়।
ভুটান সীমান্তে সিঞ্চুলা পাহাড়ের কোল ঘেঁষে স্থাপিত হয়েছিল এ বন্দিশালা। এ জেলে এক সময় রাজবন্দিদের বছরের পর বছর কয়েদ করে রাখা হতো। তাঁদেরকে অত্যাচারের কাহিনী ঐতিহাসিক অনুষঙ্গে বিবৃত করেছেন রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে অসংখ্য সাহিত্যিকরা। এ জেলদুর্গে বন্দি থেকেছেন দেশমাতৃকার মুক্তি মন্ত্রে নিবেদিত অসংখ্য বিপ্লবী। বকসা জেলদুর্গটি ছিল গভীর অরণ্যবেষ্টিত। পাহাড়ের গায়ে লতাগুল্ম, শেওলার আস্তরণ। এ ভয়ঙ্কর পথ দিয়েই রাজবন্দিদেরকে ব্রিটিশ সৈন্যরা জেলদুর্গে নিয়ে যেত। জনবিরল দুর্গম পাহাড়ি বকসা দুর্গের সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল অনেক উঁচু করে। দুর্গের ভেতরে ছিল কয়েক দফায় কাঁটাতারের বেড়া। এর মধ্যেই বন্দিশালার অফিস, বন্দিদের জন্য নির্ধারিত ছোট-বড় লম্বা ব্যারাক। প্রতিটিতেই আছে কাঁটাতারের বেড়া, সব ঘিরে আবার জঙ্গলের মধ্যে ছিল কাঁটাতারের আরও বেড়া। রাজবন্দিদের উপর হঠাৎ করেই নেমে আসত নিপীড়নের চাবুক।
১৯৩৮ সালে তিনি মুক্তি লাভ করেন। ওই বছর তিনি সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে রামগড় কংগ্রেসের কাজে যুক্ত হন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় তিনি ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘটানোর চেষ্টা করেন। ১৯৪২ সালে তিনি ‘ভারত-ছাড়’ আন্দোলনে যোগ দিয়ে গ্রেফতার হন। ১৯৪৬ সালে মুক্তি পেয়ে নোয়াখালীতে সংগঠন গড়ার চেষ্টা করেন। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পর তিনি পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি ঢাকার রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারী ও শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তিনি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। সামরিক শাসন জারীর পর সামরিক জান্তা তাঁর নির্বাচন বাতিল, রাজনৈতিক এমনকি সামাজিক কার্যকলাপেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এরপর ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী নিজ গ্রাম ময়মনসিংহের কাপাসাটিয়ায় চলে যান এবং সেখানে বসবাস করেন। ১৯৭০ সালে চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার পর ওই বছর ৯ আগষ্ট বিপ্লবী মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী মৃত্যুবরণ করেন। দেশ ও মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করার জন্য তিনি চিরকুমার ছিলেন।
তথ্য ও ছবিসূত্র :
১। জেলে ত্রিশ বছর ও পাক-ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম: মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী। প্রকাশক: অনুশীলন ভবন ট্রাস্ট- বোড, কলকাতা। মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীর স্মৃতিরক্ষা কমিটির পক্ষে-শ্রী দীনেশচন্দ্র ঘটক। প্রকাশকাল ২১ ফেব্রুয়ারী ১৯৮১ সাল। (ছবি) ।
২। বাংলার মুক্তি সন্ধানী: সব্যসাচী চট্টপাধ্যায় ও রাখী চট্টপাধ্যায়। প্রকাশকাল ২০০৫, কলকাতা।
৩। স্বাধীনতা সংগ্রামে সশস্ত্র বিপ্লবীদের ভূমিকা: সুধাংশু দাশগুপ্ত। প্রকাশকাল ১৯৯০ সাল, কলকাতা।
লেখক: রফিকুল ইসলাম (শেখ রফিক)