২৬ মার্চ, ১৯৭১ সাল। সকাল বেলা। ভোরের আলোয় তখনো বারুদের ঝাঁঝালো গন্ধ। সারা শহরময় কারফিউ। আগের রাত অর্থাত্ ২৫ মার্চ কালো রাত্রির বর্বরতা যেন সমস্ত ঢাকা শহরকে স্তব্ধ করে দিয়ে গেছে। ঘরবন্দি মানুষের কান বিদীর্ণ করে হঠাত্ ছুটে যাচ্ছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর জিপ। এই মৃত্যু-উপত্যকায় বসেই অনেকে শহর ছেড়ে যাবার অপেক্ষায়।
কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের বাসা রাজধানীর এলিফেন্ট রোডে। তিনতলা বাড়িটির সামনে একটু ফাঁকা জায়গা। পেছনে জঙ্গলের মতো। এলিফেন্ট রোড থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কতটুকু দূরত্ব আর! অপারেশন সার্চলাইটের বর্বরতায় মোয়াজ্জেম হোসেনের পরিবারের কেউ সেই রাতে ঘুমোতে পারেনি। বাচ্চা আর বৃদ্ধরা লুকিয়ে ছিল খাটের নিচে। সারারাত ঘুমহীন ক্লান্তির ছাপ মোয়াজ্জেম হোসেন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের চোখে-মুখে।
হঠাত্ করেই দুটি পাকিস্তানী জিপ এসে থামে মোয়াজ্জেম হোসেনের বাসার সামনে। জিপ থেকে সিপাহীরা নেমে বন্দুক উঁচিয়ে এগিয়ে যায় বাড়ির দিকে। কালো কুচকুচে ব্যাকব্রাশ করা একজন বাঙালী যুবক দূর থেকে হাত উঁচিয়ে দেখিয়ে দেয় মোয়াজ্জেম সাহেবের বাড়িটি। মুহূর্তেই বাড়ির ভেতরে ঢুকে তিনটি তলা তছনছ করে ফেলে পাকিস্তানী সৈন্যরা। বাড়ির লোকজনদের কেউ কেউ পেছনের দরজা দিয়ে জঙ্গলে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পাকিস্তানী সৈন্যরা বাড়ির লোকজনকে এক এক করে নিচতলার গ্যারেজে এনে দাঁড় করায়। উর্দু ভাষায় জিজ্ঞেস করে, মোয়াজ্জম সাহেব কোথায়? সবাই উত্তর দেয়, তিনি এখানে নেই, চলে গেছেন। একপর্যায়ে সৈন্যরা জিজ্ঞেস করে, মোয়াজ্জেম সাহেবের স্ত্রী কোথায়? মোয়াজ্জেম হোসেনের স্ত্রী তখন দোতলায়। তাঁকে তখনো পর্যন্ত চেনেনি পাক-সৈন্যরা। মোয়াজ্জেম হোসেনের স্ত্রী ধরেই নিয়েছেন তাঁর স্বামীও পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে চলে গেছেন। কিন্তু সৈন্যরা যখন মোয়াজ্জেম সাহেবের স্ত্রীর অবস্থান জিজ্ঞেস করছে তখন স্ত্রীকে সমূহ বিপদ থেকে বাঁচাতে মোয়াজ্জেম হোসেন নিজেই বেরিয়ে আসেন দোতলার একটি বাথরুম থেকে। নিচে নেমে ধরা দেন পাকবাহিনীর হাতে।
পাকিস্তানী সৈন্যরা তাদের প্রধান টার্গেট মোয়াজ্জেম হোসেনকে হাতে-নাতে পেয়ে অন্য সবাইকে সেখান থেকে চলে যেতে বলে। গ্যারেজ থেকে সবাই ঘরের ভেতরে চলে যায়। একদিকে পাক-সৈন্যরা আর অন্য দিকে মোয়াজ্জেম হোসেন, মুখোমুখি। কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে একজন সৈন্য চিত্কার করে বলে উঠল, ‘বোল্, পাকিস্তান জিন্দাবাদ।’ মোয়াজ্জেম সাহেব হাত পাঁচেক দূরত্বে দাঁড়িয়ে সজোরে বললেন, ‘এক দফা জিন্দাবাদ।’ একটা নির্ভুল নিশানার বুলেট তত্ক্ষণাত্ ঢুকে পড়ল মোয়াজ্জেম হোসেনের বুকে। ছিটকে পাশের লনে লুটিয়ে পড়লেন তিনি। তাঁর কাছে গিয়ে হায়নারা আবার বলল, ‘বোল্, পাকিস্তান জিন্দাবাদ।’ মোয়াজ্জেম সাহেব শেষবারের মতো সমস্ত শক্তি দিয়ে উচ্চারণ করলেন, ‘এক দফা জিন্দাবাদ।’ ‘এক দফা’ অর্থাত্ ‘স্বাধীন বাংলা’- জিন্দাবাদ। তারপর আরো তিনটি গুলি। গুলিতে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেলো কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের বুক। মুহূর্তেই লনের সবুজ ঘাস ভিজে গেলো লাল রক্তে। সকালের কোমল রোদে সবুজ ঘাস মোয়াজ্জেমের রক্তে লালবৃত্ত হয়ে চিকচিক করে উঠল। যেন স্বাধীন বাংলার পতাকা। পরিবারের অন্য অনেক সদস্যের সাথে মোয়াজ্জেম হোসেনের বড় ছেলে ওয়ালি নোমানও দেখেন পিতৃহত্যার এই দৃশ্য। কিন্তু মোয়াজ্জেম হোসেনের স্ত্রী তখনো দোতলায়। তিনি কিছুই জানেন না।
আগেই উপর মহল থেকে পাক-সৈন্যদের নির্দেশ দেয়া ছিল জীবিত বা মৃত যে কোনো অবস্থাতেই হোক মোয়াজ্জামকে ধরে নিয়ে আসতে হবে। সেই নির্দেশ মোতাবেক সৈন্যরা মৃত মোয়াজ্জেমের মৃতদেহ তুলে নিল জিপে। কারণ পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের কাছে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার দুই নম্বর আসামিকে প্রকৃতপক্ষেই হত্যা করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া অনেক বেশি প্রয়োজনীয় ছিল।
কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন এমনি একজন বীর যিনি কোনোদিন তাঁর বিশ্বাসের বাইরে কোনো কথা বলেননি। মৃত্যুও তাঁকে মিথ্যা বলাতে পারেনি। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালে সাড়ে ১৪ মাস গোপন স্থানে রেখে পাকবাহিনী তাঁকে নির্মম অত্যাচার করেছিল তথ্য বের করার জন্য এবং মিথ্যা জবানবন্দি দেয়ার জন্য। কিন্তু শত নির্যাতন সত্ত্বেও তিনি তা করেননি। তিনি শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছিলেন। বাংলাদেশে স্বাধীন পতাকা উঠেছিল তাঁরই মতো অগণিত বিপ্লবীর রক্তে ভিজে।
কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের জন্ম পিরোজপুর জেলার কচুয়া উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামে ১৯৩২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। বাবা মৌলবি মোফাজ্জল হোসেন ছিলেন তহসিল অফিসের কর্মকর্তা। মা বেগম লুত্ফুন্নেসা বেগম গৃহিনী। পিতা-মাতার সাত সন্তানের মধ্যে মোয়াজ্জেম ছিলেন সবার বড়। অন্য ভাইবোনেরা হলেন- রাজ (চলচ্চিত্র অভিনেতা), ফাতেমা বেগম, মাহমুদা খাতুন, মমতাজ বেগম, মোস্তাক আহমেদ মিলন, মনোয়ারা সুলতানা।
পিতার সরকারি চাকরির কারণে মোফাজ্জল সাহেবের পরিবারকে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। মোয়াজ্জেমের প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়া শুরু হয় কচুয়া প্রাইমারি স্কুলে। পরে কচুয়া হাই স্কুল থেকেই তিনি ১৯৪৭ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন বাগেরহাট কলেজে। কিন্তু এ সময়েই তিনি জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। পিতা তাঁকে বরিশাল বিএম কলেজে নিয়ে ভর্তি করান। সেখান থেকেই ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন ১৯৫০ সালে।
তখন পাকিস্তান নৌ-বাহিনীতে রিক্রুটিংয়ের একটি মিশন আসে বরিশালে। মোয়াজ্জেম মায়ের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে পালিয়ে চলে যান নৌবাহিনীতে। প্রথমে চট্টগ্রাম যান, পরে করাচি। ১৯৫০ সালেই তিনি বৃটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীতে শিক্ষালাভের জন্য লন্ডন যান। সেখানে একটানা সাত বছর নৌ-প্রকৌশলী হিসেবে শিক্ষা লাভ করেন। সেসময় বৃটিশ নৌবাহিনীর সুপারিশক্রমে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে কমিশন প্রাপ্ত হন। ১৯৫৯ সালে পুনরায় নৌবাহিনী সংক্রান্ত কারিগরি বিদ্যায় উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য পুনরায় বৃটেন যান এবং বৃটিশ রাজকীয় নৌবাহিনী থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেকানিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী লাভ করেন। এছাড়াও এই সময় তিনি কৃতিত্বের সাথে এসোসিয়েট মেম্বার অব দি ইনস্টিটিউট অব মেরিন ইঞ্জিনিয়ার্স (যুক্তরাজ্য), মেম্বার অব বৃটিশ নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটি, যুক্তরাজ্যের পরিবহন মন্ত্রণালয় প্রদত্ত প্রথম শ্রেণীর ইঞ্জিনিয়ার মেম্বার অব দি ইনস্টিটিউট অব চাটার্ড ইঞ্জিনিয়ার (যুক্তরাজ্য) ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬০-৬৬ সাল পর্যন্ত মোয়াজ্জেম করাচিতে পাকিস্তান নৌবাহিনীর সদর দপ্তরে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার পদে দায়িত্ব পালন করেন।
কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে প্রবেশ করেন এক গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই। তিনি চেয়েছিলেন পাকিস্তানি নির্যাতন থেকে দেশকে মুক্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশে পরিণত করতে। চাকরি জীবনের শুরু থেকেই তিনি পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর নির্মম বৈষম্যের চিত্র দেখেন। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালী বলে নিজেও শিকার হন সেই বৈষম্যের। কলেজে পড়াকালীন সময়েই রাজনৈতিক সত্তা বেশ ভালোভাবেই বাসা বাঁধে মোয়াজ্জেমের ভিতর। চাকরি জীবনে প্রবেশ করে যেন সেই রাজনৈতিক লক্ষ্য বাস্তবায়নের কাজে নেমে পড়েন।
১৯৬০ সালে বিলেত থেকে করাচি ফিরে প্রথমে বাঙালী অফিসার ও নাবিকদের সাথে নিজের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। খুঁজতে থাকেন নিজের মতাদর্শের সব লোকদেরকে। পূর্ব পাকিস্তান বনাম পশ্চিম পাকিস্তান বৈষম্যের কারণে তখন সকল বাঙালী অফিসার ও নাবিকদের মনে ক্ষোভ দানা বেঁধে ছিল। তাঁরা মর্মে মর্মে উপলব্দি করতে পারছিলেন নিজেদের যোগ্যতা থাকার পরও বাঙালী বলে তাঁদেরকে উপরে উঠতে দেয়া হয় না। কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত সহ্য করতে হয় নির্যাতন আর অবহেলা। খুব সাহসী অফিসার যাঁরা তাঁরাই কদাচিত এসব বৈষম্য-নির্যাতন আর অবহেলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হতো না। বরং বৈষম্য যেন আরো বেড়ে যেত। এই বৈষম্যের চক্রাকারে যেন আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল নৌবাহিনীর বাঙালী অফিসার ও নাবিকদের জীবন। সকলের পিঠ যেন একেবারে দেয়ালে গিয়ে ঠেকেছে।
কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে ১৯৬১ সালের শুরুর দিকে পাকিস্তান নৌবাহিনীর ভিতরে শুরু করে দেন তত্পরতা। প্রথমে এই তত্পরতার সঙ্গে কিছু বাঙালী অফিসারকে যুক্ত করেন। যাঁরা খুব গোপনে সশস্ত্র পন্থায় দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে কাজ অগ্রসর করে নেয়। হিমালয়াতে একটি বাঙালী ‘ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশন’ গড়ে তোলা হয়। আসলে যার নাম ছিল ‘গুপ্ত বিপ্লবী দল’। এই সংগঠনের সঙ্গে পরিচিতজনরা জানত সংগঠনটি নৌবাহিনীতে বাঙালী অফিসার ও নাবিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে। কিন্তু আসল উদ্দেশ্য জানত হাতেগোনা মাত্র কয়েকজন।
এই সমস্ত বিপ্লবী দলের সদস্যরাই ১৯৬২ সালের মাঝামাঝিতে পূর্ব পাকিস্তানে ১৬ জন এসপি ও ১৩ জন ডিসি’র সাথে গোপন যোগাযোগ গড়ে তোলেন। এরাও এই বিপ্লবী দলের সক্রিয় সমর্থকে পরিণত হয় একসময়। কমান্ডার মোয়াজ্জেমসহ বিপ্লবী দলের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্যরা মাঝে মাঝেই করাচি থেকে ঢাকায় এসে গোপনে এই কাজ করে যেতেন। শনিবার বিকেল বেলা অফিস থেকে বেরিয়ে ফ্লাইটে ঢাকায় চলে আসতেন, রবিবার সারাদিন মিটিং করে রাত্রের ফ্লাইটে আবার করাচি ফিরে গিয়ে সোমবার যথারীতি অফিস করতেন।
তবে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সরাসরি যোগাযোগ না থাকায় খুব দ্রুত এগুতে পরছিলেন না দলের সদস্যরা। এছাড়া সাংগঠনিক শক্তি ও অর্থের সমস্যাও একটি বড় সমস্যা ছিল গুপ্ত বিপ্লবী দলের জন্য।
এই অবস্থা কিছুদিন চলার পর অনেক বাঙালী অফিসারই গোপনে এই দলের সাথে যুক্ত হন। কেউ কেউ সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়ে পরিপূর্ণভাবে স্বাধীনতার পথে আত্মনিয়োগ করার কথা ভাবলেন। কিন্তু উপর থেকে তেমন কোনো সিগন্যাল পাওয়া গেল না। এক পর্যায়ে কমান্ডার মোয়াজ্জম হোসেন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সাহায্য-সহযোগিতার জন্য বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করলেন। ১৯৬৩ ও ১৯৬৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুবার করাচিতে মোয়াজ্জেম হোসেনের বাসায় এ ব্যাপারে বৈঠক করেন। কমান্ডার মোয়াজ্জেম খুবই গোপনে এই গুপ্ত বিপ্লবী দলের নেতৃত্ব দেন। ভারতীয় জেনারেল পি.এন. ওঝার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল বলে অনেকের ধারণা। তবে তাঁর এই গতিবিধি ঠাওর করতে পেরেছিল পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী। সেসময় পাকিস্তান নৌবাহিনী কর্তৃপক্ষ মোয়াজ্জেমকে এই সমস্ত কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখার জন্য একটি বিশেষ কৌশল গ্রহণ করেছিল।
পাকিস্তান নৌবাহিনীর সাবমেরিনে সাধারণত বাঙালী অফিসারদের জায়গা হতো না। কিন্তু ১৯৬৪ সালের দিকে কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাবমেরিনে কাজ করার জন্য নির্বাচিত করা হয়। পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের ধারণা ছিল স্থলভাগ থেকে দূরে রাখতে পারলেই বোধ হয় মোয়াজ্জেমকে এইসব কাজ থেকে নিবৃত্ত রাখা যাবে। সাবমেরিনে কাজ করার সুযোগ পাওয়ার কথা শুনে মোয়াজ্জেম ঠিকই ঘাবড়ে যান। তিনি কীভাবে সাবমেরিনে কাজে না যাওয়া যায় তার পন্থা খুঁজতে থাকেন। যোগাযোগ করেন গুপ্ত বিপ্লবী দলের সমর্থক পাকিস্তান নৌবাহিনীর বাঙালী ডাক্তার ক্যাপ্টেন খুরশীদের সাথে। ক্যাপ্টেন খুরশীদও পরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ১৮ নম্বর আসামি হন। মোয়াজ্জেম ক্যাপ্টেন খুরশীদকে সব ঘটনা বলেন এবং তাঁকে অনুরোধ করেন এমন একটি সার্টিফিকেট দিতে যে, তাঁর চোখের অবস্থা খারাপ যা আসলে সাবমেরিনে কাজ করার উপযুক্ত নয়। ক্যাপ্টেন খুরশীদ তাই করেন। পাকিস্তান নৌবাহিনী কর্তৃক সেই সার্টিফিকেট গৃহীত হলে মোয়াজ্জেমকে আর সাবমেরিনে যেতে হয়নি। এরই মধ্যে ১৯৬৫-তে তিনি ল্যাফটেনেন্ট কমান্ডার পদে উন্নীত হন। কিন্তু মোয়াজ্জেম অনুভব করেন করাচিতে থেকে বিচ্ছিন্নভাবে স্বাধীনতার জন্য কাজ করা যাবে না। তিনি দেশে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। নানা অজুহাত দেখিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন।
অবশেষে ১৯৬৬ সালের ১ মে চট্টগ্রামে নেভাল বেসে ইঞ্জিনিয়ার পদে বদলি হয়ে এলেন। সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর ১৯৬৭ সালের ১১ মার্চ ডেপুটেশনে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান আভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল কর্তৃপক্ষের চাকরিতে যোগদান করে বরিশালে কাজ শুরু করেন। পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসার পর কমান্ডার মোয়াজ্জেম গুপ্ত বিপ্লবী দলের কাজ আরো জোরেশোরে শুরু করেন। আর ততদিনে বেশ ভালভাবেই পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা মোয়াজ্জেমের কর্মকান্ড সম্পর্কে অবহিত হয়ে যায়। ১৯৬৭ সালের ৪ ডিসেম্বর তাঁকে ডেকে পাঠানো হয় রাওয়ালপিন্ডিতে। পিন্ডি বিমান বন্দরে দুজন লে. কর্নেল তাঁকে ‘স্বাগত’ জানিয়ে নিয়ে যায় আর্মি ইন্টারোগেশন সেন্টারে। ওই অফিসেই মোয়াজ্জেমের দেহ তল্লাশি করে সমস্ত জিনিসপত্র কেড়ে নেয়। এবং নানা কায়দায় জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করে। মোয়াজ্জেম হোসেনের কাছ থেকে যখন কোনো অবস্থাতেই তথ্য বের করা যাচ্ছে না তখন তারা শুরু করে শারিরীক নির্যাতন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দুজন জুনিয়র অফিসার লে. কর্নেল আমির ও লে. কর্নেল হাসান এই ইন্টারোগেশনে নেতৃত্ব দেয়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে ঘুষি মেরে তাঁর একটি দাঁত ফেলে দেয়া হয়। এমনকি মোয়াজ্জেমের সমস্ত কাপড় খুলে দেখা হয় সে প্রকৃতপক্ষেই মুসলমান কিনা। চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে চোখের সামনে অত্যুজ্জ্বল ফ্লাড লাইট জ্বালিয়ে দেয়া হয়। যদিও মোয়াজ্জেম চোখের সমস্যার কারণে নির্যাতনের এই পদ্ধতিটি ব্যবহার না করার অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁর অনুরোধ উপেক্ষা করেই কর্নেল হাসান চুলের মুঠি ধরে মাথা সোজা করে রাখেন যাতে চোখে-মুখে পুরোপুরি লাইট পড়ে। চোখ বন্ধ করলেই চলত অকথ্য নির্যাতন। শেষপর্যন্ত কোন তথ্য বের করতে না পেরে ৭ ডিসেম্বর তাঁকে ছেড়ে দেয় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। সেদিনই তিনি প্রচন্ড জ্বর নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। নির্যাতনের এই ঘটনা তিনি পরিবার ও সহযোদ্ধাদের কাছে গোপন রাখেন।
১৯৬৭ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকার বাসা থেকে জরুরি আইনে মোয়াজ্জেমকে আবার গ্রেফতার করা হয়। পুনরায় শুরু হয় নির্যাতন। কিছুদিন পরেই গ্রেফতার হয়ে যান গুপ্ত বিপ্লবী দলের নেতা লে. রহমান, লে. মতিউরসহ আরো অনেকেই। ঢাকায় ধর-পাকড়ের খবর ইতিমধ্যেই করাচিতে পৌঁছে। ধর-পাকড়ের খবর শুনে দলের অন্যান্য সহকর্মীরা বেশ বিচলিত হয়ে পড়েন। করাচিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় হঠাত্ করেই নানাবিধ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। ফলে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সর্বত্রই কানাঘুষা আর গুজব রটতে থাকে। করাচির বাতাসে গ্রেফতারের আগাম খবর ভেসে বেড়াতে শুরু করে।
গ্রেফতার হওয়ার আগেই কমান্ডার মোয়াজ্জেম তাঁর দলের কর্মকাণ্ডের বেশ কিছু কাগজপত্র ও তথ্য প্রমাণাদি সম্পর্কে তাঁর স্ত্রীকে বলে যান। এগুলো বরিশালে তাঁদের বাসায় রাখা ছিল। তিনি গ্রেফতার হওয়ার সাথে সাথেই যেন এগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয় সে সম্পর্কেও বলে যান। কমাণ্ডার মোয়াজ্জেমের স্ত্রী সে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ফলে পাকআর্মি মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতারের একদিন পরেই তাঁর বরিশালের সমস্ত বাড়ি তছনছ করেও কোনো উপযুক্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করতে পারেনি।
দ্বিতীয়বার গ্রেফতারের পর কমান্ডার মোয়াজ্জেমের উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। তাঁকে রাখা হয় একটি অন্ধ কুঠুরিতে। যেখানে কোন আলো প্রবেশের সুযোগ ছিল না। এক পর্যায়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাঁকে একটি লিখিত জবানবন্দি ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উপস্থাপন করার কথা বলে। যে জবানবন্দিতে লেখা ছিল তিনি শেখ মুজিবের ৬ দফার তত্পরতার সাথে যুক্ত। শেখ মুজিবসহ অন্যান্য বাঙালী নেতা ও অফিসারদের সাথে তাঁর যোগাযোগ আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু কমান্ডার মোয়াজ্জেম তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখান করেন। ফলে আরো প্রচণ্ড নির্যাতন হয়। ডিসেম্বরের ১২ তারিখেই তিনি নির্যাতনের মুখে এতটা কাবু হয়ে পড়েন যে হাঁটাচলা করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন। ১৯৬৮ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁর উপর জবানবন্দির জন্য চাপ অব্যাহত থাকে। এই সময়ের মধ্যে তাঁকে কোনো ডাক্তারও দেখানো হয়নি।
জুনের আগেই গুপ্ত বিপ্লবী দলের সঙ্গে যুক্ত প্রায় সব সদস্যকেই গ্রেফতার করে ফেলে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও পুলিশ। নির্যাতনের মাত্রা সকলের ক্ষেত্রেই প্রায় একই রকম। এদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বঙ্গবন্ধুকেও তখন গ্রেফতার করা হয়। তবে বন্দিরা অন্যান্যদের গ্রেফতারের বিষয়ে খুব বেশি কিছু জানতেন না। কারণ তাঁদের সকলকেই রাখা হয়েছিল বিচ্ছিন্নভাবে। অবশেষে এসব বন্দিদের নিয়েই তৈরি করা হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা।
ঐতিহাসিক এই মামলার বিচার-প্রহসনের জন্য ক্যান্টনমেন্টের মধ্যেই স্পেশাল ট্রাইবুনাল বসানো হলো। ১৯৬৮ সালের ১৯ জুন সকালে একটি লোহার জাল দিয়ে ঘেরা কয়েদি ভ্যানে ওঠানো হলো সবাইকে। এই প্রথম বন্দিরা সবাই একসাথে হলো। সকলের মধ্যে আবেগ, উচ্ছ্বাস, চিত্কার আর হাসি-কান্না। কিছুক্ষণ পর বঙ্গবন্ধু এসে উঠলেন এই গাড়িতে। সশস্ত্র পাহারায় সেই ভ্যান চলল ট্রাইবুনালের দিকে। গাড়ির ভেতর বন্দিরা তখন গাইছে ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’।
এরই মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠল। ১৯৬৮ সালের শেষ দিকে ছাত্রসমাজ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু করে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঐতিহাসিক ১১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে আন্দোলনে নামে। রাজনৈতিক ডামাডোলে শেষ পর্যন্ত ১৯৬৯’র জানুয়ারির শেষ দিকে গণঅভ্যুত্থান ঘটে যায়, যা দমন করার সাধ্য আইয়ুব শাহির ছিল না।
ইয়াহিয়া ক্ষমতা দখল করলেও আন্দোলন বন্ধ হলো না। ১৯৬৯’র ১৫ ফেব্রুয়ারি পাঞ্জাব সেলে বন্দি সার্জেন্ট জহুরুল হক ও ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হককে গুলি করে হত্যা করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিরা এই খবরে বিমর্ষ হয়ে পড়েন। কিন্তু প্রবল আন্দোলনের মুখে পাক সরকার ১৯৬৯’র ২১ ফেব্রুয়ারি শেষ পর্যন্ত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। ২২ ফেব্রুয়ারি মোয়াজ্জেমসহ অন্য বন্দিরাও মুক্তিলাভ করেন।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তিলাভের পর কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন পরিপূর্ণভাবেই রাজনৈতিক কর্মতত্পরতায় নেমে পড়েন। ১৯৭০-এর ২৮ মার্চ তাঁর নেতৃত্বে গঠিত হয় লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন কমিটি। এই কমিটিই পরে রূপ নেয় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি-তে। ১৯৭০ সালে রমনায় এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এই রাজনৈতিক দল গঠন করেন মোয়াজ্জেম হোসেন।
১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ব্যাপক বিজয় অর্জন করে। সারা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ আশা করেন এবার বোধ হয় নিজেদের হাতে ক্ষমতা পাওয়া যাবে। কিন্তু কমান্ডার মোয়াজ্জেম মোটেই সে বিশ্বাস পোষণ করতেন না। সেই সময় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আর এক আসামি কমান্ডার আব্দুর রউফ তাঁর এক স্মৃতিচারণে লিখেছেন, ‘স্বাধীন বাংলা আন্দোলনের অন্যতম নায়ক এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার দুই নম্বর অভিযুক্ত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম লোক পাঠিয়ে আমাকে সে সময় ডেকে পাঠিয়েছিলেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিতে। তিনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী বিজয় দেখে আমরা যাতে একথা মনে না করি যে পাঞ্জাবি শাসকগোষ্ঠী শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। বরং পাঞ্জাবিরা পূর্ব বাংলায় ব্যাপক ও হিংস্র হত্যাযজ্ঞ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর্মি ইন্টিলিজেন্স ইতিমধ্যেই যেসব বাঙালীকে হত্যা করতে হবে তাদের তালিকা প্রস্তুত করতে লেগে গেছে।’ কমান্ডার মোয়াজ্জেমের সে কথাই পরে অক্ষরে অক্ষরে ফলেছে।
কমান্ডার মোয়াজ্জেমের মৃত্যুর পর পরিবারটি একেবারেই অসহায় অবস্থায় পড়ে যায়। পিতার মৃত্যু স্বচক্ষে দেখার পর থেকেই বড় ছেলে ওয়ালি নোমান অনেকটাই মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগতে থাকে। ছোট ছেলে ওয়াসি নোমানও জটিল শারিরীক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়। দুই ছেলে ও একমাত্র মেয়ে ওয়াদিয়া নোমান শিপাকে নিয়ে পরিবারের হাল ধরেন কহিনূর মোয়াজ্জেম। স্বাধীনতার পর পরই তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় অধিদপ্তরে চাকরি করে অবসর গ্রহণ করেছেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
জন্ম : কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের জন্ম পিরোজপুর জেলার কচুয়া উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামে ১৯৩২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। বাবা মৌলবি মোফাজ্জল হোসেন, মা বেগম লুত্ফুন্নেসা বেগম। পিতা-মাতার সাত সন্তানের মধ্যে মোয়াজ্জেম ছিলেন সবার বড়।
শিক্ষা : মোয়াজ্জেমের প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়া শুরু হয় কচুয়া প্রাইমারি স্কুলে। পরে কচুয়া হাই স্কুল থেকেই তিনি ১৯৪৭ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। বরিশাল বিএম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন ১৯৫০ সালে। ১৯৫০ সালেই তিনি বৃটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীতে শিক্ষালাভের জন্য লন্ডন যান। সেখানে একটানা সাত বছর নৌ-প্রকৌশলী হিসেবে শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৫৯ সালে পুনরায় বৃটেন যান এবং বৃটিশ রাজকীয় নৌবাহিনী থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেকানিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী লাভ করেন।
চাকরি : ১৯৫০ সালে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬০-৬৬ সাল পর্যন্ত মোয়াজ্জেম করাচিতে পাকিস্তান নৌবাহিনীর সদর দপ্তরে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৬ সালের ১ মে চট্টগ্রামে নেভাল বেসে ইঞ্জিনিয়ার পদে কাজ করেন। ১৯৬৭ সালের ১১ মার্চ থেকে ডেপুটেশনে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান আভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল কর্তৃপক্ষের চাকরিতে বরিশালে কাজ করেন।
পরিবার : মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৫৭ সালে কহিনূর বেগমকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে ওয়ালি নোমান, দ্বিতীয় ছেলে ওয়াসি নোমান, একমাত্র মেয়ে ওয়াদিয়া নোমান শিপা।
রাজনৈতিক তত্পরতা : বাংলাদেশকে সশস্ত্র পন্থায় স্বাধীন করার লক্ষ্যে ১৯৬১ সালের শুরুর দিকে পাকিস্তান নৌবাহিনীর ভিতরে গড়ে তোলেন ‘গুপ্ত বিপ্লবী দল’। এ কারণেই তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার দু’নম্বর আসামি হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রাক্কালে তিনি গড়ে তোলেন রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি’।
কারাজীবন : ১৯৬৭ সালের ৪ ডিসেম্বর তাঁকে নৌবাহিনীর অভ্যন্তরে রাজনৈতিক তত্পরতা চালানোর অভিযোগে রাওয়ালপিন্ডি বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৭ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকার বাসা থেকে জরুরি আইনে মোয়াজ্জেমকে আবার গ্রেফতার করা হয়। দু’বারই তাঁকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়।
মৃত্যু : ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাক হানাদার বাহিনী তাঁকে হত্যা করে।
তথ্যসূত্র : এই লেখাটি তৈরি করতে কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের স্ত্রী কহিনূর মোয়াজ্জেমের সাক্ষাত্কার নেয়া হয়েছে। এছাড়াও কমান্ডার আব্দুর রউফ লিখিত ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও আমার নাবিক জীবন’ গ্রন্থ থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে।
লেখক : চন্দন সাহা রায়