ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ.এন.এম. নূরুজ্জামান বীর উত্তম ১৯৩৮ সালের ডিসেম্বর মাসে নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানাধীন সায়দাবাদ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আবু আহাম্মদ বি.এ.বি.এল (এল.এল.বি), সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন। প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ১৯৫৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৮৩ সালের ২রা মার্চ ৮৫ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মা মরহুমা লুৎফুননেছা গৃহিনী ছিলেন। ১৯৯২ সালের আগষ্ট মাসে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আট ভই-বোনের মধ্যে নূরুজ্জামান ৫ম।
বাবার চাকুরী সূত্রে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁর শৈশব কেটেছে। স্কুল জীবন কেটেছে মাদারীপুর ইসলামিয়া হাইস্কুল, কুমিল্লা ইউসুফ স্কুল, শেরপুর ভিক্টোরিয়া একাডেমি ও সুনামগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে। সুনামগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং সিলেট এম.সি. কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
ছাত্র জীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস.এম. হলে এ্যাথলেটিক সেক্রেটারী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ফুটবলার হিসেবে ঢাকার প্রথম বিভাগ লীগে ইস্পাহানী স্পোর্টিং ক্লাবের নিয়মিত খেলোয়ার ছিলেন। তিনি একজন দক্ষ টেনিস খেলোয়ার ছিলেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ সালে ইতিহাসে অনার্সসহ স্নাতক পাস করেন। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্রাবস্থায় তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমীতে গ্র্যাজুয়েট কোর্স-এ যোগ দেন। ১৯৬০ সালের অক্টোবর মাসে সেকেন্ড লেফট্যানেন্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন।
কমিশন প্রাপ্তির পর তিনি যশোর, ঢাকা ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৮ সালের প্রথম দিকে পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েটায় বদলী হয়ে যান। তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আসামী হিসেবে ১৯৬৮ সালেই তাঁকে বন্দী অবস্থায় ঢাকা ক্যানটনমেন্টে নিয়ে আসা হয়। তীব্র গণআন্দোলনের মুখে ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মামলা থেকে নিঃশর্ত মুক্তি পান তিনি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং সেক্টর কমান্ডার হিসেবে ৩নং সেক্টরে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত হন। ১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর তাঁর চাকুরী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকুরীকালীন তিনি অষ্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন, সেনেগাল, কানাডা ও সুইডেনে কর্মরত ছিলেন। সুইডেনে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন অবস্থায় ১৯৯৩ সালের ১৬ই মার্চ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে এই বীর সেনানী অকালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র ও এক কন্যা রেখে গেছেন।
বি.দ্র: সেক্টর কমান্ডার এ.এন.এম. নূরুজ্জামান সম্পর্কে এর বেশি তথ্য আমরা সংগ্রহ করতে পারিনি। পরবর্তীতে তথ্য সংগ্রহ করে আমরা জীবনীটি পূর্ণাঙ্গ আকারে প্রকাশ করব।
লেখক : গুণীজন দল