বিমান বাহিনী থেকে অবসর নিয়ে করেপোরাল আবুল বাশার মো. আবদুস সামাদ একটা ‘দায়িত্ব’ নিয়ে গ্রিন হাইজ পেট্রোল পাম্পের ব্যবস্থাপকের কাজে লেগে গেলেন। ঢাকার সাইন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের এই পেট্রোল পাম্পের মালিক পাকিস্তানের এক বাঙালি সিএসপি কর্মকর্তা আহমেদ ফজলুর রহমান, তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে থাকেন। তিনিই তাঁকে এখানে কাজ দিয়েছেন। পেট্রোল পাম্পের তেল বিক্রি করার কাজটা আবদুস সামাদকে দেখতে হত, তবে মূল কাজ ছিল ভিন্ন।
এই পেট্রোল পাম্প থেকে ভারতীয় হাইকমিশন নিয়মিত তেল সংগ্রহ করত। মাস শেষে তাঁরা পাওনা পরিশোধ করতেন। আবদুস সামাদ একদিন নিজের অফিসে বসে কাজ করছেন। বাইরে তাকিয়ে দেখলেন, ভারতীয় হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার মি. জে জর্জ নিজের গাড়িতে তেল নিতে এসেছেন। সুযোগটা হাত ছাড়া করলেন না আবদুস সামাদ। ভারতীয় কর্মকর্তার দিকে এগিয়ে গিয়ে নিজের অফিসে চায়ের আমন্ত্রণ জানালেন। অফিসার আসলেন, বসলেন। কিন্তু চা খেলেন না। বললেন, বলেন, কেন ডেকেছেন। কোনো ভনিতা না করেই আবদুস সামাদ বললেন, দেখুন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার জন্য আমরা কাজ করছি। আপনাদের সাহায্য চাই। এ নিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই। জর্জ থামিয়ে দিয়ে বললেন, এখানে এই আলাপ করা যাবে না। আপনি বাসায় আসেন। বাসার ঠিকানা দিয়ে ওই দিন বিকেলেই আসতে বললেন। পেট্রোল পাম্পের কাছেই সেই বাসা।
আবদুস সামাদ তেলের হিসাবের খাতাসহ আরো কিছু কাগজ-পত্র নিয়ে (যেন কেউ অন্য কিছু ভাবতে না পারে) ভারতীয় কর্মকর্তার বাসায় গিয়ে হাজির হলেন। বাসার সামনে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিলেন জর্জ। নিয়ে ভিতরে বসালেন। কিছু আপ্যায়নও করলেন।
আবদুস সামাদ বলতে শুরু করলেন, দেখুন আমরা পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করতে চাই। অস্ত্রের মাধ্যমে অভ্যূত্থান করে দেশকে স্বাধীন করতে চাই। আমাদের সঙ্গে অনেক বাঙালি আছে। কিন্তু এটা ভারতের সহায়তা ছাড়া সম্ভব না।
জর্জ বললেন, এটা নিয়ে আমি কথা বলতে পারব না। ফাস্ট সেক্রেটারি পি এন ওঝা সাহেব কথা বলতে পারবেন। কিন্তু তিনি এখন ছুটিতে আছ্নে, ফিরলে কথা বলা যাবে।
ওঝা ছুটি থেকে ফেরার পর আবদুস সামাদ আর কমান্ডার মোয়াজ্জেম তাঁর সঙ্গে দেখা করেন এবং বিষয়টি উত্থাপন করেন। বিশেষ করে যখন বাঙালি সেনারা পূর্ব পাকিস্তানে সব পশ্চিম পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের বন্দি করে ফেলবে এবং নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করবে, তখন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে কোনো বিমান যেন না আসতে পারে ভারত সেই সাহায্যটুকু করবে। একটি নির্দিষ্ট দিনে এই ঘটনাটি ঘটানো হবে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিমান ঢাকায় আসতে হলে ভারতের আকাশসীমা পাড়ি দিতে হয়। ভারত যদি তার আকাশসীমা পাকিস্তানকে ব্যবহার করতে না দেয় তাহলে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিমান ঢাকায় আসতে পারবে না। আর এই সুযোগে সরকারকে আলোচনায় বাধ্য করে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার বিষয়টির সুরাহা করা হবে। পি এন ওঝা মনোযোগ দিয়ে এ নিয়ে আলোচনা করলেন এবং জানালেন, যত দ্রুত সম্ভব তাদের বিষয়গুলো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
এর কয়েকদিন পরেই পি এন ওঝা ভারত সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে গ্রিন সিগন্যাল দেন। তখন আবদুস সামাদ, আলী রেজা আর স্টুয়ার্ড মুজিবুর রহমান আলোচনার জন্য সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা যাওয়ার জন্য ফেনীতে হাজির হন। পরদিন আবদুস সামাদ থেকে যান, বাকি দজুন আগতলায় যান। তাঁরা ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফিরে আসেন।
কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন তখন বরিশালে আইএলবিটিএলএ এর চেয়ারম্যান। তাঁকে গিয়ে সবকিছু জানানো হল। তার মধ্যেই খবর পেলেন দিল্লি থেকে মিসেস ইন্দিরা গান্ধী সরকার এ ব্যাপারে গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন। এরপর আরো উৎসাহ নিয়ে সবাই দেশকে স্বাধীন করার কাজে লেগে গেলেন। যার সূত্র ধরেই সূত্রপাত ঘটে স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম মাইলফলক ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র‘ মামলার। সেই মামলায় বঙ্গবন্ধুসহ ৩৫ জন অভিযুক্ত হন। আর চারজন হন বৈরি সাক্ষী।
আবদুস সামাদের জন্ম পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ মিঠাখালী গ্রামে। মধ্যস্তরের কৃষক বাবা ইনতি আালী মৃধা আর মা মানিকজান বিবির সন্তান সামাদ ১৯৩০ সালের ডিসেম্বর মাসে জন্মগ্রহণ করেন। (পরিবারের সদস্যদের দেওয়া তথ্য।) দুই ভাই আর তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। নানা বাড়ি ছিল মঠবাড়িয়া ঘটিচূড়া গ্রামে; সেখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনার শুরু। সেখানেই পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তিনি। এরপর চলে যান বাগেরহাটের কচুয়াতে। সেখানে গিয়ে কে এম সোবহান হাই স্কুলে ভর্তি হন। সেখানেই সহপাঠী হিসেবে পান কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে। সেখান থেকে দুজন একসঙ্গে মেট্রিক পাস করেন। তারপর চাখার কলেজে গিয়ে ভর্তি হন ইন্টারমিডিয়েট। সেখানে পড়া অবস্থাতেই মোয়াজ্জেম হোসেন পাকিস্তান নৌ বাহিনীতে চাকরি নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান চলে যান। আর আবদুস সামাদ ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকায় এসে জগন্নাথ কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন। পড়ার সময়ই ১৯৫০ সালে বিমান বাহিনীতে চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দেন এবং টিকে যান। পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে তিনি প্রশিক্ষণের জন্য করাচি চলে যান। সেখানে থাকার সময় কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন সাহেবের সঙ্গে আবার যোগাযোগ হয়। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহের কারণে সেখানকার ইসলামিয়া কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেন। পাশাপাশি বিমান বাহিনীর বিভাগীয় পরীক্ষায়ও ভাল করেন। করাচিতে চাকরির সময়ে অন্য অনেক বাঙালির মতোই আবদুস সামাদকেও নিপীড়নের শিকার হতে হয়। অপমান আর অপদস্ত হওয়া ছাড়া তাদের যেন আর কিছুই করার নেই। দীর্ঘদিন চাকরি করার পরেও তাঁকে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছিল না শুধু বাঙালি হওয়ার কারণে। একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এরপর আবদুস সামাদ সব মিলিয়ে প্রায় ১১ বছর পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে চাকরি করে ১৯৬১ সালে অবসর নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানে চাকরির সময়ে যেসব বাঙালি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়েছিল তা অক্ষুন্ন থাকে। এরই মধ্যে ১৯৬৪ সালে একদিন মোয়াজ্জেম হোসেন ঢাকায় আসলে আবদুস সামাদ তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। তখন মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আমি একটা ভাল কাজে হাত দিয়েছি। তোমাদের দরকার হবে। সময় হলে আমার সঙ্গে কাজে যোগ দিতে হবে।’ কী কাজ, কোনো কিছু না বুঝেই আবদুস সামাদ রাজি হন।
১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়। তখন পাকিস্তান বিমান বাহিনী থেকে তাঁকে আবার রিকল করা (পুনরায় ডাকা) হয়। তিনি আবার করাচি যান এবং কাজে যোগ দেন। যদিও যুদ্ধের ময়দানে যাওয়ার আগেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। ফলে তাঁকেও চাকরি থেকে বাদ দিয়ে ঢাকায় ফিরতে বলা হয়। আবদুস সামাদ ঢাকায় না ফিরে কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন সাহেবের সঙ্গে দেখা করেন। তখনি কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন সাহেব সব পরিকল্পনা খুলে বলেন। তিনি জানান, পাকিস্তানের বিভিন্ন বাহিনীর বাঙালি সেনা সদস্যরা গোপনে অভ্যূত্থানের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনীর সদস্যরা ছাড়াও প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাও জড়িত। কামান্ডার মোয়েজ্জেম হোসেন, কমান্ডার আবদুর রউফ, স্টুয়ার্ড মুজিবুর রহমানসহ কয়েকজন প্রতি মাসেই পালা করে বিভিন্ন কাজের জন্য ছদ্মনামে ঢাকায় আসেন। আবার কাজ শেষ করে পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে যান। ঢাকায় এ কাজকে সমন্বয় করার জন্য তাদের একজন বিশ্বস্ত লোকের দরকার। কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন ঢাকার সমন্বয়কারীর দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আবদুস সামাদকে অনুরোধ করেন। তাঁর অন্যতম প্রধান কাজ হবে এখানকার ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলা এবং এই কাজে ভারতের সমর্থন আদায় করা। এর অংশ হিসেবেই আসলে পেট্রোল পাম্পের ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ শুরু করে আবদুস সামাদ। পাম্পের মালিক আহমেদ ফজলুর রহমান এই কাজে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করতেন।
শুরুতে বিষয়টি সম্পর্কে খুব ভাল ওয়াকিবহাল না থাকলেও ধীরে ধীরে আবদুস সামাদ বুঝতে পারেন এর সঙ্গে অনেক বাঙালি জড়িত হয়ে গেছে। কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন এই গোপন সংগঠনের কাজ শুরু করেন ১৯৬৪ সালের দিকে। তার এক বছর পর অনেকেই পেট্রোল পাম্পে আসতেন আবদুস সামাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। তাঁরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলতেন আর পরিকল্পনা ঠিক করতেন। আবদুস সামাদের দায়িত্ব ছিল এসব বিষয় সমন্বয় করে কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে জানানো। সময় পেলেই ছুটে যেতেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে। তিনি বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের এই ব্যাপারটি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। এই কাজের অন্যতম উদ্যোক্তা কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনসহ অন্যরা তাঁর কাছ থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছিলেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধেরও প্রায় সাত বছর আগে নৌ বাহিনীর কমাণ্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনহ কয়েকজন পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাত থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে মুক্ত করার অভিপ্রায় নিয়ে বাঙালি সেনাদের সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। অস্ত্রের মাধ্যমে তাঁরা স্বাধীন বাংলাদেশ করতে চেয়েচিলেন। সেই প্রক্রিয়া ছিল বলতে গেলে, আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার মতোই। সবাই জেনেবুঝে মৃত্যুকে হাতে নিয়ে গোপন এই বিপ্লবী দলের সঙ্গে যুক্ত হন। এই প্রক্রিয়া এতটাই গোপনীয় ছিল যে, সেনা, নৌ বা বিমানবাহিনী প্রত্যেক বাহিনীর জন্য আলাদা আলাদা ‘নিউক্লিয়াস’ ছিল। এক দলের সঙ্গে আরেক দলের কারোর যোগাযোগ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিল না। তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম অভিযুক্ত সার্জেন্ট আবদুল জলিলের মতে, সরাসরি এই দলের সঙ্গে হয়তো কয়েকশ লোক জড়িত ছিল। কিন্তু তাদের সমর্থক ছিল হাজার হাজার। পুরু এই প্রক্রিয়াটা কয়েকজন বিশ্বস্ত লোকের মাধ্যমেই পরিচালিত হত। বাকি সবাই নিজ নিজ ‘নিউক্লিয়াস’ কে কেন্দ্র করে কাজ করতেন। দলের মূল নেতৃত্ব থেকে নির্দেশ আসত, সেটা সাধারণ সদস্যরা পালন করতেন। কোথাও কোনো অবিশ্বাস বা বিশৃঙ্খলার বিন্দুমাত্র চাপ ছিল না।
বাঙালি সেনারা অস্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেবে এটাই ছিল মূল বিষয়। কিন্তু অস্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলেই তো হবে না, সেটা টিকিয়েও রাখতে হবে। আর সে কারণেই এই প্রক্রিয়ার পেছনে রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলই দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করবে। বিপ্লবী দলের নেতৃত্ব সেজন্য পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁরা একমাত্র শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকেই আশ্বাস পেয়েছিলেন। কর্নেল এম এ জি ওসমানী এ নিয়ে কথাবার্তা বলতেন কিন্তু সরাসরি যুক্ত হননি। আর সেই সুবাদেই শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আবদুস সামাদের যোগাযোগ গড়ে উঠে। চাকরি থেকে অবসর নিয়ে এসে পরিবারকে পিরোজপুরের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন আবদুস সামাদ। আর তিনি নিজে থাকতেন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মেস করে। এক জায়গায় বেশি দিন থাকতেন না আবার একা একাও থাকতেন না। এভাবেই সফলভাবে কাজ চালিয়ে যান প্রায় তিন বছর।
১৯৬৮ সালের জুন-জুলাইয়ের কোনো একটা সময়ে আবদুস সামাদ মেস করে মগবাজার এলাকায় থাকেন। এর মধ্যে সংগঠনের একটি কাজে উত্তরবঙ্গ যান। ফিরে এসে দেখেন মেসের মধ্যে আর্মির লোকজন। তাঁরা তাঁকে গ্রেপ্তার করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে গেল। প্রথম কয়েকদিন একা একটা অন্ধকার ঘরে কাটাতে হয়। পরে আবদুস সামাদকে যে কক্ষে বন্দি করে রাখা হয়, সেই কক্ষে তাঁর সঙ্গে ছিলেন ফ্লাইট সাজেন্ট আবদুল জলিল আর হাবিলদার আবদুল আজিজ। জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় ব্যাপক মারধর করা হত। কেউ কেউ নির্যাতনে পাগল হয়ে যায়। কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে নির্যাতন সহ্য হয়ে যায়। পরে সেখানে আরো অনেকের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। এদের মধ্যে কয়েকজন পূর্ব পরিচিত, অপরিচিতও আছেন অনেক।
তখন সেখানকার একজন সেনা কর্মকর্তা আবদুস সামাদকে বললেন, তোমরা যদি এখানে সবকিছু অস্বীকার করো তাহলে তো তোমাদের আরো পিটুনি দিবে, আরো নির্যাতন করবে। এতে কোনো লাভ হবে না। তোমরা মারা পড়বা। তার চেয়ে বরং নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য এখানে সব স্বীকার করো। কিন্তু আদালতে গিয়ে অস্বীকার করবা। তাতে কোনো সমস্যা নাই। আদালতে স্বীকার না করলেই হল। আবদুস সামাদ তাই করলেন। তিনি সবাইকে তাই করার জন্য উদ্বুদ্ধ করলেন। এতে নির্যাতন কিছুটা কমলো। পরে মামলাই শুরু হয়ে যায়। এতে ৩৫ জন অভিযুক্ত আর বৈরি সাক্ষী করা হয় চারজনকে। প্রধান আসামি করা হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে, দুই নম্বর আসামি ছিলেন কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন, পেট্রোল পাম্পের মালিক আহমেদ ফজলুর রহমান ছিলেন ছয় নম্বর আর আবদুস সামাদ ছিলেন আট নম্বর আসামি।
পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার ইচ্ছে করেই এই মামলার নাম দিয়েছিল ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’। আইনগভাবে এই মামলার নাম ‘শেখ মুজিবুর রহমান বনাম সরকার ও অন্যান্য’। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা যেন প্রতিবেদনে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ উল্লেখ করেন। সাংবাদিকরা প্রতিবেদনের স্বার্থে সেটা করেছিলেন। এই নামের মধ্য দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য আসামিদের ক্ষেপিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন। ভারত সরকার পাকিস্তানকে ভাঙার চেষ্টা করছে- এটি মানুষকে বোঝাতে পারলে তাঁরা ক্ষেপে যাবেন। রাস্তায় আসামিদের ফাঁসির দাবিতে মিছিল করবে। কিন্তু যাই হোক, শেষ পর্যন্ত সেরকম কিছুই হয়নি। মামলা চলা অবস্থায়ই শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য আসামিদের মুক্তির দাবিতে সারা দেশে আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। তবে সেটি আরো বেগবান হয়, মামলার আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে গুলি করে হত্যার পর।
প্রতিদিন ভোরবেলা আসামিরা বাথরুমে যেতেন, অজু করে নামাজ আদায় করতেন। এটা প্রায় নিত্যদিনের কাজ ছিল। এমনি এক ভোরে বাথরুমে যাওয়ার সময় সার্জেন্ট জহুরুল হক আর ফজলুল হককে গুলি করেন এক নিরাপত্তাকর্মী। ফজলুল হক বেঁচে গেলেও হাসপাতালে মারা যান জহুরুল হক। তাঁকে আসলে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
সেদিনের ঘটনাটির বর্ণনা দিতে গিয়ে আবদুস সামাদ বলেছেন, “বাথরুমের মধ্যে নিয়া প্রথমে গুলি করছে জহুরুল হককে। জহুরুল হককে গুলি করার সঙ্গে সঙ্গে পাশে ফজলুল হককেও গুলি করছে। ফজলুল হকের গুলি এখান থেকে লাগছে, এখান থেকে বের হয়ে গেছে (বুক আর পিঠ দেখিয়ে) যে হার্ট ছিদ্র হয় নাই, এমনে গুলি লাগছে, পাশে ছিদ্র হইয়া গেছে। এরপর ধরা পড়ছে যে তার এইপাশে এবং ওই পাশে ছিদ্র, কিন্তু হার্টে লাগে নাই কেন? ডাক্তাররা গবেষণা করে বলছে যে, ঐ যে জহুরুল হককে গুলি করছে, তার শব্দে তার হার্ট কুচকিয়ে উপরে উঠে গেছে, তখন গুলি বের হয়ে গেছে। সেজন্য তার হার্টে আঘাত করে নাই। এরপর আন্দোলন শুরু হয়ে গেল।”
পাকিস্তানের সবগুলো গণতান্ত্রিক, জাতীয়তাবাদী ও প্রগতিশীল দলের সম্মিলিত আন্দোলনের ফলে একপর্যায়ে সরকার এই মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। এই মামলায় তিনজন বিচারপতি ছিলেন, এদের একজন পশ্চিম পাকিস্তানের আর দুজন বাঙালি। পশ্চিম পাকিস্তানের বিচারপতি উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে এক রাত্রে লুঙ্গি পরেই বিমানে চড়ে নিজ দেশে পাড়ি দেন। পরে আর তিনি ফিরে আসেননি। এরপর এ মামলার অভিযুক্তরা সবাই মুক্তি পান ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি।
আগরতলা মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আবদুস সামাদ বসে থাকেননি। তিনি স্বাধীনতার সপক্ষে প্রচারমূলক কাজ চালিয়ে গেছেন। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের সময় দুই পাকিস্তানের (স্টেট’স) কথা বলা হয়েছিল। স্বাধীন পশ্চিম পাকিস্তান আর স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান। সেই লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতেই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিরা গঠন করলেন ‘লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন কমিটি’। এর সভাপতি হলেন কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন আর সাধারণ সম্পাদক হলেন আবদুস সামাদ, যুগ্ম সম্পাদক হলেন সার্জেন্ট আব্দুল জলিল। এই কমিটির কাজ ছিল সারা দেশে সভা করে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠন করা। স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত এই কমিটি এই কাজ চালিয়ে গেছে।
২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে বন্দি করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। মোয়াজ্জেম হোসেন তখন পরিবার নিয়ে এলিফেন্ট রোডে থাকেন। আবদুস সামাদও একই এলাকায় থাকেন। আগের দিন পরিস্থিতি কিছুটা আঁচ করতে পেরে কয়েকজনকে নিয়ে একটি ছাদের উপরে অস্ত্রসহ পজিশন নিয়েছিলেন। গোলাগুলি থামার পর ভোরের দিকে বের হলেন নামাজ পড়ার জন্য। দূর থেকে দেখতে পান মোয়াজ্জেম হোসেনের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে আছে বাড়ির আঙ্গিনায়। সেখানে সেনাবাহিনীর গাড়ি আর সেনা সদস্যরা দাঁড়িয়ে আছেন। মোয়াজ্জেম হোসেনের লাশটা গাড়ির পেছনে বেঁধে টেনে নিয়ে গেল হানাদার বাহিনী। পরের দিন ভোরে আবদুস সামাদ সেই বাড়িতে গিয়ে সবাইকে চলে যেতে বলেন। আর নিজে হেঁটে রওনা দেন বাগেরহাটের দিকে, উদ্দেশ্য স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা। বাগেরহাটে গিয়ে মেজর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে দেখা করলেন। তিনি তাঁকে সেখানেই থাকতে বললেন, কিন্তু আবদুস সামাদ সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে যেতে চান। তারপর কিছুদিন ভারতে ছিলেন। পরে আবার বাগেরহাটেই ফিরে এসে যুদ্ধ করেন। সেখানে যুদ্ধ করার সময় তিন পাকিস্তানি সেনাকে বন্দি করেন। পরে ২৯ নভেম্বর প্রকাশ্যে তাদের বিচার করে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেখানেই অন্যান্য মুক্তিবাহিনী ও গ্রামের লোকদের পক্ষ থেকে আবদুস সামাদসহ অন্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে মেজর জিয়াউর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। সংবর্ধনা কমিটির পক্ষ থেকে তাদের দুজনকে দুটি সোনার তরবারি উপহার দেওয়া হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও আবদুস সামাদ দেশ গঠনের কাজে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে কাজ করেছেন। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেছেন। যে কজন মানুষ সেখানে প্রথম আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেন আবদুস সামাদ তাদের একজন। যদিও আজ আর সেই কথা স্বীকার করা হয় না বলে পরিবারের অভিযোগ। তবে এ নিয়ে কোনো খেদ নেই পরিবারের।
ব্যক্তিগত জীবনে আবদুস সামাদ দুই ছেলে আর চার মেয়ের জনক। খুব অল্প বয়সে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পরই পরিবারের পছন্দে তিনি বিয়ে করেন মঠবাড়িয়ার ভাদুরা গ্রামের রাবেয়া সামাদকে। তাদের বড় ছেলে হাবিবুর রহমান মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। ছোট ছেলে ফজলুল হক টুকুও পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। মেয়ে লাইলুন নাহার মালা, শামসুন নাহার লিলি ও নুরুন নাহার মিনি ঢাকাতেই থাকেন। আর বড় মেয়ে কামরুন নাহার হেনা থাকেন ঢাকার বাইরে।
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে আবদুস সামাদ ও তাঁর স্ত্রী রাবেয়া সামাদ চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হন। একপর্যায়ে স্ত্রী মারা যান। সেই শোক নিয়েই দুই মেয়ের সঙ্গে ঢাকায় ভুতের গলির একটি বাসায় জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাচ্ছেন এই স্বাধীনতা সংগ্রামী। স্মৃতিশক্তি প্রায় নেই বললেই চলে, পরিবারের লোকদের চিনতে পারেন। চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর হাঁটাচলাও একেবারে সীমিত। ‘ঐতিহাসিক আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত পরিষদের’ নামে যে সংগঠনটি রয়েছে তার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারলেও এখন আর কোথাও যান না আবদুস সামাদ।
আগরতলা মামলা সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু তথ্য
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে মু্ক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে, পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানে দায়ের করা একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আওয়ামী লীগ নেতা ও পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেছিল।
১৯৬৮ সালের প্রথম ভাগে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলাটির পূর্ণ নাম ছিল ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবর রহমান এবং অন্যান্য মামলা’। তবে এটি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসেবেই বেশি পরিচিত। বিচারকাজ শুরু হয় ১৯৬৮ সালের ১৯ জুন। বিচারকাজ শেষ হয়- ১৯৬৯ সালের ২২ জানুয়ারি মামলা প্রত্যাহার ও আসামিদের মুক্তির মাধ্যমে।
বিচার কাজ চলে ঢাকা সেনানিবাসের সিগন্যাল অফিসার্স মেসে স্থাপিত বিশেষ আদালতে। ট্রাইব্যুনালে বিচারকদের মধ্যে একজন পশ্চিম পাকিস্তানি আর দুজন ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের। এরা হলেন পশ্চিম পাকিস্তানের এস এ রহমান (ট্রাইব্যুনাল প্রধান) আর পূর্ব পাকিস্তানের বিচারক এম আর খান ও বিচারক মুকুমুল হাকিম।
অভিযুক্তরা হচ্ছেন ক্রমান্বয়ে- ১. শেখ মুজিবুর রহমান ২. লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন ৩. স্টুয়ার্ড মুজিবুর রহমান ৪. এলএস সুলতান উদ্দিন আহমেদ ৫. নূর মোহাম্মদ ৬. আহমেদ ফজলুর রহমান সিএসপি ৭. ফ্লাইট সার্জেন্ট মফিজুল্লাহ ৮ এ বি এম আবদুস সামাদ ৯. হাবিলদার দলিল উদ্দিন হাওলাদার ১০. রুহুল কুদ্দুস সিএসপি ১১. ফ্লাইট সার্জেন্ট মো ফজলুল হক ১২. ভূপতি ভূষণ চৌধুরী (মানিক চৌধুরী) ১৩. বিধান কৃষ্ণ সেন ১৪. সুবেদার আবদুর রাজ্জাক ১৫. হাবিলদার মুজিবুর রহমান ১৬. ফ্লাইট সার্জেন্ট আবদুর রাজ্জাক ১৭. সার্জেন্ট জহুরুল হক ১৮. এ বি মো. খুরশীদ ১৯. খান এম শামসুর রহমান সিএসপি ২০. রিসালদার এ কে এম শামসুল হক ২১. হাবিলদার আজিজুল হক ২২. মাহফুজুল বারী ২৩. সার্জেন্ট শামসুল হক ২৪. কর্নেল শামসুল আলম ২৫. মেজর মো. আবদুল মোতালেব ২৬. কর্নেল এম শওকত আলী ২৭. কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা ২৮. ব্রিগেডিয়ার এএনএম নুরুজ্জামান ২৯. ফ্লাইট সার্জেন্ট আবদুল জলিল ৩০. মো. মাহবুব উদ্দিন চৌধুরী ৩১. লেফটেন্যান্ট এম এম মতিউর রহমান ৩২. সুবেদার এ কে এম তাজুল ইসলাম ৩৩. মো. আলী রেজা ৩৪. ব্রিগেডিয়ার খুরশীদ উদ্দিন আহমেদ ৩৫, কমান্ডার আবদুর রউফ। বৈরি সাক্ষীরা হলেন- ১. এ বি এম ইউসুফ ২. কামাল উদ্দিন ৩. বঙ্কিম চন্দ্র দত্ত ৪. আবুল হোসেন।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার:
এই লেখাটি তৈরির জন্য ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে রাজধানীর গ্রিন রোডের ভূতের গলির বাসায় আবদুস সামাদের দুই মেয়ে শামসুর নাহার লিলি ও নুরুন নাহার মিনির সাক্ষাতকার নেওয়া হয়। তাঁরা এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর বাল্যকাল, পারিবারিক জীবন ও চাকরিকাল নিয়ে বেশ কিছু তথ্য দেন।
এ ছাড়া কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ‘আগরতলা মামলার অনুচ্চারিত ইতিহাস ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক’ নামক গ্রন্থ থেকে। আগরতলা মামলার অভিযুক্তদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে রচিত এই প্রামাণ্য গ্রন্থটির সম্পাদক ড. অবু মো. দেলোয়ার হোসেন ও নাজনীন হক মিমি। এর মধ্যে নাজনীন হক মিমি শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের আপন ভাতিজি আর ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রচিত এই বইটি প্রকাশ করেছে জার্নিম্যান বুকস (১০/৫ ইস্টার্ন প্লাজা, সোনারগাঁও রোড, ঢাকা ১২০৫)।
লেখক: চন্দন সাহা রায়