‘ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার ঘন্টা খানেক আগে আমাদের তিন বছরের মেয়ে আর চার মাসের ছেলেটিকে ঘুমের বড়ি খাইয়ে নিলাম। জানতাম এর পরিণতি মারাত্মক হতে পারে। কিন্তু এছাড়া আর অন্য কোনো উপায় ছিল না। রানার (তাঁর স্ত্রী) জন্য একটা বোরখার ব্যবস্থা করলাম। আশেপাশের লোকজনের সন্দেহের উদ্রেক হলে রানাকে যাতে স্থানীয় মেয়ে বলে চালিয়ে নেওয়া যায় তার জন্যেই এই বোরকা নিলাম।… লক্ষ্য আন্তর্জাতিক সীমারেখা। জিয়া আর তাহেরের হাতে গলফ স্টিক। পোশাক স্কাউটের। সামনে পেছনে ডাইনে বাঁয়ে শুধুই অন্ধকার। সীমাহীন দুর্ভেদ্য অন্ধকার। চলার পথ পিচ্ছিল। কর্দমাক্ত। সেচের পানিতে আর্দ্র। কাদাতে পা দেবে যায়। টেনে তোলা ভার। রানার কোলে চার মাসের শিশু সন্তান। খালি পা। পদে পদে হোঁচট খাচ্ছে রানা। পাটোয়ারি সাহায্য করছে তাকে।’
এই কথাগুলি বলেছেন ৮নং সেক্টরেরর কমান্ডার এম. এ. মঞ্জুর। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানে আটক অনেক বাঙালী অফিসার যুদ্ধে যোগদানের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এসময় এম. এ. মঞ্জুর শিয়ালকোটে ব্রিগেড মেজর হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। নিযুক্ত ছিলেন শিয়ালকোটের চতুর্দশ প্যারা ব্রিগেডে। কিন্তু পাকিস্তানি আর্মি সেইসব অফিসারদের এতই কড়া নজরদারির মধ্যে রাখত যে তা সম্ভব হয়ে উঠছিল না। এই কড়া নজরদারির মধ্যেও মঞ্জুর রাওয়ালপিন্ডিতে গিয়ে কয়েক দফা গোপন বৈঠক করেন বাঙালী অফিসার মেজর জিয়াউদ্দিনের সাথে। তিনি ছিলেন সদর দপ্তরে স্টাফ অফিসার। মেজর জিয়াউদ্দিন একদিন মেজর মঞ্জুরকে জানালেন যে, মেজর এম. এ. তাহেরও তাদের সাথে যেতে চান। মেজর তাহের তখন ছিলেন এ্যাবোটাবাদে বালুচ রেজিমেন্টে। যুদ্ধে যোগদানের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন মঞ্জুরের মতো অনেকেই। সকলেই পালাবার পথ খুঁজছিলেন।
অবশেষে সেই সুযোগ এল ২৬ জুলাই। ইতিপূর্বে আলাপ-আলোচনা, পরিকল্পনা করেই রেখেছিলেন। সেদিন দুপুর বেলা মেজর এম. এ. মঞ্জুরের বাসায় এসে হাজির মেজর জিয়াউদ্দিন, মেজর তাহের, ক্যাপ্টেন পাটোয়ারি। ক্যাপ্টেন পাটোয়ারি ছিলেন ঝিলামে বালুচ রেজিমেন্টের একটি ব্যাটেলিয়নের দায়িত্বে। তাঁরা তাদের সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে কিনে এনেছেন একটি ভক্স ওয়াগন। রাত আটটার দিকে মঞ্জুরের পরিবার এবং আরদালি আলমগীরসহ অন্যরা বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন।
পথে নানা বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে ২৭ জুলাই এই দলটি দিল্লী পৌঁছে। সেখান থেকেই প্রবাসী সরকারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। আগস্ট মাসের ৭ তারিখে মঞ্জুর মুজিবনগর পৌঁছেন। তারপর ১১ আগস্ট মুজিবনগর সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে ৮ নং সেক্টরের দায়িত্ব দেয়া হয়। তখন পর্যন্ত সেই সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন লে. কর্নেল এম. এ. ওসমান চৌধুরী। অন্যদিকে পাশের ৯ নং সেক্টরেরর দায়িত্বে ছিলেন মেজর এম. এ. জলিল, তবু যুদ্ধসংক্রান্ত ব্যাপারে এই সেক্টরের দায়িত্ব দেয়া হয় মঞ্জুরকে।
মেজর এম. এ. মঞ্জুরের দায়িত্ব গ্রহণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে লে. কর্নেল এম. এ. ওসমান চৌধুরী বলেন, ‘সপ্তাহকাল কোম্পানী এলাকাগুলো পরিভ্রমণ ও পরিদর্শনের পর ১৫ আগস্ট বিকেল ৬টায় আমরা সেক্টর সদর দপ্তরে পৌঁছে দেখতে পেলাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর এম. এ. মঞ্জুর আমার অফিসে বসে আছেন। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম যে, তিনি ‘প্রপার মুভমেন্ট’ অর্ডার নিয়ে আমার থেকে সেক্টর-এর কর্মভার গ্রহণ করার জন্য এসেছেন। … সেনাপতির প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে ১৮ আগস্ট বিকেলে সেক্টর-এর কর্মভার হস্তান্তর করে আমি মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তরে হাজির হই।’
এলাকাগত দিক থেকে ৮নং সেক্টর ছিল অনেক বড়। এর আওতায় ছিল কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা। পরে অবশ্য বরিশাল ও পটুয়াখালীকে এই সেক্টর থেকে বাদ দেয়া হয়। এই সেক্টরে কুষ্টিয়ার উত্তর থেকে খুলনার দক্ষিণাংশ পর্যন্ত প্রায় ৩৫০ মাইল সীমান্ত ছিল। সেক্টরের সৈন্য সংখ্যা ছিল দুই হাজার। গেরিলা বাহিনীর সদস্য ছিল প্রায় সাত হাজার। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুনভাবে এখানে সংগঠন গড়ে তোলা হয়। সমস্ত ইপিআর, আনসার, মুজাহিদ এবং অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের এবং প্রথম বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের কয়েকটি কোম্পানীতে ভাগ করে দেয়া হয়। সাতটি সাব-সেক্টরের সমন্বয়ে গঠিত এই সেক্টরের হেডকোয়ার্টার বেনাপোলে থাকলেও কার্যত হেডকোয়ার্টারের একটা বিরাট অংশ ভারতের কল্যাণী শহরে ছিল।
মেজর মঞ্জুর ৮ নং সেক্টরের দায়িত্ব পাবার পর গণবাহিনী ও নিয়মিত বাহিনীকে একটি বিশেষ ‘চেইনে’ নিয়ে আসেন। এর জন্য মঞ্জুর কতগুলো সিদ্ধান্ত নেন। তার মধ্যে অন্যতম- এক. সেক্টরটিকে পুরোপুরি পুনর্গঠন করেন এবং পুনরায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। দুই. গণবাহিনীকে সম্পূর্ণ নিজের আওতায় নিয়ে আসেন। (গণবাহিনী নিয়মিত বাহিনী থেকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা। তারা অন্য কমান্ডারের আওতায়। কাজে-চিন্তায় নিয়মিত বাহিনী থেকে পৃথক।) তিন. নিজের এলাকাকে বিভিন্ন স্থানে বিশেষ বিশেষ এলাকায় ভাগ করে এবং সেখানকার জন্যে একজন কমান্ডার নিযুক্ত করেন। সবাই দেশের অভ্যন্তরে থাকবে। চার. গণবাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার জন্য রাজনৈতিক উপদেষ্টা পাঠানো হয়। পাঁচ. রাজাকারদের প্রশ্নেও বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এম. এ মঞ্জুর ১৯৪০ সালে কুমিল্লা জেলার কসবা থানার গুপিনাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম মেজর জেনারেল মুহম্মদ আবুল মঞ্জুর। যিনি মেজর জেনারেল এম. এ. মঞ্জুর নামেই সমধিক পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য মঞ্জুর ‘বীর উত্তম’ রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত হন।
তাঁর পৈত্রিক নিবাস নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানার অন্তর্গত কামালপুর গ্রামে। তাঁর পরিবার ছিল খুবই সম্ভ্রান্ত। অন্যান্য ভাই-বোনদের মতো ছোটবেলা থেকেই মঞ্জুর ছিলেন প্রচণ্ড মেধাবী। তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয় কলকাতায়। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকায় এসে আরমানিটোলা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন। নবম শ্রেণীতে উঠার পর তাঁকে পাঞ্জাবের সারগোদা পাবলিক স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। ১৯৫৫ সালে তিনি পাঞ্জাবের সারগোদা পাবলিক স্কুল থেকে সিনিয়র ক্যাম্বিজ এবং ১৯৫৬ সালে আই.এস.সি. পাস করেন। পরে পিতার আগ্রহেই তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ভর্তি হন। ১৯৫৭ সালে তিনি কাকুল সামরিক একাডেমিতে ভর্তি হন। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান সামরিক একাডেমি থেকে কমিশন লাভ করেন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। অত্যন্ত মেধাবী এম.এ. মঞ্জুর সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় সিএসএস পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হয়ে সিএসপি অফিসার হয়েছিলেন। কিন্তু সেনাবাহিনী থেকে অনুমতি না পাওয়ায় তাঁর পক্ষে যোগ দেয়া সম্ভব হয়নি। মঞ্জুর ১৯৬৮ সালে কানাডার স্টাফ কলেজ থেকে পিএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। পরবর্তীতে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কমিশন্ড পদে যোগদান করেন।
চাকরি জীবনের শুরু থেকেই মঞ্জুর পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর নির্মম বৈষম্যের চিত্র দেখেন। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালী বলে নিজেও শিকার হন সেই বৈষম্যের। কলেজে পড়াকালীন বিশ্ব রাজনীতি ও তাঁর পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে প্রচুর বই পড়তেন। নিজের মেধার কারণেই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীতেও একজন চৌকস অফিসার হিসাবে পরিচিত হন। রাজনৈতিক সত্তাও বেশ ভালোভাবেই বাসা বাঁধে মঞ্জুরের ভিতর। চাকরি জীবনে প্রবেশ করে যেন সেই রাজনৈতিক সত্তার মুখোমুখি হন আরো নিবিড়ভাবে।
পূর্ব পাকিস্তান বনাম পশ্চিম পাকিস্তান বৈষম্যের কারণে সেনাবাহিনীতে তখন সকল বাঙালী অফিসারদের মন তাঁতিয়ে ছিল। একই অবস্থা ছিল নৌ ও বিমান বাহিনীর ক্ষেত্রেও। তাঁরা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারছিলেন নিজেদের যোগ্যতা থাকার পরও বাঙালী বলে তাঁদেরকে উপরে উঠতে দেয়া হয় না। কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত সহ্য করতে হয় নির্যাতন আর অবহেলা। খুব সাহসী অফিসার যাঁরা তাঁরাই কদাচিত এসব বৈষম্য-নির্যাতন আর অবহেলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হতো না। বরং বৈষম্য যেন আরো বেড়ে যেত। এই বৈষম্যের চক্রাকারে যেন আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল বাঙালী অফিসার ও সৈনিকদের জীবন। এ নিয়ে মঞ্জুর মাঝে মাঝেই অন্যান্য বাঙালীদের সাথে কথা বলতেন। সকলের পিঠ যেন একেবারে দেয়ালে গিয়ে ঠেকেছে।
১৯৬৯-এর ১৫ ফেব্রুয়ারি পাঞ্জাব সেলে বন্দি সার্জেন্ট জহুরুল হক ও ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হককে গুলি করে হত্যা করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই হত্যাকাণ্ড সেনাবাহিনীর বাঙালী অফিসারদের বিচলিত করে তোলে। প্রবল আন্দোলনের মুখে পাক সরকার ১৯৬৯-এর ২১ ফেব্রুয়ারি শেষ পর্যন্ত আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। কিন্তু পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ পূর্ব পাকিস্তানিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে নিরীহ বাঙালীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরপর শুরু হয় যুদ্ধ। এম. এ. মঞ্জুরসহ লাখ লাখ দেশপ্রেমিক জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা। অভ্যুদয় হয় বাংলাদেশ নামক নতুন একটি ভূ-খণ্ডের।
স্বাধীনতার পর মঞ্জুর দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। সে সময় তাঁকে যশোরে ৫৫ নং ব্রিগেডের কমান্ডার হিসাবে নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৩ সালে তিনি নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে সামরিক উপদেষ্টা হিসাবে যোগদান করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ১৩ নভেম্বর এম. এ. মঞ্জুর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চীফ অব জেনারেল স্টাফ পদে নিয়োগ লাভ করেন। তিনি চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ২৪তম ডিভিশনের জিওসি হিসাবে নিযুক্ত হন ১৯৭৭ সালের শেষ দিকে। ১৯৮১ সালের ২৯ মে পর্যন্ত এই পদে বহাল ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি মেজর জেনারেল পদ পর্যন্ত পদোন্নতি পেয়েছিলেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর কতিপয় অফিসার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করলে মেজর জেনারেল এম. এ. মঞ্জুর নিজেকে সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসনের প্রধান ঘোষণা করেন।
দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ঢাকা থেকে দ্রুত হস্তক্ষেপ করা হয়। ফলে পুরো বিষয়টি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসে। সেসময় মঞ্জুরকে আত্মসমর্পন করতে বলা হয়। কিন্তু তিনি আত্মগোপনের চেষ্টা করেন। শেষপর্যন্ত সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতে বন্দি হন মঞ্জুর। ঐ দিনই তাঁকে বন্দি অবস্থায় চট্টগ্রাম সেনা ছাউনিতে নিয়ে আসা হয়। পরে ১৯৮১ সালের ২ জুন এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির গুলিতে তিনি নিহত হন। মেজর জেনারেল মুহম্মদ আবুল মঞ্জুর (এম. এ. মঞ্জুর) দেশপ্রেমিক দক্ষ অফিসার এবং জ্ঞানচর্চায় উৎসাহী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। দেশের সংকটে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন বারবার।
সংক্ষিপ্ত জীবনী:
জন্ম : বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এম. এ. মঞ্জুর ১৯৪০ সালে কুমিল্লা জেলার কসবা থানার গুপিনাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম মেজর জেনারেল মুহম্মদ আবুল মঞ্জুর। যিনি মেজর জেনারেল এম. এ. মঞ্জুর নামেই সমধিক পরিচিত।
পড়াশুনা ও কর্মজীবন : তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয় কলকাতায়। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকায় এসে আরমানিটোলা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন। নবম শ্রেণীতে উঠার পর তাঁকে পাঞ্জাবের সারগোদা পাবলিক স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। ১৯৫৫ সালে তিনি পাঞ্জাবের সারগোদা পাবলিক স্কুল থেকে সিনিয়র ক্যাম্বিজ এবং ১৯৫৬ সালে আই.এস.সি. পাস করেন। পরে পিতার আগ্রহেই তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ভর্তি হন। ১৯৫৭ সালে তিনি কাকুল সামরিক একাডেমিতে ভর্তি হন। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান সামরিক একাডেমি থেকে কমিশন লাভ করেন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। অত্যন্ত মেধাবী এম. এ. মঞ্জুর সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় সিএসএস পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হয়ে সিএসপি অফিসার হয়েছিলেন। কিন্তু সেনাবাহিনী থেকে অনুমতি না পাওয়ায় তাঁর পক্ষে যোগ দেয়া সম্ভব হয় নি। মঞ্জুর ১৯৬৮ সালে কানাডার স্টাফ কলেজ থেকে পিএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। পরবর্তীতে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কমিশন্ড পদে যোগদান করেন।
মৃত্যু: ১৯৮১ সালের ২ জুন এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির গুলিতে তিনি নিহত হন।
তথ্যসূত্র :
১. ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র- দশম খন্ড’।
২. রফিকুল ইসলাম সম্পাদিত ‘সম্মুখ সমরে বাঙালি’।
৩. সুকুমার বিশ্বাস রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধে রাইফেল্স্ ও অন্যান্য বাহিনী’।
৪. ‘শত মুক্তিযোদ্ধার কথা’, ‘সেক্টর কমান্ডাররা বলছেন-মুক্তিযুদ্ধের স্মরণীয় ঘটনা’। এবং
৫. বাংলাপিডিয়া।
লেখক ‘: চন্দন সাহা রায়