২৮ মার্চ ১৯৭১। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ব্লাড প্রেশারের মাত্রা ভয়ানকরকম বেড়ে গেল। একটু পর পর ঠান্ডা জল দিয়ে মাথা ধুয়ে আসছিলেন, না হয় ভেজা কাপড় মাথায় দিয়ে রাখছিলেন। এক সময় তিনি পুত্রবধূ, ছোট ছেলে দীলিপ দত্ত ও নাতনি আরমা দত্তকে ডেকে বললেন, ‘সময় খুবই কম। তোমাদের কিছু কথা বলা দরকার। আমার বেঁচে থাকার খুবই প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের জন্য, কিন্তু মনে হচ্ছে তা আর সম্ভব হচ্ছে না। আমার বন্ধু কন্যার (ইন্দিরা গান্ধী) সাথে এই মুহূর্তে দেখা হওয়াটা খুবই প্রয়োজন ছিল- কিন্তু এখন যদি আমি এখান থেকে চলে যাই তাহলে মিলিটারিরা আমাকে খুঁজে না পেলে আশপাশের সব লোককে মেরে ফেলবে, আগুন দিয়ে সব জ্বালিয়ে দেবে। আমাকে না পেলে নিরপরাধ মানুষগুলির প্রাণ যাবে। সেটা তো হতে পারে না। আই অ্যাম ট্রাপড।’ সেদিন তিনি আরো বলেছিলেন, ‘আমাকে নিতে এসে মিলিটারিরা দুটো জিনিস করতে পারে, তারা আমাকে ক্যান্টনমেন্টে ধরে নিয়ে গিয়ে আমাকে দিয়ে বিবৃতি দেয়ানোর চেষ্টা করাতে পারে- আর তাই যদি করে তাহলে তাদের আমি একটা কথাই বলবো-To stop kill these unarmed people, তখন তারা আমার ওপর অত্যাচার করবে এবং মেরে ফেলবে ওখানেই। আরেকটা ব্যাপার হতে পারে- মিলিটারিরা আমাকে এখানেই গুলি করে মারতে পারে।’
সেদিন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উপস্থিত পরিবারের সবাইকে বলেছিলেন, ‘আমার অনুরোধ, তোমরা আমার মৃতদেহ বারান্দায় ফেলে রেখো যাতে সবাই আমার মৃতদেহ দেখে মনে সাহস পায়, বিদ্রোহ করবার জন্য।’ সাথে এটাও বললেন, ‘দেখো, ওরা আমাকে দুদিনের মধ্যে এসে নিয়ে যাবে।’ নাতনি আরমাকে কাছে নিয়ে বললেন, ‘পৃথিবীতে আর কেউ আমার জন্য কাঁদলেও তুই কাঁদবি না, তুই কাঁদলে আমি অনেক কষ্ট পাবো।’
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সমূহ পরিণতিটা যেন সে সময় দেখতে পাচ্ছিলেন। আর তাঁর সেই দেখাই শেষপর্যন্ত সত্যি হয়েছিল। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীরা তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল এবং নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এই বাংলার মাটিতে তাঁর রক্ত, হাড়-মাংস একাকার করে দিয়ে চিরতরে মিলিয়ে গেছেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত চিরদিনের জন্য মিলিয়ে গেলেও এই বাংলার মাটিকে স্বাধীন করতে, নিজের সংস্কৃতি, ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করতে জীবন দিয়ে তিনি যা প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন বাঙালী জাতি সে ঋণ কোনোদিনও শোধ করতে পারবে না এবং তা কোনোদিনও শোধ করার নয়।
২৮ মার্চ দুপুর দুইটায় কারফিউ কিছুক্ষণের জন্য তুলে নেয়া হয়। আর তখনি আশপাশের লোকজন আসতে শুরু করল ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের কাছে। পরিস্থিতি জানার জন্য, বোঝার জন্য, দেখার জন্য।
সবাই যেন বুঝতে পারছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে আর তারা পাচ্ছেন না। যারা তখন ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে দেখতে এসেছিলেন, পরামর্শ কিংবা পরিস্থিতি জানতে এসেছিলেন তাদের উদ্দেশে তিনি সে সময় বলেছিলেন, ‘বাঁচাটাও যেমন সত্যি, মৃত্যুও ঠিক তেমনি সত্যি- তোমরা ভয় পাবে না, শুধু মনে সাহস নিয়ে এগিয়ে যাও- বাংলাদেশ দেখবে।’ ওই দিন বিকেল ৪টায় আবার কারফিউ শুরু হয়েছিল। আবার কুমিল্লায় নেমে এলো আগের সেই অসহ্য নীরবতা। সন্ধ্যার দিকে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের রক্তের চাপ আবার বেড়ে যাওয়ায় কয়েকবার ঠাণ্ডা জল দিয়ে মাথা ধুলেন। তারপর একটু শান্ত হওয়ার পর কোয়েকার ওটস খেলেন। এরপর নাতনিকে ডেকে গীতা আনতে গেলেন এবং গীতার একটা স্তবক কয়েকবার পড়ে শোনালেন, ‘দেশের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন দিলে সে মরে না, সে শহীদ হয় এবং সে অবিনশ্বর।’ সবাই অবাক হয়ে তাঁর গীতা পাঠ শুনছিলেন। সবার মধ্যে একটা চাপা ভয় সেদিন চলে এসেছিল। গীতা পাঠ শেষে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সবার উদ্দেশে আবার বললেন, ‘ওরা আজ রাতে আমাকে নিতে আসবে, যা বলেছি তাই করার চেষ্টা করবে তোমরা কিন্তু কেউ কাঁদবে না।’ সে রাতে এসব কথা বলেই ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত শুয়ে পড়লেন। ছোট ছেলে দীলিপ দত্তও ওই ঘরেই থাকতেন। আরেক ঘরে শুয়েছিলেন আরমা দত্ত, তাঁর মা ও ছোট ভাই রাহুল। কারো চোখেই ঘুম নেই সে রাতে।
ভয়ংকর নিস্তব্ধ এক রাত ছিল সেটা। চারদিকে পিনপতন নীরবতা। রাত দেড়টার দিকে হঠাত্ বিকট আওয়াজ হতে লাগল সদর দরোজায়। তখন কারো বুঝতে বাকি রইল না কারা এসেছে। দীলিপ দত্ত ওঘর থেকে ছুটে এসে বৌদিকে বললেন, ‘মিলিটারি এসেছে, কী করব?’ প্রতীতি দেবী বললেন, ‘দরোজা খুলে দাও।’ চার- পাঁচজন মিলিটারি অস্ত্র হাতে ঘরে ঢুকে ভাংচুর করতে লাগল, সবাই ভয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মিলিটারিরা এক এক করে ঘরের সব কক্ষেই তল্লাশি করছে। কিছুক্ষণ পর মিলিটারিরা ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে সাথে করে বেরিয়ে গেল। আরমা ওদের পেছন পেছন সদর দরজার বাইরে পর্যন্ত গিয়েছিলেন। দেখলেন মিলিটারিরা তাঁর দাদুকে নিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। মা প্রতীতি দেবী মেয়েকে ফিরিয়ে আনলেন। কিন্তু ঘরে ঢুকে আরমা তাঁর কাকুকেও আর খুঁজে পেলেন না। বুঝলেন হায়েনারা তাঁর কাকুকেও ধরে নিয়ে গেছে। পরের দিন আরমা দত্ত অনেক জায়গায় খোঁজ করেছিলেন দাদু-কাকুর। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি তাঁদের। এরপর তাঁরা আর কোনোদিন ফিরে আসেননি। পরে জানা যায় কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও তাঁর ছেলে দীলিপ দত্তকে অকথ্য নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছিল।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের তিন মাইল উত্তরে রামরাইল গ্রামে। শৈশবেই মাতৃহারা হন তিনি। মুনসেফ কোর্টের সেরেস্তাদার জগবন্ধু দত্ত ছিলেন তাঁর বাবা। ১৯০৪ সালে নবীনগর উচ্চবিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ১৯০৬ সালে তিনি কুমিল্লা কলেজ হতে কৃতিত্ত্বের সাথে এফ.এ. পরীক্ষায় পাস করেন। এরপর কলকাতায় যান। সেখানেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা হয়। এরপর বি.এ. পড়ার জন্য ভর্তি হন কলকাতার রিপন কলেজে। এইবছর ৭ ডিসেম্বর সুরবালা দেবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১৯০৭ সালে তিনি ত্রিপুরা ‘হিতসাধনী’ সভার সাধারণ সম্পাদকের পদ লাভ করেন এবং ১৯১৫ সালে ভয়াবহ বন্যার সময় ত্রাণ বিতরণ করেন। ১৯০৮ সালে ধীরেন্দ্রনাথ কলকাতার রিপন কলেজ হতে কৃতিত্বের সঙ্গে বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং এই রিপন কলেজ থেকেই ১৯১০ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে আইন পাস করেন। এরপর তিনি কুমিল্লায় ফিরে এসে কুমিল্লার মুরাদনগর বাঙ্গুরা উমালোচন হাই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন।
১৯১১ সালে জন্ম হয় তাঁর প্রথম সন্তান আশালতা দত্তের। এ বছরেই তিনি আইনকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে কুমিল্লা বারে যোগ দেন। তার প্রায় ৮ বছর পর জন্ম হয় প্রথম পুত্র সঞ্জীব দত্তের। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্বদেশী আন্দোলনের নেতা সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জিরও সাহচর্য লাভ করেন। ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এ সময়ই তিনি প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন। হয়ে ওঠেন গান্ধীজীর একান্ত অনুসারী। দেশ সেবার মহান ব্রত নিয়ে তিনি রাজনীতিতে এক স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে আবির্ভূত হন। ১৯২৬ সালে জন্ম নেন তাঁর কনিষ্ঠপুত্র দীলিপ দত্ত। ১৯৩০ সালের ২ জুলাই কংগ্রেস নেতা মতিলাল নেহেরুর গ্রেফতারের প্রতিবাদে তিনি আন্দোলন শুরু করলে কুমিল্লায় সমাবেশ চলাকালে তিনি গ্রেফতার হন। অক্টোবর মাসে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। ১৯৩১ সালের নভেম্বর মাসে আবার আইন পেশাতে ফিরে যান। আইন পেশাকে ব্যবসা হিসেবে না দেখে তিনি সেবা হিসেবে দেখেছেন। সে কারণে গরীবদের মামলা বিনা পয়সায় চালিয়েছেন তিনি।
১৯৩২ সালের ৯ জানুয়ারি বিপ্লবীদের ওপর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিতে আবার কারাবরণ করেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ৩১ মার্চ পিতৃহারা হন। ১৯৩৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। ১৯৩৬ সালে ত্রিপুরা জেলা বোর্ডের (বর্তমান কুমিল্লা জেলা) সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩৭ সালে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সভ্য নির্বাচিত হন। সভ্য নির্বাচিত হয়ে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ত আইন সংশোধন, বঙ্গীয় কৃষিঋণ গ্রহীতা ও বঙ্গীয় মহাজনী আইন পাশের সাথে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত যুক্ত ছিলেন। এরপর বেজে ওঠে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোল। ১৯৪০ সালের ১৪ ডিসেম্বর যুদ্ধবিরোধী প্রচারণা চালানোর অপরাধে আবার কারাবরণ করেন। এছাড়াও ১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। তখন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কারণে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত কয়েকবার বিনাশ্রম ও সশ্রম কারা ভোগ করেন। ১৯৪৩ সালে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। এরপর কংগ্রেসের রাজনীতির সাথে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৪৬ সালে কংগ্রেস দলের টিকিটে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন এবং পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্য ঐ বছরের ডিসেম্বরে পূর্ববঙ্গ হতে তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত একজন অসাস্প্রদায়িক রাজনীতিবিদ হিসেবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ‘গণসমিতি’ নামে একটি দল গঠন করেন। তিনি ১৯৪৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান আইনসভায় সর্বপ্রথম বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য ঐতিহাসিক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তখনো ভাষা আন্দোলন শুরু হয়নি। তাঁর এই প্রস্তাবটিই ভাষা আন্দোলনের পটভূমি রচনা করেছিল। যার পরিণতি ছিল একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালে তিনি সংসদে মহানভাষা আন্দোলনের পক্ষে জোর সমর্থন দেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি হয়। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত আবার আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বিশেষ অনুরোধে পূর্ব পাকিস্তানে যুক্তফ্রন্ট সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন এবং ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি আতাউর রহমান খানের মন্ত্রিসভায় ছিলেন। এরপর আইয়ুব খাঁ সামরিক আইন জারি করলে ১৯৬০ সালে আরো অনেকের সাথে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের উপরেও ‘এবডো’ আইনের প্রয়োগ করা হয়। ১৯৬৪ সালে জিন্নাহর নির্বাচনী প্রচার সমর্থন দেবার দায়ে আবার গ্রেফতার হন তিনি। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সরকার তাঁকে গৃহবন্দি করে রাখে। পরবর্তীতে তিনি এই গৃহবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি লাভ করেন।
৭ মার্চ ১৯৭১। রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ চলছে। পুরো দেশটাই যেন একটা জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি। লোকে লোকারণ্য গোটা রেসকোর্স ময়দান। মানুষগুলো যেন উন্মুখ হয়ে আছে দেশের স্বাধীনতার জন্য। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে যার যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত হতে বললেন। একটা যুদ্ধ অনিবার্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত হল ভেঙে ছাত্রছাত্রীরা এসে যোগ দিল রেসকোর্স ময়দানের সেই বিশাল জনসভায়। সারা দেশেই এর উত্তাপ খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ল।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পরপরই কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করলেন। এদিকে পুত্রবধূকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন প্রিয় নাতনি আরমা দত্তসহ কুমিল্লার যেসব মেয়েরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তাদেরকে সাথে করে কুমিল্লায় নিয়ে আসার জন্য। বড় ছেলে সঞ্জীব দত্ত তখন ভারতে। সে সময় বাড়িতে থাকতেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, ছোট ছেলে দীলিপ দত্ত, পুত্রবধূ প্রতীতি দেবী ও তাঁর ছেলে রাহুল দত্ত। আরমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারণে রোকেয়া হলে থাকতেন। প্রতীতি দেবী ও আরমা দত্ত যখন কুমিল্লার বাড়িতে এসে পৌঁছলেন তখন দুপুর একটা বাজে। আরমা এসে দেখেন দাদু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বারান্দায় অস্থিরভাবে পায়চারী করছেন। আরমাকে দেখেই ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর প্রিয় নাতনিকে শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে বললেন ‘আইসা পড়ছো দাদু? আর কোনো চিন্তা নাই, বাঁচলে একসাথে বাঁচুম নাহলে সব একসাথে মরুম।’
মার্চ মাস থেকেই দেশের পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করেছিল। যে কোনো সময় যে কোনো কিছু ঘটতে পারে। আর মনে হচ্ছিল একটা জাতি শোষণের কবল থেকে মুক্ত হতে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশের অবস্থা যতই খারাপের দিকে যাচ্ছিল ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সে সময় বারবার একটা কথা সবাইকে বলছিলেন, ‘অন্ধকারের ওপারের আলো এগিয়ে আসছে, তোমরা নিরাশ হইও না, আমরা হয়ত নাও থাকতে পারি, কিন্তু সেই আলো আর কেউ ঠেকাতে পারবে না।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তখন টগবগ করে জ্বলছে। শহর-গ্রাম-গঞ্জে সব জায়গাতেই কীরকম একটা থমথমে ভাব বিরাজ করছিল। এমনি করে মিছিল-মিটিং-সমাবেশের মধ্য দিয়ে মার্চ মাস প্রায় শেষের দিকে।
২৫ মার্চ। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী রাতের অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহ বাঙালীর উপর। পুরো দেশটাই যেন শ্মশানে পরিণত হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় পাকিস্তানী আর্মিদের সাজোয়া গাড়ি ঘুরছে। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২৬ মার্চ কুমিল্লা শহরও শ্মশানে পরিণত হয়েছিল। বিকট শব্দ করে ক্যান্টনমেন্ট থেকে মিলিটারিদের লরি-জিপ ছুটে চলছে। সব যেন কিসের প্রহর গুনছে। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত আরমাকে ডেকে বললেন, রেডিওতে পৃথিবীর যা খবর পাও সংগ্রহ কর।’ পরিবারের সবাই তখন হুমড়ি খেয়ে বিবিসি, এবিসি, ভোয়া, আকাশবাণীতে ঢাকার খবর শোনার চেষ্টা করছিল।
ভাষা আন্দোলনের অন্যতম রূপকার ছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ১৯৪৮ সালের ২৪শে জানুয়ারি তিনিই প্রথম পাকিস্তানের গণপরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেছিলেন। সেটা অনুষ্ঠিত হয়েছিল করাচিতে। সেদিন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সেই প্রস্তাবনাতে বলেছিলেন, ‘Out of six crores and ninety lakhs people inhabiting this state, 4 crores and 40 lakhs of people speak Bengali language. So, sir, what should be the State language of the state? The state language of the state should be the language which is used by the majority of the people of the state, and for that, sir, I consider that Bengali language is a lingua franca of our state .’ ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে সেদিন বিরোধী দলের পক্ষ থেকে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাবটির ওপর দুটি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল এবং উত্থাপিত এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সময় গণপরিষদে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। পাকিস্তানের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান শুধু এ প্রস্তাবটির বিরোধিতাই করেননি প্রস্তাবকারী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের আদর্শ ও সততাকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানের অধিবাসীদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করা এবং একটি সাধারণ ভাষার দ্বারা ঐক্যসূত্র স্থাপনের প্রচেষ্টা থেকে মুসলমানদের বিচ্ছিন্ন করাই এর উদ্দেশ্য।’ সেদিন এই প্রস্তাবের বিরোধিতা কেবল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীই করেননি, বিরোধীতা করেছিলেন পূর্ব বাংলার গণপরিষদের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনও। খাজা নাজিমুদ্দিন সেদিন প্রস্তাবের বিরোধিতা করতে যেয়ে বলেছিলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ অধিবাসীর মনোভাব হচ্ছে একমাত্র উর্দুকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে।’
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ঢাকাসহ সারাদেশে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ধর্মঘট পালন করা হয়েছিল। সেদিন ছাত্র জনতার উপর পুলিশ নির্যাতন করেছিল। কিন্তু এর ফলে পূর্ববাংলার প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সাথে একটি চুক্তিতে আসতে বাধ্য হন। চুক্তিতে আসন্ন অধিবেশনে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে এমন শর্ত ছিল। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলা ভাষার স্বপক্ষে তাঁর তত্পরতা সেদিন অব্যাহত রেখেছিলেন। কংগ্রেস নেতা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত শুধু গণপরিষদের সদস্যই ছিলেন না, মন্ত্রীত্বও লাভ করেছিলেন। কিন্তু গণমুখী চরিত্রের অধিকারী এই মানুষটির দেশপ্রেম ছিল অগাধ। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন পাকিস্তানিদের উপনিবেশিক শাসনের কবল থেকে মুক্তি পেতে হলে দেশকে স্বাধীন করতে হবে। আর এর জন্যই প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধ। যে মুক্তিযুদ্ধে তিনি পাকবাহিনীর হাতে শহীদ হন।
অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিবিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন মাটি ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ। সেই ব্রিটিশ শাসনকাল থেকে তিনি এদেশের জন্য কাজ করেছেন নিরলসভাবে। হয়েছেন জননন্দিত নেতা। দেশভাগের পরও তিনি মাতৃভূমি ত্যাগ করেননি বরং লড়াই করেছেন দেশবাসীর অধিকার আদায়ের জন্য। তিনি ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কায়দে আজম মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহর উপস্থিতিতে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য ঐতিহাসিক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে দেখার স্বপ্ন তিনি লালন করেছিলেন আজীবন। ১৯৭১ সালে সীমান্ত পার হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল তাঁর। কিন্তু দেশের মানুষের কথা ভেবে তিনি তা করেননি। ২৯ মার্চ পাক হানাদার বাহিনী তাঁকে ও তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র দিলীপ দত্তকে ধরে নিয়ে যায়। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখার অপরাধে তাঁর উপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। হানাদার বাহিনী তাঁর হাঁটু ভেঙে দেয় এবং চোখ উপড়ে ফেলে। অবশেষে ১৪ এপ্রিল তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২ এপ্রিল ভারতীয় বেতারেই প্রথম ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের শহীদ হবার খবর প্রচারিত হয়। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ভারতীয় লোকসভা এক মিনিট নীরবতা পালন করে। স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা এই বীর দেখে যেতে পারেননি তাঁর রক্তের উপরে জন্ম নেয়া স্বাধীন বাংলাদেশকে।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
জন্ম ও বংশ পরিচয়
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রামরাইল গ্রামে। জগবন্ধু দত্ত ছিলেন তাঁর বাবা। শৈশবেই মাতৃহারা হন।
শিক্ষা জীবন
১৯০৪ সালে নবীনগর উচ্চবিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯০৬ সালে তিনি কুমিল্লা কলেজ হতে কৃতিত্বের সঙ্গে এফ.এ. পরীক্ষায় পাস করেন। এরপর কলকাতায় যান। এরপর বি.এ. পড়ার জন্য ভর্তি হন কলকাতার রিপন কলেজে। ১৯০৮ সালে ধীরেন্দ্রনাথ কলকাতার রিপন কলেজ হতে কৃতিত্বের সঙ্গে বি.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং এই রিপন কলেজ থেকেই ১৯১০ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে আইন পাস পাশ করেন।
পারিবারিক জীবন
১৯০৬ সালের ৭ ডিসেম্বর সুরবালা দেবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১৯১১ সালে জন্ম হয় তাঁর প্রথম সন্তান আশালতা দত্তের। প্রায় ৮ বছর পর জন্ম হয় প্রথম পুত্র সঞ্জীব দত্তের। ১৯২৬ সালে জন্ম নেন তার কনিষ্ঠ পুত্র দীলিপ দত্ত। ১৯৩২ সালের ৩১ মার্চ পিতৃহারা হন।
কর্মজীবন
কুমিল্লার মুরাদনগর বাঙ্গুরা উমালোচন হাই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। ১৯১১ সালে তিনি আইন ব্যবসা করার জন্য কুমিল্লা বারে যোগদান করেছিলেন। এরপর রাজনৈতিক কারণে কারাবরণ করেন এবং কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৩১ সালের নভেম্বর মাসে আবার তিনি আইন পেশাই ফিরে যান। আইন পেশাকে ব্যবসা হিসেবে না দেখে সেবা হিসেবে দেখেছেন। সে কারণে গরীব মানুষের মামলা বিনা পয়সায় চালিয়েছেন। ১৯৩৭ সালে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সভ্য নির্বাচিত হন। সদস্য নির্বাচিত হয়ে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ত আইন সংশোধন এবং বঙ্গীয় কৃষিঋণ গ্রহীতা ও বঙ্গীয় মহাজনী আইন পাশের সাথে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
রাজনৈতিক জীবন
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রথমে স্বদেশী আন্দোলনের নেতা সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জিরও সাহচর্য লাভ করেন। ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এ সময়ই তিনি প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন। হয়ে ওঠেন গান্ধীজীর একান্ত অনুসারী। দেশ সেবার মহান ব্রত নিয়ে তিনি রাজনীতিতে এক স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে আবির্ভূত হন। ১৯৩০ সালের ২ জুলাই কংগ্রেস নেতা মতিলাল নেহেরুর গ্রেফতারের প্রতিবাদে তিনি আন্দোলন শুরু করলে কুমিল্লায় সমাবেশ চলাকালে তিনি গ্রেফতার হন। অক্টোবর মাসে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। ১৯৩২ সালের ৯ জানুয়ারি বিপ্লবীদের ওপর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিতে আবার কারাবরণ করেন। ১৯৩৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। এরপর বেজে ওঠে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোল। ১৯৪০ সালের ১৪ ডিসেম্বর যুদ্ধবিরোধী প্রচারণা চালানোর অপরাধে আবার কারাবরণ করেন। এছাড়াও ১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলনে যোগ দেন। তখন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কারণে ধীরেন দত্ত কয়েকবার বিনাশ্রম ও স্বশ্রম কারাদন্ড ভোগ করেন। ১৯৪৩ সালে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। এরপর কংগ্রেসের রাজনীতির সাথে ধীরেন দত্ত ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৪৬ সালে কংগ্রেস দলের টিকিটে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন এবং পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্য ঐ বছরের ডিসেম্বরে পূর্ববঙ্গ হতে তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ধীরেন দত্ত একজন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিবিদ হিসেবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন।
‘গণসমিতি’ নামে একটি দল গঠন করেন। ১৯৪৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান আইনসভায় সর্বপ্রথম বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য ঐতিহাসিক প্রস্তাব করেন। তখনো ভাষা আন্দোলন শুরু হয়নি। তাঁর এই প্রস্তাবটিই ভাষা আন্দোলনের পটভূমি রচনা করেছিল। যার পরিণতি ছিল একুশে ফেব্রুয়ারী। ১৯৫২ সালে ও তিনি সংসদে মহানভাষা আন্দোলনের পক্ষে জোর সমর্থন দেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি হয়। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত আবার আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বিশেষ অনুরোধে পূর্ব পাকিস্তানে যুক্তফ্রন্ট সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন এবং ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি আতাউর রহমান খানের মন্ত্রীসভায় ছিলেন। এরপর আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করলে ১৯৬০ সালে আরো অনেকের সাথে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের উপরেও ‘এবডো’ আইনের প্রয়োগ করা হয়। ১৯৬৪ সালে ফাতেমা জিন্নাহর নির্বাচনী প্রচার সমর্থন দেবার দায়ে ফের গ্রেফতার হন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সরকার তাঁকে গৃহবন্দি করে রাখে।
মৃত্যু: ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল তিনি পাকবাহিনীর হাতে শহীদ হন।
লেখক : পিয়াস প্রান্তিক