‘আইয়ুব খান জেলে পাঠিয়েছিলেন, তাই আমি সাহিত্যিক হতে পেরেছি’ এই উক্তিটি যিনি করেছেন তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বসেই লিখেছেন ‘সারেং বৌ’ নামের বিখ্যাত সেই উপন্যাসটি। যেটির জন্য তাঁকে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়। আর এই ‘সারেং বউ’ উপন্যাসটির স্রষ্টা শহীদুল্লা কায়সার। যিনি তিন পর্যায়ে আট বছর জেলে বন্দি জীবন কাটিয়েছেন এবং জেল জীবনের এই দীর্ঘ সময়ে তিনি পড়াশুনা ও সাহিত্য চর্চা করেছেন নিবিষ্টমনে। ‘সারেং বউ’, ‘রাজবন্দীর রোজনামচা’ ‘সংশপ্তক’ ছাড়াও কারাগারে বসেই তিনি অধিকাংশ গল্প- উপন্যাস রচনা করেছেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত থেকে পাকিস্তানী বাহিনী বাঙালী নিধনযজ্ঞে মেতে ওঠে। শহীদুল্লা কায়সার এই সময়ে ঢাকাতেই আত্মগোপন করে ছিলেন। তিনি অনেককে ভারতে চলে যেতে সাহায্য করেছেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করার জন্য নিজে দেশ ত্যাগ করেননি। তাঁর দেশ ত্যাগ না করার আরও একটি কারণ মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ চিত্র নিজে প্রত্যক্ষ করে তা ইতিহাসে বিধৃত করতে চেয়েছেন। কিন্তু অবশেষে তিনি নিজেই ইতিহাসে পরিণত হয়েছেন। স্বাধীনতা লাভের মাত্র দুই দিন আগে পাকিস্তানী হানাদারদের দোসর আলবদররা তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি আর কখনই ফিরে আসেননি।
শহীদুল্লা কায়সার জন্মগ্রহণ করেন ফেনী জেলার অন্তর্গত মজুপুর গ্রামের সৈয়দ পরিবারে ১৯২৭ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারী। বাবা মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ্ প্রথম সন্তান আবু নঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লা, যাঁর সাহিত্যিক নাম শহীদুল্লা কায়সার। আরবি-ফারসি ও উর্দু ভাষা-সাহিত্যে সুপণ্ডিত মাওলানা হাবিবুল্লাহ্ কলকাতার ‘মাদ্রাসা-ই-আলিয়া’র আরবি সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন। আরবি-ফারসি ও উর্দু ভাষা-সাহিত্যে সুপণ্ডিত হয়েও তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষা, বিশেষত ইংরেজি শিক্ষার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার প্রতি তাঁর ছিল গভীর আগ্রহ আর সেকারণেই তিনি কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন এবং আই.এ. ডিগ্রী লাভ করেন। মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ্ সৎ, উদার, যুক্তিবাদী ও মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন ছিলেন। ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন।
ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার ব্যাপারে মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ছিলেন উদার। তাঁদেরকে তিনি ইংরেজি-শিক্ষা তথা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছেন। এই পরিবারটি প্রথম দিকে কিন্তু মোটেই উদার ছিল না বরং বিভিন্ন ধরনের গোঁড়ামিতে পূর্ণ ছিল। শহীদুল্লার পিতামহ এমদাদউল্লাহ্ সময় থেকে তা সংস্কৃত হতে শুরু করে। এই পরিবারের পুরুষগণ বংশপরম্পরায় পীর বলে পরিচিত ছিলেন। শহীদুল্লা কায়সারের মা সৈয়দা সুফিয়া খাতুন অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন। জমিদারের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও তিনি ছিলেন মানবহিতৈষী একজন মানুষ। সুফিয়া খাতুন নবম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিলেন। উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ না পেলেও তিনি সমাজের সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করতেন এবং দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের খবরাদি রাখতেন। ১৪-১৫ বছর বয়সে মহাত্মা গান্ধীর (১৮৬৯-১৯৪৮) অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর মা সুফিয়া খাতুন স্বদেশী আন্দোলনের সময় দেশীয় কাপড় তৈরির ক্ষেত্রে বেগম রোকেয়ার সাথে কাজ করেছেন। শহীদুল্লা কায়সারের মানস-গঠনে তাঁর মায়ের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। মা সৈয়দা সুফিয়া খাতুন শহীদুল্লার রাজনীতি এবং সাহিত্যিক জীবনের প্রধান অনুপ্রেরণাদাত্রী।
আট ভাই-বোনের মধ্যে শহীদুল্লা কায়সার ছিলেন পিতা-মাতার জ্যেষ্ঠ সন্তান। তাঁর অন্যান্য সাত ভাইবোন যথাক্রমে নাফিসা কবীর, মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ্ ওরফে জহির রায়হান, জাকারিয়া হাবিব, সুরাইয়া বেগম, সাহানা বেগম, মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ্ এবং মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। তাঁরা সবাই খুব মেধাবী।
মার কাছেই শহীদুল্লা কায়সারের পড়াশুনার হাতেখড়ি হয়। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনার শুরু হয় নিজ গ্রাম মজুপুরের আমিরাবাদ বিদ্যালয়ে। একটু বড় হয়ে ওঠার পর মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ্ লেখাপড়া শেখানোর উদ্দেশ্যে ছেলেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন। কলকাতায় আসার পর তাঁকে প্রথমে সরকারী মডেল স্কুলে এবং পরে মাদ্রাসা-ই-আলীয়ার অ্যাংলো পার্সিয়ান বিভাগে ভর্তি করা হয়। শহীদুল্লা কায়সার অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। এখানে তিনি প্রতি বছরই প্রথম স্থান অধিকার করে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীতে ওঠেন এবং ১৯৪২ সালে ষোল বত্সর বয়সে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর তিনি ভর্তি হন অবিভক্ত বাংলার সে সময়ের বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৯৪৬ সালে তিনি এখান থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বি.এ. পাস করেন এবং অর্থনীতিতে এম.এ. পড়ার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। একই সাথে তিনি রিপন কলেজে (বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) আইন বিষয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। সেসময়ে প্রেসিডেন্সি কলেজ ছিল একই সাথে মেধাবী ছাত্র সৃষ্টির ও ছাত্র আন্দোলনের পীঠস্থান। এ কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় শহীদুল্লা কায়সার বামপন্থী ছাত্র রাজনীতির সংস্পর্শে আসেন এবং ছাত্র ফেডারেশনের উত্সাহী সমর্থক ও কর্মী হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। এসময়ই তিনি মার্কসবাদ-লেলিনবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়।
১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তাঁর বাবা ঢাকায় চলে আসেন। ফলে শহীদুল্লা কায়সার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে এম.এ. ভর্তি হন। ঢাকায় এসে সাংগঠনিকভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পূর্বেই তিনি দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং বামপন্থী ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ঢাকায় আসার পর বামপন্থী রাজনীতির নির্দেশে পূর্ববাংলার ছাত্রদের সংগঠিত করার দায়িত্ব তাঁর উপর অর্পিত হয়। পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী হবার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে ১৯৪৭ সালে তিনি আত্মগোপন করেন এবং আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গোপনে গোপনে ছাত্রদের সংগঠিত করেন। আত্মগোপনে থাকার কারণে তাঁর এম.এ. পরীক্ষা দেওয়া হয়নি ফলে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন ও নিয়মিত ছাত্রজীবনের এখানেই ছেদ ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. ডিগ্রী লাভ করা শেষ পর্যন্ত তাঁর হয়ে ওঠেনি।
নিষিদ্ধ ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী হওয়ার অভিযোগে মুসলিম লীগের হুলিয়ায় ১৯৫২ সালের ৩রা জুন তিনি প্রথম গ্রেফতার হন। এ থেকেই তাঁর কারাজীবনের সূচনা হয়। কমিউনিস্ট পার্টির রাজনৈতিক কর্মতত্পরতার জন্য ১৯৫২ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত দশ বছরের মধ্যে নানা সময়ে তাঁকে আট বছর কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে জীবন কাটাতে হয়।
সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি শহীদুল্লা কায়সারের সাংবাদিক জীবন ছিল অনন্য। ১৯৫৬ সালে কারাগার থেকে মুক্তি লাভের পর মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (১৮৮০-১৯৭৬) পরিচালিত ‘সাপ্তাহিক ইত্তেফাক’ পত্রিকায় তিনি যোগদান করেন। এভাবেই শহীদুল্লা কায়সারের সাংবাদিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। ১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক আইন জারি হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ১৪ই অক্টোবর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। জননিরাপত্তা আইনে তাঁকে এ পর্যায়ে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত আটক রাখা হয়। এ সময় তাঁর কারাবাসের সাথী ছিলেন খোন্দকার গোলাম মুস্তফা, রওশন আলী প্রমুখ। ১৯৬২ সালে পূর্ববাংলায় প্রবল ছাত্র-আন্দোলনের ফলে অন্যান্যদের সাথে শহীদুল্লা কায়সারও কারাগার হতে মুক্ত হন। মুক্তি লাভ করেই তিনি ‘দৈনিক সংবাদ’-এর সম্পাদকীয় বিভাগে যোগ দেন।
‘সাপ্তাহিক ইত্তেফাক’ পত্রিকা থেকে সাংবাদিক জীবনের হাতেখড়ি হলেও তাঁর সাংবাদিক জীবনের সমস্ত কৃতিত্ব ও পরিচিতি ‘দৈনিক সংবাদ’-কে ঘিরে আবর্তিত। ‘সংবাদ’ সে সময়ে পূর্ববাংলার প্রগতিশীল লেখক-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীগণের মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পত্রিকাটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এখানে চাকরিকালে শহীদুল্লা কায়সার প্রবীণ ও খ্যাতনামা সাংবাদিক-সাহিত্যিক জহুর হোসেন চৌধুরী (১৯২২-১৯৮০), সত্যেন সেন (১৯০৭-১৯৮১), রণেশ দাশগুপ্ত (১৯২২-১৯৯৭), সন্তোষ গুপ্ত প্রমুখের সাহচর্যে আসেন। ফলে তাঁর চিন্তাস্রোত ও লেখালেখির পরিসর বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীকালে আপন কর্মদক্ষতায় এ পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক পদে উন্নীত হন। তিনি একাধারে মেধাবী, মননশীল, সৎ, আদর্শবাদী ও নির্ভীক সাংবাদিক ছিলেন। সাংবাদিকতার কাজে তাঁর অসম্ভব রকম একাগ্রতা ছিল। তিনি যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করলেও তাঁর জ্ঞান ও দক্ষতার জন্য ক্রমে পত্রিকাটির সব দায়- দায়িত্ব তাঁর উপর ন্যস্ত হয়। তিনি ‘সংবাদ’-এর মধ্যমণিতে পরিণত হন। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের মধ্য রাতে পাকিস্তানী সৈন্যরা বংশালে অবস্থিত ‘সংবাদ’-এর অফিস ভবনটি পুড়িয়ে দেয়ার পরও তিনি পত্রিকাটি পুনঃপ্রকাশের চেষ্টা করেন।
সাংবাদিক জীবনে সাংবাদিকদের দাবি-দাওয়া, সুযোগ-সুবিধা এবং অধিকার আদায়ের ব্যাপারে শহীদুল্লা কায়সার ছিলেন সংগ্রামশীল ও আপসহীন। তিনি একাধিকবার প্রাদেশিক তথা পূর্ব-পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন ও সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সুযোগ্য নেতৃত্ব দেন। সাংবাদিক জীবনের পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতার কারণে শহীদুল্লা কায়সার ১৯৬৬ সালের ১০ই জানুয়ারি রাশিয়ায় যাবার সুযোগ পেয়েছিলেন।
‘সংবাদ’-এর সম্পাদকীয় বিভাগের নির্দিষ্ট লেখা ছাড়াও তিনি ‘দেশপ্রেমিক’ ও ‘বিশ্বকর্মা’ ছদ্মনামে যথাক্রমে সমকালীন দেশীয় রাজনীতির নানা প্রসঙ্গ নিয়ে প্রায় চার বছর ধরে ‘রাজনৈতিক পরিক্রমা’ এবং শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, ধর্ম- ইতিহাস-বিজ্ঞান প্রভৃতি নিয়ে ‘বিচিত্র-কথা’ শীর্ষক দুটি কলাম ‘সংবাদ’-এ লিখেছেন। এই কলাম দুটি সাধারণ মানুষের কাছে উপভোগ্য ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
তাঁর প্রথম কারাবাসকালে ১৯৫২-৫৫ সালে জেলখানায় রাজবন্দি থাকা অবস্থায় তিনি নাটক লিখতে শুরু করেন। চট্টগ্রাম জেলে তিনি ১৯৫২ সালে ‘নাম নেই’ এবং ১৯৫৪ সালে ‘যাদু-ই-হালুয়া’ রচনা করেন। শহীদুল্লা কায়সার বিপ্লবী লেখক। তাঁর বিপ্লবী জীবন-দর্শন সদৃশ ‘সংশপ্তক’ উপন্যাসের সূতিকাগার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। তৃতীয় পর্যায়ের কারাবাসকালে ১৯৫৯-৬২ সালের মধ্যে উপন্যাসটি তিনি লিখেছেন এবং ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে এটি প্রকাশিত হয়। সংশপ্তক তাঁর দ্বিতীয় প্রকাশিত উপন্যাস। তবে তৃতীয় প্রকাশিত গ্রন্থ। ‘কৃষ্ণচূড়া মেঘ’ (১৯৫৯), ‘দিগন্তে ফুলের আগুন’ (১৫ আগস্ট, ১৯৬১), ‘কুসুমের কান্না’ ( ২৬-১-১৯৬২ থেকে ১৪-৬-১৯৬২), চন্দভানের কন্যা (অসম্পূর্ণ) উপন্যাসগুলো গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে। শহীদুল্লা কায়সার ছিলেন বিচিত্র শিল্পী-মনের অধিকারী। তিনি যেমন বিচিত্র বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করেছেন, তেমনি বিচিত্র বিষয় নিয়ে লিখেছেন। তাঁর সাংবাদিক জীবনের গ্রন্থ ‘পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ’ ১৯৬৬ সালে রচিত ও প্রকাশিত হয়। এটি ১৯৬৬ সালের ১০ই জানুয়ারি তাসখন্দ নগরে অনুষ্ঠিত ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার চুক্তি বা বৈঠকের রোজনামচা; ভ্রমণ কাহিনী জাতীয় রচনাও বটে। এটি লেখকের চতুর্থ বা শেষ প্রকাশিত গ্রন্থ।
এছাড়া কারাজীবনে তিনি অসংখ্য কবিতা, গল্প, রম্য রচনা, চিঠিপত্র এবং নিয়মিত ডায়েরি লিখেছেন। কিছু ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে বাদ দিলে চিঠিপত্র বা ডায়েরির সাহিত্যমূল্য নগণ্য নয়।
শহীদুল্লা কায়সারের বেশ কিছু উপন্যাস ও গল্প-প্রবন্ধ অপ্রকাশিত ছিল। দুটি অসম্পূর্ণ উপন্যাস তাঁর আছে। তবে এসব রচনার অধিকাংশই তিনি কারাগারের লোহার ফটকের অভ্যন্তরে লিখেছেন। ‘কবে পোহাবে বিভাবরী’ কারাগারের বাইরে লেখা তাঁর একমাত্র উপন্যাস। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি এটি রচনা করেন। শহীদুল্লা কায়সার ‘কবে পোহাবে বিভাবরী’ উপন্যাসটি লেখা শুরু করেন মুক্তিযুদ্ধের সময়। বইখানি চারটি খণ্ডে সমাপ্ত করার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। কিন্তু দু’খন্ড লেখার পর বইটি অসমাপ্ত থেকে যায়। এ উপন্যাসটিতে মুক্তিযুদ্ধকালে পাক-বাহিনীর অত্যাচার ও ধ্বংসলীলার চিত্র এঁকেছেন তিনি বিরাট এক ক্যানভাসে। মুক্তিযুদ্ধের অস্থিতিশীল ও প্রতিকূল সময়ে শহীদুল্লা কায়সার এই উপন্যাসটি লিখেছেন। চারদিকে হত্যা, ধ্বংস, অগ্নিসংযোগের মধ্যে রাত জেগে তিনি এই উপন্যাসটি লিখতেন। ভোর হবার সাথে সাথে পান্ডুলিপি মাটির তলায় পুঁতে রাখতেন কায়েতটুলির বাড়িতে। রাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্দিষ্ট স্থান থেকে পান্ডুলিপি উঠিয়ে নিয়ে আসতেন এবং ডুবে যেতেন লেখার মধ্যে। এটি তাঁর শেষ রচনা।
তিনি সাময়িক পত্রিকা সম্পাদনার সাথে যুক্ত ছিলেন। তবে স্বনামে কোনো সাময়িক পত্রিকা সম্পাদনা করেননি। ১৯৫৬ সালে জহির রায়হানের (১৯৩৫-৭২) সম্পাদনায় সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সাপ্তাহিক ‘প্রবাহ’ প্রথম প্রকাশিত হয়। ‘প্রবাহ’ প্রতি শনিবার প্রকাশিত হতো। উল্লেখ্য এর প্রধান সম্পাদক ছিলেন কবি আহসান হাবীব (১৯১৭-৮৫) ও প্রকাশক ছিলেন হুমায়ুন খান পন্নি। মাত্র নয়টি সংখ্যা প্রকাশের পর ‘প্রবা’হ বন্ধ হয়ে যায়। এ পত্রিকার সাথে শহীদুল্লা কায়সার প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। মোহাম্মদ শহীদুল্লা নামে ‘প্রবাহ’ পত্রিকায় তাঁর অর্থনীতি বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল।
পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পরিপন্থী মনে করে ১৯৬৭ সালের জুনে তথ্য ও বেতার মন্ত্রী রেডিও ও টেলিভিশনে রবীন্দ্র সংগীত প্রচার নিষিদ্ধ করেন। ২৩ ও ২৪ জুন রবীন্দ্র সংগীত প্রচারের সপক্ষে জোর দাবি সম্বলিত বিবৃতিতে ড. কাজী মোতাহার হোসেন, অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সুফিয়া কামাল প্রমুখ বুদ্ধিজীবীদের সাথে তিনিও স্বাক্ষর করেছিলেন। সে সময়ে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে প্রতিবাদসভা, রবীন্দ্র সংগীত, রবীন্দ্র নাটক প্রচারিত হয়, শহীদুল্লা এগুলির সাথে উদ্যোগী কর্মী হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
শহীদুল্লা কায়সার ১৯৫৮ সালে কলকাতার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য জোহরা বেগম-এর সাথে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। জোহরা বেগম ছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মন্ত্রী আবু আহমদের কন্যা। বামপন্থী ছাত্র-কর্মী শহীদুল্লা কায়সারের সাথে রাজনীতির সূত্রে জোহরা বেগমের পরিচয় ঘটে। তারপর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অবসরে তাঁদের মধ্যে আন্তরিকতার সূত্রপাত এবং এই ঘনিষ্ঠ আন্তরিকতা থেকেই বিয়ে। কিন্তু তাঁদের দাম্পত্যজীবন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবর সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর সামরিক আইনের শাসনাধীনে জননিরাপত্তা অর্ডিন্যান্স মোতাবেক শহীদুল্লা কায়সারকে ১৪ই অক্টোবর মধ্য রাতে গ্রেফতার করা হয়। জোহরা বেগম স্বামীর মুক্তি অনিশ্চিত জেনে কলকাতায় ফিরে যান এবং ১৯৬১ সালে তাঁদের আইনানুগ বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। শহীদুল্লা কায়সার এতে মর্মাহত হন।
বিবাহ-বিচ্ছেদের দরুণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও কিছুকাল পরেই তিনি যুক্তিবাদী ও বাস্তবধর্মী চিন্তার দ্বারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাঁর পরিবার থেকে পুনরায় তাঁর বিয়ের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু শহীদুল্লা কায়সার প্রতিবার কর্মব্যস্ততার অজুহাতে তা থেকে দূরে থাকতেন।
তবে ১৯৬৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শহীদুল্লা কায়সার পুনরায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর স্ত্রী পান্না চৌধুরী কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত বরুড়ার মোসলে উদ্দীন চৌধুরীর কন্যা। উল্লেখ্য তখন ঢাকায় সান্ধ্য আইন বলবত্ থাকায় বরযাত্রীগণ পাশ নিয়ে বিয়েতে যান। বিবাহকালে পান্না চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন মাত্র। পান্না কায়সারের সাথে তাঁর সংসার জীবন সুখের ছিল। প্রায় তিন বছরের দাম্পত্য জীবনে এক কন্যা সন্তান ও এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। কন্যা শমী কায়সার এবং পুত্র অমিতাভ কায়সার।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীদের অনেকে দেশ ছেড়ে গিয়েছিলেন, আবার অনেকে ঢাকা তথা দেশের মধ্যেই আত্মগোপন করেছিলেন। ‘সংবাদ’ অফিস ভস্মীভূত হওয়ার পর শহীদুল্লা কায়সারের ভারতে যাবার ডাক আসে। তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে বার বার তাঁকে নিয়ে যেতে লোক আসে। এরপর কমরেড মণি সিংহ ‘আর এখানে থাকা সঙ্গত নয়’- এ কথা জানিয়ে তাঁর কাছে পত্র লেখেন এবং লাল কালিতে তা নিম্নরেখ করে দেন। রাশিয়ান দূতাবাসও বার বার তাঁকে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু শহীদুল্লা কায়সার দেশ ছেড়ে যাননি। কারণ তিনি ভাবেন সবাই দেশ ছেড়ে গেলে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সাহায্য করবে কে? আর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করার জন্যই রয়ে গেলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পূর্বে অনেকেই কবি সুফিয়া কামালের কাছে রেশন কার্ড রেখে যান। কবি সুফিয়া কামাল সেইসব রেশন কার্ড দিয়ে চাল, ডাল, ঔষধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিস তুলে এনে তাঁর বাসায় জড়ো করতেন এবং পরে শহীদুল্লা কায়সারকে খবর দিতেন। শহীদুল্লা কায়সার সেসব জিনিস মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিতেন।
১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা। পুরান ঢাকার কায়েতটুলির বাসায় শহীদুল্লা কায়সার মোমবাতি জ্বালিয়ে বিবিসি শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। স্ত্রী পান্না কায়সার মেঝেতে বসে মেয়েকে ফিডারে দুধ খাওয়াচ্ছেন। এমন সময় দরজায় ঠক ঠক করে কড়া নাড়ার শব্দ হল। তাঁর ছোট ভাই ওবায়দুল্লা এসে শহীদুল্লাহ কায়সারকে বললেন, ‘বড়দা দরজায় কে যেন কড়া নাড়ছে খুলে দিব?’ তিনি উত্ফুল্লভাবে বলে উঠলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা এসেছে, তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দাও।’ একথা বলে তিনি আলমারি খুলে টাকা বের করলেন মুক্তিযোদ্ধাদেরকে দেওয়ার জন্য। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর মুক্তিযোদ্ধারা নয় চার-পাঁচজন লোক কাল কাপড়ে মুখ ঢেকে ঘরে প্রবেশ করল। তারা ঘরে ঢুকেই জিজ্ঞাসা করল, ‘শহীদুল্লা কায়সার কে?’ শহীদুল্লাহ কায়সার এগিয়ে এসে বললেন, ‘আমিই শহীদুল্লা কায়সার।’ সেই কাল কাপড়ে মুখ ঢাকা লোকগুলি তাঁর হাত ধরে তাঁকে নিয়ে যেতে শুরু করল। সঙ্গে সঙ্গে পান্না কায়সার মেয়ের দুধের ফিডার ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে স্বামীর হাত চেপে ধরলেন, অন্য ঘর থেকে শহীদুল্লা কায়সারের বোন ছুটে এসে ভাইয়ের হাতটি চেপে ধরলেন। কিন্তু তাঁরা শত শক্তি প্রয়োগ করেও ধরে রাখতে পারলেন না স্বামী ও ভাইকে। আল-বদররা স্ত্রী ও বোনের হাতের বাঁধন ছিন্ন করে ধরে নিয়ে গেল তাঁকে। শহীদুল্লা কায়সার যাবার সময় স্ত্রী ও বোনের দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলেছিলেন, ‘ভাল থেকো’। কারফিউ-এর অন্ধকারে তিনি চিরকালের জন্য হারিয়ে গেলেন। তাঁর আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এমনকি তাঁর মৃতদেহও পাওয়া যায়নি।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
জন্ম : শহীদুল্লা কায়সার জন্মগ্রহণ করেন ফেনী জেলার অন্তর্গত মজুপুর গ্রামে ১৯২৭ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি।
মা-বাবা : সৈয়দা সুফিয়া খাতুন ও মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ্।
পড়াশুনা : সরকারী মডেল স্কুলে এবং পরে মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার অ্যাংলো পার্সিয়ান বিভাগে ভর্তি করা হয়। শহীদুল্লা কায়সার অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। এখানে তিনি প্রতি বছরই প্রথম স্থান অধিকার করে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীতে ওঠেন এবং ১৯৪২ সালে ষোল বত্সর বয়সে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর উচ্চতর শিক্ষার জন্য তিনি ভর্তি হন অবিভক্ত বাংলার সে সময়ের বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৯৪৬ সালে তিনি এখান থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বি.এ. পাস করেন এবং অর্থনীতিতে এম.এ. পড়ার মানসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। একই সাথে তিনি রিপন কলেজে (বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) আইন বিষয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তাঁর বাবা ঢাকায় চলে আসেন। ফলে শহীদুল্লা কায়সার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে এম.এ. ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালে এম.এ. পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবার সময় পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী হবার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি আত্মগোপন করেন। ফলে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন ও নিয়মিত ছাত্রজীবনের এখানেই ছেদ ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. ডিগ্রী লাভ করা শেষ পর্যন্ত তাঁর হয়ে ওঠেনি।
পেশাজীবন : ১৯৫৬ সালে কারাগার থেকে মুক্তি লাভের পর মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (১৮৮০-১৯৭৬) পরিচালিত ‘সাপ্তাহিক ইত্তেফাক’ পত্রিকায় যোগদান করেন। এভাবেই শহীদুল্লা কায়সারের সাংবাদিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। এরপর তিনি ১৯৫৮ সালে ‘দৈনিক সংবাদ’-এর সম্পাদকীয় বিভাগে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক আইন জারি হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ১৪ই অক্টোবর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। জননিরাপত্তা আইনে তাঁকে এ পর্যায়ে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত আটক রাখা হয়। এ সময় তাঁর কারাবাসের সাথী ছিলেন খোন্দকার গোলাম মুস্তফা, রওশন আলী প্রমুখ। ১৯৬২ সালে পূর্ব বাংলায় প্রবল ছাত্র- আন্দোলনের ফলে অন্যান্যদের সাথে শহীদুল্লা কায়সারও কারাগার হতে মুক্ত হন। মুক্তি লাভ করেই তিনি ‘দৈনিক সংবাদ’-এর সম্পাদকীয় বিভাগে যোগ দেন। ‘সাপ্তাহিক ইত্তেফাক’ পত্রিকা থেকে সাংবাদিক জীবনের হাতেখড়ি হলেও তাঁর সাংবাদিক জীবনের সমস্ত কৃতিত্ব ও পরিচিতি ‘দৈনিক সংবাদ’-কে ঘিরে আবর্তিত। নিজের প্রগতিশীল রাজনৈতিক আদর্শ ও ধ্যান-ধারণার স্বপক্ষে লেখালেখির সুযোগ পাওয়ায় তিনি অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ‘সংবাদ’ অফিসে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন।
মৃত্যু : ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আল-বদররা তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাঁর আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এমনকি তাঁর মৃতদেহও পাওয়া যায়নি।
তথ্যসূত্র :
সরিফা সালোয়া ডিনার লেখা বই ‘শহীদুল্লা কায়সারের উপন্যাস বিচিত্র বীক্ষণ’ থেকে নেয়া হয়েছে। প্রকাশক : কমল কান্তি দাস, প্রকাশনা: জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারী ২০০৮।
স্ত্রী পান্না কায়সারের সাক্ষাত্কার নেয়া হয়েছে।
লেখক : মৌরী তানিয়া