সূর্য বেগমের জন্ম সিরাজগঞ্জের যমুনার চরে খলতাপাড়া গ্রামে। গ্রাম না বলে একে ‘চরের বসতি’ বলাই ভাল। জন্ম সাল সূর্য বেগম জানেন না। তবে ‘যুদ্ধের বছর’ তাঁর বয়স ছিল ১৪/১৫ বছর। সেই হিসেবে তাঁর বয়স এখন প্রায় ৫৫।
সূর্য বেগমের বাবা বাবর আলী ছিলেন হত-দরিদ্র। তিনি চরের-পরের জমিতে চাষ করতেন। তবে মাঝে মাঝে অন্যের জমিও বর্গাচাষ করতেন। মা নবি বেগম। তাঁর আগে একটি বিয়ে হয়েছিল। সে ঘরের একটি ছেলেও রয়েছে। নাম কফিল উদ্দিন। সূর্য বেগমরা আপন পাঁচ বোন এক ভাই। ভাইটি ছোটবেলায় পানিতে ডুবে মারা যায়। এই ছেলে সন্তানটি মারা যাবার পর বাবর আলির মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। সেই সমস্যা সারা জীবন তাঁর ছিল। তারপরেও তিনি ছিলেন আট জনের একটি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। যখন ভাল থাকতেন তখন প্রচন্ড পরিশ্রম করতে পারতেন। যখন কৃষিকাজ থাকতো না তখন তিনি ঘোড়ার সাহায্যে মালামাল আনা-নেওয়ার কাজ করতেন। ছোটবেলা থেকেই সূর্য বেগমকে তাই বাবার কাজে সাহায্য করতে হয়েছে। সূর্য বেগম ছিলেন বোনদের মধ্যে চতুর্থ। অন্য বোনেরা হলেন আছিয়া বেগম, রেজিয়া বেগম, তেজবা খাতুন, রোকেয়া বেগম।
সূর্য বেগম ছোটবেলায় রহমতগঞ্জ ও সাপচেলা প্রাইমারি স্কুলে এক-দুইবার গিয়েছেন। তবে মক্তবে পড়েছেন বেশ ক’দিন। তাঁর এক বড়বোনও মক্তবে পড়ত। তিনিই মূলত সূর্য বেগমকে পড়াতেন। চরের মানুষ তখন লেখাপড়া কী জিনিস তা জানতো না বললেই চলে। তখনকার দিনে অভিভাবকরা বাংলার চাইতে আরবি পড়াতেই বেশি পছন্দ করতেন। সূর্য বেগমের খেলার সাথীদের এরকমই কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে পাড়ি দিতে হয়েছে।
চরের মানুষের এক ভয়ানক জীবন। প্রতিনিয়ত সেখানে মৃত্যুর ঝুঁকি। অধিকাংশেরই স্থায়ী কোনো আবাস নেই। যমুনা নদীর ভাঙনের কারণে সেখানের মানুষকে বারবার স্থানচ্যুত হতে হয়। সূর্য বেগমের খুব অল্প বয়সে তাদের বাড়িও নদী-গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সেই সময়ের কথা সূর্য বেগমের স্পষ্ট মনে আছে। নদী ভেঙে যখন তাদের বাড়ির পাশে চলে এলো তখন তাদেরকে বড় বড় খাঁচা দিয়ে আটকে রাখা হত। তাঁর বাবা বাবর আলির বেশি ভয় ছিল ছোট ছেলেটিকে নিয়ে। তিনি সব সময়ই চেষ্টা করতেন ছেলেটি যেন পানির দিকে চলে না যায়।
বাড়ি নদীগর্ভে চলে যাবার পর সূর্য বেগমদের পরিবার চলে যায় তাঁর মামাবাড়ি, তেলকুতে। সেখানে কিছুদিন যাবার পরই ভাইটি পানিতে ডুবে মারা যায়। যে পানির ভয়ে বাবর আলী পরিবার নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই ভয়েই তার ছেলেটি মারা গেল।
মামা বাড়িতে কিছুদিন থাকার পর সূর্য বেগমের বাবা বাবর আলী সিরাজগঞ্জ শহরের পাশে নতুন ভাঙাবাড়িতে জায়গা কিনে সেখানে চলে আসেন। সেটা স্বাধীনতার দু’এক বছর আগের কথা। সূর্য বেগমের স্পষ্ট মনে আছে ‘মুজিবের ভোটে দাঁড়ানোর’ কথা। সেসময় সারা দেশের মতো সিরাজগঞ্জও উত্তাল। মার্চের শুরু থেকেই এখানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও মুক্তিকামী মানুষের উদ্যোগে স্বাধীনতার সপক্ষে নানা প্রচার-প্রচারণা চলতে থাকে। পাশাপাশি স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিও সংগঠিত হতে থাকে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বর্বর হত্যাকান্ড চালায়। তার পরই তারা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। এদিকে মানুষও তখন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে শহর ছেড়ে যায়। শহর থেকে সিরাজগঞ্জেও হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নেয়। সিরাজগঞ্জ শহরে এক-একটা গাড়ি আসত আর তাতে থাকত উপচে পড়া ভীড়। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, হিন্দু মুসলমান, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই ছুটছেন দিক-বিদিক। কেউবা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়। কেউবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। সূর্য বেগম তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে এ রকম অসংখ্য মানুষকে তখন দেখেছেন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে যেতে।
শহরে তখন প্রতিদিনই আলোচনা এই বোধ হয় পাকিস্তানী বাহিনী শহরে এসে পড়েছে। মানুষ আতঙ্কগ্রস্থ। এপ্রিলের মাঝামাঝিতেই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী সিরাজগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে। শহরের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তখন আরো বেড়ে যায়। শহরের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানী বাহিনী ক্যাম্প গড়ে তুলে। চলতে থাকে জ্বালাও-পোড়াও। বিশেষত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি তাদের বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। সূর্য বেগমের এক নিকটাত্মীয় ভাইও মুক্তিযোদ্ধা ছিল। তার নাম আকবর হোসেন। তিনিও পরিবার নিয়ে সূর্য বেগমদের বাড়ির পাশেই থাকতেন। শহরে মূলত রাজাকাররাই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেত। বাদশা রাজাকার ছিলেন তাদের অন্যতম। তিনিই আকবর হোসেনকে ধরার জন্য পাকিস্তানীদের তাদের বাড়িতে নিয়ে আসেন। আর সূর্য বেগমদের বাড়িটিও ছিল রাস্তার একেবারেই কাছে। ফলে যাতায়াতের কোনো অসুবিধাই ছিল না।
এই অবস্থায় সূর্য বেগমের বাবা তিনটি যুবতী মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে থাকা নিরাপদ মনে করলেন না। তিনি রাতারাতি বাড়ি ছেড়ে দূরের গ্রাম হাইটকাবাড়িতে আশ্রয় নিলেন। যাবার আগে ঘরের টিনের চাল খুলে মাটির নীচে রেখে গেলেন। সূর্য বেগম পাশের খাগা নদীর পাড় থেকেই দেখতে পেলেন শহরে আগুনের গোলা। সেদিন রাতেই ঘটে আরেক ঘটনা। রাতেই সূর্য বেগমের বড় বোনের প্রসব বেদনা শুরু হয়। কিন্তু পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ভয়ে তাকে দৌড়াতে হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত চলতি পথের মধ্যে দুই মহিলার সাহায্যে এক ঝোপে সকাল বেলায় তিনি সন্তান প্রসব করেন।
এর ক’দিন পরেই সূর্য বেগমদের বাড়ি পাকিস্তানী হানাদাররা পুড়িয়ে দেয়। সূর্য বেগমদের পাশের বাড়িতেও সেদিন তিনজনকে হত্যা করে হানাদাররা। এসময় এলাকায় এমন কোনো লোক ছিল না যে, তাদের মৃতদেহ দাফন করবে। হাইটকাবাড়িতে থাকাবস্থায় ১৫ দিন পর সূর্য বেগমের এক ভাই গিয়ে খবর দিল যে, এখন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে এসেছে। এই সংবাদ পাওয়ার পর বাবর আলী বাড়িতে আসেন পরিস্থিতি দেখার জন্য। পরিবার থেকে যায় হাইলাবাড়িতেই। বাবর আলী পোড়া ভিটেমাটির মধ্যেই নতুন করে দু’টি খুপড়ি তোলেন। তারপর পরিবারকে আবার বাড়িতে নিয়ে আসেন।
কিন্তু সিরাজগঞ্জ শহর তখন পুরোপুরি খান সেনাদের হাতে। তারা সেখান থেকেই আশেপাশের গ্রামে অপারেশন চালায়। সূর্য বেগমরা যখন শুনতেন যে, পাকিস্তানী সেনারা এদিকে আসছে তখনি বাড়ি ছেড়ে ক্ষেতের মধ্যে বা ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে পরতেন। কখনো কখনো পাশের গ্রামের এক অবস্থাসম্পন্ন গৃহস্থের বাড়িতে আশ্রয় নিতেন। এভাবেই মুক্তিযুদ্ধের বেশ কিছুটা সময় পাড় করেন সূর্য বেগম ও তার পরিবার।
এই অবস্থার মধ্যেই বাবা বাবর আলী মেয়ের নিরাপত্তার জন্য সূর্য বেগমকে বিয়ে দেয়ার আয়োজন করেন। পাত্র তারই এক নিকটাত্মীয়, চাচাত ভাই হারুণ-অর-রশিদ। যুদ্ধের মধ্যেই একদিন তাঁর সাথে সূর্য বেগমের বিয়ে হয়ে যায় কলেমা পড়ে। সে ছিল যক্ষার রোগী। সেটা সূর্য বেগম বা তাঁর পরিবারের কেউ জানত না। বিয়ের পর চিকিৎসা করাতে গিয়ে সেটা ধরা পড়ে। ডাক্তাররা জানায় আগে থেকেই তাঁর এই রোগ ছিল।
একদিন বাদশা রাজাকার প্রায় ত্রিশ-চল্লিশ জন খান সেনাকে পথ দেখিয়ে গ্রাম থেকে শহরে ফিরছিলেন। সেসময় তিনি খান সেনাদের নিয়ে হঠাৎ করেই সূর্য বেগমদের বাড়িতে ঢুকে পড়েন। এসেই খোঁজ করেন মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলীর। তিনি তাঁকে পায়নি খান সেনারা। বাড়িতেও তখন কোনো লোকজন ছিল না। পুরুষরা দৌড়ে দূরে সরে যায়। আর মেয়েরা সবাই লুকিয়ে ছিলেন পাশের একটি ডোবার মধ্যে। খান সেনারা সেটা দেখে ফেলে। দেখা মাত্রই সেদিকে বন্দুক তাক করে সকলকে উঠে আসতে বলে। তখন রাজাকার বাদশা, সবাইকে ভয় না পেয়ে উঠে আসতে বলে। নারী-পুরুষ সবাই তখন ভয়ে ভয়ে ঝোপ থেকে উঠে আসে। বাদশা তখন বলে, ‘তোমরা পালাও কেন, তোমাদের কিছু হবে না। সবাই ঘরের মধ্যে থাকবা। কোথাও পালাবা না।’ এই বলে রাজাকার বাদশা সেদিন খান সেনাদের সবাইকে নিয়ে চলে যায়।
তার পরদিন খান সেনারা হইলাবাড়ি ক্যাম্প থেকে শহরে ফিরছিলেন সূর্য বেগমদের বাড়ির সামনে দিয়েই। হঠাৎ করেই ৩০/৪০ জন খান সেনা সেখানে দাঁড়িয়ে পড়েন। সূর্য বেগমরা সেদিন আর লুকানোর জন্য ঘরের বাইরে যাননি। শুধু পুরুষরা বাড়ির বাইরে ছিল। ৩০/৪০ জনের মধ্যে শুধুমাত্র ৬ জন সূর্য বেগমদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। বাকিরা শহরের দিকে চলে যায়। সূর্য বেগম তখন ঘরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে সব কিছুই দেখছিলেন। ইতোমধ্যে খান সেনারা তাদের উঠোনে চলে আসে। বাড়িতে কয়েকজন পুরুষ ছাড়া বাকিরা সবাই দৌড়ে চরে চলে যায়। এমনকি সূর্য বেগমের স্বামী, তাঁর শাশুড়ীও চলে যায়। ঘরের মধ্যে নারীদের অধিকাংশই আটকা পড়ে।
খান সেনারা যাতে ঘরে ঢুকতে না পারে এজন্য বাবর আলী ও তাঁর পুত্র কফিল দু’জনেই দরজা আগলে বসে রইল। কফিল স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে ছিল অনেক ভাল। তাঁর স্ত্রীও ঘরের মধ্যেই ছিল। ঘরের ভেতরে ছিল সূর্য বেগম, তাঁর মা এবং সদ্য প্রসবিনী বড় বোনও। মা তাদের দু’বোনকে কোনো কথা বলতে না করল। তিনি তাদের মাচাং এর নীচে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেন। খান সেনারা তাঁর বাবা ও ভাইয়ের দিকে বন্দুক উঁচিয়ে ধরে পথ ছেড়ে দিতে বলল। তার পর দু’জন খান সেনা তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে কাছের বরই গাছের নীচে বসিয়ে রাখল। দু’জন সেখানে বন্দুক নিয়ে পাহাড়ায় থাকল, বাকীরা ঢুকে পরে চারটি ঘরে। তারপর চালায় গণধর্ষণ।
মুক্তিযুদ্ধের বাকি সময়টা সূর্য বেগম ও তাঁর পরিবার মোটামুটি বাড়িতেই থেকেছেন। মাঝখানে কয়েকদিন লেতরাতে তাঁর এক ফুফাত ভাইয়ের বাড়িতে ছিলেন। এ সময়ে বাড়িতে থেকেছেন অনেকটা সতর্কভাবেই।
এই নির্যাতিত নারীদের সংখ্যা প্রায় দু’লাখ। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের পর এদের অনেকেই আর পরিবারে ফিরে যেতে পারেনি। সমাজও তাদের ভালভাবে গ্রহণ করেনি। ফলে সমাজে এরা প্রান্তিক পর্যায়ে চলে যায়। দরিদ্র পরিবারের নারীরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ফলে এদের দাঁড়াবার আর কোনো জায়গা রইল না। দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসনের জন্য নারী পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু করেন। সিরাজগঞ্জেও এর শাখা খোলা হয়। বীরাঙ্গনাদের স্বাবলম্বী করার কাজ শুরু হয়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যখন সিরাজগঞ্জে প্রথম জনসভা করতে আসেন সেই দিনের সেই জনসভার কথা আজো মনে আছে সূর্য বেগমের।
অন্য অনেকের মতো সূর্য বেগমও তখন নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে আসেন। সেখানে তাঁত, বাঁশসহ অন্যান্য কুটির শিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা করেন। পুনর্বাসন কেন্দ্রে কাজ করে নিজের খাওয়া-পরা ছাড়াও সূর্য বেগম তখন পরিবারকেও কিছুটা সহযোগিতা করতে পারতেন।
কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি একেবারেই পাল্টে যায়। সেই সাথে পাল্টে যায় সূর্য বেগমদের মতো বীরাঙ্গনাদের জীবনও। নারী পুনর্বাসন কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। বীরাঙ্গনাদের জীবনে নেমে আসে আরেক অভিশাপ।
এরপর থেকে প্রায় ২০ বছর সূর্য বেগম ছিলেন একেবারেই লোক চক্ষুর অন্তরালে। পরিবারের সঙ্গেই খেয়ে-না খেয়ে তার জীবন কেটেছে। সামাজিক-পারিবারিক অশান্তিও ছিলই। সূর্য বেগমের ছেলেরা চায় না তাঁর মা বীরাঙ্গনা এই কথা কেউ জানুক। ফলে তিনি যখন কারো সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন, তখন তাঁকে অনেকটাই সতর্ক থাকতে হয়। ১৯৮৬ সালে তাঁর স্বামী হারুণ-অর-রশিদ মারা যান। ১৯৯২ সালে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির মাধ্যমে তিনি আবার দেশবাসীর সামনে আসেন। স্থানীয় একটি বেসরকারী সংস্থাও সূর্য বেগমসহ কয়েকজন বীরাঙ্গনাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার তিনি ঢাকায় এসেছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য। এখনো সূর্য বেগম আশা নিয়ে বেঁচে আছেন কবে এদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে।
সূর্য বেগমের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলেমেয়েরা সবাই বিবাহিত। তারা নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। তাই সূর্য বেগমকে এই বয়সেও নিজের উপার্জনেই চলতে হয়। এতে কোনোদিন খাবার জুটে, কোনোদিন হয়তো জুটে না। এটাকে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস হিসেবেই মেনে নিয়েছেন সূর্য বেগম।
এই লেখাটি তৈরি হয়েছে বীরাঙ্গনা সূর্য বেগমের সাথে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে। ২০১০ সালের ১৬ জুন সিরাজগঞ্জ জেলা শহরের পাশে নতুন ভাঙ্গাবাড়ি নামক স্থানে নিজ বাড়িতে তিনি এই সাক্ষাৎকার প্রদান করেন তিনি। কৃতজ্ঞতা স্বীকার : সাফিনা লোহানী।
লেখক : চন্দন সাহা রায়