ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকার ৩০নং বিল্ডিংয়ের বাসায় সেদিন পরিবার-পরিজনের সঙ্গে আনোয়ার পাশাও ছিলেন। তাঁর পরনে তখন ছিল লুঙ্গি ও হাওয়াই শার্ট, গায়ে চাদর। অনেক রক্তের দাগ পেরিয়ে ইতিহাসের পাতায় একটি নতুন সূর্য উঁকি দেবে দেবে করছিল। অরুণাভা ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। আর মাত্র দুটি দিনের ব্যবধান। এরপরই আসবে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেই প্রহর। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের সেই দিনে সবার মতো আনোয়ার পাশাও সেই প্রহরটির জন্য অপেক্ষা করছেন অধীর আগ্রহে। অথচ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী, ধর্মান্ধ দালাল, আলবদরের সদস্যরা তখনও হত্যাযজ্ঞে মেতে ছিল মাঠে। একসময় এরা ঢুকে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায়। সকাল ৯টার দিকে লাল রঙের একটি গাড়ি আনোয়ার পাশার বাসার সামনে এসে থামে। আর সেই গাড়ি থেকে অস্ত্রসহ নেমে আসে আলবদর বাহিনীর কয়েকজন সদস্য। এরপর তারা বাসায় ঢুকে প্রথমেই তাঁর গায়ের চাদরটি দিয়েই তাঁর চোখ বেঁধে ফেলে; পরে তাঁকে ধরে নিয়ে চলে যায় মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের দিকে। সেখানেই আরও অনেক প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে নির্মমভাবে আনোয়ার পাশার জীবনপ্রদীপও দেয়া হয় নিভিয়ে। এর ৪৮ ঘন্টা পর, সূর্যটা দেখা দিল ঠিকই এবং এরপর আলো-বাতাস ও বৃক্ষ-ফল শোভিত এই সুন্দর পৃথিবীতে মানুষ করতে লাগল বেঁচে থাকার অনন্ত আয়োজন। কিন্তু সেই সূর্যের আলোয় এই পৃথিবীর রূপ আর চোখে দেখা হলো না তাঁর।
জন্মেছিলেন ছায়া সুনিবিড় শান্ত সৌম্য প্রকৃতি ঘেরা এক গ্রামীণ পরিবেশে। গ্রামের নাম ডাবকাই। ইউনিয়ন রাঙ্গামাটি চাঁদপাড়া। মহকুমা বহরমপুর। জেলা মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ। মহকুমা শহর বহরমপুর থেকে ডাবকাই খুব দূরে নয়। কিন্তু সংস্কৃতির সামান্যতম চিহ্নও গ্রামটিতে পড়েনি। এরকমই এক অজপাড়াগাঁয়ে ১৯২৮ সালের ১৫ এপ্রিল (২ বৈশাখ ১৩৩৫) জন্ম নেন আনোয়ার পাশা। শৈশবের নির্মল উচ্ছ্বাসে যাপিত দিনগুলো গ্রামেই কেটেছে তাঁর।
তাঁর পিতা হাজী মকরম আলী আর মা সাবেরা খাতুন। আনোয়ার পাশার পূর্বপুরুষ গুলাব খাঁ ছিলেন বর্ধমানের কোনো এক স্থানীয় নবাব-দরবারের প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তি। আনোয়ার পাশার পিতা হাজী মকরম আলী দেশভাগের আগে দীর্ঘদিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইউনিয়ন বোর্ডের এবং চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছিলেন ফজলুল হক প্রবর্তিত ঋণ-সালিশি বোর্ডের। নির্বাচনে তিনি কখনও পরাজিত হননি। তিনি ছিলেন সম্পন্ন গৃহস্থ। হজ্ব করেছিলেন। রাজনীতি করতেন মুসলিম লীগের। তাঁর প্রধান অস্ত্র ছিল প্রখর ন্যায়বোধ এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা। আনোয়ার পাশার বাবা উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন না। তিনি খুবই ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন। তাঁর বাবা হাজী মকরম আলী বিয়ে করেছিলেন দুটো। আনোয়ার পাশার ছিল দুই ভাই, আলাউদ্দীন ও আবদুর রকীব।
মাদ্রাসা শিক্ষার মাধ্যমে পাশার শিক্ষাজীবনের শুরু হয়। ১৯৩৯ সালে ভর্তি হন ভাবতা আজিজিয়া উচ্চ মাদ্রাসায়। ১৯৪৬ সালে হাই মাদ্রাসা পরীক্ষা দিয়ে পেয়েছিলেন প্রথম বিভাগ। কিন্তু মাদ্রাসা লাইনে পড়া ছিল তাঁর প্রকৃতিবিরুদ্ধ। তাই এরপর ১৯৪৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ভর্তি হন বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে। তিনি যখন মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন তখন ছাত্রাবাসে থাকতেন। কলেজে এসেও তিনি থাকতেন কলেজ ছাত্রাবাসে। ১৯৪৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ মাধ্যমিক অব আর্টস এর পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ১৯৪৮-এ দেশ-ভাগের পর তিনি চলে আসেন পূর্ব পাকিস্তানের রাজশাহী কলেজে, স্নাতক পড়তে। তিনি ছাত্র হিসেবে বরাবরই ছিলেন প্রথম সারির। আনোয়ার পাশা সম্পর্কে প্রশংসাপত্রে কেন্দ্রীয় বাঙলা উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক উল্লেখ করেছেন : “ He was one of the bright students of my class…. He as a student made a very favourable impression on me. (27.6.1966)।”
রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯৫১ সালে স্নাতক পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাস করে আবার চলে যান ভারতে। এবার স্নাতকোত্তর ভর্তি হন বাংলায়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেসময় বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ ডক্টর শশিভূষণ দাশগুপ্ত; ডক্টর সুকুমার সেন, অধ্যাপক প্রমথনাথ বিশী প্রমুখ ছিলেন তাঁর শিক্ষক। আনোয়ার পাশার সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন সত্যপ্রিয় ঘোষ (কবি শঙ্খ ঘোষ), ডক্টর ক্ষেত্র গুপ্ত, ডক্টর অশ্রুকুমার সিকদার প্রমুখ। কলকাতাতে এসে তিনি থাকতেন কারমাইকেল ছাত্রাবাসে। তাঁর ‘নীড়-সন্ধানী’ উপন্যাসটি উত্সর্গ করেছিলেন কারমাইকেল ছাত্রাবাসের বন্ধুদেরকে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৫৩ সালে দ্বিতীয় বিভাগে স্নাতকোত্তর পাস করেন তিনি। তাঁর জন্মস্থান ডাবকাই গ্রামের তিনিই প্রথম স্নাতকোত্তর পাস ব্যক্তি ছিলেন।
১৯৫৩ সালের ১ এপ্রিল তিনি বিয়ে করেন নদীয়ার পালিত বেখিয়া গ্রামের হেকমত আলী মণ্ডলের কন্যা মসিনা খাতুনকে। তাঁদের দুই পুত্র- মাসারুল আফতাব ও রবিউল আফতাব। বিয়ের আট মাস পর থেকেই চাকরি জীবনের শুরু হয় আনোয়ার পাশার। তাঁর আঠারো বছরের কর্মজীবনকে দু’ভাগে ভাগ করা চলে। প্রথমত- ভারতে অবস্থানকালীন, দ্বিতীয়ত- পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে। ভারতে অবস্থানকালে ১৯৫৩ সালের ৮ ডিসেম্বর মানিকচক হাই মাদ্রাসায় প্রথমে যোগ দেন। সোয়া তিন মাস পরে ১৯৫৪ সালের ১৫ মার্চ ভাবতা হাই মাদ্রাসায় এবং এখানে প্রায় তিন বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে ১৯৫৭-র ১ ফেব্রুয়ারি যোগ দেন সাদিখান দিয়ার বহুমুখী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এখানে ছিলেন এক বছর। শুরু থেকেই তিনি চেয়েছিলেন কলেজে অধ্যাপনাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে, কিন্তু ভারতে অবস্থানকালে নানা কারণে তা আর হয়ে উঠেনি।
১৯৫৮ সালে তিনি চলে আসেন তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানে। এখানে এসে ওই বছরের ২ মার্চ প্রথমে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে বাংলার প্রভাষক হিসেবে চাকরি শুরু করেন। পরে এই কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন ও জন্মভূমি ত্যাগ করে এডওয়ার্ড কলেজে চাকরি গ্রহণ সম্পর্কে তিনি ডাবকাইতে ১৯৬০-এর ৯ জুন ডায়েরিতে লিখেছেন: “বাপ-মা যে আমার উপর খুশী নয়, এটা আমার প্রাণে খুবই বাজছে। এদেশের কোনো কলেজে চাকরী পেলে তাঁদের খুশী করতে পারতাম। ওখানে (পাবনা) চাকরীটা ভাল, পরিবেশটা ভাল নয়… আমার ন্যূনতম দাবী, যে-কোন কলেজের একটি চাকরী, এখানে মেটান অসম্ভব। এরা বিশ্বাসই করতে পারছে না যে, কোন মুসলমান কলেজে বাংলা পড়াতে সক্ষম। দরখাস্ত করে কোন কলেজ থেকে এপর্যন্ত Interview Call পাইনি।…”
পাবনার কর্মজীবনেও আনোয়ার পাশা খুব স্বস্তি পাননি। এ সম্পর্কে ১৯৬০-এর ২৬ আগস্ট ডায়েরিতে লিখেন : “ভারতের মাটিতে আমার পরিচয় মুসলমান বলে আর পাকিস্তানে আমি ঘৃণিত ও অবহেলিত হচ্ছি মুসলমান নই বলে।… যে পরিবেশে এখানে আছি তাতে কেবল মর্যাদা নিয়ে গৌরব করার কিছু নেই। অধ্যাপকরা এদেশে যেন অভিশপ্ত জীব।… সাংস্কৃতিক মান এখানকার অত্যন্ত নিম্নস্তরের, এক কথায় দৈনন্দিন জীবন এখানে আদৌ সুখকর নয়। তার উপরে আছে যথেষ্ট পরিমাণে মুসলমান না-হতে-পারার লাঞ্ছনা।”
পাবনায় লেখালেখির পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক-সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছিলেন আনোয়ার পাশা। পূর্ব পাকিস্তানে তাঁর লেখা প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৬১ সালে, রাজশাহী থেকে প্রকাশিত জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ও মুস্তাফা নূরুল ইসলাম সম্পাদিত ত্রৈমাসিক ‘পূর্বমেঘ’ পত্রিকায়। ওই সময়ই পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তিনি। এছাড়াও পাবনা অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির ও মহাকালী বালিকা বিদ্যালয়ের সভায় সভাপতিত্ব করেন আনোয়ার পাশা। তাঁর ডায়েরি থেকে জানা যায়, স্থানীয় মজুমদার একাডেমীর শিক্ষক বিজয় বাবুর বাড়িতে এক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তিনি। রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠান আয়োজনে উদ্যোগী হওয়ার ‘অপরাধে’ পূর্ব পাকিস্তান সরকারের স্বরাষ্ট্র বিভাগের নির্দেশে তাঁর পাসপোর্ট ছয় বছরের জন্য স্থগিত রাখা হয়। পাবনায় কর্মরত অবস্থায় ‘রবীন্দ্র ছোটগল্প সমীক্ষা’র পরিকল্পনা ও রচনা করেন। এডওয়ার্ড কলেজের বাংলা বিভাগে অনার্স কোর্স প্রবর্তনের পর বিস্তৃত হয় তাঁর অধ্যয়ন ও অধ্যাপনার ক্ষেত্র। তিনি ছিলেন কলেজ বার্ষিকীর ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক। ওই কলেজে ‘হাজার বছরের বাংলা সাহিত্য’ সম্পর্কে একটি অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন তিনি। এছাড়াও পরিচালনা করতেন ‘পাবনা সাহিত্য পরিষদ’ ও ‘সাহিত্য মজলিশ’ নামে দুটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান।
১৯৬৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ইমিগ্রেশন সার্টিফিকেট নিয়ে তিনি চিরতরে ভারত ত্যাগ করে ১২ এপ্রিল গ্রহণ করেন পাকিস্তানের নাগরিকত্ব। কবি শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ভারত ছেড়ে চলে আসার সময় তাঁর সঙ্গে দেখা হলে আনোয়ার পাশা বলেছিলেন, ‘শঙ্খ, তুমি থাক আমার দেশে, আমি চলে গেলাম তোমার দেশে।’ (শঙ্খ ঘোষের জন্ম বরিশালের বানারীপাড়ায়, ৪৭-এ দেশভাগের পর থেকে অবস্থান ভারতের কলকাতায়)।
এডওয়ার্ড কলেজে অধ্যাপনাকালেই ১৯৬৬-র ২২ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার প্রভাষক পদে নিয়োগের আবেদন করেন তিনি। ১ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালের ২৩ জুন আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থায়ী প্রভাষক হন। এ সময় অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ছিলেন বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ। একবছরের মাথায়, ১৯৭০ সালের ১৪ জুলাই তিনি উন্নীত হন সিনিয়র প্রভাষক পদে। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এখানেই ছিলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকালে আনোয়ার পাশা ছাত্রছাত্রীদের অশেষ শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন। তিনি তাঁর শ্রম ও নিষ্ঠা দিয়ে ছাত্রছাত্রীদেরকে সাহিত্যানুরাগী করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি সংস্কৃতি-সংসদ ও ছাত্র ইউনিয়নের কর্মকাণ্ডে আগ্রহ প্রকাশ করতেন, লিখেছেনও সংস্কৃতি-সংসদের সংকলনে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং তাদেরকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করতেন।
পাশার সাহিত্যজীবনের শুরু ছাত্রাবস্থাতেই। ১৯৬৫ সালের ৯ জুলাই পাবনায় লেখা ডায়েরিতে লেখেন : “কবিতা আমার জীবনের প্রথম প্রিয়া- আমি যার প্রেমে পড়েছিলাম। ছেলেবেলায় ইস্কুলে যেতে রাস্তা বড়ো নির্জন এবং দু’পাশে ঘন জঙ্গলে পূর্ণ থাকত। অনেকদিনই ঐ পথে একা ইস্কুলে গেছি এবং যেদিনই একা যেতাম জোরে জোরে আবৃত্তি করতাম। এখনো সেসব দু-একটি মনে আছে- ‘পাহাড়ের পরে পাথরের ঘরে/ আমার জন্মস্থান’, ঐ কবিতা এখন পেলে হয়ত পড়তেই ইচ্ছে করবে না। কিন্তু সেদিন কী ভালোই যে লাগত। ক্লাসের নতুন বই কেনা হলে দেখা যেত, মাস খানেক না যেতেই বাংলা পাঠ্য বইয়ের সবক’টি কবিতা কন্ঠস্থ হয়ে গেছে। ইচ্ছে করে করেছি তা নয়, ব্যাপারটা কেমন যেন আপনা থেকেই হয়ে যেত। কত চরণ তার মনের মধ্যে এখনো জ্বলজ্বল করছে।” কলেজে পড়ার সময়ই কবিতা ও গল্প লিখতেন। মুদ্রিত রচনার মধ্যে ‘দীপগুলি’ শিরোনামে ১৯৫৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ‘একতা’ পত্রিকায় যে-কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল, সেটিই তাঁর প্রথম লেখা বলে ধরে নেয়া যায়।
প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত প্রথমে ‘আনোয়ার’, পরে ‘মুহম্মদ আনোয়ার’ নামেই লেখা প্রকাশ করেছেন আনোয়ার পাশা। ১৯৬৩ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নদী নিঃশেষিত হলে’ প্রকাশের পূর্বে সহপাঠী-বন্ধু কবি শঙ্খ ঘোষ ও অন্যান্য বামপন্থী বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর ‘আনোয়ার পাশা’ নামেই বই প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। যদিও ‘পাশা’ নামটি তাঁর পছন্দের ছিল না। কিন্তু সত্মায়ের দিক থেকে তাঁর এক খালু ছিলেন ইংরেজি-জানা লোক। তাঁর এই কিম্ভূত নামটা অর্থাত্ নামের ‘পাশা’ অংশটুকু তাঁর সেই খালুজির। তাঁর খালুজির সেই পাশা নামটি আনোয়ারের শেষে যুক্ত হয়েছে। তিনি একাধিকবার চেষ্টা করেছেন তাঁর নাম থেকে ‘পাশা’ বর্জন করতে। প্রথম হাই মাদ্রাসা ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণ করার সময় ‘পাশা’ বাদ দিতে চেয়েছিলেন তিনি। শিক্ষকরা তাতে বাধা দিয়েছিলেন। তাই পরীক্ষা পাশের সার্টিফিকেটগুলোতে ‘পাশা’-লিপ্ত হয়ে আছে। সাহিত্যক্ষেত্রে ‘পাশা’ বিহীন থাকার চেষ্টা করেছেন তিনি। সেজন্য ছাত্র অবস্থায় শুধু ‘আনোয়ার’ নামে লেখা পাঠাতেন। তাঁর নামের ‘আনোয়ার’ শব্দটি তাঁর খুব প্রিয়। ‘বাঙলা ও বাঙালী’ নামে একটি পত্রিকায় একটি গল্প প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে লেখক ছিলেন শুধু আনোয়ার, পাশা বাদ। বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা’-য় কবিতা পাঠালে তা মনোনীত হয়, কিন্তু শুধু আনোয়ার নামে তিনি আপত্তি করেন। তাঁর ঠিকানার স্থানে ‘আনোয়ার পাশা’ ছিল, সেখান থেকে ‘পাশা’ সংগ্রহ করে তিনি ঐ নামে কবিতাটি প্রকাশ করেন। … পাশার হাত থেকে রেহাই পাবার শেষ চেষ্টা করেছিলেন ভারত ছেড়ে আসার পর। ভারত ছেড়ে পাকিস্তানের পাবনা কলেজে চাকরি নিয়ে মনে মনে বলেছিলেন, ‘পাশা তোমার সঙ্গে এই শেষ; ভারত ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তোমাকেও ছাড়লাম।’ এবং সত্যি সত্যিই তিনি লিখতেও শুরু করলেন পাশা বর্জিত করে। তবে এবার শুধু ‘আনোয়ার’ নামে শুরু করলেন না। শুরু করলেন ‘মুহম্মদ আনোয়ার’ নামে। ‘মুহম্মদ আনোয়ার’ নামে একাধিক লেখা পাবনা কলেজ ম্যাগাজিনে এবং রাজশাহী থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক ‘পূর্বমেঘ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তাঁর এ নামও শেষপর্যন্ত টিকেনি। কারণ তাঁর বিদগ্ধ বামপন্থী বন্ধুরা কেউ ‘মুহম্মদ আনোয়ার’ নাম পছন্দ করলেন না। তাঁদের মতে ‘আনোয়ার পাশা’ অনেক ভাল। ইতিমধ্যে ১৯৬৩ সাল এসে গেছে, তাঁর দু’খানি বইয়ের ছাপার কাজ শুরু হয়েছে। এই বই বেরুবে কী নামে? তাঁর প্রথম বই বের হয় কলকাতা থেকে- ‘নদী নিঃশেষিত হলে’। বন্ধু শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে এই বইয়ের কবিতা নির্বাচন প্রসঙ্গে আলোচনার সময় তিনি জানতে পারেন, ‘আনোয়ার পাশা’ নামটিই তাঁরা বেশি পছন্দ করেন, ‘মুহম্মদ আনোয়ার’ নয়। তাঁর প্রকাশকও ‘আনোয়ার পাশা’ নামটির ব্যবসায়গত সুবিধা লক্ষ্য করলেন। … প্রকাশিত হলো আনোয়ার পাশার ‘নদী নিঃশেষিত হলে’ গ্রন্থ। ঢাকায় এ সময় ‘রবীন্দ্র ছোটগল্প সমীক্ষা’-র ছাপার কাজ চলছিল। কয়েক মাস পর সেই বইটি প্রকাশিত হলে সেখানেও লেখক হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করলেন ‘আনোয়ার পাশা’, অগত্যা ‘মুহম্মদ আনোয়ার’ চিরতরে জনতার ভিড়ে হারিয়ে গেলেন। … আনোয়ারের সঙ্গে পাশার যোগটা স্থায়ী হয়ে গেল।’
কাব্যগ্রন্থ ‘নদী নিঃশেষিত হলে’, ‘আনোয়ার পাশা’ নামে তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই। এর আগে ‘ইসলামের ইতিহাস’ শিরোনামে একটি মাদ্রাসাপাঠ্য বই বের হয়েছিল, ‘মুহম্মদ আনোয়ার’ নামে। পশ্চিমবঙ্গে মাদ্রাসায় শিক্ষকতাকালে সম্ভবত এটি লিখেছিলেন। প্রকাশকাল জানা যায়নি, আনুমানিক ১৯৫৫-৫৬ সাল হতে পারে। দ্বিতীয় কাব্যসংগ্রহ ‘সমুদ্র শঙ্খলতা উজ্জয়িনী ও অন্যান্য কবিতা’-র প্রেসকপি তৈরি করেছিলেন, কিন্তু জীবদ্দশায় বইটি প্রকাশ পায়নি, তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৭৪ সালে এটি প্রকাশিত হয়। ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর ‘রবীন্দ্র ছোটগল্প সমীক্ষা (প্রথম খণ্ড)’। রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষে ১৯৬১ সালে (বাং ১৩৬৮) পুরো এক বছরে এই বইয়ের প্রথম খণ্ড রচনা করেন তিনি। এতে গল্পগুচ্ছের প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ডের গল্পগুলোর আলোচনা ছাড়াও দেশ-কাল এবং প্রকৃতি সম্পর্কেও আলোচনা করেছেন তিনি। এ বইয়ের সংশোধিত ও সংযোজিত দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। ‘রবীন্দ্র ছোটগল্প সমীক্ষা (দ্বিতীয় খণ্ড)’ প্রথম প্রকাশ পায় তাঁর মৃত্যুর পরে, ১৯৭৮ সালে। ১৯৬৭ সালে তাঁর তৃতীয় গ্রন্থ ‘সাহিত্যশিল্পী আবুল ফজল’ প্রকাশ পায়।
তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘নীড়-সন্ধানী’ পাবনায় অবস্থানকালে লেখা। ১৯৬৫-৬৬ সালে এটি মাসিক ‘পূবালী’ (ঢাকা) পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। গ্রন্থাকারে প্রকাশ পায় ১৯৬৮ সালে। দ্বিতীয় উপন্যাস ‘নিষুতি রাতের গাঁথা’ প্রকাশ পায় ১৯৬৮ সালে। এই বইটি ‘নীড়-সন্ধানী’-র পরিপূরক খণ্ড। ‘নীড়-সন্ধানী’-র মতোই এ বইটিও আত্মজীবনীমূলক এবং পশ্চিম পাকিস্তান থেকে একজনের দেশত্যাগ করে পূর্ব পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়ার গল্প অবলম্বনে রচিত। তৃতীয় উপন্যাস ‘রাইফেল রোটি আওরাত’ প্রকাশ পায়, তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৭৩ সালের মে মাসে। বাঙালীদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানীদের মনোভাব ও আচরণ এবং অসহায় বাঙালীদের ওপর দখলদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যা এই রচনার বিষয়। পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিষয়ে তাঁর মনোভাবও এই রচনায় অকপটে প্রকাশ পেয়েছে। একাত্তরের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় বসে লেখা উপন্যাস এটি। চারপাশে তখন চলছে যুদ্ধ- কেবলি গুলির শব্দ, বারুদের গন্ধ, আর মৃত্যু- এই রকম একটি পরিস্থিতিতে বসে বাস্তব ঘটনাকে উপজীব্য করে উপন্যাস লিখেছেন তিনি। যদিও উপন্যাসটিতে ছোটখাটো কিছু ত্রুটি থেকে গেছে। তবু এই উপন্যাসে প্রকাশিত তাঁর অভিজ্ঞতার বিবরণ, বলা যায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি ঐতিহাসিক দলিল। তাঁর একমাত্র গল্পগ্রন্থ ‘নিরুপায় হরিণী’ ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয়। তাঁর একটি অসমাপ্ত উপন্যাসের নাম ‘নেতিগর্ভ/হিমগৃহ’ বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। এর বাইরে বেশকিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধও রচনা করেছেন তিনি। এছাড়া মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের সঙ্গে যুগ্ম-সম্পাদনায় ১৯৬৮ সালে প্রকাশ করেন ‘চর্যাগীতিকা’, ১৯৬৭ সালে ‘বড়ু চণ্ডীদাসের কাব্য’ (শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের কিছু অংশ) প্রকাশ পায়। ‘কালকেতু উপাখ্যান’ (মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর চণ্ডীমঙ্গলের অংশবিশেষ) ও ‘মানসিংহ-ভবানন্দ উপাখ্যান’ (ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের অন্নদামঙ্গলের অংশবিশেষ) প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালে এবং ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত হয় ‘ঈশ্বরগুপ্তের কবিতা-সংগ্রহ’। ‘আনোয়ার পাশা রচনাবলী (৩ খণ্ড)’ বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয়েছে যথাক্রমে ডিসেম্বর ১৯৮১, জুন ১৯৮৩ ও মে ১৯৮৭ সালে। তিন খণ্ডেরই সম্পাদনা করেছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
আনোয়ার পাশার গল্প-উপন্যাসের চরিত্রেরা যেমন বেঁচে থাকার পক্ষে দৃঢ় প্রত্যয়ী, তেমনি জীবনের প্রতি তাঁরও ছিল অগাধ প্রেম ও আকুতি। ছোটবেলা থেকেই নানাবিধ চড়াই-উত্রাই পার হয়ে একটি সুস্থ-সুন্দর-প্রগতিশীল জীবনের সন্ধান পেতে চেয়েছিলেন তিনি। যে কারণে শিক্ষাজীবনে হাই মাদ্রাসা পর্যন্ত পড়াশুনা করেও মাদ্রাসা ছেড়ে কলেজে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে পড়াশুনা করেছেন। জন্মভূমি ছেড়ে আত্মীয়-পরিজন ছেড়ে হয়েছেন পরবাসী, করেছেন কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, করেছেন শিল্পসাহিত্য ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা। অথচ নিজের জন্মভূমি ছেড়ে চিরতরে চলে এসেছেন যে দেশে, যে দেশকে নিয়ে নিরন্তর স্বপ্ন দেখেছেন, সেই দেশের মানুষরূপী কিছু হায়েনা তাঁর জীবন কেড়ে নিল স্বাধীনতার সূর্য উদিত হবার মাত্র দু’দিন আগে! তবু আনোয়ার পাশা বেঁচে আছেন তাঁর সাহিত্যে, তাঁর চিন্তার বিস্তারণে, তাঁর শুভার্থীদের হৃদয়ে।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি :
জন্ম : ১৫ এপ্রিল, ১৯২৮ (২ বৈশাখ ১৩৩৫)। গ্রাম ডাবকাই। ইউনিয়ন রাঙ্গামাটি চাঁদপাড়া। মহকুমা বহরমপুর। জেলা মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন আনোয়ার পাশা।
পরিবার-পরিজন :
বাবা হাজী মকরম আলী, মা সাবেরা খাতুন। দুই ভাই আলাউদ্দীন ও আবদুর রকীব। ১৯৫৩ সালের ১ এপ্রিল বিয়ে করেন, নদীয়ার পালিত বেখিয়া গ্রামের হেকমত আলী মণ্ডলের কন্যা মসিনা খাতুনকে। তাঁদের দুই পুত্র সন্তান মাসারুল আফতাব ও রবিউল আফতাব।
পড়াশুনা :
মাদ্রাসায় শিক্ষাজীবনের শুরু। ১৯৩৯ সালে ভর্তি হন ভাবতা আজিজিয়া উচ্চ মাদ্রাসায়। ১৯৪৬-এ হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ পান। এরপর বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ১৯৪৮ সালে আইএ পাস করেন, দ্বিতীয় বিভাগে। দেশ ভাগের পর, চলে আসেন পূর্ব পাকিস্তানের রাজশাহী কলেজে, বি.এ. পড়তে। ১৯৫১ সালে দ্বিতীয় বিভাগে বি.এ. পাস করে আবার চলে যান, ভারতে। এবার বাংলায় এম.এ. ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৫৩ সালে এম.এ. পাস করেন, দ্বিতীয় বিভাগে।
গ্রন্থ :
কাব্যগ্রন্থ ‘নদী নিঃশেষিত হলে’ (১৯৬৩), ‘সমুদ্র শঙ্খলতা উজ্জয়িনী ও অন্যান্য কবিতা’ (১৯৭৪)। উপন্যাস’নীড়-সন্ধানী’ (১৩৭৫), ‘নিষুতি রাতের গাথা’ (১৩৭৫) ও ‘রাইফেল রোটি আওরাত’ (১৩৮০)। গল্পগ্রন্থ ‘নিরুপায় হরিণী’ (১৩৭৭)। প্রবন্ধগ্রন্থ ‘রবীন্দ্র ছোটগল্প সমীক্ষা (প্রথম খণ্ড)’ (১৩৭০), ‘রবীন্দ্র ছোটগল্প সমীক্ষা (দ্বিতীয় খণ্ড)’ (১৩৮৫),’সাহিত্যশিল্পী আবুল ফজল’ (১৩৭৪)।
এছাড়াও মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের সঙ্গে যুগ্ম-সম্পাদনা ‘চর্যাগীতিকা’ (১৩৭৫), ‘বড়ু চণ্ডীদাসের কাব্য’ (১৩৭৪), ‘কালকেতু উপাখ্যান’ (১৯৬৭), ‘মানসিংহ-ভবানন্দ উপাখ্যান’ (১৯৬৭) এবং ‘ঈশ্বরগুপ্তের কবিতা-সংগ্রহ’ (১৩৭৬)। ‘আনোয়ার পাশা রচনাবলী (৩ খণ্ড)’ বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয়েছে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সম্পাদনায়।
কর্মজীবন :
১৯৫৩ সালের ৮ ডিসেম্বর, মানিকচক হাই মাদ্রাসায় চাকরি শুরু করেন; ১৯৫৪-র ১৫ মার্চ ভাবতা হাই মাদ্রাসায় এবং ১৯৫৭-র ১ ফেব্রুয়ারি যোগ দেন সাদিখান দিয়ার বহুমুখী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৫৮ সালের ২ মার্চ পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে যোগ দেন বাংলার প্রভাষক হিসেবে। পরে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৬৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ভারত ত্যাগ করে ১২ এপ্রিল গ্রহণ করেন পাকিস্তানের নাগরিকত্ব। ১৯৬৬ সালের ১ নভেম্বর যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, বাংলা বিভাগে। ১৯৭০ সালে উন্নীত হন সিনিয়র প্রভাষক পদে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এখানেই ছিলেন।
পুরস্কার :
উপন্যাসে অবদানের জন্য ১৯৭২ সালে (মরণোত্তর) বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন।
মৃত্যু :
১৯৭১-এর ১৪ ডিসেম্বর, আল বদর বাহিনীর হাতে শহীদ হন।
(তথ্যসহযোগিতা নেয়া হয়েছে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সম্পাদিত’আনোয়ার পাশা রচনাবলী’, ভূঁইয়া ইকবাল রচিত ‘আনোয়ার পাশার ‘জীবনী গ্রন্থমালা’, ড. ওয়াকিল আহমদের রচিত ‘আনোয়ার পাশার জীবনকথা’, রশীদ হায়দার সম্পাদিত ‘স্মৃতি ৭১, রাইফেল রোটি আওরাতে’ আবুল ফজল লিখিত ‘ভূমিকা’ ও আনোয়ার পাশার সহপাঠী-বন্ধু কবি শঙ্খ ঘোষের কাছ থেকে)।
লেখক : সফেদ ফরাজী