মেয়েটির ডাক নাম বুয়া। আদর করে বাড়ির সবাই তাকে বুয়া বলেই ডাকে। আর এই বুয়া নামটি নিয়েই সে অতি আদরে বড় হতে লাগল। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল তখনই যখন তার স্কুলে যাবার সময় এল। মাত্র সাড়ে তিনবছর বয়সে বুয়াকে ভর্তি করানো হলো তার জন্মস্থান কুমিল্লা শহরেরই একটি স্কুলে। স্কুলটির নাম আমেরিকান কনভেন্ট স্কুল। তার পড়ালেখার হাতেখড়ি সেখানেই।
স্কুলে বুয়ার ভালো একটা নাম দিতে হবে। বাবা-মা অনেক চিন্তা ভাবনা করে নাম ঠিক করলেন শর্বরি। এখন থেকে বুয়ার আরেক নাম অর্থাত্ স্কুলের নাম শর্বরি। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল এই নাম নিয়ে। দুদিন যেতে না যেতেই স্কুলের কিছু সহপাঠী শর্বরি না বলে তাকে ‘সরের বড়ি’ বলে ডাকতে শুরু করলো। সহপাঠীরা তাকে ‘সরের বড়ি’ বলে ডাকায় সে স্কুল থেকে ফিরে শুরু করল কান্না। মা শর্বরিকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, নাম ভেঙচালে কিছু হয় না। বাবা সঞ্জিব দত্ত বাইরে থেকে ফিরে দেখেন শর্বরি পা ছড়িয়ে খুব কাঁদছে। বাবা জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হয়েছে মা কাঁদছ কেনো?’ শর্বরি তখন কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, ‘স্কুলে সবাই আমাকে সরের বড়ি, সরের বড়ি বলে ডাকে। আমি সরের বড়ি হতে পারবো না। আমি সরের বড়ি না।’ বাবা বললেন, ‘হ্যাঁ তাই তো, তুমি শুধু শুধু সরের বড়ি হতে যাবে কেন? তোমার আরো ভালো একটা নাম দিব, তবে তার আগে তোমার কান্না থামাতে হবে।’ বাবার কথা শুনে শর্বরি সাথে সাথেই কান্না থামায়। এবার মুশকিলে পড়লেন বাবা সঞ্জিব দত্ত।
কী নাম দেয়া যায়, চিন্তায় পড়ে গেলেন বাবা। কয়েক মুহূর্ত ভেবে বাবা বললেন, ‘তোমার ‘আরমা’ নামটা কি ভালো লাগে?’ চোখ মুছতে মুছতে শর্বরি উত্তর দিলো, ‘হ্যাঁ, ভালো লাগে।’ তখন বাবা, মা, দাদু সবাই বললেন, ”ঠিক আছে আজ থেকে তোমার নাম ‘আরমা’।’ কিন্ত সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। স্কুলে যাবার পর সহপাঠিরা নতুন নামের নতুন ডাক শুরু করল, আর মা, আর মা। মহা বিপদ, এবার কি হবে। স্কুল ছুটির পর আরমা বাড়িতে এসে আবার কান্নাকাটি শুরু করল। মা প্রতীতি দেবী কিছুতেই বুঝাতে পারছেন না আরমাকে।পুরো বিষয়টা শোনার পর দাদু এসে আরমাকে বললেন, ‘রোজ রোজ তোমার নাম বদলাতে পারবো না। তোমার নাম নিয়ে ভেংচায় তো কী হয়েছে। এখন যে নামটা দেয়া হয়েছে সেটাই থাকবে। বানান করে লিখতেও নামটা সহজ, বলতেও সহজ।’ সেদিন কান্নাকাটি করেও আরমা তার নাম আর পরিবর্তন করাতে পারেনি। সেদিনের পর থেকে আদরের ছোট্ট মেয়েটি আরমার মতোই আজো নিরবধি বয়ে চলছে। বাবা সঞ্জিব দত্ত সেদিন আরমা নামের অর্থ বলেছিলেন নদী। পরে জানতে পারেন পৌরাণিক একটি নদীর নাম হলো আরমা।
বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ যখন পার্থিব জগত্ ত্যাগ করে অপার্থিব জগতে আরোহন করেছিলেন তখন যে নদীটি তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন সে নদীটির নাম হলো আরমা। পাঞ্জাবের কোনো একটি নদীর পৌরাণিক নাম আরমা। অর্থাত্ আরমা নামের বিস্তৃত অর্থ হলো মানুষের পার্থিব এবং অপার্থিব জগতের মাঝে সংযোগ স্থাপন করে যে নদী বয়ে চলেছে। বাবা সেদিন তাকে আরমা নামটির আরেকটা অর্থ বলেছিলেন ‘সুগন্ধী’। যা সুগন্ধ ছড়ায়। যে মানুষ তাঁর কর্ম দিয়ে মানুষকে মোহিত করে সেই হলো আরমা।সেদিন তিনি তাঁর নিজের নামের সব অর্থ ঠিক বুঝতে না পরলেও কাজের ভিতর দিয়েই আরমা প্রমাণ করেছেন তাঁর নামের যথার্থতা।এই আরমা নামের সঙ্গে যুক্ত হলো পারিবারিক উপাধি দত্ত অর্থাত্ তাঁর পুরো নাম আরমা দত্ত। কনভেন্ট স্কুলে ভর্তি হয়ে অরমা দত্ত খুব বেশি সময় এখানে পড়াশুনা করেননি। এরপর চলে আসতে হয়েছিল বাবা সঞ্জিব দত্তের কর্মস্থল ঢাকাতে। সঞ্জিব দত্ত সে সময় ‘পাকিস্তান অবজারভার’-এর সাংবাদিক ছিলেন। সঞ্জিব দত্ত স্ত্রী, কন্যাকে সাথে নিয়ে এসে উঠলেন পুরান ঢাকার হেমেন্দ্র দাস রোডের একটি বাসায়। সে সময় ‘পাকিস্তান অবজারভার’-এর অফিস ছিল সদর ঘাটের জনসন রোডে। পাশেই বুড়িগঙ্গা। বাবার সাথে প্রায় রোজই আরমা দত্ত অফিসে যেতেন, যে কারণে বাবার সব বন্ধুদের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। আরমার বেশ ভালো লাগত তাঁদের সঙ্গ।
এমনি করে বাবার অফিস, বুড়িগঙ্গার তীর, বাসা সব মিলিয়ে ১৯৫০ সালের ২০ জুলাই জন্মগ্রহণ করা আরমা দত্ত তাঁর শৈশব পাড়ি দিয়ে কৈশোরে উপনীত হলেন। এদিকে দাদু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৯৫৬ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বিশেষ অনুরোধে পূর্ব পাকিস্তান যুক্তফ্রন্ট সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। এর আগে ৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবির পর ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তানের আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর ১৯৫২ সালে তিনি সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় মহান ভাষা আন্দোলনের পক্ষে জোর সমর্থন ব্যক্ত করেছিলেন।১৯৪৭ সালে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হলে ‘গণসমিতি’ নামে একটি দল গঠন করেছিলেন এবং ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান আইন সভায় তিনিই প্রথম বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। তারই প্রেক্ষিতে ৪৮ সালের ৬ এপ্রিল ব্যবস্থাপক সভায় খাজা নাজিমুদ্দিন ‘পূর্ব বাংলার সরকারী ও শিক্ষার ভাষা হবে বাংলা’ উত্থাপিত এই প্রস্তাবের উপর সংশোধনী আনেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের এই প্রস্তাবের মধ্য দিয়েই সেদিন মহান ভাষা আন্দোলনের পটভূমি রচনা হয়েছিল। ১৯৫৬ সালে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত যুক্তফ্রন্ট সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হলে তাঁকেও ঢাকায় চলে আসতে হলো। ফলে আরমাকে নিয়ে তাঁর মা-বাবা গিয়ে উঠলেন দাদুর সাথে ১ নম্বর মিন্টু রোডের বাসায়।
আরমাকে ভর্তি করানো হলো ভিকারুন্নেসা স্কুলে, ইংরেজী মাধ্যমে। সে সময় ভিকারুন্নেসা স্কুলে বাংলা মাধ্যম ছিল না। রোজ হেঁটে স্কুলে যেতে হতো তাঁকে। কারণ দাদু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত চাইতেন না মন্ত্রীকে দেয়া গাড়ি তাঁর পরিবারের অন্য কেউ অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করুক। ছোট ভাই রাহুল দত্ত তখন অনেক ছোট। ঢাকার মিন্টু রোডের বাড়িতেই আরমার জীবনের সবচেয়ে বর্ণিল সময় কেটেছে। কারণ এ বাসায় তখন বাবা,মা, ভাই, দাদুসহ থাকতেন আরমার কাকু দীলিপ দত্ত। পুরো পরিবার একসাথে। এছাড়া প্রায় সময়ই এ বাসায় আত্মীয়স্বজনরা বেড়াতে আসতেন। ফলে সবসময়ই একটা উত্সব উত্সব ভাব লেগে থাকত বাড়িতে। সে সময়টাতেই আরমা দত্ত বিখ্যাত বিখ্যাত রাজনীতিকদের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, আব্দুল রহমান, শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ। সবকিছু মিলিয়ে বিশাল একটা সম্প্রীতির মধ্যে কেটে গেছে আরমার কৈশোর।
বাঙালীদের মাঝে তখন রাজনৈতিক সম্প্রীতি যেমন ছিল তেমনি ছিল ধর্মীয় সম্প্রীতি আর ছিল সংগ্রামমুখর আবহ। তখন সবসময়ই মনে হতো কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। ফলে সে সময়ই আরমার মধ্যে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চেতনা গড়ে ওঠে। ভিকারুন্নেসাতেই চলছিল আরমার পড়াশুনা কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি তখন ক্রমেই উত্তাল হয়ে পড়ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান সরকার মার্শাল ল জারি করলে ঢাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো উত্তাল হয়ে ওঠে। এরকম পরিস্থিতিতে আবার তাঁরা স্বপরিবারে কুমিল্লাতে ফিরে যান। কুমিল্লায় গিয়ে আরমাকে আবার ইংরেজী মাধ্যমে আমেরিকান কনভেন্ট স্কুলে ভর্তি করানো হলো। সেখানেই চলছিল আরমার পড়াশুনা। অবশ্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত চেয়েছিলেন আরমা বাংলা মাধ্যমে পড়ুক। দাদু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত একদিন আরমাকে ডেকে বাংলায় একটা চিঠি লিখে দিতে বললেন। কিন্তু আরমা শুদ্ধ বানানে চিঠি লিখতে না পারায় দাদু খুব রেগে গেলেন। পরের দিনই ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত নাতনিকে কনভেন্ট থেকে ছাড়িয়ে কুমিল্লার আরেকটি ঐতিহ্যবাহী স্কুল নবাব ফয়জুন্নেসায় ভর্তি করিয়ে দিলেন। এই স্কুল থেকেই আরমা দত্ত ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন।
এই স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় আরমা ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হন। নবাব ফয়জুন্নেসা থেকে আরমা মাধ্যমিক পাশ করার পর কুমিল্লা মহিলা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলেন এবং এই কলেজে এসে আরমা রাজনীতিতে আরো সক্রিয় হয়ে উঠেন। ছাত্র ইউনিয়নের তত্কালীন নেতা মতিয়া চৌধুরী সাংগঠনিক সফরে কুমিল্লায় গিয়েছিলেন। তাঁকে দেখে তিনি রাজনীতিতে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন।সারা পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্র ইউনিয়নই তখন বামপন্থি ধারার অসাম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠন। দিনদিন স্বাধীনতার প্রশ্নে বাঙালীদের আন্দোলন চাঙা হচ্ছে। ১৯৬৮ সালে কুমিল্লা মহিলা কলেজ থেকেই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। সে বছরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্বে ভর্তি হন। ১৯৬৮ সালে আবার চলে আসেন ঢাকায়।
এবার আরমা একা আসেন। আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তখন ফুটন্ত পানির মতো টগবগ করে ফুটছে। চারদিকে কেবল মিছিল, মিটিং আর সমাবেশ। ছাত্র-ছাত্রীদের কারুরই পড়াশুনায় মন নেই। মিছিল শুরু হলেই ক্লাস থেকে সব বেরিয়ে যায়। সে সময় অগ্নিগর্ভ রাজনীতির প্রভাবে উত্তাল হয়ে পড়েছিল ছাত্র সমাজ। আন্দোলনের আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল দিকে দিকে। আরমাও ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বে সেই ছাত্র আন্দোলনের সামনের কাতারে। ঊনসত্তরের বিশাল গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরে সত্তরের নির্বাচনে বাঙালী জাতীয়তাবাদী ধারার নিরঙ্কুশ বিজয়, এই সবকিছুতেই নিজেকে কখনো প্রত্যক্ষ কখনো পরোক্ষ ভাবে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন আরমা দত্ত। মুক্তিযুদ্ধকে কিছুতেই নিজের অস্তিত্ব থেকে আলাদা করতে পারেন না আরমা দত্ত। জন্মের পর থেকেই তিনি দেখেছেন তাঁর পরিবার প্রস্তুতি নিচ্ছে এক কঠিন সংগ্রামের জন্য। সেই বৃটিশ আমল থেকে শিক্ষা ও স্বজাত্যবোধে ঐতিহ্যবাহী ছিলেন তাঁরা। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরেও ছিল সেই ধারাবাহিকতা। পিতামহ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন। গণমুখী চরিত্রের অধিকারী এই মানুষটির দেশপ্রেম ছিল অগাধ। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন পাকিস্তানীদের উপনিবেশিক শাসনের কবল থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধ।
দাদুর অসাম্প্রদায়িক চেতনায় শৈশব থেকেই লালিত হয়েছেন আরমা দত্ত। দাদু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁকে শিখিয়েছিলেন ধর্ম নিরপেক্ষ সংস্কৃতি এবং বিদ্বেষহীন জাতি গঠনে উদ্বুদ্ধ হতে। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোটি তাঁদের কাছে ছিল অসার। ১৯৭০’র নির্বাচনের পর স্বাধীনতা সংগ্রাম আরও প্রবল আকার ধারণ করল। আরমা তখন রোকেয়া হলে থাকতেন। দিনরাত কেবল সাংগঠনিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাতেন। গোপনে গোপনে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। সারা দেশ জুড়েই থমথমে এক অবস্থা। তখন আর কারো বুঝতে বাকি রইল না একটি যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী। বছর ঘুরেই এল ১৯৭১ সাল। রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ হলো। বলা যায়, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণই স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম ঘোষণা। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠল। কুমিল্লা থেকে মা প্রতীতি দেবী ঢাকায় এসে আরমা দত্তসহ কুমিল্লার যেসব মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত তাদের অনেককেই সাথে করে নিয়ে গেলেন।
মার্চের শুরু থেকেই দেশের অবস্থা চরম অবনতির দিকে যেতে শুরু করে। বোঝা যচ্ছিল পাক সেনাবাহিনী যে কোনো সময় হামলা চালাতে পারে। সারা দেশই থমথমে হয়ে আছে। কুমিল্লার বাড়িতে এসে আরমা দেখলেন দাদু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত অস্থির সময় কাটাচ্ছেন। সে সময় ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত আরমাকে বারবার একটি কথাই বলতেন, ‘দিন ঘনিয়ে আসছে, এ দেশ স্বাধীন হবে’। তার কয়েকদিন পরেই এল ২৫ মার্চের কালো রাত। ঢাকার বুকে শুরু হলো নির্বিচারে গণহত্যা। রাত একটার মধ্যে রেডিওর কল্যাণে তাঁরা জানতে পেরেছিলেন ঢাকার অবস্থা। খবর পেয়ে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ সবাই যেন চুপ হয়ে গেলেন। সারাদেশে কারফিউ জারি করা হয়েছে। ২৬ মার্চ কুমিল্লা শহর শ্মশানে পরিণত হলো। কিছুক্ষণ পর পর মিলিটারিদের লরি ও জিপ বীভত্স শব্দ করে ছুটে যাচ্ছে।দাদু আরমাকে রেডিওর সব খবর শোনার জন্য বললেন। দাদুর কথামতো বিবিসি, আকাশবাণীসহ সব খবর শুনতে লাগলেন তিনি। পাকিস্তান রেডিওতে কেবল বীভত্স গলায় হুঁসিয়ার বাণী শোনা যাচ্ছে। বিদেশি রেডিওর মাধ্যমে জানতে পারলেন শেখ মুজিবকে ধরে নিয়ে গেছে এবং ঢাকাতে এখনও গণহত্যা চলছে। ২৭ মার্চ একই অবস্থা। ২৮ মার্চ দুপুর দুইটার দিকে কারফিউ কিছুক্ষণের জন্য শিথিল করা হয়েছিল। এ সময় এলাকার অনেকেই ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের কাছে ছুটে এসেছিলেন। আরমা বুঝতে পেরেছিলেন তাঁদের পরিবারের উপর একটা অশুভ ছায়া পড়তে যাচ্ছে। ঘটলও তাই।
২৯ মার্চ রাত দেড়টার দিকে পাকিস্তানী বাহিনী এসে দাদু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও কাকা দিলীপ দত্তকে ধরে নিয়ে গেল। ৩০ মার্চ চারটার দিকে আবার পাকিস্তানী বাহিনী আরমা দত্ত, ছোট ভাই রাহুল দত্ত ও তাঁর মা প্রতীতি দেবীকে খোঁজার জন্য এসেছিল। কিন্তু তার আগেই পাশের বাড়ির লোকজন দুপুর দুইটার দিকে তাঁদেরকে নিজ বাড়ি থেকে সরিয়ে নিয়েছিল। দাদু-কাকুকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আরমা তাঁদের আর কোনো সন্ধান পাননি। কিন্তু দীর্ঘ নয় মাস পরে পেয়েছিলেন একটি স্বাধীন দেশ, নতুন স্বাধীন মানচিত্র। যে মানচিত্রটি, যে দেশটি তাঁদের রক্তের উপর গড়ে উঠেছিল। আরমা পরে জানতে পেরেছেন তাঁর প্রিয় দাদু আর কাকুকে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে নির্মম নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। ২ এপ্রিল ভারতীয় লোকসভা ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে।এদিকে কুমিল্লায় যে প্রতিবেশীরা আরমা দত্ত, ছোট ভাই রাহুল দত্ত ও তাঁর মাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন তারা এখন আর তাঁদের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না। বাবা সঞ্জিব দত্ত তখন ভারতে। আরমা বাবার সাথেও কোনো যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। এরকম অবস্থায় আরমা তাঁর মাকে নিয়ে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় গোমতী নদী পার হয়ে সোনামোড়া দিয়ে ভারতে ঢুকে যান। সেখানে কয়েকদিন আগরতলায় থাকার পর কলকাতায় বাবার কাছে গিয়ে উঠলেন।কিন্তু কলকাতায় যাওয়ার পর আরমা তাঁর দাদু আর কাকুর শোকে কাতর হয়ে বসে থাকেননি। আরমা এটা বুঝতে পেরেছিলেন দেশটাকে স্বাধীন করতে হবে। আর এজন্য যে যেখানে আছে সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করতে হবে। এজন্য আরমা প্রতিদিন শরণার্থী শিবিরে গিয়েছেন, সেখানে যুদ্ধাহত মানুষদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনেও দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। এভাবে দেখতে দেখতে স্বাধীনতার নয়টি মাস কেটে গেল। দেশ স্বাধীন হলো। আরমা মা-বাবা ভাইসহ দেশে ফিরে এলেন। বাবা সঞ্জিব দত্ত অবশ্য আগেই চলে এসেছিলেন ঢাকায়। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ।
কয়েকদিন ঢাকায় থাকার পর স্বপরিবারে আবার তাঁরা কুমিল্লায় গেলেন। গিয়ে দেখলেন সব আগুনে পুড়ে ছাই, কেবল দাদু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত যে টেবিলটিতে বসে লেখালেখি করতেন সেটিই অক্ষত আছে। এবার দেশটাকে গড়ে তোলার পালা। আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক হতে লাগল। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হলো। আরমা ক্লাস করতে আবার ঢাকায় চলে আসেন। এভাবেই ১৯৭৩ সালে এসে আরমা স্নাতক পাশ করেন এবং ১৯৭৪ সালে স্নাতকোত্তর লাভ করেন। এরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। দেড় বছরের মতো চাকরি করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন তাঁকে ব্যথিত করে। সে সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুন্ঠিত হয়।তিনি চলে যান কানাডায়। কিন্তু কানাডার আইনে পোষ্য হিসেবে কোনো কাজ পাওয়া তাঁর জন্য জটিল হয়ে পড়েছিল। ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তিনি আবার বাংলাদেশে চলে আসেন। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ তাঁর কাছে তখনো খুব সুখকর মনে হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও আর যোগ দেননি তিনি। কারণ তাঁর কাছে মনে হয়েছে সেখানে যোগ দেয়াটা ঠিক শোভন হবেনা।
আর এ অবস্থায় তিনি ইউএসএআইডিতে প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট হিসেবে যোগ দেন। দুই বছরের মতো সেখানে ছিলেন। কিন্তু কাজকর্ম তেমন ভালো লাগল না। তারপর ১৯৮৩ সালে যোগ দিলেন নরওয়েজিয়ান এইড নোরাডে। সেখানে তাঁর পেশাগত উন্নয়ন ঘটে। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত তিনি নোরাডে ছিলেন। ১৯৮৯ সালেই প্রিপ ট্রাস্টে যোগ দেন আরমা দত্ত। প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন ডেভিড পি করটেন। পরবর্তীকালে আরমা দত্তই প্রিপ ট্রাস্টের হাল ধরেন। সেখান থেকে তাঁরই উদ্যোগে অর্পিত সম্পত্তির ওপরে গবেষণা করেন ড. আবুল বারকাত। এছাড়া ২০০১ সালে রাজনৈতিক কারণে যখন এদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয় তার বিপক্ষে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে প্রিপ ট্রাস্ট। এনজিওদের প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি বাড়ানোর জন্যও কাজ করেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি প্রিপ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক।পারিবারিক জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত সামলেছেন আরমা দত্ত। দাদুর অসাম্প্রদায়িক আদর্শকে বাস্তবে রূপ দিতেই ১৯৭৫ সালের ৪ জুলাই বিয়ে করেন অধ্যাপক মাহবুব আহমদকে। তিনি ছাত্রজীবনে তাঁর দু বছরের সিনিয়র ছিলেন এবং কর্মজীবনেও ছিলেন সহকর্মী। মাহবুব আহমদ কানাডায় চলে গেলে আরমাও তার কিছুদিন পরে সেখানে চলে গিয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে তাঁদের একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। নাম এষা অরোরা। অর্থ ভোরের আলোর দেবী। কিন্তু আরমা দত্তের দাম্পত্য জীবন খুব বেশিদিন টেকেনি।
মাহবুব আহমদ আবার বিয়ে করলে আরমা দত্ত তাকে ছেড়ে চলে আসেন। এষার বয়স তখন ১৮ মাস। এরপর মেয়েকে নিয়ে দীর্ঘদিন একা থাকার পর বিয়ে করেন সমীর গুণকে। সমীর গুণ তখন ইথিওপিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন। তাঁরও একটি মেয়ে ছিল। আরমা দত্তের সাথে বিয়ের পর তিনি প্রশিকাতে যোগ দিলেন। কিন্তু তিনিও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটান। আরমা দত্তের পক্ষে তা মেনে নেয়া কঠিন ছিল। ফলে দ্বিতীয় জীবনসঙ্গীকে পরিত্যাগ করে তিনি চলে আসেন। দুটি ঘরই ভেঙে যাবার জন্য তিনি তাদের সঙ্গে তাঁর সাংস্কৃতিক দূরত্বটাকেই বড় মনে করেন। বারবার ঘর ভাঙলেও ঘরের মায়া ছাড়তে পারেননি তিনি। পারিবারিক জীবন তাঁর খুব প্রিয়। ঘরে আছেন মা, বিখ্যাত চলচিত্র ব্যক্তিত্ব ঋত্বিক ঘটকের যমজ বোন প্রতীতি দেবী, মানসিক প্রতিবন্ধী ছোট ভাই রাহুল দত্ত, কন্যা এষা অরোরা। এদের নিয়েই তাঁর সংসার। তাঁরা ছাড়াও কন্যাস্নেহে তিনি একই বাড়িতে পালন করেছেন আরো কয়েকজন কিশোরী ও তরুণীকে। এদের সবাইকে নিয়ে কেটে যাচ্ছে তাঁর কর্মব্যস্ত জীবন।দেশের যে কোন সংকট-মুহূর্তেই এগিয়ে এসেছেন আরমা দত্ত। ১৯৭০’র নির্বাচনের পর স্বাধীনতা সংগ্রাম যখন প্রবল আকার ধারণ করল তখন আরমা দত্ত দিনরাত সাংগঠনিক কাজ করতেন।
গোপনে গোপনে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিলেন, প্রশিক্ষণ নিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি প্রিয় দাদু-কাকুর শোকে কাতর হয়ে চুপ করে বসে থাকেননি। তিনি দেশ স্বাধীন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। আরমা দত্ত প্রতিদিন শরণার্থী শিবিরে গিয়েছেন, সেখানে যুদ্ধাহত মানুষদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনেও দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। ২০০১ সালে রাজনৈতিক কারণে যখন এদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয় তার বিপক্ষে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে তাঁর সংগঠন প্রিপ ট্রাস্ট। ভবিষ্যতে যে কোন সংকট-মুহূর্তে তিনি দেশ ও দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
জন্ম ও বংশপরিচয়
আরমা দত্ত জন্মেছেন কুমিল্লায় তাঁর পৈত্রিক বাড়িতে ১৯৫০ সালের ২০ জুলাই। বাবা সঞ্জীব দত্ত ছিলেন ‘পাকিস্তান অবজারভার’ পত্রিকার সাংবাদিক। মা প্রতীতি দেবী, বিখ্যাত চিত্রপরিচালক ঋত্তিক ঘটকের যমজ বোন। কাকা দীলিপ দত্তই মূলত বিষয় সম্পত্তি দেখাশোনা করতেন। দাদু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত আর একমাত্র ছোট কাকা দীলিপ দত্ত দুজনেই পাকবাহিনীর হাতে শহীদ হন ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে।
শিক্ষাজীবন
কুমিল্লা শহরের একটি আমেরিকান কনভেন্ট স্কুলে তাঁর লেখা পড়ায় হাতেখড়ি। মাত্র সাড়ে তিনবছর বয়সে তিনি ওই স্কুলে ভর্তি হন। দাদু যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রী হবার পর তিনি বাংলা মাধ্যমে কিছুদিন ঢাকার ভিকারুননেসা স্কুলে লেখাপড়া করেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত চেয়েছিলেন, বাংলা মাধ্যমে পড়াশুনা করে আরমা প্রকৃত বাঙালি হবে। কিন্তু পরে ইংরেজী পড়ায় তাঁর আগ্রহ দেখে আবার পাঠালেন কুমিল্লার কনভেন্টে। ম্যাট্রিক পাশ করেছেন ১৯৬৬ সালে নবাব ফয়জুন্নেসা স্কুল থেকে। ইন্টার মিডিয়েট পাশ করেছেন কুমিল্লা মহিলা কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে। সেই বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্বে অনার্সে ভর্তি হন। অনার্স পরীক্ষা হবার কথা ছিল ১৯৭১-এ। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের কারণে সেটা এক বছর পিছিয়ে যায়। ১৯৭৩ সালে অনার্স পাশ করেন। ১৯৭৪ সালে হন স্নাতকোত্তর। ওই বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
কর্মজীবন
কর্মজীবন শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে। দেড় বছরের মতো চাকরি করেন। কিন্তু ১৯৭৫সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন তাঁকে ব্যথিত করে। সে সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুন্ঠিত হয়। তিনি চলে যান কানাডায় স্বামীর কাছে। কিন্তু কানাডার আইনে পোষ্য হিসেবে কোনো কাজ পাওয়া তাঁর জন্য জটিল হয়ে পড়েছিল। ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তিনি আবার বাংলাদেশে চলে আসেন। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ তার কাছে তখনো অস্থিতিশীল ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও আর যোগ দেননি। এ অবস্থায় তিনি ইউএসএআইডিতে প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট হিসেবে যোগ দেন। দুই বছরের মতো সেখানে ছিলেন। তারপর ১৯৮৩ সালে যোগ দিলেন নরওয়েজিয়ান এইড নোরাডে। সেখানে তার পেশাগত উন্নয়ন ঘটে। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত তিনি নোরাড- এ ছিলেন। এরপর ১৯৮৯ সালেই প্রিপ ট্রাস্টে যোগ দেন আরমা দত্ত। প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন ডেভিড পি করটেন। পরবর্তীকালে আরমা দত্তই প্রিপ ট্রাস্টের হাল ধরেন। বর্তমানে তিনি প্রিপ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক।
পারিবারিক জীবন
পারিবারিক জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত সামলেছেন আরমা দত্ত। দাদুর অসাম্প্রদায়িক আদর্শকে বাস্তবে রূপ দিতেই বিয়ে করেন অধ্যাপক মাহবুব আহমদকের তিনি ছাত্র জীবনে তাঁর দুই বছরের বড় ছিলেন। তাঁদের একটি কন্যা সন্তান – নাম এষা অরোরা। আরমা দত্তের দাম্পত্য জীবন খুব বেশিদিন টেকেনি। এরপর তিনি বিয়ে করেন সমীর গুণকে। দ্বিতীয় জীবনসঙ্গীকে পরিত্যাগ করে তিনি চলে আসতে হয় তাঁকে। বারবার ঘর ভাঙলেও ঘরের মায়া ছাড়তে পারেননি আরমা। পারিবারিক জীবন তাঁর খুব প্রিয়। ঘরে আছেন মা, বিখ্যাত চলচিত্র ব্যক্তিত্ব ঋত্বিক ঘটকের যমজ বোন প্রতীতি দেবী, মানসিক প্রতিবন্ধী ছোট ভাই রাহুল দত্ত, কন্যা এষা অরোরা। এদের নিয়েই তাঁর সংসার। তারা ছাড়াও কন্যাস্নেহে তিনি একই বাড়িতে লালন-পালন করেছেন আরো কয়েকজন কিশোরী ও তরুণীকে। এদের সবাইকে নিয়ে কেটে যাচ্ছে কর্মব্যস্ত জীবন।
অবদান
২০০১ সালে রাজনৈতিক কারণে যখন এদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয় তার বিপক্ষে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে তাঁর প্রতিষ্ঠান প্রিপ ট্রাস্ট। এনজিওদের প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি বাড়ানোর জন্যও কাজ করেছেন তিনি।তথ্যসূত্র : লেখাটি তৈরী করার জন্য আরমা দত্তর সাক্ষাত্কার নেয়া হয়েছে।
লেখক : পিয়াস প্রান্তিক