সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশেরই ছায়া ঢাকা পাখি ডাকা এক শান্ত জনপদ নড়াইল। নড়াইল জেলা সদর থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের পথ পেরোলেই শান্ত পাখির কুজন মুখরিত এক গ্রাম। মহেষখোলা। গ্রামের আবহটাই অন্যরকম। পাখির কিচিরমিচির, গরুর হাম্বা, রাখালের বাঁশি, কোথাও বা অলস কৃষক গান গাইছে, যেন পুরো গ্রামটাই এক নীরব সংগীতের মূর্ছনায় মগ্ন। এই গ্রামেরই এক দুরন্ত ছেলে নূর মোহাম্মদ। বাবা মায়ের একমাত্র আদরের সন্তান। প্রকৃতির সন্তানের মতো বেড়ে ওঠা তাঁর। গান বাজনা, সংগীত, যাত্রা থিয়েটার ইত্যাদি নিয়েই দিন কাটে তাঁর। এই সংগীত পাগল বালকটিই একদিন বজ্রচেরা বাঁশির শব্দে এক দৃঢ়চেতা সৈনিকে পরিণত হয়েছিলেন। বুকের রক্ত দিয়ে তিনি পৃথিবীর মানচিত্রে এঁকে দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের সীমানা।
১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোরের গোয়ালহাটি গ্রামে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সাথে এক সম্মুখ সমরে শহীদ হন ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ। মুক্তিযুদ্ধে এই অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
নূর মোহাম্মদ শেখের জন্ম ১৯৩৬ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদরের চন্ডীকপুরস্থ মহেষখোলা গ্রামে। বাবা মোহাম্মদ আমানত শেখ এবং মা জেন্নাতুন্নেসা। বাবা কৃষক ছিলেন। জমিজিরাত যা ছিল তার উত্পন্ন ফসলেই চলে যেত সংসার। নূর মোহাম্মদ একমাত্র সন্তান হিসেবে পিতা-মাতার আদর-আহ্লাদে বড় হতে থাকলেন। অতি আদর-যত্নের ফলে বুদ্ধি ও মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও নূর মোহাম্মদের লেখা পড়া বেশিদূর এগোল না। গান-বাজনা, যাত্রা-থিয়েটারের মতো সাংস্কৃতিক কার্যকলাপেই তাঁর মন ছিল বেশি। খেলাধুলায়ও ছিলেন বেশ ভালো। দুরন্ত আর সাহসী হিসেবে গ্রামে নামও ছিল তাঁর। বাবা-মায়ের অগাধ ভালোবাসায় এভাবেই কাটছিল তাঁর বেড়ে ওঠার দিনগুলো।
কিন্তু কিশোর জীবনেই অনাথ হলেন নূর মোহাম্মদ শেখ। বাবা-মাকে হারিয়ে অকুলপাথারে ভেসে গেলেন তিনি। কী করবেন আর কী করবেন না ঠিক কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। আশপাশে এমন কোনো অভিভাবকও ছিল না, যারা তাঁর সান্ত্বনার সঙ্গী হতে পারে। সমবয়সী বন্ধুরাই হয়ে উঠল তাঁর সুখ-দুঃখ-আনন্দের সাথী। তিনি মেতে উঠলেন গান-বাজনা নিয়ে। নিজের গানের গলাও ছিল ভালো। নূর মোহাম্মদ যাত্রাদল, জারি গান, বন্ধুবান্ধব ইত্যাদিতে টাকা খরচ করতে লাগলেন। কিন্তু টাকা কীভাবে আয় করতে হয় তা তিনি শেখেননি। তাই টাকার জন্য ধীরে ধীরে একটু একটু করে জমি বিক্রি করতে শুরু করলেন।
এমনি আনন্দ-ফুর্তি করতে করতে নূর মোহাম্মদ শেখ একসময় যুবক হয়ে উঠলেন। গান-বাজনার লোকেরা তাঁকে এক নামে চেনে। সুযোগ বুঝে গ্রামোফোনও কিনে ফেললেন একটা। সবই করছিলেন জমি বিক্রি করে। বিয়ে করলেন। স্ত্রী তোতাল বিবি, অবস্থাসম্পন্ন কৃষকের মেয়ে। বিয়ে হলো ধুমধামে।
নূর মোহাম্মদ শেখ একদিন দেখলেন বাড়ির ভিটে ব্যতীত বিক্রি করার মতো তাঁর আর কোনো জমি নেই। অবশ্য বিয়ের পর থেকে তিনি শ্বশুরবাড়িতেই বাস করছিলেন। কিন্তু নিজের ভেতর একটা বিষয় জাগ্রত হলো, কিছু একটা করা প্রয়োজন, এখন সংসার হয়েছে। উপার্জনের জন্য তিনি প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে যোগ দিলেন স্থানীয় আনসার বাহিনীতে। কিন্তু তাতেও সংসার চলে না।
চাকরির সন্ধানে একদিন বের হয়ে এলেন বাড়ি থেকে। শিক্ষা না থাকলেও সাহস, উদ্যম, সুঠাম দেহ আর আনসার বাহিনীর প্রশিক্ষণ তাঁকে পথ করে দিল। ১৯৫৯ সালের ১৪ মার্চ তিনি যোগ দিলেন তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস অর্থাত্ ইপিআরে। তখন বয়স মাত্র তেইশ। বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার দেড় বছর পর তিনি এই চাকরি পেলেন। চাকরি পেয়ে স্ত্রী-পুত্রের জন্য কাপড়-চোপড় কিনে একটি চিঠিতে সব জানিয়ে পাঠিয়ে দেন তোতাল বিবির কাছে।
প্রাথমিক সামরিক শিক্ষা সমাপ্ত হলে নূর মোহাম্মদ শেখকে পোস্টিং দেয়া হলো ১৯৫৯ সালের ৩ ডিসেম্বর, দিনাজপুর সেক্টরে। এখানে তিনি ১৯৭০ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তাঁকে বদলি করা হয় যশোর সেক্টর হেড কোয়ার্টারে।
একাত্তরের উত্তাল দেশ নূর মোহাম্মদ শেখের মনকে ভীষণ নাড়া দেয়। সংস্কৃতিপ্রীতির কারণে দেশপ্রেম, স্বাধীনতা শব্দগুলোর মানে খুব ভালোভাবেই জানা ছিল তাঁর। উত্তপ্ত সেই সময় তাঁর চোখেও স্বপ্নের দানা বেঁধেছিল। একাত্তরের মার্চে শেষবার তাঁর একমাত্র কিশোর ছেলের সাথে দেখা হয়েছিল। পিতার সঙ্গে সাইকেলে চড়ার একটা ঘটনাই প্রমাণ করে, নূর মোহাম্মদ দেশের পরিস্থিতি নিয়ে কতটা গভীরভাবে ভাবতে পারতেন। সাইকেলে চড়ার সময় তাঁর হাতে একটি কঞ্চি ছিল। কঞ্চির খোঁচা লেগে নূর মোহাম্মদ শেখের কপাল কেটে যায়। রক্ত দেখে আঁতকে উঠেছিলেন ছেলে মোস্তফা কামাল। তিনি তাঁর বাবা নূর মোহাম্মদ শেখকে উদ্বিগ্ন হয়ে বলেছিলেন, ‘দেখো বাবা, কত রক্ত!’ উত্তরে নূর মোহাম্মদ শেখ বলেছিলেন, ‘আরও কত রক্ত ঝরবে!’ কিশোর মোস্তফা সেদিন তাঁর বাবার কথার মর্মার্থ বুঝতে পারেনি।
২৫ মার্চের ভয়াল রাতে হিংস্র পাকবাহিনীর পাশবিক নারকীয় কর্মকাণ্ড দেখে নূর মোহাম্মদ আর স্থির থাকতে পারলেন না। আপন বিবেকের নির্ভুল নির্দেশেই তিনি যোগ দিলেন মুক্তিযুদ্ধে। ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ যুদ্ধরত ছিলেন ৮নং সেক্টরে। এই কোম্পানিটি মূলত গঠিত হয়েছিল সাবেক ইপিআরের বাঙালী সৈনিকদের নিয়ে। দীর্ঘদিনের সামরিক অভিজ্ঞতা থাকায় নূর মোহাম্মদ শেখকে অধিনায়ক করে গোয়ালহাটি গ্রামের সামনে স্থায়ী টহল বসানো হয়। সুতিপুরে নিজস্ব প্রতিরক্ষার নিরাপত্তার জন্যই এর বিশেষ প্রয়োজন ছিল।
১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাস। দখলদার বাহিনীর সাথে সর্বত্র লড়ে যাচ্ছে মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারা। শুধু প্রতিরোধই নয়, এবার সুযোগে হটিয়ে দেবারও পালা। যশোরের গুঁটিপুর ঘাঁটিতে জড়ো হয়েছে হানাদার বাহিনীর সেনারা। সংখ্যায় তারা অনেক। সেখানে বসেই তারা করছে মুক্তিবাহিনীকে আক্রমণের নতুন পরিকল্পনা। গুঁটিপুর ঘাঁটির সামান্য দূরে গোয়ালহাটি গ্রামের স্থায়ী টহলে মাত্র দুইজন সহযোদ্ধা নিয়ে অসম সাহসে নজর রাখছেন টহল দলের অধিনায়ক ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ।
সেদিন ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১। সকাল সাড়ে নয়টা। শত্রুর গতিবিধির ওপর লক্ষ্য রাখছিলেন ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ ও তাঁর দুই সঙ্গী। শত্রুর দিকে নজর রাখতে গিয়ে উল্টো শত্রুরই নজরে পড়ে যান তাঁরা। হানাদাররা তাঁদেরকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে। হানাদাররা গুলি চালাতে চালাতে এগুতে থাকে তিন দিক থেকে।
এই হঠাত্ পরিস্থিতিকে আঁচ করে নেন নূর মোহাম্মদ। তাঁদের কাছে আছে মোটে একটি হালকা মেশিনগান আর দুটি রাইফেল। আর গুলিও নেই তেমন। একদিকে ওরা তিনজন আর অন্যদিকে পাকিস্তানের একটি বিশাল সেনাদল। সামান্য অস্ত্র দিয়ে তাদের মোকাবেলা করা একেবারেই অসম্ভব। তাঁদের সামনে ডানে-বাঁয়ে তিন দিকেই শত্রু, এখন উপায় কেবল পেছন দিক দিয়ে হটে যাওয়া। হটে যেতে পারলে মুক্তিবাহিনীর স্থানীয় মূল ঘাঁটিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে। নূর মোহাম্মদের ভাবনায় এল, এতে পাক হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীর মূল ক্যাম্পে পৌঁছানোর সুযোগ পেয়ে যাবে, যা মোটেও ঠিক হবে না। যতক্ষণ পারা যায় প্রতিরোধ করতে হবে। এতে মূল ঘাঁটির মুক্তিযোদ্ধারা লড়াই করার কিংবা পিছু হটার সুযোগ পাবে।
এরই মধ্যে গুলি আসতে লাগল তিন দিক থেকে। গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়লেন সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া। হাত থেকে পড়ে গেল এলএমজিটা। খুব দ্রুততার সাথে নান্নু মিয়াকে কাঁধে তুলে নিলেন নূর মোহাম্মদ, অন্য হাতে তুলে নিলেন লাইট মেশিনগান। ডানে বামে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে লাগলেন তিনি। এতে হানাদাররা একটু স্তিমিত হলো।
এবার নূর মোহাম্মদ হানাদার বাহিনীকে ভ্রান্ত ধারণা দেবার জন্য নতুন এক কৌশল করলেন। এক জায়াগায় থেকে মেশিনগান চালিয়ে তিনি আবার অন্য জায়গা থেকে মেশিনগান চালান। এভাবে স্থান পরিবর্তন করে করে মেশিনগান চালাতে লাগলেন তিনি। এতে কাজও হলো। হানাদার বাহিনী ভেবে নিল শুধু তিনজন মুক্তিযোদ্ধা নয়, এরা সংখ্যায় অনেক আর অস্ত্রও আছে। এতে হানাদাররা গুলি কিছু কমিয়ে দিল।
এই ফাঁকে কিছুটা সময় পাওয়া গেল। এই সুযোগে নূর মোহাম্মদ নান্নু মিয়াকে নিয়ে একটু পিছু হটে এলেন, অনেকটা নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে। কিন্তু বাদ সাধল একটা মর্টারের গোলা। পড়ল এসে নূর মোহাম্মদের ডানপাশে। স্প্লিন্টারের আঘাতে তাঁর হাঁটু ভেঙে গেল, একটা বড় ক্ষত তৈরি হলো কাঁধে। রক্তে ভিজে গেল সমস্ত শরীর, মাটি হলো রক্তময়।
নূর মোহাম্মদ অতি সামনে থেকে তাঁর মৃত্যুকে দেখতে পেলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি অধিনায়কের দায়িত্ব দিলেন সিপাহী মোস্তফা কামালকে। এলএমজি তাঁর হাতে তুলে দিয়ে তাঁর এসএলআর রাখলেন নিজের কাছে। এলএমজি শত্রুর হাতে পড়ুক তিনি তা চান না। কাতর অথচ দৃঢ়কন্ঠে বললেন, ‘মোস্তফা কামাল, তুমি আহত নান্নু মিয়াকে নিয়ে দ্রুত পিছনে হটতে থাকো। আমি যতক্ষণ পারি শত্রুকে ঠেকিয়ে রাখব।’
মোস্তফা কামাল এরকম নির্দেশ শুনে হতবিহ্বল হলেন। বললেন, ‘আপনাকে এই অবস্থায় রেখে আমরা যাই কী করে?’ সিপাহী মোস্তফা হঠাত্ ফুঁপিয়ে উঠে হাঁটুভাঙা আহত ল্যান্স নায়েকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে কাঁধে তুলে নিতে গেলেন। ল্যান্স নায়েক হাত বাড়িয়ে পাশের গাছের শিকড় আঁকড়ে ধরে বলে উঠলেন, ‘আরে একি! থামো থামো উঁহ, লাগছে, লাগছে।’ কড়া এক ধমক দিলেন, ‘সরো মোস্তফা।’
সিপাহী মোস্তফা থতমত খেয়ে ল্যান্স নায়েকের ওপর থেকে হাত সরিয়ে নিলেন। নূর মোহাম্মদ তাঁর হাত দুটি ধরে নরম গলায় অথচ দৃঢ়ভাবে বললেন, ‘আল্লাহর দোহাই মোস্তফা হুঁশ করে শোনো। আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখ, যেভাবে জখম হয়েছি তাতে আমার আর বাঁচার সম্ভাবনা নেই। যেভাবে রক্তপাত হচ্ছে, তাতে এখনই আমার সারা শরীর ঝিমঝিম করছে, চোখে ঝাপসা দেখছি। আমাকে সুদ্ধ নিতে গেলে তোমরা দু’জনও মারা পড়বে। তিনজন মরার চেয়ে দু’জন বাঁচা ভালো নয় কি! দেশের স্বাধীনতাকে আনার জন্য তোমাদের বাঁচতে হবে। আমি নির্দেশ দিচ্ছি, তোমরা সরে যাও।’
সিপাহী মোস্তফা, ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের এই নিষ্ঠুর আদেশ শিরোধার্য করে নান্নু মিয়াকে কাঁধে তুলে লাইট মেশিনগানটা হাতে নিয়ে পিছু হটতে লাগলেন। আহত নূর মোহাম্মদ রক্তাক্ত ভুলুন্ঠিত অবস্থায় একাই লড়তে লাগলেন। সে এক ভয়ংকর যুদ্ধ। অবিশ্বাস্য লড়াই। একদিকে মাত্র একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর হাতে একটি মাত্র রাইফেল। আর তাঁর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। আর অন্যদিকে একটি শক্তিশালী বাহিনী। শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে একেবারে মৃতপ্রায় অবস্থায় একাই লড়াই চালিয়ে গেলেন নূর মোহাম্মদ। তাঁর শরীর রক্তক্ষরণের ফলে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে এল।
জীবনের শেষবিন্দু শক্তি দিয়ে তিনি হানাদারদের দিকে ট্রিগার টিপলেন। ততক্ষণে মোস্তফা কামাল নান্নু মিয়াকে নিয়ে নিরাপদে পৌঁছে গেছে। নিজের জীবনের বিনিময়ে নূর মোহাম্মদ এক মরণজয়ী যুদ্ধে বাঁচিয়ে দিলেন সহযোদ্ধাদের।
তার এক ঘন্টা পর। এবার মূল ঘাঁটির মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ করল। মুক্তিযোদ্ধাদের পরাক্রমে টিকতে পারল না পাকিস্তান সেনাদল। তারা পিছু হটতে বাধ্য হলো। দুশমনরা এলাকা ছাড়লে মুক্তিযোদ্ধারা খুঁজতে লাগল ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখকে। তাঁর মৃতদেহ পাওয়া গেল ঝোঁপের পাশে। বেয়নেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত একটা মৃতদেহ। বর্বর পাকসেনা অন্য কাউকে না পেয়ে সমস্ত ক্ষোভ ঝেড়েছে লাশের ওপর। প্রতিহিংসায় উপড়ে ফেলেছে তারা নূর মোহাম্মদের দুটি চোখ।
নূর মোহাম্মদ শেখ মরতে ভয় পাননি। দেশামাতৃকার কাছে নিজের জীবনকে তুচ্ছ মনে হয়েছে তাঁর। এ জন্যই তিনি বীরশ্রেষ্ঠ, উন্নত শক্তির ধারক। সহযোদ্ধারা তাঁকে যশোরের কাশিপুরে সমাহিত করেন। পরে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী সাড়াতল বাজারে তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কলেজ। স্বাধীনতার ৩৭ বছর পর এ বীরশ্রেষ্ঠর জন্মগ্রাম মহেষখোলার নাম হয়েছে নূর মোহাম্মদনগর। নূর মোহাম্মদনগরের পার্শ্ববর্তী ফেদি গ্রামে জেলা পরিষদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মহাবিদ্যালয়ের ১২ শতাংশ জমির ওপর ৬২ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ লাইব্রেরি ও জাদুঘর।
সংক্ষিপ্ত জীবনী :
নূর মোহাম্মদ শেখ
জন্ম : ২৬ এপ্রিল, ১৯৩৬
জন্মস্থান : নড়াইল জেলার মহেষখোলা গ্রামে।
পিতা : মোঃ আমানত শেখ।
মা : মোছাঃ জেন্নাতুন্নেসা।
স্ত্রী : তোতাল বিবি।
কর্মস্থল : ইপিআর।
যোগদান : ১৯৫৯ সাল।
পদবী : ল্যান্স নায়েক।
মুক্তিযুদ্ধে অংশরত সেক্টর : ৮নং সেক্টর।
মৃত্যু : ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ সাল।
সমাধিস্থল : যশোরের কাশিপুর নামক স্থানে।
সূত্র : উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া
বীরশ্রেষ্ঠ; রচনা: চন্দন চৌধুরী।
লেখক : এহসান হাবীব