১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে তত্কালীন পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নির্মম ও পাশবিক হত্যাযজ্ঞ চালায় ঢাকা শহরে। পাক-সেনাদের বর্বরতার এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ভয় আর আতঙ্কে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয় তত্কালীন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ খবর পৌঁছাতেই শিক্ষক, কর্মচারীসহ অনেক সাধারণ মানুষ দলে দলে চলে যেতে থাকেন নিরাপদ আশ্রয়ে। কিন্তু তখনও রয়ে গিয়েছিলেন হাতেগোনা যে কয়জন ব্যক্তি, তাঁদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক হবিবুর রহমান। তাঁর সহকর্মী, বন্ধু এবং পরিচিত অনেকে তাঁকে সেসময় অনুরোধ করেন তাঁদের সঙ্গে চলে যেতে। কিন্তু সবার অনুরোধ হবিবুর রহমান উপেক্ষা করেন দিশেহারা-সঙ্কটাপন্ন সাধারণ মানুষের কথা ভেবে। ২৬ মার্চ ভোর রাতের দিকে পাক-সেনারা ঢুকে পড়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। শিক্ষকদের আবাসিক ভবনের অনেক বাসাই তখন খালি। শহীদ হবিবুর রহমান সপরিবারে রয়ে গিয়েছিলেন যে বাসায়, সেই ‘প-১৯/বি’ নম্বর বাসাটিতে তখনও উড়ছিল কালো পতাকা। এ নিয়ে তাঁর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় পাক-সেনাদের সঙ্গে। পরে সৈন্যরা নিজেরাই জোর করে পতাকা নামায়। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খালি বাসাগুলোতে লুটতরাজ করা শুরু করে পাকিস্তানী সেনারা। হবিবুর রহমান তখন সামনাসামনি গিয়ে তাদের এই ঘৃণ্য কর্মে বাধা দেন এবং অত্যন্ত কঠোর ভাষায় তাদের সমালোচনা করেন। সেনাদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক-বিতণ্ডা হয় এই ব্যাপারেও। পাক-সেনারা পরে প্রস্থান করেছিল হবিবুর রহমানের প্রতি একটা ক্ষোভ নিয়ে। ১২ এপ্রিল আরো কয়েকজন শিক্ষকের একটি দল ক্যাম্পাস ত্যাগ করে যাবার সময় তাঁকেও সঙ্গে যেতে অনুরোধ করলে হবিবুর রহমানের জবাব ছিল: ‘Like the captain of a ship I shall be the last to leave‘।
২৫ মার্চের পরে ইপিআর বাহিনীর একটা অংশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিল প্রতিরক্ষা শক্তি হিসেবে। তাঁদের জন্য খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সরবরাহ করা হতো হবিবুর রহমানের বাড়ি থেকেই। স্ত্রী ওয়াহিদা রহমান নিজ হাতে শত শত রুটি বানাতেন তাঁদের জন্য। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গেও হবিবুর রহমান নিয়মিত যোগাযোগ করতেন এবং তাঁদের বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন। ২৬শে মার্চের পরে ইপিআর সদস্যদের হাত থেকে বাঁচার জন্য পাশের বাসার দুই জন অবাঙালী অধ্যাপক সপরিবারে আশ্রয় চান হবিবুর রহমানের বাসায়। নিজের স্বভাবজাত সরল বিশ্বাসেই সেদিন সহকর্মীদের নিজ বাসায় আশ্রয় দেন হবিবুর রহমান। এপ্রিলের ১৩/১৪ তারিখে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী দ্বিতীয়বারের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এর পরপরই হবিবুর রহমানের বাসায় আশ্রয় নেয়া দুই অবাঙালী অধ্যাপক সপরিবারে বের হয়ে চলে যায় এবং পাক-বাহিনীকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে তাদের জঘন্য কর্মকাণ্ডে সাহায্য করে। যতদূর জানা যায় পাক সেনারা দ্বিতীয়বার ক্যাম্পাসে গেলে হবিবুর রহমান তাদের কাছে সেনা-সদস্যদের অসদাচরণের কথা তুলে ধরেন। তখন ক্যাম্পে গিয়ে অভিযোগ দায়েরের কথা বলে পাক বাহিনী তাদের পূর্বের জমানো ক্ষোভ এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে হবিবুর রহমানকে ধরে নিয়ে গিয়ে জুবেরী ভবনে তাদের ক্যাম্পে রাখে। পাক-সেনাদের হীন ও জঘন্য কর্মকাণ্ডকে ভালো হিসেবে তুলে ধরে তারা একটি চিঠি লিখে দিতে বলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় এই শিক্ষককে। কিন্তু তাদের এই ঘৃণ্য প্রস্তাবে রাজি হননি হবিবুর রহমান। সম্ভবত সেদিনই তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে বর্বর পশুর দল। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে যিনি চরম বিপদের সময় সুযোগ পেয়েও নিরাপদ স্থানে চলে যাননি, অনেক অবাঙালী অধ্যাপকের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন যিনি নিজের কর্তব্যবোধ থেকে, বর্বর পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর হাতে তাঁকেই দিতে হলো নিজের প্রাণটি। তাঁর ছোট দুই মেয়ে ঊষা ও ঊর্মি তখন সদ্য স্কুলে যেতে শুরু করেছে। বাবার এভাবে হারিয়ে যাওয়াকে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি তারা। বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়া আর হয় না তাদের। জুবেরী ভবনের আশপাশে তারা খুঁজে বেড়াত তাদের শহীদ বাবাকে। বড়দের কেউ বাবাকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিচ্ছে না, এই নিয়ে তাদের ছিল অনেক অভিমান। ডাকঘরের পিয়ন একদিন জানালেন এ বাসার বাচ্চারা কী সব কাগজ ডাকবাক্সে ফেলে যায়, কাগজে লেখা ‘বাবা তুমি ফিরে এসো’।
শহীদ হবিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯২১ সালের ১লা জানুয়ারি নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার বালিয়াধার গ্রামে এক সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমান পরিবারে। পিতা মৌলবি কলিম উদ্দিন ভূঁইয়া ও মাতা সিদ্দীকা খাতুনের ছয় ছেলেমেয়ের মধ্যে হবিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয় সন্তান। পিতার পেশা ছিল মূলত কৃষিকাজ। নিজের অনেক বিষয়-সম্পত্তি সহযোগে সংসারে সচ্ছলতা বজায় রেখেছিলেন কলিম উদ্দিন ভূঁইয়া। হবিবুর রহমানকে ৩/৪ বছরের শিশু অবস্থায় রেখে পরলোকগমন করেন মাতা সিদ্দীকা খাতুন। সন্তানদের লালন-পালনের জন্য দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করেন কলিম উদ্দিন ভূঁইয়া। দ্বিতীয় স্ত্রী আছিয়া খাতুনের নিজের গর্ভজাত কোনো সন্তান না থাকলেও পরিবারের ছয় সন্তানকে নিজের ছেলেমেয়ের মতোই আদর-ভালোবাসায় বড় করেন তিনি। ছেলেমেয়েরাও তাদের মা বলতে জানত আছিয়া খাতুনকেই। ১৯৫৬ সালে কলিম উদ্দিন সাহেব মারা যান।
নোয়াখালী জেলার প্রত্যন্ত বালিয়াধার গ্রামটিতেই শৈশবের দিনগুলো কেটেছে হবিবুর রহমানের। গ্রামে পড়াশুনার প্রচলন তেমন ছিল না। অধিকাংশ পরিবারের বাবা-মা তাদের সন্তানদের আরবি শিক্ষা দিয়েই ক্ষান্ত হতেন। গ্রামের কৃষক পরিবারের ছেলেরা কিছুদূর পড়াশুনা করে ক্ষেত-খামারে কাজ করবে, এমনটাই আশা করতেন সবাই। হবিবুর রহমানও শৈশবে পারিবারিক ধর্মীয় পরিবেশে ধর্মীয় জ্ঞান এবং আরবি শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর বড় ভাই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন, আরবি শিক্ষার পাশাপাশি ম্যাট্রিক পাশ করেছিলেন তিনি। অত্যন্ত প্রতিবাদী ও বিপ্লবী ছিলেন তিনি এবং সাধ্যমতো চেষ্টা করতেন গরীব-দুঃখীদের সাহায্য করতে। বাবার জমিজমা গ্রামের প্রভাবশালী লোকজন জবরদখল করতে গেলে তাদেরকে বাধা দিতে গিয়ে সেই লোকদের হাতেই প্রাণ দিতে হয় তাঁকে। অত্যন্ত সরল মনের মানুষ পিতা কলিম উদ্দিন ভূঁইয়া ছেলের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি। বড় ভাইয়ের মতো হবিবুর রহমানও শুধু আরবী শিক্ষা নিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি। পড়াশুনার প্রতি তাঁর অদম্য আগ্রহ ছিল সেই ছোটবেলা থেকেই। মেধাবী বড় ভাইয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুও তাঁকে অনেকটা পরিচালিত করেছিল পড়াশুনার প্রতি। নিজের ইচ্ছায় বালিয়াধার গ্রাম থেকে পাশ্ববর্তী কয়েকটা গ্রামের পরে বটগ্রামের কাছে অবস্থিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। প্রতিদিন দেড়-দুই মাইল পথ পায়ে হেঁটে সেই বিদ্যালয়ে পড়তে যেতেন হবিবুর রহমান। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকতেই তাঁর অসাধারণ মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি সেসময় পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি লাভ করেন। স্কুলজীবনের বৃত্তির অর্থ এবং ছাত্র পড়িয়েই নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন তিনি। তাঁর অন্য ভাইবোনেরা বেশিদূর পড়াশুনা করেননি। কিন্তু নিজের অদম্য আগ্রহ ও অধ্যবসায়ের জন্য অজ পাড়া গাঁ থেকে হবিবুর রহমান উঠে এসেছিলেন উচ্চশিক্ষার শিখরে।
প্রাথমিক শিক্ষা শেষে হবিবুর রহমান ভর্তি হন নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার তত্কালীন নামকরা ‘দত্তপাড়া’ উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই স্কুল থেকেই ১৯৩৮ সালে পাঁচটি বিষয়ে লেটারসহ স্টারমার্ক পেয়ে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন তিনি। সেই সময়ে পাঁচ বিষয়ে লেটার পাওয়ার ঘটনা ছিল বিরল। ম্যাট্রিক পাশ করার পর হবিবুর রহমান ভর্তি হন উপমহাদেশের তত্কালীন অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে। এই কলেজ থেকে তিনি ১৯৪০ সালে প্রথম বিভাগে আই.এস.সি. পাস করেন এবং একই বছরে ভর্তি হন কলকাতার প্রসিদ্ধ প্রেসিডেন্সি কলেজের গণিত বিভাগে বি.এস.সি. অনার্স শ্রেণীতে। তিনি ১৯৪৩ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন এই কলেজ থেকে। এরপর তিনি এম.এস.সি. শ্রেণীতে ভর্তি হন আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৪৬ সালে তিনি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রেকর্ড নম্বরসহ গণিতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এম.এস.সি. ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর এই অসাধারণ ফলাফলে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্কালীন উপাচার্য ও প্রখ্যাত গণিতবিশারদ স্যার জিয়াউদ্দীন বাংলার তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী এ. কে. ফজলুল হকের নিকট হবিবুর রহমানকে স্টেট স্কলারশিপ ও চাকরি দেওয়ার জন্য বিশেষ সুপারিশ করে পত্র দেন। এম.এস.সি. ডিগ্রি লাভ করার পর একই বছরে হবিবুর রহমান কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে গণিতের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। এর কিছুদিন পরেই তিনি বদলী হন কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে, আরও পরে বদলী হন ঢাকা কলেজে। ১৯৫২ সাল পর্যন্ত সেখানেই সুনামের সঙ্গে শিক্ষকতা করেন তিনি। ১৯৫৪ সালের নভেম্বরে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ‘৫৪ সালেই তিনি কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত শাস্ত্রে ট্রাইপস ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের রিডার পদে উন্নীত হন তিনি। ১৯৬২ সালে তিনি উচ্চতর শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন এবং ফলিত গণিতের বিভিন্ন উচ্চতর বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ফিরে এসে ১৯৬৪ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এ দায়িত্ব পালন করেন। পরের বছর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হলের প্রাধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯৭০ সালে তিনি পুনরায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ‘৭১-এর ১৫ এপ্রিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে শহীদ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ পদেই নিয়োজিত ছিলেন তিনি।
আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন হবিবুর রহমান বিয়ে করেন এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের কন্যা ওয়াহিদা রহমানকে। একই এলাকার হাজী মো. ইসমাইল চৌধুরী ও মোসাম্মাত্ রকিবুন নেসার কন্যা ছিলেন ওয়াহিদা রহমান। দুই পুত্র এবং চার কন্যাসন্তানের জনক-জননী হবিবুর রহমান-ওয়াহিদা রহমান দম্পতি। কর্মক্ষেত্রে অত্যন্ত কঠোর প্রকৃতির হবিবুর রহমান পারিবারিক জীবনে ছিলেন সম্পূর্ণ অন্যরকম একজন মানুষ। একজন অনুরক্ত স্বামী ও স্নেহশীল পিতা হিসেবে তিনি গঠন করেছিলেন অত্যন্ত সুখময় পারিবারিক জীবন। গল্পগুজবে মাতিয়ে রাখতেন ছেলেমেয়েদের, কবিতা শেখাতে গিয়ে নিজেই কবিতা আবৃত্তি করে শোনাতেন, খেলার ছলে অঙ্ক শেখাতেন ছোটদের, সবাইকে স্বপ্ন দেখাতেন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের। ছেলেমেয়েদের জীবনের জন্য মৌলিক ভিত্তিটা তৈরি করে দিয়েছিলেন তিনি। সন্তানদের তিনি বলতেন, ‘জ্ঞান একটি প্রজ্জ্বলিত শক্তি, যা আলোকিত করে নিজেকে এবং সমাজকে।’ নিজের ছয় সন্তানের সঙ্গে ভাইদের দুই সন্তানকেও নিজের বাসায় রেখে লেখাপড়া করিয়েছেন হবিবুর রহমান। স্ত্রী ওয়াহিদা রহমান ছিলেন অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও কর্মঠ একজন গৃহিণী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষক ভবনের বাসাটিতে প্রায় সবরকমের শাকসবজি চাষ করতেন তিনি। পরিবারের প্রয়োজনীয় সব সবজির যোগান হতো এই সবজিবাগান থেকেই। হবিবুর রহমানের মৃত্যুর পর স্ত্রী ওয়াহিদা রহমান হয়ে ওঠেন পরিবারের অভিভাবক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামান্য কিছু অর্থ-সাহায্যের বাইরে তিনিই পরিবারের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করতেন। ২০০২ সালে পরলোকগমন করার পূর্ব পর্যন্ত তাঁর দেখাশোনার মধ্যেই সন্তানেরা বড় হয়েছেন। তাঁদের ছেলে মো. খায়রুল এনাম ও আনিসুর রহমান এবং মেয়েরা রোক্সানা রাজ্জাক, শারমীন রহমান চৌধুরী, নাসরিন রহমান মোল্লা ও মোনালিসা হাসান।
সততা, আদর্শ, মূল্যবোধ ও নিয়মনিষ্ঠতার সমন্বয়ে নিজেকে একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে গঠন করেছিলেন হবিবুর রহমান। মুক্তবুদ্ধি ও অসাম্প্রদায়িক জীবনবোধে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। ১৯৪৬ সালের আগস্ট মাসে কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় স্থানীয় হিন্দুদের নিরাপদ এলাকায় স্থানান্তরিত করার কাজে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছিলেন হবিবুর রহমান। ‘৫০-এ ঢাকায় হিন্দু-বিরোধী দাঙ্গার সময়ও হবিবুর রহমান অনেক হুমকির মুখে এগিয়ে এসেছিলেন দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে এবং সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। চরম বিপদের মধ্যেও ধীরস্থিরভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারতেন তিনি। ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলনের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহাকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। এর প্রতিবাদে পরিচালিত বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হবিবুর রহমান। তাঁর সুপরিকল্পিত নির্দেশনাতেই ড. জোহার মৃত্যুর পর আহত-নিহতদের খোঁজখবর নেয়ার কাজটি সুসম্পন্ন হয়েছিল। যে কোনো পরিস্থিতিতে সত্য ও ন্যায়ের পথে অটল থাকতেন হবিবুর রহমান। সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করতেন তিনি, কারো কাজ পছন্দ না হলে তার সামনেই স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতেন নিজের অসন্তুষ্টির কথা।
কর্মব্যস্ত জীবনের মাঝেও শহীদ হবিবুর রহমান নিজেকে জড়িত রেখেছিলেন বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে কর্মজীবনের শুরুতে তিনি বৈজ্ঞানিক মানবতাবাদের হোতা বিপ্লবী মানবেন্দ্রনাথ রায়ের চিন্তাধারা দিয়ে পরিচালিত র্যাডিক্যাল হিউম্যানিস্ট দলের সঙ্গে যুক্ত হন। ঢাকা কলেজে শিক্ষকতা করার সময় তিনি অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. মোহাম্মদ তাজুল হোসেন, ড. আলী মোহাম্মদ ইউনুস প্রমুখ বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে গঠন করেছিলেন ঢাকা র্যাশনালিস্ট ক্লাব। এ সংস্থার পক্ষ থেকে সেসময়ে প্রকাশিত ‘মুক্তি’ নামের মাসিক পত্রিকাটির প্রকাশক ছিলেন হবিবুর রহমান, সম্পাদনার ক্ষেত্রেও মূল দায়িত্ব পালন করতেন তিনিই। অন্তরঙ্গ বন্ধু জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাসহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির আসা-যাওয়া ছিল হবিবুর রহমানের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসাটিতে।
সহকর্মী ও সাধারণের সঙ্গে হবিবুর রহমানের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল। সদালাপী এবং সকলের সঙ্গে মিশুক একজন মানুষ ছিলেন তিনি। সহকর্মী ও পরিচিতজনদের কাছে তিনি ছিলেন প্রিয় ‘হাবিব ভাই’। ছাত্রছাত্রীদের প্রতি তিনি ছিলেন একজন দায়িত্বশীল ও স্নেহশীল শিক্ষক। ক্লাশকক্ষে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতেন অত্যন্ত যত্নসহকারে, আবার ক্লাশকক্ষের বাইরেও ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপারে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সচেতন। পেশাগত জীবনের সততা, বিচক্ষণতা, মনের তারুণ্য এবং ছাত্রছাত্রীদের প্রতি তাঁর স্নেহ-মমতা ও দায়িত্বশীলতার জন্য তিনিও হয়ে উঠেছিলেন ছাত্রছাত্রীদের পরম শ্রদ্ধেয় ও অত্যন্ত প্রিয় শিক্ষক। নিজে শুদ্ধ সংস্কৃতির চর্চা করতেন এবং ছাত্রছাত্রীদেরও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর তিনি বিভিন্ন প্রশাসনিক ও ছাত্র-সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে নিয়োজিত হন। ছাত্রছাত্রীদের সফল ভবিষ্যৎ-পেশাজীবন গঠনের জন্য তিনি অত্যন্ত সচেতন থাকতেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন। সৈয়দ আমীর আলী হলের প্রাধ্যক্ষ থাকাকালে গভীর রাতে তিনি হলের বিভিন্ন কক্ষে গিয়ে ছাত্রদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতেন। কোনো অসুস্থ ছাত্রকে সুস্থ না দেখা পর্যন্ত তিনি স্বস্তি বোধ করতেন না। পরিবারের সদস্যদের তিনি বলতেন ‘বাবা-মা, ভাই-বোন, আপনজন ছেড়ে ওরা (ছাত্ররা) আসে এখানে পড়াশুনা করবার জন্য; আমরা যদি ওদের না দেখি, ওদের না বুঝি তবে ওরা যাবে কোথায়?’
গণিত বিষয়ে অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন হবিবুর রহমান। গবেষণার প্রতি তাঁর ছিল বিশেষ আগ্রহ। একজন গণিতশাস্ত্র বিশারদ হিসেবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন তিনি। গণিতের পাঁচশত বছরের একটি অমীমাংসিত সূত্রের উপর গবেষণা করে তিনি ১৯৭০-এর অক্টোবরে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ মতামত ব্যক্ত করেন। জাতীয় উন্নতির জন্য মাতৃভাষায় গণিত তথা বিজ্ঞানের উচ্চতর বিষয়সমূহের চর্চার প্রয়োজনীয়তা তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন এবং উত্সাহী ছিলেন মাতৃভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষাদানে। বাংলা ভাষায় রচিত তাঁর গ্রন্থগুলো হলো স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীর জন্য উচ্চাঙ্গের গণিতগ্রন্থ ‘যোগাশ্রয়ী বীজগণিত’, স্নাতক শ্রেণীর জন্য ‘কলেজ বীজগণিত’, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ‘নতুন বীজগণিত’ এবং ৫ম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণীর জন্য ‘পাটীগণিত’। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীর জন্য রচিত বই দুটি সেসময় অত্যন্ত আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এছাড়া বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর প্রবন্ধ ও নিবন্ধের মধ্যে রয়েছে ‘On Pell’s Equation’, ‘On Fermat’s Last Theorem’, ‘On Crisis of Civilization’ (1950), ‘On Fundamental Human Rights’ (1969), ‘নতুন শিক্ষানীতি’ (১৯৬৯) এবং ‘ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক’ (১৯৭০)। শিক্ষা সংস্কারেও তিনি অত্যন্ত সাহসী, স্পষ্ট ও ফলপ্রসূ ভূমিকা রেখেছিলেন। তাঁর শাহাদাত বরণে গণিতের একজন প্রথিতযশাকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শহীদ হবিবুর রহমানের স্মৃতিকে ধরে রাখতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘শহীদ হবিবুর রহমান হল’। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সম্মানিত করেছে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে।
নিজের বিষয়ের বাইরে সাহিত্য, শিল্প ও সংগীতের প্রতিও হবিবুর রহমানের ছিল অত্যন্ত অনুরাগ। খেলার মাঠে, বক্তৃতা মঞ্চে, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ও ক্লাবে তাঁর ছিল সরব উপস্থিতি। খেলাধুলা ও সংগীতকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন তিনি। নিজে টেনিস খেলতেন এবং সন্তানদেরকেও পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সংগীতের প্রতি উত্সাহিত করতেন। ঘরোয়া পরিবেশে ছেলেমেয়েদের সংগীত শিক্ষারও ব্যবস্থা রেখেছিলেন তিনি। সাহিত্যচর্চা করতে ভালোবাসতেন, লেখালেখি করতেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। সবকিছু মিলিয়ে তিনি ছিলেন সংস্কৃতিমনা, উদার বিদগ্ধ মনের একজন ব্যক্তিত্ব। সাধারণ মানুষের প্রতি মমত্ববোধ ছিল তাঁর সহজাত। শৈশবের দিনগুলোতে যেসব সাধারণ মানুষের সংস্পর্শ তিনি পেয়েছিলেন, তাঁদের কথা ভুলতে পারতেন না কখনো। ভুলতে পারতেন না ছেলেবেলার স্মৃতি জড়ানো চাটখিলের বালিয়াধার নামক অজ পাড়াগ্রামটিকে। সময় পেলেই নারিকেল-সুপারির ছায়াঘেরা, আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে খালের ধারের বাড়িটিতে ছুটে যেতেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে।
কর্মক্ষেত্রের একজন অকুতোভয় আদর্শবান শিক্ষক, পাকিস্তানী শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সব সময়ের সোচ্চার ব্যক্তিত্ব এবং পরিবারের সবার প্রিয় মানুষ হবিবুর রহমান জীবনের শেষ মুহূর্তটি পর্যন্ত স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের। তাঁর অটুট বিশ্বাস ছিল বাংলার সাধারণ মানুষের স্বাধীনতায় ও মুক্তিতে। পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনীর বুলেটের সামনে উন্নত শিরে শাহাদাত বরণ করে তিনি তাঁর সেই সাহসী ও গভীর আত্মবিশ্বাসের জানান দিয়েছিলেন। শহীদ হবিবুর রহমানের আমৃত্যু স্বপ্ন ও বিশ্বাসকে যথাযথ সম্মান জানাতে পারবে কেবল স্বাধীন বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের নির্বিঘ্ন জীবন এবং সমাজের সর্বস্তরে সত্য, আদর্শ ও ন্যায়নীতির মহিমান্বিত প্রতিষ্ঠা।
জীবনী সংক্ষেপ
পূর্ণনাম: হবিবুর রহমান
জন্ম: ১৯২১ সালের ১লা জানুয়ারি এক সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমান পরিবারে জন্মস্থান: নোয়াখালী জেলার বালিয়াধার গ্রামে।
পিতা-মাতা: পিতা মৌলবি কলিম উদ্দিন ভূঁইয়া ও মাতা সিদ্দীকা খাতুনের ছয় ছেলেমেয়ের মধ্যে হবিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয় সন্তান। হবিবুর রহমানকে ৩/৪ বছরের শিশু অবস্থায় রেখে মাতা সিদ্দীকা খাতুন পরলোকগমন করলে কলিম উদ্দিন ভূঁইয়া আছিয়া খাতুনকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। আছিয়া খাতুনের নিজের গর্ভজাত কোনো সন্তান না থাকলেও হবিবুর রহমানসহ পরিবারের ছয় সন্তানকে নিজের ছেলেমেয়ের মতোই আদর-ভালোবাসায় বড় করেন তিনি।
স্ত্রী: ওয়াহিদা রহমান
শিক্ষা: ম্যাট্রিকুলেশন (মাধ্যমিক)- দত্তপাড়া হাইস্কুল (১৯৩৮); আই.এস.সি. (উচ্চ মাধ্যমিক)- কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (১৯৪০); বি. এস.সি. (অনার্স)- প্রেসিডেন্সি কলেজ (১৯৪৩); এম.এস.সি.- আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৪৬); ১৯৬২ সালে তিনি উচ্চতর শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন এবং ফলিত গণিতের বিভিন্ন উচ্চতর বিষয়ে অধ্যয়ন করেন।
পেশা: শিক্ষকতা।
কর্মজীবন: কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে গণিতের লেকচারার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন হবিবুর রহমান। পরে তিন বদলী হন কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে এবং আরও পরে ঢাকা কলেজে। ১৯৫৪ সালের নভেম্বরে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। একই বছর তিনি কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত শাস্ত্রে ট্রাইপস ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের রিডার পদে উন্নীত হন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে ফিরে এসে ১৯৬৪ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে তিনি পুনরায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে শহীদ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ পদেই নিয়োজিত ছিলেন তিনি।
প্রকাশনা: গণিত বিষয়ে অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন তিনি। ১৯৭০-এর অক্টোবরে তিনি গণিতের পাঁচশত বছরের একটি অমীমাংসিত সূত্রের সঠিক মীমাংসা করতে সক্ষম হন। বাংলা ভাষায় রচিত তাঁর গ্রন্থগুলো হলো স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীর জন্য ‘উচ্চাঙ্গের গণিতগ্রন্থ’, ‘যোগাশ্রয়ী বীজগণিত’, স্নাতক শ্রেণীর জন্য ‘কলেজ বীজগণিত’, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ‘নতুন বীজগণিত’ এবং ৫ম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণীর জন্য ‘পাটীগণিত’। এছাড়া বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর প্রবন্ধ ও নিবন্ধের মধ্যে রয়েছে ‘On Pell’s Equation’, ‘On Fermat’s Last Theorem’, ‘On Crisis of Civilization’ (1950), ‘On Fundamental Human Rights’ (1969), ‘নতুন শিক্ষানীতি’ (১৯৬৯) এবং ‘ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক’ (১৯৭০)।
মরণোত্তর সম্মাননা: শহীদ হবিবুর রহমানের স্মৃতিকে ধরে রাখতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘শহীদ হবিবুর রহমান হল’। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সম্মানিত করেছে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে।
মৃত্যু: ১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী হবিবুর রহমানকে তাঁর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবন থেকে মিথ্যা অভিযোগে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
তথ্যসূত্র:
– সাক্ষাত্কার: মোঃ খায়রুল এনাম (শহীদ হবিবুর রহমানের ছেলে); অধ্যাপক, স্থাপত্য বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।
– শহীদ হবিবুর রহমানের সংক্ষিপ্ত জীবনী; শহীদ হবিবুর রহমান হল; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; ২০০৭।
– শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারকগ্রন্থ; বাংলা একাডেমী; ১৯৯৪।
লেখক : মোঃ কুতুব উদ্দিন সজিব