মুকুল সেনের স্কুলজীবন শুরু হয় বরিশালের টাউন স্কুলে। তাঁর জ্যাঠামশায়ের নাম রবরঞ্জন সেনগুপ্ত। তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম। কবি জীবনানন্দ দাসের মায়ের সহোদরা ছিলেন তাঁর জেঠিমা। জ্যাঠামশায়ের বাড়ীতে তিনি মাঝে-মাঝেই যেতেন। সেখানে আসত ব্রহ্মবোধি পত্রিকা। এই পত্রিকা পড়েই তিনি প্রথম উপলব্ধি করেন পরাধীনতায় অবমাননা ও আত্মগ্লানি আছে। পড়েন বিবেকানন্দের বই। এগুলো পড়ার পর তাঁর সামনে এক নূতন আলোকধারা উন্মোচিত হয়। শুরু করেন সমাজ সেবার কাজ। মুষ্টি-ভিক্ষা ও নরনরায়ণ সেবার মধ্য দিয়ে সমাজ সেবার ক্ষেত্রে তাঁর প্রথম পদক্ষেপ শুরু হয়। এই মুষ্টিভিক্ষা তুলতে তুলতেই হয়তো তিনি শুনতে পান গ্রামের বৈরাগীদের কণ্ঠে অমর শহীদ ক্ষুদিরামের স্মারকগান ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি।’
ঐ গান ছাড়াও চারণ কবি মুকুন্দ দাসের গান শুনতে খুব ভাল লগত তাঁর। এসব গান আরও অনেকের সঙ্গে তাঁকেও প্রভাবিত করেছিল, টেনে এনেছিল বৃটিশের বিরুদ্ধে বাংলার স্বদেশী আন্দোলনের স্রোতে। ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতার জন্য যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারতমাতা স্বাধীন হয়, সেই ইতিহাসে যে সকল বিপ্লবী রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মুকুল সেন অন্যতম।
শুধু অগ্নি্যুগের সশস্ত্র বিপ্লববাদী ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনই নয় ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম সারির সংগঠকদের মধ্যেও তিনি ছিলেন উল্লেখযোগ্য। স্বাধীনতার পর দেশ গড়ার কাজে গণমানুষের মধ্যে তিনি আমৃত্যু নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন ।
বাংলাদেশের কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের শোষণমুক্তির লড়াই-সংগ্রামে তাঁর অসামান্য ভূমিকা রয়েছে। কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের সার্বিক মুক্তির জন্য, শোষণ-বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে এবং মানুষের চুড়ান্ত মুক্তির জন্য কমিউনিস্ট আন্দোলন ও কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যে অবদান তিনি রেখে গেছেন, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে এবং থাকবে।
মুকুল সেন নামটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বরিশালের কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস ও ঐতিহ্য। বরিশালের কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষেত্রে তিনি প্রবাদতুল্য বিপ্লবী কমরেড। তিনি এখন আর কেবল ব্যক্তি বা নাম নয়, রীতিমতো একটি আদর্শের প্রতীক বা প্রতিষ্ঠান। পাকিস্তানের স্বৈর-শাসন থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসের অন্যতম নক্ষত্র ছিলেন তিনি। তিনি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি শোষণের অবসান ঘটিয়ে একটি সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা করেছিলেন।
কমরেড মুকুল সেন ছিলেন একজন দৃঢ় মনোবল সম্পূর্ণ কমিউনিষ্ট। রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত মাফিক পদক্ষেপ, বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি, সাংগঠনিক প্রক্রিয়া, মার্কসবাদী রাজনীতিতে স্বঘোষিত সমর্থক, কাজের মধ্যদিয়ে পার্টির সভ্য পদ লাভ, কর্মী থেকে পার্টির নেতৃত্ব সর্বোপরি মার্কসীয় দর্শনের উপর দাঁড়িয়ে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপ ও ঘটনাই যেন তাঁকে একজন বিজ্ঞ কমিউনিষ্ট হিসেবে দাঁড় করিয়েছে।
মুকুল সেন জন্মেছিলেন ১৩১৫ বঙ্গাব্দের (১৯০৮ইং) ৭ই আষাঢ়। তাঁর ছেলেবেলা সম্পর্কে তিনি বলেন, “আজ হৃদয়ের কোন গভীর তলদেশ থেকে প্রস্ফুটিত হয়ে উঠছে আমার জন্মভূমি সেই ছোট্ট গৈলা গ্রামখানির ছবি। ১৩১৫ (ইং ১৯০৮) ৭ই আষাঢ় ঐ গ্রামেই প্রথম পৃথিবীর আলো দেখেছি। মাত্র ছ’মাস পরেই আমাদের ঐ গ্রাম ছেড়ে চলে আসতে হয় বরিশাল শহরের রাজা বাহাদুরের হাভেলীতে। পশ্চিম দিকে জর্ডন কোয়ার্টার, পূর্বে কাঠপট্টি, দক্ষিণে রাজাবাহাদুরের সেই বিশাল হাভেলী, মাঝখানে মাঠ। অনতিদূরে প্রশস্ত নদী। এই পরিবেশেই আমার শৈশব, বাল্য ও কিশোরকাল অতিবাহিত হয়েছে; সেখানকার শান্তস্নিগ্ধ পরিবেশ আমায় যেন এক অচেনাকে চেনার জন্য আহ্বান জানাত।অজানাকে জানার আনন্দে আমি যেন হারিয়ে যেতাম সেই পরিবেশের মাঝে”।
নিজেকে সমাজচেতনার মধ্যে নিহিত করার জন্য বরিশালের টাউন স্কুল থেকে শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু পরবর্তীতে চৈতন্য বিদ্যালয় ছেড়ে মডেল স্কুলে ভর্তি হন। চৈতন্য বিদ্যালয় ছেড়ে মডেল স্কুলে যাওয়ার কারণ হলো-তাঁরা চৈতন্য বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের প্রস্তাব করেন এবং ধর্মঘট করেন। টাউন হলের সভার একটি প্রস্তাবে এজন্য চারজনকে নিয়ে একটি ডেপুটেশন তৈরী হয়। ঐ চারজনের মধ্যে মুকুল সেনও ছিলেন। বিদ্যালয়টিকে জাতীয়করণের দাবী নিয়ে তাঁরা সেক্রেটারীর কাছে যান। তখন সরকার সাময়িকভাবে এই বিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেয়। মডেল স্কুল থেকেই তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন।
রাজাবাহাদুরের হাভেলীতে একটি সভায় ফজলুল হক বক্তৃতা দেন। বক্তৃতায় তিনি জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের বিস্তারিত বিবরণ দেন। ঐ বক্তৃতা শোনার পর বৃটিশ সরকারের ঘৃণ্য কার্যকলাপ মুকুল সেনের কিশোর মনের উপর এক গভীর ছাপ ফেলেছিল। ১৯২০ সালে বরিশালে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক সম্মেলনে তিনি একজন দর্শক ছিলেন। সেখানে অশ্বিনী দত্তের কাছ থেকেই সেদিন শুনেছিলেন দেশ সেবার কথা, জনগণের জন্য কাজ করার ও নিরক্ষরকে শিক্ষিত করার বাণী।
অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচিতে ছিল মদের দোকানে পিকেটিং, বিলাতী কাপড় পোড়ানো, বিদেশী দ্রব্য বর্জন ইত্যাদি। কিশোর মুকুল সেন এইসব কার্যকলাপে সক্রিয় অংশ নেন। তাঁর বাবা ও জ্যাঠামশাই সরকারী চাকরিজীবী ছিলেন। সেকারণে তাঁরা ভয় পেয়ে তাঁকে বরিশাল থেকে মামাবাড়ী পাঠিয়ে দেন। মামাবাড়ির আবহাওয়া ছিল পুরাপুরি স্বদেশী। ফলে সেখানে যাওয়াটা তাঁর জন্য শাপে বর হয়ে ওঠে। ১৯২২ সালে সুশীল দাস, নয়নাঞ্জন দাশগুপ্ত ও তিনি যুগান্তর (শঙ্কর মঠ) দলের সঙ্গে যুক্ত হন। এই সময় মুকুল সেনের বয়স ছিল মাত্র ১৪ বৎসর।
১৯২৩ সালে মুকুল সেন গোপীনাথ সাহার সংস্পর্শে আসেন। গোপীনাথ সাহা যুগান্তরের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি টেগার্ট সাহেবকে গুলি করতে গিয়ে ভুলক্রমে অন্য এক সাহেবকে গুলি করেন। বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়।
১৯২৫ সালে অনন্ত চক্রবর্তী ও ভোলানাথ বাবু বরিশালে আসেন। তখন তাঁরা বোমা বানানোর ফর্মূলা মুকুল সেনকে দিয়ে যান। কলকাতার শোভাবাজারে বোমা বানানোর সময় ভোলানাথ বাবু পুলিশের হাতে ধরা পরেন। বিচারে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। প্রথমে তাঁকে রেঙ্গুনে পরে আন্দামান জেলে রাখা হয়।
১৯২৬ সালে পটুয়াখালী জেলায় ইউনিয়ন বোর্ডের ট্যাক্স বৃদ্ধির প্রতিবাদে এক আন্দোলন সংগঠিত হয়। এই আন্দোলনে মুকুল সেন যুক্ত হন। এই আন্দোলনের চাপে সরকার সকল দাবি মেনে নেয়। এই আন্দোলন বরিশালের ‘লাউকাঠি আন্দোলন’ নামে পরিচিত হয়। ওই বছর মুকুল সেন ও যুগান্তর দলের নেতারা বরিশালের কয়লাঘাটায় ‘সবুজ সম্মিলনী’ নামে একটি ক্লাব গঠন করেন। এই ক্লাবে একটি জিমনেসিয়াম ও পাঠাগার গড়ে উঠে। এখানে রাজনৈতিক আলোচনা এবং সভা অনুষ্ঠিত হত। এই ক্লাব থেকে একটি হাতে লেখা পোস্টার বের হত। আর এসব কিছুর মূলে ছিলেন মুকুল সেন। ১৯৩০ সালে পুলিশের অত্যাচারে এই ক্লাবটি বন্ধ হয়ে যায়।
মুকুল সেনরা ছিলেন পাঁচ ভাই-বোন। তিনি ছিলেন সবার বড়। বিএ পাশ করার পর মুকুল সেনকে সংসারের দায়িত্ব নিতে হয়। কারণ ওই সময় তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই তিনি বিপ্লবী দলের কাজের পাশাপাশি মাদারীপুরের মিঠাপুর স্কুলে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন। বছর দুই পরে তাঁর বাবা মারা যান। এরপর সংসারের সকল দায়িত্ব তাঁর উপর এসে পড়ে। কিছুদিন পর তিনি বরিশালে কালেক্টর পদে একটি সরকারী চাকুরীতে যোগ দেন। পারিবারিক কারণে সরকারী চাকুরী নিতে বাধ্য হলেও তিনি কখনো দেশের কাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করেননি। তিনি সবসময় পরিবারের চেয়ে দেশকে বড় করে দেখেছেন এবং সে অনুযায়ী কাজও করেছেন।
১৯২৯ সালে ভারতবর্ষ আন্দোলনে উত্তাল। কংগ্রেস ‘খাজনা বন্ধ’ আন্দোলনের ডাক দেয়। পুলিশের লাঠির আঘাতে লালা লাজপত রায়ের মৃত্যু হয়। আন্দোলনের সময় বিপ্লবীদেরকে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা অত্যাচার করতেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন রক্তপিপাসু স্যান্ডারস। তিনি বিপ্লবীদের হাতে নিহত হন। স্যান্ডারস হত্যাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা। এই মামলায় অভিযুক্ত ভগৎ সিং, রাজগুরু ও সুখদেবের ফাঁসী হয়। রাজবন্দীদের মর্যাদা দানের দাবীতে ৬৩ দিন অনশনের ফলে ১৯২৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর যতীন দাস মৃত্যুবরণ করেন। যতীন দাসের এই জীবন-আহুতি বাংলার বিপ্লবীদের এক নূতন উদ্দীপনায় উদ্দীপ্ত করে। বরিশালে এই সময় আন্দোলন সংগঠকদের অন্যতম ছিলেন মুকুল সেন।
অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ঠিক হয় রাজশাহী শহরে বাসে যে ডাকের টাকা আনা হয় তা লুট করতে হবে। এই পরিকল্পনায় মুকুল সেন সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯২৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কয়েকজন সহকর্মীর সাথে পুটিয়াতে (নাটোর) পূর্ব পরিকল্পনা মতো তিনি মিলিত হন। ডাকের গাড়ী এগিয়ে এলে বিপ্লবীরা ঐ বাসে উঠে পড়েন। কিছুক্ষণ বাসটি চলার পর ‘ঘড়ি পড়ে গেছে’ এই অজুহাতে বিপ্লবীরা বাস থেকে নেমে বাসের টায়ার লক্ষ্য করে গুলি চালান। কিন্তু গুলি উপেক্ষা করেই গাড়ীটি চলতে শুরু করে। বাসের মধ্যে তখনও বিপ্লবী সুশীল দাশ গুপ্ত রয়ে গিয়েছিলেন। তিনি অনন্যোপায় হয়ে বাস থেকে লাফিয়ে পড়েন এবং গুরুতর আহত হন। তাঁকে নিয়ে নিরাপদে চলে যাওয়া সম্ভব নয় বুঝতে পেরে সবাই একসাথে ধরা পরা এড়াতে আহত বন্ধুকে রেখেই তাঁরা নিরাপদ জায়গায় চলে যান। আহত সুশীল দাশ গুপ্ত ধরা পড়েন। অন্য বিপ্লবীরা রাতের অন্ধকারে পথ হাতড়ে হাতড়ে শেষ পর্যন্ত রেলওয়ে ষ্টেশনে পৌঁছে নানা দিকে চলে যান। মুকুল সেন কলকাতায় চলে আসেন। এরপরই ‘পুটিয়া ডাকাতি মামলা’ শুরু হয়। সুশীল দাশগুপ্তের ছয় বছর কারাদণ্ড হয়। পরে জেল থেকে পালাবার চেষ্টা করার অপরাধে আরও দুই বছর কারাদণ্ড হয়। মুকুল সেন তখন সরকারী চাকুরী করতেন। পুলিশ সন্দেহ করে পুটিয়া ডাকাতিতে তিনি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন । উপরন্তু যুগান্তর দলের সঙ্গেও তিনি জড়িত আছেন সেকথা পুলিশ জানতে পারে। তাই তাঁকে ভয় দেখানো শুরু হয়- তিনি যদি পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা না করেন তবে তাঁকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হবে। তিনি যাতে চোখের আড়াল না হতে পারেন তাই পুলিশের পরামর্শে পূজার ছুটিতেও তাঁকে অফিস করার আদেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু মুকুল সেন সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। শুরু হয় তাঁর পলাতক জীবন। গৈলা থেকে মাহিলারা, মাহিলারা থেকে নলচিড়া, নলচিড়া থেকে বাটাজোর, অবশেষে সেখান থেকে কলকাতা। কলকাতায় তখন ধরপাকড় শুরু হয়েছে। ১৯১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর মেছোবাজার থেকে নিরঞ্জন সেন ও সতীশ পাকড়াশীকে বোমার ফর্মুলা সমেত পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনা ‘মেছোবাজার বোমা মামলা’ নামে পরিচিত।
কলকাতার বিভিন্ন সেল্টার ঘুরে অবশেষে ১৯৩০ সালের ২৫ জানুয়ারী মুকুল সেন, শচীনকর গুপ্ত ও আরও কয়েকজন গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের পর যথারীতি কুখ্যাত লর্ড সিনহা রোডে নিয়ে তাঁদের জেরার পর জেরা করা হয়। জেরার সাথে চলে নানা রকম দৈহিক নির্যাতন। কিন্তু কোনও গুপ্ত সংবাদ না পেয়ে হাল ছেড়ে দিয়ে কয়েকদিন পর তাঁদের জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের যেদিন জেলে নিয়ে যাওয়া হয় সেদিন রাস্তার দু’ধারে অসংখ্য লোক দাঁড়িয়ে তাঁদের অভিনন্দিত করে।
১৯৩০ সালের জুন মাসে ‘মেছোবাজার বোমা মামলা’র রায় দেওয়া হয়। মুকুল সেনের ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়। রাজশাহী জেলে থাকার সময় সুপারের খারাপ ব্যবহারের প্রতিবাদ করার শাস্তিস্বরূপ মুকুল সেনকে তৃতীয় শ্রেণীর কয়েদীরূপে অবনমিত করা হয়। পরে আলিপুর জেলে থাকাকালীন শুধুমাত্র একবার অনুরোধ করলেই তিনি দ্বিতীয় শ্রেণীর কয়েদীরূপে গণ্য হওয়ার সুযোগ পেতেন। কিন্তু সে রকম অনুরোধ তিনি করেননি। নিজের জন্য একটু আরাম, একটু নিশ্চয়তার কথা ভাবা তাঁর স্বভাব বিরুদ্ধ ছিল। পরবর্তীকালেও তাঁর এই স্বভাব গুণটির পরিচয় আমরা পেয়েছি। তাঁর স্মৃতিচারণা থেকে আমরা জানতে পারি আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে তাঁকে ‘পানিসমেন্ট সেলে’ রাখা হয়েছিল। এতে একটি মাত্র দরজা, তাতে একটি মাত্র ফুটো। ঐ সেলেই খাওয়া, শোয়া, বাথরুম সব। অন্য কোন বন্দীর সাথে যোগাযোগহীন, সম্পূর্ণ একা। তিনি তাঁর স্মৃতিচারণে বলেন, “বন্দী জীবনের এই কষ্ট, লাঞ্ছনা আমার সহনশীলতাই বাড়িয়ে দিয়েছিল। চিন্তা করতাম আমাদের সমাজের শোষিত, বঞ্চিত, গৃহহীন, কপর্দকশূণ্য মানুষেদের কথা। এর প্রতিকার না করতে পারার এক অসহ্য যন্ত্রণায় আমি দগ্ধে দগ্ধে মরে যাচ্ছিলাম।” অবশেষে ১৯৩২ সালের ২৫ আগষ্ট আরও ২৩ জন বন্দীসহ মুকুল সেনকে আন্দামানে নির্বাসিত করা হয়। এই ২৩ জনের মধ্যে ছিলেন গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, অনন্ত সিংহ, রমেশ চ্যাটার্জী প্রমুখ।
১৯৩৪ সালে আন্দামান থেকে বাংলার জেলে ফিরে আসার পর ওই বছর ১৩ জুন মুকুল সেনকে ৬ মাসের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়। শেষ হয় মুকুল সেনের সশস্ত্র বিপ্লবী জীবন, শুরু হয় কমিউনিস্ট মুকুল সেনের অধ্যায়। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি যক্ষ্মারোগাক্রান্ত ছিলেন। প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার পর মনে মনে পার্টি গড়ার প্রতিজ্ঞা করেন। তাই প্রচণ্ড অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি বরিশালে পার্টি গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত রাখেন। পুরানো বন্ধু-বান্ধব ও নতুন কিছু কর্মী সংগ্রহ করেন তিনি। তাঁদেরকে মার্ক্সবাদ ও মার্ক্সবাদী বই-পুস্তক পড়তে দেন। এই বইগুলো তিনি জেলখানা থেকে নিয়ে এসেছিলেন। তরুণ-তরুণী দল নিয়ে তিনি পাঠচক্রে বসতেন। দিনের পর দিন তিনি অসুস্থ শরীর নিয়ে কর্মীদের মার্ক্সবাদ বোঝাতেন। কর্মীরাও তাঁর পিছু ছাড়তেন না। অসুস্থ অবস্থায় তিনি মার্ক্সবাদে দীক্ষিত কয়েকজনের সাথে পার্টি গড়ে তোলার কথা বলেন। তাঁরাও উৎসাহ নিয়ে তাঁকে সমর্থন করেন।
দীর্ঘ ৫ মাস পর ১৯৩৪ সালের ৭ নভেম্বর ১০ জন সদস্যকে নিয়ে বরিশাল কমিউনিষ্ট পার্টি সংগঠিত হয়। কমিউনিস্ট পার্টি তখন অবৈধ ছিল। সেজন্য সংগঠনটির নাম রাখা হয় ‘সোসালিস্ট লীগ’। ‘সোসালিস্ট লীগ’ প্রথম সভাতেই দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রথমত- তাঁরা স্ফুলিঙ্গ নামে একটি মাসিক পত্রিকা বের করে। যেটি কমরেডদের আত্মশিক্ষার বাহন ছিল। আর দ্বিতীয়ত- ‘সোসালিস্ট লীগ’-এর পক্ষ থেকে একটি ইস্তেহার বের করা হয়। এই কার্যক্রমের উদ্যোক্তা ছিলেন মুকুল সেন। ১৯৩৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী আন্দামান ফেরত সুধাংশু দাশগুপ্ত বরিশালে এসে মুকুল সেনের সাথে পার্টির কাজে যুক্ত হন। এসময় মুকুল সেন পার্টির তৃতীয় আর্ন্তজাতিক সম্মেলনের দলিল-পত্র সংগ্রহ করে পার্টির কমরেডদের নিয়ে অধ্যয়ন করেন। একপর্যায়ে বরিশালে কমিউনিষ্ট পার্টি আত্মপ্রকাশ করার সিদ্ধান্ত হয়। শুরু হয় সর্বভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যোগাযোগ। ১৯৩৬ সালে নিত্যানন্দ চৌধুরীর উপস্থিতিতে তৃতীয় আন্তর্জাতিক অনুমোদিত কমিউনিস্ট পার্টির শাখারূপে বরিশাল জেলা কমিউনিস্ট পার্টি আত্মপ্রকাশ করে। তখনকার পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৫ জন সদস্য নিয়ে বরিশাল জেলা পার্টি গঠিত হয়। জ্যোতি দাশগুপ্ত এই কমিটির সম্পাদক হন। তখনও মুকুল সেন ছিলেন প্যারোলে। তাই তাঁকে কমিটিতে রাখা সম্ভব ছিল না। কিন্তু পার্টির সকল কাজ তাঁরই পরামর্শে চলত।
১৯৩৭ সালে ভারত শাসন আইন অনুযায়ী সকল প্রদেশে আইনসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ফজলুল হক তাঁর নিজের গঠিত কৃষক-প্রজা পার্টির নির্বাচনী প্রচারণা চালান পুরোদমে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। কৃষক-প্রজা পার্টির দাবির মধ্যে ছিল কৃষকদের দূর্দশা দূর করার জন্য ‘প্রজাস্বত্ত্ব আইন’ বাতিল এবং ঋণ সালিশী বোর্ড গঠন করে কৃষকদের ঋণ মওকুফ করা। এই দাবি নিয়ে ফজলুল হক ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে পটুয়াখালী থেকে মুসলিম লীগের খাজামুদ্দিনকে পরাজিত করে আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং মুসলিম লীগের সাথে কোয়ালিশন সরকার গঠন করে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই নির্বাচনে বরিশালের কমিউনিষ্ট পার্টির সিদ্ধান্ত ছিল কংগ্রেসের পক্ষে কাজ করা। কিন্তু বরিশালের কমিউনিষ্ট পার্টি মুকুল সেনের নেতৃত্বে কৃষক-প্রজা পার্টিকে সমর্থন করে।
১৯৩৭-৩৯-এর মধ্যে বরিশাল কমিউনিস্ট পার্টি কয়েকবার রদবদল হয়। কারণ তখন আন্দামান বন্দীসহ অন্যান্য বন্দীরা একের পর এক মুক্তি পেতে শুরু করে। আন্দামানে থাকার সময় যেসব বিপ্লবীরা কমিউনিস্ট মতাদর্শ গ্রহণ করেন তাঁরা মুক্তি পাওয়ার পর অবিভক্ত ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত হন। বরিশালের বিপ্লবীরা মুক্তি পাওয়ার পর বরিশালে এসে মুকুল সেনের মাধ্যমে পার্টিতে যুক্ত হন।
মুকুল সেন ১৯৩৬ সালে পার্টি গঠনের পরপরই কৃষক, ছাত্র ও মহিলা সংগঠন গড়ে তোলার দিকে নজর দেন। তারপর থেকে ধীরে ধীরে তিনি এই সংগঠনগুলো গড়ে তুলতে শুরু করেন। প্রথমে তিনি নিজ গ্রাম গৈলাতে কৃষক সংগঠন গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে এই কৃষক সংগঠন ও আন্দোলন বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দেন। ১৯৩৭ সালে ছাত্র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বরিশালে ছাত্র ফেডারেশন গঠিত হয়। ওই বছর মহিলা সংগঠনেরও কাজ শুরু হয়। মনোরমা বসু, সরযূ সেন নারী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
১৯৩৮ সালে মরণব্যাধী যক্ষ্মা রোগ থেকে সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করেন তিনি। ওই বছর তাঁর প্যারোলের মেয়াদ শেষ হয়। ১৯৩৯ সাল থেকে তিনি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজেকে পার্টির সার্বক্ষণিক কাজে নিযুক্ত করেন। তিনি সবসময় পার্টিকর্মীদের পড়াশুনার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে মার্ক্সবাদ সম্পর্কে প্রত্যেককে প্রশিক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন যাতে এই কর্মীরা গণমানুষের মধ্যে গণআন্দোলন তৈরী করতে পারেন। আর যখনই গণআন্দোলন তৈরী হবে তখন পার্টি-সংগঠনে নতুন নতুন কর্মী যুক্ত হতে থাকবে। এভাবে মুকুল সেন ও অন্যান্য কমিউনিস্ট নেতৃত্বের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে পার্টি বড় হতে থাকে। ১৯৩৯-৪১ সাল পর্যন্ত বরিশাল কৃষক সমিতি বেশ কয়েকটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত করে।
১৯৪৩ সালে দুর্ভিক্ষের সময় মুকুল সেন, নীরেন ঘোষ, মনোরমা বসু, মণিকুন্তলা সেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বৃহত্তর বরিশালের দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ান। সমস্ত বরিশালে কমিটি করে তাঁরা ৪০/৪৫টি লঙ্গরখানা চালু করেন। ১৯৪৪ সালে মহিলা আত্মরক্ষা কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৫ সালে ভূমি সংস্কারের প্রথম প্রচেষ্টা হিসেবে বরিশালের সাতলা বাগধাঁয় বাঁধ রক্ষার জন্য বা নতুন করে নির্মাণের জন্য কৃষক আন্দোলন গড়ে উঠে। এই আন্দোলনের ফলে একসময় বৃহত্তর বরিশালে বাঁধ নির্মাণ ও সুইজগেট তৈরি হয়। এই আন্দোলনের মূলব্যক্তিটি ছিলেন মুকুল সেন। গণসংগঠন থেকে শুরু করে পার্টির প্রতিটি লড়াই-সংগ্রামের তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক নেতা ছিলেন তিনি।
১৯৪২-১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ভারত জুড়ে চলছিল অরাজক পরিস্থিতি। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হয়। কংগ্রেস নেতারা মুক্তি পান। কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবীদের মুক্তি দেওয়া হল না। তখন কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ফেডারেশন ও অন্যান্য গণসংগঠন বিপ্লবী বন্দীদের মুক্তির দাবিতে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলে। যে কারণে বন্দীদের মুক্তি দেয়া হয়। মুকুল সেনের নেতৃত্বে এই আন্দোলনে বরিশাল কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ফেডারেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৯৪৮ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এই কংগ্রেসে বরিশাল জেলার প্রতিনিধি ছিলেন মুকুল সেন। ১৯৫০ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিরোধী প্রতিরোধ গড়ে তুললো কমিউনিষ্ট পার্টি। এ সময় বরিশালের প্রায় সকল কমিউনিষ্ট নেতাকে সরকার গ্রেফতার করে। মুকুল সেন ও জগদীশ আইচকে গ্রেফতার করতে সরকার ব্যর্থ হয়। মুকুল সেন আত্মগোপনে থেকে দাঙ্গা নিরাসনে কাজ করে যান। এরপর তিনি পার্টির কাজে কলকাতায় যান। ১৯৫১ সালে পাকিস্তান পুলিশ মুকুল সেনকে গ্রেফতার করে। প্রথমে বরিশাল জেলে পরে ঢাকা জেলে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। ১৯৫৬ সালে মুকুল সেন জেল থেকে মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার পর বরিশালে এসে পার্টির কাজে যুক্ত হন এবং কৃষক সমিতি সংগঠিত করার দায়িত্ব নেন। কিছু দিনের মধ্যে তিনি আবার একটি স্কুলে শিক্ষকতার চাকুরী নেন। ১৯৫৬-৬৯’র গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত তিনি বৃহত্তর বরিশালে কমিউনিষ্ট পার্টি এবং মেহনতি মানূষের আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। এ কাজে তাঁকে খোকা রায়, নলিনী দাস, নূরুল ইসলাম মুনিসহ আরো অনেকে সহয়তা করেন।
আইয়ুব শাসনের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন ওই অঞ্চলের আতঙ্ক। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে তিনি বরিশালের ছাত্রদেরকে সংগঠিত করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৮ সালে পার্টির প্রথম গোপন কংগ্রেস ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এই কংগ্রেসে তিনি পার্টি লাইন নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে তিনি বরিশালের ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৭০’র-এ স্বরূপকাঠীর ব্যাসকাঠী কৃষক সম্মেলনের সকল আয়োজন তিনি করেন। এই সম্মেলনে প্রখ্যাত কৃষক নেতা জিতেন ঘোষ, হাতেম আলী খাঁ ও মহিউদ্দিন আহম্মেদ উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মুকুল সেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ সময় তিনি বরিশাল জেলার অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি তরুণ ছাত্র-ছাত্রী, শ্রমিক ও কৃষকদের রিক্রুট, ট্রেনিং, অস্ত্রশস্ত্র ও রসদের ব্যবস্থা করতেন। কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর যোদ্ধাদের অন্যতম পরিচালক ও সংগঠক ছিলেন তিনি।
১৯৭৪’র দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মুকুল সেন। ১৫ আগষ্টের পর রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য পার্টির সিদ্ধান্তে আত্মগোপনে চলে যান। আত্মগোপনে থেকে তিনি খেলাঘর, ছাত্র ইউনিয়ন, কৃষক সমিতি, তেমজুর সমিতি ও উদীচীসহ আরো অনেক গণসংগঠনের কাজে যুক্ত থাকেন এবং ওই সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলেন। ১৯৮২’র মার্শাল ল জারির প্রতিবাদে জনমত গড়ে তোলেন। ১৯৮৬’র ও ১৯৯১’র নির্বাচনে পার্টির সিদ্ধান্ত অনুসারে কাজ করেন। ১৯৯০’র গণআন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য। ১৯৯২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী এই বীর বিপ্লবী মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্য ও ছবিসূত্র :
১। চিরঞ্জীব কমরেড মুকুল সেন: সুনীল সেনগুপ্ত। কলকাতা, ১৯৯৭।
২। স্বাধীনতা সংগ্রামে বরিশাল: হীরালাল দাশগুপ্ত। সাহিত্য সংসদ, কলকাতা। ডিসেম্বর ১৯৯৭।
লেখক : রফিকুল ইসলাম (শেখ রফিক)