১৯১৫ সালের মার্চ মাসের দিকে হেরাম্বলাল গুপ্ত কোনরকম টাকাকড়ি এবং টিকিট ছাড়া সন্ন্যাসীর বেশে কলকাতাগামী ট্রেনে জাপানের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। তাঁকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য স্টেশনে স্টেশনে তাঁর ছবিসহ পোস্টার লাগানো ছিল। পোষ্টারের ছবিটির সঙ্গে তাঁর চেহারার তেমন মিল নেই দেখে তিনি কিছুটা নিরাপদ বোধ করেন। এর মধ্যে একটি স্টেশন থেকে দুজন অনুসন্ধানী পুলিশ উঠে যাত্রীদের টিকিট পরীক্ষা করতে শুরু করল। টিকিটহীন তাঁর অবস্থা বেগতিক। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে কালবিলম্ব করলেন না। একটি সেতুর উপর ট্রেনটি চলে এলে নদীতে অকস্মাৎ ঝাঁপ দিয়ে পড়লেন। পুলিশও সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁপ দিয়ে পড়ল নদীতে। কিন্তু তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তাঁর দেখা পেল না।
নদী তীরের ঘন কচুরিপানা-শ্যাওলা-লতাগুল্মের ঝোঁপে নাকটা শুধু ভাসিয়ে ঠাণ্ডা নোংরা পানির মধ্যে লুকিয়ে ছিলেন মধ্যরাত পর্যন্ত। পুলিশ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। তিনি গভীর রাতে অন্ধকারের মধ্যে গ্রামের এক বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। গ্রামের মানুষ তাঁর কথা শুনে তাঁকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। গ্রামবাসী তাঁকে শারীরিক ক্লান্তি ও অস্বস্তি দূর না হওয়া পর্যন্ত আরও কিছুদিন থেকে যেতে বলেন। কিন্তু তাঁর এই গুপ্ত আশ্রয়ের কথা জানাজানি হয়ে গেলে গ্রামের নিরীহ এইসব মানুষদেরকে নানা রকম পুলিশী ঝামেলা পোহাতে হবে ভেবে ২ দিন পরেই তিনি গ্রাম ছেড়ে লুকিয়ে লুকিয়ে পথ চলতে শুরু করেন। হিমালয় পর্বত, দুর্গম বনজঙ্গল, খরস্রোতা নদনদী পেরিয়ে বার্মার (মিয়ানমার) দিকে চলে যান। রাতের বেলা জনমানবহীন গভীর বনের মধ্যে বড় কোনো বৃক্ষের শাখায় শরীরকে শক্ত করে বেঁধে নিয়ে রাত কাটান। দিনের বেলা বনের ফলমূল আর পাখি শিকার করে পুড়িয়ে পেটের খিদে মেটান। এইভাবে কয়েক দিন পথচলার পর বার্মায় এসে পৌঁছেন। এরপর ১৯১৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বার্মা থেকে অনেক কষ্ট করে তিনি কয়লা বহনকারী শ্রমিকের বেশ ধরে জাপানের নাগাসাকি বন্দরে আসেন। তখন তাঁর বয়স ২৬ বছর।
হেরাম্বলাল গুপ্ত, ব্রিটিশ বিরোধী এই বিপ্লবী ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য সারাজীবন অনেক ত্যাগ-তিতীক্ষার মধ্য দিয়ে পার করেছেন। অগ্নিযুগের সশস্ত্র বিপ্লবীদের একজন অন্যতম বিপ্লবী তিনি। ব্রিটিশ শাসনের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য তিনি সারা জীবন বিপ্লবী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। তিনি ভারতবর্ষের স্বাধীনতাকে প্রধান্য দিয়ে সমগ্র এশিয়ার মুক্তির জন্য জীবনের শেষদিন পর্যন্ত বিপ্লবী আদর্শ ও কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন।
হেরাম্বলাল গুপ্ত জন্মছিলেন ১৮৮৯ সালের ২৮ নভেম্বর। কলকাতার এক অভিজাত বংশে। তাঁর বাবা ছিলেন মনেপ্রাণে স্বদেশী। তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়ে দেশে ফিরে কৃষিখামার গড়ে তোলেন। দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী ব্যক্তিত্বের অধিকারী পিতা ছেলেকেও দেশপ্রেমী হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেন। তিনি ছেলেকে কিশোর বয়সেই ব্রিটিশ-খেদানো স্বদেশী আন্দোলনের সাথে যুক্ত করেন।
হেরাম্বলালের বয়স যখন ১২/১৩ বছর তখন একদিন দুপুরে তাঁর বাবা ৪ জন সহযোগীসহ ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে এক সভায় যাওয়ার পথে অকস্মাৎ বিনা কারণে ব্রিটিশ প্রশাসকের চরদের দ্বারা আক্রান্ত হন। এই খবর শুনে হেরাম্বলাল গিয়ে দেখেন বাবা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। তাঁর বুকে পিস্তল দিয়ে গুলি করা হয়েছে। দ্রুত তাঁকে বাড়িতে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেও তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। মারা যাওয়ার পূর্বে হেরাম্বলালকে বুকে টেনে নিয়ে তিনি বলেন, ‘তোমার ভাইবোনরা এখনও ছোট। তারা আরও বহুদিন দেশে থাকবে, তুমি বিদেশে গিয়ে ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করো।’ তাঁর বাবা মাত্র ৩৮ বছর বয়সে মারা যান।
বাবার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের জায়গাজমি, ধনসম্পত্তি ব্রিটিশ সরকার দখল করে নেয়। কিশোর হেরাম্বলাল বিপদ বুঝে বাবার বন্ধু কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহযোগিতায় বিভিন্ন বাড়িতে লুকিয়ে লুকিয়ে থাকেন। দুবছর পর ১৯০২ সালে বাবার কয়েকজন বিপ্লবী বন্ধুর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটে। হেরাম্বলাল তাঁদের সঙ্গে বিদেশের উদ্দেশ্যে ভারতভূমি ত্যাগ করেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৪/১৫ বছর।
তাঁরা প্রথমে হংকং যান । এখানে ৩ দিন থাকার পর বুঝতে পারেন ব্রিটিশ পুলিশ ভারতীয় বিপ্লবীদের ব্যাপারে খুবই তৎপর। ফলে তাঁরা সাংহাই চলে যান। কিন্তু এজায়গাও তাঁদের জন্য নিরাপদ না হওয়ায় কবি রবীন্দ্রনাথের শরণাপন্ন হয়ে তাঁর চিঠি নিয়ে তাঁরা জাপানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দীর্ঘ সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে দলটি জাপানের য়োকোহামা সমুদ্রবন্দরে এসে পৌঁছে।
জাপানে দুই বছর থাকার পর ১৯০৪ সালে তাঁরা লন্ডনে পৌঁছেন। কিন্তু লন্ডনের জীবনযাত্রার সঙ্গে তাঁরা সহজে মানিয়ে না নিতে পারার কারণে ৩ মাসের মধ্যেই জার্মানীতে চলে যান। সেখানে গিয়ে বিপ্লবী ‘বার্লিন কমিটি’র সঙ্গে যুক্ত হন। এটি গঠন করেছিলেন বিপ্লবী চম্পাকারামান পিল্লাই, বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। এখানে তাঁরা ৫ বছর ছিলেন। এখানে হেরাম্বলাল কিছুদিন জার্মানী থেকে ভারতে অস্ত্র সরবরাহের কাজে জড়িত থাকেন।
কিছুদিন পর হেরাম্বলাল ফ্রান্সে যান। ফ্রান্স থেকে বিভিন্ন দেশ ঘুরে আবার তিনি লণ্ডন গিয়ে উপস্থিত হন। সর্বত্রই প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। একদিন তিনি লণ্ডনে প্রবাসী ছাত্রদের ছাত্রাবাসে যান। তাঁর যাওয়ার বিষয়টি পুলিশ আগে থেকেই জানতে পেরে তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য ওঁৎ পেতে বসেছিল। দেখা মাত্রই পুলিশ তাঁকে সন্ত্রাসী হিসেবে গ্রেপ্তার করে। আদালতের রায়ে ৬ বছরের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি।
জেলের মধ্যে ৩ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর পাগল হওয়ার ভান করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন তাঁর বন্ধু জনৈক ভারতীয় ছাত্রের বাড়িতে। পোশাক বদল করে সেখান থেকে সোজা আমেরিকায় পাড়ি দেন। ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান চরমপন্থী নেতা, ‘ব্রিটিশ সরকারের আতঙ্ক’ নামে খ্যাত লালা লাজপৎ রায় তখন আমেরিকাতেই ছিলেন। হেরাম্বলাল তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। লালা লাজপৎ রায় কিভাবে গুপ্তচরের কাজ এবং গোপন তথ্যের আদানপ্রদান করতে হয় সেই কলাকৌশল ও নীতি সম্পর্কে তাঁকে শিক্ষা দেন। হেরাম্বলাল গুরুর সকল আদেশ ও উপদেশ শিরোধার্য বলে গ্রহণ করে নেন। এরপর তিনি আমেরিকা থেকে জাপান হয়ে চীনে যান এবং চীনা জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী-নেতা ড. সান ইয়াৎ সেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জাতীয়তাবাদী নেতা বিপ্লবী ড. সান ইয়াৎ সেন ছিলেন বরাবরই মহাএশিয়া মৈত্রী-বন্ধন মতবাদে বিশ্বাসী। কাজেই হেরাম্বলালকে প্রথম দর্শনেই আপন করে নেন। এরপর হেরাম্বলাল ভারতে আসেন।
ভারতে এসে হেরাম্বলাল বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাঁরা দিল্লীতে লর্ড হার্ডিঞ্জ-হত্যা পরিকল্পনা করেন। এটি ছিল তাঁদের প্রথম সশস্ত্র বিপ্লবের পদক্ষেপ। কিন্তু সেটা ব্যর্থ হওয়ার পর বিপ্লবী শচীন্দ্রনাথ সান্যালের গুপ্তদলের সঙ্গে যৌথভাবে ১৯১৩ সালে রাসবিহারী বসু ও হেরাম্বলাল পাঞ্জাবের ক্যাপ্টেন গর্ডনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু এটিও ব্যর্থ হয়। তারপর তাঁরা শচীন্দ্রনাথ সান্যালের গুপ্তদলের সঙ্গে যৌথভাবে ঐতিহাসিক ‘লাহোর ষড়যন্ত্রে’ লিপ্ত হন।
১৯১৪ সালে যুদ্ধসংক্রান্ত ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহের জাগরণ সৃষ্টি করতে অবিরত কাজ করেন রাসবিহারী বসু ও হেরাম্বলাল গুপ্ত। গোপনে গোপনে সেনাবাহিনী এইসব সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন তাঁরা। দেশ-বিদেশ থেকে বিপ্লবী গদার পার্টির হাজার হাজার সশস্ত্র সদস্যের অংশগ্রহণও নিশ্চিত হয়। সংগ্রহ করা হয় বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ। ১৯১৫ সালে তাঁরা ‘ছাত্র-যুব সঙ্ঘে’র একটি সভা করে দলের সভ্যদেরকে ‘দেশের জন্য মৃত্যুবরণ করার প্রস্তুতি নিতে বলেন’। তাঁরা সমগ্র ভারত নিয়ে একটি বিপ্লবের চিন্তা করেন। শচীন্দ্রণাথ স্যানালের সহযোগিতায় তাঁরা বেনারস, দানাপুর, সিকোল, এলাহাবাদ, লাহোর, পাঞ্জাব প্রভৃতি স্থানের সৈন্যদের ‘জাতীয় অভ্যুত্থানের’ জন্য অনুপ্রাণিত করে তাদেরকে প্রস্তুতি নিতে বলেন।
বিদ্রোহ ঘটানোর দিন ধার্য করা হয় ১৯ ফেব্রুয়ারি। প্রধান লক্ষ্যস্থল পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোর। সেইসঙ্গে বারাণসী ও জব্বলপুর সেনা ঘাঁটিও প্রস্তুতি নিয়ে অধীর হয়ে অপেক্ষা করে। রাসবিহারী বসু এবং হেরাম্বলাল এই সশস্ত্র বিপ্লব বাহিনীর প্রধান গুপ্ত দপ্তর স্থাপন করেন লাহোর শহরের ৪টি গুপ্তস্থানে। অবাঙালি বিপ্লবী রামশরণ দাসের বাড়িতে বিদ্রোহের আদেশ প্রদানের সময়টুকুর প্রতীক্ষায় ছিলেন তাঁরা। কিন্তু বিদ্রোহের ঠিক ৪ দিন পূর্বে এই ষড়যন্ত্রের খবর ফাঁস করে দেয় রামশরণ দাস। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সৈন্য পাঠিয়ে যেখানে যেখানে সম্ভব ভারতীয় সৈন্যদেরকে অস্ত্রহীন করে এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি ৪ প্রধান দপ্তরের একটিতে অকস্মাৎ হামলা চালায়। বিপ্লবীদের একটি দল ১৯ তারিখ সন্ধ্যেবেলায় লাহোরে নিযুক্ত ব্রিটিশ সেনানিবাসে হামলা চালিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এই সশস্ত্র হামলায় দুপক্ষের অনেক লোক মারা যায়। দ্রুত সমস্ত লাহোরব্যাপী এই ঘটনার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। প্রশাসন সমস্ত শক্তি দিয়ে এই সশস্ত্র বিদ্রোহের ষড়যন্ত্র দমন করতে সক্ষম হয়।
এটাই ঐতিহাসিক ‘লাহোর ষড়যন্ত্র’ নামে পরিচিত। এই ষড়যন্ত্রের ব্যর্থতায় অনেক বিপ্লবী গ্রেপ্তার এবং মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় পুনরায় অনুরূপ ঘটনা ঘটানোর মতো লোকবল এবং অস্ত্রবল না থাকার কারণে অন্য কৌশল অবলম্বন করেন রাসবিহারী বসু এবং হেরাম্বলাল গুপ্ত। এরপর সশস্ত্র বিপ্লবকে সফল করার উদ্দেশ্যে বেছে নেন জাপান দেশটিকে।
১৯১৫ সালের মার্চ মাসের দিকে তাঁরা কলকাতাগামী ট্রেনে জাপানের উদ্দ্যেশে রওনা হলেন এবং কীভাবে হেরাম্বলাল গুপ্ত জাপান পৌছলেন সেই বর্ণানা শুরুতেই দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে একই বছরের ৪/৫ মাস আগে রাসবিহারী বসু ভিন্নপথ অবলম্বন করে জাপানে পৌঁছেন।
জাপানে এসে তাঁরা জানতে পারেন চীনা জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী-নেতা ড. সান ইয়াৎ সেন জাপানে অবস্থান করছেন। তাঁরা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ড.সান ইয়াৎ সেন এবং প্যান্-এশিয়ানিজমের অন্যতম প্রধান উদ্গাতা তোয়ামা মিৎসুরুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন তাঁরা। গুরু তোয়ামা এই বিপ্লবীদেরকে জাপানে আশ্রয় এবং সর্বপ্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তোয়ামা এসময় গুপ্ত সমিতি ‘কোকুরিউকাই’ এর প্রধান পরিচালক কুজো য়োশিহিসা ও প্রধান কর্মকর্তা উচিদাকে রিয়োহেইকে-এর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাঁদের ওপর এই বিপ্লবীদ্বয়ের রক্ষণাবেক্ষণের ভার অর্পণ করেন। সেদিন থেকে জাপান তথা বিদেশে বিপ্লবী রাসবিহারী বসু ও হেরাম্বলালের নতুন রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়।
হেরাম্বলাল ১৯২০ সালে টোকিওতে অবস্থিত সেইরোকা খ্রিস্টান হাসপাতালের জনৈক সেবিকা কোবায়াশিকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর টোকিওস্থ ইউশিমা শহরের তেনজিন মন্দির সংলগ্ন স্থানে বাসা ভাড়া করেন। তাঁদের পরিবারে দুটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তাঁর স্ত্রী অকালে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন এবং এই ঘরে তিনটি সন্তানের জন্ম হয়। তবে দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম বা তিনি কোথাকার মেয়ে সেসম্পর্কে কিছু জানা যায় নি।
১৯২৭ সালে জাপান সরকার বৃটিশের চাপে জাপানে আশ্রিত বৃটিশবিরোধী বিপ্লবীদের উপর কড়া নজরদারি আরোপ করে। হেরাম্বলাল জাপানে ভারতীয়দের অবস্থা পর্যবেক্ষণে প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় ছুটোছুটি করেন। জাপান সরকার ৩ মাসের মধ্যে হেরাম্বলালকে জাপান ত্যাগের নির্দেশ দেয়। এ সময় নেতৃস্থানীয়রা ‘জাপানে রাসবিহারী বসু আছে তুমি চীনে গিয়ে লড়াই করো তাতে আমাদের সহযোগিতা থাকবে’ বলে তাঁকে আশ্বস্ত করেন।
১৯২৭ সালের মার্চ মাসে হেরাম্বলাল গুপ্ত চীনের সাংহাই বন্দরে পৌঁছান। ১৯২৭ সালের নভেম্বর মাসে সাংহাইয়ে দ্বিতীয় এশিয়া জাতিগোষ্ঠী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জাপান, চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশের একাধিক নেতা অংশগ্রহণ করেন। ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে হেরাম্বলাল নির্বাচিত হন। কিন্তু সেদিনই বৃটিশ গোয়েন্দা পুলিশের কারণে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে না পারায় তিনি মাঞ্চুরিয়ায় চলে যান। তাঁর পরিবর্তে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন বিপ্লবী রাজামহেন্দ্র প্রতাপ।
১৯৩২ সালে পুনরায় সাংহাইয়ে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে সহকর্মীদেরকে জড়ো করে স্বাধীনতা আন্দোলনের কাজ শুরু করেন। মাঞ্চুরিয়ায় প্রচুর পরিশ্রমের কারণে তাঁর শরীর বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। দীর্ঘ ২ মাস হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ভাল হয়েছিলেন। এসময় ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নকল ডলার বানানোর মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করতে চেয়েছিল। কিন্তু চীনা গোয়েন্দা পুলিশের কারণে সফল হয়নি।
১৯৩২ সালে ইংরেজ-বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলন বৃটিশদের পক্ষে অসহনীয় হয়ে উঠে। কাজেই তারা সুযোগ খুঁজছিল কিভাবে পলাতক বিপ্লবী বিশেষ করে রাসবিহারী বসু, হেরাম্বলাল গুপ্তকে গ্রেপ্তার করা যায়। রাসবিহারী বসু জাপানে বিয়ে করে জাপানি নাগরিকত্ব গ্রহণ করার ফলে সে সুযোগ নস্যাৎ হয়ে গেছে। এখন হেরাম্বলালকে গ্রেপ্তার করতে বৃটিশ সরকার সর্বদাই সচেষ্ট। সাংহাইস্থ বৃটিশ দূতাবাস নানকিং সরকারের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে হেরাম্বলালকে বৃটিশ দূতাবাসে যেতে বাধ্য করে এবং সেখানে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাঁকে রাখা হয় ইংরেজ ও ফরাসী কর্তৃক যৌথভাবে নিয়ন্ত্রিত ‘ওয়াতারি’ কারাগারে। ৪০ দিন পর তাঁকে মুক্ত করে দেয়া হয়। কিন্তু তিনি বৃটিশ জেলহাজত থেকে বেরিয়ে আসতেই আবার ফরাসী গোয়েন্দা পুলিশের হাতে বিনা নোটিশে গ্রেপ্তার হন। এবার ফরাসী নিয়ন্ত্রিত ‘লুকাবে’ কারাগারে বন্দি করে রাখা হয় তাঁকে। মুক্তি লাভ করে সাংহাইয়ে অবস্থিত প্রতিটি ভারতীয়কে আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তিনি ঘরে ঘরে গিয়ে তাঁদেরকে বোঝাতে থাকেন। রাতদিন পরিশ্রম করেন। তাঁদেরকে ভারতের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যতকে বোঝাতে গিয়ে প্রচন্ড পরিশ্রম করতে হয়েছিল হেরাম্বলালকে।
ভারতীয়দেরকে সংঘবদ্ধ করবার উদ্দেশ্যে রাসবিহারী বসু ১৯২১ সালে জাপানে সর্বপ্রথম ‘ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘ’ প্রতিষ্ঠা করেন। রাসবিহারী বসু এই সংঘের প্রেসিডেন্ট হন। ১৯৩৩ সালে হেরাম্বলাল সাংহাইয়ে অবস্থিত হিন্দু মন্দিরে ‘ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘ’-এর কার্যালয় স্থাপন করেন। সাংহাইয়ে তখন প্রচুর ভারতীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ছিল, সেগুলো থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে আন্দোলনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান তিনি। ১৯৩৭ সালে তিনি সাংহাইয়স্থ ভারতীয় বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান সমিতির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
মহাএশিয়া সম্মেলনের মাধ্যমে ১৯৪০ সালের ১১ জানুয়ারি দ্বিতীয় কোনোয়ে ফুমিমারো মন্ত্রীসভার আয়োজনে জাপানি সম্রাটের বংশানুক্রমিক ধারায় ২,৬০০ স্মারক বর্ষ পালিত হয় । এই সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য তিনি টোকিওতে যান। এই সম্মেলনে এশিয়ার একাধিক দেশের প্রধানরা বক্তৃতা করেন। কিন্তু তাঁদের কথা শুনে হেরাম্বলালের মনে হয়: এশিয়ার মুক্তি এবং ভারতীয় স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে তাঁদের আন্তরিকতা ও জনবলের সংকট বিদ্যমান। তিনি মঞ্চে উঠে এক জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেন। তাঁর বক্তৃতায় করতালিতে ফেটে পড়ে সম্মেলন কক্ষ। এরপর তিনি সাংহাই ফিরে আসেন।
১৯৪১ সালে জাপান আমেরিকার হাওয়াইই দ্বীপে অবস্থিত নৌঘাঁটি আক্রমণ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনও হঠাৎ করে নতুন গতি খুঁজে পায়, অবসান ঘটে দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার। বহু বছরের পরাধীন বৃটিশ উপনিবেশ ভারতবর্ষের মুক্তির সুযোগ সৃষ্টি হয়। রাসবিহারী বসু বিশ্বস্ত এম.এন রায়কে মাঞ্চুরিয়াতে দূত হিসেবে পাঠিয়ে ভারতীয়দেরকে সংগঠিত করার দায়িত্ব দেন। একই সময় হেরাম্বলালও সাংহাই ও হংকং-এ একই কর্মকান্ড পরিচালনা করেন ।
১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি হেরাম্বলাল গুপ্ত হংকংয়ে প্রবাসী ভারতীয়দের নিয়ে বৃটিশ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে সম্মেলনের আয়োজন করেন। তারপর ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে গিয়ে জানতে পারেন যে, সিঙ্গাপুরে বৃটিশ সেনাবাহিনীর বেশ কিছু সংখ্যক ভারতীয় সৈন্য বন্দি হয়ে আছেন। তিনি তাঁদেরকে মুক্ত করে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে সিঙ্গাপুর, সাংহাই ও হংকংয়ে বিভিন্ন কাজে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন।
১৯৪২ সালের জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখে রাসবিহারী বসুর উদ্যোগে টোকিওতে ‘ভারতীয় স্বাধীনতা লীগে’র আয়োজনে একটি মহাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শিরোনাম ছিল: ‘আমেরিকা-বৃটেন ধ্বংস করো’।
এই সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে ১৯৪২ সালের জানুয়ারি মাসের শেষদিকে জাপানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় হেরাম্বলালকে প্রধান করে ‘ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী’ গঠন করা হয়। যার সদস্য সংখ্যা সেই সময়ে ছিল ৩,০০০। জাপানী সেনাবাহিনীতে কর্মরত ভারতীয়রা যোগ দেন ‘ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী’-তে।
১৯৪৩ সালের ৪-৭ জুলাই সিঙ্গাপুরস্থ মহাএশিয়া মিলনায়তনে ‘ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘ’-এর প্রধান নেতৃবৃন্দের মহাসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’ গঠিত হয়।
১৯৪৩ সালের অক্টোবর মাসের ২৪ তারিখে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ‘স্বাধীন ভারত সরকার’ বা ‘আজাদ হিন্দ সরকার’ গঠন করেন। ইতিহাসে এই সরকার ‘ফ্রী ইন্ডিয়া গভর্নমেন্ট’ হিসেবেও খ্যাত। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু একাধারে এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৩ সালের ডিসেম্বর মাসের ২৩ তারিখে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের প্রথম দিকে জাপান অধিকৃত বঙ্গোপসাগরের আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপে ‘স্বাধীন ভারত সরকারে’ন কার্যালয় স্থাপন করা হয়। সেখান থেকে পরের দিন ২৪ ডিসেম্বর ‘স্বাধীন ভারত সরকার’ মিত্রশক্তি বৃটিশ এবং আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ।
‘স্বাধীন ভারত সরকার’ যখন বৃটিশ ও আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, তখন ‘ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী’-তে সৈন্য সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার। হেরাম্বলাল তখন এই যুদ্ধের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের আশা পোষণ করতে শুরু করেন। তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে লাভ করেন নতুন কর্মোদ্যম। তাঁর কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত হতে থাকে ক্রমশ। তিনি সাংহাইতে নিজের স্থায়ী ঠিকানা রেখে হংকং, সাইগন, সুমাত্রা, মালয় প্রভৃতি জাপান অধিকৃত অঞ্চলসমূহে অবিরাম জাপ ও ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার কাজ ছাড়াও গোপন তথ্যের আদান-প্রদানের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।
১৯৪৫ সালের জানুয়ারি মাসে হেরাম্বলাল গুপ্ত জাপ ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে সংযোগ ও তথ্যের আদান-প্রদানের দায়িত্বে নিযুক্ত হন। সেইসময় তিনি এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় জাপানের সামরিক দপ্তর প্রধান জেনারেল তেরাউচি হিসাইচি, উত্তর বার্মাস্থ সদর দপ্তর প্রধান লে.কর্নেল মুতাগুচি রেনইয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মণিপুর প্রদেশের ইম্ফল অভিযানে ৭০ হাজার ভারতীয় সেনা ও স্বেচ্ছাসেবী সেনাকে সংযুক্ত করার অনুরোধ জানান।
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হয়েছে কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন তখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু হিন্দ ফৌজকে ভেঙ্গে দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যান । কেউ জানে না কোথায় আছেন তিনি। তন্ন তন্ন করে খুঁজছে তাঁকে বৃটিশ সরকার (কিছুদিন পর জানা যায় নেতাজি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান)। এ সময় কর্নেল ভোঁসলে ঘোষণা করেন, নেতাজি না থাকলেও, জাপানীরা হেরে গেলেও আজাদ হিন্দ ফৌজ শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই করে যাবে। কয়েক হাজার ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পরও কোহিমা পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিল আজাদ হিন্দ বাহিনীর কোনো কোনো দল। বৃটিশদের আর কোনো শক্তি ছিল না ভারতীয়দেরকে দাবিয়ে রাখার। শেষ পর্যন্ত ১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসক পাক-ভারত ভাগের মধ্য দিয়ে লেজ গুটায়। অর্জিত হয় কাঙ্খিত ভারতের স্বাধীনতা, যে স্বাধীনতার জন্য হেরম্বলালসহ অসংখ্য বিপ্লবী জীবন বিপন্ন করে লড়াই- সংগ্রাম করেছেন।
১৯৫০ সালে ২৯ এপ্রিল হেরাম্বলাল ৬১ বছর বয়সে জাপানী নারী কিনোশিতা শিজুর সঙ্গে তৃতীয়বারের মতো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৯৫৬ সালের দিকে মাও জেদং এবং চৌ এন লাই এর তিনি সমালোচনা করেন এবং ন্যাশনালিস্ট ড. সান ইয়াৎ সেনের মতবাদ চীনাদেরকে শেখানোর জন্য আহবান জানান। ফলে ‘বিপ্লব পরিপন্থী’ ও কমিউনিস্টদের সমালোচনার কারণে তাঁকে বারবার জেল হাজতে আটকে রাখা হয় এবং প্রতিবারই স্ত্রী শিজুকে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে ছাড়িয়ে আনতে হয়েছে। অবশেষে সরকার চীনদেশ ত্যাগের আদেশ ঘোষণা করলে তাঁর পক্ষে আর সাংহাইয়ে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। তিনি আফগানিস্তানে চলে যান এবং সেখানেই ১৯৮১ সালে ৯৩ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্য ও ছবিসূত্র:
১। হেরাম্বলালের শেষ জীবনের বন্ধু অধ্যাপক কুসাবিরাকি জানজো লিখিত ‘রেকিশি নি অকিজারি নি সারেতা ইনদো দোকুরিৎসু নো হিৎসুওয়া’ বা ‘ইতিহাসের আড়ালে ঢাকা ভারতীয় স্বাধীনতার গুপ্তকথা’ গ্রন্থ থেকে গৃহীত।
২। অগ্নিবিপ্লবী হেরাম্বলাল গুপ্ত এবং ভারতের স্বাধীনতা: প্রবীর বিকাশ সরকার, ‘উইকলি বেঙ্গলী’তে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়, প্রকাশকাল ২০০৯-২০১০ সাল।
৩। পাঁচ স্মরণীয় বিপ্লবী: সম্পাদনা দেবপ্রসাদ জানা, প্রকাশকাল ২০০৮ কলকাতা।
লেখক : রফিকুল ইসলাম (শেখ রফিক)